তালাক
আফছানা খানম অথৈ
শিহাব ভালোবেসে বিয়ে করেছে পান্নাকে।কিন্তু মা-বাবা তাদের ভালোবাসা মেনে নেয়নি।একমাত্র ছেলে শিহাবকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারা দুজন আলাদা বাসা ভাড়া নেই।
একদিন মাঝরাতে মা ফোন করে বলে,
বাবা শিহাব আমরা তোর ভালোবাসা মেনে নিয়েছি।তুই ফিরে আয়।
সত্যি বলছ মা?
হ্যাঁ সত্যি।
শিহাব আর দেরী করলো না।ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসল।
একমাত্র ছেলে বিয়ে করেছে খালী হাতে এ কী মেনে নেয়া যায়?শিহাবের মা চায় অলংকার,টাকা পয়সা, ঘরভর্তি ফার্নিচার আর ও কত কী?
এসব কথা বলে ছেলের কানভারী করে।শিহাব প্রথমে মায়ের কথা আমলে না নিলেও পরবর্তীতে ঠিক মায়ের পক্ষে চলে যায়।
একদিন সে পান্নাকে বলে,
যাও তোমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা,গহনা,ফার্নিচার নিয়ে আস?
শিহাব এসব কী বলছ,মা এসব কোত্থেকে দেবে?
আমি অতশত বুঝি,আমার এসব চাই।
প্লিজ শিহাব আমার বাবা নেই।মায়ের অবস্থাও ভালো না।মা এসব দিতে পারবে না।
তাহলে আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।
না আমি যাব না।
কেনো যাবে না?
আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।
আজকাল টাকা ছাড়া ভালোবাসা হয় না।আমি অন্যত্র বিয়ে করলে অনেক কিছু পেতাম।তোকে বিয়ে করে কী পেয়েছি?কিছুই না।আমার টাকা চাই,টাকা…।
প্লিজ শিহাব তুমি ভুল বলছ।টাকা মানুষের জীবনের সব না।ভালোবাসা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়। এরজন্য ভুরিভুরি টাকা লাগে না।
এইনিয়ে তারা আর ও কিছু সময় কথা কাটাকাটি করে।তার এককথা টাকা চাই।পান্না কিছুতেই টাকা আনতে রাজী হয় না।সে তাকে বেদম মারধর করে।তবুও সে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যায়না।এবার মা ছেলে প্ল্যান করে পান্নাকে চুরির অপবাদ দেয়।পান্না কেঁদে কেঁদে বলে,
বিশ্বাস করুন মা,আমি টাকা চুরি করিনি।
তাহলে তোর ঘরে টাকা আসল কোত্থেকে?
মা আমি জানি না।
বললে হলে,এই চোর বউকে আমি কিছুতেই রাখব না।
প্লিজ মা আমায় মিথ্যে অপবাদ দিবেন না।আমি গরীব হতে পারি। তবে চোর না।
ছোট মুখে বড় কথা।শিহাব দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?ওকে তালাক দিয়ে দেহ্।
মা তুমি ঠিক বলেছে।আমি ওকে আর রাখব না।এক তালাক…।
পান্না ছুটে এসে পা ছেপে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
ওগো আমায় তাড়িয়ে দিয়েন না।এ জনমে আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই।আমি আপনার দাসী হয়ে সারাজীবন থাকতে চায়।আমাকে এটুকু আশ্রয় দিন।
এভাবে সে কয়েকবার অনুরোধ করলো।কিন্তু কোন লাভ হলো না।
কোন বাঁধাই শিহাবকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।সে পান্নাকে সত্যিই “তালাক” দিলো।
