প্রবন্ধ শিক্ষা সফর ও বনভোজন আফছানা খানম অথৈ

0

শিক্ষা সফর ও বনভোজন

আফছানা খানম অথৈ

তখন সকাল ছয়টা খুব ভোর।গাছের মগডালে বসে পাখিগুলো কুহু কুহু ডাক দিচ্ছে।শীতের শেষ প্লাবন তবুও কেন জানি উঠতে মন চাইছে না।হঠাৎ দেখলাম লাল রক্তিম সূর্য পুব আকাশে আলো ছড়াতে শুরু করেছে।আর শুয়ে থাকতে পারলাম না উঠে পড়লাম।তড়িঘড়ি করে নাস্তা করে রওয়ানা করলাম।স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি আধা কি: মি: হবে। তবুও হেটে রওয়ানা করলাম।আসতে দেরী হলো না সহজে এসে গেলাম।এসে দেখি এক টিচার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে টিকেট বিলি করছেন।আমি ও নিয়ম অনুযায়ী একটা টিকেট নিয়ে নিলাম।তখনি ক্রীড়া শিক্ষক মাইকিং করে দিলেন,
ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা এদিক সেদিক ঘুরা ঘুরি না করে গাড়িতে এসে বস।আমরা এক্ষণই রওয়ানা করবো।
মাইকিং’র সাথে সাথে ছাত্র ছাত্রীরা তড়িঘড়ি করে হুড় মুড় খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তখনি স্লোগান ধবনি বেজে উঠল,
শিক্ষা সফর সফল হোক,শিক্ষা সফর সফল হোক।
বাদ্যের তালে তালে সবাই গেয়ে উঠল।
এমনি ভাবে আমরা শিক্ষা সফর ও বনভোজনের যাত্রা শুরু করলাম।পর পর পাঁচটা গাড়ি যাত্রী নিয়ে এগিয়ে চলল।বাদ্যের তালে তালে নিমিষেই গাড়িগুলো হাতিয়ার বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপের বাস ষ্টেশনে এসে ব্রেক করলো।বেলা তখন বারোটা।সড়ক পথের যাত্রা শেষ এবার নৌ পথে ভ্রমন করতে হবে।ঘাটে একটা নৌকাও নেই।সবাই ঘাসের উপর বসে পড়লো।ক্ষুধায় পেট ছোঁ ছোঁ করছে।হালকা টিপিনের দরকার।তখনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টিপিন ভোজ শুরু হলো।টিপিন শেষ সবাই এদিক সেদিক ঘুরা ঘুরি করছে।ততক্ষণে কুলে এসে দুতিনটা নৌকা ভিড়ল।ক্রীড়া শিক্ষক মাইকিং করে দিলেন,
ছাত্র-ছাত্রীরা তাড়াতাড়ি নৌকায় উঠে বস।
ছাত্র-ছাত্রীরা ঠেলা ঠেলি করে নৌকায় উঠে বসলো।হেলে দুলে নৌকা এগিয়ে চলল।পানির ঢেউ গুলো একবার ফুলে উঠছে আবার নেমে পড়ছে মনে হয় নৌকা ডুবে যাবে।কেউ কেউ ভয়ে আৎকে উঠছে আবার কেউ কেউ নির্ভয়ে প্রকৃতির নৈসর্গিক নদীর মনোরম দৃশ্য দেখছে।সূর্য পশ্চিম আকাশে তির্যকভাবে হেলে পড়েছে।খুব গরম পড়ছে।নাকের ঢগা থেকে ফোটা ফোটা ঘাম ঝরছে তবুও ভালো লাগছে নৌকা ভ্রমন।একটু দূরে চোখের সামনে ভেসে উঠল এক ঝাঁক বালি হাঁস।খুব সুন্দর অনেকটা কবুতরের মতো।এই প্রথম বালি হাঁস দেখলাম।সবাই এক বাক্যে বলে উঠল,
স্যার ঐ যে কবুতরের মতো সাদা সাদা এগুলো কী ?
তখনি টিচার উত্তর দিলেন,
ওগুলো বালি হাস।এরা সমুদ্রে থাকে, সমুদ্রে এদের বসবাস।
হৈ হুল্লুডের মাঝে নৌকা কুলে এসে ভিডল।সবাই নামতে শুরু করলো।তারপর হাটা পথে যাত্রা শুরু করলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বনভোজন কেন্দ্রে পৌছে গেলাম।এখানে আছে তাবু দিয়ে ঘেরা দু’চালা চার পাঁচটা ঘর।পাশে ছোট্ট একটা রান্না ঘর তার পাশে একটা টিউবওয়েল ও টয়লেট।সাপ্লাই পানির ও সুব্যবস্থা আছে।পরিপাটি পরিবেশ দেখে সবাই মুগ্ধ হলো।আমাদের সাথে কিছু আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।তারা আসন গ্রহন করে অতিথির পদ অলংকৃত করলেন।ছাত্র-ছাত্রীরা দম নিতে দু’চালা ঘর গুলোতে বসে পড়লো।এই দ্বীপটি প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলা ভুমি।এই দ্বীপের এক পাশে জনবসতি অন্য পাশে বিশাল ঘন অরন্য।সেখানে কোন ঘর বাড়ি নেই।আছে বড় বড় কাঁকড়া গাছ আর নল খাগড়া।এর ভিতর দিয়ে পায়ে ভর দিয়ে হাটতে খুব কষ্ট হয়।তবু ক্রীড়া শিক্ষকের নির্দেশে সবাই ঘুরতে বের হলো।যদিও হাটতে কষ্ট হচ্ছে তবুও ভালো লাগছে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে।হাটতে হাটতে চলে গেলাম ঘন অরন্যের আঁকা বাঁকা পথে।হঠাৎ সামনে পড়লো এক ভ্রমনকারীর দল।অবশ্য দলটা তেমন বড় না,দশ বারো জন মাত্র।কুশল বিনিময় করে জানতে পারলাম তারাও এ দ্বীপের প্রকৃতির লীলাভূমি দেখতে এসেছে।তাদের হাতে ছিলো একটা ভিডিও ক্যামেরা।অনুমতি নিয়ে তারা আমাদের সবাইকে ক্যামেরা বন্ধী করলো।তারপর আমরা আবার হাটা শুরু করলাম।সবাই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লাম।আর হাটতে পারলাম না,বসে পড়লাম।ক্লান্তময় মুহূর্তটি কাটিয়ে উঠার জন্য গল্পের আসর জুড়ে দিলাম।হঠাৎ একটা লাল গাভী ঝোপ থেকে বের হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এদিকে আসছে।পেছনে পেছনে একজন লোকও আসছে।লোকটি আমাদের কাছাকাছি আসতে কুশল বিনিময় করলাম।জানতে চাইলাম,
এ বনে কী কী প্রাণি বাস করে?
লোকটি উত্তর দিলো,
এ বনে গরু,ছাগল,মহিষ, শিয়াল,হরিন, বাঘ,ছিতা বাঘ,সাপ,অজগর সাপ,আরও নাম না জানা অনেক প্রাণি বাস করে।তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হরিন।
লোকটি চলে গেল।হরিনের কথা শুনে মনটা আনন্দে নেচে উঠলেও অজগর সাপের কথা শুনে ভয়ে শরীর কেঁপে উঠল।আর এগুতে পারলাম না।বনভোজন কেন্দ্রে ফিরে এলাম।ততক্ষণে ক্রীড়া শিক্ষক মাইকিং করে দিলেন,
ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই মাইকের সামনে চলে এসো।এক্ষণি আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্টান শুরু হবে।সবাই চলে আসলাম।অনুষ্ঠান শুরু হলো।অনেকে মাইকে গান গাইল, সেই সঙ্গে নাচ ও।শিক্ষক ও বাদ্যের তালে তালে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে গান গাইলেন।সবাই মিলে খুব মজা করলাম।এখনো রান্না শেষ হয়নি।ক্ষুদায় পেট ছোঁ ছোঁ করছে।সাকু দিয়ে ওপারে চলে গেলাম।সেখানে জন বসতি ও দোকান পাট গড়ে উঠেছে।একটা স্টলে ঢুকে ইচ্ছে মতো নাস্তা করে নিলাম।তারপর অপরিচিত কিছু লোকের সাথে কথোপকথন করলাম।যা জানতে চাইলাম নির্বিঘ্নে তারা জবাব দিলো।একেবারে সাদা মাটা সহজ সরল এদের জীবন।ঝড় বাদল তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তাই ঝড় বাদলের কথা শুনলে তারা ভয় পায় না।ঝড়ের সাথে লড়াই করে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে ফসল উৎপাদন করে বেঁচে আছে এ দ্বীপের গরীব দু:খী মানুষগুলো।এদের প্রধান পেশা হলো কৃষি কাজ ও মৎস উৎপাদন।মৎস উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার হলো নৌকাও জাল।এমনি কয়েকটি ছোট ছোট নৌকা নোঙর করা দেখলাম ঘাটে।তখনি বন্ধুদের নিয়ে নৌকায় উঠে বসলাম।একজন বৈঠা হাতে নিয়ে বাইতে লাগল।নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে কিছুদূর এগিয়ে গেল।এমনি ভাবে আমরা কিছু সময় মজা করলাম।এমন সময় মাইকিং’র আওয়াজ কর্ণে এসে ঠেকল।
ছাত্রী-ছাত্রীরা তোমরা সবাই বনভোজন কেন্দ্রে চলে এসো।এক্ষণই লাঞ্চ শুরু হবে।
মাইকিং’র সাথে সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটে আসল।সবাইকে বসিয়ে দেয়া হলো এবং খাওয়া শুরু হলো।
কিছু সময়ের মধ্যে খাওয়া শেষ হলো।পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবু ডুবু করছে।টিচার সবাইকে নৌকায় বসতে বললেন।তখনি পাশের ঝোপ থেকে একদল হরিন বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে বের হলো।সবাই থমকে দাঁড়ালাম,কথায় বলে না বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃকোলে।ঠিক তাই হরিন ও বাচ্চাদের বনে বেশ মানিয়েছে,খুব সুন্দর।গায়ের রং লালছে তার উপরে সাদা ডোরা,দেখতে খুব সুন্দর লেগেছিল।তারা মনের আনন্দে বাচ্চাদের নিয়ে নেচে গেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও ইচ্ছে মতো আহার করছে।আমরা আস্তে আস্তে এগুতে লাগলাম।টের পেয়ে হরিনের দল ঝোপের আঁড়াল হয়ে গেল।আর দেখতে পেলাম না।ঘাটে এসে নৌকায় উঠলাম।যাত্রী বোঝাই নৌকা এগিয়ে চলল।কিছুক্ষণের মধ্যে নৌকা ঘাটে এসে ভিড়ল।আমরা আবার আগের নিয়মে বাসে উঠলাম।গাড়ি গন্তব্য স্থলে পৌছতে সবাই নেমে স্ব স্ব বাড়িতে অবস্থান করলাম।এভাবে আমরা “শিক্ষা সফর ও বনভোজন” শেষ করলাম।
ঃসমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গদ্য কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। প্রাপ্তি স্থান : মিতা বুক সেন্টার, নীলক্ষেত, ঢাকা। শাহানা প্রকাশনীর লাইব্রেরি, নীলক্ষেত,

গদ্য কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

  আমার গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। বইটিতে মোট আশিটি কবিতা রয়েছে। বইটিতে আমার কবি নাম মোঃ

গদ্য কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

আমার গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। বইটিতে মোট আশিটি কবিতা রয়েছে। বইটিতে আমার কবি নাম মোঃ আরিফ

গদ্য কবিতার বই ‘কনকচাঁপা দোদুল দোল’

গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। বইটিতে মোট আশিটি কবিতা রয়েছে। বইটিতে আমার কবি নাম মোঃ আরিফ হোসেন

Leave a Reply