ক্যালসিয়াম একটি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পুষ্টি উপাদান, যা বিভিন্ন খাদ্য, যেমন দুগ্ধজাতীয় খাদ্যে পাওয়া যায়। মানবদেহের হাঁড় এবং দাঁতের প্রায় ৯৯% ক্যালসিয়াম দ্বারা গঠিত। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাঁড় নিয়মিত ক্ষয় হতে থাকে। এই লেখার মাধ্যমে জেনে নিন ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা।
আমাদের শরীরে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব কমতে থাকে। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ পুনরায় হাঁড় গঠন করে এবং শরীর শক্তিশালী করে। হৃৎপিন্ড, স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াতেও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
ক্যালিসয়াম ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন, ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ইত্যাদি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আমরা সাধারণত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেয়েই ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে থাকি যাতে হাঁড় ক্ষয়জনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। একজন সুস্থ মানুষের গড়ে প্রতিদিন এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের দরকার পড়ে। তাই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আজকের লেখাটিতে যে সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে–
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
মানুষের দেহ নিজে থেকে ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করতে পারে না। বিভিন্ন খাদ্য উপাদান থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম দেহ তার কাজে লাগায়। ফল, শাক-সবজি, দুগ্ধজাতীয় খাবার হতে আমরা ক্যালসিয়াম পাই।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার হিসেবে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারের হিসেবে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকি–
এসব শাক-সবজি কাটার পরে না ধুয়ে, ধোয়ার পরে কাটা ভালো। তাহলে পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকার পাশাপাশি বেশি পরিমানে ক্যালসিয়ামও গ্রহণ করা সম্ভব। এখন আমাদের চাহিদা অনুসারে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে গৃহীত খাদ্যের পরিমাণ পরিমিত মাত্রার চেয়ে বেশি না হয়ে যায়।
ক্যালসিয়াম যুক্ত ফল
ক্যালসিয়াম এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা ছাড়া মানুষ ক্রমেই দুর্বলতার দিকে ধাবিত হতে থাকে। আমাদের উচিত নিয়মিত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। বিভিন্ন ফলমূল বা শুকনো খাবার আমাদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
যেমন, প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ২৮০ মিলিগ্রাম, বাদামে ১১৭ মিলিগ্রাম, কমলাতে ৪০ মিলিগ্রাম, খেজুরে ৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকে। (তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া)
এই ফলমূলগুলো হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। তাই নিজে এবং নিজের পরিবারের লোকজনকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ক্যালসিয়াম জাতীয় সবজি
শুধুমাত্র ফলমূল এবং দামী খাওয়ারেই ক্যালসিয়াম থাকবে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং হাতের নাগালের মধ্যেই যে সকল সবজি পাওয়া যায় সেগুলোতেই বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। শাক-সবজিতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও অনেক খণিজ ও পুষ্টি উপাদান থাকে।
যেমন, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ২৫০ মিলিগ্রাম, ঢেঁড়সে ৮২ মিলিগ্রাম, ফুলকপিতে ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকতে পারে। তাই, সুস্থ সবল থাকতে প্রতিদিনের আহারে শাক-সবজির কোনো বিকল্প নেই।
ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়
আমাদের দেহ যেহেতু নিজে থেকে ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করতে পারে না, তাই খাদ্য অথবা ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। তবে ঔষধের তুলনায় খাদ্য হতে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম দেহের জন্য তুলনামূলক ভালো।
বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, দুধ, ডিম ইত্যাদি হতে আমরা দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়াতে পারি। আরেকটা ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করতে হবে, তাহলে শরীরে পেশি গঠন ও হাঁড় সবল থাকবে।
আবার অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম দেহে জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন, কিডনিতে পাথর। তাই কোনো ডোজ নেয়ার আগে বা শরীর চর্চার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আয়রন ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার
শরীর সুস্থ রাখতে কেবল ক্যালসিয়াম নয় বরং আয়রনেরও দরকার রয়েছে। যে সকল খাবারে আমরা একই সাথে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম পেতে পারি সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জানা যাক।
সয়াবিন
সয়াবিনে আমরা কেবল মাত্র আয়রন পেয়ে থাকি, এমনটা নয়। সয়াবিনের প্রতি ১০০ গ্রামে ২৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৫.৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। নিয়মিত সয়াবিন খেলে হাঁড় যেমন মজবুত থাকে তেমনই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়।
সবুজ শাক ও সবজি
শাক ও সবজিতে ক্যালসিয়াম ও আয়রন ছাড়াও অনেক খণিজ ও পুষ্টি উপাদান থাকে। তাই আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতায় ভূগতে না চাইলে প্রতিদিনের আহারে নিয়মিত সবুজ শাক সবজি রাখার চেষ্টা করুন। বেশিভাগ শাক সবজিই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচ্য।
খেঁজুর
আয়রনের আরেকটি অন্যতম উৎস হলো খেঁজুর। ক্যালসিয়ামের পরিমাণও নেহায়েৎ কম নয়। খেঁজুরের মধ্যে রয়েছে আঁশ। তাই প্রতিদিনের সকাল বা বিকালের হালকা খাবার হিসাবে খেজুর হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।
এ ছাড়াও পনির, ডিমকেও আয়রন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ
বয়সের যেকোন অবস্থাতেই দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পায়ে ও হাতে অসাঢ়তা ক্যালসিয়ামের অভাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্যালসিয়ামের অভাবে আমরা দুর্বলতা অনুভব করি। আর এক্ষেত্রে কাজ না করেও আমরা সারাদিন ক্লান্তিবোধ করি।
হাঁড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। একে অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড়ক্ষয়ে যাওয়া রোগ বলে। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দাঁতের নানা-রকম সমস্যাও ক্যালসিয়াম ঘাটতির অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
এই ঘাটতিজনিত কারণে স্নায়ুও দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে ত্বকের পিএইচ এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। নখ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই এসকল সমস্যা নজরে আসলে যতদ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর উপকারিতা
দেহের মৌলিক কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম। পেশি, স্নায়ুর সক্রিয়তা ঠিক রাখতেও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। দাঁত এবং হাড়ের সুস্থতার জন্যও ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান।
এটি আমাদের হাড়কে শক্তিশালী এবং ঘন করে তোলে। তাই দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে আমরা দুর্বল অনুভব করি এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে এর ঘাটতি পূরণ করতে চাইলে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট হতে পারে উপযুক্ত উপায়।
ক্যালসিয়াম ঔষধ
মানুষের বিভিন্ন বয়সে আলাদা পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। নিচের তালিকাটি অনুসরণ করে আপনি দৈনিক ক্যালসিয়াম চাহিদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন।
এ চাহিদা পূরণের জন্য আমরা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণও করতে পারি। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি মুখ দ্বারা গ্রহণের উপযোগী ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বিক্রয় করে। বাংলাদেশে বহুল পরিচিত কোম্পানির যে সকল ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বিভিন্ন ফার্মেসিতে পাওয়া যায় সেগুলো দেখে নিন–
এছাড়াও আরো বিভিন্ন কোম্পানি এইসব ঔষধ প্রস্তত করে থাকে। তবে অন্যান্য জটিল রোগে ভুগলে এসব ওষুদ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আমাদের সকলকেই বৃদ্ধ হতে হবে। ইদানীং আমরা বৃদ্ধদের হাটু ও পায়ের হাড় জনিত বিভিন্ন রোগে ভুগতে দেখি। এছাড়া মেরুদণ্ড ব্যথা জনিত রোগের কথাও শোনা যাচ্ছে। এগুলো মূলত ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ। তাই উপযুক্ত সময়ে ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করলে বৃদ্ধ বয়সে বড়রকম সমস্যায় পড়তে পারেন। আর সেজন্য ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার আমাদের সকলের গ্রহণ করা উচিত।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আমাদের অন্যান্য লেখাগুলো পড়ুন–