“রূপকথার গল্পে আমি”

0

রূপকথার গল্পে আমি

(২)

প্রায় দশ বছর পর। এখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ছি। খুব শান্ত ও ধীর স্বভাবের একটা মেয়ে হয়ে গেছি। এস. এস. সি পরীক্ষার্থী। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসি। আটটা বাজলে প্রাইভেট পড়তে যাই, ৯:৩০ এ ফিরে আসি বাসায়। গোসল সেরে খাওয়া-দাওয়া করে রেডি হয়ে আবার বেরিয়ে পড়ে। বিকেল চারটার দিকে স্কুল শেষ করে বাসায় ফিরি। ফ্রেস হয়ে হালকা নাস্তা করে তারপর রাতের পড়া গুলো রেডি করে রেখে এরপর ঘন্টা খানেকের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি। বিকেলের দিকে ঘুমানোর চেয়ে একটু বাইরে হাটাফেরা করলে ভালো হয় কিন্তু আমার অভ্যাস হয়ে গেছে দিনে একটু সময় না ঘুমালে রাতে ভালো করে পড়তে পারি না। মাগরিবের নামায পড়ে চা খেয়ে সোজা পড়ার রুমে। রাত বারোটা- একটা পর্যন্ত পড়া। এর ফাঁকে উঠে এশার নামায পড়ি ডিনার করি। এই হলো রোজ দিনকার কাজ। তবে শুক্রবারে একটু ভিন্ন। এ দিন ঘর ঝাড়ু দেই, কাপড় ধুইয়ে দেই, একটু বেশি করে ঘুমাই, একস্ট্রা পড়া পড়ি, ছোট আপুর সাথে একটু বেশী করে গল্প করি।

প্রতিদিনই স্কুল থেকে এসে একটু অবসর করে আপুর কাছে স্কুলে যাওয়া থেকে আসা পর্যন্ত সব বর্ণনা করি। এটাও ডেইলি রুটিনের একটা অংশ হয়ে গেছে আমার কিন্তু শুক্রবারে ভিন্ন রকম করে গল্প করা। বিকেলের দিকে বাসার বাইরে বের হই। পাড়া প্রতিবেশি আছে তাদের সাথে একটু খোশ গল্প করি। আমি বাইরে সবার সাথে আড্ডা দেয়ার চেয়ে ঘরে বসে একা একা ম্যাডিটেশন করতে পছন্দ করি। মজার কোন কিছু নিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভাবতে ভালো লাগে। ইচ্ছে করে অনেক সময় বাইরে যেতে চাই না। বাইরে যেতে না চাওয়ার ও অনেক কারণ আছে। আমার ভাষা জ্ঞান সীমিত। কারণ গুলো মস্তিষ্কে আছে কিন্তু কলম দিয়ে বের করা খুব কষ্ট, পাছে কেউ ভূল বুঝে বসে থাকে। আমাদের ফ্যামিলি পজিটিভ – কনজারভেটিভ (conservative)। বাড়ির অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা টাইপের মানুষ। মনে হয় যেন একটু বেশি ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত এবং ধার্মিক। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন হয় এটা যেমন খুবই স্বাভাবিক কথা তেমনি সময়ের পরিবর্তনের সাথে কিছু মানুষের পরিবর্তন হয় না এটাও খুব অস্বাভাবিক কথা নয়।

জবা মার্জিত একটা মেয়ে। সময়ের সাথে ওর কিছু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তার চারপাশের মানুষের কোন পরিবর্তন নেই। জবা সম্পর্কে চাচাতো বোন। প্রায়ই ও বাসায় আসে, আমার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করে। জবা এখন অনেকটা রুচিশীল হয়ে গেছে আমাদের সংস্পর্শে এসে। জবা আর আমি সমবয়সী আর ‘অচিরা’ দুবছরের বড়। আমি পড়াশুনা করছি আর জবা- অচিরার পড়াশুনা বেশি দূর এগোয়নি। তারা বাড়িতেই থাকত। তাদের দুজনের মাঝে খুব ভাব। অবসর পেলেই দুজনে গল্প জুড়ে দেয়। তাদের গল্পের মধ্যে আমি তেমন থাকি না, কারণ এইসব গল্প শুনার সময়ই নেই আর এসব তাদের প্রাইভেট গল্প শুনার মতো মন এখনো পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি হয়নি আমার। তাই আমি ও প্রায়ই পাশ কাটিয়ে চলতাম। তো একদিন অচিরার বিয়ে হয়ে গেল। জবা একা নিঃসঙ্গবোধ করতে লাগলো। তারচেয়ে বেশি একাকিত্ব অনুভব করতে লাগলাম আমি। ঘরে যতক্ষণ থাকতাম বেশির ভাগ সময় অচিরার পাশেই থাকতাম। বড় আপুর বিয়ের কথা মনে নেই, ছোট আপুর বিয়ে হওয়াতে খুব খারাপ লাগছে। প্রায় চার মাস পর আমার এস. এস. সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে এখন অনেক দিনের জন্য ফ্রি। একা একা বোরিং লাগে তাই জবা কে ডাকি বাসায়। আমরা দুজন এখন মিশতে লাগলাম। আমার মন মানসিকতার ও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যা শুনতে ডিজলাইক করতাম এখন তার প্রায়ই শুনতে মন্দ লাগে না। আর তাই জবা ও খুব সহজে মিশতে পারছে আমার সাথে। এখন একটু ফাঁক পেলেই জবা-আমি গল্প জুড়ে দেই…!


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

4 Replies to ““রূপকথার গল্পে আমি””

Leave a Reply