অপেক্ষা। পর্ব–১১। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

আলো হেটে চলেছে সমুদ্রতীরে। পাশে রয়েছে এক সুদর্শন। তারা একে অপরের হাত ধরে হাটছে। আলোর অনেক বেশি ভালো লাগছে এখানে হাটতে। হাটতে গিয়ে একসময় আলো বালিতে পা আটকে নিচে পড়ে গেলো। আলোকে পড়ে যেতে দেখে দুজন সমস্বরে আলোর নাম ধরে ডেকে উঠলো। একজন এসে আলোর হাত ধরে আলোকে উঠানোর চেষ্টা করছে। তবে পাশ ফিরে তাকে দেখার বিষয়টা আলোর মাথায় এলো না। আলো তাকালো সামনের দিকে। দেখলো তাফীফ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। অথচ তার চোখ পানিতে টইটম্বুর। সে শুধু একটা কথাই বললো,”তোর অপেক্ষায় পাগল এই আমি। অথচ আজ তুই অন্য কারো ঘরের রানী।”

আলো শুয়া থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। পবিত্র আজানের ধ্বনি কর্ণগোচর হতেই আলো বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু এ কেমন স্বপ্ন! তাও এই ভোর বেলা। লোকে বলে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। না না, এটা হতে পারে না। হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে সত্যি হয়। তাই হবে হয়তো। আলো নিজেকে এরকম টাই বুঝ দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো।

আলো নামাজ শেষে বাগানে চলে গেলো প্রকৃতির স্নিগ্ধ হাওয়া গায়ে মাখাতে। অনেকদিন হলো এদিকটায় এসে বসা হয় না। বাগানে থাকা বকুল ফুলের গাছটা থেকে ফুল কুড়িয়ে মালা বানানো হয় না। বকুল গাছের কাছাকাছি যেতেই দেখতো পেলো অনেক ফুল নিচে পড়ে আছে। আলো খুশি হয়ে গেলো। দ্রুত পায়ে গাছের কাছে গিয়ে ফুল কুড়াতে লাগলো।

তাফীফ নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলো। দূর থেকে আলোকে দেখতে পেয়ে নিজের দাঁত বের করে হেসে আলোর কাছে এসে শুধালো,”আলু,বালু,কালু কি করছ?”

তাফীফের কথা শুনে আলো আড়চোখে তাফীফের পানে একবার তাকিয়ে দেখলো। তারপর আবার ফুল কুড়ানোতে ধ্যান দিলো।

“কিরে কথা কছ না কেন? কি করছ?”

“হাঁড়ি পাতিল মাজি। মাজবি? আয় দুইজন মিললা মাজি।”

“এ্যাহ, আমারে দেইখা কি তোর কানা মনে হয়?”

“না তোয় বলদ মনে হয়। তা না হইলে দেখতাছোছ ফুল কুড়াই তাও আবার কোন দুঃখে জিগাস কি করি?”

তাফীফ কিছুটা অসহায় চেহারা বানিয়ে শুধালো,”ক্ষেপছ কেন? একটু মিষ্টি কইরা কইতে পারতি না ফুল কুড়াছ যে? আমার কি তোর মুখের তে মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনতে ইচ্ছা করে না?”

“তোর ইচ্ছা দিয়া আমি কি করমু? এলা আমারে না জ্বালাইয়া যেই রাস্তা দিয়া আয়ছোছ ওই রাস্তা দিয়া আবার সুন্দর কইরা চইলা যা।”

“তোর মাঝে আসলেই কোনো রসকষ নাই।”

“তোর মাঝে আছে না? ওইডা থাকলেই চলবো, আমার লাগবো না।”

“এইটা তুই ভালা বলছোছ। দুইজনের মাঝে একজনের থাকলেই চলে। তুই সারাক্ষন আমার উপর রাগ কইরা ঝাড়ি দিবি আর আমি মিষ্টি মিষ্টি কথা কইয়া তোর রাগ ভাঙামু।”

তাফীফের কথার মানে আলো বুঝতে পারলো। তাও অবুঝের ন্যায় শুধালো,”মানে?”

আলোর এরুপ প্রতিক্রিয়া দেখে তাফীফ হতাশ হলো।

“তুই কি আমারে বুঝবি না আলো?”

মুখ মলিন করে তাফীফ চলে গেলো। আর তাফীফকে যেতে দেখে আলো ঠোঁট টিপে হেসে নিলো। তাফীফ যেতেই নিজ মনে আওড়ালো,”যাকে সেই ছোট্ট থেকে বুঝে আসছি তাকে আর নতুন করে কি বুঝবো?”

————

“ভাই, গরম গরম খবর আছে।”

“কি খবর?”

“ওই বাহাদুর মিয়ার পোলারে প্রতি রাইতে আলোর জানালার সুজাসুজি দাঁড়াইয়া থাকতে দেহা যায়। আর ওই সময় আলোর জানালা খুলা থাহে। তাফীফ গেলে গা আবার বন্ধ কইরা দেয়।”

জুবায়ের বসে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিলো।ছেলেটির কথা শেষ হতেই জুবায়ের হাতে থাকা সিগারেট নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে ছেলেটির পানে তাকালো। তারপর হুংকার ছেড়ে শার্টের কলার ধরে শাসিয়ে বললো,”আলো কি রে হ্যাঁ? আলো কি? ভাবী ডাকতে পারছ না? জানস না ওই মাইয়া আমার ঘরের বউ হইবো? আমার ঘরের কুত্তারে যেইহানে সবাই সম্মান দেয় সেইহানে তুই আমার বউ রে নাম ধইরা ডাকার সাহস পাইলি কই?”

ছেলেটা কাপাকাপা স্বরে বললো,”ভাভাই ভুল হইয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন। এমন আর জীবনে হইবো না ভাই। হইলে আপনে আমারে জানে মাইরা দিয়েন।”

ছেলেটির কথায় জুবায়ের ছেলেটিকে ছেড়ে দিলো।

“ঝোপ বুইঝা কোপ দিমু। তুই আইজকা ওদের উপর নজর রাখ। পরে কালকে ওইদিকে ওই বুইড়া আলাউদ্দিনরে নিয়া যাইছ। ওগো দুইজনরে এমনে দেইহা জানি ওই বুইড়ার মনে সন্দেহ হয়। বাকিটা তুই ঢুকাইয়া দেইছ।”

“আচ্ছা ভাই।”

“এইখান থেকে যা এলা। একলা থাকতে দে আমারে।”

ছেলেটি বেড়িয়ে যেতেই জুবায়ের আরেকটা সিগারেট ধরালো।

“তোর রূপ দেইহা তোরে ভালা মতো আনতে চাইছিলাম। কিন্তু এহন তুই আমার জেদ। তোরে আনমু, ঘরে কয়েক মাস রাখমু। আর তারপর!” বলে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো জুবায়ের।

আলো আসরের নামাজ পড়ে বিছানায় বসতেই দেখলো কিছু একটা জানালার ধার দিয়ে বিছানার উপর পরে আছে। কি সেটা দেখতে হাত বাড়িয়ে আনতেই দেখলো খাম জাতীয় কিছু একটা। ওটা খুলতেই ভিতরে কিছু ভৃঙ্গরাজ ফুল দেখতে পেলো আলো। তা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। কেননা ফুল আলোর অনেক বেশি পছন্দ। ভাবলো এটা হয়তো তাফীফের কাজ। তাফীফ ছাড়া আর কেই বা আছে যে আলোকে ফুল দিবে? কিন্তু তাফীফ এই সময় এখানে? এসব ভেবে জানালার বাহিরে ভালো করে উঁকি দিয়ে দেখলো তাফীফ আছে কিনা। কিন্তু নাহ, তাফীফ তো নেই। তাহলে কি ফুল দিয়েই চলে গেলো?

আরো কিছু আছে কিনা দেখতে খামটার ভিতরে হাত দিতেই বুঝলো কিছু একটা আছে। বের করে আনতেই দেখতে পেলো একটা নীল রঙের চিরকুট। আলো খানিকটা অবাক হলো। অতঃপর চিরকুট খুলে পড়তে লাগলো।

❝শুনো হে অষ্টাদশী
অপেক্ষায় তোমার হবো বিলীন
গেথে দিবো ভৃঙ্গরাজ
তোমার ওই রেশমি কালো চুলে
রংধনুর সাত রঙ সাজাবো
আমরা দুজন মিলে।

–আপনার অপ্রেমিক❞

চলবে……


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “অপেক্ষা। পর্ব–১১। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply