অপেক্ষা। পর্ব-১২। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

চিরকুট পড়ার পর আলো ভাবতে লাগলো এটা কার কাজ হতে পারে। তাফীফ এমন কিছু করবে বলে তো মনে হয় না। কারন তাফীফের যা বলার তা সামনাসামনি বলে দেয়। আর হাতের লেখাও তো তাফীফের না। তাহলে এটা কে দিলো?

ঘরের জানালা খুলে তাফীফের #অপেক্ষা করছে আলো। আজ চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। চাদের দিকে তাকিয়ে আলো গুনগুনিয়ে গাইলো,❝তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম
তুমি রবে নিরবে
নিরব নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনীসম❞

তারপর সামনে তাকাতেই দেখলো তাফীফ একটা গাছের নিচে বসে তাকিয়ে আছে আলোর পানে। তা দেখে আলো কিছুটা লজ্জা পেলো। যা দেখে তাফীফের মুখে হাসির দেখা মিললো। তাফীফ এটা ভেবেই আকাশে উড়ছে যে আজকাল আলো তাকে মাঝে-মধ্যে বুঝতে পারে। তার চোখের ভাষা পড়তে পারে।

আলোর সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরার পথে তাফীফ দেখলো কুতুব মিয়া চুরি করে অন্যের পুকুরে বসে বসে মাছ ধরছে। এই সময় কুতুব মিয়াকে এখানে দেখে তাফীফের মনে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। আলোকে নিয়ে বাজে কথা বলার ফল ভালোভাবে বুঝিতে দিবে আজকে। এমনটাই ভেবে নিলো তাফীফ। তাফীফ ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করা যায়। আলোর নামে এতো বদনাম রটিয়েছে। একে তো এভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এখন আশেপাশে কেউ নেই আর এর থেকে ভালো সুযোগ হতেই পারে না। হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই তাফীফ বাকা হাসলো। তারপর একটা গাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে গলার স্বর চিকন করে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগলো।

এদিকে এতো রাতে একদম নিরিবিলি এই পরিবেশে হাসিটা একদম ভুতুরে মনে হচ্ছে। কুতুব মিয়া এই হাসির স্বর পেয়ে ঘামতে শুরু করলেন। কিন্তু আশেপাশে তাকালেন না। লোকেমুখে শুনা এরকম পরিস্থিতিতে কোনোদিকে তাকাতে হয় না। সেই ভেবেই তাকাচ্ছেন না কোথাও। এখান থেকে এখন উঠবেন কি উঠবেন না সেটাই ভাবছেন। উঠলে যদি ধরে ঘাড় মটকে দেয় তো? কুতুব মিয়া লোকে মুখে আরো শুনেছেন এ সময় ভয় পেলে এরা সাহস পেয়ে যায়। তাই অনেকটা সাহস জুগিয়ে উনি শুধালেন,”এএই কে রে? সামনে আয় একবার পরে বুঝামু তোরে।”

তাফীফ গলার স্বর একদম চিকন করে অনেকটা টেনে টেনে বলতে লাগলো,”তবে রে হতচ্ছাড়া! এই পিশাচকে তুই বুঝাবি? দাড়া তোর ঘাড় মটকে যদি ওটাকে গরম তেলে ভেজে না খেয়েছি তবে আমিও পিশাচ না। এহেহেহেহেহে।”

কুতুব মিয়াকে আর পায় কে? যেই সাহস নিয়ে উনি কথাটা বলেছেন ঠিক তার থেকে শত গুন বেশি ভয় নিয়ে মাছ,বড়শি ফেলেই কোনো রকম নিজের লুঙ্গির গিট শক্ত করে ধরে জান নিয়ে দৌড়ে পালালেন। আর চিৎকারের স্বরে বলতে লাগলেন,”ও মাগো, ও বাবা গো, ও আমার হাবুর মা কই তুমি? আমারে মাইরা ফালাইলো গো। ওহ আল্লাহ বাঁচাও আমারে।”

এদিকে কুতুব মিয়াকে জব্দ করতে পেরে তাফীফ তো মহাখুশি। তারউপর আবার এভাবে দৌড়ে পালাতে দেখে তাফীফের দম ফাটিয়ে হাসি পাচ্ছে। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে সামলাতে পারছে না। তাই পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বসে পরলো।

তারপর মাছের পাত্রের কাছে গিয়ে দেখলো একদম তরতাজা পুটি মাছ। যা তাফীফের অত্যন্ত পছন্দের খাবার। গরম গরম ভাতের সাথে এই মাছ মচমচে করে ভেজে নিলে তাফীফের আর কিছুর প্রয়োজনই পরে না। তাই তাফীফ মাছের পাত্র নিজের সাথে নিয়ে নিলো।

বাড়ি ফিরে জোহরা ও বাহাদুর মিয়ার জানালার কাছে গিয়ে ফিসফিস স্বরে জোহরাকে ডাকতে লাগলো তাফীফ।

“আম্মা, আম্মা।”

কিন্তু জোহরার ঘুম ভাঙলো না। তবে বাহাদুর মিয়া তাফীফের স্বর শুনতে পেলেন। তাফীফের এমন ফিসফিসিয়ে জোহরাকে ডাকতে দেখে উনি বুঝে নিলেন নিশ্চিত ছেলে কোনো কান্ড ঘটিয়েছে। তাই তো এভাবে ডাকছে। অতঃপর তিনি আস্তে ধীরে উঠে দরজাটা এমন ভাবে খুললেন যেনো তাফীফ বুঝতে না পারে। তারপর ধীর পায়ে তাফীফের পিছনে গিয়ে দাড়ালেন। দেখলেন তাফীফ এখনো আগের মতো করে ফিসফিসিয়ে ডেকে চলেছে জোহরাকে। তা দেখে তিনি তাফীফের কানের কাছে মুখ নিয়ে নিজেও ফিসফিসিয়ে শুধালেন,”কি হইছে আব্বাজান? আম্মারে ডাকো কেন?”

হঠাৎ করে কানের কাছে ফিসফিস স্বর পেতেই তাফীফ কিছুটা চমকে গেলো। যখন বাহাদুর মিয়াকে দেখলো তখন নিজ বুকে তিনবার থুথু দিয়ে শুধালো,”ডাকছি তো আম্মারে তোয় আপনে আয়ছেন কেন? আপনি কি আমার আম্মা লাগেন?”

তাফীফের কথায় বাহাদুর মিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। তবে আবার নিজেকে সামলে গলা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করলেন,”তা আব্বা জান, আবার কি কান্ড ঘটাইছেন যে এতো রাতে আপনার আম্মারে ডাকতে হইতাছে?”

তাফীফ এবার নিচ থেকে মাছের পাত্রটি নিয়ে বাহাদুর মিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর বললো,”ডাকছিলাম আম্মারে। যেহেতু আপনে আয়ছেন তাই আপনেই এইগুলার একটা ব্যবস্থা করেন। আমি ঘুমাইতে যাই।”

বাহাদুর মিয়া একবার দেখে নিলেন পাত্রে কি আছে। তারপর হাঁক ছেড়ে বললেন,”এই বেয়াদব, বড়শি তো আমার ঘরে। তাইলে তুই এই রাইতে মাছ কইত্তে চুরি করছোছ?”

তাফীফ মাত্রই নিজের ঘরের দরজায় এসেছিলো। বাহাদূর মিয়ার কথা শুনে দরজায় দাঁড়িয়ে উনার দিকে ফিরে বললো,”কি যে কন না আব্বা! আমি চুরি করতে যামু কেন? মাছই তো আমারে দেইখা পানির তে উইঠা আইয়া পরছে। এই লাইজ্ঞাই তো আমি লগে নিয়ে আয়ছি।”

এদিকে তাফীফের মুখে এমন কথা শুনে বাহাদুর মিয়া এক হাতে মাছের পাত্র ধরে আরেক হাত নিজের কোমড়ে রেখে তাফীফের পানে চুপ করে তাকিয়ে রইলো। তারপর তাফীফ দরজা ভিড়িয়ে দিতেই উনি বিরবির করে বললেন,”এইডা আমার পোলা হইতেই পারে না।”

———–

রাতের আঁধারে নদীর পাড়ে বসে আছে এক লোক। হাতে তার কালো রঙের মোটা একটা ডাইরি, আরেকটা কলম। ঠান্ডা বাতাস তার কপালে থাকা চুলগুলো ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তার দেহের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এই ঠান্ডায়। কিন্তু সে এসব কিছুর পরোয়া করলো না। সে তো ব্যাস্ত নিজের ডাইরিটাতে মনের কথাগুলো তুলে ধরায়।

❝যেখানে এতোদিন ডুবে ছিলাম প্রাতিষ্ঠানিক বইখাতার ভাজে, সেখানে আজ আপনার জন্য আমি নিজেকে হারালাম সাহিত্যের মাঝে। কি আছে আপনার মাঝে বলতে পারেন কি? কেন আপনাকে দেখে আমি থমকে দাড়াই? কেন আপনার মাঝে আমি নিজেকে হারাই?

আচ্ছা অষ্টাদশী! এর নাম আমি কি দিবো? ভালোবাসা নাকি মোহ? আমি সত্যি বুঝে উঠতে পারছি না অষ্টাদশী। আপনার জন্য আমি আমার জীবনে নতুন নতুন অনুভূতিদের সাথে পরিচিত হচ্ছি। এই অনুভূতিরা কি কখনো মিথ্যা বলে অষ্টাদশী? জীবনে তো অনেক নারীই দেখেছি। তবে আপনাকে দেখে কেন বুকের বা পাশটায় কিছু একটা অনুভব করেছি? হবে কি এর উত্তর আপনার কাছে? জানাবেন কি আপনি আমায়?

–আপনার অপ্রেমিক❞

চলবে…..


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “অপেক্ষা। পর্ব-১২। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply