“রূপকথার গল্পে আমি”-১০

0

(১০)
ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছি। খোলা মাঠের দিকে যাই। শীতকাল, পৌষ ও মাঘ এ দু’মাসে খুব বেশি শীত পড়ে। অগ্রহায়ণ ফাল্গুনে ও শীত অনুভূত হয়। এখন পৌষ মাস। গত মাসের চেয়ে এ মাসে আরেকটু বেশি শীত। শীতের সকালের কুয়াশা দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি নিজেকে সাদা চাদরে আবৃত করে আছে। নদীর এ পাড়ে দাঁড়ালে ঐ পাড় দেখা যায় না। হাঁটতে হাঁটতে একেবারে নদীর পাড়ে এসে গেছি। উদ্দেশ্য এ পাড়ে দাঁড়িয়ে ঐ পাড় দেখা। কেউ নেই একা আমি। মাঝে মাঝে একটা দুটো পাখির ডানা ঝাপটানো শুনা যায় তারপর পাখি উদাও আর দূরের আকাশ দেখা যায় না কুয়াশায় ডাকা। নদীর পাড়ে সারি ধরে গাছ লাগানো আছে । খালের পাড়ে একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে প্রকৃতির এ মনোরম দৃশ্য, নিরিবিলি পরিবেশ আর পাখির কিচিরমিচির সুমধুর ডাক বেশ উপভোগ করছি। প্রকৃতির সাথে এত নিবিড় ভাবে মিশে গেছি যে কিছুক্ষণের জন্য ভূলেই গেছি মানব জগতের এক বাসিন্দা আমি, সিন্দা, মনে হচ্ছে স্বর্গে বিচরণ করছি। প্রায় আধা ঘন্টার মত এ ভাবে বসে ছিলাম। হঠাৎ কদম গাছের একটা পাতা ডান হাতের কাছে পড়ে চমকে থাকাই পিছনে, থাকিয়ে আরো বেশি চমকে উঠি-পিছনে অনিক দাঁড়িয়ে।
এই স্নিগ্ধ সকালে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অনিককেই আশা করেছিলাম। কিন্তু তারপরও একটু অপ্রস্তুত হয়ে প্রশ্ন করি- আপনি?
হ্যাঁ আমি!
কখন এলেন?
এইতো। কেমন আছ তুমি?
ভালো। দাঁড়িয়ে কেনো বসুন না এখানে, না বসতে অসুবিধা আছে?
অনিক বসতে বসতে বলছে- না বসতে অসুবিধা থাকবে কেন?
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললাম- আপনি কখনও দেখেছেন নদীর এ পাড়ে দাঁড়িয়ে কুয়াশার চাদরে ডাকা ওই পাড়ের দৃশ্য।
এইভাবে কখনও অনুভব করিনি!
আরেকটু আগে আসলে আজই এ দৃশ্য দেখতে পারতেন। এখন তো অনেক ফর্সা হয়ে গেছে। আধা- ঘন্টা আগের পরিবেশ এখন আর নেই।
তুমি কখন এসেছ?
আধাঘন্টার উপরে।
অনেক্ষণ? আমি জানলে আরো আগে আসতাম। কোন কথা বললামনা শুধু উপহাসের হাসি হাসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ এ রকম আবেগ জড়ানো কথা অনেক শুনেছি।
কিছুসময় দুজন নিরব বসে থাকি।
তারপর কথা বলি- মানুষের সত্য কথার মাঝে যে আরেকটা সত্য থাকতে পারে তা উপলব্ধি কতজন মানুষ করতে পারে?
অনিক বললো-মানুষের মধ্যে যেমন আরেকটা মানুষ থাকে চির সত্য। তেমনি সত্যের মাঝেও আরেকটা সত্য থাকে। সেটাও চির সত্য। কেউ সেটা উপলব্ধি করতে পারে কেউ পারে না।
মানুষের বাইরের আবরণ দেখে কি তার ভিতরে- “আমি” কে বুঝা যায়?
না বুঝা যায় না, তবে কোন কোন মানুষের ভেতরে ব্যথা আছে এবং তা নিঃশব্দে কাঁদে। আর সেটা উপলব্ধি করতে প্রকৃত মন থাকা চাই। কিন্তু অধরা আজ তুমি এরকম করে কথা বলছ কেন?
খুব স্বাভাবিক ভাবে ছোট্ট একটা উত্তর দেই- এমনি।
কিছুক্ষণ পর অনিক বলছে- একটা গানের কথা মনে পড়ছে, বলবো?
-বলেন।
“পথে যেতে তুমার সাথে
মিলন হল দিনের শেষে
দেখতে গিয়ে সাঁজের আলো
মিলিয়ে গেল এক নিমেষে”।
অনিক থামলে আমি বললাম এর পরের চার লাইন আমি বলি?
তুমি জানো? বলো শুনি?
“দেখা তোমার হোক বা না হোক
তাহার লাগি করব না শোক
ক্ষণেক তুমি দাঁড়াও
তোমার চরণ ঢাকি এলোকেশে”।
এরপর কিছু সময় নিরব থেকে, পরে অনিক বলতে শুরু করে- রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “গান যে করে সে আনন্দের দিক হতে রাগিণীর দিকে যায়,
গান যে শুনে সে রাগিনীর দিক হতে আনন্দের দিকে যায়। একজন আসে মুক্তি হতে বন্ধনে আর একজন যায় বন্ধন হতে মুক্তিতে, তবে তো দুই পক্ষের মিল হয়”।
স্মিত হাস্যে বললাম- রবীন্দ্রনাথের কঠিন কথাগুলো বুঝতে আমার এখনও অনেক সময় লাগবে। তবে যতটুকু বুঝতে পারি তাতে মনে হয় আমি রবীন্দ্রনাথের একজন ভক্ত।
হ্যাঁ আমিও একজন ভক্ত বলতে পার। আমি রবীন্দ্রনাথের অনেক বই পড়েছি। তবে ভালো লাগে ডেল কার্নেগী, তলস্তয়, এডিলা মরগান, ম্যাক্সিম গোর্কি প্রভৃতি লেখকের বই পড়তে।
ওই গুলো খুব কঠিন বই স্যার?
হ্যাঁ, একটু কঠিন বই। তুমি এখন পড়লে কম বুঝবে তবে ইন্টার পড়া শেষ হয়ে গেলে ঐ ধরণের বই গুলো অনায়াসে পড়ে বুঝতে পারবে।
আমি ডেল কার্নেগীর বই পড়েছি। আমার মনে হয় কি জানেন স্যার, যারা ডেল কার্নেগী, তলস্তয় প্রভৃতি লেখকের বই পড়েন তাদের মন খুব শক্ত হয়। তারা অনেক ক্ষেত্রে হার্টলেস হয়। তাদের মনে তখন এই মন থাকে না যে তারা অন্য কারো মন বুঝবে। তারা সে দিকে ভ্রক্ষেপ ও করে না।
তুমার কথা পুরোপুরি ঠিক নয় অধরা। হয়তো বা মানুষের মন একটু বেশি কঠিন হয়ে যায়। একেবারেই যে বুঝে না তা নয়।
আপনি বুঝি সেই রকম মানুষ স্যার, বলে মুচকি হাসি দেই।
অনিক ও হেসে বলে- আমি কি রকম মানুষ সেটা আমি জানি না তবে অন্য কেউ বুঝতে পারে আমার রকম কি?
আর কথা না বাড়িয়ে বললাম- স্যার অনেক ফর্সা হয়ে গেছে। রুদ উঠেছে, দেখুন ঘাসের উপর ঝমে থাকা শিশিরও বিদায় নিয়েছে। আমরাও তাহলে এবার উঠি?
হ্যাঁ উঠতে হবে। দেখ অধরা এই পাড়ের মানুষ গুলো কি রকম ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাদের প্রতিদিনের কাজে।
“কাজে ব্যস্ত মানুষ” দেখতে অন্যরকম লাগ।
হ্যাঁ ঠিক তাই! আচ্ছা অধরা আগামীকাল আসবে এখানে?
আগামী কাল? সেতো অনেক সময়?
তুমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।
আজকে ভালো লেগেছে। কাল হয়তো আপনার আমার আজকের মত মন নাও থাকতে পারে। আজকে কথা বলতে মন চেয়েছে কাল হয়তো মন চাইবে না।
সব সময় তুমার সাথে কথা বলতে মন চাইবে।
প্রতিদিন তো আপনি আমি এখানে আসি না।
তুমি আসলে আমি আসবো।
জানেন স্যার, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “পৃথিবীতে আজকের দিনের বাসায় কালকের দিনের জায়গা হয় না। তেমনি আজকের দিনের কথা কালকের দিনে কূলায় না। আজকে আসা সম্ভব হয়েছে কালকে আসার সম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে না পারে।
অধরা তুমি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পার।
আমি হেসে বললাম- তাই?
হ্যাঁ সত্যি বলছি। তুমার কথা শুনতে ভীষণ ভালো লাগে।
শুধু হাসি আর মনে মনে বলি দু’দিন পরে ভালো লাগা আত্মভোলা ভোলা-নাথের মত ভুলে যাবে”।
এতক্ষণে গন্তব্যে খাওয়ার রাস্তায় এসে গেছি।
বললাম- স্যার-এখন যেতে হবে?
অনিক মাথা নেড়ে বলছে-হ্যাঁ। টেক কেয়ার অধরা, বাই!
শুধু মাথা নাড়লাম তারপর দুজন দুদিকে পা বাড়াই….!


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to ““রূপকথার গল্পে আমি”-১০”

Leave a Reply