উপন্যাস পর্ব চৌদ্দ মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “চৌদ্দ”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

আসছে ঈদুল ফিতর পোশাক বিক্রির ভরা মৌসুম।মইন ক্লথ’র মালীক মইন আহমেদ চালানে যাবেন ঢাকা বাবুর হাটের মোকামে।তড়িঘড়ি করে বউকে বললেন,কাপড় ছোপড় গুছিয়ে দিতে।যাবার সময় হলে স্ত্রী বলল,
ওগো ঝুমার বাসায় যাবেন না?
যাবতো, কেন?
কিছু পিঠা দিতাম।
বলতে না বলতে তিনি কিছু শুকনো পিঠা প্যাকেট করে স্বামীর হাতে তুলে দিলেন। স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি রওয়ানা করলেন।রাত প্রায় দশটা বাজল,তিনি ঝুমার বাসায় গিয়ে পৌছলেন।কলিংবেলের শব্দ শুনে ঝুমা দরজা খোলে বাবাকে দেখামাত্রই সম্মানের সহিত ভিতরে এনে বসতে দিলো।তারপর সালাম করে বলল,
বাবা তুমি আসার আগে খবর দিলে না কেনো?
বাবা হেসে উঠে বলল,
মেয়ের বাসায় আসব এতে খবর দেয়ার দরকার কি?
কি যে বল না বাবা,এতটা পথ একাএকা এলে।খবর দিলে রিফাত গাড়ি পাঠিয়ে দিতো।বাবা অনেকদিন পর এসেছ,এবার কিন্তু সপ্তাহ খানেক থেকে তবে যাবে।
নারে মা আমি বেড়াতে আসেনি।
তবে কেন এসেছ?
কাপড়ের চালান করতে এসেছি।ভাবলাম মেয়েকে এক পলক না দেখলে কেমন হয়।তাই আসলাম।
বাবা শান্তা কেমন আছে?
আর বলিস না মা,ওকে নিয়েতো আমার যত দু:চিন্তা।
বাবা ওহ আবার কি করেছে?
কি করেছে শুনলে তুই ও হার্টফেল করবি।
তিনি আর দেরী করলেন না।শান্তা ও নয়নের গোপন প্রেমের খবর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করলেন।সবকথা শুনার পর ঝুমা বলল,
সাবধান বাবা রিফাতকে এসব কথা বলা যাবেনা।
ঝুমা আমার ইচ্ছে করছে ঐ নয়ন স্টুপিডটাকে জ্যান্ত কবর দিতে।
প্লিজ বাবা এসব কাজে মাথা গরম করা ঠিকনা।যা করার সুস্থ মস্তিষ্কে করতে হবে।
ঝুমা আমি কিন্তু কিছুতে শান্ত হতে পারছি না।ঐ স্টুপিডটা এই সম্পর্কটা গড়ার পুর্বে একবার ও ভাবল না আত্মীয়ের সম্পর্কের কথা।
বাবা প্লিজ থাম।রিফাত শুনলে আমার মান সম্মান সব যাবে।
ঝুমা কি বলিস শান্তা কি একা দোষী?
বাবা তা ঠিক নয়।নয়ন সবচেয়ে বেশী দোষী।তবুও এই পুরুষশাসিত সমাজ নয়নকে অপবাদ দিবেনা।কারণ সে পুরুষ।তার দোষ কেউ দেখবে না।শুধু শান্তাকে এককভাবে অপবাধ দিবে ও দোষী করবে।
কেন ঐ নির্বোধটার কি কোন দোষ নেই?
আছে বাবা আছে।তবুও এই পুরুষশাসিত সমাজ তা দেখবে না।বলবে অমুকের মেয়ে খুব খারাপ মামার সাথে…।
বললে হলো?
হলো মানে,হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।এখনো দেখেনি প্রেমের জন্য পুরুষকে অপবাদ দিতে।সব অপবাদ এককভাবে মেয়েদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।তাই বলছি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাদের মান সম্মান যাবে।নয়নের কিচ্ছু হবেনা।
তাহলে এখন কি করবো?
বাবা এখন শান্তাকে বিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।রিফাত আসুক তারপর ওকে বলব ছোটনের সঙ্গে আলাপ করতে।
ঝুমা যা করার তাড়াতাড়ি কর।তানা হলে নয়ন আবার অঘটন ঘটাবে।
ঠিক আছে বাবা তাই করবো।তবে বেশি হুলুস্থুল করা যাবে না।শেষে ছোটন আবার সন্দেহ করবে।
ঝুমা তুই যা ভালো মনে কর তাই কর।
বাবা তুমি শান্তাকে কিছু বলোনা।এটা হচ্ছে বয়সের দোষ।বিয়ে হয়ে গেলে সবঠিক হয়ে যাবে।আমরা বিয়ের কথা পাকা করে জানিয়ে দেব।
ঝুমা আমিও তাই চাই।সমাজের কাছে আমাকে হেয় যেন না হতে হয়।
শান্তার বিয়ের কথা প্রায় পাকা করে মইন আহমেদ ছুটে গেলেন কাপড়ের গুদামের মুল মোকামে।কাপড় প্যাকিং করে গাড়িতে তুলে দিলেন।পরক্ষণে তিনিও রওয়ানা করলেন।দেশের ষ্টেশনে পৌছতে অনেক রাত হলো।ষ্টেশনে কোন গাড়ি ও নেই।লাইন লিড়ারকে গাড়ি না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
ড্রাইভারের সঙ্গে যাত্রীদের মারামারি হয়েছে।আজকের জন্য আর গাড়ি আসবে না।কি আর করা উপায় নেই।তিনি নিরুপায় হয়ে হোটেল আয়নায় অবস্থান করলেন।ম্যানেজার চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বলল,
মইন সাহেব একটা কথা বলতে চাই,যদি কিছু মনে না করেন?
বল কি বলবে,মনে করার কি আছে।
না মানে আপনি রাগ করবেন নাতো?
আশ্চার্যতো রাগ করবো কেন,কি বলবে বল?
মইন সাহেব আপনার ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে কবে?
তিনি হেসে উঠে বলেন,
ম্যানেজার বোকার মতো কি বলছ, বিয়ে হয়েছে আমার মেঝো মেয়ের,ছোট মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি।
সত্যি বলছেন?
আমার মেয়ের কথা আমি মিথ্যে বলব কেনো?
মইন সাহেব কিছু মনে করবেন না। সপ্তাহ খানেক আগে আপনার ছোট মেয়ে শান্তা নয়ন নামের এক ছেলেকে নিয়ে এই হোটেলে রাত কাটিয়েছিল।আমি জিজ্ঞেস করতে বলল,ওরা স্বামী স্ত্রী।
সত্যি বলছ ম্যানেজার?
জ্বী হ্যাঁ সাহেব সত্যি।বিশ্বাস না হলে রেজিস্টার খাতা দেখুন।তাদের নাম ঠিকানা লেখা আছে।
মইন আহমেদ রেজিস্টার খাতা দেখেলেন।সত্যি দুজনের নাম ঠিকানা লেখা আছে।তিনি কোনমতে রাত পার করলেন।সকাল হলে উল্কার গতিতে বাড়ি ফিরে আসলেন। ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে গলা ছাড়িয়ে ডাকলেন।একদিকে গরম অন্য দিকে রাগ দুটো মইন আহমেদকে ঘামিয়ে দিয়েছে।নাকের ডগা বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে।স্ত্রী এগিয়ে এসে হাত পাখা দ্বারা বাতাস করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন,
ঝুমা রিফাত ওরা ভালো আছেতো?
হ্যাঁ ওরা ভালো আছে।শান্তা কোথায়?
কোথায় আবার,ওর ঘরে।
তাড়াতাড়ি ডাক।
তিনি ফের কোন প্রশ্ন না করে মেয়েকে ডাকতে গেলেন।শান্তা চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে বসে আছে।মেয়ের ভাবসাব দেখে তিনি বুঝতে পারলেন,তার ভিতরে কিছু একটা হয়েছে।তবুও তিনি কোনকিছু না জিজ্ঞেস করে কোমল কণ্ঠে ডাকেন,
শান্তা শান্তা?
মায়ের কথা যেন তার কানে গেল না। সে আপন নিয়মে বসে আছে।তিনি ফের মেয়ের শরীরটাকে নাড়া দিয়ে ডাকলেন।এবার শান্তা সম্বিত ফিরে পেলো।চমকে উঠে বলল,
মা তুমি কিছু বলছ?
হ্যাঁ তোর বাবা ডাকছে।আয় মা।
শান্তা কোনকথা না বলে মায়ের ডাকে সাড়া দিলো।বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে তিনি কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর নিজের পাশে বসালেন।মেয়ের মাথায় আদরের সহিত হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
শান্তা তুই আমাদের অতি আদরের মেয়ে।তোকে আমরা খুব ভালোবাসি।
পরক্ষণে মা বলল,
শান্তা তোর বাবা ঠিক বলেছে।তোর কিছু হলে আমরা বাঁঁচব নারে।
মা-বাবা দুজনে কেঁদে উঠল।দুজনের কান্না দেখে শান্তা বলল,
তোমরা কাঁদছ কেন,আমি কি মরে গেছি?
জবাবে বাবা বলল,
যদি কখনও হারিয়ে যাস একথা মনে পড়তে চোখে পানি এসে গেল।
তাই বলে এভাবে কেউ কাঁদে?
এবার বাবা বলল,
ঠিক আছে আর কাঁদব না।একটা কথা বলি মা?
জ্বী হ্যাঁ বাবা বল।
আগে ওয়াদা কর সত্য বলবি?
জ্বী হ্যাঁ বাবা বলব।
মা তুই নাকি রিফাতের মামা নয়নকে নিয়ে হোটেল আয়নায় রাত কাটিয়েছ?
শান্তা উত্তর দিতে একটুও দ্বিধা করলো না।হার জিত,মান সম্মান, কোনকিছুর তোয়াক্কা না করে স্পষ্ট ভাষায় জবাব দিলো,
জ্বী হ্যাঁ বাবা রাত কাটিয়েছি।
এবার বাবা বলল,
শান্তা, মইন আহমেদের মেয়ে হয়ে পর পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে তোমার লজ্জা করলো না?
জ্বী না বাবা।কারণ নয়ন আমার স্বামী।
বিয়ে না হতে সে তোর স্বামী হলো কি করে?
বাবা তুমি ঠিক বলেছ।বিয়ে না হলে স্বামী হয় না।আমরা গোপনে বিয়ে করিছি।আমরা দুজন স্বামী- স্ত্রী। বাবা আমি বিরাট ভুল করেছি।আমাকে ক্ষমা কর।
ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে।
শান্তা তার ভালোবাসা জয় করার জন্য যে কোন শর্ত মানতে রাজী।তাই বলল,
বাবা আমি তোমার যেকোন শর্ত মানতে রাজী।বল কি তোমার শর্ত?
তুই যদি নয়নকে ত্যাগ করিস তবে আমি ক্ষমা করতে পারি।এর ব্যতিরেকে নয়।
যেমন বাপ তেমন মেয়ে।মেয়েও হারবার পাত্রী নয়।জোর গলায় বলল,
বাবা আমরা দুজন দুজনকে খুবখুব ভালোবাসি।আমাকে ছাড়া নয়ন যেমন বাঁচবে না,তেমনি ওকে ছাড়া আমি ও বাঁচব না।প্লিজ বাবা ওকথা আর বলো না।আমি কখনো নয়নকে ত্যাগ করতে পারবো না।
শান্তার চোখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে।বাবার পায়ে মাথা ঠুকেঠুকে কাঁদছে।তবুও অহংকারী দাম্ভিক পিতার দিল নরম হলো না।তার রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।তিনি কড়ায় ভাষায় বললেন,
শান্তা তোর এ মায়া কান্না থামা।নয়নকে আমি কিছুতেই জামাই হিসেবে মেনে নেব না।
কেন বাবা, তার অপরাধ কী?
তোকে আমি এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না।শুধু এটুকু বলবো,মামা ভাগিনা কখনো ভায়েরা ভাই হতে পারে না।তাছাড়া নয়ন এখনো বেকার।মইন আহমেদ কখনো একজন বেকার ছেলেকে জামাই হিসেবে মেনে নেবে না। এটা আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
বাবা একগাদা টাকা কখনো মানুষকে সুখী করতে পারে না।একমাত্র বিশ্বাস, ভালোবাসা,মনের মিল,মানুষকে সুখী করতে পারে ।এর ব্যতিরেকে নয়।
তাছাড়া আমি যদি একজন বেকার যুবককে নিয়ে সুখী হতে পারি, তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়?
তোর এত যুক্তি আমি শুনতে চায় না।আমি এ বিয়ে মানি না, মানব না।কারণ এ বিয়ে একদিকে ঝুমার সংসারে অশান্তি বয়ে আনবে।অন্যদিকে সুধী সমাজের কাছে আমাকে হেয় হতে হবে।তোকে নয়নকে ত্যাগ করতেই হবে।
বাবা নয়নকে আমি কিছুতেই ত্যাগ করতে পারবো না।কারণ এ বিয়ে শরীয়ত সম্মত ও জায়েজ।তাছাড়া নয়ন রিফাত ভাইয়ার আপন মামা নয়।
স্টপ আর কোন কথা নয়।আমি কাজীকে বলে এসেছি।এক্ষণি এসে পড়বে।তুই তালাক নামা সাইন করবি।যদি এর ব্যতিক্রম করিস নয়নকে চিরদিনের মতো দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব।
শান্তা আর কিছুই বলতে পারলো না,বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।সে মুর্ছিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।তাকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শোয়ানো হলো।বলতে না বলতে কাজী এসে গেল।তালাক নামার কাগজপত্র সব লিখে রেডি করে এনেছেন।শুধু শান্তার সাইন দিলে বিবাহ বিচ্ছেদ ওকে।বাবা দেখলেন মেয়ে মুর্ছিত হয়ে পড়ে আছে।আর এই সুযোগে বাবা মেয়ের হাত ঘুরিয়ে সাইন নিয়ে নিলেন।ব্যস নয়নের সাথে উনার মতে সম্পর্ক শেষ।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কিশোর

  আমরা নবীন,আমরা কিশোর জয় করিবো বিশ্ব ভূবন, মেধার বিকাশ জাগবে এবার গড়বো জ্ঞানের নতুন স্বপন। সত্য ন্যায়ের সঙ্গে থেকে

গদ্য কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

গদ্য কবিতার বই 'কনকচাঁপা দোদুল দোল '। মোট কবিতার সংখ্যা ৮০ টি।বইটিতে আমার কবি নাম: মোঃ আরিফ হোসেন সর্দার।  

ওঁরা আপন জন

ঘুমের থেকে ওঠরে জেগে ওহে মুসলিম গণ, দেখরে চেয়ে মরছে যারা ওঁরা আপন জন। মুসলিম হলে কেমন করে থাকো আজি

স্বাধীনতার ঘ্রাণ

স্বাধীনতা এলো বাংলায় দীর্ঘ নয় মাস পর॥ নয়টি মাসে কতো মায়ের শূন্য হইলো ঘর! পাক বাহিনী বুলেট ছোড়ে ঝাঁঝরা করে

Leave a Reply