“রূপকথার গল্পে আমি”

0

(৬)
শীতকাল শুরু হয়েছে মাত্র। রাত প্রায় দ্বিপ্রহর। জানালা খুলে সামনে এসে বসি। বাসার দক্ষিণে খোলা মাঠ আছে তার পাশ দিয়ে ছোট একটা নদী বয়ে গেছে। নদীর ওই পাড়ে ছোট ছোট কুটির আছে। সেখানে কৃষক, জেলে, দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো সারা দিনের ক্লান্ত দেহ নিয়ে ফিরে গিয়ে স্বর্গের সুখ লাভ করে। হালকা অন্ধকারময় মেঘরাশি দূরের কুটির, নির্ঝর, নদী, শস্যক্ষেত্র গ্রাস করে ফেলেছে। মৃদু বাতাস বইছে, ঝরা পাতাগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েও পায় না। গাছে গাছে পাতায় পাতায় হাজার হাজার জোনাকি পোকা মিট মিট করে ঝলছে।
নরম ধীর মোলায়েম কন্ঠে বিড়বিড় করে আপন মনে বলে যাচ্ছি “গভীর রাতে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে কখনো শুনা যায় একটি পাখির করুন ডাক, মনে হয় যেন তার মনের ব্যথা হালকা করছে করুন সুরে ডেকে! নাকি অন্যকিছু? বড় জানতে ইচ্ছে হয়”। আচ্ছা বলতে পারো “জোনাকিরা কেন জ্বেলে দেয় আলো, আর ঝিঝিরা ই বা কেন বাজায় ঘুমের নূপুর” বলো- পাশ ফিরে থাকাই- অনিক নেই! নিজেই নিজের মনে হাসি, হাত দিয়ে মাথা চাপড়িয়ে উঠে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। নাহ্ আর পারিনা অনিকের ভূত আমার মাথায় চাপাইছে।
আজ ছুটির দিন। রাতে ভালো ঘুম হয় নি তাই দুপুরের দিকে গোসল সেরে নামায পড়ে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। পায়ের পাতায় তিন আঙ্গুলের মৃদু সুড়সুড়ি কেটে দেয়। ঘুমটা টুটে যায়। কাঁচা- ঘুম টুটে যাওয়াতে একটু বিরক্তি অনুভব করি বেখেয়ালে “ধ্যাৎ” বলে আবার চোখের পাতা বন্ধ করে নেই। এখনি উঠতে ইচ্ছা হয় না। আরেকটু নড়ে চড়ে সোজা হয়ে ডানকাতে শুয়ে থাকি। আবার অন্য পায়ের পাতাতেও সেই রকম সুড়সুড়ি কেটে দেয়। রসময়ী বান্ধবজন কেউ হতে পারে কিনা এসবের প্রতি এতটুকু আগ্রহ প্রকাশ না করে উবু হয়ে মুখ গুজে নেই। এক প্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জানতে চাই- কে? হাস্যজ্ঝল মুখে জবা এসে বিছানার এক পাশে বসতে বসতে বলে- কিরে রাতে কার সাথে ঝগড়া করেছিস? রাতে ঘুমাস নি? চাচি আমার কাছে শুনলাম সেই কখন থেকে ঘুমাচ্ছিস!
তড়াক্ করে উঠে বসে জবার হাত ধরে বললাম- আরে জবা তুই বস বস তর সাথে অনেক গল্প আছে।
সপ্তাহ খানেক আগে জবার সাথে দেখা হয়েছিল। আজ সে এসেছে বাসায়। টেবিল থেকে “অপসংস্কৃতির বিভীষিকা” নামে একটা বই ওর হাত দিয়ে বললাম- এটা পড় আমি আসছি। বলেই কিচিনে গিয়ে পানি খেয়ে দু’কাপ চা নিয়ে এসে জবার হাতে একটা দিয়ে নিজে চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করি কাল আমাদের ইনস্টিটিউটের সপ্তম-জন্ম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
তাই নাকি? তা কোন বড় অনুষ্টানের আয়োজন হয়েছিল?
হ্যাঁ… বড় করে আয়োজন করা হয়েছে বললে ভুল হবে না। কারন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিত, কৗতুক, দর্শক পর্ব, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, আর শেষে ভূজের আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের স্যারদের কয়েকজন বন্ধু মুরারী চাঁদ কলেজ, শাহজালাল ভার্সিটি থেকে এসেছিল। তারা ইংরেজিতে বক্তৃতা দিয়েছে। এত সুন্দর করে অনর্গল ইংরেজি বলতে পারেন। আমার খুব শখ লাগে রে কবে যে তাদের মতো করে বলতে পারবো।
পারবে নিশ্চয়ই একদিন, চেষ্টা করে যাও।
আর জানিস সবচেয়ে মজার একটা ঘটনা হল আমাদের একজন ইয়াং স্যার বোকা জামাই এর অভিনয় করেছেন।
বোকা জামাই শুনেই জবা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কারন জবা জানতো বুকা জামাই এর কৌতুকটা।
দুজনে এত উচ্চস্বরে হেসে উঠি পাশের রুম থেকে মা এসে বললেন- কিরে এত হাসি কেনরে?
মা একটা কৌতুকের কথা বলছিলাম। শুনবে মা কৌতুক টা খুব মজার।
মা বললেন- বলো শুনি।
গড়গড় করে কৌতুকটা বলে দিলাম, আর অমনি মা ও এক গাল হেসে নিলেন।
তিনজন মিলে অনেক হাসাহাসি হলো।
মা বললেন-তোরা গল্প কর বলেই কাপ দুটো নিয়ে চলে গেলেন।
জবা আমি আরো অনেক গল্প হলো, হাসি-টাট্টা হলো, তারপর জবা বিদায় নিল।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ

গল্প সিয়ামের স্বপ্ন আফছানা খানম অথৈ দশ বছরের সিয়াম কমলাপুর রেল ষ্টেশন এ থাকে।তার ঘরে খুব অশান্তি। এক মুহুর্তের জন্য

গল্পঃ অনুপমার চোখে ২

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায়  #Part_02 অনুপমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এটা নিজেকে স্বীকার করলেও তাকে বলার সাহস তখনও হয়নি। কারণ

গল্পঃ অনুপমার চোখে ১

গল্পঃ অনুপমার চোখে লেখকঃ বকুল রায় Part 01 ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলো আমার কাছে সবসময় যেন এক রঙিন ক্যানভাস। ছোটবেলা থেকে

গল্প সুদ আফছানা খানম অথৈ

গল্প সুদ আফছানা খানম অথৈ এক ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে এক ইহুদীর কাছ থেকে সুদের উপর কিছু টাকা কর্জ নিলেন।কথা ছিল

Leave a Reply