এর ইংরেজী নাম হচ্ছে- poison gooseberry, winter cherry বা, Ashwagandha. এই লেখাটিতে অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। একইসাথে গাছ চেনার উপায়, হোমিওপ্যাথিক ব্যবহার, খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নিয়েও কিছু কথা থাকবে।
এটারও অনেক ক্ষতিকর দিক আছে, তারপরেও কেন খাওয়া উচিত, কি কাজে ব্যবহার করা উচিত, আদৌ উচিত কি না সেটি নিয়ে বলার চেষ্টা করবো। অনেকে মনে করেন উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য হিমালয় অশ্বগন্ধা বা, হামদর্দের পাউডার কাজ করে, সত্যিই কি তাই?
গাছ চেনার উপায়
ছবি না দেখে চেনাটা একটু কঠিন। নিচে একটি গাছের ছবি দেখুন(ছবিটি তুলেছেন Hari Prasad Nadig, এটি CC BY-SA 2.0 লাইসেন্সের আওতাভুক্ত)। এই ছবি দেখেও গাছটি চিনতে পারবেন-
তবে কিছু বিষয় মনে রাখতে পারেন, এর ফুল সবুজ, ফল লাল। গন্ধ কিছুটা ঘোড়ার মতো। আর, গাছ হচ্ছে গুল্ম জাতীয়। নামটাও এসেছে সংস্কৃত থেকে অশ্ব এবং গন্ধা এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে। এই গাছের পাতা সিদ্ধ করলে তার গন্ধ হয় ঘোড়ার মূত্রের মতো। তাই, এই নামকরণ করা হয়েছে।
হোমিওপ্যাথিক অষুধ হিসেবে অশ্বগন্ধার উপকারিতা
সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, হামদর্দ এর পাউডার কত কি বাজারে পাওয়া যায়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রাচীন মিসরে এবং মেসোপটেমিয়ায় এই গাছ ঘুমের অসুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। Dr. Kazi Sabbir Hosaain তার ফেসবুক পেজে বলেন,
“ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ক্ষেত্রেও অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ওষধু। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেলে ক্রনিক ব্রংকাইটিসে উপকার হয়।”
আপনার যদি রাতে ভালো ঘুম না হয়, তাহলে চিনির সাথে অশ্বগন্ধা গুড়া মিশিয়ে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন, এতে ঘুম ভালো হবে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বলকারক হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়।
হামদর্দ এর পাউডার খাওয়ার নিয়ম
আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা পাউডার ব্যবহার করা হয়। Myupchar নামের একটি ওয়েবসাইটে খাওয়ার নিয়ম লেখা আছে। সেখান থেকে আপনাদের জন্য নিয়মগুলো তুলে ধরছি। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুই খাবেন না।
এক কাপ চা, দুধ বা, মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার খাবেন। এটা হচ্ছে আয়ুর্বেদ অনুসারে সাধারণ ডোজ। এটি গ্রহণ করলে অনেক রকম উপকার পাবেন। চুল পড়া কমতে সাহায্য করে, ক্ষত সারায়, ডায়বেটিসের রোগীদের উপকার করে।
পাউডার খেলে কি লম্বা হওয়া যায়?
অনেকেই বলেন নিয়মিত খেলে লম্বা হওয়া যায়। উপরে যে নিয়ম বললাম সেই নিয়মে নিয়মিত খেলে এটি হাড় মজবুত করবে এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করবে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।
যাই হোক, দারাজ থেকে- অশ্বগন্ধ্যা পাউডার কিনে নিতে পারেন ১৫০ টাকায়
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিশ্বস্ত সূত্র ইত্যাদি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। আপনারা চাইলে এগুলো যাচাই করে দেখতে পারেন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি জিনিউজ, indiatimes, herbaltress ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে। চলুন দেখে নেই কি কি উপকারিতা আছে-
১. এটি আপনাকে অনন্তযৌবনা করবে না, তবে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করবে
২. মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে
৩. ডায়বেটিস রোগীদের শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এটি সাহায্য করে
৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে অনেক রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়
৫. পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে যৌন সক্ষমতা বাড়ে
৬. আমরা জানি, এখনকার সময়ে খাবার দাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হৃদপিন্ডের অনেক সমস্যা দেখা যায়। অশ্বগন্ধা এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
৭. সাপের কামড়ে বিষনাশক হিসেবে এর ব্যবহার আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই রয়েছে
৮. ঘন, কালো, উজ্জ্বল চুলের জন্য অশ্বগন্ধা উপকারি
৯. মহিলাদের ঋতুচক্র স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা
১০. যেহেতু এটি দুশ্চিন্তা কমায়, তাই অনিদ্রা রোগে যারা ভুগছেন তাদের ঘুম ভালো করতে সাহায্য করবে
অনেক ক্ষেত্রে এটি শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তাই, উচ্চতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তবে, এমন না যে, বাংলাদেশী কারো উচ্চতা ইউরোপীয়ানদের মতো হয়ে যাবে।
আরো জানার জন্য Healthline এর ইউটিউব চ্যানেলের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন-
অশ্বগন্ধার ক্ষতিকর দিক বা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সবকিছুরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, অপকারিতা আছে। অশ্বগন্ধারও অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা, উপকারিতা আছে। চলুন এমন কিছু অপকারিতা দেখে নেই-
১. দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধা পাউডার খেলে ডায়রিয়া, বমি এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে
২. এটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি একই কাজের জন্য অন্য কোন অষুধ গ্রহণ করেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে, অনেক কমে যেতে পারে
৩. অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের সময়ের আগে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে
৪. এটি রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে। আপনার শরীরে অস্ত্রপচার হলে বা, কোন অষুধ গ্রহণ করলে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে
৫. ঘুমের অষুধ হিসেবে অশ্বগন্ধ্যা ব্যবহৃত হয়, তাই আলাদা ঘুমের অষুধ খেলে বেশী ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা আছে
সব মিলিয়ে অপকারিতাগুলোকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নিতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেলে কোন সমস্যা হবে না। আর, কোন সমস্যা না থাকলে পরিমিত পরিমাণে সব কিছুই গ্রহণ করা যায়।
গাছ কোথায় পাওয়া যায়?
এটি চাষ করা হয় শুষ্ক অঞ্চলে। ভারত, চীন, বাংলাদেশ এবং আরো অনেক দেশেই এই গাছটি জন্মে। বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের একটি তালিকা আছে। ঐ তালিকা থেকে আপনি আপনার এলাকার নার্সারি খুজে নিতে পারেন। আশেপাশের অন্যান্য নার্সারিতেও খোজ করতে পারেন।
তাদের সাথে যোগাযোগ করলে চারা পাওয়া যাবে। গ্রামের বনবাদাড়েও পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন স্টোরে এর গুড়া, ট্যাবলেট ইত্যাদি বিক্রি হয়। হোমিওপ্যাথিতে এর ব্যবহারের কথা বলেছিলাম। হোমিওপ্যাথির অষুধের দোকানেও এর পাউডার, সিরাপ ইত্যাদি পাবেন।
আরো পড়ুন-
- বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা
- মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
- আদার উপকারিতা ও অপকারিতা
- লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

Amazing post