উদীয়মান কবি রুহুল আমিন এর কাব্যিক রূপ।
ফজিলা ফয়েজ
রুহুল আমিন বর্তমানের সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করা একজন উদীয়মান তরুণ কবি। যিনি তার অনন্য লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের মন জয় করে নিবেন বলে মনেকরি। তার লেখার ধারায় উঠে আসে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, মানুষের মনের অন্তর্গত অনুভূতি এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের গল্প। রুহুল আমিন তার লেখায় ব্যবহার করেন সহজ-সরল ভাষা, যা পাঠকদের মনের গভীরে প্রবেশ করে।
তার লেখা কবিতা দেশের জনপ্রিয় সব পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার লেখা কবিতায় সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং পাঠকদের মনকে উদ্বুদ্ধ করেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাহিত্যচর্চা ও পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
তরুণ কবি রুহুল আমিনের লেখায় লক্ষ্য করা যায় মানবিকতার প্রতি এক গভীর ভালোবাসা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি। তার লেখনীতে জীবনের বাস্তবতাকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। যা পাঠকদের চিন্তাভাবনাকে গভীর করে তোলে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার লেখার মাধ্যমে নতুন আলোর ঝলক এনে দেওয়ার প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।
তার কবিতার ভাষা ও ভাব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সমাজের মুখোশধারী মানুষদের নিয়ে লেখা হয়েছে।
“সাধুর বেশে বেশ্যার ভূষণ মুখোশধারী বেশ,””
সমাজের ভণ্ডামি ও মুখোশধারী মানুষের প্রতি কঠোর সমালোচনা করেছেন তার কবিতার মাধ্যমে এখানে সাধু বেশে যারা নিজেরা প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কারী তাদের মুখোশধারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় লাইনে তিনি বলেন:
বিবেকবোধে লজ্জায় মরে ভাবে মরলে শেষ!”
মানুষের বিবেকের কথা বলে। যারা অন্যায় করে, তাদের বিবেক তাদের লজ্জা দেয় এবং তারা ভাবে যে মৃত্যুর পর সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
“বেশ্যা মরলে লাশের গন্ধ বাতাসে তাই ভাসে, বিভেদ খোঁজে মোল্লা বংশ থাকে না কেউ পাশে!”
কবি রুহুল আমিন তার লেখায় তুলে এনেছেন সমাজের নিচু স্তরের মানুষদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ। যখন একজন বেশ্যা মারা যায়, তার লাশের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং মোল্লা বংশ এই বিভেদ খোঁজে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ তার পাশে থাকে না।
এছাড়া গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের কথা তুলে ধরেছেন গাঁয়ের চাষির আনন্দ এবং নতুন ধানের উৎসবমুখর পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। ধান কাটার মৌসুমে চাষিরা কেমন করে আনন্দিত হয় এবং তাদের জীবনের একটি সুন্দর মুহূর্ত তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন তার কবিতায়।
“কাস্তে হাতে গাঁয়ের চাষি কাটবে সোনা ধান,
নতুন ধানের সুবাস ছড়ায় মুগ্ধ মনো-প্রাণ।
গাঁয়ের চাষি বেজায় খুশি পেয়ে নতুন ধান,
মনের সুখে ধান কাটে যে গেয়ে বাউল গান।”
কবি রুহুল আমিন এর সুন্দর একটি কবিতায় শিক্ষা ও জ্ঞানের গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। কবিতার মাধ্যমে শিশুদেরকে প্রেরণা দেওয়া হয়েছে যে, সোনার ছেলে অর্থাৎ একজন ভালো মানুষ হতে হলে শিক্ষা ও লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই।
“সোনার ছেলে হবার জন্য চলো স্কুলে যাই,
সবার আগে সোনার ছেলে হতে আমি চাই।
লেখাপড়া শিখলে সেতো সোনার ছেলে হবে,
সেই ছেলেটি সবার চোখে ভালো মানুষ তবে।”
কবিতার মূল বার্তা হলো, জ্ঞান অর্জন করেই একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়, এবং সেই ভালো মানুষই সবার কাছে সম্মানিত হয়।
বিশিষ্ট কবি রুহুল আমিন তার ক্ষুরধার কলমে দেশের মানুষের দুঃখ কষ্ট ও সামাজিক অসাম্যতার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
“ক্ষুধার কষ্টে কুঁকড়ে মরি বধির রাখো কান!
মানচিত্র আজ ঠুকরে খাব যাবে তখন মান॥
মানচিত্রের ঐ রক্ত খাব এটাই যদি চাও,
তাহা না হইলে উদরপূর্তি খাদ্য খেতে দাও।”
কবিতার স্তবকে কবি বলছেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে মরার চেয়ে মানচিত্রের রক্ত খাওয়াই শ্রেয়, যদি খাদ্যের ব্যবস্থা না করা হয়। তিনি প্রশ্ন তুলছেন যে, যদি মানচিত্রের রক্ত খাওয়াই তোমাদের চাওয়া হয়, তাহলে খাদ্য দিয়ে উদরের পূর্তি করাও। কবিতার এই লাইনগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গভীর অর্থবহ, যা সমাজের অসাম্যতা এবং ন্যায়বিচারের অভাবকে তুলে ধরে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদের প্রতি এক গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। কবির অনুভূতিতে দেশের রত্ন ও নদীর সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
“ভরা এ বাংলাদেশ আছে রত্নের খনি,
আমার দেশের গভীর তলে হীরা কাঞ্চন মণি। হাজার নদীর এ বাংলাদেশ কোথায় খুঁজে পাবে, আমার দেশে শ্যামল ছায়ায় হৃদয় জুড়ে যাবে।”
উদীয়মান কবি রুহুল আমিনের কাব্যিক রূপের বহুমুখিতা তার সৃজনশীলতার গভীরতা ও বিস্তৃতির প্রতিফলন। তাঁর কবিতায় প্রেম, দুঃখ, আশা, এবং মানবিক অনুভূতির নানা দিক চমৎকারভাবে মিশে থাকে, যা পাঠকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তার কবিতার মধ্যে প্রকাশিত বৈচিত্র্যময় অনুভূতি এবং ধারণার প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে।