হানাফী মাযহাবে নাপাকি চেটে নিলে পবিত্র হয়ে যায় কেন?
গণমুকাল্লিদ লা-মাযহাব বন্ধুদের প্রশ্ন, ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে বলা আছে- নাপাকি চেটে নিলে পবিত্র হয়ে যায়। এটা আবার কেমন ফতোয়া। এটা তো অনেক নোংরা কাজ।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম- ধরুন এক ব্যক্তির আঙুলে প্রস্রাবের ফোঁটা বা রক্ত লেগে গেলো। এই মুহূর্তে তার খাবার খাওয়ার প্রয়োজন কিন্তু পানি নেই। তাই সে ধুতেও পারছে না। তো সে প্রস্রাবের ফোঁটাটা বা রক্তগুলো চেটে নিয়ে থুথু ফেলে দিলো, অতঃপর খাবারে হাত প্রবেশ করালো। কিংবা একই কাজ কোন ছোট বাচ্চা করলো, বাচ্চা হিসেবে তার আঙ্গুলে নাপাক লেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এরপর সে স্বভাবতই আঙ্গুল চুষতে থাকে। অতঃপর খাবারে হাত প্রবেশ করায়- এতে করে ঐ খাবারগুলো নাপাক হবে নাকি হবে না।
লা-মাযহাবী ভাইটি বললো, না, এতে খাবার নাপাক হবে না। কারণ তার হাতে তো আর নাপাকি লেগে নেই। খাবার নাপাক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। খাবার নাপাক তো তখন হবে যখন তার হাতে নাপাকি লেগে থাকবে।
বললাম- তারমানে চেটে নেওয়ার দ্বারা তার আঙ্গুল পাক হয়ে গেলো তাই তো? তিনি বললেন, হাঁ। তাকে বললাম, এখন তো আপনিও একই কথা স্বীকার করলেন। আর আমাদের ফতোয়াতে এ কথাটিই বলা হয়েছে। যা এই মাত্র আপনিও স্বীকার করলেন।
তাকে আরো বললাম- এখানে আসল বিষয় হচ্ছে, নাপাকি চেটে নেওয়া না, বরং এটা বোঝানো যে চেটে নিলেও পবিত্র হয়ে যাবে, যদিও সাধারণত সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ পানি থাকা অবস্থায় এমনটা করে না। তবে করলে আঙ্গুলটা পাক হয়ে যাবে বাকি হিসেব ভিন্ন।
তাছাড়া এই মাসআলাটি ব্যাপক হারে আমল করার জন্য বলা হয়নি। বরং যদি কখনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখনকার জন্য। কারণ ইমামগণ কোনো একটা মাসআলা বলার ক্ষেত্রে সকল ফাঁকফোকর মেরে দেন। সকল সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেন। এটাই তো মাযহাব- যেখানে প্রত্যেক ছোট থেকে ছোট বিষয়েও সমাধান পাওয়া যাবে।
আর এ মাসআলাটি বাচ্চা ও পাগলদের ক্ষেত্রেই অধিকহারে সংঘটিত হতে পারে।
যেমন: অধিকাংশ ঘরেই দু-চারটা বাচ্চা থাকে। আর এদের হাতে হয়তো নাপাকি লেগে গেলো- যা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক, কারণ বাচ্চা মানুষ, হাতে নাপাকি লাগতেই পারে। আর বাচ্চাদের অভ্যাস হচ্ছে এরা অধিকাংশ সময় আঙ্গুল চোষে। তো নাপাক লাগার পর সে যদি আঙ্গুলটা চুষতে থাকলো, অতঃপর ওই হাতটি আবার খাবারে প্রবেশ করালো। এই মুহূর্তে হানাফী মাযহাবের ফতোয়া হচ্ছে ওই খাবার নাপাক হবে না কারণ সে আঙ্গুল চুষে নেওয়ার দ্বারা আঙ্গুলটি পাক হয়ে গেলো।
এখন লা-মাযহাবীদের ফতোয়া অনুযায়ী নাপাকি চুষে নেওয়ার দ্বারা যদি পবিত্র না হয় তাহলে ওই খাবারটি নাপাক হওয়া আবশ্যক। অথচ এক্ষেত্রে খাবার নাপাক হবে না- এটা লা-মাযহাবীরাও স্বীকার করে, করতে বাধ্য। এই মাসআলার গুরুত্ব তারাই বুঝবে যারা খাবার সঙ্কটে ভোগে। আর আগের যুগের অধিকাংশ মানুষই খাবার সঙ্কটে ভুগতো।
একই ভাবে কারো কারো ঘরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বাচ্চা থাকে। একই কাজ যদি কোনো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বাচ্চাও করে, এরপর যদি সে খাবারের হাত প্রবেশ করায়- আকল, নাকল ও বিবেকের দাবি হলো, ঐ খাবার নাপাক হবে না। কারণ চুষে নেওয়ার কারণে তার আঙ্গুলে আর নাপাকি লেগে নেই। এটাই হলো হানাফী মাযহাবের ফতোয়া। আর ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে এটাই বলা হয়েছে। অতএব এটা নিয়ে ট্রোল করার কিছুই নেই। বরং যে ট্রোল করবে সে নিজেরই মূর্খতা প্রকাশ করলো।
আপত্তি: ফতোয়া টেকানোর জন্য বাচ্চা ও পাগলের সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, অথচ মূল ফতোয়ায় বাচ্চা এবং পাগলের কথা নেই।
জবাব: যদিও এই সমস্যাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটে বাচ্চা ও পাগলদের সাথে। কিন্তু এটি কেবল পাগল কিংবা শিশুর ক্ষেত্রেই খাস নয় বরং সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমনটি আমরা প্রথমেই বলেছি।
ধরুন- কেউ মরুভূমিতে সফররত আছে- আমরা জানি যে, মরুভূমিতে পানি পাওয়া অনেক কষ্টের। তো এই মুহূর্তে তার আঙ্গুলের মাথায় ঘটনাক্রমে প্রস্রাব বা ছোট কোনো নাপাকি লেগে গেলো, এ অবস্থায় তার খাবার খাওয়ারও প্রয়োজন পড়লো। কিন্তু সে এখন প্রস্রাব পরিষ্কার করবে কিভাবে? প্রয়োজনমতো পানি তো নেই। আবার প্রসাব পরিষ্কার না করলেও নাপাকি লেগে তার খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এখন সে যদি আঙ্গুলটা চুষে নিয়ে থুথু ফেলে দেয়, এতে করে তার হাত পবিত্র হয়ে যাবে এবং সেই নির্দ্বিধায় খাবার খেতে পারবে।
কিন্তু পানি থাকা অবস্থায়, কোন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি এমন কাজ করবে না এটাই স্বাভাবিক। ফতোয়াতে বলা হয়েছে তাই মানুষ করতেই হবে ব্যাপারটা কখনোই এমন নয়- এটা পাগলেও বোঝে। মূলত করলে পাক হয়ে যাবে এটাই বলা উদ্দেশ্য।
সুবহানাল্লাহ! কত সূক্ষ্ম ও কঠিন অবস্থার মাসআলাটাই বলেছেন আমাদের সম্মানিত ইমামগণ। আল্লাহ তাদের সকলের উপর রহম করুন। আর যারা মূর্খতাবশত সেসব মহান ইমামগণকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এর লক্ষ্য বানিয়েছে তাদেরকে হেদায়েত দান করুন। আমাদের দায়িত্ব দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া, হেদায়েত দেওয়ার মালিক আল্লাহ।
লুবাব হাসান সাফওয়ান
