ভুতের বাড়ি
আফছানা খানম অথৈ
কনকনে ঠাণ্ডা, এখনো শীতের আভাস কাটেনি।তবুও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লো রাজন।হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। ততক্ষণে মা নাস্তা রেড়ি করে ডাক দেয়,
রাজন খেতে আয়।
এইতো মা আসছি।
তড়িঘড়ি করে রাজন নাস্তার টেবিলে বসে পড়লো।সঙ্গে মামাতো ভাই দোলন ও আছে।দুজন একই ক্লাস সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।বার্ষিক পরীক্ষার পর দোলন মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।দুজনের জমেছে ভালো হাসি আনন্দ, হৈ চৈ বাড়ি ঘর মুখরিত।দোলনের মামা বাড়ি খুব সুন্দর সাজানো গোছানো সবুজ বনানীতে ঘেরা।ফুলে ফলে ভরা বাগানে আছে আম জাম কাঁঠাল,নারিকেল তাল আর ও কত কি গাছ।এছাড়া ও আছে ঔষধি ও বনজ বৃক্ষ।
শুধু তাই নয় বাড়ির সামনে পিছনে দুটো বড় পুকুর।পুকুর পাড়ে অন্যান্য গাছের পাশা-পাশি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় তাল গাছ।তালগাছে তাল ঝুলছে।দোলন বলল,
রাজন চলো আমরা তাল পাড়বো?
সাবধান দোলন ঐ তালগাছ তলায় যাওয়া যাবে না।
কেনো কেনো রাজন?
ঐ তাল গাছে ভুতের বাড়ি?
ভুতের কথা শুনে দোলন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
বলীস কী,তাল গাছে ভুত সত্যি?
এবার রাজন তাকে অভয় দিয়ে বলল,
উহু: দোলন তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।ভুতের কথা শুনে তুই ভয় পেয়ে গেলি?আর ধরলে কী করবি?শান্ত হও কিচ্ছু হবে না।
কী বলীস রাজন ছোট বেলায় মায়ের মুখে কত ভুতের গল্প শুনেছি।ভুত নাকি মানুষকে মেরে ফেলে,আর তুই বলছিস কিচ্ছু হবে না।
রাজন তুই ঠিক শুনেছিস।বড় দাদুকে ও সেই রাতে ভুত মেরে ফেলতে চেয়েছিল?
তাই নাকি?
হুম তাই।
তারপর কী হলো?
শুন বলছি,বড় দাদু খুব রাত করে বাড়ি ফিরছিল।সেদিন ছিল আমাবস্যার রাত।বড় দাদু তাল গাছের নিছে দিয়ে হেটে আসার সময় ভুত দাদুর গাড়ে চেপে বসলো।দাদু ঝাপটা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
কেরে তুই আমার গাড়ে চেপে বসলি?
ভুত হা হা হো হো করে হেসে উঠে বলল,
আমাকে চিনতে পারলে না,আমি তোর বন্ধু, চলো আমার সঙ্গে?
দাদু কোন কথা না বলে সামনে এগিয়ে চলল।ততক্ষণে ভুত দাদুর হাত চেপে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।দাদু সাহস করে তাকে ফেলে দেয়।সে আবার দাদুকে চেপে ধরে।এমনি ভাবে দাদু আর ভুতের মধ্যে চলে তুমুল যুদ্ধ।দাদু ভুতকে মারলে, ভুত দাদুকে মারে।
এমনি ভাবে দাদু আর ভুতের মাঝে অনেক সময় ধরে যুদ্ধ চলে।দাদু এক সময় ক্লান্ত হয়ে মাটিতে লেপটে পড়ে যায়।তারপর সব ভুত দাদুর গায়ের উপর চেপে বসে।শুধু তাই নয় দাদুকে মেরে ফেলতে চায়।রাত প্রায় শেষ।তখনি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আযান ধ্বনি বেজে উঠল।ভুতের সর্দার ছুটে এসে বলল,
এই তোরা কী শুরু করে দিলি? ওকে ছেড়ে দেহ,রাত শেষ হয়ে গেছে।এক্ষণই ফজরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।মানব জাতি আসলে কিন্তু রক্ষা নেই।তখনি ভুতের দল ভয়ে দাদুকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।দাদুর তখন আর হুশ ছিল না।অজ্ঞান হয়ে গাছ তলাতে পড়ে রইল।সকাল হলে মুসল্লিরা নামাজ পড়ে যাওয়ার সময় দাদুকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পাঁজাকোলা করে বাড়িতে নিয়ে আসে।ছোট দাদু বড় দাদুকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলে,
ওগো আপনার কী হয়েছে?এমন করছেন কেনো?কে আপনার এমন অবস্থা করেছে?
ছোট দাদু কী আর থেমে থাকেন তিনি কেঁদে চলেছেন।তখনি উপস্থিত লোকজন বলল,
চাচী কাঁদবেন না,চাচার কিচ্ছু হয়নি।মনে হয় আগলা ছোঁড় লাগছে,ভুত টুত হবে মনে হয়।আপনাদের ঐ তাল গাছের নিচে অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল।আমরা দেখে নিয়ে এলাম।আপনি কোন চিন্তা করবেন না। সবঠিক হয়ে যাবে।গুনিন ডাকতে সাব্বিরকে পাঠিয়েছি।
বলতে না বলতে গুনিন এসে পড়লো।তিনি ঝাঁড় ফুঁক তেল পড়া পানি পড়া দিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ পর দাদুর জ্ঞান ফিরে আসল।দাদু কোন কথা বলল না।ফ্যাল ফ্যাল করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।ছোট দাদু কেঁদে কেঁদে বলে,
ওগো আপনি এমন করছেন কেনো?
দাদু আস্তে করে বলল,
আর বলো না রাতে আসার সময় ভুতের সঙ্গে দেখা হলো।
ভুত কথাটা শুনতে ছোট দাদু বলল,
ওগো ভুত আপনার কোন ক্ষতি করেনি তো?
দাদু বুক ফুলিয়ে সাহস করে বলল,
আরে না এই আফজাল হাজীর ক্ষতি করবে ভুত, হতে পারে না।এত বড় সাহস,বরং ভুতকে এমন মার মেরেছি না,জীবনের শিক্ষা হয়ে গেছে।আর কখনো ভুত এই আফজাল হাজীর কাছে কাছে ঘেষবে না।বুঝলে গিন্নী।চলো খাব,অনেক খিদা লেগেছে।
খাওয়ার কথা বললে ছোট দাদু বলল,
সাবধান এখন খাওয়া যাবে না।
কেনো গিন্নী?
বুড়া হয়েছেন এসব এখনো বুঝেন না।ভুতে ধরলে গোসল করতে হয়।তারপর গুনিনের দেয়া তেল পড়া পানি পড়া খেয়ে তারপর ভাত খাবেন।তানা হলে ভুত রক্তের সঙ্গে মিশে যাবে।
সত্যি বলছ গিন্নী?
হুম সত্যি।
এখন দাঁড়িয়ে না থেকে গোসল করতে যান।আমি আপনার জন্য ভাত রেড়ি করছি।
এবার দোলন বলল,
হুম গল্পটাতো অনেক মজার।আচ্ছা এসব তুই জানলি কী করে?
একদিন চাঁদনি রাতে ছোট দাদু বসে বসে এই ভুতের গল্প আমাদের শুনাল।আরও বললেন,সাবধান তোমরা কেউ কখনো ঐ তালগাছের নিচে যাবে না।ঐ তালগাছে ভুতের বাড়ি।তারপর থেকে আমরা কেউ তালগাছের ধারে কাছেও যায় না।
এবার দোলন বলল,
আহারে: নানু বেঁচে থাকলে কথা মজা হত।তার কাছ থেকে অনেক ভুতের গল্প শুনতাম।
ঠিক বলেছিস।
ততক্ষণে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেল।রাজনের মা এগিয়ে এসে বলল,
রাজন দোলন তোমরা এখানে,এদিকে আমি তোমাদের সারা বাড়ি খুঁজছি।টেবিলে খাবার দিয়েছি।এসো খাবে।
দুজন আর দেরী করলো না।খেতে বসলো।তারপর রাজনের মা বলল,
তোমরা এতক্ষণ কী করছিলে?
দোলন বলল,
রাজন আমাকে ভুতের বাড়ি’র গল্প শুনাল।মামি সত্যি কী ঐ তালগাছে ভুতের বাড়ি?
হুম দোলন, রাজন তোমাকে সত্যি বলেছে।ঐ তালগাছে “ভুতের বাড়ি”। সাবধান কখনো সেদিকে যাবে না।
জ্বি আচ্ছা মামি যাব না।
ঃসমাপ্তঃ