আদার উপকারিতা

আদার উপকারিতা ও অপকারিতা

1

আদার ইংরেজী হচ্ছে- Ginger, এই লেখাটিতে আদার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নানারকম তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়া এই ব্যাপারে আপনাদের জানতে চাওয়া আরো  অনেক বিষয় তুলে ধরা হবে, যেমনঃ কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা, আদার রস খেলে কি হয়, শুকনো আদা উপকারি দিক, চুলে আদার ব্যবহার, খাওয়ার নিয়ম, আদা-চা ইত্যাদি নানা বিষয় থাকবে।

পাশাপাশি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা, ক্ষতিকর দিকগুলোও থাকবে– তাই দুইটা দিক সম্পর্কেই জানতে পারবেন। প্রতিদিনের খাবারের মসলায় বা, অন্তত চায়ের সাথে কিছু আদার টুকরা না থাকলে আমাদের মোটেও ভালো লাগে না। অন্তত আদা চা ভালো লাগে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনা শুরু করি-

আদার উপকারিতা

এতে আছে ফাঙ্গাস ও ভাইরাস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য, এছাড়া ঐষধি নানারকম উপাদান ও খনিজ পদার্থের সমাহার দেখা যায় আদাতে। এইসব উপাদানের উপস্থিতির কারণে আমাদের শরীরের নানারকম উপকার করতে সক্ষম আদা। চলুন কিছু উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই-

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আদা অনেক উপকারি ভূমিকা পালন করে, এটি পেট ফোলা কমায়
  • এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে, আর বাতের ব্যাথা কমায়
  • এটি প্রাকৃতিক বেদনানাশক হিসেবেও কাজ করে, গলাব্যাথা, কাশি এগুলো কমায়
  • আদা কোলেস্ট্রেরল হ্রাস করে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে
  • চিনির মাত্রা হ্রাস করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
  • মাইগ্রেনের ব্যাথা কমায়
  • এটি এন্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি খাবার যা মেয়েদের মাসিকের সময় ব্যাথা কমায়, নানারকম ক্যান্সার এড়াতে সহায়তা করে।

 

পুদিনা পাতা, আদা, লেবুর রস এগুলো মিশিয়ে খেলে মর্নিং সিকনেস দূর হয়। মেদ কমাতেও এটি সাহায্য করে। তাই, আদা আর, লেবুর রস একসাথে খেতে পারেন যা ডায়াবেটিসেও উপকারি। চলুন আরো কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-

১. কাচা আদা খাওয়ার উপকারিতা

কাচা আদা মুখের স্বাদ বাড়ায়, তাই বমি বমি ভাব হলে খেতে পারেন। মানুষের শরীরে গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম হয়, এই অতিরিক্ত ঘাম হওয়া কমায়। এছাড়া কাচা আদা খেলে এতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি দেয়। এতে আছে ক্যালসিয়াম যা শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে, পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যাথা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে।

২. আদা রসের উপকারিতা

আদার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে কাশি সারে। পেটে ব্যাথায় আদার রস খেলে উপশম পাওয়া যায়। এছাড়া আরো নানারকম উপকার পাওয়া যায় যেমনঃ স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, লিভারকে সুস্থ রাখে, পেটের নানারকম সমস্যা দূর করে। এর রস দাতের জীবাণু দূর করে দাতকেও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বাড়াতে খাওয়ার আগে একটু আদার রস খেয়ে নিতে পারেন।

৩. শুকনো আদার উপকারিতা

প্রক্তিয়াজাত শুকনো আদা অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। কাচা আদাতে যেমন অনেক উপকারি উপাদান আছে, তেমন শুকনো আদাতেও আছে। তাই, আপনারা চাইলে আদা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খেতে পারেন, এর স্বাদটাও কিছুটা আলাদা। এটিও ডায়াবেটিস কমায়, হাড়ের সমস্যা দূর করে, এতেও এন্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। সুবিধাটা হচ্ছে- মাসালা চা, লাড্ডু, দুধ-কাজুবাদামের সাথে মিশিয়ে খাওয়া এরকম নানাভাবে এটি খাওয়া যায়।

৪. চুলে আদার উপকারিতা

চুল নিয়ে যারা সচেতন তারা চুলে আদা ব্যবহার করেন এবং এর উপকারিতাও হয়তো জানেন। আপনি যদি বনলতা সেনের অন্ধকার বিদীশার নিশার মতো চুল পেতে চান, আদা মাখুন। আদাতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম আর, ফসফরাস চুলের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। চুলের গোড়া মজবুত করে এবং খুসকি দূর করতে সাহায্য করে। এন্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান কয়েক ধরণের খুসকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

আদা খাওয়ার নিয়ম

অনেক সময় খালি পেটে আদা খেলে সমস্যা হয়। যারা খালি পেটে আদা খেতে পারেন না, পেটের কোন সমস্যার কারণে, তারা কিছু খেয়ে এরপর আদা খাওয়ার চেষ্টা করবেন, তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না। অনেকভাবে খেতে পারেন-

  • চায়ের সাথে আদা সবচেয়ে জনপ্রিয়
  • গরম পানিতে মিশিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন
  • লেবু আর, পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
  • দুধ, কাজুবাদামের সাথে মিশিয়ে খেতে দারুণ লাগে
  • মাছ, মাংসের মসলায় তো আমরা বাঙালিরা প্রায়ই আদা খাই
  • মধুর সাথে মিশিয়ে আদা খাওয়া যায়

 

এরকম অনেক পদ্ধতিতে খাওয়া যায়। আপনার যেভাবে খেতে ভালো লাগে, সেভাবেই খেতে পারেন। এতে আশা করা যায় আদার উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন। চাইলে সংরক্ষণও করতে পারেন।

আদা সংরক্ষণের উপায়

আপনি যদি আস্ত আদা অনেকদিন ভালো রাখতে চান, তাহলে ফয়েল পেপারে মুড়ে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। আরেকটি পদ্ধতি আছে, ফ্রিজে রাখার। আদা কুচি করে সেটি আইস ট্রেতে রাখুন, অনেকদিন ভালো থাকবে।

৩ নম্বর পদ্ধতি হচ্ছে, বড় বড় টুকরা করে জিপলক ব্যাগে বাতাসশূণ্য করে রাখুন। এভাবে ফ্রিজে রাখলে সাধারণত তিন মাস ভালো থাকে। এছাড়া শুকনো আদা অনেকদিন ভালো অবস্থায় রাখা যায় ফ্রিজার ছাড়াই। আপনার প্রয়োজনমতো আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন।

আদা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা, অপকারিতা

প্রত্যেকটি খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। আদারও তেমন কিছু অপকারিতা বা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সাধারণত বেশী খেলে এবং শরীরে কোন রোগ থাকলে অল্প খেলেও সমস্যা হতে পারে। চলুন এমন কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-

  • এটি যেমন হজমে সহায়ক তেমন একটু বেশী খেলে ডায়রিয়াও হতে পারে
  • গর্ভবতী নারীরা বেশী আদা খেলে গর্ভপাতের ঝুকি থাকে
  • এন্টি প্ল্যাটিলেট নামে একটি উপাদান আছে, যার কারণে বেশী খেলে রক্তপাতও হতে পারে
  • কিছু ক্ষেত্রে এটি পেট ফোলা বাড়াতেও পারে
  • আদা খেলে মুখে জলাপোড়া হতে পারে

 

এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে নিশ্চিন্তে আদা খাওয়া যাবে। এর জন্য আপনাকে খুব বেশী চিন্তিত হতে হবে না। মাত্রাতিরিক্ত খেলে পৃথিবীর সব খাবারই আপনার জন্য বিষাক্ত হতে পারে। আবার, অনেক বিষাক্ত খাবারও কখনো কখনো ওষুধের মতো কাজ করে।

আদা চা এর অপকারিতা

এবারে সবার প্রিয় আদা-চা নিয়ে কিছু নেগেটিভ কথা বলি যা সাধারণত কেউ বলে না। এটা সত্যি যে আদা-চা আমাদের অনেক উপকার করে। তবে, এর কিছু ক্ষতিকর দিকও কিন্তু আছে। চলুন এরকম কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-

১. আদা রক্তচাপ কমায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে উপকারি, লো ব্লাড প্রেসার যাদের আছে তাদের জন্য ক্ষতির কারণ

২. এসিড রিফ্লাক্সের(বা, গ্যাসের সমস্যার) সাথে আরেকটি বৈশিষ্ট্য কিন্ত জড়িত- হার্টবার্ন। বেশী আদা খেলে হার্টবার্ন হতে পারে

৩. গর্ভবতী নারীরা দিনে ১৫০ গ্রামের বেশী আদা চায়ের সাথেও খেতে পারবেন না, এতে ক্ষতি হবে

৪. আদা খেলে কিন্তু চুলের বৃদ্ধি কমে যায়- এমনটা দেখা গেছে কিছু গবেষণায়

এগুলো শুনে আবার, আদা-চা খাওয়া বাদ দিয়ে দেবেন না। পরিমিত পরিমাণে  অন্য সব খাবারের সাথে আদা-চাও তৃপ্তি করে খাবেন। অন্য কোন শারিরিক সমস্যা না থাকলে এটাতেও কোন সমস্যা হবে না।

সহবাসের আগে আদা খেলে কি হয়?

রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে সুন্দর সহবাস হবে, আর, আদা রক্তচাপ কমায়, হার্ট, লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই, আদা খেলে অনেক সময় সহবাসকে আর সুন্দর করে। এছাড়া আর, বিশেষ কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য খুজে পাওয়া যায় নি। তাই, নিশ্চিন্তে আদা খেতে পারেন।

শেষ কথাঃ প্রত্যেকটি খাবারের মতো আদার উপকারিতা এবং অপকারিতা আছে। পরিমিত পরিমাণে খেলে সব রকম উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন। আর, আপনার যদি শারিরিক কোন সমস্যা থাকে বা, উপকারিতার কথা শুনে ইচ্ছামতো খেতে থাকেন, তাহলে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়ানো সম্ভব হবে না।

 

আরো পড়ুন-  


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

খালি পেটে রসুন ও মধু খেলে কি হয়?

আপনার যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান। কারণ খাবারের

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? আজকে একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলবো ওজন বাড়াতে সকাল দুপুর রাতে কি খাবেন? কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?
Untitled design

কোন বয়সে কতটুকু ভাত খাবেন

আসসালামু আলাইকুম এশিয়া মহাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ভাত খাওয়ার অভ্যেসকেই। প্রিয়

সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব।

Leave a Reply