লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর ব্যাখ্যা

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর ব্যাখ্যা (পর্ব-১)

0

 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এই কালেমা পড়েই প্রতিটি মানুষকে ঈমান আনতে হয়। ইসলামের মূল ভিত্তি হলো এই কালেমা। তাই যারাই কালেমা পড়ে ও বুঝে ঈমান আনবে কেবলমাত্র তারাই হবে সত্যিকারের মুসলিম। আর তাই প্রকৃত মুসলিম হতে হলে অবশ্যই এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। 

অর্থাৎ এই কালেমাতে কী কী বলা হচ্ছে, এই কালেমাতে আল্লাহর হক কী, রাসুলের হক কী, এই কালেমার শর্ত কী, দাবি কী, এই কালেমার কারণে কী গ্রহণ ও কী বর্জন করতে হবে তা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। তাই আজ আমরা প্রথম পর্বে এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর প্রথম অংশ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর দ্বারা আল্লাহর কী হক এবং কী শিক্ষা রয়েছে তা কুরআন সুন্নাহর আলোকে  জানার চেষ্টা করব।  

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর অর্থ 

আমরা যারা মুসলিম তাদের অবশ্যই সবাইকে এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর সাথে পরিচিত থাকতে হবে। কিন্তু যারা জন্মগত মুসলিম তারা কখনোই এই কালেমার গুরুত্ব জানতে এবং বুঝতে পারে না। এই কারণে আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানই জানে না, কালেমার শর্ত কী  এবং এর দাবিই বা কী? তাই আমাদের অবশ্যই এটা জানা দায়িত্ব ও কর্তব্য যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর অর্থ কী, শর্ত কী, দাবি কী? 

আমরা যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এই কালেমাকে অর্থবোধক বাক্যে দাঁড় করায়, তাহলে এর অর্থ হবে  “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোনো ইলাহ নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসুল।

সুতরাং এই দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন একক উপাস্য বা ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তিনি ছাড়া এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ কোনো উপাস্য বা  ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নেই। অতএব এই কালেমার মূল অর্থ হলো, যে এই কালেমা পড়বে, সে দুনিয়াবী সব আনুগত্য ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করবে। এবং তাঁর রাসুল হবে মুহাম্মদ (সা.)। 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর গুরুত্ব 

এই কালেমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য খুবই অপরিসীম। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা যেকারণে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তার মূলে রয়েছে এই কালেমা। আমরা পৃথিবীতে যা কিছু চোখের সামনে দেখছি এবং যা যাকিছু চোখের অন্তরালে রয়েছে। তার সবকিছুরই সৃষ্টির অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে  এই কালেমাকে। 

আমাদের পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে যে দুনিয়া তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো এই কালেমা।  আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের যাবতীয় কাজের সহযোগী হিসাবে  এই পৃথিবীর বাকি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।  এই কালেমাকে স্বীকৃতি এবং স্বীকার করবে   একমাত্র মানুষ।  আর মানুষ যাতে এই কালেমা স্বীকার এবং স্বীকৃতি দেয় তার জন্য সাক্ষীদাতা হচ্ছে পুরো সৃষ্টি জগত।

অর্থাৎ এই বিশ্বজগতের যাবতীয় সৃষ্টি রহস্য উপলব্ধি করে মানুষ যাতে কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মদ তাঁর রাসুল এই স্বীকৃতি দেয়। আর এই কারণেই আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি জগত তৈরি করেছেন যাতে মানুষ সবকিছু উপলব্ধি করে কালেমার স্বীকৃতি দিতে পারে।

আর এই জন্যই আল্লাহর বিধি-বিধান ইহকাল পরকাল জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি সবকিছুই একমাত্র এই কালেমার জন্যই   সৃষ্টি। যেকারণে দুনিয়ার সমস্ত কিছু যেমন এই কালিমার জন্য ঠিক তেমনি পরকাল জান্নাত জাহান্নামও এই কালেমার জন্য।

পৃথিবীর মানুষ যারা এই কালেমার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবে না কিংবা অনুধাবন করার চেষ্টা না করে বেহিসাবী জীবন যাপন করে আল্লাহ বিরোধী অবস্থানে অবস্থান নিবে। সেইসব বেহিসাবী মানুষের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন জাহান্নাম। অনুরূপভাবে যারা এই কালেমার গুরুত্ব যথাযথ ভাবে বুঝে এবং  সেই অনুযায়ী আল্লাহর বিধি বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে। তাদের জন্য আল্লাহর ওয়াদা দিয়েছেন জান্নাতের।  

আর যারাই এই কালেমাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দুনিয়াবী জীবনযাপন করতে পারবে, কেবলমাত্র তারাই হবেন সফলকাম। সর্বোপরি বলতে গেলে নেয়ামত ও বরকত যেমন এই কালিমার জন্য। ঠিক তেমনি পৃথিবীর জীবনযাপন শেষে পরকালে মানুষের আযাবের কারণও হবে এই কালেমা।  

তাই যারাই এই কালেমাকে যথাযথভাবে অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী চলতে পারবে তাদের জন্যই আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন দুনিয়া ও আখিরাতের নিয়ামত। একইভা‌বে যারা এই কালেমার গুরুত্ব অনুধাবন না বিরুদ্ধাচরণ করে উপেক্ষা করবে।  অথবা জেনে বা না জেনে অবহেলা করবে।  তাদের জন্য আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি।

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর ব্যাখ্যা 

ইসলাম এসেছিল আরব দেশে। তাই আরবি ভাষাতেই এর হয়েছিল এর প্রচলন। যেকারণে এর যাবতীয় ইবাদত ও মূলনীতি সবই হচ্ছে আরবি। তাই আমরা যদি আরবি থেকে বাংলা কিংবা অন্য কোনো ভাষাতে এর অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে চাই। তাহলে আমাদের অবশ্যই আরবিকেই প্রাধান্য দিয়ে এর অর্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে।

তাই আমরা যদি সরাসরি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ করতে যাই, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে  “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। বা আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।”  এখানে এই ইলাহ এবং মাবুদ কিন্তু দুটোই আরবি শব্দ। যার অর্থ হয় উপাস্য। অর্থাৎ   ইবাদত পাওয়ার ও নেওয়ার যোগ্য। কিংবা যার ইবাদত করা হয় বা করতে হয়।

এই ইবাদত শব্দটিও কিন্তু আরবি। যার সোজা বাংলা হয়,  আনুগত্য করা, মান্য করা বা মেনে নেওয়া, প্রার্থনা করা, আরাধনা করা ইত্যাদি। আমরা মুসলমানগন এই ইবাদত বলতে শুধু নামাজ রোজা হজ্জ্ব যাকাত ইত্যাদিকেই বুঝি। যদিও ইবাদতের মধ্যে নামাজ রোজা হজ্জ্ব যাকাত ইত্যাদি রয়েছে। তবে শুধু এগুলোই একমাত্র ইবাদত নয়। বা শুধু এগুলো করলেই সম্পূর্ণ ইবাদত হয়ে যায় না।

তাই ইবাদত মানেই শুধু এইসব শারীরিক ও আর্থিক কার্যকলাপ নয়। এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর মধ্যে আল্লাহর যে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে, তার সঠিক ভাবার্থ  হলো আল্লাহ কে   সামগ্রিকভাবে মেনে নিয়ে তাঁর যাবতীয়  বিধিবিধানের আনুগত্য করে তাঁর কাছে সবকিছুতেই নত স্বীকার করা। 

এখন আমরা যদি এই কালেমার বাংলা অনুবাদ করি-তাহলে দাঁড়াবে  যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্যই নেই। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত (অর্থাৎ যা আল্লাহর জন্য করা হয় তা আর কারো পাওয়ার যোগ্যতা নেই) যেমন করা যাবে না। একইভা‌বে আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তাঁর বিধানের বিপরীতে) আর কারো আনুগত্য করা যাবেনা।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই কালেমাকে জেনেবুঝে  স্বীকার করে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। তখন থেকেই তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আনুগত্যের ক্ষেত্রে  আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো নাম নিশানা থাকবে না। আরো সহজ ভাবে বললে, যা দাঁড়ায় তা হলো, একজন মানুষ তার ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, পারিবারিক জীবন, বৈবাহিক জীবন, কর্মজীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, রাজনৈতিক জীবন, মৃত্যু পরবর্তী জীবনসহ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শুধুমাত্র মাত্র এক আল্লাহর যাবতীয় বিধি বিধানই মানতে বাধ্য থাকবে।

এই যাবতীয় বিধি বিধান পালন করতে গিয়ে কখনোই একজন মুসলিম আল্লাহর বিপরীতে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ, অন্য কারো অনুসরণ, বাপ দাদার অনুসরণ, রাজনৈতিক নেতার অনুসরণ, রাজনৈতিক দলের অনুসরণ, বড় বুজুর্গের অনুসরণ ইত্যাদি করতে পারবে না। কেননা এই পৃথিবীর যাবতীয় সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হচ্ছেন একজন। তিনি ছাড়া আর কোনো  সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক নেই। 

আর সার্বভৌম ক্ষমতা কী? সার্বভৌম ক্ষমতা  হচ্ছে যাবতীয় সকল ক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়া। আর যখন আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার কথা আসবে, তখন তার  অর্থ হবে, এই সৃষ্টি জগতে যত প্রকার ক্ষমতা বা শক্তি আছে তা এই একক সার্বভৌম ক্ষমতার মধ্যে পুঞ্জীভূত হওয়া। 

অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার অর্থ হলো, পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে, পৃথিবীর শাসন, পৃথিবীর যাবতীয় বিধি বিধান এবং পৃথিবীসহ পুরো বিশ্ব জগৎ পরিচালনার সকল ক্ষমতাকেই বুঝানো হয়। আর এই ক্ষমতা শুধু একমাত্র আল্লাহর। এই সার্বভৌম ক্ষমতা কয়েকটি বিষয় নিয়ে গঠিতঃ 

সৃষ্টির ক্ষমতা

শূন্য থেকেই এই বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। আর সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহ। তাই পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরেসহ যাবতীয় দৃশ্য এবং অদৃশ্যমান যত আল্লাহর সৃষ্টি আছে তার সৃষ্টিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

এই আয়াতে খুবই সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহই  সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি ছাড়া কেউ কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না। আর এই চ্যালেঞ্জও তিনি কুরআনে দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

সুতরাং এই বিশ্বে কারো কোনো ক্ষমতা নেই যে, তারা কিছু সৃষ্টি করবে। 

বিধি-বিধানের মালিক আল্লাহ

পৃথিবীতে আজ মানুষের তৈরি হাজারো বিধি বিধানের ছড়াছড়ি। কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার কারণে এই দুনিয়ায় যাবতীয় সকল বিষয়ে বিধি-বিধান আদেশ নিষেধ আইনকানুন ইত্যাদির প্রনয়ণের মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তাই তিনি বলেন –

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ স্পষ্ট করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যেহেতু আল্লাহই হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক সেহেতু আল্লাহই হচ্ছেন এই পৃথিবীর একমাত্র বিধানদাতা।

বিচার ও শাসন ক্ষমতা

শুধু বিধি বিধান নয় বরং এই পৃথিবীর যাবতীয় বিচার ফয়সালা ও শাসন কার্য করার মালিকও একমাত্র আল্লাহ। তিনি বলেন,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

অর্থাৎ পৃথিবীতে যত বিচার ফয়সালা হবে তার একমাত্র আল্লাহর অভিধান মতোই হবে। একইভাবে এই পৃথিবীর যাবতীয় শাসনও তার আইন অনুযায়ীই হতে হবে। সুতরাং আল্লাহ এবং আল্লাহর আইন ছাড়া কোনো বিচার বা শাসন ব্যবস্থা নেই। 

নির্বাহী ক্ষমতা

এই পৃথিবীতে যার যত আইনকানুনই থাকুক না কেন, এই সৃষ্টি জগতে সকল কিছুর উপর নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। তার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি ছাড়া এই পৃথিবীতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ  বলেন,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

সুতরাং এই পৃথিবীর যাবতীয়  নির্বাহী ক্ষমতার মালিকও একমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর বিধান মোতাবেকই চলবে পুরো বিশ্বজাহান।

আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী 

এই পৃথিবীতে যাবতীয় বিধি বিধিন আইন প্রনয়ণ ছাড়াও, আল্লাহ রয়েছে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল গুণাবলী। যার একমাত্র দাবিদার হচ্ছেন আল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষসহ যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা। একইসাথে তার হাতেই যেকোনো জীবের জন্ম মৃত্যু নির্ধারিত। তিনি যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে জন্ম দিয়ে থাকেন। জন্ম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

সুতরাং এটাই আল্লাহর একক সার্বভৌম ক্ষমতা যে, তাঁর হাতেই পুত্র কন্যা সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা। তারমানে তিনি ছাড়া এই ক্ষমতা আর কারো হতে পারে না। কেননা তিনি যা ইচ্ছা তা ই সৃষ্টি করতে পারেন। একইভাবে এই পৃথিবীর যাবতীয় ধন ভান্ডারসহ সকলের রিজিকের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি বলেন, 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

এছাড়াও একমাত্র আল্লাহর হাতেই যে কারোর জীবিকা নির্ধারিত। তিনি যা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই জীবিকার মাধ্যমে রিজিক দিয়ে থাকেন। তাই আল্লাহ বলেন,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

একইসাথে তিনি আরও বলেন – 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল এর ব্যাখ্যা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল পুলিশ কি শিরিক লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল নিরাপত্তা ফজিলত কালেমা তাইয়েবা বাংলা অর্থ ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি?  ৫ কালিমা কি কালিমা কয়টি কালমা শব্দের অর্থ কি?

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ এটা বিশ্ব বাসীকে স্পষ্ট করে দিলেন যে, এই পৃথিবীর সকল মানুষের যাবতীয় বিপদ-আপদ রোগ-শোক রিজিক হায়াত জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তিনি তার একক ক্ষমতাবলে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। যা আর কারোর কাছে নেই এবং থাকতে পারে না।  আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পরিচয়।

 

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর শর্ত সমূহ 

যারা জেনে বুঝে এই  কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়ে ও স্বীকার করে তাদের জন্য এই কালেমা কিছু শর্ত রয়েছে। যারা কালেমার দাবিদার হবে, তাদের অবশ্যই এইসব শর্ত পূরণ করতে হবে। 

ইলম বা জ্ঞান

যারা এই কালেমার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর প্রতি বশ্যতা স্বীকার করবে। তাদের অবশ্যই এর সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। অর্থাৎ। এই কালেমায়” না” এবং “হ্যাঁ” দ্বারা কী কী বিষয় বুঝানো হয়েছে তা জানতে হবে। এই হ্যাঁ এবং না এর জ্ঞান  বা ইলম না থাকলে ঐ ব্যক্তি কালেমাই বুঝলো না। কেননা কেউ  না বুঝে হ্যাঁ এবং না বলার অর্থ হলো তিনি অবুঝ কিংবা পাগল। যার উপর কালেমা ফরজ নয়। সুতরাং কালেমার প্রথম শর্তই হলো কালেমা বুঝার জ্ঞান থাকতে হবে।

ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয়

যিনি বা যারাই এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ কে স্বীকার করে নিবে, তাদের অবশ্যই এই কালেমার দৃঢ় প্রত্যয় তথা ইয়াকীন ঠিক থাকতে হবে। অর্থাৎ এই কালেমার মধ্য দিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা শক্তভাবে স্বীকার করে তার উপর শেষ পর্যন্ত  অটল থাকা। 

একইভা‌বে কালেমার কোনো কিছুতে কোনরকম হেরফের না করা এবং এই কালেমা সম্পর্কে মনে কোনো প্রকার সন্দেহ না রাখা। যারাই এই কালেমা বুঝে শুনে উচ্চারণ করবে তাদের মনে অবশ্যই এই কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর ইয়াকীন রাখতে হবে। এবং এই ইয়াকীন যেকোনো পরিস্থিতিতে কিংবা যেকোনো অবস্থাতেই কোনো কিছুতেই কখনো নষ্ট হওয়া যাবে না।  

ইখলাস বা নিষ্ঠা

যারাই এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পড়বে এবং স্বীকার করবে। তাদেরকে অবশ্যই এই কালেমার প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হবে। তথা ইখলাসের সাথে এই কালেমাতে বর্ণিত সকল বিষয়বস্তুর প্রতি নিষ্ঠাবান থাকতে হবে।

যারা এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ইসলামকে কবুল করবে। তাদের এই কালেমা তথা ইসলামের প্রতিটি বিধিবিধান নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। কেউ কালেমা পড়ে এর প্রতি যদি নিষ্ঠাবান না হয়, তাহলে সে তার কালেমার শর্ত পূরণ হলো না। 

সত্যবাদিতা

যে ব্যক্তি কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পাঠ করল, সে এর সাথে সাথে সত্যবাদী হওয়ার ওয়াদা করল। তাই যে লোক এই কালেমা মেনে নেয় সে নিজেকে অবশ্যই সত্যবাদী পরিচয় দিতে হবে। একইসাথে সাথে কালেমার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়কে সত্য বলে স্বীকার করে নিতে হবে।

ভালোবাসা

কালেমার শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কালেমার প্রতি ভালোবাসা। যারাই এই পবিত্র কালেমার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে তাদেরকে অবশ্যই এই কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে। 

অর্থাৎ এই দুনিয়ার যাবতীয় লোভ লালসা মোহ ইত্যাদি  সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র  ইসলামের প্রতিটি বিধানকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসতে হবে। একইসাথে যারাই এই  কালেমার দাবিদার তাদেরকেও ভালোবাসতে হবে। আর এই কারণেই কেউ বুঝে শুনে কালেমা উচ্চারণ করলে তাকে অবশ্যই  কালেমার শর্ত এবং দাবিসমূহ মেনে নিয়ে একে  ভালোবেসেই জীবনযাপন করতে হবে।

আত্মসমর্পণ আনুগত্য করা

আমরা জানি এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়েই একজন মানুষ মুসলিম হয়। আর মুসলিম মানেই আনুগত্যকারী। আর আনুগত্য হলো কালেমার উপর। অর্থাৎ যে এই কালেমা পড়ল তাকে অবশ্যই এই কালেমা দাবির প্রতি আনুগত্যশীল হতে হবে। আর তা এমন আনুগত্য যে জীবনের কোনো অবস্থাতেই কখনোই কোনোকিছুতেই পিছপা হওয়া যাবে না। যদি কেউ কখনো কোনো কারনে এই  কালেমার দাবি বা শর্ত গুলো ভঙ্গ করে। অর্থাৎ কেউ যদি ইসলামী বিধি-বিধান আইনকানুন পালনে পিছপা হয় তাহলে সে অবশ্যই এর শর্ত ভঙ্গ করলো। আর কেউ কালেমার শর্ত ভঙ্গ করলে সে কখনোই কালেমার দাবিদার হতে পারবে না। 

আন্তরিকতা

কেউ শুধু মুখে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ উচ্চারণ করলেই মুসলিম হয়ে যাবে না। যেই কালেমা পড়বে তাকে অবশ্যই এই কালেমা এবং এর শর্ত ও দাবির পক্ষে আন্তরিক হতে হবে। অর্থাৎ আন্তরিকতার সাথে ইসলামের বিধি বিধান ইত্যাদি পালন করতে হবে। সর্বোপরি ইসলামের আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতা ছাড়া শুধু দায়িত্ব খাতিরে কিংবা লোক দেখানো ইসলাম পালন করলে তা কখনোই প্রকৃত মুসলিমের কাজ হবে না। আন্তরিকতা ছাড়া ইসলাম পালনের অর্থ হলো মুনাফিকী করা। যা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়।

কালেমার সাথে বর্তমানের বিরোধিতা

একজন মানুষ যখন কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়, তখন তার উপর এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর শর্ত এবং দাবি পূরণ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। যে এই কালেমার দাবি ও শর্তসমূহ পালনে ব্যর্থ হবে, সে আর নিজেকে মুসলিম হিসাবে ধরে রাখতে পারবে না।

একারণে আমরা যারা এই উপমহাদেশের জন্মগত মুসলমান তাদের অবশ্যই জানা উচিত এই  কালেমার মূল হাকিকত কী। শুধু মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই প্রকৃত মুসলিম হওয়া যায় না। তাই কালেমা পাঠের পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই জানতে হবে এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর শর্ত কী, দাবি কী এবং এর ব্যাখ্যা কী?

আল্লাহ কেন এই ছোট্ট একটি বাক্য দিয়েই মুসলিম হওয়ার স্বীকৃতি দিচ্ছেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো না কোনো রহস্য রয়েছে। সুতরাং এই একটি বাক্য এতো সহজ বিষয়বস্তু নয় যে, এটা শুধু মুখে পাঠ করলেই যে কেউ জান্নাতে চলে যাবে।

অথচ আমরা যারা জন্মগত মুসলিম আছি তাদের সিংহভাগেরও বেশী মানুষের এই ধারণা যে, মুখে কালেমা পড়লেই আমরা মুসলিম হয়ে গেছি এবং আমাদের জান্নাত কনফার্ম! আর এটা যদি এতোটাই সহজ হতো, তাহলে আল্লাহ যুগ যুগ ধরে এতো লক্ষ হাজার নবী রাসুল দুনিয়ায় পাঠাতো না।

শুধু মুখের স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য যুগে যুগে কাফের মুশরিকরা নবী রাসুলদের বিরোধিতা করত না। মুখের কথায় যদি কাজ হয়ে যেতো তাহলে আল্লাহ এতো এতো বিধি বিধান মানুষের জন্য নাযিল করতেন না। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য এইসব বিধি বিধান আইনকানুন ইত্যাদি প্রেরণ করেছেন।

অতএব শুধু মুখের স্বীকৃতি নয়, বরং এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা জেনে সেইমতো চলার নামই হবে ঈমান। আর শুধু মুখে কালেমা উচ্চারণ করেই যদি ঈমানের দাবিদার হওয়া যেতো। তাহলে আল্লাহ মুমিন, মুত্তাকী, সালেহীন, সাদেকীন ইত্যাদি ভাগে ঈমানদারকে সার্টিফাইড করতেন না। 

অতএব এই কালেমার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর অর্থ জানার পর এর প্রকৃত ব্যাখ্যার বিচার থেকেই একজন মুসলিমকে বিচার করা হবে। কেননা এই কালেমা শুধু মুখে উচ্চারণ কিংবা মুখে স্বীকার করার বিষয় নয়। বরং এই কালেমা হচ্ছে, এর মধ্যে থাকা যাবতীয় বিষয় মেনে নেওয়া। এবং মেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হচ্ছে কালেমার স্বীকৃতি দাতা তথা মুমিন মুসলিম।

আমরা যারা এই উপমহাদেশের জন্মগত মুসলিম আছি, তারা কালেমার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানা ছাড়াই নিজেদের মুসলিম দাবি করি। কিন্তু আমরা যখন বাস্তব জীবনের সাথে এই কালেমাকে মিলিয়ে দেখব, তখন আমরা বুঝতে পারব আসলেই আমাদের ঈমান কতটুকু আছে। সত্যিই কি কালেমা শুধু মুখে বললেই ঈমানদার হওয়া যায় কিনা।

যেমন আমরা মনে করি একজন মুসলিম নামাজ রোজা হজ্জ্ব যাকাত ইত্যাদি করলেই তার ঈমান পাক্কা! কিন্তু ঈমান এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে, সামান্য ইবাদত বন্দেগী করলেই পরিপূর্ণ হবে। একজন ব্যক্তি যখন কালেমা পড়ে তখন তাকে অবশ্যই কালেমার যাবতীয় শর্ত ও দাবি পূরণ করতে হবে। যা আমরা বাস্তব জীবনে অধিকাংশ মুসলমানই পূরণ করি না এবং মানি না।

যদি মুখে স্বীকৃতি এবং কয়েকটি দৈহিক ও আর্থিক ইবাদতই ঈমান ও কালেমার মূল হতো, তাহলে মক্কার মুশরিকরা কখনোই রাসুল (সা.) এর বিরোধিতা করতো না। এই কালেমার মধ্যে এমন কিছু শর্ত ও দাবি রয়েছে। যা যে ব্যক্তি কালেমা পড়ে ঈমান আনে তার উপর ফরজ হয়ে যায়।

তাই আজ আমরা দেখব এই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ তে কী এমন রয়েছে যা আমরা প্রতিনিয়তই অস্বীকার করছি। আমরা আগেই জেনেছি এই কালেমার দ্বারা আল্লাহ তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাকে বহিঃপ্রকাশ করেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৩ নং আয়াতে আমাদের জানিয়েছেন যে, তোমরা তাদের মতোই ঈমান আনো, যারা ঈমান এনেছে। অর্থাৎ তৎকালীন সাহাবাগনের মতোই আমাদের সবাইকে ঈমান আনতে হবে।

তারা এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” কে যেভাবে বুঝেছে জেনেছে ঠিক সেইভাবেই আমাদেরও এই কালেমা বুঝতে জানতে এবং মানতে হবে। আমরা এখন এই কালেমাতে থাকা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

সৃষ্টির ক্ষমতা

আমরা আগেই জেনেছি একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে যেকোনো কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা। আমাদের এই বিশ্ব জগতের যা কিছু সৃষ্টি আছে তার সবই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এবং আমরা পৃথিবীর সৃষ্টির মতো কিছু সৃষ্টি করতে পারলেও তা কখনোই আল্লাহর সৃষ্ট সৃষ্টির মতো কখনোই নয়। সুতরাং  এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। 

সংবিধান দাতা আল্লাহ

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি এই পৃথিবীতে যত ধরনের বিধি-বিধান সংবিধান রয়েছে তার সবই মানুষই সৃষ্টি করেছে। আর আল্লাহর সামনে মানুষের সকল সৃষ্টি সব বাতিল। কেননা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার কারণে এই পৃথিবীতে যাবতীয় বিধি-বিধান দেওয়ার মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। 

আর তিনি যেসব বিধি নিষেধ মানুষের জন্য তৈরি করেছেন তা-ই এই বিশ্ববাসীকে মানতে বাধ্য। আর এই কারণেই যে ব্যক্তি কালেমা পড়ে নিজেকে মুসলিম দাবি করল, তাকে  এটাই স্বীকার করতে হবে যে, এই পৃথিবীর কোনো মানুষের তৈরি কোনো বিধান নয় বরং আল্লাহ ও রাসুল (সা.) প্রদত্ত ইসলামের  বিধানই তাকে মানতে হবে। 

শুধু তাই নয়, যে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। তার উপর এটা দায়িত্ব যে,  আল্লাহর সংবিধান যেখানে প্রতিষ্ঠিত নেই, সেখানে তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যে মুসলিম তাকে প্রথমে নিজের ব্যক্তি জীবনে পরবর্তীতে আর দশজন সহ সমাজ জীবনের এবং সম্ভব হলে রাষ্ট্রীয় জীবনেও আল্লাহর সংবিধান প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এতে কোনো ছাড় নেই।

সুতরাং আমরা যদি এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়ে নিজেকে মুসলিম দাবি করি। তাহলে এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যে, ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা।

অথচ ৯০ ভাগেরও বেশী মুসলমানের দেশে এখনো পর্যন্ত ইসলামী কোনো আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আল্লাহ পবিত্র যেসব  বিধি নিষেধ ও বিধি বিধান দিয়েছেন তা আজও  রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। আর শতে নব্বই জন মুসলমানের দেশে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর সংবিধানই প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে  আমরা কিভাবে নিজেদের এই কালেমা পড়ে   মুসলিম দাবী করছি?

আমরা শুধু মুখেই ইসলামের কালেমা পড়ি এবং বলি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। অথচ বিধান মানার ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহরটা ছেড়ে দিয়ে বান্দারটা গ্রহণ করছি। 

এর প্রমাণ হচ্ছে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আর এই গণতন্ত্র কখনোই আল্লাহর আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। এবং এর আইনকানুনও কুরআনের সংবিধানের নয়। সুতরাং এই গণতন্ত্রে আল্লাহর কোনো বিধি-বিধান নেই। আমরা মানুষের তৈরি আইন পালন করে মানুষের আইনেরই ইবাদত করছি। অর্থাৎ  মানুষেরই আনুগত্য করছি। 

অথচ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো আইন দাতা বিধান দাতা নেই। যত আইন হবে, সবই হবে আল্লাহ প্রদত্ত আইন। এবং একমাত্র আল্লাহকেই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মনে করে তাঁর উপর ঈমান আনা। যেখানে আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর আইনে সবকিছু পরিচালনা করার কথা, সেখানে আমরা আল্লাহকে সুস্পষ্ট ভাবে অস্বীকার করে তাঁর সমকক্ষ তৈরি করে তার সাথে অংশীদার স্থাপন করছি। 

এখন যদি কেউ এই কালেমা পড়ে  নিজেকে মুসলিম দাবি করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির এইসব আইন মানা যাবে না। যদি আমরা এইসব আল্লাহ বিরোধী আইন মানতে বাধ্য হই, তাহলে ভিন্ন কথা। সংখ্যাগরিষ্ঠ পাপিষ্টদের কাছে নিজেরা অক্ষম হলে তো কিছু করার নেই।

কিন্তু আমরা যদি এইসব আইন তৈরিতে সহযোগিতা করি তাহলে কেমন হবে? আমাদের অধিকাংশ মুসলমানই জানে না তারা নিজেরাই আজ আল্লাহ বিরোধী আইন তৈরিতে কীভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে। যেখানে এইসব আইনই মানার কথা নয়। সেখানে কীভাবে আমরা নিজেরাই এইসব আইন তৈরি করতে পারি?

দেখুন শয়তান মানুষের জন্মগত শত্রু। মানুষের সৃষ্টির সাথেই তার সাথে শত্রুতা করা শয়তানের কাজ। আর এই শয়তানকেই যখন আল্লাহ আদেশ দিয়েছিলেন যে, হে ইবলীস তুমি মানুষকে সিজদা কর। তখন ঐ ইবলীশ শয়তান মানুষকে সিজদা না করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। কিন্তু এই আদেশকে অবজ্ঞা করে নতুন কোনো কাজ করেনি।

অর্থাৎ সে বলেনি, হে আল্লাহ আমি সিজদা করছি না ঠিক আছে। তার পরিবর্তে প্রমাণ করছি কিংবা কদমবুচি করছি ইত্যাদি। অথচ আমরা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হয়েও, তাঁর উপর কালেমা পড়ে ঈমান আনার দাবি করেও সরাসরি আল্লাহর আদেশ কিংবা আইনকানুনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার পরিবর্তে নতুন আইন সৃষ্টি করছি।

আমাদের অধিকাংশ মানুষই যারা গণতন্ত্রের মতো রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি অন্যান্য দুনিয়াবী বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থায় জড়িত। তারা সরাসরি দুই ভাবেই আল্লাহর বিরোধিতায় লিপ্ত। এক, তারা আল্লাহর যাবতীয় আইন বাদ দিয়ে আল্লাহ কে অস্বীকার করে। দুই, তারা আল্লাহর আইনের প‌রিবর্তে নিজেদের ইচ্ছামত নতুন আইন তৈরি করে।

এই জায়গায় আমরা শয়তান থেকেও নিকৃষ্ট! শয়তান আদমকে সিজদা না করলেও, সিজদার পরিবর্তে যেমন নমস্কার কিংবা অন্যকিছু করেনি। অথচ আমরা আমাদের দেশে  গণতন্ত্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন  আল্লাহর আদেশকে বাতিল করছি। অন্যদিকে আল্লাহর আদেশের বিপরীতে নতুন করে আমাদের সুবিধামতো নতুন আইন করছি। এক্ষেত্রে আমাদের আচরণ শয়তানের চেয়েও নিকৃষ্ট। 

আর তাই আমরা যদি এই কালেমা পড়ে নিজেদের মুসলিম দাবি করি। তাহলে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজই হবে ইসলামের ঝান্ডা উত্তোলন করা। অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ছাড়া  কালেমা কখনোই ঈমান পূর্ণ হবে না। কেননা আমরা যে কালেমা পড়ছি, সেখানে আমরা উল্লেখ করছি যে, হে আল্লাহ তোমার আনুগত্য  করা ছাড়া আর কারো আনুগত্য করি না। এই দাবি করার পরও কীভাবে আমরা  আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি আইনকে সম্মান এবং সমর্থন করি? এভাবে কি কখ‌নো কালেমার দাবি পূরণ হবে?  

তৎকালীন আরবের মক্কার কট্টর কাফির আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা ও তাদের অনুসারীরা  আল্লাহকে অনেক আগে থেকেই জানতো এবং মানতো। কিন্তু তারা কখনোই আল্লাহর আইন বিধি বিধানকে মানতে পারেনি। আর আল্লাহর আইনকানুন   মানতে পারেনি বলেই তারা আজ পর্যন্ত কাফির।  

আবু জাহেলকে রাসুল (সা.) যে কালেমা পড়ে ঈমান আনতে বলেছিল, সেই একই কালেমা পড়ে আমরা কীভাবে মুসলিম হতে পারি? যেখানে আমরা আল্লাহর আইনই প্রতিনিয়তই বাদ দিয়ে দিচ্ছি। তারা যদি বুঝে শুনে কাফির হয়। আমরা কীভাবে বুঝে শুনে আজও নিজেদের ঈমানদার দাবি করি?

আজ আমাদের যে ঈমান নিয়ে আমরা চলাফেরা করছি তা হচ্ছে মুনাফিকী ঈমান। কারণ আমরা জেনেবুঝে চুপ করে আছি। ধরে নিলাম আজ আমরা পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের আইন বাধ্য হচ্ছি এবং আমাদের সকল বিচার ফয়সালা আল্লাহর প‌রিবর্তে মানুষের আইনে করতে বাধ্য হচ্ছি।

কিন্তু আমরা একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারব যে, আমরা নিজেরাই আজ নিজেদের কারণে মুনাফেকী  মুসলিমে পরিনত হয়েছি। নিজেদের নানাবিধ অজ্ঞতার কারণেও আমরা আল্লাহর আইন বাতিলে এবং বিরুদ্ধে আইন তৈরিতে সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়ত। এতে করে আমরা যেমন মুনাফিক হচ্ছি, তেমনিভাবে   আমাদের ঈমানও ভঙ্গ হচ্ছে। 

অনেকেই হয়তো চিন্তা করছেন, কীভাবে আমরা মুনাফিক হচ্ছি আর কীভাবেই বা আমাদের ঈমান ভঙ্গ হচ্ছে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো গণতন্ত্রের মাধ্যমে ভোট দিয়ে আমরা সহজেই মুনাফিক হচ্ছি।

আমরা যদি একটু চিন্তা করি, তাহলে এই বিষয়টা সহজেই বুঝতে পারব। যেমন আমরা বিভিন্ন দলকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচন করি। আর এই এমপিরাই সংসদে গিয়ে দেশের জন্য নানান আইন তৈরি করে।

যেমন চুরির জন্য আল্লাহর আইন হলো চোরের হাত কাটা। কেউ যদি এমন চোর হয় যে, সে স্বভাবের কারণে চুরি করে। তাহলে তার হাত কেটে দিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি পেটের দায়ে চুরি করে এবং তা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়। তাহলে ঐ ব্যক্তিকে রাষ্ট্র নিজেই  পরিপূর্ণভাবে খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। এবং এটাই আল্লাহর বিচার এবং আইন। 

অথচ বর্তমান দুনিয়ায় অভাবের চোর চেয়ে স্বভাবের চোরাই বেশী। আমাদের দেশে পয়সাঅলারাই দুর্নীতি করে চুরি করে টাকা আত্মসাৎ করে বেশী। যদি আমরা এই দেশে  ইসলামী আইন চালু করি তাহলে এইসব স্বভাব চোরদের হাত কাটা যাবে। আর কোনো গরিব লোক চুরি করলে তাকে সরকারই খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। 

অথচ আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটো ব্যবস্থাই অসম্ভব। অর্থাৎ অসহায়কে চাকরি দেওয়া যাবে না আর ধনীদের হাত কাটা যাবে না। তাই নতুন কোনো আইন করতে হবে। আর এই আইন করবে কারা?

 

কেন আবার এমপিরা! আমরা যে এমপিদের ভোট দিয়ে সংসদে নিয়ে গেছি। সেইসব এমপিরা মিলেই নতুন একটি আইন করবে। তারা ইসলামী আইনের হাত কথার বদলে দুনিয়াবী আইন  ছয় মাসের জেল-জরিমানা ইত্যাদি ব্যবস্থা করবে। যাতে করে গরিবের গরিবি আরো গরিবি বেড়ে যাবে। আর পয়সায় অলাদের কিছুই হবে না।

 

এখন এখানে সুস্পষ্ট হয়ে গেল, কীভাবে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের তৈরি আইন বাস্তবায়িত হলো। আর এটা তারাই করল, যাদের আমরা ভালো মানুষ মনে করে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের সংসদে নিয়ে গেছি।

 

আর এরাই তাদের সুবিধামতো ধনীদের সুবিধামতো পাপিষ্ঠদের সুবিধামতো নতুন নতুন আইন তৈরি করে আল্লাহর আইনের বিরোধিতায় লিপ্ত। আর এদের সেই সুযোগ দিয়েছে কারা? তার সোজা আমরা। যারা কালেমা পড়ে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে মুসলিম হয়েছি। যারা নিজেদের ঈমানদার দাবি করি।

 

সুতরাং আমরা হচ্ছি এখন মুনাফিক। যারা মুখে এক কথা বলে কিন্তু অন্তরে এবং বাস্তবে করে আলাদা।  আমরা যদি সত্যিকারের মুমিন হতাম তাহলে আমরা ভোট দিতাম না। আমরা ভোট না দিলে এইসব এমপিও সহজে তৈরি হতো না। আর আর এমপিরাও আইন তৈরি করতে পারত না।

 

দেখুন অনেকেই এই বিষয় গুলো নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এখানে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। আমরা যখন ভোট দেই। তখন যিনি ভোটে জিতেন আমরা তার সকল দায়দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিই। অর্থাৎ এই এমপি যা করবে তার সব দায়িত্ব আমাদের। কেননা আমাদের মতামত নিয়েই সংসদে গেছেন। 

 

সুতরাং তিনি ভালো করলে যেমন আমরা তার ভাগিদার হবো। তেমনি তিনি খারাপ করলেও আমরা তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ  ভাগিদার হব। এখন এমপিরা যদি দুনিয়াবী নানান অপরাধ করে, তাহলে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তা  আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন।  

 

কিন্তু তিনি যদি আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন করে তার সাথে অংশীদার করে শিরক করে। তাহলে আল্লাহ কখ‌নোই শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। কেননা শিরক খুবই মারাত্মক অপরাধ। যে অপরাধের দুনিয়াতে তওবা ছাড়া আখিরাতে ক্ষমা নেই। 

 

সুতরাং ইসলাম যেমন ভালো কাজের জন্য সওয়াব আছে। ঠিক তেমনি খারাপ কাজের গুনাহও মারাত্মক। তাই এইসব এমপিদেরও গুনাহ এবং সওয়াবের ভাগ আমাদের নিতে হবে। কেননা আমরা জেনেশুনে এইসব পাপ করার জন্যই তাদের নির্বাচিত করছি।

 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশসহ যেসব দেশে আল্লাহর আইন বিচার ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমরা কী করব? কেননা আমাদের দেশই হচ্ছে গণতন্ত্রের দেশ। আমরা শক্তি দিয়ে এই গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারি না। তাহলে আমাদের করণীয় কী?

 

এর সমাধান কী হতে পারে? এর সহজ সমাধান হলো বিরত থাকা। যেহেতু শক্তি সামর্থ্য দিয়ে আমরা দুর্বল সেহেতু শক্তি দিয়ে গণতন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব নয়। তখন আমাদের কাজ হবে আমরা যাতে এই কাজে  সহযোগী না হই। অর্থাৎ আমরা কারো দায়িত্ব নেব না এবং  আমরা কাউকে ভোট দিব না। 

 

এর সহজ সমাধান হলো, ভোট না দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করলাম। আর যেকোনো মুমিন বান্দাই পারে। আমরা ভোট দিলাম না। এতে কেউ এমপি হোক না হোক আমাদের আর দায়দায়িত্ব নাই।

 

আমরা এতটুকুই আমাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে পেরেছি বলে এতটুকুই করেছি। আল্লাহ এতটুকুই আমাদের কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা যেহেতু দুর্বলতার কারণে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে পারছি না। সেহেতু আমরা ভোট না দিয়েই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি। এটাই হওয়া উচিত নূন্যতম ঈমানের পরিচয়।

 

যদি আমরা এতটুকুই করতে না পারি। তাহলে কীভাবে আমরা নিজের মুমিন মুসলিম পরিচয় দিতে পারি? যদি আমরা নূন্যতম এটাও না করি। তাহলে আমরা কখনোই মুমিন নয় মুনাফিকই থেকে গেলাম। একইসাথে আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন করতে সাহায্য কারণে আমাদের ঈমানও ভঙ্গ হয়ে গেছে।

বিচার এবং শাসন ক্ষমতা

আমরা এতক্ষণ আল্লাহর সংবিধান এবং গণতন্ত্রের সংবিধানের মাধ্যমে কীভাবে আমরা মুনাফিক ও বেঈমান হয়ে যাচ্ছি তার আলোচনা করেছি। এখন আমরা আল্লাহর বিচার ও শাসন ক্ষমতা নিয়ে আলোকপাত করব।

 

মহান গ্রন্থ আল কোরআনের আয়াত দ্বারা আমরা প্রমাণ করেছি যে, এই মহাবিশ্বের যাবতীয় বিষয় বিচার করার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর বিধান। একইসাথে এই দুনিয়া এবং দুনিয়ার বাইরেও সমস্ত কিছু শাসন করার মালিক একমাত্র  আল্লাহ। 

 

অর্থাৎ এই পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর বিধি বিধানের উপরই যাবতীয় বিচার এবং শাসন ব্যবস্থা চলবে। যারাই এই কালেমা পড়ে নিজেদের মুসলিম দাবি করবে। তাদের প্রতি এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর দাবি হলো এই পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর আইন বিচার এবং শাসন ব্যবস্থা চালু এবং জারি রাখা। 

নির্বাহী ক্ষমতা

এই সুবিশাল পৃথিবীসহ যাবতীয় সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। আর তাই পুরো সৃষ্টিজগতের নির্বাহী ক্ষমতাও আল্লাহর। এই পৃথিবীতে গণতন্ত্রসহ যাবতীয় রাষ্ট্রতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা হয়  রাষ্ট্রপ্রধানকে। এই রাষ্ট্রপ্রধানের এমন ক্ষমতা যে, তিনি যেকোনো দোষী মানুষকে নির্দোষ হিসাবে ছেড়ে দিতে পারে। আবার নির্দোষ মানুষকেও দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারে।

 

কিন্তু যারা এই  কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়ে মুসলমান হবে, তারা কখনোই এই নির্বাহী ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রদান করবে না। কেননা এই মহাবিশ্ব চলবে একমাত্র আল্লাহর আদেশ নির্দেশ এবং তাঁর সিদ্ধান্তক্রমে। অথচ গণতন্ত্র কিংবা অন্যান্য মানবীয় যেসব রাষ্ট্রতন্ত্র আছে, সেখানে যেকোনো   রাষ্ট্রপ্রধানদের ইচ্ছা ও অভিরুচি দ্বারা  যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

 

এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ভালো কিংবা খারাপ অথবা আল্লাহ ও ইসলাম বিরোধীও হতে পারে। তাই যারা কালেমা পড়ে মুসলিম হবে, তারা তাদের নির্বাহী ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রদান করতে পারে না। কেননা এটা একমাত্র আল্লাহর নিজস্ব ক্ষমতা।

 

এইক্ষেত্রে যদি ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু থাকে, তাহলে তারা সর্বদা আল্লাহর আইন ও বিধি বিধান মোতাবেক শাসন ও বিচার ব্যবস্থা চালু রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এরা চাইলেই কখ‌নো ইসলামের বাইরে গিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কেননা ইসলাম তাদের সেই সুযোগ ও ক্ষমতা প্রদান করেনি। সুতরাং কালেমা পড়লে সর্বাবস্থায় এর হক আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। 

আল্লাহর আসমা ও সিফাত

আমরা যে শুধু আল্লাহর বিভিন্ন ক্ষমতার সাথেই শিরক করছি তা নয়। আমাদের অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহর আসমা ও সিফাতের সাথে প্রতিনিয়ত শিরকে লিপ্ত। যা আমাদেরকে ঈমান থেকে খারিজ করে দেয়। অথচ আমরা মুখে বলি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। কিন্তু বাস্তব জীবনে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্যদেরও তাঁর সমপর্যায়ের অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি।

 

আমরা সবাই জানি এবং মানি যে আল্লাহ ছাড়া কারোরই কিছু করার ক্ষমতা নেই। অথচ এই কথা মুখে বললেও আমরা প্রতিনিয়তই জেনে এবং না-জেনে আল্লাহর সাথে শিরিকে লিপ্ত হচ্ছি।

 

যেমন একশ্রেণির মানুষ আছে, যারা দুনিয়াবী স্বার্থের কারণে তাবিজসহ কালো জাদুটোনা করে। এই কালো জাদুটোনা করা এবং তাবিজ দেওয়া শিরক। প্রয়োজনে  ঝাড়ফুঁক করার কথা হাদিসের মধ্যে এসেছে। কিন্তু তাবিজ দেওয়া ও জাদুটোনা করার কথা হাদীসে আসেনি। এমনকি কোনো এক ইহুদি রাসুল (সা.) কে জাদু করলেও তিনি তার বিপরতী জাদুটোনা করেননি। 

 

অতএব তাবিজ দেওয়া, তাবিজ করা,  জাদু টোনা বান মারা ইত্যাদি দ্বারা মানুষের ক্ষতি বা নিজের লাভ করা চেষ্টা করা মানেই শিরক করা।  কেননা এই পৃথিবী এবং এই পৃথিবীর বাইরে মানুষসহ যাবতীয় জীবজন্তুর ভালো মন্দ এবং লাভ ক্ষতি করার একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ।

 

কিন্তু আমরা এইসব জানার পরও দুনিয়াবী লাভ ও লোভের আশায় এই জাতীয় শিরকী কর্মকাণ্ডে আমরা জড়িত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এইসব শিরকী কাজ করে মূলত আমরা আল্লাহর বিধি বিধানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি। তাই আমরা যদি কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর দাবি করি তাহলে আমরা কখনোই এই শিরকের মধ্যে ডুবে থাকতে পারব না।

 

এরপর আমাদের উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক হয় বিভিন্ন পীর আউলিয়ার দরবার এবং মাজারে। এইসব জায়গায় আমাদের অধিকাংশ মানুষই যার তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে। অথচ আল্লাহ স্পষ্ট করে কুরআনে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, মানুষের যাবতীয় দুঃখ দুর্দশা রোগ শোক সবই আল্লাহর দান ও পরীক্ষা।

 

তিনি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য এইসব নানান সমস্যা দিয়ে থাকেন। আর আমরা যিনি এইসব সমস্যা দিচ্ছেন তাঁকে না ডেকে তাঁর কাছে না চেয়ে তাঁর বান্দাদের কবরে মাজারে গিয়ে ধরনা দেই। আর এই কাজ করার সাথে সাথেই আমরা আল্লাহর সাথে শরীক করার কারণে শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ি। যা তওবা ছাড়া ক্ষমা অযোগ্য অপরাধ।

 

এছাড়াও আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাবে কুরআনে ঘোষণা দেন যে, আল্লাহ যার সাথে আছেন, তার বিরুদ্ধে পুরো দুনিয়া একজোট হলেও কেউ কিছু করতে পারবে না। আবার যার সাথে আল্লাহ নেই, তার পক্ষে পুরো দুনিয়া আসলেও কেউ কিছুই করতে পারবে না। সুতরাং সর্বদা আল্লাহর সাহায্য এবং তাঁর উপরই ভরসা করতে হবে। এটাই কালেমার শিক্ষা।

 

অথচ আমরা মুখে আল্লাহর কথা বলে যাবতীয় দুঃখ দুর্দশায় বিপদে আপদে সন্তান কামনায় সোজা দৌড় দেই পীরের দরবার ও মৃত অলি আউলিয়াদের কবরে। একইসাথে তাদের মাজারে কবরে দান সাদকা করি।  যা সরাসরি সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহর ফয়সালা কখনোই তাঁর বান্দা করতে পারে না। তাও আবার মৃত কবরবাসী। তবে জীবিত যেকোনো আল্লাহর অলি কিংবা আবেদী মুমিন, মুত্তাকী বান্দা আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে যেকোনো বান্দার জন্য উপকার করতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

 

কিন্তু মৃত ব্যক্তি কখনোই এই দুনিয়ার মানুষের উপকার করতে পারে না। যদি এমন হয়ও তাও তার ঈমানের পরীক্ষা। যা আল্লাহ অনেক দুর্বল ঈমানদার থেকে নিয়ে থাকেন। সুতরাং আল্লাহ যা করেন এবং করতে পারেন তা  কখনোই তাঁর মৃত বান্দারা করতে পারেন না। কেউ এমন ঈমান রাখলে তার ঈমানই ভঙ্গ হয়ে যাবে। 

 

এছাড়াও মানুষের তাকদির নিয়ন্ত্রণ হাতে। তিনি ছাড়া কেউ তাকদির পরিবর্তনকারী নেই। তবে নিশ্চিতী আমলী বান্দারা দোয়া করতে চাইলে তাকদির পরিবর্তন হয়। কিন্তু কোনো ব্যক্তি পরিবর্তন করতে পারে না। কালেমা পড়ে এই বিশ্বাস রাখলে তার কথা শুদ্ধ হবে না।

 

শেষ কথা 

 

আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশেরও অবস্থা এই কালেমা “লা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল” না বুঝেই পড়ে। আর কেবলমাত্র উচ্চারণ করাই দায়িত্ব শেষ এবং বর্ণনার বর্ণনা বনে যায়। যা কখনোই সুন্নাহর আলোকে শুদ্ধ নয়। আজ শুধু এই কালেমাতে আমরা সতর্কতা সম্পর্কে জানতে চাই। এর পরবর্তী পর্বে আমরা এই কালমার রাসুল (সা.) কী তা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply