উপন্যাস পর্ব ছয় মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0
  • উপন্যাস পর্ব “ছয়”
    মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
    আফছানা খানম অথৈ

    মইন আহমেদ মেয়ের জন্য নতুন ডিজাইনের একটা দামী থ্রি- পিস এনে বললেন,
    ঝুমা কাল কলেজে এই জামাটা পরে যাবি কিন্তু।
    কেন বাবা?
    ঝুমাকে দেখতে আসবে কথাটা শুনলে হয়তো সে লজ্জা পাবে।তাই মইন আহমেদ বললেন,
    কেন আবার,নতুন জামা এনেছি পরে যাবি,এ আর কি।
    জ্বী আচ্ছা বাবা।
    বাবাকে হ্যাঁ সুচক জবাব দিয়ে ঝুমা নিজের ঘরে ফিরে গেল।তারপর জামা পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ফ্রেমে বাঁধানো বড় আয়নায় নিজেকে দেখে বলে,
    মাসআল্লাহ দারুণ মানিয়েছে তো আমাকে। এই জামা পরে কলেজে গেলে কমছে কম ডজন খানেক ইয়ংম্যান আমার পিছে লাগবে।আর যদি রানা ভাই দেখে সে আরও পাগল হয়ে উঠবে।সাবধান তার সামনে দিয়ে কোন মতে যাওয়া যাবে না।ভাবনার অবসান হতে না হতে কিচেন ঘর থেকে আওয়াজ আসল।
    ঝুমা খেতে আয়।
    ঝুমা খানা খেয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো।শান্তার চোখে কিন্তু ঘুম আসছে না।সে এ পাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে।যখনি ঘুমাতে চেষ্টা করছে তখনি তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে নয়ন নামক সেই সুদর্শন যুবকটির প্রতিচ্ছবি।মনে মনে প্রশ্ন জাগে, কে এই যুবক যে আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। বার বার ছায়া হয়ে আমার চোখের সামনে ধরা দিচ্ছে।যার আখি করে ছলছল,হৃদয় করে টলমল,ভালোবাসার কানায় কানায় ভরা দেহ ও মন।কিন্তু সে এমন করলো কেন?বিকেলের হ্যানিমন মিস করলো।তবে কি সে নষ্ট, প্রতারক,চিট্।না না আমি এসব কি ভাবছি,হয়তো অন্য কোন কারণ হতে পারে।বিড়বিড় করতে করতে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।সকাল হলে সবাই জেগে উঠল।ঝুমা শান্তা কিন্তু এখনো ঘুমিয়ে। কাজের বুয়া নাস্তা রেডি করে ডাকে,
    আপামনি আপনারা এখনো ঘুমাইতাছেন।ডাইনিং টেবিলে নাস্তা দিলাম হেই কখন। উঠেন তারাতারি।
    বুয়ার কথা যেন তাদের কানে যাচ্ছে না।তারা নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।বুয়া এবার তাদের কানের কাছে গিয়ে ডাকে,
    আপামনি আপনারা উঠতাছেন না ক্যান।কলেজের সময় অইয়া গেছে।তারাতারি উঠেন।
    এতক্ষণ পর বুয়ার ডাকাডাকিতে দুবোনের টনক নড়লো।তারা আড়মোড় খেয়ে হাই তুলতে তুলতে উঠে বসলো।তারপর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
    হোয়াট!এত সকাল পর্যন্ত আমরা ঘুমালাম।শান্তা তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়েনে…।দুবোন তড়িঘড়ি করে নাস্তা করে কলেজের দিকে রওয়ানা করলো।ছুটির পর দুবোন ষ্টেশনে এসে দাঁড়ালো।এমন সময় রিফাত আলম এগিয়ে এসে বলল,
    “এক্সিউজ মি” শুনুন।
    ঝুমা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
    আমাকে বলছেন?
    হ্যাঁ আপনাকে।
    জ্বী বলুন?
    আপনি মইন সাহেবের মেয়ে ঝুমা না?
    জ্বী হ্যাঁ।
    কিসে পড়েন?
    বি.এ শেষ বর্ষ।
    থ্যাংকস।তো এখন কোথায় যাবেন?
    কোথায় আবার বাড়িতে।
    রিফাত আলম ঝুমাকে পরখ করার জন্য মজা করে বলল,
    সত্যি কি বাড়িতে যাবেন,না অন্য কোথাও?
    ঝুমা রেগে উঠে বলল,
    কি বলছেন আজে-বাজে কথা,যত্তসব ফালতু নোংরামি।
    রিফাত আলম বুঝতে পেরেছে ঝুমার রাগের কারণ, তাই মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে বলল,
    প্লিজ রাগবেন না,কথাটা আমি সিরিয়াস ভাবে বলিনি, জাস্ট একটু ফান করেছি।
    হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না।শান্তা চল।
    তারা সামনে পা এগিয়ে দিলো।তখনি রিফাত আলম বলল,
    হ্যালো কোথায় যাচ্ছেন,চলুন হোটেলে নাস্তা করতে?
    ঝুমা আর শান্তা তার কথায় কান না দিয়ে ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে চলল।তখনি রিফাত আলম বলল,
    ওকে আবার দেখা হবে। চলি বাই বাই বাই।
    রিফাত আলম বিদায় নিলো।শান্তা একটু রোমান্টিক ও মজার টাইপের, তাই বড় বোন হওয়া সত্বেও বলল,
    আপু ভদ্র লোককে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তোর সাথে মানাবে ভালো।
    ঝুমার ও লোকটিকে খুব পছন্দ হয়েছে তবুও বনিতা করে বলল,
    শান্তা কোন লোকটিরে?
    আপু আর ন্যাকামো করো না।কিছুক্ষণ আগে যে বাই বলে বিদায় নিলো।তাকে কিন্তু তোমার ও খুব পছন্দ, তাই না আপু?
    শান্তা তোর মুখে দেখছি কিছু আটকায় না?
    আটকাবে কেন, যা সত্যি তাই বললাম।আপু নো টেনশন বাড়িতে গিয়ে বাবাকে বলে তোমাদের দুহাত এক করার ব্যবস্থা করবো।
    হয়েছে তোকে আর ওকালতি করতে হবে না।এবার মুখটাকে বন্ধ কর।
    মজার ঝগড়ার মধ্য দিয়ে দুজন বাড়ি ফিরে গেল।এদিকে পিয়ন শান্তাকে না পেয়ে তার সই রুমাকে চিঠিটা দিয়ে বললেন,
    চিঠিটা শান্তাকে পৌছে দিবেন।
    ওকে। অবশ্যই দেব।
    রুমা দ্রুত গতিতে ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে গেল।কিন্তু শান্তাকে পেলো না।তারপর সে বাড়ি গিয়ে শান্তাকে বলল,
    শান্তা ভিতরে ভিতরে এত্তকিছু? প্রেম দেখছি একেবারে গভীরে…।
    রুমা এসব ফালতু কথার মানে কী?
    শান্তা ফালতু নয় সত্যি,এই দেখ চিঠি।
    কথাগুলো বলতে বলতে রুমা চিঠিটা শান্তার দিকে এগিয়ে দিলো।শান্তা নাম ঠিকানা দেখে বুঝতে পেরেছে চিঠিটা কে লিখেছে।তাই কোন প্রশ্ন না করে জানতে চাইল,
    রুমা এই চিঠি তুই কোথায় পেলে?
    পিয়ন তোকে না পেয়ে আমাকে দিয়ে গেছে।শান্তা কবে থেকে প্রেমের লেনদেন শুরু হলো?
    রুমা তোকে আমি পরে সব বলব।আপাতত আর কোন প্রশ্ন করবি না?
    ওকে। শান্তা আমি এখন চলি।
    রুমা বিদায় নিলো।শান্তা চিঠিটা পড়ে উত্তর লিখতে বসলো।
    নয়ন,
    আমার বিষন্নতায় ভরা অগোচানো মন থেকে ফুটে উঠা বুকভরা ভালোবাসা ও একরাশ প্রীতিময় শুভেচ্ছা তোমার হৃদয় দুয়ারে ছিটিয়ে দিলাম।তুমি সুখে থাক শান্তিতে থাক এই প্রার্থনা পরম করুনাময়ের কাছে।

    যাক নয়ন তোমার ভালোবাসায় ভরা কঠিন ভাষায় লেখা চিঠি সময় মতো এসে আমার হাতে পৌছেছে।যাহা আমাকে খুব পীড়িত করে তুলেছে।মানে ভালোবাসার যন্ত্রণায় আমি এখন বিভোর।
    যাহা পীড়িতের চেয়ে ও মর্মাহত ও মোহিত।শুরুতে তুমি ভালোবাসার এমন কঠিন ভাষা প্রয়োগ করেছ,যা বুঝতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।যাক বারবার কয়েকবার পড়ে তা সংক্ষেপন ভাষায় বুঝে নিলাম এবং ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করলাম।নয়ন তুমি কি দার্শনিক?
    তা নয়তো কি?চিঠির ভাষায় এত যুক্তিকথা দেখালে কি করে?লক্ষিটি আর কখনো এমন কঠিন ভাষা লিখবে না। কারণ দিল যে সহে না জ্বালা।
    সে চাই একান্ত আপন করে প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে, প্রাণ ভরে ভালোবাসতে।নয়ন তুমি আমার সঙ্গে কখন দেখা করবে?নাকি চিঠি বিনিময় করে অতিথি পাখির মতো হারিয়ে যাবে?যদি তাই হয় তোমার মনোষ্কামনা তবে এখানে সমাপ্তি টান।আমি কিছু মনে করবো না।নয়ন পুরুষ লোকের মনের গতি বুঝা কঠিন।আবেগের মোহে কখন কি করে বসে তার কোন নির্দিষ্টতা নেই।তাই বলছি সত্যি সত্যি যদি আমাকে ভালোবেসে থাক, তাহলে অতি শীঘ্রই দেখা কর। কারণ আমিও তাই চাই।তবে প্রমাণ হবে সত্যিকারের ভালোবাসা। আর বিশেষ কি লিখব।তোমার আগমনের অপেক্ষায় রইলাম।ভালো থেকো।খোদা হাফেজ।বিদায়।
    ইতি
    তোমারই মনের মাধুরীতে মিশে থাকা
    শান্তা।
    শান্তা কাজের ছেলে মন্টুকে দিয়ে তাড়াতাড়ি চিঠিটা পোস্ট করে দিলো।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

মাথায় ঢালে ময়লা

মানব জীবন অতি ছোটো কর্ম গুণটা বড়ো, সুবাস ছড়াও ভালো কর্মে তেমন জীবন গড়ো। কর্মের দোষে দেহের থেকে পঁচা গন্ধ

বিকল্প নাই

আযান শুনে নামাজ পড়ো মুসলিম তুমি ভাই। ইসলামী ওই শাসন নীতির বিকল্প যে নাই। প্রভুর প্রতি একিন তোমার ঈমানের ওই

বাঙালির ঐ শক্তি

মুক্তি যোদ্ধা দুঃসাহসের বাঙালির ঐ শক্তি, সমর যুদ্ধে রক্তের বদলা চাই না রক্তের ভক্তি। মুক্তি যোদ্ধা মানে মোদের বঙ্গ দেশের

উল্টায় গেছে দেশ

গুজব ছড়ায় মাতামাতি হাতা-হাতি আর, নিত্য নতুন গুজব দিয়ে দিনটা করে পার। সাগর জলে আগুন জ্বলে পাখির হবে কী, গাছের

Leave a Reply