নাজারাথের যিশু

যিশু খ্রিস্টের জন্ম ও অন্যান্য

0
যিশুকে বলা হয় নাজারাথের যিশু। খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা তাকে ঈশ্বরের পুত্ররূপী ঈশ্বর এবং মেসিয়াহ মনে করেন। তিনিই খ্রিস্ট ধর্মের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যোহন ব্যাপ্টিস্ট তাকে বাপ্তাইজ করেছিলেন।
অনেকে তার ঐতিহাসিক অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও আধুনিক ইতিহাসবিদেরা তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন না। ফিচার্ড ছবি হিসেবে যিশু খ্রিস্টের ছবি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।

যিশু খ্রিস্ট কি সত্যিই ইহুদি ধর্মপ্রচারক ছিলেন?

হ্যাঁ, তিনি জাতিতে একজন ইহুদি ছিলেন। জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেথেলহামে। তাকে বলা হয় গালিলির নাজারাথের যিশু(ম্যথিউ এবং লুকের গসপেল অনুসারে) । তিনি ধর্মপ্রচার করতেন মানুষের মাঝে বক্তব্য মৌখিকভাবে প্রকাশ করে। তিনি জনপ্রিয় একজন ইহুদি রাবাই ছিলেন।

ইহুদি ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা আর ঈশ্বরের অনুসরণ পদ্ধতি নিয়ে অন্যান্য রাবাইদের সাথে তিনি বিতর্ক করতেন, বিভিন্ন রূপকের মাধ্যমে ভক্তদের জ্ঞান দান করতেন।

খ্রিস্ট ধর্ম অনুযায়ী ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বরের পুত্ররূপে ঈশ্বরের আগমনের ইংগিত পাওয়া যায়। যিশুর ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র এবং ঈশ্বর, তিনি মেসিয়াহও ছিলেন।

অলৌকিক জন্মঃ খ্রিস্টানরা এবং মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে তিনি অলৌকিকভাবে জন্মেছিলেন কোন পিতা ছাড়াই। বাইবেলে তাকে বলা হয়েছে Begotten Son of God. কুরআনে তাকে ঈশ্বরপুত্র হিসেবে স্বীকার করা হয় নি, তবে পিতা ছাড়া মাতৃগর্ভে জন্মের অলৌকিকতা স্বীকার করা হয়েছে।

যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেথেলহাম বা, বাইত লাহম এ। যিশু অর্থ রক্ষাকর্তা।

খ্রিস্ট শব্দের অর্থ কি?

খ্রিস্ট শব্দের উৎপত্তি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষার শব্দ থেকে। এটি এসেছে ইহুদি ধর্মের মেসিয়াহ বা, মসীহ এর ধারণা থেকে। খ্রিস্ট বা, মেসিয়াহ বলতে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমরা তিন ধরণের ধারণা পোষণ করে।

ইহুদি ধারণাঃ মেসিয়াহ বা, মসীহ বা,মাসীহ হবেন ডেভিডের(দাউদ) মতো একজন ইহুদি রাজা, তিনি ইহুদিদের ও মানবজাতিকে উদ্ধার করবেন।

ইহুদিরা রাজা বলতে আক্ষরিক অর্থেই ইহুদিদের রাজারা যেমন হতেন তেমনটাই বুঝায়, যিশু তেমন ছিলেন না। দেখুন- মসীহ শব্দের অর্থ কি?

খ্রিস্টানদের ধারণাঃ যিশুই ছিলেন মানবজাতির ত্রানকর্তা, তিনি ইহুদিদের রাজা এবং সমগ্র পৃথিবীর রাজা(তিনি স্বর্গেরও রাজা)- তিনিই ঈশ্বর। পুরো মানজাতিকে তিনি মুক্তি দিয়েছেন।

তিনিই মেসিয়াহ, খ্রিস্ট, ত্রানকর্তা, মসীহ, মাসীহ। অধিকাংশ খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর সবার পাপের জন্য যিশু মারা গিয়েছেন। আদি পাপ থেকে তিনি মানবজাতিকে মুক্তি দিয়েছেন।

মুসলিমদের ধারণাঃ যিশু ছিলেন ইহুদিদের মেসিয়াহ, মসীহ, ইহুদিদের নবী, তিনি ইহুদি জাতিকে সত্যের পথে আহবান করেছিলেন। তিনি অলৌকিকভাবে জন্ম নিয়েছিলেন এবং অনেক অলৌকিক কাজ করে দেখিয়েছেন। পৃথিবীতে নবীদের আগমনের ধারাবাহিকতার নিদর্শন হিসেবে তিনি তাঁর জাতিতে সত্যের পথ দেখাতে চেয়েছিলেন।

যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থান

মুসলিমরা পুনরুত্থান বলতে এই জীবনের পরের জীবনে মানুষের উত্থানকে বুঝায়, কিন্তু খ্রিস্ট ধর্মে পুনরুত্থান বলতে যিশুর মৃত্যুর তিনদিন পরে ফিরে আসাকে বুঝায়। শেষবারের মতো বারোজন শিষ্যের সাথে খাবার গ্রহণ করেছিলেন যা লাস্ট সাপার নামে পরিচিত।

নিজেকে মেসিয়াহ এবং ইহুদিদের রাজা দাবি করার অভিযোগে ইহুদি কর্তৃপক্ষ তার বিচার করে এবং রোমান সরকার তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার আদেশ দেয়। মেরি ম্যাগডালিন সহ আরো অনেক অনুসারীরা তাকে মৃত্যুর তিনদিন পরে ফিরে আসতে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন।

এবং পরে তিনি আবার স্বর্গে আরোহণ করেন, তিনি আবার ফিরে আসবেন বলে তার অনুসারীদের বিশ্বাস। মুসলিমদের মতে যিশু মারা যান নি, তিনি জীবিত স্বর্গে আরোহন করেছেন এবং আবার ফিরে আসবেন।

অলৌকিক কাজ

বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে তিনি-

  • অলৌকিক উপায়ে তিনি ক্ষুধার্তদের খাদ্য এবং পানীয় যুগিয়েছিলেন
  • দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের সুস্থ করেছিলেন
  • প্রতিকুল আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন
  • মৃত্যুকে পরাজিত করেছিলেন

যিশুর শেষ বাক্য ছিল(বাইবেল অনুযায়ী)-

পিতা, তাদেরকে ক্ষমা কর, তারা জানে তারা কি করেছে” “সত্যিই, আমি তোমাকে বলছি, আজকেই স্বর্গে তুমি আমার পাশে থাকবে (তার পাশে যে দুইজন চোরকে ক্রুশবিদ্ধ করা হচ্ছিলো তাদের একজনের কথার প্রেক্ষিতে বলেছিলেন) “পিতা, তোমার হাতে আমি আমার আত্মাকে সমর্পণ করছি” (শেষ কথা)

যিশু খ্রিস্টের বাণী

মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এবং মানব জাতির ইতিহাসে একজন শান্তির দূত হিসেবে যিশু সর্বজনশ্রদ্ধ একজন ব্যক্তি। তাঁর বাণীগুলকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মতো মুসলিমরাও পছন্দ করে, তবে সব ক্ষেত্রে একইরকম অর্থ গ্রহণ করে না। তাঁর কিছু বাণী দেখুন-

“ধার দিও ফেরত পাবার কথা না ভেবে, বিনিময়ে তুমি মহা পুরস্কার পাবে”

“অন্যের বিচার করো না তুমিও বিচারিত হবে না”

“দান করো প্রতিদানে তুমিও পাবে আর তুমি যেমন দেবে ঠিক ততখানি ফেরত পাবে”

“ভাইয়ের চোখের কুটটা দেখতে পাও অথচ নিজের চোখের কড়িকাঠ নজরে আসে না”

“যদি কেউ তোমার এক গালে চড় মারে তাকে তুমি অন্য গাল পেতে দাও। যে তোমার চাদরটা নিয়ে নেয় তাকে তুমি তোমার জামাটাও দিয়ে দাও। ”

“যারা তোমাকে ভালবাসে শুধু তাদেরকেই ভালবাসলে তোমার কৃত্বিত কোথায় বলো ? পাপীরাও তো তাই করে”

ঈশ্বরের পক্ষে কি মানুষ হয়ে জন্ম নেয়া সম্ভব

খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন, ঈশ্বর সব কিছু করতে পারেন- তিনি মানুষ হিসেবেও জন্ম নিতে পারেন আর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মাধ্যমে মানুষকে আদি পাপ থেকে মুক্তিও দিতে পারেন

মুসলিমরা মনে করেন, সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি সৃষ্ট বস্তু,ব্যাক্তি বা, কোন কিছুই নন- মানুষের কোন বৈশিষ্ট্যও সৃষ্টিকর্তার উপর আরোপ করা যায় না। তাই, যিশু সৃষ্টিকর্তা হলে মানুষ হিসেবে জন্ম নেবেন না। আদমের জন্ম যিশুর চেয়েও অলৌকিক, তারা পিতাও ছিল না, মাতাও ছিল না। জেনে নিন- আল্লাহ কে?

আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে যিশু খ্রিস্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইহুদিরা তাকে একজন সাধারণ ইহুদি রাবাই এর বাইরে কিছু মনে না করলেও খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাঁর অলৌকিক জন্ম এবং আচরণে পুরোপুরি বিশ্বাস করে

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

মহাভারত, পঞ্চপান্ডব, মহাকাব্য, ইতিহাস, যুদ্ধ, যোদ্ধা

মহাভারতের পঞ্চপান্ডব

মহাভারতের পঞ্চপান্ডব ছিলেন পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র- যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল এবং সহদেব। মুনি দুর্বাসার দেয়া বর কাজে লাগিয়ে কুন্তি ও
আল্লাহ এক জন

খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের প্রতি নবীজির অঙ্গীকারনামা

খ্রিস্টান সন্যাসীদের প্রতি নবীজির অঙ্গীকারনামা একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সমাদৃত। পৃথিবীর প্রাচীনতম গীর্জাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সেইন্ট ক্যাথরিনের গীর্জা। সিনাই
নাস্তিক্যবাদ

নাস্তিকতাবাদ বা, নাস্তিক্যবাদ আসলে কেমন?

নাস্তিকতাবাদ বলতে আমরা এমন মতবাদকে বুঝি যেখানে ঈশ্বরের বা, কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। এর বাইরে আরো কতগুলো
জাপানের শিন্টো ধর্ম

জাপানের শিন্টো ও জর্জিয়ার ধর্ম

শিন্টো ধর্ম বহুঈশ্বরবাদী একটি ধর্ম। শিন্টো(বা, শিন্তৌ) শব্দের অর্থ দেবতার পথ। এই ধর্মে সৃষ্টিকর্তাকে বলা হয় কামি। অসংখ্য স্রষ্টার অস্তিত্ব

One Reply to “যিশু খ্রিস্টের জন্ম ও অন্যান্য”

Leave a Reply