মোট চারটি বেদের অর্থাৎ ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ এর ডাউনলোড লিংক আমরা দিয়ে দেবো। আপনারা এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। বেদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে প্রাচীন এবং পবিত্র একটি ধর্মগ্রন্থ।
এটিকে বলা হয় অপৌরুষেও, যার অর্থ যা কোন মানুষের সৃষ্টি নয় বা, অলৌকিক। বেদ এর স্রষ্টা হিসেবে মহাভারতে ব্রহ্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। বেদে সর্বমোট ২০৪৩৪ টি মন্ত্র আছে।
বেদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তরঃ
বেদ শব্দের অর্থ কি?
এটি সংস্কৃত শব্দ, এর অর্থ জ্ঞান। এটিকে বলা হয় শ্রুতি অর্থাৎ যা শোনা হয়েছে। আগেই বলেছি এই গ্রন্থকে অপৌরুষেও বলা হয়। এর আসলে কোন রচয়িতা নেই বলেই বিশ্বাসীরা মনে করে।
বেদ কত প্রকার?
চারটি বেদের কথা ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন। প্রত্যেকটিকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা হয়।এগুলো হচ্ছে- সংহিতা,আরণ্যক, ব্রাহ্মণ এবং উপনিষদ। কেউ কেউ ৫ নম্বর বিভাগ হিসেবে উপাসনাকে তুলে ধরেন।
আরণ্যক শব্দের অর্থ হচ্ছে- অরণ্য- সম্পর্কিত বা, অরণ্য উক্ত। অরণ্য বলতে এমন একটি স্থানকে বোঝায় যেখান থেকে জনবসতি দেখা যায় না। এই নামে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় একটি উপন্যাসও লিখেছিলেন।
![]() |
উপনিষদ এর ছবি ছবির কৃতিত্বঃ Ms Sarah Welch,
এটি Creative Commons Attribution-Share Alike 4.0 International লাইসেন্স এর আওতাভুক্ত |
বেদে অবিশ্বাসীদের কি বলা হয়?
বেদে অবিশ্বাসীদের নাস্তিক বলা হয়। চার্বাক, জৈন, বৌদ্ধ এরা বেদে অবিশ্বাসী হলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে এদের দর্শনে মিল খুজে পাওয়া যায়। কেউ কেউ দাবি করেন বেদ আসলে চারটি নয়, পাচঁটি। মহাভারত, নিত্যশাস্ত্র এবং কিছু পুরানকে তারা যুক্ত করে। ভলতেয়ার বেদের ভক্ত ছিলেন, তিনি বলেছেন-
The Veda was the most precious gift for which the West had ever been indebted to the East
বেদ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
এটা আগেও বলেছি, বেদকে বলা হয় অপৌরুষেও। অর্থাৎ, যা অলৌকিক। ধারণা করা হয় বেদ রচনা করেছেন স্বয়ং ব্রহ্মা। কিছু কিছু বৈদিক স্তোত্র অনুযায়ী বলা যায় ঋষিগণ রচনা করেছেন। রথ যেমন সুনিপূণভাবে তৈরি করা হয়, বেদও তেমন সুনিপূণভাবে রচনা করা।
বেদ বাংলা অর্থসহ কোথায় পাবো?
যদি বাংলা অর্থসহ বেদ খুজে পেতে চান, তাহলে নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করুন। অথবা, অনলাইনেও পড়তে পারেন। এজন্য ebanglalibrary, wikisource এবং বিভিন্ন আর্কাইভ খুজে দেখতে পারেন। এইসব জায়গায় অনলাইনে পড়তে পারবেন।
বেদ ডাউনলোড লিংক
এখানে যে ডাউনলোড লিংক দিয়েছি সেগুলো মূলত অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা ডাউনলোড লিংক। যদি এর মাঝে কোনটা কাজ না করে, তাহলে মন্তব্য করে জানাবেন।
ঋগ্বেদ
হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে ঋগ্বেদ। এটি বিভিন্ন স্তর, মন্ডল ও সূক্তে বিভক্ত। চারটি প্রধান স্তর হচ্ছে(অন্যান্য বেদেও এই স্তরগুলো আছে)-
- সংহিতা
- ব্রাহ্মণ
- আরণ্যক
- উপনিষদ
ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে এই গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। ভাষাতত্ত্ববিদদের বাইরে ধর্মে বিশ্বাসীদের ভিন্নমত রয়েছে। রচনাকাল যাই হোক এটি যে প্রাচীনতম বৈদিক সংস্কৃতের সাক্ষ্য বহন করছে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
বাংলায় ঋগ্বেদ ডাউনলোড(শ্রী রমেশচন্দ অনূদিত)
যযুর্বেদ
এই গ্রন্থটিও ঋগ্বেদ এর সম সাময়িক বলে গবেষকেরা ধারণা করেন। যযু অর্থ উপাসনা, আর বেদ অর্থ জ্ঞান। গবেষকেরা ধারণা করেন এর রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০-১২০০ অব্দ। এটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-
- কৃষ্ণ যযুর্বেদ
- শুক্ল যযুর্বেদ
শুক্ল যযুর্বেদের সবচেয়ে প্রাচীন কপিটি আবিষ্কৃত হয় নেপাল ও পশ্চিম তিব্বত থেকে। বাইবেলের নোয়া বা, কুরআনের নূহ(আঃ) এর সময়ের মহাপ্রলয়ের বর্ণনার মতো (মনুর সময়ে)মহাপ্রলয়ের বর্ণনা যযুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণেও আছে।
সামবেদ
এটি হচ্ছে সাম বা, সংগীতের জ্ঞান। এই বেদে ১৮৭৫ টি মন্ত্র আছে। সামদভুক্ত দুটি উপনিষদ রয়েছে-
- ছান্দোগ্য উপনিষদ
- কেন উপনিষদ
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যকলায় এই বেদের অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে। এর মন্ত্রগুলো পাঠ করার চেয়ে সাধারণ মানুষের শোনার জন্য বেশী উপযোগী।
ভি. রাঘবন বলেছেন,
উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত আমাদের সংগীত প্রথা [ভারতীয়] সামবেদে এর উৎসটিকে স্মরণ করে এবং মর্যাদা দেয়… [সামবেদ হল] ঋগ্বেদের সাংগীতিক সংস্করণ
অথর্ববেদ
এটি হচ্ছে দৈনন্দিন জীবন প্রণালীর(অথর্বণ) জ্ঞান(বেদ)। এই বইয়ের দুটি আলাদা শাখা হচ্ছে-
- পৈপ্পলাদ
- শৌনকীয়
কেউ কেউ আবার এটিকে যাদুমন্ত্রের বেদ বলেন এবং কেউ কেউ সেটি অস্বীকার করেন। এর কারণ হচ্ছে এখানে বিভিন্ন রকম ঐষধের বর্ণনা আছে যা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা যায়। এইসব ঐষধের প্রস্তুতপ্রণালী আবার দৈত্যদানবের কাছ থেকে পাওয়া।
অথর্ববেদ প্রথম খণ্ড ইংরেজী, দ্বিতীয় খণ্ড ইংরেজী
এই বেদে দিব্যজ্ঞান ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের কথাও আছে। হাড় ভেঙে গেলে সেটির জন্য কি করতে হবে এবং ক্ষতে কিভাবে রোহিণীলতা বাধতে হবে তার বর্ণনা এই বেদে পাবেন। আপনি চাইলে- গায়ত্রী মন্ত্র পড়তে পারেন।
উপরের লেখাগুলো পড়তে থাকুন, আর নিচের কমেন্ট বক্সে বেদ ডাউনলোডের ব্যাপারে কোন কথা থাকলে লিখে জানাতে পারেন। সবশেষে গীতার একটি বাণী শেয়ার করি–
“যে কাজটিতে ব্যর্থ হবেন সেটি বারংবার চেষ্টা করুন নতুন করে নয়া উদ্যমে তৈরি করার৷ একদিন না একদিন আপনি সাফল্য পাবেনই৷”
আপনি যদি ধার্মিক হিন্দু হয়ে থাকেন, তাহলে বাড়িতে একটি শিবলিঙ্গ এবং একটি রাধাকৃষ্ণের মূর্তি রাখতে পারেন (দারাজে এখন ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে)-
আরো পড়ুন-
তথ্যসূত্রঃ
- https://en.wikipedia.org/wiki/Yajurveda
- https://en.wikipedia.org/wiki/Samaveda
- https://en.wikipedia.org/wiki/Vedas
