রূপকথার গল্পে আমি
(৪)
ইনস্টিটিউটে যাচ্ছি গলির মোড়ে আসতেই চমকে উঠি। সেই লোকটা দাঁড়িয়ে। তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াই। ধীরে ধীরে প্রশ্ন করি- আপনি কে? কোন জবাব নেই। কোথা থেকে এসেছেন? জবাব নেই। এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? কোথাও যাবেন নাকি? লোকটা তখন ও নিরুত্তর। সেদিনের পর থেকে আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন? একটু নড়ে দাঁড়াল কিন্তু কোন জবাব নেই। আপনি কথা বলছেন না কেন? এবার সে একটু হাসি দেয়। ছোট বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে যে রকম করে হাসে ঠিক সে রকম। এরপর সে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে ভাবি ভূত নাকি? ভয় পেয়ে দৌড় দেই পিছন ফিরে ততক্ষণে একটা কার এসে আমার উপর দিয়ে চড়ে উঠে আর অমনি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসি। আমি হাপাচ্ছি। দু এক মিনিট পর চেতনা ফিরে আসে। বুঝতে পারি স্বপ্ন দেখছিলাম। এ কি রকম স্বপ্ন, মনে হয় যেন একেবারে জীবন্ত, এতদিন জানতাম স্বপ্ন সাদা-কালো হয়, কিন্তু আজ পরনে গাড়ো লাল রঙের কামিজ সাদা পায়জামা, ওড়না দেখলাম। স্বপ্নের রঙ এত গাঢ় হয়, স্বপ্ন যে রঙিন হতে পারে আজ প্রথম দেখলাম। এরপর টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়ি।
আজ একটু তাড়াতাড়ি ইনস্টিটিউটে যাচ্ছি। যাবার পথে গলির মোড়ে এসে লোকটাকে খুঁজি কই তার দেখা নেই। পিছন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছি। অনেক দূর যাবার পরও ফিরে তাকিয়েছিলাম। সময়ের আগে ইনস্টিটিউটে যাওয়ায় ক্লাসরুম গুলো অনেক ফাঁকা লাগছে। ইংরেজী ডিপার্টমেন্টের একটা গ্ৰুপের ক্লাস চলছে। আরেকটা গ্রুপের স্টিউডেন্ট কয়েকজন এসেছে। কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি। আমি আর কয়েকজন ছাত্র এসেছে। ছাত্ররা বাইরে বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি কম্পিউটার ল্যাব-এ বসে আগের প্রোগ্রাম গুলো প্রাকটিস করছিলাম যাতে ওইগুলো মেমোরিতে থাকে। গভীর ভাবে মনোযোগ সহকারে প্রাকটিস করছিলাম। এতো গভীর ভাবে প্রাকটিস করছিলাম যে আশপাশের সবকিছু ভূলে গেছি। প্রায় দশ পনের মিনিট পর হঠাৎ শুনতে পাই-এক্সকিউজ মি! চমকে উঠে পিছন ফিরে দরজার দিকে তাকাই। তাকিয়েই চোখ বন্ধ করে ভূত ভূত ভূত বলে চিৎকার দিতে শুরু করি।
ইংলিশ, কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের স্যার স্টিউডেন্ট সবাই কম্পিউটার ল্যাব-এ এসে আমার পাশে জড়ো হয়েছেন।
স্যার ডাকছেন- অধরা অধরা চোখ খোল! কোথায় ভূত? এখানেতো আমরা সবাই।
চোখ খোলে বললাম- রাতে যে ভূত স্বপ্নে দেখেছি ওই ভূত আমায় এক্সকিউজমি বলেছে এই দরজায় দাড়িয়ে!
স্যার হেসে বললেন-ভূত তুমায় “এক্সকিউজ মি বলেছে”?
স্যারের এই কথা শুনে সবাই হো হো হো— করে হেসে উঠল। আমি লজ্জা পেয়ে দৌড় দিয়ে অন্য রুমে চলে যাই।

ভালো লিখেছেন কবি