খতীবে বাগদাদী রহ. সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

0

খতীব বাগদাদী রহ. সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:

 

📗 তাঁর সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাসীর রহ. এর মন্তব্য

 

হাফেয ইবনে কাসীর রহ. তাঁর সম্পর্কে বলেন—

 

وكان أولا على مذهب الإمام أحمد بن حنبل، فانتقل عنه إلى مذهب الشافعي، ثم صار يتكلم في أصحاب أحمد ويقدح فيهم ما أمكنه، وله دسائس عجيبة في ذمهم. ثم شرع ابن الجوزي ينتصر لأصحاب أحمد ويذكر مثالب الخطيب ودسائسه،

 

খতীব বাগদাদী প্রথমে আহমদ বিন হাম্বলের মাযহাব মেনে চলতেন। অতঃপর শাফে’ঈ মাযহাব গ্রহণ করেন। তারপর তিনি হাম্বলীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে শুরু করেন এবং যতদুর সম্ভব হাম্বলীদের ব্যাপারে নিন্দা ছড়ান। তাদের কুৎসা রটনায় তাঁর বিস্ময়কর পরিকল্পনা ছিলো। অতঃপর ইবনুল জাওযী হাম্বলীদের সাহায্য করতে শুরু করেন এবং খতীবের দোষত্রুটি ও ষড়যন্ত্রের বর্ননা দিতে থাকেন। [আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ১৬/৩০]

 

📗 তাঁর ব্যাপারে ইসমাইল ইবনুল ফদ্বল আল কূসী রহ. এর মন্তব্য

 

ইমাম ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন,

 

أنبأنا أبو زرعة طاهر بن محمد بن طاهر المقدسي عن أبيه. قال سمعت إسماعيل بن الفضل القوسي – وكان من أهل المعرفة بالحديث – يقول: ثلاثة من الحفاظ لا أحبهم. لشدة تعصبهم وقلة إنصافهم الحاكم أبو عبد الله، وأبو نعيم الأصفهاني، وأبو بكر الخطيب

 

ইসমাইল ইবনুল ফদ্বল আল কূসী বলেন, তিনজন হাফেযকে আমি তাদের গোঁড়ামী ও বে-ইনসাফীর কারণে পছন্দ করি না- ১. হাকিম আবূ আব্দিল্লাহ। ২. আবূ নু’আইম আল ইস্পাহানী। ৩. খতীবে বাগদাদী। [আল-মুন্তাযাম— ইবনুল জাউযী: ১৬/১৩৩]

 

📗 খতীবে বাগদাদী কোন পর্যায়ের হাফেয ছিলেন?

 

হাফেয যাহাবী রাহি. স্বীয় গ্রন্থ ‘তারীখুল ইসলাম’ ও ‘সিয়ার’-এ উল্লেখ করেন-

 

سألت أبا القاسم هبة الله بن عبد الوارث الشيرازي: هل كان أبو بكر الخطيب كتصانيفه في الحفظ؟ قال: لا كنا إذا سألناه عن شيء أجابنا بعد أيام، وإن ألححنا عليه غضب، وكانت له بادرة وحشة، وأما تصانيفه فمصنوعة مهذبة، ولم يكن حفظه على قدر تصانيفه

 

ইবনে আবী তাহের বলেন, আমি আবুল কাসিম হিবাতুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু বকর আল-খতীব কি হাফেয হওয়ার ক্ষেত্রে তথা মুখস্ত শক্তির ক্ষেত্রে তার গ্রন্থসমূহের মতো ছিলেন? তিনি বললেন- না। যখন আমরা তার কাছে কোনো কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম তিনি অনেকদিন পর এর উত্তর দিতেন। আর যদি আমরা উত্তর জানার জন্য পীড়াপীড়ি করতাম তখন তিনি খুবই রেগে যেতেন এবং রুদ্র মূর্তি ধারণ করতেন। তবে তার রচনাসমূহ ছিলো সুবিন্যস্ত, কিন্তু তার রচনার তুলনায় মুখস্থ শক্তি তেমন একটা ছিলো না। [আল মানসূর: ৪৭। তারীখুল ইসলাম —যাহাবী: ৩১/১০৪। সিয়ারু আ’লামিন নুবালা: ১৮/২৮৩]

 

📗 তাঁর লিখিত কিতাবসমূহ কি আসলেই তাঁর

 

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. লিখেন

 

ولَهُ مُصَنَّفاتٌ كَثِيرَةٌ مُفِيدَةٌ، مِنها كِتابُ التّارِيخِ، وكِتابُ الكِفايَةِ، والجامع، وشرف أصحاب الحديث، والمتفق والمفترق، والسابق واللاحق، وتلخيص المتشابه في الرسم، وفضل الوصل، ورواية الآباء عن الأبناء، ورواية الصحابة عن التابعين، واقتضاء العلم للعمل، والفقيه والمتفقه، وغير ذلك. وقد سردها ابن الجَوْزِيِّ فِي المُنْتَظَمِ. قالَ ويُقالُ: إنَّ هَذِهِ المصنفات أكثرها لأبى عبد الله الصوري، أو ابتدأها فتممها الخطيب، وجعلها لنفسه،

 

তাঁর রচিত অনেকগুলো উপকারী কিতাব রয়েছে। তার মধ্যে কিতাবুত তারীখ, কিতাবুল কিফায়াহ, আল জামি’, শারফু আসহাবিল হাদীস, আল মুত্তাফিক্ক ওয়াল মুফতারিক্ক, আস সাবিক্ক ওয়াল লাহিক্ক, তালখীসিল মুতাশাবিহী ফির-রাসম, ফাযলিল ওয়াসল, রিওয়ায়াতুল আবা’ আনিল আবনা’, রিওয়াওয়াতুস সাহাবাহ আনিত তাবে’ঈন, ইক্বতিযাউল ইলম, আল ফাক্কীহ ওয়াল মুত্তাফিক্কহ ইত্যাদি। শায়খ আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী রহ. ‘আল-মুনতাযাম’ এগুলো একাধারে বর্ননা করেছেন। তিনি এও বলেন, বলা হয়ে থাকে, এসব কিতাবের অধিকাংশই আবূ আব্দিল্লাহ আস সূরীর লিখিত কিংবা তিনি লেখা শুরু করেছিলেন, (তাঁর মৃত্যুজনিত কারণে) খতীব এগুলো পূর্ণ করেছেন। অতঃপর খতীব এগুলো নিজের নামে করে নেন। [আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ১৬/২৯]

 

📗 খতীবে বাগদাদীর আরবী জ্ঞান

 

ইমাম আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. সুনানে তিরমিযীর ১১৩২ নং হাদীসের সনদে উল্লেখিত রাবী ‘উসমান আল বাত্তী’র বিষয়ে বলেন-

 

إطلاع ضروري: في سند الباب اللاحق عثمان البتي وذكر الخطيب البغدادي في بعض تصانيفه الألفاظ المنكرة في حق أبي حنيفة وذكر أن أباحنيفة ذكر مسئلة عند رجل فقال الرجل: أن النبي يقول هكذا،قال أبو حنيفة: ينبغي للنبي أن يتبعني… أقول هذا القول لا يمكن من أدني المسلمين وكيف يقول بهذا من هو إمام المسلمين من الأمة المحمدية ،والحق أن هذا ليس النبي بل هو عثمان البتي ووقع التصحيف من الكاتب فأخذ الخطيب ونقله عن أبي حنيفة بدون أن يتدبر في حقيقة الحال

 

“জরুরী জ্ঞাতব্য: খতীবে বাগদাদী তার কতক রচনায় ইমাম আবু হানীফা রহ. এর শানে ঘৃণিত ও মন্দ শব্দ উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন ‘ইমাম আবু হানিফা রহ. একদিন এক লোকের কাছে একটি মাসআলা উল্লেখ করেছেন।তখন লোকটি বলল, নবীজি সা. তো এমন বলেছেন! তখন আবু হানীফা রহ. বললেন, নবীর উচিত, আমার অনুসরণ করা।

 

কিন্তু আমি (কাশ্মীরী) বলি, এই কথা তো একজন অতি সাধারণ একজন মুসলমানও বলতে পারে না। তাহলে উম্মতে মুহাম্মদীর একজন ইমামুল মুসলিমীন এমন কথা কীভাবে বললেন? আসল কথা হল, এখানে نبي শব্দ না হয়ে بتي শব্দ হবে। এটি লিপিকার এর ভুল। কিন্তু খতীবে বাগদাদী এই ভুলটাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং আসল অবস্থা যাচাই-বাছাই করা ছাড়াই ইমাম আবু হানীফার বিরুদ্ধে ঘটনাটি নকল করেছেন। [আল-আরফুশশাযী: ৩১৬]

 

📗 হাফেয যাহাবী রহ. এর দৃষ্টিতে খতীবে বাগদাদী

 

হাফেয যাহাবী রহ. তাঁর সম্পর্কে বলেন,

 

أحمد بن علي بن ثابت الحافظ أبو بكر الخطيب تكلم فيه بعضهم، وهو أبو نعيم و كثير من العلماء المتأخرين ،لا أعلم لهم ذنبا أكبر من رواياتهم الأحاديث الموضوعة في تآليفهم، غير محذرين منها! و هذا إثم و جناية علي السنن

 

আবু নু’আইম ইস্পাহানীসহ অধিকাংশ মুতাআখখিরীন উলামায়ে কেরাম খতীবে বাগদাদীর সমালোচনা করেছেন। তাছাড়া তিনি তার রচনায় প্রচুর পরিমাণে জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন। তাঁর জন্য এরচেয়ে বড় অপরাধ আছে বলে আমার জানা নেই। এটা মহা পাপ! সুন্নাহ’র শানে মহা অন্যায়! [রুওয়াতুস সিকাত: ১/৫১]

 

📗 নিজের স্বার্থে জাল হাদীস সম্পর্কে চুপ থাকা

 

নিজের পক্ষে হওয়ায় খতীবে বাগদাদী একটি জাল হাদীস সম্পর্কে চুপ থাকার অভিযোগে হাফেয ইবনুল জাওযী রহ. বলেন-

 

وسكوت الخطيب عن القدح في هذا الحديث ،واحتجاجه به : وقاحة عظيمة ،عصبية باردة وقلة دين، لأنه يعلم أنه باطل أما سمع في الصحيح : من حدث عني حديثا وهو يري أنه كذب فهو أحد الكاذبين

 

এ হাদীসের ত্রুটির ব্যাপারে চুপ থাকাটা খতীবে বাগদাদীর চরম নির্লজ্জতা ও স্পষ্ট স্বদলপ্রীতি/গোঁড়ামী এবং দ্বীনদারীর স্বল্পতার প্রমাণ! কারণ, তিনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে হাদীসটি বাতিল! অথচ সহীহ হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জাল হাদীস জানা সত্ত্বেও কোনো হাদীস বর্ণনা করে সে মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত। [উমদাতুল কারী: ৭/২২। নাসবুর রায়াহ: ২/১৩৬]

 

📗 খতীবে বাগদাদীর জারাহ-তা’দীল

 

ইমাম সারূজী রহ. ইবনুল জাওযী রহ. থেকে নকল করেন, তিনি বলেন

 

والخطيب لا ينبغي أن يقبل جرحه ولا تعديله ، لأن قوله و نقله يدل علي قلة دين

 

খতীবে বাগদাদীর জারাহ-তা’দীল গ্রহণ করা উচিত নয়। কেননা, তাঁর উক্তি ও বর্ণনাসমূহ তাঁর দ্বীনদারীর স্বল্পতা বোঝায়। [আল-বিনায়াহ: ১/৬২৮]

 

📗 তাঁর ব্যাপারে আহলে হাদীস ওলামাদের মন্তব্য

 

فالخطيب البغدادي كان شافعيًا متعصبًا على الأحناف والحنابلة. وقد رد عليه ابن الجوزي الذي لم يكن أقل منه تعصبًا وحدة وغيره. قال الحافظ السَّلفي ابن عبد الهادي الحنبلي (ت٩٠٩هـ) في «تنوير الصحيفة»: «لا تَغتَرّ بكلام الخطيب، فإن عنده العصبية الزائدة على جماعةٍ من العلماء كأبي حنيفة وأحمد وبعضِ أصحابه. وتحاملَ عليهم بكل وجه. وكثير من الأقوال التي نقلها الخطيب في ذم أبي حنيفة لا تصح. وصنَّف فيه بعضُهم «السهم المصيب في كَبِد الخطيب»

 

খতিবে বাগদাদী অত্যন্ত গোঁড়াপন্থী/কট্টর শাফে’ঈ ছিলেন। তিনি হানাফী এবং হাম্বলীদের প্রতি প্রচুর বিদ্বেষ পোষণ করতেন। আর ইমাম ইবনুল যাওযী প্রমূখ এসবের প্রতিবাদও করেছেন —যদিও ইবনুল জাওযী নিজেও হাম্বলী হিসেবে তাঁর চেয়ে কম গোঁড়াপন্থী ছিলেন না। হাফেয সালাফি ইবনে আব্দুল হাদী আল হাম্বলী (৯০৯ হি.) ‘তানভীরুস সহীফাহ’ নামক গ্রন্থে বলেন, খতীবে বাগদাদীর (এসব আজগুবি) কথাবার্তায় ধোঁকা খাওয়া উচিত নয়, কারণ তাঁর মধ্যে অধিক পরিমাণে স্বদলপ্রীতি ছিলো। এবং উলামাদের এক জামাতের উপর তার বিশেষ হিংসা/শত্রুতা ছিলো। যেমন: ইমাম আবু হানীফা, আহমদ বিন হাম্বল এবং কিছু কিছু হাম্বলী উলামায়ে কেরামের প্রতি। সর্ব ক্ষেত্রেই তিনি তাদের বিরোধিতা করতেন।

 

আর খতীবে বাগদাদী ইমাম আবু হানীফার নিন্দায় এমন অসংখ্য কথাবার্তা নকল বর্ণনা করেছেন যেগুলো আদৌ সহীহ নয়। তাঁর এসব গোঁড়ামী নিয়ে ওলামাগণ গ্রন্থও রচনা করেছেন। (তেমনি একটি গ্রন্থের বাংলা নাম হচ্ছে) “খতীবের কলিজায় অব্যর্থ তীরের আঘাত”। [আহলে হাদীস ফোরাম আর্কাইভ: ১৩/৬৩, ৪৫/৪৩৬]

 

📗 খতীবে বাগদাদী বনাম ইতিহাসবিদ সিবত ইবনুল জাওযী রাহ.

 

ইমাম ইবনুল জাউযীর দৌহিত্র ইতিহাসবিদ সিবত ইবনুল জাউযী রাহ. তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘মিরআতুয যামান’এ উল্লেখ করেন-

 

وقال محمد بن طاهر المقدسي: لمَّا هرب الخطيب من بغداد عند دخول البساسيري إليها قدم دمشق، فصحبه حدَثٌ صبيحُ الوجه، فكان يختلف إليه، فتكلَّم الناس فيه وأكثروا، وبلغ والي المدينة، وكان من قِبَل المصريين شيعيًّا، فهجم عليه، فرأى الصبيَّ عنده وهما في خلوة، فقال للخطيب: قد أمر الوالي بقتلك.

বাগদাদে বাসাসীরী প্রবেশ কালে খতিব বাগদাদী যখন পালিয়ে যান এবং দিমাশকে গিয়ে উঠেন, তখন এক সুশ্রী ছেলে তার সঙ্গী হয়। যে তার কাছে বারবার আসা-যাওয়া করত। এতে মানুষ প্রচুর সমালোচনা শুরু করে। এমনকি তা শহরের গভর্নর পর্যন্ত গড়ায়। গভর্নর শিয়াপন্থী ছিল। সে পুলিশ প্রধানকে খতীব বাগদাদীকে গ্রেফতার ও হত্যার নির্দেশ দেয়। পুলিশপ্রধান ছিল সুন্নী। সে খতিবের উপর হামলা চালিয়ে তাকে এবং ঐ ছেলেকে এক নির্জন স্থানে দেখতে পায়। তখন খতিবকে লক্ষ করে বলল- গভর্নর আপনাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। (তারপর কৌশলে তাকে শহর থেকে বের করে দেয়া হয়) [মিরআতুয যামান: ১৯/২৪৪]

 

এখানেই শেষ নয়। ইমাম ইবনুল জাউযীর দৌহিত্র সিবত ইবনুল জাউযী রাহ. এর বর্ণনামতে খতীবে বাগদাদী অন্য শহরে যাওয়ার পরও সেই ছেলের জন্য প্রবল আসক্তি অনুভব করে এক কবিতা আবৃত্তি করেন-

 

بات الحبيب وكم له من ليلة * فيها أقام إلى الصباح معانقي.

ثم الصباح أتى ففرق بيننا * ولقلما يصفو السرور لعاشق.

 

প্রিয়তম আমার রাত কাটিয়েছে, আর কত রাত তার এমন কেটেছে যে, সকাল পর্যন্ত সে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তারপর এক সকাল এসে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিলো। আর প্রেমিকের ভাগ্যে নির্মল আনন্দ খুব কমই জুটে। [মিরআতুয যামান: ১৯/২৪৪]

 

আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. উক্ত গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন—

 

قال ابن كثير: له مرآة الزمان في عشرين مجلداً ، من أحسن التواريخ .. ومن أبهج التواريخ

 

এটি ইতিহাসের উপর রচিত অতি উত্তম ও হৃদয় প্রফুল্লকারী একটি গ্রন্থ। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১৩/১৯৪]

 

হাফেয যাহাবী রহ.ও তাযকিরাতুল হুফফাযসহ আরো একাধিক গ্রন্থে খতীবে বাগদাদী সম্পর্কে উক্ত ঘটনাটি একটু বিস্তারিত উল্লেখ করেন।

 

হাফেয যাহাবী রাহ. তাযকিরাতুল হুফফাযে লিখেন-

 

كان سبب خروج الخطيب من دمشق أنه كان يختلف إليه صبي مليح فتكلم فيه الناس وكان أمير البلد رافضيًّا متعصبًا فجعل ذلك سببًا للفتك بالخطيب, فأمر صاحب شرطته أن يأخذ الخطيب بالليل ويقتله وكان سنيًّا, فقصده تلك الليلة في جماعته فأخذه وقال له بما أمر به ثم قال: لا أجد لك حيلة إلا أنك تفر منا وتهجم دار الشريف بن أبي الحسن العلوي وأنا لا أطلبك وأرجع إلى الأمير فأخبره، ففعل ذلك، فأرسل الأمير إلى الشريف أن يبعث به فقال له: أيها الأمير أنت تعرف اعتقادي فيه وفي أمثاله، وليس في قتله مصلحة وهو مشهور بالعراق, إن قتلته قتل به جماعة من الشيعة وخربت المشاهد، قال: فماذا ترى؟ قال: أرى أن تخرجه من بلدك؛ فأمر بإخراجه فذهب إلى صور واقام بها مدة

 

খতীবে বাগদাদীর দামেস্ক থেকে চলে যাওয়ার কারণ ছিলো, একটি কমনীয় ও সুন্দর চেহারার ছেলেকে ঘিরে তার ব্যাপারে আপত্তি উঠেছিলো, তাই লোকেরা তার সমালোচনায় জড়িয়ে পড়লো। শহরের গভর্নর ছিলেন একজন কট্টর রাফেজী।

 

অতএব উক্ত ঘটনাটি তাকে হত্যা করার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। গভর্নর তার পুলিশকে আদেশ দিলো যে আজ রাতে খতিবে বাগদাদীকে গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে। পুলিশটি ছিল সুন্নী। অতঃপর পুলিশটি তার দলবল নিয়ে ওই রাতে বাগদাদীর মজলিসে উপস্থিত হয়ে তাকে গভর্নরের আদেশটি শোনালেন এবং বললেন আমি আপনার জন্য কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না কেবল একটিমাত্র উপায় ছাড়া- আপনি এখান থেকে পালিয়ে যান এবং শরীফ বিন আবি আল-হাসান আল-আলাভির রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করুন।

 

আমি আর আপনার সন্ধান করবো না, গভর্নরের নিকট আপনার ব্যাপারে বলে দিবো যে তিনি পালিয়ে গেছেন। অতঃপর বাগদাদী পুলিশের কথা অনুযায়ী তা-ই করলেন।

 

এদিকে গভর্নর বাগদাদীকে ফেরত পাঠানোর জন্য শরীফের কাছে পত্র পাঠালেন। শরীফ গভর্নরকে বললেন: হে আমীর, আপনি তার ও তার মত লোকদের সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানেন। আমি মনে করি তাকে হত্যা করার মধ্যে বিশেষ কোনো ফায়দা নেই। তিনি ইরাকে বিখ্যাত। তাকে হত্যা করলে তার সাথে শিয়াদেরও অনেক লোক নিহত হবে। আর এতে শহরময় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

 

গভর্নর বলল তাহলে আপনার মতামত কী? শরীফ বললো, আমার মনে হয় তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত; অতঃপর গভর্নর তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেন। এরপর খতীবে বাগদাদী দামেস্ক থেকে কেরি শহরে চলে যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। [তাযকিরাতুল হুফফায: ৩/২২৪]

 

 

তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সিয়ারু আলামিন নুবালায়ও একই ঘটনা উল্লেখ করেন।

 

আবু বকর আল-খতিবের দামেস্ক থেকে কেরি শহরে চলে যাওয়ার কারণ ছিল এই যে, একটি উজ্জ্বল চেহারার ছোট ছেলেকে নিয়ে তার ব্যাপারে আপত্তি উঠেছিলো। মক্কী সেই ছেলেটির নামও উল্লেখ করেছিলো, কিন্তু আমি উল্লেখ করছি না। লোকেরা এ বিষয়ে বাগদাদীর সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়ল। শহরের গভর্নর ছিলেন একজন ধর্মান্ধ রাফেজী, ঘটনাটি তাকে বলা হলো।

 

এই ঘটনাটি তার কাছে বাগদাদীকে হত্যা করার উপযুক্ত কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই সে তার পুলিশ সদস্যকে রাতের বেলায় বাগদাদীকে গ্রেফতার করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ সদস্যটি ছিল সুন্নী, তাই পুলিশ সদস্য তার দলবল নিয়ে সেই রাতে বাগদাদীর কাছে গেলো এবং বললো, আমি আপনার জন্য কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না, কেবল একটিমাত্র উপায় রয়েছে- আপনি এখান থেকে পালিয়ে যান এবং শরীফ বিন আবি আল-হাসান আল-আলাভির রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করুন। গভর্নরের নিকট আপনার ব্যাপারে বলে দিবো যে তিনি পালিয়ে গেছেন। অতঃপর বাগদাদী পুলিশের কথা অনুযায়ী তা-ই করলেন।

 

এদিকে গভর্নর বাগদাদীকে ফেরত পাঠানোর জন্য শরীফের কাছে পত্র পাঠালেন। শরীফ গভর্নরকে বললেন: হে আমীর, আপনি তার ও তার মত লোকদের সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানেন। আমি মনে করি তাকে হত্যা করার মধ্যে বিশেষ কোনো ফায়দা নেই। তিনি ইরাকে বিখ্যাত। তাকে হত্যা করলে তার সাথে শিয়াদেরও অনেক লোক নিহত হবে। আর এতে শহরময় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

 

গভর্নর বলল তাহলে আপনার মতামত কী? শরীফ বললো, আমার মনে হয় তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত; অতঃপর গভর্নর তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেন, তাই তিনি দামেস্ক থেকে কেরি শহরে চলে যান এবং বাকি জীবন সেখানেই থাকেন।

[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা: ১৩/৪২৪] তাঁর আরেকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘তারীখুল ইসলামে’ও একই ঘটনা উল্লেখ করেন। [তারীখুল ইসলাম: ৩১: ৫৬]

 

হাফেয যাহাবীর ঐ তিনটি কিতাবেরও আগে রচিত আরেকটি ঐতিহাসিক কিতাব ‘আল-মানসূরেও একই ঘটনা উল্লেখ রয়েছে।

 

سمعت أبا القاسم مكي بن عبد السلام الرميلي يقول: كان سبب خروج أبي بكر الخطيب من دمشق إلى صور: أنه كان يختلف إليه صبي صبيح الوجه، وقد سماه مكي، أنا نكبت عن ذكره، فتكلم الناس في ذلك. وكان أمير البلدة رافضياً متعصباً، فبلغته القصة، فجعل ذلك سبباً للفتك به، فأمر صاحب شرطته أن يأخذه بالليل ويقتلهُ، وكان صاحب الشرطة من أهل السنة، فقصده صاحب الشرطة تلك الليلة مع جماعة من أصحابه ولم يمكنه أن يخالف الأمير، وأخذه وقال له: قد أمرت بكذا وكذا ولا أجد لك حيلة، إلا أني أعبر بك على دار الشريف ابن أبي الحسن العلوي، فإذا حاذيت الباب اقفز وادخل الدار فإني لا أطلبك، وأرجع إلى الأمير وأخبره بالقصة. ففعل ذلك ودخل دار الشريف، وذهب صاحب الشرطة إلى الأمير وأخبره بالخبر. فبعث الأمير إلى الشريف أن يبعث به، فقال الشريف: أيها الأمير أنت تعرف اعتقادي فيه وفي أمثاله ⦗٤٧⦘ ولكن ليس في قتله مصلحة، هذا رجل مشهور بالعراق وإن قتلته قتل به جماعة من الشيعة بالعراق وخربت المشاهد. قال: فما ترى؟ قال: أرى أن يخرج من بلدك. فأمر بإخراجه، فخرج إلى صور وبقي بها مدة، إلى أن رجع إلى بغداد وأقام بها إلى أن مات رحمه الله

 

 

আমি আবু আল-কাসিম মক্কী বিন আবদুস-সালাম আল-রুমাইলিকে বলতে শুনেছি: আবু বকর আল-খতীব (খতীবে বাগদাদী) দামেস্ক থেকে কেরি শহরে চলে যাওয়ার কারণ ছিল এই যে, একটি উজ্জ্বল চেহারার ছোট ছেলে নিয়ে তার ব্যাপারে আপত্তি উঠেছিলো। মাক্কী তার নামও উল্লেখ করেছিলো, কিন্তু আমি উল্লেখ করছি না। তাই লোকেরা এ বিষয়ে তার সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়ল। শহরের গভর্নর ছিলেন একজন কট্টর রাফেজী, ঘটনাটি তাকে বলা হলো।

 

এই ঘটনাটি গভর্নরের দৃষ্টিতে বাগদাদীকে হত্যা করার উপযুক্ত কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই সে তার পুলিশ-প্রধানকে রাতের বেলায় তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশটি ছিল সুন্নী, তাই পুলিশটি তার একদল লোক নিয়ে সেই রাতে বাগদাদীকে গ্রেফতার করলো এবং তাকে বলল: আমি আপনার জন্য কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না, কেবল একটিমাত্র উপায় ছাড়া- তা হচ্ছে, আপনি এখান থেকে পালিয়ে শরীফ বিন আবি আল-হাসান আল-আলাভির রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করুন।

 

আমি আর আপনার সন্ধান করবো না, গভর্নরের নিকট আপনার ব্যাপারে বলে দিবো যে আপনি পালিয়ে গেছেন। অতঃপর বাগদাদী পুলিশের কথা অনুযায়ী তা-ই করলেন।

 

এদিকে গভর্নর বাগদাদীকে ফেরত পাঠানোর জন্য শরীফের কাছে পত্র পাঠালেন। শরীফ গভর্নরকে বললেন: হে আমীর, আপনি তার ও তার মত লোকদের সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানেন। আমি মনে করি তাকে হত্যা করার মধ্যে বিশেষ কোনো ফায়দা নেই। তিনি ইরাকে বিখ্যাত। তাকে হত্যা করলে তার সাথে শিয়াদেরও অনেক লোক নিহত হবে। আর এতে শহরময় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

 

গভর্নর বলল তাহলে আপনার মতামত কী? শরীফ বললো, আমার মনে হয় তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত; অতঃপর গভর্নর তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেন।

 

এরপর খতীবে বাগদাদী দামেস্ক থেকে কেরি শহরে চলে যান এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই থাকেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। [আল মানসূর: ৪৬]

 

 

আমরা তাঁর ব্যাপারে কথাগুলো উল্লেখ করেছি। কারণ, অনেকেই তাঁর বিভিন্ন উক্তি ও গ্রন্থের মাধ্যমে অন্যান্য ইমামগণকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমরা জানাতে চাই যে মানুষ মাত্রই ভুল করে; কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। সকলের মধ্যেই কিছু না কিছু দোষ-ত্রুটি ও মানবীয় দুর্বলতা রয়েছে; কেউ এসব থেকে মুক্ত নয়। কাজেই মহান ইমামগণের শানে তাঁদের বলা কথাগুলো মানবিক দুর্বলতা থেকেও হতে পারে। অতএব, কারো বক্তব্য দিয়ে অন্যকে ঘায়েল করা উচিত নয়।

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান

 

 

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply