উপন্যাস পর্ব দশ মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “দশ”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

অনুষ্ঠান শেষ হলো,নয়ন বাড়ি ফিরে আসল।শরীরের উপর দিয়ে অনেক দখল গেছে তাই দ্রুত শুয়ে পড়লো।শান্তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।অমনি তার চোখের সামনে ভেসে উঠল ভয়ঙ্কর এক দু:স্বপ্ন।সে শান্তা শান্তা বলে চিৎকার করে উঠল।ঘুমন্ত অবস্থায় যতই আওয়াজ করুক এটা কেউ শুনতে পায় না।এই জন্য নয়নের চিৎকার কেউ শুনেনি।চিৎকার করতে করতে এক সময় সে জেগে উঠল।দু:স্বপ্নটা স্মরণ করতেই সে অস্থির হয়ে উঠল।সমস্ত শরীর থত্থর করে কাঁপছে।এই মুহূর্তে স্বপ্নটা কারো সাথে যে শেয়ার করবে এমন কেউ ধারে কাছে নেই।কোনমতে রাত শেষ করলো।সকাল হলে সে বেরিয়ে পড়লো।যাক সময় মতো সে শান্তাদের বাড়িতে পৌছে গেল।বাড়িতে নতুন মেহমান এসেছে তাও আবার বেয়াই বলে কথা।অন্ধর মহলে খুব ধুম পড়ে গেছে।স্বল্প সময়ের মধ্যে কয়েক রকমের নাস্তা ও শরবত তৈরী করে ড্রয়িংরুমে পাঠিয়ে দিলো।চা নাস্তার পর্ব শেষ করে নয়ন হাত ঈশারায় শান্তাকে ডাকল।সে মায়ের চোখকে ধুলো দিয়ে নয়নের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো।পড়ন্ত বিকেলের চিকচিকা সোনালী রোদ,দখিনা মৃদু মলয় হিল্লাল বয়ে চলেছে।গাছের ডালপালা গুলো আপন নিয়মে এলোমেলো ভাবে দোল খাচ্ছে।সত্যি বিকেলটা খুবই মনোমুগ্ধকর শান্তা ও নয়নের জন্য।দুজন পুকুর পাড়ের গাছের শিকড়ে বসে বসে মজার গল্পে মেতে উঠেছে।গল্পের এক পর্যায়ে নয়ন বলল,
শান্তা গত রাতে আমি একটা দু:স্বপ্ন দেখেছি।আর তা বলার জন্য তোমার কাছে ছুটে এসেছি।
সত্যি?
হুম সুইট হার্ট সত্যি।
তো কি দেখেছিলে?
শান্তা স্বপ্নটা খুবই সিরিয়াস এবং ভয়ঙ্কর।
বলো কী!
তো আর বলছি কি।ভাবতে আমার সমস্ত শরীর কাঁফছে।
উহু!তাই, বল আমি শুনব।
ওকে সুইট হার্ট বলছি শুন,আমি গভীর ঘুমে মগ্ন,আর তখনি দেখলাম তুমি আমি কোথায় যেন যাচ্ছি।কিছু দূর যাবার পর দেখলাম ইয়া বড় একটা কুৎসিত লোক তোমাকে আমার কাছ থেকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি কেড়ে আনতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।সে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে..।মুহূর্তে আমার কণ্ঠস্বর বন্ধ,চোখ দুটো ঝাপসা,কিছু দেখতে পাচ্ছি না।তবুও শান্তা শান্তা বলে চিৎকার শুরু করে দিলাম।কিন্তু লোকটা শুনল না।তোমাকে নিয়ে পালিয়ে গেল।আমি কাঁদতে শুরু করলাম।তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।এবার তুমি বল এমন অদ্ভুত ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখার পর আমি কি স্থির থাকতে পারি?
এমন স্বপ্নের কথা শুনে শান্তার মনে ও ভয়ের সৃষ্টি হলো।পরক্ষণে সে বলল,
নয়ন বুঝতে পেরেছি।বিষয়টা খুবই সিরিয়াস।তবুও বলব যা দেখেছ ভালো দেখেছ।তবে সাবধান ভয় পেয়ে ও না।কারণ স্বপ্ন কখনো বাস্তবে আসে না।
শান্তা সত্যি বলছ তো?
হুম সত্যি।
স্বপ্নের কথা মিট হলো। কিন্তু নয়নের মন এখনো ভালো হল না।কারণ এখনো প্রিয়তমার সাথে ভালোবাসাবাসি করতে পারছে না।একদিকে লোক নিন্দার ভয় অন্য দিকে শান্তা একটু দূরে সরে বসে আছে।নয়ন গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।দৃশ্যটা তার চোখে পড়তেই বলল,
নয়ন এমন করে কি দেখছ?
তোমাকে।
এমন ভাবে দেখার মানে কি?
শান্তা স্বপ্নের কথা আমি এখনো ভুলতে পারছি না।আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে।
কেনো কেনো?
যদি তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যায়।
নয়ন তুমি মিছেমিছি চিন্তা করছ।আমি তোমারী আছি তোমারী থাকব।অন্য কারো হব না।
শান্তা সত্যি তুমি আমার হবে তো?।
ওকে সুইট হার্ট হব।
আমার হাতে হাত রেখে বল,কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না?
ওকে বলছি।
শান্তা আর দেরী করলো না।নয়নের হাতে হাত রেখে এক সঙ্গে বাঁচা মরার শফথ করলো।আর এই সুযোগে নয়ন তাকে জড়িয়ে ধরে কিস কিস…।
মুহূর্তে তারা ভুলে গেল লোক নিন্দার কথা।ক’মিনিট তারা রোমাঞ্চ….।
মন চাইল আরও কিছু সময় রোমাঞ্চ করতে কিন্তু শান্তার মনে ভয় ও শংকা জেগে উঠল।সে জড়োসড়ো হয়ে বলল,
নয়ন তুমি অনেক দুষ্ট হয়েছে।কেউ দেখলে কিন্তু বদনাম রটে যাবে।
ঠিক সেই মুহূর্তে শান্তার বাবার বন্ধু জামান সানি বাইক চালিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।তাদের এ রোমাঞ্চ দেখে বাইক ব্রেক করলেন,কে তা দেখার জন্য।আর তখনি শান্তা ও নয়ন দুজন দুপ্রান্তে ছিটকে পড়লো।তবুও ঠিক জামান সানি দুজনকে চিনতে পারলেন।তিনি আর দেরী করলেন না,ফুল স্প্রিডে বাইক চালিয়ে ছুটে গেলেন মার্কেটে।মইন আহমেদ সবেমাত্র দোকানের গদিতে বসলেন।ঠিক সেই মুহূর্তে জামান সানি তাকে ডেকে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গেলেন।তারপর শান্তা ও নয়নের ভালোবাসার কথা বললেন।
নয়ন সম্পর্কে বেয়াই রিফাতের মামা,শান্তার সাথে রিলেশন এটাতো বিশ্বাস করার কথা না।তাই মইন আহমেদ আবার বললেন,
জামান তুই ঠিক দেখেছিস তো?
কি বল মইন ভাই।আমি মিথ্যে বলতে যাব কেন।শান্তা কি আমার পর?
জামান সানির মুখের বানী শুনার পর মইন সাহেবের মেজাজ কি আর থেমে থাকে।তার মেজাজ চরমে উঠে গেল।পারলে তিনি নয়নকে জ্যান্ত কবর দেন।এমন চরম ভাবমূর্তি তার।তিনি বাইক চালিয়ে উল্কার গতিতি তাদের বাড়ির দিকে আসতে প্রস্তুত হলেন।তখনি জামান সানি বলল,
প্লিজ মইন ভাই শুন আমার কথা।
জামান আমি তোর কোন কথা শুনব না।ঐ নয়ন স্টুপিডকে আমি জ্যান্ত কবর দেব।
প্লিজ মইন ভাই এতে কেলেংকারী আর ও বাড়বে,বৈ কমবে না।যা করার কৌশলে করতে হবে।
জামান সানি মইন আহমেদকে কোন রকম বুঝিয়ে বসালেন।তারপর বললেন,
মইন ভাই আগে তোমার মেয়েকে ম্যানেজ কর।ছেলেকে ক্ষেপিয়ে কোন লাভ হবে না।এতে হিতে বিপরীত হবে,পাছে মান সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
মইন সাহেব আর বাড়াবাড়ি করলেন না।সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসলেন।রাগে বোম হয়ে ইজি চেয়ারে বসে একটার পর একটা সিগেরেট ধরাচ্ছেন আর ধোঁয়া ছাড়ছেন।স্ত্রী বুঝতে পারলেন স্বামী খুব রেগে আছে।তাই কোন কথা না বলে হাত পাখা দ্বারা বাতাস করতে লাগলেন।এমন সময় তিনি কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
রাজিয়া, রিফাতের মামা নয়ন আজ আমাদের বাড়িতে এসেছিল?
হ্যাঁ এসেছিল।কেনো কি হয়েছে?
কি হয়নি বল,আমার মান সম্মান বলে কিছু থাকল?
মানে কী?
মানে হলো তোমার মেয়ে নয়নের সঙ্গে…।
ছি: ছি: নয়ন রিফাতের মামা,শান্তা একবার ও ভাবল না এ কথাটা।মামার সঙ্গে কেউ প্রেম করে?
স্ত্রী দেখল স্বামীর ভাবমূর্তি ভালো না।তাই কোমল কণ্ঠে বলল,
ওগো শুনেন শান্তা এমন কাজ করবে তা আমার বিশ্বাস হয় না।হয়তো কেউ বানিয়ে মিথ্যে বলেছে।
রাজিয়া মিথ্যে নয়,জামান মার্কেটে যাওয়ার পথে নিজ চোখে দেখেছে।
জামান সানির কথা বলাতে স্ত্রী বুঝতে পারলেন ঘটনাটা সত্যি হতে পারে।তাই ভদ্র ভাবে বললেন,
ওগো আপনি চিন্তা করবেন না।শান্তাকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার।আমি যেমন করে হোক ওকে সামলাব।
স্বামীকে কোন রকম বুঝিয়ে ছুটে গেলেন মেয়ের ঘরে।শান্তা এখনো ঘুমায়নি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মা গিয়ে মেয়ের পাশে বসলেন।তারপর ডাক দিলেন,
শান্তা ঘুমিয়েছিস মা?,
জ্বী না মা এখনো ঘুমায়নি।কিছু বলবে?
শান্তা তুই আমাদের অতি আদরের ছোট মেয়ে।তোকে আমরা খুব ভালোবাসি।যাচাই বাছাই করে তোকে ভালো ঘর,ভালো বর দেখে বিয়ে দেব এটাই আমাদের আশা।আর তুই কিনা রিফাতের মামা নয়নের সঙ্গে…।
এ তুই কি করলি, নয়ন সম্পর্কে মামা।মাত্র দুদিনের পরিচয়ে কেউ এমন করে?বল চুপ করে আছিস কেনো?
এতক্ষণ পরে শান্তার মুখ দিয়ে কথা বের হলো।সে বলল,
মা পরিচয়টা দুদিনের নয়?
ঝুমা আপুর বিয়ের আগে থেকে। সে আমাকে খুব ভালোবাসে।
আর তুই?
জ্বী হ্যাঁ মা আমিও তাকে ভালোবাসি।
শান্তা এসব ফালতু ভালোবাসা তোর বাবা কখনো মানবে না।আমি তোর বাবাকে কথা দিয়েছি তোকে ম্যানেজ করব।ফের যদি তোর বাবা দেখে বা শুনে তুই নয়নের সঙ্গে কথা বলেছিস, কি হবে আমি জানি না।এখনো সময় আছে মা তুই ওকে ভুলে যা,অন্তত তোর বাবার মান সম্মানের কথা ভেবে।
মেয়েকে কিছু উপদেশ দিয়ে মা চলে গেলেন।শান্তা খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে।নয়নকে ও ভুলতে পারছে না।মা-বাবার কথাও রাখতে পারছে না।উভয় সংকটে পড়েছে সে।রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে তবুও তার ভাবনার অবসান হচ্ছে না।
ঝুমার বিয়ে উপলক্ষে কদিন শান্তা কলেজ মিস করেছে।বিয়ের ঝামেলা শেষ ফের তাকে কলেজে যেতে হলো।শুরুতে সইদের সঙ্গে কুশল বিনিময়,তারপর সময় মতো ক্লাস।
এদিকে নয়ন ও খুব টেনশনে আছে।কারণ জামান সানি তাদেরকে রোমাঞ্চ অবস্থায় দেখেছে।শান্তার উপর দিয়ে কি বিপদ বয়ে গেছে কে জানে।সব চিন্তা তার মাথায় উৎপেতে বসল।জানার জন্য ছুটে আসল শান্তার কাছে।কলেজ গেটের বাইরে একটা দোকানে বসে রইল।কলেজ ছুটি হলো শান্তা বেরিয়ে পড়লো।ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।তখনি নয়ন তাকে ডাক দিলো।শান্তা থমকে দাঁড়ালো।নয়ন যোগ হলো।দুজন পার্কে গিয়ে বসলো।শান্তার মন খুব খারাপ। নয়ন তা বুঝতে পেরে বলল,
শান্তা আমাদের প্রেমের কথাটা কি উনারা জেনে গেছেন?
নয়ন শুধু জেনে যায়নি।মা কড়া সংকেত দিয়েছেন তোমার সাথে সম্পর্ক চিন্ন করতে।
শান্তা অসম্ভব আমি তোমাকে ছাড়া বাঁঁচব না।আমি তোমাকে ভালোবাসি,শুধু তোমাকে।
নয়ন আমিও তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু বাবা কখনো এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না।
শান্তা সেটাতো আমিও ভাবছি।
তো এখন কি করবে?
শান্তা এক মিনিট আমাকে একটু ভাবতে দাও।
ভাবনার অবসান ঘটিয়ে নয়ন বলল,
শান্তা আমি চিন্তা করে দেখলাম উনারা যখন আমাদের এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না,তখন গোপনে বিয়ে করে নেয়াটা ভালো হবে।
নয়ন পরে যখন উনারা জানবে তখন কি করবে?
উনারা যদি মেনে নেয় নিবে।আর যদি না নেয় আমরা আলাদা সংসার করবো।
বাবা যদি মামলা করেন?
কিচ্ছু করতে পারবে না।কারণ আমরা দুজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক।তো চলো কাজী অফিসে।
এক্ষুনি?
হুম এক্ষুনি।আজই আমরা বিয়ে করব।কারণ হয়তো আর এ সুযোগ নাও পেতে পারি।
শান্তা আর অমত করলো না।দুজন ছুটে গেল কাজী অফিসে।তারপর বিয়ে করে স্ব স্ব বাড়িতে ফিরে গেল।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

নব্যতন্ত্র দেশ

বঙ্গ দেশের জমিন কেনা তাজা রক্ত দিয়ে, সাহস শক্তি অটুট ছিলো কেতন হাতে নিয়ে। বঙ্গ দেশের এই মাটিতে কতো রক্ত

কবিতা ভালোবাসার পরাজয়

কবিতা ভালোবাসার পরাজয় আফছানা খানম অথৈ তুমি আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা তাই মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিলাম সর্বদা আর

জুম্মার দিন

জুম্মার দিন মোঃ রুহুল আমিন জুম্মার দিনে একটু আগে কাজ গুছিয়ে নাও, আযান হলে গোসল সেরে মসজিদ ঘরে যাও। প্রথম

কেমন প্রথা নীতি

মানব জাতি ধর্মের জন্যেই ধরায় বুঝি সৃষ্টি, জাতি বিভেদ করছে তবে ভিন্ন ভিন্ন কৃষ্টি। মানব জাতি করে পালন স্বজাতির ঐ

Leave a Reply