রূপকথার গল্পে আমি
(৫)
এক সপ্তাহ পর। ক্লাস শেষ করে সিঁড়ি পেছন ফেলে নিচে নামছি। চারতলায় ক্লাস রুম। দ্বিতীয় তলায় আসতেই আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ি সেই দিনের সেই লোকটা।
আমি ভূ-ভূ ভূত বলে চিৎকার করতে যাব ততক্ষণে লোকটা একটু অপ্রস্তুত হয়েই বলছে
আরে আরে আপনি ভূ ভূ করবেন না। এই দেখেন আমি মানুষ আমি ভূত না, দেখুন “চিমটি কেটে দেখুন”?
আমি এবনরমাল ফিল করতেছি।
আমি মানুষ, আমার নাম অনিক। আমি ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের স্যার, নতুন জয়েন করেছি। আমাকে দেখতে কি ভূতের মতো লাগে?
লোকটার কথা শুনে এখন একটু নরমাল ফিল করছি। একটু হাসি, কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে রিক্সায় করে সোজা বাসার দিকে রওয়ানা দেই।
চার পাঁচদিন পর কম্পিউটার ল্যাব এ দেখা অনিক স্যারের সাথে। উনি কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন।
আমি দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম- মে আই কাম ইন স্যার, প্লিজ?
স্যার দরজার দিকে তাকিয়ে একটু ইতঃস্তুত করে বললেন ইয়েস কাম ইন।
আমি গিয়ে আরেকটা কম্পিউটারের সামনে বসে বলি আই’ম সরি স্যার!
সরি! ওয়াই (Why)?
সেদিন যে আপনাকে ভূত বলেছিলাম!
ওহ আর বলবেন না, আমি যা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি এসেছিলাম ইমেইল চেক করতে, তাড়াতাড়ি পাশের রুমে চলে গেছি নইলে অন্যদের সামনে লজ্জা পেতাম! আচ্ছা আপনি এভাবে ভূত ভূত বলে চিৎকার করলেন কেনো? আমি কি দেখতে ভূতের মতো?
অন্যমনষ্ক ভাবে বলে উঠি – হ্যাঁ!
অনিক স্যার উৎসুক নয়নে – কী?
না না আপনি ভূতের মত হতে যাবেন কেন! আসলে একটা সমস্যা হয়েছিল!
সমস্যা, কি সমস্যা?
এরপর আমি গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে যে লোকটাকে দেখতাম তার কথা সবকিছু স্যার কে বলি এবং রাতের ঐ স্বপ্নটার কথাও বলি, আরো বললাম যে রাতে স্বপ্ন দেখেছিলাম ওই দিনেইতো আপনার সাথে প্রথম দেখা! আপনার চেহারার সাথে ওর এত মিল আমিতো ভেবেছি ওই লোকটাই আপনি। আর আপনি ভূত হয়ে রাতের মত এসেছেন আমার সামনে, বলেই আমি এক গাল হেসে দেই, সাথে অনিক স্যার ও হাসিতে যোগ দেন।
ওই গলির মোড়েইতো আমাদের বাসা। একটু ভিতরে যেতে হয়। আর দাঁড়িয়ে থাকতে যাকে দেখেছ সে আমার খালাতো ভাই নাম নিথর।
মানুষের চেহারায় এত মিল থাকতে পারে?
হ্যাঁ ও দেখতে একেবারে আমার মত।
তাদের বাড়ি কোথায়?
চট্টগ্রামে, আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল খালা-খালুর সাথে।
তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার ভালো লাগতো ভেবেছিলাম একদিন কথা বলব, সুযোগ পাইনি।
কথা বলবে কি করে, সেতো কথা বলতে পারেনা! আমি অবাক বিস্ময় নিয়ে বলি-কথা বলতে পারে না!!!
সে কথা বলতে না পারলেও তার মেমোরি খুব শার্প। প্রতিবন্ধি স্কুলে ক্লাস এইট-এ পড়ে। পড়া-লেখায় খুব ভালো।
ওর নাম নিথর কেনো রাখলেন?
ওর এক বোন ছিল নাম নিথি। জন্মের দুই বছর পর পুকুরে পড়ে মারা যায়। এরপর তার জন্ম হয়। নিথি নামের সাথে মিল রেখে খালামনি তার নাম রেখেছেন নিথর।
তারা কয় ভাইবোন?
নিথর এর ছোট এক বোন। নাম তিথি।
আপনি জানেন স্যার নিথর নামের অর্থ?
জানি, নিথর অর্থ নিস্তব্ধ।
নিথর নাম রেখে ওকে আপনারা নিস্তব্ধ করে দিয়েছেন।
ওর নাম রাখার সময় এমনটি যে হবে কেউতো ভাবেনি।
নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আমি অনিকও।
একটা ছেলে এসে বলল- স্যার আমাদের ক্লাসের সময় হয়েছে।
হ্যাঁ, আমি আসছি তুমরা ক্লাসে যাও! অন্য সময় আপনার সাথে কথা হবে এখন আসি?
স্যার আমি কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের স্টিউডেন্ট আমাকে তুমি করেই বলবেন।
ঠিক আছে বলব, তুমিও আমাকে তুমি করে বললে অসুবিধা নেই, আমিও-স্টিউডেন্ট। এইতো বি.এস. সি ফাইনাল এক্সেম শেষ করেছি। অনেক দিনের জন্য ফ্রি তাই অবসর কাটানোর জন্য এখানে জয়েন করেছি।
ও আচ্ছা, ভালো করেছেন।
পরে কথা হবে বলেই সে ল্যাব ত্যাগ করে। আমি ও দশ পনেরো মিনিট প্রাকটিস করে এর পর ক্লাস রুমে চলে যাই।
