বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাদ্য গ্রহণ করি। খাদ্যকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ভিটামিন। আবার ভিটামিনকেও ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ভিটামিন এ। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কেন খাবেন? প্রশ্নটি উত্তর চলুন খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদানের মধ্যে ভিটামিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অন্য পাঁচটি উপাদানের ভিটামিন বেশি পরিমাণ গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ভিটামিনের সামান্য ঘাটতি হলে নানারকম উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়।
ছয়টি ভিটামিনের মধ্যে একটি ভিটামিন এ। ভিটামিন এ এর অপর নাম রেটিনাল। ভিটামিন এ সাধারণত ক্যারোটিনযুক্ত খাবারের পাওয়া যায়। আজকে লেখাটিতে যে সকল বিষয়ে আলোকপাত করতে চলেছি–
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কেন দরকার?
ভিটামিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈবিক কাজ সম্পন্ন করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমরা যে ছয় প্রকার ভিটামিনের কথা জানি, প্রত্যেক প্রকার ভিটামিন বিভিন্ন কাজে লাগে।
এদিকে ভিটামিন এ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ আমাদের দেহের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং দাঁত ও মাড়ি শক্ত করে। এছাড়া ভিটামিন এ আমাদের চোখের দৃষ্টি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যদি আমাদের শরীর “ভিটামিন এ” এর অভাব হয় তাহলে দাঁত ও মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে পড়বে, রক্তশূন্যতা দেখা দিবে, দৃষ্টিশক্তিও কমে আসবে। এক কথায়, “ভিটামিন এ” এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
“ভিটামিন এ” এর উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হল–
উপরে লম্বা তালিকা দেখে এখন নিশ্চয়ই আপনি জানতে পেরেছেন “ভিটামিন এ” এর উপকারিতা কি কি এবং নিয়মিত খাবারে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কেন দরকার।
যদি আমাদের শরীরে “ভিটামিন এ” এর অভাব দেখা যায় তবে রাতকানা রোগ, রক্তশূন্যতা, ত্বকের শুষ্কতা, মাড়ি ফেটে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ যদি আমাদের শরীরে দেখা যায় তবে বুঝতে হবে আমাদের “ভিটামিন এ” এর অভাব রয়েছে। এর জন্য নিম্নে উল্লেখিত খাদ্য তালিকা আমাদের খাদ্যাভাসে যোগ করলে “ভিটামিন এ” এর অভাব পূরণ করা যাবে।
ভিটামিন জাতীয় খাবার
সাধারণত যেকোনো ধরনের শাক, সবজি ও ফলমূলে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা রঙ্গিন ফলমূল ও সবুজ শাকসবজিকে “ভিটামিন এ” এর প্রধান উৎস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গাছ থেকে পেড়ে আনা তাজা ফল “ভিটামিন এ” এর একটি প্রধান উৎস। ফল আমাদের কম বেশি সকলেরই প্রিয়। বাংলাদেশ একটি ফল সমৃদ্ধ দেশ। আম, জাম, কাঁঠাল, জামরুল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি সকল ধরনের সুস্বাদু ফল আমাদের দেশের সারা বছরই উৎপাদন করা হয়।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে বেশিরভাগ ফলে “ভিটামিন এ” পাওয়া যায়। যে সকল ফল থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায় তার তালিকাটি এক নজরে দেখে নিন–
এবার আসি শাক-সবজির কথায়। বাসায় বাবা-মা থেকে শুরু করে ডাক্তার পর্যন্ত আমাদের শাকসবজি খেতে উপদেশ দেন। শাক-সবজিতে এমন সকল উপাদান রয়েছে, যা আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মূলত ভিটামিন এই ভূমিকা ভূমিকা পালন করে। শাক সবজিতে থাকা ভিটামিন এ আমাদের শরীর জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।
তবে মনে রাখতে হবে, শাক সবজি খাওয়ার সময় অবশ্যই এটিকে তেলে ভেজে রান্না করতে হবে। কারণ ভিটামিন এ পানিতে দ্রবীভূত হয় না, বরং তেলে দ্রবীভূত হয়। তাই তেলে যখন শাক বা সবজিকে ভাজা হয় তখন ভিটামিন এ তেলে দ্রবীভূত হয়ে যায়। এরপর যখন আমরা সেই রান্না করা শাক সবজি খাই, তা থেকে আমাদের শরীর “ভিটামিন এ”কে সহজে শোষণ করে নেয়।
ভিটামিন এ যুক্ত শাক সবজির তালিকা এক নজরে দেখে নিন–
তবে শুধু শাক সবজি ও ফলমূলের যে ভিটামিন এ থাকে তা কিন্তু মোটেও সত্য নয়। “ভিটামিন এ” এর প্রধান একটি উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। উল্লেখ্য যে মাছের তেলে “ভিটামিন এ” এর পরিমাণ সর্বাধিক থাকে।
মলা ও ঢেলা মাছের কথা শুনেছেন? এই দুটি মাছ ভিটামিন এ এর অতি পরিচিত উৎস। যাদের চোখে সমস্যা, দূরের বস্তু দেখতে অসুবিধা হয় তাদেরকে ডাক্তার মলা ও ঢেলা মাছ খেতে পরামর্শ দেন।
এর পাশাপাশি গরুর কলিজা, ছাগলের কলিজা, মুরগির কলিজা, মাখন, দুধ, পনির, দই, ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদিকেও “ভিটামিন এ” এর উৎস হিসেবে ধরা হয়। মাছের তেলে প্রচুর পরিমান তেল পাওয়া যায় বলে অনেকেই মাছের তেল অতিপ্রিয়।
ডাক্তারেরা খাবাতের প্লেটে ভাত ও আমিষের পাশাপাশি শাকসবজি রাখতে পরামর্শ দেন। এই শাকসবজি ভিটামিনের সবচেয়ে বড় উৎস। তাই আজ থেকেই আমাদেরকে ভাতের প্লেটে বেশি বেশি শাক-সবজি রাখতে হবে এবং দৈনিক অন্তত একটি করে রঙিন ফল খেতে হবে।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার নয় কোনটি?
প্রায় সকল ধরনের শাকসবজি ও ফলমূলে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তারপরও কিছু কিছু খাবার হয়েছে যাতে ভিটামিন এ পাওয়া যায় না, আবার পাওয়া গেলে খুবই কম। এমন কিছু খাদ্য হচ্ছে তেতুল, লেবু, চিনি, মিষ্টি, বাদাম, সীমের বিচি, ডাল ইত্যাদি।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল
আমরা অনেকেই ভিটামিন এ ক্যাপসুলের কথা শুনে আসছি। প্রতি বছরেই সরকার কর্তৃক ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন আয়োজিত হয়। এই ভিটামিন এ ক্যাপসুল সাধারণত শিশুদের জন্য দেওয়া হয়, যুব কিংবা বয়স্কদের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া হয় না।
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন ভিটামিন এ ক্যাপসুলে ভিটামিন এ থাকে। কম বয়সী শিশুদের “ভিটামিন এ” এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণ করলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি রাতকানা রোগ কিংবা দৃষ্টি শক্তিহীনতার মত নানারকম রোগ হতে প্রতিকার মেলে।
সাধারণত ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান করা হয়। ছয় মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও এগারো মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেতে দেওয়া হয়।
প্রত্যেক শিশুরই ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য আমাদেরকে বাবা-মা ও সমাজকে সচেতন করতে হবে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল শিশুদের না দিলে ভিটামিন এ অভাবজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার আমাদের দৈনিক খাদ্যাভাসে যোগ করতে হবে। ভিটামিন এ অভাবজনিত রোগে যাতে আমরা না পড়ি সেজন্য সর্বদাই সতর্ক থাকা উচিত।
আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পড়ুন–
Useful content