উপন্যাস পর্ব “পাঁচ”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ
রাত শেষ প্রভাতের সুচনা হলো।গাছের মগডালে বসে পাখি গুলো কিচির মিচির ডাকছে।মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আযান ধ্বনি বেজে উঠল।শান্তার মাতা রাজিয়া বেগম অজু করে পবিত্র হয়ে নামাজ পড়লেন।তারপর স্বামীকে বললেন,
ওগো আপনার সারা জীবন এভাবে যাবে নাকি?নামাজ রোজা করবেন না,ওঠেন নামাজ পড়তে।
স্ত্রী কথা যেন তার কানে গেল না।তিনি নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছেন।স্ত্রী কিন্তু থেমে নেই স্বামীকে বার বার জাগাচ্ছেন।স্বামী কিন্তু আর থেমে নেই।জেগে উঠে চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ করে বললেন,
রাজিয়া এই সাজ সকালে কি শুরু করে দিলে?
কি শুরু করলাম মানে,খারাপ কিছুতো বলিনি।নামাজ পড়তে বলেছি।
বেনামাজীকে নামাজের কথা বললে চটে উঠাটা স্বাভাবিক।তিনি পূণরায় চোখ রাঙিয়ে বলেন,
রাজিয়া তোমার এত বড় স্পর্দা আমাকে শাসাচ্ছ?
আপনি ভুল বলছেন।আমি শাসাচ্ছি না।নামাজ পড়ার কথা বলছি।উঠেন তাড়াতাড়ি।
না আমি উঠব না।
এভাবে কয়েকবার রাজিয়া বেগম স্বামীকে জাগালেন।
স্বামী কিন্ত উঠলেন না।রেগে উঠে বললেন,
রাজিয়া আমি নামাজ পড়ি আর না পড়ি এই নিয়ে আর কোন কথা বলবে না।সাবধান।।
আপনার সাবধান বাণী আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।কারণ আপনাকে নামাজী করে গড়ে তোলা আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।সারাজীবন না হয় ছেলে মানষী করেছেন,এবার তওবা করে নামাজ রোজা করেন পরকালের চিন্তা করেন।তানা হলে কঠিন গুনাগার হবেন।
কিছু লোক মনগড়া ভাবে পুরুষের পক্ষ নিয়ে কিছু বই বের করেছেন।এজন্য পুরুষ মানুষেরা সর্বদা পাপ ও অন্যায় করে তাকে ন্যায় বলে সাপোর্ট করে।এই জন্য মইন আহমেদ স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
রাজিয়া তুমি বিরাট ভুল করলে।
কি বলছেন আপনি,আমি ভুল করলাম মানে?
মানে বলছি শুন,স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে না।যেমন নামাজের কথা বলা কোন পাপ করলে তার প্রতিবাদ করা।এই সব বলা গুনার কাজ।
বাহ! মইন সাহেব ভালো বলেছেন,নিজেদের পাপকে ঢাকার জন্য মনগড়া মাসায়েল না?
রাজিয়া আমি মনগড়া কথা বলিনি,এটা শরীয়তে উল্লেখ আছে।
শুনেন মনগড়া শরীয়ত বিশ্বাস করাটা বেদা’ত।শুধু তাই নয় কোরান ও হাদীসের বাইরে কিছু বিশ্বাস করাও বেদাত। আল্লাহ ও রাসুলের বিধান ছাড়া অন্য কোন রীতিনীতি বিশ্বাস করা নিষেধ।কারণ ধর্মের কথা মনগড়া বলা যাবে না।
রাজিয়া বাদ দাওতো এসব প্রসঙ্গ। আমাদের কাজ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাবে না।আমরা যা খুশি তাই করব,নামাজ রোজা এসব প্রসঙ্গ নিয়ে কখনো কথা বলবে না।
মাথা ঘামাব না মানে,একশ বার বলব,হাজার বার বলব,নামাজ রোজা করার জন্য।কারণ পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক এশরাদ করেছেন,প্রত্যেক নর-নারীর উপর নামাজ “ফরজ”।শুধু তাই নয় পবিত্র কোরানে তেত্রিশ বার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন।কোন মুসলিম যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ পরিত্যাগ করে তাহলে সে কঠিন গুনাগার হবে।পুরুষদের নামাজ না পড়ার কথাতো কোরানের কোথাও উল্লেখ করেনি।তাহলে কোন বিধান অনুযায়ী এত উঁচু গলায় কথা বলছেন?সাবধান আর কখনো মনগড়া কথা বলবেন না।দিন বদলের পালা এসেছে, আস্তে আস্তে মানুষ কোরান হাদীসে বিধি বিধান শিখতে শুরু করেছে।এখনো সময় আছে তওবা করে নামাজ পড়েন তানা হলে পরকালে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে।
স্ত্রীর মুখে কোরানের আলোকে ব্যাখ্যা শুনে তিনি চুপসে গেলেন।কিন্তু নামাজ পড়তে গেলেন না।গলা ছাড়িয়ে কাজের ছেলেকে ডাকেন।
মন্টুর কাজ সকাল হলে গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা ঘরু-বাচুর দেখভাল করা।সে গোয়াল ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই মইন সাহেব বললেন,
মন্টু?
জ্বী সাহেব বলুন?
গরু-বাচুর গুলো ঠিক মতো আছেতো?
জ্বী সাহেব আছে।তই খইল ভুষি শেষ অইয়া গেছে।
ঠিক আছে তুই আমার সঙ্গে আস।
চাকর মুনিব দুজন পায়ে হেটে ষ্টেশনের দিকে গেলেন।তাদেরকে দেখে পরিচিত লালু ড্রাইভার বলল,
সাব আমার রিক্সায় উড়েন।
তিনি রিক্সায় উঠে বসলেন।ড্রাইভার হ্যান্ডেলে চাপ দিলো এমন সময় অন্যজন বলল,
সাব আপনি এইডা কি করলেন,আমি কখন থেইক্যা আপনার লাইগ্যা বইয়া রইলাম।রোজতো আমার রিক্সায় উডেন, আজ আবার অন্য রিক্সায় উঠলেন ক্যান?
রাগ হয়ে লালু ড্রাইভার বলল,
আমার পেসেনজার আমি লইছি তুই এর মধ্যে কথা কস ক্যান?
কথাগুলো বলতে বলতে তিনি এগিয়ে গিয়ে তার গালে কষে দিলেন চড়।অমনি শুরু হলো দুড্রাইভারের মধ্যে মারামারি..।
মইন সাহেব রিক্সা থেকে নেমে তা মিটমাট করে বাজারে গেলেন।সদাই করে মন্টুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।অত:পর দোকানের গদিতে গিয়ে বসলেন।দোকানে নতুন কাপড় এসেছে,তাই কাস্টমারের খুব ঝামেলা।মইন সাহেব টাকা বুঝে নিয়ে মেমো দিচ্ছেন।এমন সময় তার বন্ধু ফারুক মাস্টার এসে তাকে জরুরী ভিত্তিতে ডেকে নিয়ে গেলেন।তার মেঝো মেয়ে ঝুমার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য। ঝুমার বিয়ের জন্য একটা ভালো প্রস্তাব এসেছে।আলম মাস্টারের বড় ছেলে রিফাত আলম।উচ্চ শিক্ষিত,সুদর্শন ভদ্র নম্র,বড় ব্যবসায়ী,নিজস্ব বাড়ি গাড়ি।
বায়োডাটা শুনার পর মইন সাহেব বললেন,
ফারুক ভাই পাত্র যখন সবদিকে ভালো।তো আর দেরী করার প্রয়োজন নেই।তুমি আজই কথা পাকা কর।
মইন ভাই তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি জরুরী ভিত্তিতে কথা পাকা করবো।তো আরেকটা কথা।
ফারুক ভাই বল কি কথা?
রিফাত শহরে থাকে,এ যুগের ছেলে,সে ঝুমাকে দেখতে চাই?
ফারুক ভাই ভালো কথা দেখবে, এমনিতে বিয়ে শাদীর ব্যাপার আগেই ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখে নেয়া ভালো।তো কখন দেখতে আসবে?
মইন ভাই বাড়িতে না।
তাহলে কোথায়?
ঝুমার কলেজে যাবে ওরা।ছুটির পর দেখা করবে।ঝুমা মা মনিকে ভালো করে সেজে গুজে কলেজে পাঠাবে কিন্তু।
ওকে ফারুক ভাই তাই হবে।