গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

0

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা।জন্মের পূর্বে মুহাম্মদ (সা:) পিতাকে হারান।ছয় বছর বয়সে মা আমেনাকে ও আট বছর বয়সে দাদাকে হারান।তারপর মুহাম্মদ (সা;) এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চাচা আবু তালেব।

শৈশব ও কৈশর: তৎকালীন আরবের রীতিনীতি ছিল যে,তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ ও সুঠাম গড়ন তৈরীর জন্য জন্মের পরপরই দুধপান করানোর কাজে একজন বেদুইন মহিলার কাছে দিয়ে দিতেন।নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হওয়ার পর আবার ফেরত নিতেন।এই রীতি অনুসারে মুহাম্মদ (সা:) হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের হাতে দিয়ে দেয়া হয়।এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা মুহাম্মদকে সঠিকভাবে লালন পালন করতে সমর্থ হয়।তখনকার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।শিশু মুহাম্মদ কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার দুধ ভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন।দুই বছর লালন পালনের পর হালিমা শিশু মুহাম্মদকে আমেনার কাছে ফিরিয়ে দেন।কিন্তু এরপর পরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয়।এবং শিশু মুহাম্মদকে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়।হালিমা চাচ্ছিল মুহাম্মদকে ফিরে পেতে।এতে তার আশা পূর্ণ হলো।ইসলামী বিশ্বাস মতে এর কয়েকদিন পর একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে, একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়।এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মদকে মা আমেনার কাছে ফিরিয়ে দেন।ছয় বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান।এই সময় একদিন আমেনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদিনায় যাবেন।সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করার জন্য।আমেনা ছেলে শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আইমানকে নিয়ে ৫০০ কি:মি: পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌছেন।তিনি মদিনায় এক মাস সময় অতিবাহিত করেন।একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানে মারা যান।মাতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মক্কায় পৌছেন।এরপর থেকে দাদাই মুহাম্মদের দেখাশুনা করতেন।মুহাম্মদের বয়স যখন আট বছর তখন দাদাও মারা যান।মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার পুত্র আবু তালেবকে মুহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

আবু তালেব ব্যবসায়ী ছিলেন।আরবের নিয়ম অনুযায়ী তিনি বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন।মুহাম্মদের বয়স যখন বারো বছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন।প্রগাঢ় মমতার কারণে তিনি নিষেধ করতে পারলেন না।যাত্রাপথে বসরা পৌছার পর কাফেলাসহ আবু তালেব তাবু ফেললেন।সে সময় আরব উপদ্বীপে রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল।কথিত আছে শহরটিতে জারজিস নামে এক খৃস্টান পাদ্রী ছিলেন।যিনি বুহাইয়া বা বহিরা নামে অধিক পরিচিত ছিলেন।তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন।এ সময় তিনি বালক মুহাম্মদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন।ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স পনেরো বছর।এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশ গ্রহণ করেন।যুদ্ধের নির্মতায় তিনি অত্যান্ত ব্যতিত হন।কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না।সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটা করার চিন্তাভাবনা করেন।

নুবয়ত-পূর্ব-জীবন: আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা,খেয়ানত প্রবণতা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা দমনের জন্য হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংঘটন প্রতিষ্ঠিত হয়।মুহাম্মদ এতে যোগদান করেন।এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভুমিকা রাখেন।বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মদের তেমন কোন পেশা ছিল না।তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন।সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সাদ গোত্রের।কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরি চরাতেন।এরপর তিনি ব্যবসা শুরু করেন।মুহাম্মদ অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় “আল আমিন”।যার বাংলা অর্থহচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী। বাবসা উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা,বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন।মুহাম্মদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ তা অবহিত হয়ে তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ করেন।মুহাম্মদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদিজার পন্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

খাদিজা মাইছারার মুখে মুহাম্মদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংসা শুনে অভিভূত হন।এছাড়া ব্যবসার সফলতা দেখে যোগ্যতা সমন্ধে ও অবহিত হন।এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মদকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেন।তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনবিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপারে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন।নাফিসার কাছে বিয়ের কথা শুনে মুহাম্মদ বলেন,
যে তিনি তার অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানাবেন।মুহাম্মদ তার চাচার সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন,এবং বিবি খাদিজাকে বিয়ে করেন।বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিল চল্লিশ বছর আর মুহাম্মদের বয়স ছিল পঁচিশ বছর।
খাদিজার গর্ভে ছয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে।এরমধ্যে চার জন মেয়ে দুজন ছেলে।সন্তানদের নামগুলো যথাক্রমে কাসেম,জয়নাব,রুকাইয়া,উম্মে কুলসুম, আব্দুল্লাহ এবং ফাতেমা।একমাত্র ফাতেমা ব্যতীত আর সবাই নবীর বেঁচে থাকা অবস্থায় মারা যায়।

মুহাম্মদের বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর তখন কাবা গৃহের পূন:নির্মানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়।পুরানো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরী করা শুরু হয়।এভাবে পূণ:নির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত নির্মাণের কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়।মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়ে ছিল কোন্দল।নির্মাণ কাজ সব গোত্রের লোকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল।কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ।কে স্থাপন করবে এই নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।এবং চার পাঁচদিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকে।এক পর্যায়ে এটি এমনই রুপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।এমন অবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুসি একটি সমাধান নির্ধারণ করে।যে পরদিন প্রতুষ্যে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবে।পরদিন মুহাম্মদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন।

এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং উনাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়।তার প্রতি সবার সুগভীর আস্তা তৈরী হয়।যাহোক এই দায়িত্বপেয়ে মুহাম্মদ অত্যান্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন।তিনি একটি চাঁদর বিছিয়ে তার উপর হাজরে আসওয়াদ রাখেন।এবং বিবাদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদের চাঁদরের বিভিন্ন কোপা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন।এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।

নবুয়ত প্রাপ্তি:চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মদ নবুয়ত লাভ করেন।অর্থাৎ এই সময়ে স্রস্টা তার কাছে ওহী প্রেরণ করেন।নবুওয়তের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় জুহুরীর বর্ণনায়।জুহুরী বর্ণিত হাদিস অনুসারে নবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন।ত্রিশ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর নবী প্রায় মক্কায় হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন অবস্থায় কাটাতেন।তার স্ত্রী খাদিজা তাকে নিয়মিত খাবার দিয়ে আসতেন। এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাঈল তার কাছে আল্লাহর প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন।জিবরাঈল তাকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন,
পাঠ ককরুণ “আপনার পালনকর্তার নামে। যিনি সৃস্টি করেছেন,মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।পাঠ করুণ আপনার পালনকর্তা মহাদয়ালু।যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

উত্তরে নবী জানান যে,তিনি পড়তে জানেন না।এতে জিবরাঈল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন,এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন।কিন্তু এবার ও মুহাম্মদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন।এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মদ পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন।অবতীর্ণ হয় কুরআনের প্রথম আয়াতগুচ্ছ,সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত।প্রথম অবতরনের পর নবী এতই ভীত হয়ে পড়েন যে,কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করে খাদিজাকে নিজের গা কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন।বারবার বলতে থাকেন,
“আমাকে আবৃত কর”
ধীরে ধীরে নবী আত্মস্থ হন।তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য।একটি লম্বা বিরতির পর তার কাছে দ্বিতীয়বারের মতো ওহী আসে।এবার অবতীর্ণ হয় সুরা মুদ্দাসিরের কয়েকটি আয়াত।এরপর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মদ। এই ইসলাম ছিল জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্য প্রেরিত একটি আদর্শ ব্যবস্থা।তাই তার প্রতিষ্ঠার পথ ছিল খুবই বন্ধুর।এই প্রতিকূলতার মধ্যে নবীর মক্কী জীবন শুরু হয়।

মক্কা জীবন:গোপন প্রচার প্রত্যাদেশ অবতরনের পর নবী বুঝতে পারেন যে,এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে।কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিল না।তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বানী প্রচার শুরু করেন।মুহাম্মদের আহবানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিল খাদিজা।এরপরে মুসলিম হন মুহাম্মদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরে প্রতিপালিত কিশোর আলী।ইসলামের বানী পৌছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন।এই সভায় কেউ তার আদর্শ মেনে নেয়নি।এই সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে।সে হলো আলী।ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর।এভাবে প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন।এবং এই প্রচার কাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।

প্রকাশ্যে দাওয়াত: তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন।এধরনে প্রচারের শুরুটা বেশ নাটকীয় ছিল।নবী সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন যে,
“আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই,এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল”।
কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়, এবং এ সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।

মক্কায় বিরোধীতার সম্মুখীন : বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন শুরু করে।প্রথমত উস্কানি উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি করে।এরপর অপ্রচার কুটতর্ক এবং যুক্তি দেখায়।এক সময় ইসলামি আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয়।যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে।একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান বাজনার ফ্রন্ট। এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মদের সাথে আপোষের প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা।কিন্তু মুহাম্মদ তা মেনে নেয়নি।কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মতো ইসলাম পালন করা।সে ক্ষেত্রে তার ইসলাম প্রচেষ্টার লক্ষই ভেস্তে যেত।

ইথিওপিয়ায় হিজরত: ধীরে ধীরে যখন মুসলিমের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরমরুপ ধারণ করে,তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান।সেখান থেকে ও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ : এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হলো ওমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ।নবী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন,আবু জেহেল ও ওমরের মধ্যে যে কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করুক।আল্লাহপাক নবীর প্রার্থনা কবুল করেন এবং ওমর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।আরব সমাজে ওমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে অনেকটা সহজ করে দেয়।যদিও কঠিন অংশটি মুখ্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল।এরপর এক সময় নবীর চাচা হামজা ইসলাম গ্রহণ করেন।তার ইসলাম গ্রহণে আরব মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।

একঘরে অবস্থান: এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে চলছিল,তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদ (সা:) তার অনুসারীসহ গোটা বনি হাশেম গোত্রকে এক ঘরে আটক করে।তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়।

দু:খের বছর ও তায়েফ গমন: মুক্তির পরের বছরটি ছিল মুহাম্মদের জন্য দু:খের বছর
কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্তী খাদিজা ও চাচা আবু তালেব মারা যান।দু:খের সময়ে নবী মক্কায় ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন।হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান।কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চুড়ান্ত। অপমান,ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন।এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর তরুণদেরকে মুহাম্মদের পিছনে লেলিয়ে দেন।তারা ইট প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাত্ব করে।কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। নব নব সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।

মিরাজ তথা উর্দ্ধারোহন:এমন সময় কিছু শুভ ঘটনা ঘটে।ইসলামি ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মদ একরাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান।এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত।কথিত আছে মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহন করেন,এবং মহান স্রস্টার সান্নিধ্য লাভ করেন।এছাড়া তিনি বেহেশত ও দোযখসহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন।এই যাত্রা ইতিহাসে মিরাজ নামে পরিচিত।এই যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময় অতিবাহিত হয়নি বলে বলা হয়।

মদিনায় হিজরত ও মাদানী জীবন: এরপর আর ও শুভ ঘটনা ঘটে।মদিনার বেশ কিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে।তারা মূলত হজ্জ করতে এসে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছিল।এরা আকাব নামক স্থানে মুহাম্মদের সাথে শফথ করে,
” যে তারা যে কোন অবস্থায় নবীকে রক্ষা করবে,এবং ইসলাম প্রচারের কাজ করবে”।
এই শফথগুলো আকাবার শফথ নামে পরিচিত।এই শফথগুলোর মাধ্যমেই মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়।এবং এক সময় মদিনার বারোটি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মদকে মদিনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।মদিনা তথা ইয়াসরীবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদীদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকে।বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র অংশ নেয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে।এ থেকে মদিনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে,
রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারে না।এজন্য তাদের একজন নেতার দরকার।যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে।এ চিন্তা থেকে তারা মুহাম্মদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকে তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি।এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যায়।সবশেষে মুহাম্মদ ও আবু বকর ৬২২ খৃষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন।তাদের হিজরতের দিনে কুরাইশরা মুহাম্মদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।কিন্তু তা সফল হয়নি।এভাবে মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে।

স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ন: মুহাম্মদ মদিনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থকারী ও শাসক হিসেবে।তখন বিবাদমান দুটি পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ।তিনি তার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছিলেন।মদিনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐঐতিহাসিক মদিনা সনদ স্বাক্ষর করেন।যা পৃথিবীর ইতিহাসে সসর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে পরিচিত।এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ করা হয়।এমনকি এই নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়া পত্তন করা হয়।এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়।আওস খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।এছাড়া প্রধানত ইহুদী তিনটি গোত্র বনু কাইনুকা,বনু কুরাইজা,এবং বনু নাদির এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল।এই সনদের মাধ্যমে মদিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্টিত হয়,এবং মুহাম্মদ এর প্রধান হন।

মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ : মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিনদিন খারাপ হতে থাকে।মক্কার কুরাইশরা মদিনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।মুহাম্মদ (সা:) মদিনায় এসে আশপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন।কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগি সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ক্রোক করে।এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মদ (সা:) ৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়।কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালায়।কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়।কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়।আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়ে ও বিজয় অর্জন করে।এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত।যা ৬২৪ খৃস্টাব্দের ১৫ ই মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়।মুসলিমদের মতে আল্লাহ এই যুদ্ধে মুসলিমদের সাহায্য করেছিলেন।যা হোক এই সময় থেকে ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে।এরপর ৬২৫ সালে ২৩শে মার্চ উহুদ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়।এতে প্রথম দিকে মুসলিমরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদিনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।কুরাইশরা বিজয়ী হওয়া সত্বেও চুড়ান্ত মূহূর্তের নীতিগত দূর্বলতার কারণে পরাজিতদের বেশে মক্কায় প্রবেশ করে।৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আর একটি দল নিয়ে মদিনা আক্রমণ করে।কিন্তু এবার ও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়।যুদ্ধ বিজয়ী উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পপরিণত হয়।ফলে আশে পাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।

মদিনার ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক: কিন্তু এ সময় মদিনায় বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়।মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করত না যে একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হবে।এজন্য কখনো তার ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি।যখন তারা ইসলামি রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে।মুহাম্মদ (সা:) প্রতিটি যুদ্ধের পরে ইহুদী গোত্রের উপর আক্রমণ করেন।বদর উহুদের যুদ্ধের পর বনু কানুইকা ও বনু নাদির গোত্র স্বপরিবারে মদিনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।আর খন্দকের পর সকল ইহুদীকে মদিনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।মুহাম্মদ (সা:) এই ইহুদী বিদ্বেষের দুটি কারণ পাওয়া যায়।একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক।ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়ে ও শেষ নবী মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি।আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে ইহুদীরা মদিনার জন্য একটি হুমকি ও দূর্বল দিক ছিল।এজন্য তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।

মক্কা বিজয়: দশ বছর মেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দুবছরে ভেঙে যায়।খুযআহ গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র। অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র।এক রাতে বকর গোত্র খুযআদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।কুরাইশরা এই আক্রমণ অন্যায়ভাবে বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।কোন কোন ববর্ণনা মতে কুরাইশদের কিছু খুক এই হামলায় অংশ গ্রহণ করে।এই ঘটনায় মুহাম্মদ (সা:) কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণ করেন।এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যে কোন একটি মেনে নিতে বলেন।
শর্ত তিনটি হলো,কুরাইশরা খুযআ গোত্রের নিহতদের রক্তপন শোধ করবে।
অথবা তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মৈত্রী চুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।
অথবা এ ঘোষণা দিবে যে হুদাইবিয়ার সন্ধি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে,এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করবে।কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশরা তাদের ভুল বুঝতে পারলো।এবং আবু সুফিয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্য দ্রুত হিসেবে মদিনায় প্রেরণ করলো।কিন্তু মুহাম্মদ (সা:) কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন, এবং মক্কা আক্রমণ প্রস্তুতি শুরু করলেন।
৬৩০ খৃস্টাব্দে মুহাম্মদ (সা:) দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মুক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ।বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনা প্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো,এবং মুহাম্মদ (সা:) বিজয়ী বেশে সেখানে প্রবেশ করলেন।তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন।তবে দশজন নর এবং দশজন নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল।কারণ তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুহাম্মদ (সা:) কুৎসা রটাত।তবে এদের মধ্য হতে ও পরবর্তীতে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়।মক্কায় প্রবেশ করে মুহাম্মদ (সা:) সর্বপ্রথম কাবাঘরে প্রবেশ করেন।এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন।মুসলমানদের শান শওকত দেখে এবং মুহাম্মদ (সা:) ক্ষমা গুনে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসী ইসলাম গ্রহণ করে।কুরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

শেষ ভাষণ: দশ হিজরী জ্বিলহজ্জ মাস।২৩ বছর আগে হেরাগুহায় জ্বলে উঠেছিল সত্যের আলো।আজ অপূর্ণতায় উপনীত।এক কঠিন দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন।এই পৃথিবীতে ২৩ বছর কঠিন পরিশ্রম সংগ্রাম,অপরীসীম কোরবানি ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।তা আজ সমাপ্তির পথে।যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন,মানুষের কাছে দ্রুত হিসেবে তা আজ পূর্ণতার পথে।২৩ বছর সাধনা করে তিনি আজ একটি রাষ্ট্র গঠন করলেন।গঠন করলেন শোষণ মুক্ত জুলুমহীন ন্যায় বিচারের সমাজ।গড়ে তুললেন তাওহীদভিত্তিক নব সভ্যতার এক নতুন জাতি মুসলিম উম্মাহ।তাই নবী করিম (সা:) সঙ্গীসাথীসহ হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে গমন করেন,এবং হজ্জ সম্পাদন করেন।আজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে,
“লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক”।
আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে,ইব্রাহীম (আ:) ও ইসমাইল (আ:) সেখানে দাঁড়িয়ে কাবার প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন।সেখানে দাঁড়িয়ে এক মুসলিম গঠনের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে দোয়া করেছিলেন।মুসলমানরা আজ মাকামে ইব্রাহীমে সমবেত।৯ই জ্বিলহজ্জ রাসুল (সা:) সব মানুষের সামনে দাঁড়ালেন।এরপর তিনি তার ঐঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করলেন।তিনি বললেন সমবেত জনতা,

১)আজ সকল প্রকার কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আমার পদতলে দলিত-মথিত হয়ে গেল।
২)তোমরা তোমাদের দাসদাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো না।তাদের উপর নির্যাতন করবে না।তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খেতে দিবে।তোমরা যে বস্ত্র পরিধান করবে, তাদেরকে তাই পরিধান করতে দেবে।মনে রেখো তারা ও মানুষ তোমরা ও মানুষ,এক আল্লাহর সৃষ্টি।
৩) সাবধান নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে।তাদের উপর কখনো অন্যায় অত্যাচার করবে না।কেননা তারা হলো অবলা।তাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর।তোমাদের যেমন নারীদের উপর অধিকার আছে।তেমনি তোমাদের উপর ও নারীদের অধিকার আছে।দয়া ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের সাথে আচরণ করবে।
৪)আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না।কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে,সে কুফুরি করলো।
৫)সুদ, ঘুষ,রক্তপাত অন্যায়,অবিচার জুলুম,নির্যাতন করবে না।কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।আর মুসলমান পরস্পর ভাতৃসমাজ।
৬)তোমরা মিথ্যা বলো না।কারণ মিথ্যা সব পাপ কাজের মূল।মিথ্যা সব বিপদ ডেকে আনে।
৭)চুরি করো না।ব্যভিচার করো না।সর্বপ্রকার মলিনতা থেকে দূরে থেকো।পবিত্রভাবে জীবন যাপন কর।সাবধান শয়তান থেকে দূরে থেকো।তোমরা কোন একটি কাজকে খুব সামান্য মনে করবে।কিন্তু শয়তান এসবের মাধ্যমে সর্বনাশ করিয়ে ছাড়বে।
৮)তোমরা তোমাদের আমিরের আদেশ আমান্য করবে না।তোমরা তার আনুগত্য করবে।যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর দ্বীনের উপর থাকবে।
৯)ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করোনা।কারণ তোমাদের পূর্ব পুরুষরা এই কারণে ধ্বংস হয়েছে।
১০)বংশের গৌরব করোনা।যে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় প্রতিপন্ন করে,অপর বংশের পরিচয় দেয়,তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।
১১)তোমার তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে,রোজা রাখবে।তার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে।তবেই তোমরা জান্নাতি হতে পারবে।
১২)আমি আমার পরে তোমাদের জন্য যা রেখে যাচ্ছি,তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে।তার উপর আমল করবে।তাহলে তোমাদের পতন ঘটবে না।আর তা হচ্ছে আল্লাহর কুরআন ও নবীর সুন্নত।
১৩)তোমরা ভালোভাবে জেনে রেখো,আমি সর্বশেষ নবী।আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।আমি আজ তোমাদের জন্য,তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।আমার এ সকল বানী তোমরা যা শুনেছ তারা অনুপস্থিত তাদের নিকট পৌছে দিবে।

মহানবী (সা:) ভাষণ শেষ করলেন।তার চেহারা মোবারক উজ্জল হয়ে উঠল।তিনি করুণস্বরে করুণভাবে আকাশপানে তাকালেন,এবং বললেন,
“হে মহান প্রভু, হে পরওয়ার দেগার,আমি কি তোমার দ্বীনের দাওয়াত পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছাতে পেরেছি”?
তখন উপস্থিত জনতা বললেন,
“নিশ্চয় আপনি আপনার দ্বীন পরিপূর্ণভাবে পৌছাতে পেরেছেন”।
তখন তিনি আবার বললেন,
“হে প্রভু, আপনি শুনুন,আপনি সাক্ষী থাকুন।এরা বলেছে আমি আপনার দ্বীনকে লোকদের নিকট পৌছাতে পেরেছি।আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পেরেছি”।
ভাবের অতিশয্যে নবী নীরব হলেন।জান্নাতি নূরে তার চেহারা আলোকদ্বীপ্ত হয়ে উঠল।এই মূহূর্তে করআনের শেষ আয়াতটি নাযিল হলো।আজকের এই দিনে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম।তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম।ইসলামকে তোমাদের উপর দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।হযরত মহাম্মদ (সা:) কিছুক্ষণ চুপ রইলেন।জনতা নীরব।কিছুক্ষণ পর তিনি জনতার দিকে তাকালেন,এবং করুণ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“বিদায় বন্ধুগন বিদায়”।

মৃত্যু: বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সা:) জ্বরে আক্রান্ত হন।জ্বরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির উপর থেকে উষ্ণতা অনুভব হচ্ছিল।অসুস্থ অবস্থাতে ও তিনি এগারো দিন ইমামতি করেন।অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রী অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রা:) কামরায় অবস্থান করেন।তার কাছে আত কিম্বা আট দিনার ছিল।মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলো দান করেন দেন।বলা হয় এই অসুস্থতা ছিল, খাইবারের এক ইহুদী নারীর তৈরী বিষ মিশানো খাবার গ্রহণের কারণে।অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।এ সময় তার বয়স ছিল ৬৩ বছর।আলী (রা:) তাকে গোসল দেন এবং কাফন পরান।আয়েশা (রা:) এর কামরায় যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,জানাযার পর সেখানে তাকে দাফন করা হয়।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

কবিতা কোরআনের শাসন আফছানা খানম অথৈ

কোরআনের শাসন আফছানা খানম অথৈ সত্যিকারের ভালো মানুষ নেই জগতে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে মনুষ্যত্ব। লোপ পেয়েছে মানুষের জ্ঞান

Leave a Reply