গল্প
ছোট্ট কুঁড়েঘর
আফছানা খানম অথৈ
খালেদার স্বামী মারা গেছে প্রায় পাঁচ বছর হবে।পাঁচ ছেলে মেয়ে আর শ্বাশুড়িকে নিয়ে খুব কষ্টে আছে।অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে।অভাব অনটন দু:খ কষ্টে জর্জরিত তার জীবন।একবেলা খেলে আর একবেলা উপোষ কাটান।ছেলে মেয়েদের চেহারায় ফুটে উঠেছে রুগ্ন রুগ্ন ভাব….।
এমনি অভাব অনটনের মাঝে কেটে চলেছে তার জীবন।অভাব যেন তার পিছু ছাড়ছে না।এদিকে ঘরের অবস্থা ও তেমন ভালো ন,পুরানো ভাঙাচোরা ছোট্ট কুঁড়েঘর । আজকাল আমাদের দেশে বিভিন্ন এন জি ও সংস্থা গরীব মানুষদের কড়াসুদে ঋন দিয়ে থাকেন মাসিক কিস্তির উপর।যদি কোনোরকমে কিস্তি ববরখেলাফ করেছে তো মরেছে।সুদে আসলে তা শোধ করতে হবে।নতুবা এন জি ও কর্মীরা যা পাবে তাই নিয়ে যাবে।গরু ছাগল হাঁস মোরগ ইত্যাদি।যদি এসব না থাকে ঘরের চাল খুলে নিয়ে যায়,এমন রেওয়াজ ও আছে তাদের বিধানে।
এমনি এক এন জি ও সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে খালেদা বেগম কোনোরকম কুঁড়েঘর ঘরটা মেরামত করেলেন।দু একটা কিস্তি সবেমাত্র শোধ করলেন।এখনো সম্পূর্ণ ঋনের বোঝা তার মাথার উপর।এরই মধ্যে বাংলাদেশকে গ্রাস করলো এক ভয়াবহ বন্যা।বাংলাদেশের বন্যা কবলিত জেলাগুলো হলো কুমিল্লা, ফেনী,লক্ষিপুর,নোয়াখালী, চট্টগ্রাম,এছাড়াও কিছুকিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়।সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী জেলা।এই ফেনী জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে অবস্থিত এই খালেদা বেগমের বাড়ি।রাতের অন্ধকারে প্লাবিত হয় তাদের গ্রাম।স্রোতের গতিবেগ খুব দ্রুতবেগে ধাবিত হয়।প্রথমে হাটুজল,তারপর ঘরভর্তি পানি।তলিয়ে নিয়ে যায় তার ঘরবাড়ি।মুহূর্তে সবকিছু তছনছ….।
কোনরকমে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে বৃদ্ধ শ্বাশুড়িকে নিয়ে সাতরিয়ে একটা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল।কিন্তু জায়গাটা নিচু হওয়ার কারণে সেদিকে কোন স্বেচ্চাসেবকের দল যেতে পারলেন না।দুতিন দিন পর্যন্ত তারা সেখানে আটকা পড়েন।অবশেষে এক স্বেচ্ছাসেবক দল এসে তাদের উদ্ধার করে আস্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান।
খালেদার চোখে মুখে চিন্তার রেখা।কিভাবে ঘরবাড়ি মেরামত করবে।হাতে একটা টাকা ও নেই।মাথার উপর কিস্তির বোঝা…..।
এরই মাঝে বন্যা সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল।চোখের জল ফেলছে আর বলছে,
বন্যারে বন্যা তুই বুঝি আর মানুষ পাইলি না।আমি অভাগীর সব কাইড়া নিলি?আমি এহন ঘর দুমু কেমনে? ঋন দুমু কেমন?পোলা মাইয়্যাগো খাওয়ামু কেমনে?
তার কান্না দেখে এক মিডিয়া কর্মী বলে,
আফা আপনি কাঁদছেন কেনো?
ভাইজান বন্যায় আমার সব নিয়া গেছে।ঘরবাড়ি,হাঁস মোরগ…।
আমি ঋন নিয়া ঘর করছিলাম।এহনো ঋন শোধ অয় নাই।এহন ঘর করমু কেমন,ঋন দুমু কেমনে? থাকুম কোনহানে…?
খালেদার চোখের জল যেন শেষ হচ্ছে না।অঝর ধারায় ঝরছে।এমনি খালেদার মতো অনেকে বন্যার করাল গ্রাসে সর্বহারা হয়ে চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে।থাকা খাওয়ার সুযোগ খুঁজছে,সাহায্য চাইছে।হৃদয়বান ব্যক্তিদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।সহযোগীতার হাত বাড়ানো।তবে লাঘব হবে এদের দু:খ।নচেৎ ভবঘুরের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।