আলোর মিছিল
আফছানা খানম অথৈ
জসিম মাস্টারের স্ত্রী বিবি কুলসুম পানতা ভাত আর আলুর ভরতা রেডি করে খেতে ডাকছে।সেকী! মাস্টার এখনো উঠেনি,নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।এমন সময় হাবলুর মা ছুটে আসল।আজ তার অংক পরীক্ষা।অংকে সে খুব কাঁচা।যতই বুঝায় কোন লাভ হয়না।এক কান দিয়ে ঢুকে আর এক কান দিয়ে বের হয়ে যায়।বাবা হারা হাবলুকে নিয়ে মায়ের যত চিন্তা।পরীক্ষায় যদি ফেল করে।তাই জসিম মাস্টারকে ডাকতে এসেছে অংক করাতে।হাবলুর মায়ের ডাকে মাস্টারের ঘুম ভাঙল।তিনি তড়িঘড়ি করে রেডি হলেন।এমন সময় ছোট মেয়েটা বলল,
বাবা আমায় পাঁচটা টাকা দিবে?
মাস্টার পকেটে হাত দিয়ে দেখে টাকা নেই।দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
মা মনি আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, টাকা পরে দেব।
মেয়েকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মাস্টার।কিন্তু এভাবে আর কতদিন।টিউশনি আর স্কুলের মাইনের টাকা যা পান তা দিয়ে টেনে টুনে সংসার চালান।মাছ মাংস তাদের খাদ্যের তালিকায় নেই বললে চলে।ডাল আর আলুর ভরতা যেন খাবারের নিয়মিত মেনু।মাঝে মাঝে এসব যোগাতে ও কষ্ট হয় মাস্টারের।কোন কোন সময় না খেয়ে ও থাকেন পরিবারের লোকজন।
তিনি নামীদামী কোন স্কুলের মাস্টার নয়।কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মাস্টার,যা আল আমিন আইডিয়্যাল একাডেমী নামে পরিচিত।এই স্কুলের অফিস সহকারী ও মাস্টার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।মাসিক মাইনে মাত্র চারশ টাকা।
মাস্টার হাবলুকে অংক দেখিয়ে দিয়ে ছুটে এলেন স্কুলে।ততক্ষণে সকাল নয়টা বেজে গেল।তার আসার কথা ছিল সকাল আটটায়।এত দেরী স্কুল কর্তৃপক্ষ মেনে নেবেন না।সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন,ছাপ ছাপ জানিয়ে দিলেন,এমন অনিয়ম করলে চাকরী থেকে বরখাস্ত করবেন।মাস্টার কোন প্রতিবাদ করলনা।অফিসের কাজে মনোযোগ দিলেন।ঘন্টা খানেক কাজ করার পর তার ডাক পড়ল শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের।তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে পাঠদান করেন।তার পাঠদানে ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি।তাকে সবাই ভালোবাসে।তিনি কখনো বাচ্চাদের মারপিট করেন না।স্নেহমমতা ও ভালোবাসা দিয়ে বাচ্চাদের পড়ান।মাস্টার উচ্চ শিক্ষিত নয়,মাত্র ম্যাট্টিক পাশ।কিন্তু তার পড়ালেখা দেখে মনে হয়না,তিনি কম শিক্ষিত।গভ:মেন্ট টিচার’রা ওতার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারবেন না।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল বিষয় ছিল তার মুখস্থ। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় কি জানেন,তিনি অংক ইংরেজিতে ছিলেন খুব পারদর্শী।অংকের গাইড না দেখে অংক করাতেন।অংকগুলো যেন তার মুখস্থ,অনুরুপ ইংরেজীর ক্ষেত্রে ও তাই,গাইড না দেখে অর্থ বলে দিতে পারতেন।এমন অভিজ্ঞতা তার।অনেক সরকারী টিচার তার কাছ থেকে অংক বুঝে নিতেন।হাতের লেখাও বেশ চমৎকার, মনে হয় টাইপ করছেন।তার লেখা অনেকে ফলো করত।এমন একজন শিক্ষককে দিন রাত খাটাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ছুটির দিনও তাকে অফিসের কাজ করতে হয়।আজ ছুটির দিন তবু ও অবসর নেই।ঘন্টা খানেক কাজ করার পর, জরিনার মা আসল তার কাছে।
জরিনার বাবা কারণে অকারণে নির্যাতন করে।কাজকর্ম করেনা।পেটে দেয়না ভাত পরনে দেয়না কাপড়।কিছু বললে কষে মারে,তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।তাকে শায়েস্তা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করবেন।তার জন্য একটা দরখাস্ত লাগবে।তা লিখে দিবেন মাস্টার।তিনি এসব বিষয়ে ও অভিজ্ঞ।সময় করে তাকে একটা দরখাস্ত লিখে দিলেন।জরিনার মা তাকে দশ টাকা দিলেন।তিনি পকেটে গুজে রাখলেন কম বেশি কিছু বললেন না।এভাবে তিনি সকল মানুষের উপকার করেন।
তার বড় ছেলে হাসান পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেছে।সে পড়ালেখায় খুব ভালো,আরও পড়তে চাই।কিন্তু টাকার অভাবে তার আর পড়া হলো না।তার আট ছেলে মেয়ে। প্রতিটা ছেলেমেয়ে তার মতো মেধাবী। কিন্তু দু:খের বিষয় মাস্টার কাউকে পঞ্চম শ্রেণির উর্ধেব পড়াতে পারেননি।
বড় মেয়ে হাফসা বিবাহযোগ্য তাকে বিয়ে দেয়া দরকার।কিন্তু বর্তমানে দিনকালের যা অবস্থা যৌতুক ছাড়া মেয়েদের বিয়ে হয়না।হাফসার ক্ষেত্রে ও তাই।,কেউ চায় নগদ টাকা,কেউ চায় স্বর্ণঅলংকার। কিন্তু এক সঙ্গে এতকিছু কোত্থেকে দেবে।তাই বলে কি হাফসার বিয়ে হবেনা।না তা কি করে হয়।অবশেষে উপায় একটা বের হলো।কিছু টাকা কর্জ করে হাফসার বিয়ে দিলেন।খরচ বেড়ে গেল।সংসারের খরচ ঋনের টাকা দিতে গিয়ে নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে মাস্টারকে।তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।শিক্ষকতা ছাড়া ও তিনি বাসায় বাসায় টিউশনি করেন।প্রতিদিন সকালে বের হন রাতে বাড়ি ফিরেন।এসময়টাতে অবসর নেই।লোকজন বাড়িবয়ে আসে।
আজ এসেছে মামুনের বাবা।
কষ্ট করে ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়েছে,বড় চাকরী করে।ভালোবেসে বিয়ে করেছে এক বড় লোকের মেয়েকে।এখন আর বাবা মায়ের খবর নেয়না।মায়ের খুব অসুখ, ডাক্তার দেখাতে হবে।ছেলের কাছে চিঠি লেখবেন, সেই চিঠি মাস্টারকে লিখে দিতে হবে।মাস্টার একটু ও বিরক্ত হলেন না।সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লিখে দিলেন।মামুনের বাবা চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল,
মাস্টার তোমারলাই দোয়া করি,আল্লাহ তোমার বালা করুক।হাতে ট্যাকা নাই,তাই দিবার পারিনাই।কিছু মনে কইরোনা।আজ দুইদিন ধইরা না খাইয়া আছি।তোমার চাচীর শরীরটাও বালা নাই।পোলাডা আমাগো খবর লয়না।
চোখের জলের আর বাঁধ মানলনা।টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল।মাস্টার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
চাচা টাকা দেয়া লাগবেনা।আপনি যান।
মামুনের বাবা বিদায় নিলো।মাস্টারের স্ত্রী বলল,
এভাবে খালী হাতে কাজ করলে, পেটে খাবার জুটবে কেমনে।সকালে বের হন রাতে ফিরেন।সংসারের খবর কিছু রাখেন।আজ রান্না করি নাই।
কেনো বউ?
আবার জিগান কেনো,ঘরে চাল ডাল কিচ্ছু নেই।
আগে বলনি কেনো?
বলব কেমনে,সকালে যান,রাতে ফিরেন।ছোট মেয়েটা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমার হয়েছে যত জ্বালা।কেনো যে বাবা আমারে এই অভাবের সংসারে বিয়ে দিলেন।উঁঃ উঁঃ উঁঃ।
বউ কেঁদোনা।আমি এক্ষণই খাবার নিয়ে আসছি।
এত রাতে খাবার আনতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে।এক বেলা উপোষ এ আর এমন কি।প্রায় সময়তো থাকতে হয়।এছাড়া গ্রাম অঞ্চলের রাস্তা এ সময় ফাঁকা থাকে, লোকজন শুন্য,জ্বীন ভুত চলাফেরা করে।একলা পেলে জ্বীন ভুতে আছর করে।এইতো সেদিনকার কথা ময়মুনার বাপেরে জ্বীনে ধরেছে।এই ভয়ে মাস্টারকে যেতে দিলেন না স্ত্রী।
সকাল হতে না হতে হাজির হলো স্বাস্থ্য সহকারী ফখর ভাই।মাস্টারকে ডাকতে তিনি উঠে পড়লেন।তার মাঠ জরিপ করতে হবে।আর এই কাজটা মাস্টারকে করতে হবে।এক গাদা ফাইল তার হাতে দিয়ে বলল,
স্যার কাজটা তাড়াতাড়ি করে দেবেন।
কোন কাজে বিরক্ত নেই মাস্টারের।একগাল মিষ্টি হেসে উত্তর দিলেন।
চিন্তা করবেন না।সময়মতো করে দেব।
আজ শুক্রবার ছুটির দিন।একটু যে রেস্ট নিবেন তা আর পারলেন কৈ।পেটে নেই ভাত মাথায় এক গাদা কাজের বোঝা।বড় লোকদের মন কখনো বড় হয়না।গরীবদের ঠকানো তাদের একটা বৈশিষ্ঠ্য।কাজের ন্যায্য মুল্য দিতে চায়না। এই যে এত বড় একটা কাজের জন্য মাস্টারকে দিলেন মাত্র দুশো টাকা।মাস্টার কিছু বলল না।না খেয়ে বেরিয়ে পড়ল।দোকানে গিয়ে এক কাপ চা আর বন খেয়ে নিলেন।সারাদিন জরিপের কাজে ব্যস্ত।
এদিকে পরিবারের লোকজন যে না খেয়ে আছে সে খেয়াল নেই।সূর্য ঠিক মাথার উপরে খাবার আনার নাম নেই।মাস্টারের স্ত্রী কোন উপায় না দেখে পাশের বাড়ির ভাবীর কাছ থেকে কিছু চাল এনে রান্না করলেন।ছেলে মেয়েকে খাওয়ালেন।অনেক রাতে মাস্টার বাড়ি ফিরল।বউ দিলো এক ঝাড়ি।নীরবে সবকিছি হজম করলো।
এভাবে নিজের পরিবারের কথা না ভেবে মাস্টার মানুষের উপকার করেন।কিন্তু মানুষ তার ন্যায্য মুল্য দেয়না।তার যে পেট আছে, স্ত্রী,ছেলে মেয়ে আছে।তাদের খাওয়া পরা দরকার।তা আমাদের সমাজের বিত্তশালী মানুষেরা ভাবেন না।মাস্টারকে খাটান সামান্য টাকা দিয়ে।
আসছে স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়াপ্রতিযোগীতা।ছাত্র ছাত্রীদের খেলাধুলা ও নাছ গানের ট্রেনিং দিতে হবে।তাও জসিম মাস্টারকে করতে হবে।তিনি একটা আঞ্চলিক ও জারিগান লিখে নিজে সুর করেছেন।তার লেখা গান প্রতিযোগীতায় সেরা হয়েছে।সবাই মাস্টারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।কিন্তু কেউ এক টাকা ও পুরুস্কার দিলেন না,স্কুল কর্তৃপক্ষ না।অথচ তিনি দিন রাত খেটে ছাত্রছাত্রীদের যোগ্য করে তুলেছেন।
এমনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কেটে চলেছে তার দিলকাল।সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকে।অভাব যেন তার পিচু ছাড়ছেনা।মেঝো মেয়ে পায়রার হঠাৎ ডায়রিয়া দেখা দেয়।হাসপাতালে নিতে হবে তানা হলে বাঁচানো যাবেনা,সিরিয়াস অবস্থা।মাস্টারের হাত খালী টাকা পয়সা নেই।স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলেন,
ওগো বসে আছেন কেনো?ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলেন।
মাস এখনো শেষ হয়নি। মাইনের টাকা পেতে দেরী আছে।স্কুল কর্তৃপক্ষকে বললেন কিছু টাকা ধার দিতে।তারা রাজী হলোনা।একবুক দু:খ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলেন।বউকে পাঠালেন আকবরের কাছে।আকবর সুদের উপর টাকা লাগায়।তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা কর্জ এনে মেয়েকে হাসপাতালে নিলেন।দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলো।আল্লাহর রহমতে পায়রা সুস্থ হয়ে উঠল।আকবর অনেক টাকা পাবে।একদিন বাড়ি এসে বলল,
মাস্টার আমার টাকা কখন দিবা?
আকবর ভাই একটু অপেক্ষা করেন।আস্তে আস্তে দিয়ে দেব।
অপেক্ষাতো আর কম করলাম না।শুধু দিবা দিবা কও।আমি আর মানবার পারুম না।আগামী সাতদিনের মধ্যে টাকা না দিলে আমি কেচ করমু,কইয়া দিলাম।
আকবর সুদখোর কড়া স্বভাবের মানুষ।কেচ করাটা তারজন্য কোন ব্যাপার না।সে অনেককে জেল খাটিয়েছে।তার টাকা খেয়ে কেউ হজম করতে পারেনি।সুদে আসলে দ্বিগুন শোধ করতে হয়েছে।
সংসারের দারিদ্রতা, অভাব অনটন ঋনের বোঝা সব মাস্টারের মাথায় জড়ো…।আর কত সইবে।যেদিকে হাত বাড়ায় ফিরিয়ে দেয়।কেউ টাকা ধার দেয়না, সুদ ছাড়া।এখন উপায়।
ঋনের টাকা শোধ করবে কোত্থকে।যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।মানসিক ডিপ্রেশন ভুগছেন তিনি।এভাবে আর কত,এক সময় মাথায় সমস্যা দেখা দেয়।তিনি পাগলের মতো আচরণ করেন।এখন তাকে ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।তার জন্য টাকার দরকার।কিন্তু টাকা কোথায় পাবে।যে মাস্টার দিন রাত খাটল মানুষের উপকার করল।তারা কেউ তার বিপদের দিনে এগিয়ে আসল না।এমন কি আল আমিন সোসাইটির সভাপতি মাওলানা মুছলেহ উদ্দিন এক টাকা দিয়ে ও তাকে সাহায্য করলনা।অথচ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি কিনা করেছেন।এমন কি তারা কেউ দেখতে ও আসল না।
পরিবারের লোকজন খুব চিন্তায় আছেন।টাকার অভাবে মাস্টারের চিকিৎসা করতে পারছেন না।অবশেষে বিবি কুলসুম তার ভাইয়ের হাতে পায়ে ধরে কিছু টাকা ধার আনলেন।কোন মতে মাস্টারের চিকিৎসা করলেন।সুস্থ হওয়ার পর তিনি স্কুলে ছুটে গেলেন।কিন্তু সে কী!তার আসনে অন্য লোক।জিজ্ঞেসে করতেই মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন বলেন,
এটা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।আপনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।এতদিন কিভাবে পদ খালী রাখি।তাছাড়া আপনি কাজে অনিয়ম করেন।আপনাকে রাখা সম্ভব নয়।
মাস্টার কিছুই বললেন না।একবুক দু:খ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলেন।এরপর থেকে তার কাজ হলো চিঠি,দরখাস্ত লেখা।আর বিভিন্ন রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামান্য বেতনে টিউশনি করা।
এমনি ব্যস্ততা আর হতাশায় কেটে চলেছে মাস্টারের দিনগুলো।টিউশনি ছাড়া ও অনেক গরীব ছাত্রকে বিনা পয়সায় পড়ান।মাঝে অনেক সময় পার হলো।ছেলে মেয়ে সবাই বড় হয়ে উঠল।বিয়ে শাদী প্রায় শেষ।এখনো এক ছেলে এক মেয়ে বাকী আছে।
হঠাৎ একদিন টিউশনি করার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।কয়েকজন মিলে পাঁজাকোলা করে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন।তার অবস্থা দেখে বউ কেঁদে কেঁদে বলেন,
ওরে কে কোথায় আছিস, মাস্টাররে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।
মাস্টারের চোখ থেকে জল পড়ছে।তিনি কাতরাতে কাতরাতে বলেন,
বউ কেঁদো না।ডাক্তারের কাছে নিতে হবেনা।আমার সময় শেষ। আমায় ক্ষমা করে দিও।
ওগো আপনি চলে গেলে আমাদের দেখবে কে?কে খাওয়াবে?
বউ রিযিকের মালীক আল্লাহ।আল্লাহ দেখবেন, আল্লাহ খাওয়াবেন।চিন্তা করোনা।
আমাদের কী দিলেন,সারাজীবনতো বেকার খাটলেন। মানুষের উপকার করলেন।
বউ কেঁদোনা।তোমাদের জন্য আমার দোয়া রইল।দোয়া ছাড়া দেয়ার মতো আমার আর কিছু নেই।তুমি ঠিক বলেছ।সারাজীবন বেকার খাটলাম। কেউ ন্যায্য মুল্য দিলোনা।বড় লোকেরা খুব স্বার্থপর গরীবের দু:খ বুঝেনা।আল্লাহ তোমাদের ভালো রাখুক এই দোয়া করি।
মাস্টার আর কথা বলতে পারলনা।অজ্ঞান হয়ে পড়ল।এভাবে দুদিন থাকার পর তিনি মারা গেলেন।সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
যে লোকটা সারা জীবন সবার মাঝে জ্ঞানোর আলো ছড়াল।তার বিপদের দিনে কেউ এগিয়ে আসলনা।শেষ মুহূর্তে নেয়া হলোনা ডাক্তারের কাছে।বিনা চিকিৎসায় মারা গেল সবার মাঝে “আলোর মিছিল” ছড়ানো জসিম মাস্টার।
