গল্প জীবন্ত লাশ আফছানা খানম অথৈ

1

গল্প
জীবন্ত লাশ
আফছানা খানম অথৈ

মাহেরার বিয়ের এক মাসের মাথায় স্বামী তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।তার স্বামী আয়মান অকর্মার ঢেঁকি। কাজকর্ম করে না,জুয়া খেলে নেশা করে।নেশার টাকার জন্য বউকে মারধর করে।মাহেরার খুব অসহায় একটা মেয়ে।তার বাবা থেকেও নেই।তার বয়স যখন এক বছর তখন তার বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যায়।এখন কোথায় আছে কেমন আছে কেউ তার খবর জানে না।এরপর থেকে মাহেরার থাকার জায়গা হয় নানা বাড়ি।তার বয়স যখন চার বছর তখন তাকে রেখে তার মা চলে যান প্রবাসে রোজগারের জন্য।

নানা বাড়িতে তার লেখাপড়া বেড়ে উঠে।স্কুলের গন্ডি পার না হতে মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তার বিয়ে হয় বেকার যুকব আয়মানের সঙ্গে।কিন্তু যে সুখ শান্তির আশায় তাকে বিয়ে দেয়া হয় সেই শান্তি তার হলো না।স্বামী তাকে রীতিমতো টর্চার করে।ধপায় ধপায় টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।সে নিরুপায় হয়ে মাকে বিভিন্ন প্রয়োজন দেখায় টাকার চাপ দেয়।মায়ের একমাত্র মেয়ে মাহেরা। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মা সাধ্যমতো মেয়ের চাহিদা পূরণ করে।কিন্তু তবুও মাহেরার সুখ হয় না।স্বামী কারণে অকারণে তাকে মারধর করে।মাহেরা মাকে এসবের কিছুই জানায় না।মুখবুঝে সবকিছু সহ্য করে।তার ধারণা তার স্বামী এক সময় ভালো হয়ে যাবে।

মাঝে কিছু সময় পার হয়।মাহেরা প্রথম মা হতে চলেছে।খুশিতে আত্মহারা, স্বামীকে সুসংবাদটা দিতে সে চটে উঠে।শুধু তাই নয় তাকে মারধর করে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে বলে।মাহেরা রাজী না হলে তাকে জোরে লাথি মারে। সে বিছানা থেকে পড়ে যায়,এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।এক সময় তার বাচ্চা নষ্ট হয়ে পড়ে যায়।সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।স্বামী কিন্তু তাকে হাসপাতালে নেয় না।পাড়াপড়শি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।যাক আল্লাহর রহমতে সে সুস্থ হয়ে উঠে।নিষ্ঠুর স্বামী তাকে এক পলকের জন্য দেখতে ও যায়নি।সুস্থ হওয়ার পর সে আবার নানা বাড়িতে ফিরে যায়।

কিছুদিন পর দুপরিবারের লোকজন বৈঠকে বসে।আয়মান সবার সামনে তার ভুল স্বীকার করে মাফ চায়।মাহেরাকে নিয়ে সংসার করার মত প্রকাশ করে।সব ভুলবুঝবুঝির অবশান ঘটিয়ে মাহেরাকে আবার আয়মানের হাতে তুলে দেয়।আয়মান তাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে।যাক কিছুদিন ভালো কাটলেও পরবর্তীতে সে আবার অশান্তি শুরু করে।টাকার জন্য চাপ দেয়।নিরুপায় হয়ে মাহেরা মায়ের কাছ থেকে টাকা এনে তাকে দেয়।

এভাবে কেটে চলেছে মাহেরার জীবন।এতো অশান্তির পর ও মাহেরা চাচ্ছে না সংসার ভাঙতে।সে চাচ্ছে সংসার করতে।তার মায়ের মতো তার জীবন যেন না হয়।কিন্তু আয়মান তাকে চাচ্ছে না।সে মাহেরার মতো সুন্দরী বউ ঘরে রেখে পরকীয়া করছে।
তবুও মাহেরা কিচ্ছু বলছে না।কোনো প্রতিবাদ করছে না।সবকিছু নিরবে হজম করছে।
দ্বিতীয়বারের মতো সে মা হতে চলেছে।কিন্তু সাবধান এ কথাটা স্বামীকে বলা যাবেনা।বললে হয়তো আগেরমতো বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবে।কিন্তু সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।আপনা আপনি প্রকাশ হয়ে যায়।তার স্বামী জেনে গেল তার মা হওয়ার খবরটা।সে আগের মতো চটে উঠল।তাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলল।

সে কোনোকিছু না বলে চুপিচুপি মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নানা বাড়িতে চলে গেল।এরপর আয়মান আর তার খবর নিলো না।তার বাচ্চা হওয়ার কিছুদিন আগে তার মা দেশে ফিরল।সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডাক্তার জানায় রোগী অবস্থা ভালো না।মা এবং বাচ্চা দুজনকে বাঁচানো রিক্স।ইমারজেন্সী সিজার করতে হবে।

যাক আল্লাহপাক মুখ তুলে চেয়েছেন।সফলতার সাথে অপারেশন সফল হয়।মা এবং বাচ্চা দুজনকে আল্লাহপাক বাঁচিয়ে রাখেন।এমন বিপদের দিনেও আয়মান স্ত্রী সন্তানকে দেখতে যাননি।বাচ্চার বয়স যখন ছয় সাত মাস হয়,যোগাযোগ করলে সে নিজের দোষ এড়ানোর জন্য স্ত্রীকে নিয়ে যেতে রাজী হয়।
আবার ও দুপরিবারের বৈঠক বসে।দুজনের ভুলত্রুটি তুলে ধরা হয়,এবং সকল ভুলবুঝবুঝির অবশান ঘটিয়ে ফের মাহেরাকে তার স্বামী নিয়ে যায়।এতোদিন শ্বাশুড়ি জামাইকে দেখেনি।আজ সরাসরি দেখেছে কথা হয়েছে।জামাইকে শ্বাশুড়ির তেমন সুবিধার মনে হয়নি।তবুও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবকিছু মিঠমাঠ করে, মেয়েকে ফের সংসার করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

যাক মাহেরাকে নিয়ে স্বামী নিজ বাড়িতে অবস্থান করলো।কিছুদিন ভালো কাটলেও পরবর্তীতে সে অশান্তি শুরু করে।ফের সে মাহেরাকে টাকার জন্য চাপ দেয়।কিন্তু মাহেরা এবার টাকা আনতে অপারগতা স্বীকার করে।
কারণ এতোদিন তার মা প্রবাসে টাকা রোজগার করেছেন,যখন যা চেয়েছে তখন তা দিয়েছে।এখন দেশে ফিরে এসেছে রোজগার নেই দেবে কোত্থকে?কিন্তু সে মানলেতো?তার টাকা চাই চাই।
সে চাইনা মাহেরার সঙ্গে সংসার করতে।তাই বিভিন্ন অযুহাতে তাকে টর্চার করছে।এমনি মাচুম বাচ্চাটাকে সে মেরে ফেলার প্লান করেছে।মাহেরা এখানে আসার পর থেকে দেখতে পায় তার বাচ্চা শুধু ঘুমায়, কেনো ঘুমায় সে কোন কারণ খুঁজে পায় না।একদিন সে দেখতে পায় তার ঘুমের ঔষধ সে ভাগ করে গুড়া করে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে।

সে চিৎকার করে সবাইকে ডাকে এবং সত্য কথাটা প্রকাশ করে।আয়মান সবকিছু অস্বীকার করে এবং তাকে মিথ্যেবাদী বলে অপবাদ দেয়।শুধু তাই নয় মারধর ও করে।মাহেরা ভাবে যে বাবা তার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চাই,সে আর যাই হোক ভালো বাবা হতে পারে না।সে বাবা নামের কলঙ্ক।যেকোনো সময় সে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে পারে।এখানে থাকা আমার নিরাপদ হবেনা।
এসব ভেবে সে ফের তার মায়ের কাছে নানা বাড়িতে চলে যায়।এরপর থেকে আর তার স্বামী তার সাথে যোগাযোগ করেনা।কয়েকমাস পর জানতে পারে তার স্বামী আবার বিয়ে করেছে।খবরটা শোনার পর সে স্থির থাকতে পারলো না।ছুটে গেল তার স্বামীর কাছে।
তার সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে শুরু করলো,

ওগো আমি না হয় তোমার চোখে দোষী?কিন্তু এই মাচুম বাচ্চাটি, সে তো কোনো দোষ করেনি।তুমি আমার দায়িত্ব না নাও।কিন্তু বাচ্চাটির দায়িত্ব নাও।আমি চাইনা আমার মতো বাবা ছাড়া,আমার বাচ্চাটিও বেঁচে থাকুক।
না আমি পারবো না।
কেনো পারবে না?
কারণ সে আমার বাচ্চা নয়।তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।তুই আমার স্ত্রী না।তোকে আমি বিয়ে করিনি।
ওগো এমন সত্যকে অস্বীকার করবেন না।আল্লাহপাক নারাজ হবেন।আপনার অমঙ্গল হবে।
আমার অমঙ্গল নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।তুই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা।
না আমি যাব না।আমার ছেলের অধিকার নিয়ে তবে যাব।
কী প্রমাণ আছে, যে তুই আমার স্ত্রী,ওহ আমার ছেলে?
জলজ্যান্ত ছেলে আছে,এরপর ও বলছেন কোনো প্রমাণ নেই।ওগো আপনি এমন নির্দয় হইয়েন না।আপনার ছেলের ভরন পোষনের দায়িত্ব নেন।

এমনিভাবে তারা আরও কিছু সময় কথা কাটাকাটি করে।কিন্তু কোনো সমাধান হয় না।আয়মান সরাসরি তার স্ত্রী এবং সন্তানকে অস্বীকার করে।কারণ তাদের কাবিননামা নেই।অপরিণত বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে কাবিন হতে পারেনি।আর এই জন্য আয়মান সবকিছু অস্বীকার করছে।শুধু তাই নয় স্ত্রীকে বেধম মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।মাহেরা খুব অসহায় মামলা মোকদ্দমা করার মতো সামর্থ্য নেই।তাই শত টর্চার মুখ বুঝে সহ্য করেছে।এই সুযোগে কাজে লাগিয়েছে তার স্বামী আয়মান।।আঁকড়ে ধরে স্বামীর সংসার করছে চেয়েছিল।কিন্তু পারেনি।শত দু:খ বুকে চেপে “জীবন্ত লাশ” হয়ে বেঁচে আছে মাহেরা।দু:খ শোনার মানুষ নেই।

ঃসমাপ্তঃ

বি: দ্র: সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্পটি লেখা।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

1

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গদ্য কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। প্রাপ্তি স্থান : মিতা বুক সেন্টার নীলক্ষেত ঢাকা। শাহানা প্রকাশনীর লাইব্রেরি, নীলক্ষেত,

মৃত্যুঞ্জয়ী

কবির কাব্য সোচ্চার ছিল পেতে স্বাধীন ভাষা, মায়ের ভাষা সম্মান দিবে প্রাণে ছিলো আশা। একুশের ওই ভাষার জন্যে কলম উঠে

তরুণ যুবার দল

শহর গাঁয়ে জনের মুখে জয়ধ্বনি যে আজ, দেশের ভারটা তরুণ নিবে পরবে মাথায় তাজ। সুস্থ সুন্দর দেশটা পেতে তোমরা সবে

রোজা জান্নাত সন্ধি

রোজার মাসে মুমিনগণে রাখে তিরিশ রোজা, ঈমান আমল মজবুত করে হবে সরল সোজা। রোজার সাথে ক্ষুধার মন্দা আন্দাজ যেন করে,

One Reply to “গল্প জীবন্ত লাশ আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply