গল্প তুই শুধু আমার আফছানা খানম অথৈ

0

তুই শুধু আমার

আফছানা খানম অথৈ

রাহুল আর হেনা দুজন ভালো বন্ধু। ছোটবেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।রাহুল বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে।তার বাবা বড় ব্যবসায়ী।আর হেনা তার বাবার অফিসের কেরানির একমাত্র মেয়ে।রাহুলের বাবা দয়া করে হেনার বাবাকে তাদের একটা বাসায় থাকতে দিয়েছেন।ভাড়া নিচ্ছেন না কারণ কেরানি হলেও হারুনুর রশিদ খুব ভালো একজন মানুষ।অফিসিয়াল হিসেব নিকেশে কোন ভুল করেন না।গরীর হলেও তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী।তাই রাহুলের বাবা মাসুদ খন্দকার তাকে খুব বিশ্বাস করেন ও ভালোবাসেন।আর তাদের দয়াতে বেঁচে আছেন হারুনুর রশিদ।তার এক ছেলে এক মেয়ে।মেয়ে বড় ছেলে ছোট।
হেনা দেখতে শুনতে মন্দ না খুব কিউট একটা মেয়ে।তার উপরে ভদ্র নম্র,রুচিশীল পড়া লেখায় খুব ভালো।এস এস সি এইচ এস সি দুটোতে ভালো রেজাল্ট করেছে।যাক ভাগ্যচক্রে ভার্সিটিতে অনার্স এ ভর্তির সান্স পেয়ে গেছে।বাবা হারুনুর রশিদ ও মা সাদেকুন্নাহার খুব খুশি হয়ে আশ পাশের বাসার সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন।মালীক মাসুদ খন্দকারের বাড়িতেও মিষ্টি পাঠালেন।মাসুদ খন্দকার বাসায় ছিলেন।উনার সামনে মিষ্টি দিতে তিনি স্ত্রী রোজা খন্দকারকে জিজ্ঞেস করলেন,
এটা কিসের মিষ্টি?
হেনা ভার্সিটিতে অনার্স এ ভর্তির সান্স পেয়েছে।তাই হারুন ভাই মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
তিনি মুখ ভ্যাংচিয়ে হা হা হো হো করে হেসে উঠে বললেন,
দেখ ছোট লোকের কান্ড ,মেয়েকে এতদূর পড়ানোর দরকার কি।নিজে চলতে পারে না।মেয়েকে পড়াচ্ছে ভার্সিটিতে।
কি বললেন গরীব বলে হেনা ভার্সিটিতে পড়তে পারবে না?
রোজা আগে বিষয়টা বুঝ তার পর কথা বল।
আপনি কি বলতে চান?
আমি বলি কি হেনার বাবা গরীব বলে আমরা দয়া করে ফ্রিতে বাসায় থাকতে দিয়েছি।তবুও সংসার চালাতে তার কষ্ট হচ্ছে।অযথা মেয়ের পেছনে এতগুলো টাকা খরচ না করে বিয়ে দিলে তো পারে।
হয়েছে আপনাকে ওদের ফ্যামিলির চিন্তা করতে হবে না।যার চিন্তা সে করবে।একটা কথা মনে রাখবেন গরীবের মেয়েরাও এখন ভার্সিটিতে পড়ছে এবং বি সি এস ক্যাডার হচ্ছে।
মাসুদ খন্দকার কোন কথা না বলে অফিসের কাজে বেরিয়ে গেলেন।
হেনা বসে বসে ফেসবুক দেখছে এমন সময় রাহুল লিখে পাঠাল,
সুইট বেবি তুমি কোথায়?
হেনা রিপ্লে দিলো,
কেনো রাহুল আমি বাসায় আছি।
একটু বেরুবে?
কোথায় রাহুল?
আমাদের ফুলের বাগানে।
প্লিজ রাহুল একটু অপেক্ষা কর,আমি আসছি।
বলতে না বলতে হেনা বাগানে গিয়ে দাঁড়ালো।আশ পাশ তাকাল কোথাও রাহুলকে দেখতে পাচ্ছে না।হেনা বিরক্ত হয়ে লিখে পাঠাল,
রাহুল তুমি কোথায়?
রাহুল উত্তর না দিয়ে একটা লাল গোলাপ নিয়ে চুপি চুপি তার পেছনের ফুল গাছটার আঁড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো।হেনা বিরক্ত হয়ে ফোন করে, ফোন বন্ধ,চ্যাট করে উত্তর আসে না।এবার বলে,
রাহুল আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে না।দেখাব মজা করার সাধ,এই আমি চললাম।
হেনা সামনে পা এগিয়ে দিলো।তখনি হেনার পেছনের ফুল গাছের আঁড়াল থেকে রাহুল হাসতে হাসতে বেরিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো।হেনার মুড অফ,রাহুল বুঝতে পেরেছে সে রেগে আছে।তখনি বলল,
সরি হেনা ভুল হয়ে গেছে।
হেনার রাগ এখনো পড়েনি।সে এখনো মুখ ঘোমড়া করে আছে।এবার রাহুল বলল,
হেনা বললাম তো ভুল হয়ে গেছে।তবুও কথা বলবি না।নাকি ভার্সিটির স্টুডেন্ট হওয়াতে পাওয়ার বেড়ে গেছে।
রাহুল খোচা দিয়ে কথা বলার অভ্যাসটা তোর এখনো গেল না।এখন বল কেন ডেকেছিস?
রাহুল বলতে আর লেট করলো না।লাল গোলাপটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
I love you হেনা I love you.
হেনা লাল গোলাপটা হাতে নিয়ে বলল,
সরি রাহুল আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না।
কেনো হেনা?
রাহুল সব কেনোর উত্তর হয় না।আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না।ব্যস এটুকু উত্তরই যথেষ্ট।এর চেয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আমি মনে করছি না।
কথাগুলো বলতে বলতে হেনা এগিয়ে যাচ্ছিল।তখনি রাহুল তার পথ রোধ করে বলল,
হেন কোথায় যাচ্ছিস?
কোথায় আবার বাসায়?
আমার উত্তর?
বললাম না আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না।
আমার অপরাধ?
তোর কোন অপরাধ নেই।
তাহলে আমাকে ভালোবাসতে পারবি না কেন?
রাহুল বুঝতে চেষ্টা কর,তোরা বড়লোক আমরা গরীব,তাও তোদের আশ্রীতা,সাধারণ একজন কেরানির মেয়ে।এত আকাশ পাতাল ব্যবধানে কখনো ভালোবাসা হয় না।
হেনা একটা কথা মনে রাখিস প্রেম ভালোবাসা কখনো ধনী গরীব মানে না।এটা হলো সম্পূর্ণ মনের মিল।মনে মনে এক হলে ভালোবাসা হয়ে যায়।এতে অর্থের প্রয়োজন হয় না।
রাহুল এসব ডায়ালগ নাটক মুভিতে শোভা পায়,বাস্তবে নয়,বাস্তব বড় কঠিন।
হেনা সেই কঠিন বাস্তবকে আমি সহজে পরিণত করবো।
রাহুল বলা সহজ করা কঠিন।আন্টি আঙ্কেল কখনো নিন্ম লেভেলের কর্মচারীর মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নেবে না।
হেনা সেটা আমার ব্যাপার তোর না।সেই ছোট বেলা থেকে আমাদের একসঙ্গে বেড়ে উঠা।তারপর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।আমি সিরিয়াসভাবে বলছি,আমি তোকে ভালোবাসি।তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।যদি না করিস…?
হেনা বুঝতে পেরেছ রাহুলের ভিতর সিরিয়াস ইমোশন কাজ করছে।তাই হেসে উঠে বলে,
রাহুল এখন কি পাগলামী করার বয়স?
হেনা তোর ভালোবাসা না পেলে সত্যি আমি পাগল হয়ে যাব।শুধু তাই নয়,কিছু একটা হয়ে গেলে।তখন আফসোস করলেও লাভ হবে না।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল,তুই আমাকে ভালোবাসিস কি না?
রাহুল সত্য কথা বলতে কি,ভালোবাসার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।কি করে বুঝাব তোকে।
রাহুল বুঝতে পেরেছ হেনা তাকে ভালোবাসে কিন্তু ভয়ে মুখ ফোটে বলতে পারছে না।
তখনি রাহুল তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
হেনা আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস।কিন্তু ভয়ে মুখ ফোটে বলতে পারছিস না।আমি বলছি আজ থেকে আর কোন ভয় নয়।আমি আছিতো তোর পাশে,সুখে দু:খে,জীবনে মরনে সব সময়।
রাহুল তবুও আমার ভীষণ ভয় করছে।
পাগলী ভয় করলে জয় হয় না।বুকে সাহস থাকতে হয়।তবে হবে ভালোবার জয়,এর ব্যতিরেকে নয়…।
রাহুল এখন তো অনেক লেকচার দিয়েছিস।সময় হলে দেখা যাবে,কার সাহস কত বেশি।
ওকে মাই সুইট হার্ট সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা কর।
ওকে রাহুল চলো বাসায় ফেরা যাক।
রাহুল যেমন হেনাকে ভালোবাসে,তেমনি হেনাও রাহুলকে ভালোবাসে।আজ দুজন খোলাখুলিভাবে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমে তা প্রকাশ করলো।তাদের ভালোবাসা একেবারে পাকা।
এরপর থেকে দুজনের গোপন অভিসারে দেখা সাক্ষাত ও রাত জেগে ফোনালাপন…।
মাঝে কিছু সময় পার হলো।রাহুলের গ্রাজুয়েশন শেষ।সে এবার ব্যবসার হাল ধরেছে।মাসুদ খন্দকারের একমাত্র ছেলে রাহুল খন্দকার ব্যবসার হাল ধরেছেন এতে বাবা-মা খুব খুশি।রাহুল ব্যবসায় যোগ দেয়ার সাথে সাথে হেনার বাবার চাকরীর পদোন্নতি।তাকে প্রমোশন দিয়ে ম্যানেজার পদে স্থানান্তর করলো।
রাহুলের বাবা বিষয়টা সহজ চোখে দেখলেন না।ছেলেকে বললেন,
রাহুল এত অল্প শিক্ষিত লোককে ম্যানেজার পদে উন্নীত করা কি ঠিক হয়েছে?
বাবা উনি সে সময়ের আই এ পাশ।তার উপরে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা।উনার প্রমোশন আর ও আগে দেয়া উচিৎ ছিল।
রাহুল অভিজ্ঞতা দিয়ে সব চলে না।যোগ্যতা থাকতে হয়।এতবড় ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার আধা শিক্ষিত, আমার বিসন্যাস পার্টনার’রা শুনলে কি মনে করবে?
বাবা সেদিক আমি সামলাব।তুমি টেনশন করো নাতো?
কোন রকমে বাবাকে বুঝিয়ে রাহুল শ্বাস ছাড়ল।এমন সময় হেনা ফোন করলো।রিং বাজছে রাহুল রিসিভ করছে না।কয়েকবার বাজনার পর মাসুদ খন্দকার বলল,
রাহুল ফোন বাজছে।রিসিভ কর।
বাবা আমার এক ফ্রেন্ড’র ফোন।অফিসিয়াল নয়।,
ওকে আমি এখন চলি। অফিসিয়াল কাজ কিন্তু মনোযোগ দিয়ে করবে।
জ্বী আচ্ছা বাবা।
বাবা বিদায় হলো।রাহুল হেনার কাছে ফোন করলো।হেনা ফোন রিসিভ করে বলল,
রাহুল সেই কখন থেকে ফোন করছি,ফোন ধরছ না কেনো?
সরি হেনা কাজে ব্যস্ত ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারিনি।
এখন কি করছ?
বসে বসে তোমার কথা ভাবছি।
তা কি ভাবছিলে?
ভাবছিলাম কবে তোকে বউ বেশে কাছে পাব।কবে তোকে ভালোবাসব,কবে তোকে নিয়ে…।
রাহুল তুমি যে কি এসব বাজে কথা বলতে তোমার লজ্জা করে না?
বাজে কথা কই বললাম,আমি তো ভালোবাসা বাসির কথা বললাম।
তবুও বিয়ের আগে এসব কথা বলতে নেই।
বারে বিয়েতো হচ্ছে।
রাহুল এতটা সিউর হলে কি করে?
আমার ভালোবাসা তা প্রমাণ করবে।
রাহুল আন্টি আঙ্কেল যদি এ ভালোবাসা মেনে না নেয়?
পালিয়ে বিয়ে করবো।দেশান্তরি হব,আমার ভালোবাসা জয় করবো।
সত্যি পারবে তো?
সত্যি সত্যি তিন সত্যি।এবার বিশ্বাস হলো তো?
রাহুল এত সিরিয়াসে যাওয়া কি ঠিক হবে?
হেনা এসব নিয়ে তুই ভাবিস না।শুন…?
হুম বলো?
আগামী শুক্রবার আমার বার্থ ডে। আসবে কিন্তু।
রাখি ভালো থেকো।বাই বাই…।
মাসুদ খন্দকার একমাত্র ছেলের বার্থ ডে উপলক্ষে বাসায় পার্টির আয়োজন করেছেন।পার্টিতে নিমন্ত্রণ করেছেন হাই লেভেলের ফ্রেন্ড সার্কেল ও আত্নীয়-স্বজনকে।মাসুদ খন্দকার দাম্ভিক ও অহংকার স্বভাবের মানুষ।বড় লোক ছাড়া গরীব আত্নীয়-স্বজনকে কখনো পরিচয় দেন না।অনুষ্ঠান শুরু হলো আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করলো।মাসুদ খন্দকারও তার স্ত্রী রোজা খন্দকার গেস্টদের রিসিভ করছেন নিয়ম অনুযায়ী।এমন সময় হেনা তার লাভারের জন্য পছন্দ সই একটা ট্রাই গিফট বক্স করে এনে রাহুলের হাতে দিয়ে বলল,
রাহুল আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার।
Happy birth day to you.
থ্যাংকস হেনা। ভিতরে এসো।
রাহুল তার ভালোবাসার মানুষকে ভিতরে নিয়ে অন্যান্য গেস্টদের সঙ্গে বসতে দিলো।রাহুলের মা হেনাকে খুব পছন্দ করেন।তিনি তার কাছে গিয়ে বললেন,
হেনা তুমি এসেছ?
জ্বী আন্টি।
ভাবী ভাইজান কখন আসবেন?
উনারা নিচু লেভেলের মানুষ বলে মাসুদ খন্দকার দাওয়াত করেনি।একথাটা ও হেনা কিভাবে বলবে,তাই একটু কায়দা করে বলল,
আন্টি বাবার প্রেসার বেড়ে গেছে তাই আসেননি।
এমন সময় মাসুদ খন্দকার এগিয়ে এসে হেনাকে দেখে বলল,
এই মেয়ে তোমাকে কে নিমন্ত্রণ করেছে?তুমি এখানে আসার সাহস পেলে কি করে।যত্তসব ছোটলোকের বাচ্চা।
হেনা কোনকিছু না বলে রাহুলের বাবার সামনে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল।তখনি রোজা খন্দকার স্বামীকে বলল,
তুমি এতগুলো মেহমানের সামনে মেয়েটাকে এমনিভাবে অপমান করতে পারলে!
রোজা এসব নিয়ে কথা বলো নাতো,ছোট লোকদের আবার সম্মান কিসের। চলো অনুষ্ঠান শুরু করি।
রোজা খন্দকার মান সম্মানের ভয়ে আর কথা বাড়ালো না।সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু হলো।
রাহুল Happy birth day to you.বলে কেক কাটল।সঙ্গে সঙ্গে সবাই হ্যাপি বার্থ ডে টু ইয়ু বলে তাকে উইস করলো।রাহুল এদিক সেদিক তাকাল।কোথাও হেনাকে দেখল না।তার মন খুব খারাপ হয়ে গেল।আপ্যায়ন শেষ আমন্ত্রিত অতিথিরা বিদায় নিলো।রাহুল শুতে গিয়ে হেনার কাছে কল দিলো,ফোন বন্ধ,ফেসবুক আই ডি ও বন্ধ।হেনার চলে যাওয়া, ফোন,ফেসবুক আই ডি বন্ধ কেন, এসব নিয়ে সে খুব টেনশন আছে।
পরদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে রাহুল হেনাকে নিয়ে পার্কে বসল।হেনা চুপচাপ কিছু বলছে না।তখনি রাহুল বলল,
হেনা সেদিন আমাকে না জানিয়ে চলে এলি কেনো?সত্য বললে রাহুল দু:খ পাবে।তাই সে মিথ্যা বলল,
রাহুল হঠাৎ আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হলো।
তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাহুল বলল,
তাই বলে আমাকে না জানিয়ে চলে এলে?তাছাড়া আমি তোর কে,আমাকে জানানোর দরকার বা কি?
সরি রাহুল ভুল হয়ে গেছে।
তা বুঝলাম,তোর ফোন,ফেসবুক সব বন্ধ ছিল কেনো?
ফোনে চার্জ ছিল না।রাহুল,
কিছু বলবি?
হুম বলবো।
বল কি বলবি?
রাহুল আমি তোর ভালো বন্ধু।সারা জীবন বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।আমার মনে হয় আর গভীরে যাওয়া ঠিক হবে না।হেনা সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?সেদিন আমাদের বাসায় তোকে কেউ কিছু বলেছে?
রাহুল কেউ কিচ্ছু বলেনি।আমরা অনেক গরীব,তোদের লেভেলে মানাবে না।তাই বলছি এসব ভালোবাসাবাসি বাদ দেহ।
হেনা আমি আগে ও বলেছি,এখনো বলছি,আমি তোকে ভালোবাসি,তোকে বিয়ে করবো,”তুই শুধু আমার”
রাহুল সময় হলে দেখা যাবে কে কার,চল ফেরা যাক।
দুজন হাত ধরে এগিয়ে আসছে।ঠিক সেই মুহর্তে মাসুদ খন্দকার গাড়ি করে যাচ্ছে।ছেলেকে হেনার হাত ধরে হাটতে দেখে বলে,
এ আমি কি দেখছি,আমার ছেলে ঐ ছোট জাতের মেয়েটার হাত ধরে হাটছে।তার মানে দুজনের মাঝে ভালোবাসাবাসি।ছুটাবো তোদের ভালোবাসা। এমন অভিনয় করবো না,কাক পক্ষী ও টের পাবে না।
মাসুদ খন্দকার দ্রুত বাড়ি ফিরে আসলেন।জরুরী ভিত্তিতে হারুনুরু রসিদকে আসতে বললেন।মালীক ডেকেছেন হারুনুর রসিদ না এসে কি পারে।তিনি মালীকের সামনে এসে নম্র স্বরে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
সাহেব আমাকে ডেকেছেন?
শুরুতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাষা।তিনি চোখ রাঙিয়ে বলেন,
রসিদ মিয়া তুমি নিজেকে কি ভাব?
সাহেব আমি কি কোন অন্যায় করেছি?
অন্যায় করনি মানে একশ বার করেছ,হাজার বার করেছ।ভেবেছ আমি কিচ্ছু বুঝি না।সম্পদের লোভে তোমার মেয়েকে আমার ছেলের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছ।যত্তসব নোংরামি..।
সাহেব আমি গরীব হলেও সত্যবাদী।আমার মেয়ে কি করেছে তা আমি জানি না।আজ থেকে আমার মেয়ে কখনো রাহুলের সাথে কথা বলবে না।প্রথম বারের মতো আমাকে ক্ষমা করুন।
তোমার কোন ক্ষমা নেই।সাজা তোমাকে ভোগ করতে হবে।আমি মাসুদ খন্দকার যা খুশি তাই করতে পারি।আমি চুরির দায়ে তোমাকে পুলিশে দেব।
রসিদ মিয়ার চোখের পানি টলমল করছে।তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন,
সাহেব আমাকে মিথ্যে অপবাধ দিয়ে চোর সাজিয়ে পুলিশে দেবেন না।অন্য কোন সাজা দিন।
ঠিক আছে,শুন?
জ্বী সাহেব বলুন।
তোমরা আজ রাতের মধ্যে স্বপরিবারে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে।আর কখনো শহরে আসবে না।যদি কখনো শহরের কোথাও দেখেছি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেব।সাবধান রাহুলকে কখনো এসব কথা বলবে না।সকল সেল ফোন নাম্বার পরিবর্তন করবে।যাতে রাহুল আর তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।যদি এর ব্যতিক্রম কর,আমি কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকিব।
হারুনুর রসিদ সব অন্যায় নীরবে হজম করে একবুক ব্যথা নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।তারপর তল্পি-তল্পাসহ সবকিছু গুছিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
এদিকে রাহুল পরদিন অফিসে গিয়ে দেখে হারুনুর রসিদ নেই।সেল ফোনে কল দিলো ফোন বন্ধ,এরপর হেনার নাম্বারে কল দিলো তাও বন্ধ,ফেসবুক তাও ব্লক।তারপর বাসায় ছুটে গেল।দেখে তালা ঝুলছে।রাহুল চিন্তা করে কিনারা পাচ্ছে না।এসবের মানে কি?
হুট করে কিছু করতে গেলে ছেলের চোখে ধরা পড়ে যাবে মাসুদ খন্দকার।তাই সপ্তাহ খানেক পরে রাহুলকে ডেকে বলল,
বাবা রাহুল রসিদ মিয়া বোধহয় আর আসবে না।
কেনো বাবা?
তার মায়ের অসুস্থতা বোধহয় বেড়ে গেছে।রসিদ মিয়া ছাড়া মাকে দেখার আর কেবা আছে বল।উনার মতো ভালো মানুষ আর হয় না।এক কাজ কর?
বল বাবা কি কাজ?
ম্যানেজার পদে আরেক জন লোক নিয়োগ দাও।
বাবা রসিদ চাচা যদি ফিরে আসে?
বোকা ছেলে বলে কি,উনি ফিরে আসলে চাকরীর অভাব হবে নাকি?অন্য একটাতে নিয়োগ দিয়ে দেব।
ঠিক আছে বাবা আজই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেব।
এদিকে হেনা গ্রামে যাওয়ার পর থেকে আত্নীয়-স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।তারা গ্রামে থেকে যাবে একথাটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।হেনার মতো একজন মেধাবী ভার্সিটি মাস্টার্স পড়া ছাত্রীর কথা শুনে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছুটে আসে তার কাছে।তাকে তাদের স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরী করার প্রস্তাব করেন।হেনা রাজী হয়, এবং মন দিয়ে শিক্ষকতা করে।
এদিকে মাস পার হয়ে যাচ্ছে রসিদ মিয়ার কোন খবর নেই।
রাহুল কাজকর্মে কোন কিছুতে মন বসাতে পারছে না।হেনার শুন্যতা অনুভব করছে প্রতিটি মুহূর্তে।অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে তার ভিতরের জগৎটা।তখনি তাদের অতি পুরানো বিশ্বস্ত ড্রাইভার বলল,
ছোট সাহেব আপনাকে এক্কান কথা কইবার চাই।
বল কি বলবে?
রসিদ মিয়া আর কখনো ফিরা আইব না।
কেনো কেনো?
আপনাদের ভালোবাসার কথা বড় সাহেব জাইনা গেছে।তারপর রসিদ মিয়াকে…।
তারপর কি থামলে কেনো বলো?
রাহুলের চাপাচাপিতে ড্রাইভার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল সত্য প্রকাশ করলো।সবকিছু শুনার পর রাহুল বলল,
এজন্য হেনা রসিদ চাচা সবার ফোন বন্ধ।আর দেরী করা যাবে না।এক্ষণই রওয়ানা করতে হবে।সবকিছু গুছিয়ে বাবার কাছে একটা চিঠি
লিখল,
শ্রদ্ধেয়,
বাবা আমার সালাম নিবে।টাকা পয়সা ধন সম্পদ নিয়ে সুখে থাক এই কামনা করি।
যাক বাবা গুটি কতক জরুরী কথা বলার জন্য কাগজ কলম হাতে নিলাম।বাবা সত্য কোন দিন চাপা থাকে না।বাবা তুমি পাক্কা অভিনেতা, রসিদ চাচাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়ে কি অভিনয় না করলে আমার সাথে।আর তাই আমি তোমাকে না জানিয়ে আমার ভালোবাসার কাছে ছুটে যাচ্ছি।আমি হেনাকে ভালোবাসি।শুধু তাই নয় তাকে বিয়ে করবো,সংসার করবো।থেকে যাব সারা জীবনের জন্য ঐ গ্রামে।তুমি সুখে থেকো,তোমার ধন,সম্পদ আর সম্মান নিয়ে।রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড প্রেমের জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছে।আর আমি পারবো না সম্পদের মায়া ত্যাগ করতে। পারবো বাবা পারবো।ভালোবাসার কাছে সব শক্তি পরাজিত হয়।আমি গ্রাজুয়েশন করা একজন পুরুষ।তোমার মতো বড় লোক না হতে পারি।কিছু একটা করে বউকে নিয়ে সুখে থাকতে তো পারবো।বাবা সবশেষে বলবো,আর কোন অভিনয় করতে যেওনা।শেষে হিতে বিপরীত হবে।ভালো থেকো সুখে থেকো।মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।বিদায়,খোদা হাফেজ।
ইতি
তোমাদের একমাত্র সন্তান
রাহুল খন্দকার।
চিঠিটা তার পি এস’র হাতে দিয়ে বলল,
বাবাকে বলবে আমি অফিসের কাজে বাইরে গেছি।আর সাতদিন পর এই চিঠিটা উনাকে দিবে।
জ্বী আচ্ছা সাহেব।
রাহুল নাইটের গাড়িতে রওয়ানা করলো।ভোর হতে না হতে সে হেনাদের গ্রামের বাড়িতে পৌছে গেল।তাকে দেখা মাত্রই হেনা বলল,
রাহুল তুমি?
হুম আমি।
কেনো এসেছ?তোমার বাবা আমাদেরকে শহর ছাড়া করেছেন।আবার গ্রাম ছাড়া করবেন।তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাও।
রসিদ মিয়া এগিয়ে এসে বলল,
বাবা রাহুল হেনা ঠিক কথা বলেছে।তুমি ফিরে যাও।
চাচা আমি ফিরে যেতে আসেনি।আমি হেনাকে ভালোবাসি।বিয়ে করে আমরা দুজন আলাদা সংসার করবো।বাবার কাছে কখনো ফিরে যাব না।আপনি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।এরপর ও যদি না করেন এই কীটনাশক ঔষধ খেয়ে সুইসাইড় করবো।কারণ হেনাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।রসিদ মিয়া আর অমত করলো না।দুজনের বিয়ে দিয়ে দিলো।রাহুল হেনাকে জড়িয়ে ধরে বলল,বলেছি না “তুই শুধু আমার” এবার বিশ্বাস হলো তো?
হুম হলো।
তাহলে আর দেরী কেনো,এসো দুজন মিলে…।
সকল কলহ,বিবাদের অবসান ঘটিয়ে রাহুল সম্পদের মায়া ত্যাগ করে ভালোবাসার হেনাকে নিয়ে সংসার জীবন শুরু করলো।
ঃসমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

ডায়না- ৪

ডায়না একটি নাম ডায়না একটি গান ডায়না একটি সুর   ডায়না তোমাকে ছাড়া আমার কিছু ভাল লাগেনা।

দ্বিধা দ্বন্দ্বে দল

  এসো সবাই মাজার গুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেই, এই বঙ্গতে পীর আউলিয়া মাজারের ঠাই নেই। সুন্নত মেনে ফতোয়া দেয় মাজার

কবিতা বাঁচাও মোদের জীবন আফছানা খানম অথৈ

কবিতা বাঁচাও মোদের জীবন আফছানা খানম অথৈ বন্যা এলো ভয়ংকররুপে ডুবল ফেনী শহর, বাঁচার জন্য মানুষগুলো করলো শুধু হাহাকার। ঘর

হাতছানি দেয় মরণ

  বেশি কথা বলেন যিনি বাচাল তাকে বলে, সবার কাছে অতি প্রিয় মিতভাষী হলে। বেশি ভোজন দেহে শক্তি ওজন বৃদ্ধি

Leave a Reply