আমরা আমাদের ১০ টি সেরা ইসলামিক বই এর তালিকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি। যেখানে আমরা ইমান আকিদা সম্পর্কিত কিছু বই থেকে ইসলামের ইতিহাস, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব যাকাত সম্পর্কে জানবো। একইসাথে জানব মেয়েদের জন্য ইসলামিক বই, যা তাদেরকে জান্নাতের যাওয়ার পাথেয় হবে। এবং যুবকদের জন্য ইসলামিক বই যা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।
আমরা আধুনিক যুগের ডিজিটাল মুসলমানরা প্রতিনিয়তই ফেইসবুকে কানেক্ট থাকি। অথচ ফেইসবুকের পরিবর্তে যে বুক আমাদের বেশী পড়া দরকার, সেটা হলো বুক অব আল্লাহ তথা কুরআন হাদিসের বই। কেননা জ্ঞানার্জন করা একজন মুমিনের ইমানের অংশ। যেকারণে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন এই বলে,
“পড় তোমার প্রভুর নামে।” (আলাক : ১)
অর্থাৎ পড়ার মাধ্যমেই জ্ঞানার্জন কর এবং আল্লাহকে চেনো। তাই প্রতিটি ইমানদারকে জাহান্নাম থেকে রেহাই পেতে এবং জান্নাতে যেতে হলে অবশ্যই ইসলামিক বই পড়তে হবে। আজ আমরা এই আর্টিকেল থেকে “১০ টি সেরা ইসলামিক বই–যা অবশ্যই পড়া উচিত” এই বইগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কেন এই বইগুলো আপনার পড়া উচিত?
আমরা উপমহাদেশের মুসলমানরা বাপ দাদার অনুসরণে ইসলাম পালন করি। যেকারণে আমরা ইসলামের ইতিহাসসহ নামাজ, রোজা, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখি না। অথচ প্রতিটি মুসলমানের উপর দ্বীনের জ্ঞানার্জন করা ফরজ। আমরা আমাদের মূল্যবান সময় গুলো ফেইসবুক ইউটিউব টিকটক লাইকিসহ যাবতীয় সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করি।
কিন্তু, আমাদের উচিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানা। কেননা ইমান কোনো বংশগত বিষয় নয় যে, মুসলিমের ঘরে জন্ম নিলেই আমরা মুসলিম হয়ে যাব। ইমান জেনেশুনে আনার এবং ধারণ করার বিষয়। আল্লাহ বলেন,
“হে ইমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস (ইমান) স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসুল ও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসুলের উপর” (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ১৩৬)
এমন আরো অসংখ্য আয়াত আছে, যেখানে আল্লাহ মুমিনদেরকেই আবার ইমান আনার কথা বলছেন। কারণ পরিপূর্ণ ইমানদার হচ্ছে সে, যে আল্লাহর সম্পর্কে জ্ঞাত। তাই আমাদের উচিত বেশী বেশী দ্বীন সম্পর্কে জানা। কেননা আল্লাহ বলেন,
“(হে রাসুল) বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে?” (সুরা: আল-যুমার, আয়াত: ৯)
সুতরাং প্রতিটি মুসলমানেরই উচিত ইসলামিক বই পড়া।
ইমান ও আকিদা সংক্রান্ত সেরা ইসলামিক বই
প্রতিটি মুসলমানেরই এমন ইসলামিক বই পড়া উচিত, যে বই গুলো পড়ে ইসলামের ইতিহাস (পূর্ববর্তী নবি রাসুলদের কাহিনী) এবং আল্লাহর বিবিধ নসিহত সম্পর্কে জানা যায়। যে বইগুলো একজন মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
১) কোরআন মাজীদ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ
আমরা শুরুতেই যে বইটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব সেটা হলো, “কোরআন মাজীদ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ” যা হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ অনুবাদ করেছেন, এবং বইটি আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত। প্রতিটি মুসলমানেরই প্রথম বই হওয়া উচিত আল কুরআন। যে কিতাবে রয়েছে ইসলামের ইতিহাস এবং পরকালের জান্নাত জাহান্নামের সুস্পষ্ট বর্ণনা। এবং প্রতিটি মুমিনের করণীয় ও বর্জনীয় কাজের নির্দেশিকা।
কিন্তু পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল হওয়ার কারণে আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান আরবি কুরআন পড়তে জানলেও, আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মানুষের উদ্দেশ্যে কী বলেছেন, তা কেউ জানে না। তাই অনারব হিসাবে আমাদের উচিত কুরআনের বাংলা অনুবাদ পড়া। কিন্তু পবিত্র কুরআন তৎকালীন সময়ে কাব্যের আলোকে নাযিল হওয়ার কারণে, তা সরাসরি অনুবাদ করলে সর্বসাধারণের বুঝতে অসুবিধা হয়।
কিন্তু “কোরআন মাজীদ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ” বইটি এমনভাবে অনুবাদ করা হয়েছে, যা ছোট বড় যেকেউ পড়লে সহজেই বুঝতে পারবে। তাই বইটি ১০ টি সেরা ইসলামিক বই এর তালিকার প্রথমে রাখা হয়েছে। যা আমাদের ইমান আমল আকিদার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই লেখকের লেখা আরেকটি বই কিনে রাখতে পারেন, কাজে লাগবে-
২) তাফসীর ইবনে কাসীর
পবিত্র কুরআন এমন একটি কিতাব যেখানে বিশ্ব জগতের সবকিছুরই সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। তাই ঐশ্বরিক এই কিতাব সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানতে হলে অবশ্যই এর ব্যাখা পড়া প্রয়োজন। যাকে বলা তাফসির। “তাফসির ইবনে কাসীর” এমন একটি সুপ্রসিদ্ধ কিতাব, যা হাফিয আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবন কাসীর (রহঃ) রচনা করেছেন। এবং এর অনুবাদ করেছেন ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রাহমান।
এই বইয়ে পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতের বর্ণনা এমনভাবে করা হয়েছে, যা যেকোনো পাঠকের মনে সাড়া দিবে। এই তাফসিরের বিশেষত্ব হলো, প্রতিটি আয়াতের সমর্থক এবং অনুরূপ আয়াত গুলো বারংবার উল্লেখ করা। ফলে আল্লাহ কোনো বিষয়ে কোথায় কতবার এবং কীভাবে বলেছে তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। একইসাথে প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য সহিহ হাদিসের রেফারেন্সও দিয়েছেন খুবই চমৎকার ভাবে।
ফলে যেকোনো বিষয়ে কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেরও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সহজে। এই কারণে কুরআনের তাফসির জগতে “তাফসির ইবনে কাসীর” খুবই সমাদৃত। সেজন্য এই স্বনামধন্য কিতাবটি অবশ্যই পড়া উচিত।
৩) বুখারী ও মুসলিম শরিফ
পবিত্র কুরআন মাজিদের পর ইসলামে যে দুটি বইটি বেশী সমাদৃত, সেটা হলো “বুখারি ও মুসলিম শরিফ।” এই দুটি বই একত্রে উল্লেখ করার কারণ, পবিত্র কুরআনের পর ইসলামে এই দুটি কিতাব সর্বকালের সহিহ হাদিসের গ্রন্থ হিসাবে সমাদৃত।
বুখারি শরিফ সংকলন করেছেন ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (রহঃ)। আর মুসলিম শরিফ সংকলন করেছেন ইমাম আবুল হোসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ)। বই দুটির অনুবাদ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে পাওয়া যায়। দুটি বই-ই হচ্ছে সহিহ হাদিসের নির্জলা দুটি গ্রন্থ। যা মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইলের (রহঃ) এবং ইমাম আবুল হোসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) এর সারাজীবনের একটি সাধনার ফসল।
নিচের লিংক থেকে হাদিসের বই কিনতে পারবেন-
যে গ্রন্থ দুটিতে রাসুল (সা.) এর যাবতীয় হাদিস ও সুন্নাহর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। একজন মুসলমানের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ইমান, আকিদা ও আমলের অসংখ্য হাদিসের তথ্যভাণ্ডার হচ্ছে এই বুখারি মুসলিম শরিফ। তাই একজন মুমিনের অবশ্যই এই দুটি গ্রন্থ থেকে যেকোনো একটি অবশ্যই পড়া উচিত। যা আমাদের জাহান্নামের পথ থেকে দূরে এবং জান্নাতের কাছাকাছি হতে সাহায্য করবে।
৪) ইসলামী আকিদা
একজন মুসলিমের আমলের চাইতে ইমান ও আকিদা জরুরি। আমাদের উপমহাদেশে ইমান আকিদার প্রতি তেমন গুরুত্বারোপ করা হয় না। আমরা শুধু প্রচলিত নিয়মে নামাজ রোজাতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহর কাছে আমলের চাইতে ইমান ও আকিদা জরুরি। একারণে প্রতিটি মুমিন মুসলিমেরই আকিদা সম্পর্কে বিশুদ্ধ ধারণার প্রয়োজন। এইজন্য “কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা” বইটি প্রত্যেকার পড়া অত্যাবশ্যকীয়। যার লেখক : ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। প্রকাশনী : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স।
বইটিতে লেখক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আমাদের ইমান আকিদা যেন কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে না যায়। একইসাথে আমাদের হুবুহ অনুসরণ করতে হবে সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ীসহ প্রসিদ্ধ চার ইমামের মত। এর বাইরে না যাওয়াই নাজাত ও প্রশান্তির পথ। একইসাথে যেসব হাদিস প্রসিদ্ধ এবং সর্বকালের মুহাদ্দিসদের দ্বারা সহীহ হিসেবে সাভ্যস্ত হয়েছে, কেবলমাত্র সেসব হাদিসই বিশুদ্ধ আকীদার ক্ষেত্রে দলীলের মানদন্ড হওয়া উচিত।
বইটিতে লেখক প্রতিটি বিষয় সহিহ শুদ্ধ দলিল দ্বারা এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যাতে যেকেউ এই বই পড়ে হেদায়েতের রাস্তা পেয়ে যায়।
ইতিহাস সম্পর্কিত বই
ইসলামের ইতিহাস খুবই প্রসিদ্ধ ইতিহাস। বিশেষ করে রাসুল সা. এর জন্ম থেকে তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে ও পরের সমগ্র জীবনী জানা প্রতিটি মুসলমানেরই ইমানি দায়িত্ব। আর রাসুলের পরিপূর্ণ জীবনী সম্পর্কিত এমন একটি বই হলো,
৫) আর রাহীকুল মাখতুম
আমরা নিজেদের আশেকে রাসুল সা. পরিচয় দিতে ভালোবাসি। কিন্তু যার আশেক বা প্রেমিক তাঁর সম্পর্কে আমাদের ধারণাই নেই। অর্থাৎ একজন মুসলিম হিসাবে রাসুলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করলেও, তাঁর জন্ম থেকে শুরু করে জীবনযাপন, আচার আচরণসহ পুরো জীবনী আমাদের জানা নেই। অথচ রাসুলের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের প্রথম শর্তই হলো তাঁর অনুসরণ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা অধিকাংশ মুসলমান তাঁর সম্পর্কে জানিই না, তাহলে অনুসরণ করব কীভাবে?
তাই সত্যিকারের আশেকে রাসুলদের জন্য “আর রাহীকুল মাখতূম” বইটি একটি উৎকৃষ্ট জ্ঞানের আধার হতে পারে। যে বইটি লিখেছেন আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ)। রাসুলের জীবনী গ্রন্থ হিসাবে বইটি সর্বজন স্বীকৃত এবং সমাদৃত। যে বইয়ে রাসুল (সা.) আগমন পূর্ব আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং তাদের জীবনযাপনের অবস্থা বর্ননাসহ সীরাতুন্নবীর পরিপূর্ন চিত্র সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
বিশেষকরে নবুয়তের পূর্ববর্তী চল্লিশ বছরের জীবনযাপন এবং নবুয়ত লাভের পরবর্তী থেকে তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একইসাথে রাসুলের (সা.) হিজরত, মদীনার ১০ বছরের সংগ্রাম, নতুন সমাজব্যবস্থা রুপায়ন, সশস্ত্র সংগ্রাম, হোদায়বিয়া সন্ধি , ইসলামের বিস্তৃতিলাভের কাল, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ্জ্বসহ অন্তিম যাত্রাপথে রাসুল (সা.) সহ রাসুল (সা.) জীবনের প্রত্যকেটি অধ্যায়ের ঘটনাবলী ঘটনাকাল অনুযায়ী পর্যায়ক্রমিকভাব সুস্পষ্ট এবং সুনিপুণভাবে সুক্ষ্ণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে।
আমল সম্পর্কিত বই
ইমান আকিদার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমল। আর আমল যদি কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক না হয়, তাহলে তা আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা। তাই আমলের জন্য খুবই অপরিহার্য বই হলো,
৬) হিসনুল মুসলিম
আমাদের অধিকাংশ মুসলমান বাপ দাদাদের দেখাদেখি আমল করতে পছন্দ করে। তাই আমলের ক্ষেত্রে আমাদের বাচবিচার নাই। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাইরে কোনো আমলই আল্লাহ কবুল করবেন না। তাই আমাদের উচিত সহিহ দলিল সহকারে আমল করা।
“হিসনুল মুসলিম” এমনই একটি বই যা সহিহ কুরআন হাদিসের আলোকে রচিত। বইটি রচনা করেছেন শাইখ ড. সাঈদ ইবনু আলি কাহ্তানি রহিমাহুল্লাহ। যদিও বইটি তাঁর রচিত “আয-যিকর ওয়াদ দুআ ওয়াল ইলাজ বির রুকা মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ” গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া নিয়ে “হিসনুল মুসলিম” বইটি সংকলন করেছেন।
যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের যাবতীয় দোয়া সমূহ সুন্দর এবং সুচারুরূপে বিন্যাস করা আছে। প্রতিটি দোয়ার সহিহ রেফারেন্সসহ সুন্নাহর আলোকে বর্ণিত হয়েছে। যা একজন মুমিনের সহজ আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পথেঘাটের বই থেকে সহিহ রেফারেন্স ছাড়া যেনতেন দোয়া কালেমা শিখি এবং আমল করি, তাদের সহিহ আমলের জন্য বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যুবকদের জন্য ইসলামিক বই
একজন মুমিনের কিশোর এবং যৌবনের বয়সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যেকোনো মানুষ এই বয়সেই নফসের কারণে অসংখ্য পাপে জড়িত হয়ে পড়ে। তাই কিশোর ও যুবকদের নিজেদের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা একটি ইমানি দায়িত্ব। কেননা এই গোপন পাপ মানুষকে ধ্বংস করে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে জাহান্নামে নিয়ে যায়। অথচ আল্লাহর কাছে যৌবনের ইবাদতই বেশী গ্রহণযোগ্য। তাই যুবকদের যৌবন সম্পর্কে বেশী সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে এবং সতর্কতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে যুবকদের জন্য ইসলামিক বই।
৭) মুক্ত বাতাসের খোঁজে
একজন পুরুষের কিশোর বয়স থেকেই যৌবনের শুরু। তাই কিশোর ও যুবকদের জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে সকলেরই “মুক্ত বাতাসের খোঁজে” বইটি পড়া দরকার। যার মূল লেখক হচ্ছেন লস্ট মডেস্টি টিম। বইটি সম্পাদনা করেছেন আসিফ আদনান।
যেখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে পর্নোগ্রাফি এবং পর্নাসক্তি নিয়ে। একইসাথে সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, হত্যা, সমকামিতা, মানব পাচার, পরিবার ভাঙন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি হাজারো বীভৎস গল্পের সমাহার হচ্ছে এই বই। যেখানে কিশোর এবং যুবকদের অসংখ্য অন্ধকার পথের ঠিকানা আমাদের লেখক দেখিয়েছেন। যেসব ঠিকানার শেষ প্রান্ত হচ্ছে জাহান্নাম।
একইসাথে তিনি খুবই যত্ন সহকারে আলোচনা করেছেন কীভাবে এই অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, গ্লানিময় জীবন থেকে বেরিয়ে এসে জান্নাতের পথে যাওয়া যায়। তাই বইটি কিশোর যুবকসহ সকল অভিভাবকদের পড়া দরকার। যাতে আমরা কিশোর যুবকদের অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে এনে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারি।
৮) প্রত্যাবর্তন
মানুষ জন্মগতভাবেই প্রবৃত্তির অনুসারী। তাই অধিকাংশ মুসলমান মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেও তাদের মধ্যে ইমান আমলের বালাই থাকে না। ফলে ইসলামের সাথে তাদের যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যে দূরত্ব তাদের জাহান্নামের শেষ দরজায় পৌঁছে দেয়। এইজাতীয় পথভ্রষ্ট মুসলমানরা যদি হঠাৎই হেদায়েতের দিকে ফিরে আসে তাহলে কী হবে? ঠিক তেমনই কিছু সত্যিকার কাহিনী নিয়ে “প্রত্যাবর্তন” বইটি রচিত। যা নিয়ে এসেছে সমকালীন প্রকাশন এবং বইয়ের গল্প গুলো সংকলিত করেছে সমকালীন সংকলন টিম। বইটি সম্পাদনা করেছেন তরুণ প্রজন্মের লেখক জনাব আরিফ আজাদ।
বইটিতে অনেক গুলো অন্ধকারের গল্প রয়েছে। যে গল্প গুলোর সমাপ্তি হয়েছে আলোর রেশ ধরে। পথভ্রষ্ট মানুষ গুলো ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে চলতে চলতে নিজেদের গন্তব্য করে নিয়েছিল জাহান্নামে। কিন্তু আল্লাহর ঐকান্তিক ইচ্ছায় হেদায়েতের আলোয় তারা ফিরে এসেছে রবের দিকে। যেখানে মহান আল্লাহ তাদেরকে ইউটার্ন করে জান্নাতের নূরের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এমন সব পথ হারানোর পথিকের পথ ফিরে পাওয়ার গল্পের সমাহার “প্রত্যাবর্তন” বইটি। যা অবশ্যই প্রতিটি মুসলমানের পড়া দরকার। যাতে তাদের গল্প গুলো যদি এমন হয়, তাহলে তারা যেন রবের দিকে ফিরে আসতে পারে। হতে পারে বইটি উঠতি জেনারেশন, যারা দ্বীন থেকে দূরে আছে, তাদের জন্য অনুপ্রেরণার পাথেয় হবে।
নারীদের জন্য ইসলামিক বই
একজন বিখ্যাত দার্শনিক বলেছিলেন “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।” এই কথাটির গুরুত্ব খুবই অপরিসীম। ইসলামও নারীদের ব্যাপক মর্যাদা দান করেছেন। একজন নারী মানেই একজন মা এবং একটি পরিবার। আর পৃথিবীতে পরিবারই হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র। তাই একজন একজন নারী কিংবা মা যদি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে ইমান আমলের অধিকারী হয়। তাহলে ঐ পরিবারের সবাই দ্বীনি পথে চলতে পারবে। এইজন্য প্রতিটি নারীকে ইসলামিক বই পড়া আবশ্যক।
৯) পোশাক পর্দা ও দেহ সজ্জা
ইমান আকিদার পর একজন নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পর্দা। কেননা অধিকাংশ নারীকেই আল্লাহর রাসুল (সা.) জাহান্নামে জ্বলতে দেখেছেন। অথচ আমাদের অনেক মা বোনই জানেনা ‘সতর’ এর সংজ্ঞা কী? এর পরিধি কতটুকু? কেননা দিনদিন যুগের সাথে সাথে সতর কিংবা পর্দার সংজ্ঞা বদলাচ্ছে। কিন্তু ইসলামে কোনো কিছুই বদলায় না। তাই একজন নারীর পর্দা এবং সাজসজ্জা নিয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। যা আমাদের প্রতিটি নারীর জানা উচিত।
যে নারীর পর্দা সম্পর্কে অবগত ও সতর্ক, সেই নারী ইসলামের অন্যান্য হুকুম আহকাম সহজেই মানতে পারে। তাই নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বই হলো “পোশাক পর্দা ও দেহ সজ্জা।” যার লেখক হচ্ছে খ্যাতিমান আলেম ড খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। এবং বইটি প্রকাশিত হয়েছে আস সুন্নাহ পাবলিকেশন্স থেকে। যেখানে লেখক অসম্ভব সাবলীলভাবে নারীদের পর্দা এবং সাজসজ্জা কেমন হওয়া উচিত এবং ইসলাম তাদের কতটুকু সাজসজ্জার অনুমতি দেয় এবং কেন এর বেশী অনুমতি দেয় না, কিংবা এর বেশী অনুমতি দিলে কী ক্ষতি হতে পারে তার সুনির্দিষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
তাই প্রতিটি নারীরই উচিত বইটি পড়া। কেননা দ্বীন মানার আগে দ্বীনে প্রবেশ করতে হবে। একজন নারী তখনই দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করে, যখন সে পর্দা করা শুরু করে। যার পর্দা সম্পর্কে জ্ঞান নেই, সে দ্বীনের মধ্যেই নেই। কেননা বেপর্দার কারণেই অধিকাংশ নারী জাহান্নামে যাবে এবং অন্যকেও জাহান্নামে নিবে।
১০) আদর্শ মুসলিম নারী
একজন নারী প্রথমত নিজ সত্ত্বায় নারী, মা স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, পুত্রবধূসহ আরও অনেক কিছু। তাই প্রতিটি নারীকে অনেক গুলো সম্পর্কের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হয়। তবে সবগুলো ছাপিয়ে একজন নারীর চিন্তা থাকা উচিত স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কীভাবে রাখা যায়। যে নারী তার স্রষ্টা তথা আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক রাখতে পারে, সে খুব সহজেই অন্যান্য সম্পর্ক গুলো আগলে রাখতে পারে। এমনই কিছু সম্পর্ক নিয়ে “আদর্শ মুসলিম নারী” বইটি রচিত হয়েছে। যার লেখক ড. মুহাম্মাদ আলী আল হাশেমী এবং অনুবাদক হচ্ছে মাসঊদুর রহমান নূর।
এই বইটিতে লেখক খুবই সুন্দর এবং সুচারুরূপে একজন নারীর সম্পর্ক গুলোর ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করেছেন। যা যেকোনো নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখক তার বইটিতে একজন নারীর সাথে অন্যান্যদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা বিভিন্ন অধ্যায়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যেমন একজন মুসলিম নারী তার-
(১) স্রষ্টার সাথে
(২) নিজের সাথে,
(৩) পিতামাতার সাথে,
(৪) স্বামীর সাথে,
(৫) সন্তানদের সাথে,
(৬) জামাতা ও পুত্রবধুদের সাথে,
(৭) আত্মীয়-স্বজনের সাথে,
(৮) প্রতিবেশীর সাথে,
(৯) বোন-বান্ধবীর সাথে ও
(১০) তার সমাজের সাথে কি ধরনের সম্পর্ক রাখবে তা বিভিন্ন রেফারেন্সসহ উল্লেখ করেছেন। আধুনিক ডিজিটাল ফেতনার যুগে মুসলিম সমাজের নারীরা যখন প্রতিটি পদে পদে শয়তানের চক্রান্তের শিকার, তখন তাদেরকে আলোর পথ দেখাতে বইটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে আশাকরি। নিচের বইটিও দেখতে পারেন-
কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত মুসলিম নারী
ইসলামিক প্রয়োজনীয় বইগুলোকে কখনোই সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যাবে না। তাই যখনই যেভাবে সময় পাওয়া যায় তখনই ইমান আমলের নিয়তে আমাদের বই পড়া উচিত।
প্রশ্নোত্তরঃ
বাংলাদেশের সেরা ইসলামিক লেখক কে?
আধুনিক যুগে যেখানে ইমান আনা এবং আমল করার চেয়ে ইমান ধরে রাখা কষ্টকর, সেখানে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ইসলামি যুগোপযোগী লেখা লিখে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হচ্ছেন, জনাব “আরিফ আজাদ” যিনি একাধারে আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্তদের ইসলামের দাওআত দিচ্ছেন। একইসাথে ইসলাম বিরোধী নাস্তিক বামপন্থীদেরও সমানভাবে জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। যা একজন প্রকৃত দাঈের কাজ।
ইসলামে নারী বিষয়ক সেরা বই কী কী?
আধুনিক সময়ে নিম্নোক্ত নারী বিষয়ক বইগুলো খুবই জনপ্রিয় এবং সমাদৃত। যা আমাদের প্রতিটি বোনের পড়া উচিত।
লেখক আরিফ আজাদের বই সমূহের নাম কী কী?
সেরা ইসলামিক বই তালিকায় আর কোন বইগুলো যুক্ত করা যেতে পারে?
আগে প্রকাশিত আরো কিছু ইসলামিক লেখা পড়ুন-
- রাসূলের (সা.) আদর্শ এবং অনুসরণই হচ্ছে ইসলাম
- যে আমলে সালাতের নেকী বৃদ্ধি পায়
- তাওহিদ কী? কীভাবে আল্লাহর তাওহিদ ক্ষুন্ন হয়
- আল্লাহর কাছে যারা সফল
- কুরআন বিমুখীতার পরিনতি
- কুরআন কেন নাযিল হয়েছে
- আল্লাহ্র হিদায়াত পাওয়ার শর্তসমূহ কী
ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব পড়ার
জাযাকাল্লাহ খাইরান