নামাজ বা নামায মূলত একটি ফার্সি শব্দ। এটি আরবি শব্দ সালাত বা সালাহ এর ফার্সি প্রতিশব্দ। কিন্তু ইসলামে নামাজ শব্দের কোনো মূল্য নেই। তবে সালাত বোঝাতে আমাদের উপমহাদেশে নামাজ ব্যবহৃত হয়। আরবি ٱلصَّلَوَات আস-সালাওয়াত এর অর্থ হলো- ‘দোয়া’, ‘প্রার্থনা’, ‘প্রশংসা’ বা ‘আশীর্বাদ’ ইত্যাদি। আর এই একই কাজগুলোই আমরা নামাজে কিংবা সালাতে করে থাকি। এই কারণে নামাজ আমাদের ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম।
আর তাই প্রতিটি মুসলমানকে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। যে কারণে আমাদের সকল মুসলমানকে এই নামাজ বা সালাতের নিয়মাবলী জানা আবশ্যক। তাই আজ আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি সহি শুদ্ধ নামাজের নিয়মাবলী। আশাকরি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।
নামাজের নিয়মাবলী
আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলমানই হানাফি মাজহাবের অনুসরণ করে। তাই আমরা এখানে প্রসিদ্ধ হানাফি মাজহাবের অনুসরণেই নামাজ আদায় করার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের এটা জেনে রাখা উচিত যে, ইসলামে যে চারজন প্রসিদ্ধ ইমাম রয়েছেন, তাদের অনুসরণেও নামাজ আদায় করলে তা ইনশাআল্লাহ সহি শুদ্ধ হবে। এছাড়াও সালাফে সালেহীনের অনুসরণেও নামাজ আদায় করলে তাও শুদ্ধ হবে। প্রত্যেক ইমাম এবং মুহাদ্দিসগণ প্রতিটি আমলের জন্য হাদিসের অনুসরণ করেছেন। সুতরাং আমরা যেকোনো ইমামের অনুসরণে সালাত বা নামাজ আদায় করলে তা ইনশাআল্লাহ কবুল হবে।
নামাজের জন্য ওজু
নামাজ আদায়ের জন্য আমাদের শুরুতেই ওজু করে নিতে হবে। ওজু করার পর আমাদের নামাজের জায়গায় নির্দিষ্ট করতে হবে। কেননা নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় নামাজ আদায় হবে না। পবিত্র জায়গায় আমাদের ওজু সহকারে দাঁড়াতে হবে।
নামাজের জন্য নিয়ত
এরপরে আমাদের কাজ হবে নিয়ত করা। এই করা নিয়ে আমাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। যার অর্থ হলো, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। আমরা যখন নামাজের জন্য ওজু করি, তখনই আমাদের নিয়ত থাকে যে আমি যোহরের নামাজের জন্য কিংবা আসরের নামাজের জন্য ওজু করছি। সুতরাং নিয়ত হচ্ছে আমাদের মনে মনে। নিয়ত সংক্রান্ত আমাদের উপমহাদেশে ব্যাপক ভুল ভ্রান্তি প্রচলিত আছে। যা কখনোই রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ নয়।
সুতরাং আমরা যখন যোহরের সুন্নাত আদায়ের নিয়ত করব। তখন মনে শুধু এতটুকু বললেই হবে যে আমি যোহরের সুন্নাত আদায় করার জন্য নামাজে দাঁড়িয়েছি। এই নিয়ত করার পর আমাদের কাজ হবে দুই হাত কান পর্যন্ত তুলে আল্লাহু আকবর বলে তাকবীরের তাহরিমা বাঁধা।
তাকবীরে তাহরিমা বাঁধার জন্য আমরা ডান হাত বাম হাতের উপর রাখব। এই হাত বাঁধার ব্যাপারে ইমামদের সামান্য মত পার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফার মত হলো বাম হাতের উপর ডান হাত দিয়ে নাভির নিচে ছেড়ে দিতে হবে।
তবে বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিসে বাম হাতের উপর ডান রেখে নাভির উপরে বা বুকের কাছাকাছি রাখার কথা এসেছে। সুতরাং উভয় পদ্ধতিই আমল করলে নামাজ ইনশাআল্লাহ আদায় হবে।
তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার পর আমাদের কাজ হবে মনে মনে সানা পড়া। সানা হচ্ছে দোয়া। পবিত্র হাদিসে অসংখ্য সানার দোয়া বর্ণিত হয়েছে। যা আমরা পরবর্তীতে আপনাদের জন্য দিব। (নাসায়ি, হাদিস নং : ৮৮৯)
সানা পড়ার পর মনে পড়তে হবে আউজু’ বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহ্-মানির রাহিম পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)
এরপর আমাদের কাজ হচ্ছে সূরা ফাতিহা পড়া। মনে রাখতে হবে যে প্রতি রাকাত নামাজেই সুরা ফাতেহা অবশ্যই পড়তে হবে। এরপর সুরা ফাতেহা পড়ার পর আমাদের কাজ হবে পবিত্র কুরআন থেকে যেকোনো একটি সুরা পড়া। অথবা যদি আমরা কোনো সুরা পুরো না জানি, তাহলে যেকোনো সুরার কমপক্ষে তিন আয়াত পর্যন্ত পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৬৯৫)
এরপর সুরা পড়া শেষ হলে আমাদের আল্লাহু আকবর বলে রুকুকে যেতে হবে। রুকুতে আমরা আমাদের দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখতে হবে। হাতের আঙ্গুল থাকবে ফাঁকা। হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭) মাথা থাকবে নিতম্বের বরাবর। মাথা এবং পিঠ থাকবে সোজা। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৭২৯)
এই রুকুতে আমাদের কমপক্ষে তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার একটি তাসবিহ পাঠ করতে হবে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ তাসবিহ হলো “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম।” (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)
রুকু করা শেষ হলে সেখান থেকে “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। মাথা তুলে দাঁড়ানোর সময় একটি তাসবিহ বা দোয়া রয়েছে। সচারচর যে দোয়া পড়া হয় সেটা হচ্ছে, “রাব্বানা লাকাল হামদ।” বলতে হবে।
এরপর আবার তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৪৭)
আমরা যখন সিজদায় যাব তখন সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু মাটিতে রাখব, তারপর হাত রাখব, এরপর উভয় হাতের ফাঁকা জায়গার মধ্যে প্রথমে নাক এবং পরে কপাল মাটিতে রাখব। আমাদের পেট থেকে পায়ের রান এবং হাতের বাহুকে মাটি থেকে পৃথক রাখতে হবে। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৫)
সিজদায় যাওয়ার পর সেখানে আমরা কমপক্ষে তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)
এভাবে প্রথম সিজদা দেওয়া শেষ হলে, আবার তাকবির আল্লাহু আকবর বলে আমরা সিজদা থেকে উঠার জন্য সর্বপ্রথম মাথা তুলে দুই হাত রানের ওপর রেখে ধীরস্থির হয়ে বসে পড়ব। এরপর আবার আল্লাহু আকবর বলে তাকবির দিয়ে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও এরপর কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে।
আমাদের যখন দ্বিতীয় সিজদা দেওয়া শেষ হবে, তখন আমরা জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি আল্লাহু আকবর তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যাব। এই কাজ সম্পন্ন করলে আমাদের প্রথম রাকাত নামাজ বা এক রাকাত নামাজ সম্পন্ন হবে।
এবার দ্বিতীয় রাকাতের জন্য আমরা দাঁড়াব। এখন আমাদের আর হাত তুলতে হবে না। দ্বিতীয়বার ছানাও পড়া লাগবে না, আউজুবিল্লাহও পড়তে হবে না। তবে আগের মতোই আমাদের সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। সুরা পড়া শেষ হলে আগের নিয়মে রুকু-সিজদা আদায় করতে হবে।
দ্বিতীয় সিজদা যখন আমাদের শেষ হবে। তখন আমাদের ডান পা খাড়া করে বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যেতে হবে। এই অবস্থায় আমাদের হাত রাখতে হবে রানের ওপর। এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস নং : ৯১২)।এখন আমরা যখন দুই রাকাত শেষে বৈঠক দিব। তখন আমরা বৈঠকে তাশাহুদ পড়ব। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৮) পবিত্র হাদিসে বেশ কয়েকটি তাশাহুদ পাওয়া যায়। আমার প্রসিদ্ধ তাশাহুদটি এখানে দিয়েছি।
আরও পড়ুন : হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর জীবনী
নামাজের তাশাহুদ (আত-তাহিয়্যাত)
اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ، وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু আস্সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রা’হমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্সালা-মু ‘আলাইনা- ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু
অর্থ :সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ্র জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহ্র নেক বান্দাগণের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসুল।
বিভিন্ন সাহাবী থেকে (বিভিন্ন শব্দে) তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পেছনে সালাত আদায়ের সময় বসলে বলতাম: আল্লাহ্র উপর সালাম। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) একদিন আমাদেরকে বললেন: আল্লাহ্ই হচ্ছেন সালাম (কাজেই, তাঁকে সালাম প্রদান করা ঠিক নয়)। অতএব, তোমরা যখন সালাতের মধ্যে বসবে তখন বলবে: (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে) রেফারেন্স: বুখারিঃ ৭৩৮১
এখানে উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদিসে তাশাহুদ পড়ার সময় রাসুল (সা.) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুল তুলতেন এবং নাড়াতেন এমন কথা এসেছে। তাই ইমাম হানিফা নির্ধারণ করেছেন যে, তাশাহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ যখন পড়ার হবে, তখন শাহাদাত আঙুল উঁচু করে উপরের দিকে ইশারা করতে হবে। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল পুনরায় নামিয়ে ফেলতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন হাদিসের আলোকে অন্যান্য ইমামগণ তাশাহুদে দোয়া পড়ার সময়, যে জায়গায় যে জায়গায় দোয়া রয়েছে, সেইসব জায়গায় আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার জন্য বলে থাকেন। অর্থাৎ আঙ্গুল উপর নিচ করে নাড়ানো। তবে এইসব কিছুই হচ্ছে সুন্নাহ। সুতরাং এগুলো নিয়ে কখনোই বাড়াবাড়ি যেন আমরা না করি।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে আমাদের দুই রাকাত নামাজ শেষ হয়ে যাবে। যদি আমাদের নামাজ দুই রাকাতের হয়, তাহলে আমরা তাশাহুদ পড়ার পর একটি দরুদ শরিফ পাঠ করব।
নামাজের দরুদ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সাল্লাইতা ‘আলা- ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা ‘হামীদুম্ মাজীদ
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করো, যেভাবে রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ্! বরকত অবতীর্ণ করো মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, যেভাবে তুমি বরকত নাযিল করেছো ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।
কা‘ব্ ইবনু ‘উজ্রহ্ (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রাসুল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরুদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ্ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি (ﷺ) বললেন, তোমরা এভাবে বলো – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে) (বুখারি: ৩৩৭০মুসলিম, হাদিস নং : ৬১৩)
আমাদের দরুদ শরিফ পাঠ করা হয়ে গেলে, এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যে কোনো একটি দোয়া আমাদের পাঠ করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)
এক্ষেত্রে আমরা প্রসিদ্ধ দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে পারি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)
নামাজে দোয়া মাসুরার নিয়মে:
দোয়ায়ে মাসুরা সম্পর্কে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা আমি নামাযের মধ্যে পড়ব, তখন তিনি এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন –
اَللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালাম্তু নাফ্সী যুলমান কাছিরান ওয়ালা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা, ফাগ্ফিরুলী মাগফিরাতান মিন ‘ইনদিকা ওয়ার’হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর্ রাহীম
অর্থ :হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই ক্ষমা করতে পারে না, সুতরাং আপনি নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাকে রহম করুন, আপনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (রেফারেন্স: বুখারিঃ ৮৩৪)
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজে আছি। এখন আমরা দোয়া মাসুরা শেষ করে একবার ডানে এবং একবার বামে সালাম ফেরালেই আমাদের দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ শেষ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : হযরত ওমর (রা.) এর জীবনী
যদি আমাদের নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট মাগরিবের নামাজ হয়, তখন আমরা প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর আর কিছু পড়বে না। এবং তাশাহুদ শেষ করেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাব। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪) এবং তৃতীয় রাকাতে শুধু মাত্র সুরা ফাতিহা পড়ব। এই সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমরা যখন তৃতীয় রাকাতে যাব, তখন আগের মতো রুকু সিজদা করে বসে যাব। তৃতীয় রাকাতে বসার পর তাশাহুদ পড়ে দরুদ পড়ব এবং যেকোনো একটি দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ সমাপ্ত করব।
আর আমাদের নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয় তখন আমরা তৃতীয় রাকাতে রুকু সিজদা করে আল্লাহু আকবর বলে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে যাব। দাঁড়িয়ে আবার সুরা ফাতেহা পড়ব। সুরা ফাতেহার সাথে কোনো সুরা মেলাতে হবে না। তারপর শেষ তথা চতুর্থ রাকাতে আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যাব। রুকু শেষ করে আগের নিয়মে সিজদায় যাব। সিজদা শেষ করে বসব। বসার পর তাশাহুদ দরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করব।
নামাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়ার নিয়ম
আমাদের উপমহাদেশে আমরা গদবাঁধা দোয়া পড়ে নামাজ আদায় করি। অথচ পবিত্র হাদিসে রাসুল (সা.) খুব সুন্দর সুন্দর অসংখ্য দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যা আমরা নামাজে পাঠ করতে পারলে আমাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই পাঠকের জন্য আমরা এইসব দোয়া গুলো এখানে দিচ্ছি। আশাকরি এইসব দোয়া আপনাদের উপকারে আসবে।
শুরুতেই আমরা জানব তাকবিরে তাহরিমার পর সানার পড়ার দোয়া।
নামাজের সানা দোয়া
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلٰهَ غَيْرُكَ
সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা- ইলা-হা গইরুক
হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার প্রতিপত্তি অতি উচ্চ। আর আপনি ব্যতীত অন্য কোনো হক্ব ইলাহ্ নেই। (রেফারেন্স: মুসলিমঃ ৩৯৯)
اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
আল্লা-হুম্মা, বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা- বা-‘আদ্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা, নাক্কিনী মিনাল খাতা-ইয়া কামা- ইউনাক্কাস সাওবুল আব্ইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাতা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছ ছাল্জি ওয়াল বারাদ
হে আল্লাহ্, আপনি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন আমার ও আমার পাপের মধ্যে যেমন দূরত্ব আপনি রেখেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে (আমাকে সকল প্রকার পাপ থেকে শত যোজন দূরে থাকার তাওফীক প্রদান করুন)। হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করুন পাপ থেকে, যেমনভাবে পরিচ্ছন্ন করা হয় ধবধবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে। হে আল্লাহ্ আপনি ধৌত করুন আমার পাপরাশী পানি, বরফ এবং তুষার-শিলা দ্বারা (আমার হৃদয়কে পাপমুক্তি ও অনন্ত প্রশান্তি প্রদান করুন)।
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার পরে কিরাআতের করার আগে অল্প সময় চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ), আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে নীরব থাকেন, এ সময়ে আপনি কী বলেন? তিনি (ﷺ) বললেন, আমি এ সময়ে বলি: (উপরের বাক্যগুলো) (রেফারেন্স: বুখারিঃ ৭৪৪)
اَللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اِهْدِنِيْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِيْ مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ
আল্লা-হুম্মা, রাব্বা জিবরা-ঈল ওয়া মীকা-ঈল ওয়া ইসরা-ফীল, ফা-তিরাস সামাওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি, আন্তা তা‘হ্কুমু বাইনা ‘ইবা-দিকা ফীমা- কা-নূ ফীহি ইয়া‘খ্তালিফূন, ইহ্দিনী লিমা‘খ্তুলিফা ফীহি মিনাল ‘হাক্কি বিইয্নিকা ইন্নাকা তাহ্দী মান্ তাশা-উ ইলা স্বিরা-ত্বিন মুস্তাক্বীম
অর্থ :হে আল্লাহ্, জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, আপনার বান্দারা যে সকল বিষয় নিয়ে মতভেদ করত তাদের মধ্যে সে বিষয়ে আপনিই ফয়সালা প্রদান করবেন। যে সকল বিষয়ে সত্য বা হক্ক নির্ধারণে মতভেদ হয়েছে সে সকল বিষয়ে আপনি আপনার অনুমতিতে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আপনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) রাতের (তাহাজ্জুদের) সালাতের শুরুতে এ দোয়াটি পাঠ করতেন। (রেফারেন্স: মুসলিমঃ ৭৭০)
اَللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا، لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ.
আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, আনতা রব্বী ওয়া আনা ‘আবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযাম্বী ফাগফির লী যুনূবী জামী‘আন ইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ওয়াহ্দিনী লিআ’হ্সানিল আখলা-ক্বি, লা- ইয়াহ্দী লিআ’হ্সানিহা ইল্লা- আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা- আনতা
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনিই অধিপতি, আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমার রব্ব, আমি আপনার বান্দা। আমি আমার নিজের প্রতি অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপসমূহ স্বীকার করছি। সুতরাং আপনি আমার সমুদয় গুনাহ মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করতে পারে না। আর আপনি আমাকে সর্বোত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত করুন, আপনি ছাড়া আর কেউ উত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত করতে পারে না। আর আপনি আমার থেকে আমার খারাপ চরিত্রগুলো দূরীভূত করুন, আপনি ব্যতীত আর কেউ সে খারাপ চরিত্রগুলো অপসারিত করতে পারে না। (রেফারেন্স: মুসলিমঃ ৭৭১)
لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ بِيَـدَيْكَ، وَالشَّـرُّ لَيْسَ إِلَيْـكَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল-খাইরু কুল্লুহু বিয়াদাইকা, ওয়াশ্শাররু লাইসা ইলাইকা। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবা-রাক্তা ওয়া তা‘আ-লাইতা। আসতাগ্ফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক
অর্থ : আমি আপনার হুকুম মানার জন্য সদা-সর্বদা হাজির, সকল কল্যাণই আপনার দু’হাতে নিহিত। অকল্যাণ আপনার দিকে নয় (অর্থাৎ মন্দকে আপনার দিকে সম্পৃক্ত করা উচিত নয়, অথবা মন্দ দ্বারা আপনার নিকটবর্তী হওয়া যায় না, বা মন্দ আপনার দিকে উঠে না)। আমি আপনার দ্বারাই (প্রতিষ্ঠিত আছি, সহযোগিতা পেয়ে থাকি) এবং আপনার দিকেই (আমার সকল প্রবণতা, বা আমার প্রত্যাবর্তন)। আপনি বরকতময় এবং আপনি সুঊচ্চ। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং আপনার কাছে তাওবাহ্ করছি। (রেফারেন্স: মুসলিমঃ ৭৭১)
আরও পড়ুন : জুমা মোবারক, জুমার দিনের ফজিলত করণীয় এবং বর্জনীয়
নামাজে রুকুর দোয়া সমূহ
নিম্নের দোয়াটি কমপক্ষে ৩ বার পাঠ করতে হবে
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ
সুব‘হা-না রাব্বিয়াল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী
আমি আমার মহান প্রভুর প্রশংসা-সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (আবু দাউদঃ ৮৭০)
কমপক্ষে ৩ বার এ দোয়া পাঠ করতে হবে।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
সুব‘হা-না রাব্বিয়াল ‘আযীম
মহাপবিত্র আমার মহান প্রভু।
মনের আবেগ নিয়ে এ ঘোষণা বার বার দিতে হবে। কমপক্ষে ৩ বার এ তাসবীহ পাঠ করা রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর আচরিত ও নির্দেশিত কর্ম। অধিকাংশ বর্ণনায় “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” এবং কোনো কোনো হাদীসে “সুবাহানা রাব্বিয়াল আযীম ওয়া বিহামদিহী” বর্ণিত হয়েছে। (তিরমিযীঃ ২৬২)
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ
সুব্বু‘হুন ক্বুদ্দুসুন রাব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূ‘হ
মহাপবিত্র, মহামহিম, ফিরিশতাগণের এবং পবিত্ৰাত্মার প্রভু।
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) রুকু ও সিজদায় এটি পাঠ করতেন। (আবু দাউদঃ ৮৭২)
আউফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) রুকুতে বলতেন –
سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
সুবহা-নাযিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাহ
পবিত্র ওই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতা, সার্বভৌমত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী।
এরপর তিনি সিজদায় গিয়ে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিজদায় তিনি একই দোয়া পড়েন। তারপর সিজদা থেকে উঠে সূরা আল ইমরান ও অন্যান্য সূরা পাঠ করেন। (আবু দাউদঃ ৮৭৩)
اَللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِيْ وَبَصَرِيْ وَمُخِّيْ وَعِظَامِيْ وَعَصَبِيْ
আল্ল-হুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়া বিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আস্লামতু, খাশা‘আ লাকা সাম’ই ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘ইযা-মী ওয়া ‘আসাবী
হে আল্লাহ্, আপনারই জন্য রুকু করেছি, এবং আপনার উপরেই ঈমান এনেছি এবং আপনারই কাছে সমর্পিত হয়েছি। ভক্তিতে অবনত হয়েছে আপনার জন্য আমার শ্রবণ, আমার দৃষ্টি, আমার মস্তিষ্ক, আমার অস্থি ও আমার স্নায়ুতন্ত্র।
হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) রুকুতে এ কথাগুলো বলতেন। (আবু দাউদঃ ৭৬০)
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস্‘ঊদ্ (রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) রুকু এবং সিজদায় বলতেন –
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ اِلَيْكَ
সুব্হা-নাকা ওয়া বিহাম্দিকা আস্তাগ্ফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক
তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি। তোমার নিকট ক্ষমা চাই ও তোমার নিকট তাওবা করি। (সিলসিলা সহীহাঃ ৩০৩২)
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুম্মাগফির লী
হে আমাদের রব আল্লাহ্! তুমি ত্রুটিমুক্ত। প্রশংসা সবই তোমার। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দাও। (বুখারিঃ ৭৯৪)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ) রুকু ও সিজদায় গিয়ে বেশি বেশি বলতেন – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে)
اَللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، أَنْتَ رَبِّي، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَمُخِّي وَعَظْمِي وَعَصَبِي وَمَا اِسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَمِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আল্লাহুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, আনতা রাব্বি খাশা’আ লাকা সাম’ই ওয়া বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আযমী ওয়া ‘আসাবি ওয়া মা ইসতাক্বাল্লাত বিহি ক্বাদামী লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন
হে আল্লাহ আমি আপনার প্রতি রুকু করেছি, ঈমান এনেছি, আত্মসমর্পন করেছি। আপনি আমার রব্ব, আমার কর্ণ-চক্ষু, মস্তিস্ক, আমার হাড়, রগ-মেরুদণ্ড এবং আমার পা, যা বহন করছে (অর্থাৎ আমার অস্তিত্ব) সবই আল্লাহ রাব্দুল আলামিনের সামনে অবনমিত হয়েছে। (নুখাবুল আফকার ৪/২৪৭
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া-বিহাম্দিকা লা- ইলাহা- ইল্লা- আন্তা।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই। (নাসায়ীঃ ১১৩১)
আরও পড়ুন : ইসলামিক ফেইসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউলোড
নামাজের রুকু থেকে উঠার দোয়া
রুকু থেকে উঠার সময় বলতে হয় –
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
সামিয়াল্লা-হু লিমান হামিদাহ
আল্লাহ্ তার কথা শোনেন যে তাঁর প্রশংসা করে। (বুখারিঃ ৭৯৬)
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ، وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ، اَللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
আল্লা-হুম্মা রাব্বনা- লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়া-তি ওয়া মিলআল আরদ্বি ওয়া মিলআ মা- শি‘তা মিন শাইয়িন বা’দু। আহলাছ ছানা-য়ী ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা- ক্বা-লাল ‘আবদু, ওয়া কুল্লুনা- লাকা ‘আবদুন। আল্লা-হুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা- মু‘তিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু
হে আল্লাহ্! তোমার জন্য আসমান যমীন পরিপূর্ণ প্রশংসা আর এর ব্যতীত আরো অন্য বস্তু পরিপূর্ণ প্রশংসাও-যা তুমি চাও। তুমি প্রশংসা ও মর্যাদার একমাত্র অধিকারী, এটা বড়ই ন্যায্য কথা যা তোমার বান্দা বলল, আমরা সকলেই তোমারই বান্দা। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের যা দেবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই এবং তুমি যা দেবে না তা দেবারও কেউ নেই। কোন শক্তিমানই সাহায্য করতে পারে না কারণ সকল শক্তিই তোমারই করায়ত্তে। (মুসলিমঃ ৪৭৭)
রুকুর পরে সোজা হয়ে দণ্ডায়মান অবস্থায় পড়ার দোয়া
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে রুকুর দোয়াটি চারভাবে বর্ণিত হয়েছে –
(اَللَّهُمَّ) رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
(১) রাব্বানা- লাকাল ‘হামদ
(২) আল্লা-হুম্মা রাব্বানা- লাকাল ‘হামদ’
(১) হে আমাদের প্রভু, আপনার জন্যই প্রশংসা।
(২) হে আল্লাহ্, আমাদের প্রভু, আপনার জন্যই প্রশংসা। (বুখারিঃ ৭৯৬)
(اَللَّهُمَّ) رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
(১) রাব্বানা- ওয়া লাকাল ‘হামদ
(২) আল্লা-হুম্মা রাব্বানা- ওয়া লাকাল ‘হামদ’
(১) হে আমাদের প্রভু, এবং আপনার জন্যই প্রশংসা।
(২) হে আল্লাহ্, আমাদের প্রভু, এবং আপনার জন্যই প্রশংসা।
রুকু থেকে উঠে পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরে কয়েক মুহূর্ত পরিপূর্ণ সোজা দণ্ডায়মান থাকা ওয়াজিব। পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগেই সিজদা করলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। এসময় উপরের বাক্যটি বলতে হবে। চারটি বাক্যের যে কোনো বাক্য বললেই সুন্নাত আদায় হবে। একেক সময় একেক বাক্য বলাই উত্তম। (বুখারিঃ ৭৯৫)
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ
রাব্বানা- ওয়া লাকাল ‘হামদ, ‘হামদান কাছীরান ত্বাইয়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ
হে আমাদের প্রভু, এবং আপনারই প্রশংসা, অশেষ প্রশংসা, পবিত্র ও বরকতময় প্রশংসা। (বুখারিঃ ৭৯৯)
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ
আল্লা-হুম্মা রাব্বানা- লাকাল ‘হামদু মিলআস সামাওয়া-তি ওয়া মিলআল আরদ্বি ওয়া মিলআ মা- বাইনাহুমা-, ওয়া মিলআ মা- শি‘তা মিন শাইয়িন বা‘দু
হে আল্লাহ্, আমাদের প্রভু, আপনার জন্যই প্রশংসা, আকাশসমূহ পরিপূর্ণ করে, পৃথিবী পরিপূর্ণ করে, উভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপূর্ণ করে এবং এরপর আপনি যা কিছু ইচ্ছা করেন তা পরিপূর্ণ করে প্রশংসা আপনার।
ইবনু আবী আউফা (র), ইবনু আব্বাস (রা.), আলী (রা.) ও অন্যান্য সাহাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এ বাক্যগুলো বলতেন। (মুসলিমঃ ৪৭৬)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাছিরান ত্বায়্যিবান মুবারাকান ফিহি মুবারাকান ‘আলাইহি কামা ইউহিব্বু রাব্বুনা ওয়া ইয়ারদ্বা
আল্লাহ্র জন্যই অধিকাধিক পবিত্র ও বরকতময় সকল প্রশংসা, যার উপর রয়েছে বরকত যেমনটা আমাদের রব্ব ভালোবাসেন ও সন্তুষ্ট হোন
রিফা’ ইবন রাফি’ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। তখন আমি হাঁচি দিলাম এবং বললাম- (উপরে দোয়াটি উল্লেখিত হয়েছে) রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সালাত সমাপ্ত করে ফিরে বললেন, সালাতে কে কথা বলেছে? তখন কেউই উত্তর দিল না। তিনি দ্বিতীয়বার বললেন, কে সালাতে তা বলেছে? তখন রিফাআ ইবন রাফি ইবন আফরা (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি বলেছি। তিনি বললেন, তুমি কি বলেছ? তিনি বললেন, আমি বলেছি- (উপরে দোয়াটি উল্লেখিত হয়েছে) তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! ত্রিশজনের বেশি ফেরেশতা তা নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে, কে তা নিয়ে উপরে উঠবে। (হাসান। সুনান নাসাঈঃ ৯৩১)
لِرَبِّيَ الْحَمْدُ
লি-রব্বিয়াল হামদ
আমার পালনকর্তার জন্যই সমস্ত প্রশংসা! (আবু দাউদঃ ৮৭৪)
নামাজের সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করা
পবিত্র হাদিসে সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, মানুষ সিজদায় সবচেয়ে বেশী তার প্রতিপালকের নিকটে হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। (মুসলিমঃ ৪৮২)
নামাজের সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ
ইবনু ‘আব্বাস্ (রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, আমাকে রুকু ও সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে রুকুতে তোমরা আল্লাহ্র বড়ত্ব বর্ণনা করো। আর সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। তোমাদের দোয়া ক্ববুলের জন্য সিজদাহ্ উপযুক্ত স্থান’। (মুসলিমঃ ৪৭৯)
উপরোক্ত হাদীসদ্বয় থেকে এটা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করতে হবে এবং সিজদায় যে দোয়া করা হয়, ইনশাআল্লাহ তা কবুল হয়। অতএব, কুরআনের দোয়া ব্যতীত হাদীসের যে কোন দোয়া করা যায়। রুকু-সিজদায় কুরআনী কোন দোয়া পড়া যাবে না।
ধীরস্থিরভাবে সিজদার গুরুত্ব
কাতাদাহ্ (রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সে যে সালাত চুরি করে। সাহাবীগণ বললেন, কিভাবে সালাত চুরি করে? রাসুল (ﷺ) বললেন, যে তার রুকু-সিজদা পূর্ণ করে না। (মিশকাতঃ ৮৮৫)
নামাজের সিজদার দোয়া সমূহ
কমপক্ষে তিনবার বলতে হবে
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
সুব্‘হা-না রাব্বিয়াল আ’লা-
মহাপবিত্র আমার প্রভু যিনি সর্বোচ্চ।
মনের আবেগ নিয়ে এ ঘোষণা বার বার দিতে হবে। কমপক্ষে ৩ বার এ তাসবীহ পাঠ করা রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর আচরিত ও নির্দেশিত কর্ম। অধিকাংশ বর্ণনায় “সুব্হানা রাব্বিয়াল আ‘লা” এবং কোনো কোনো হাদীসে “সুবাহানা রাব্বিয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহী” বর্ণিত হয়েছে।
রহমত বা দয়া সংক্রান্ত প্রত্যেকটি আয়াত পাঠ করার পরপর তিনি থেমে (আল্লাহ্র কাছে তা) চেয়েছেন, এবং শাস্তি সংক্রান্ত প্রত্যেকটি আয়াত শেষ করার পর থেমে (আল্লাহ্র কাছে তা থেকে) আশ্রয় চেয়েছেন। (মুসলিমঃ ৭৭২
কমপক্ষে তিনবার বলতে হবে,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ
সুব্‘হা-না রাব্বিয়াল আ’লা- ওয়া বিহামদিহী
মহাপবিত্র আমার প্রভু যিনি সর্বোচ্চ এবং তার প্রশংসা-সহ। (আবু দাউদঃ ৮৭০)
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন: রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সিজদার মধ্যে বলতেন –
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِيْ كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَّتَهُ وَسِرَّهُ
আল্লা-হুম্মাগ্ ফির লী যাম্বী কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউআলাহু ওয়া আ-খিরাহু, ওয়া ‘আলা-নিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু
হে আল্লাহ্, আপনি ক্ষমা করুন আমার সকল পাপ, ছোট পাপ, বড় পাপ, প্রথম পাপ, শেষ পাপ, প্রকাশ্য পাপ, গোপন পাপ। (মুসলিমঃ ৪৮৩)
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুম্মাগফির লী
হে আমাদের রব আল্লাহ্! তুমি ত্রুটিমুক্ত। প্রশংসা সবই তোমার। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দাও। (বুখারিঃ ৭৯৪)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ) রুকু ও সিজদায় গিয়ে বেশি বেশি বলতেন – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে)
سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ، وَالْمَلَكُوتِ، وَالْكِبْرِيَاءِ، وَالْعَظَمَةِ
সুবহা-নাযিল জাবারূতি, ওয়াল মালাকুতি, ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাহ
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সার্বভৌমত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী।
আউফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ)-এর সঙ্গে রাতের সালাতে দাঁড়িয়ে যাই। তিনি (সালাতে) দাড়িয়ে সূরা আল-বাকারাহ্ পাঠ করেন। রহমত বা দয়া সংক্রান্ত কোনও আয়াত অতিক্রম করার পরপরই তিনি থেমে (আল্লাহ্র কাছে তা) চান, এবং শাস্তি সংক্রান্ত প্রত্যেকটি আয়াত শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি থেমে (আল্লাহ্র কাছে তা থেকে) আশ্রয় চান। এরপর, যেটুকু সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন, ততটুকু সময় ধরে রুকুতে থাকেন। এরপর তিনি সিজদায় গিয়ে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ তিনি রুকুতে ছিলেন। সিজদায় তিনি বলেন – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে) (আবূ দাঊদঃ ৮৭৩)
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
রাব্বিগ্-ফিরলী, রাব্বিগ্-ফিরলী
হে প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন, হে প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন।
হুযাইফা (রা.) বলেন, নবীজী (ﷺ) দু’সিজদার মাঝে বসে উপরের দোয়াটি বলতেন। (আবু দাউদঃ ৮৭৪)
নামাজের দুই সিজদার মধ্যবর্তী দোয়া
আমাদের উপমহাদেশের যারা মুসল্লি আছেন, তারা দুই সিজদা দেওয়ার মাঝে কোনো গ্যাপ দেন না। অর্থাৎ আমরা সিজদা একটি দেওয়ার সাথে সাথেই আরেকটি সিজদাতে চলে যায়। যা নামাজের ওয়াজিব ভঙ্গ হয়। আর ওয়াজিব ছুটে গেলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। তাই রাসুল (সা.) এর শিক্ষা হচ্ছে দুই সিজদার মাঝে কিছু সময় অতিবাহিত করা। নূন্যতম তিন তাসবিহ পর্যন্ত। আর সবচেয়ে ভালো হয় নিম্নোলিখিত দোয়া গুলো পড়তে পারলে। যা রাসুল (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
রাব্বিগ্-ফিরলী, রাব্বিগ্-ফিরলী
হে প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন, হে প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন।
হুযাইফা (রা.) বলেন, নবীজী (ﷺ) দু’সিজদার মাঝে বসে উপরের দোয়াটি বলতেন। (আবু দাউদঃ ৮৭৪)
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়া ‘আ-ফিনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারঝুক্বনী
হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি রহম করো, আমাকে সুস্থতা দান করো, সঠিক পথে পরিচালিত করো এবং রিযিক দান করো।
রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ‘দু সিজদার মাঝে বসে এ দোয়া বলতেন। (তিরমিযীঃ ২৮৪, হাসান। আবু দাউদঃ ৮৫০)
হাদিসে বর্ণিত নামাজের তাশাহুদ
আমরা পরিচিত যে তাশাহুদটি জানি যা আগেই উল্লেখ করার হয়েছে। এই তাশাহুদ ছাড়াও হাদিসে আরো কিছু তাশাহুদ উল্লেখ হয়েছে। যা আমরা নিয়মিত পড়তে পারলে উপকৃত হব।
اَلتَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
আত্তাহিয়্যা-তুল মুবা’রাকাতুস্ সালাওয়া-তু ত্বয়্যিবা-তু লিল্লাহি, আস্সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্সালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লা-হ।
বরকতময় মৌখিক ইবাদত, পবিত্র দৈহিক ইবাদত (সব) আল্লাহ তা’আলার জন্য। হে নবী, আপনার প্রতি আল্লাহ তা’আলার শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হােক। শান্তি বর্ষিত হােক আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া সত্য কোনাে মাবুদ নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। (মুসলিমঃ ৪০৩)
اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ اَلزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ، اَلطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَتُ لِلَّهِ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهٗ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ ورَسُولُهُ
আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি আয্-যাকিয়াতু লিল্লা-হি, আত্-তায়্যিবাতুস্ সালাওয়া-তু লিল্লা-হি, আস্সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্সালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।
সকল মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তা’আলার জন্য। সকল পবিত্র আমল আল্লাহ তা’আলার জন্য। সকল শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতও আল্লাহ তা’আলার জন্য। হে নবী, আপনার প্রতি আল্লাহ তা’আলার শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হােক। শান্তি বর্ষিত হােক আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া সত্য কোনাে মাবুদ নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। (সিফাতুস স্বলাহ, পৃঃ ১৬৩)
আরও পড়ুন : ১০টি সেরা ইসলামিক বই যা পড়া উচিত
আরেকটি প্রসিদ্ধ দরুদ শরিফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আঝওয়া-জিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা- সাল্লাইতা ‘আলা- আ-লি ইব্রাহীমা, ওয়া বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আঝওয়া-জিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা- বা-রাক্তা ‘আলা- আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ
হে আল্লাহ্! শান্তি বর্ষণ করো মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর, এবং তাঁর স্ত্রী ও বংশধরদের উপর, যেভাবে শান্তি বর্ষণ করেছো ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবারের উপর আর অনুগ্রহ বর্ষণ করো মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর, এবং তাঁর স্ত্রী ও বংশধরদের উপর, যেভাবে অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবারের উপর তুমি প্রশংসিত, মহিমান্বিত।
আবূ হামিদ সাইদি (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা জিজ্ঞাসা করেন, “হে আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ)! আমরা আপনার জন্য কীভাবে দরুদ পাঠ করব?” তখন নবী (ﷺ) বলেন, তোমরা বলো – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে, বুখারিঃ ৩৩৬৯)
হাদিসে অন্যান্য দোয়া মাসুরা
রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) নামাযের শেষে তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে এ কথাগুলো বলতেন –
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
আল্লা-হুম্মাগ্ফির লী মা- ক্বাদ্দামতু ওয়ামা- আখ্খারতু ওয়ামা- আস্রারতু ওয়ামা- আ’লান্তু ওয়ামা- আস্রাফতু ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখ্খিরু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা
হে আল্লাহ্, আপনি ক্ষমা করে দেন আমার আগের পাপ, পরের পাপ, গোপন পাপ, প্রকাশ্য পাপ, আমার বাড়াবাড়ি এবং যে সকল পাপের কথা আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন। আপনিই অগ্রবর্তী করেন এবং আপনিই পিছিয়ে দেন। আপনি ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই।
তাশাহুদের পর সালাম ফেরানোর আগে, আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ) সব শেষে যা পড়তেন তার মধ্যে ছিল এটি। (মুসলিমঃ ৭৭১)
আবু বকর (রা.) রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা আমি নামাযের মধ্যে পড়ব, তখন তিনি এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন –
اَللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালাম্তু নাফ্সী যুলমান কাছিরান ওয়ালা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা, ফাগ্ফিরুলী মাগফিরাতান মিন ‘ইনদিকা ওয়ার’হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর্ রাহীম
হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই ক্ষমা করতে পারে না, সুতরাং আপনি নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাকে রহম করুন, আপনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (বুখারিঃ ৮৩৪)
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ. اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَمِنَ الْمَغْرَمِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন্ ‘আযা-বি জাহান্নাম্ ওয়া আ‘উযু বিকা মিন্ ‘আযা-বিল্ ক্বাব্র, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন্ ফিত্নাতিল্ মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল্, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া- ওয়াল্ মামা-ত্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল্ মা’ছামি ওয়া মিনাল্ মাগ্রাম।
হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের ‘আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি, কবরের ‘আযাব্ হতে আশ্রয় চাচ্ছি, আশ্রয় চাচ্ছি কানা দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে এবং তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণের বোঝা হতে।
ইব্নু ‘আব্বাস্ (রা.) বলেন, নবী করীম (ﷺ) তাঁদেরকে (ছাহাবীগণকে) এই দোয়া শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তাঁদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে) (মুসলিমঃ ১/৪১২)
اَللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিক্রিকা ও শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবা-দাতিক
হে আল্লাহ্! আমাকে সাহায্য করো যেন তোমাকে স্মরণ রাখতে পারি, তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারি, এবং সুন্দরভাবে তোমার গোলামি করতে পারি।
মু‘আয ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহ্র শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহ্র শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে না – (দোয়াটি উপরে উল্লেখিত হয়েছে। (আবু দাউদঃ ১৫২২)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি সালাতে কী দোয়া করো?” লোকটি বলে, আমি তাশাহুদ পাঠ করে বলি –
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান না-র
হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাই; আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
আমি তো আর আপনার মতো সুন্দর করে দোয়া পড়তে পারি না, মুআযের মতোও না! “তখন নবী (ﷺ) বলেন, “আমাদের দোয়াও এর কাছাকাছি অর্থ বহন করে!” (ইবনে মাজাহঃ ৩৮৪৬)
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসুল (ﷺ)-এর সঙ্গে বসে আছি। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছে। সে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদের পর দোয়া করে। ওই দোয়ায় সে বলে –
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ إِنِّي أَسْأَلُكَ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্না লাকাল ‘হামদা লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল মান্না-নু, বাদী‘উস্ সামাওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু, ইন্নী আসআলুকা
হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই। প্রশংসা কেবল তোমারই; তুমি ছাড়া কোনও হক্ব ইলাহ নেই, তুমি মহানদাতা এবং আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী হে মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী! হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার কাছেই চাই।
তখন নবী (ﷺ) তার সাহাবীদের বলেন, “তোমরা কি জানো, সে কী দোয়া করেছে?” তারা বলেন, “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।” নবী (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্ত্বার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহ্কে তাঁর মহান নাম নিয়ে ডেকেছে, যে নাম নিয়ে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দেন। (নাসাঈঃ ১৩০০)
বুরাইদা ইবনুল হুসাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এক ব্যক্তিকে এ কথা বলে দোয়া করতে শুনেন –
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي اَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা বিআন্নী আশ্হাদু আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল্ আ’হাদুস্ স্বামাদুল্ লাযী লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইঊ্লাদ্ ওয়ালাম্ ইয়াকুন লাহু কুফুওয়ান্ আহাদ্
হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, একমাত্র তুমিই আল্লাহ্, তুমি ছাড়া কোনও হক্ব ইলাহ নেই, একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও থেকে জন্ম নেননি এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই।
তখন নবী (ﷺ) বলেন, “শপথ সেই সত্ত্বার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহ্কে তাঁর মহান নাম নিয়ে ডেকেছে, যে নাম নিয়ে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দেন।” (আবু দাঊদঃ ১৪৯৩)
বিতরের নামাজের কুনুতের দোয়া সমূহ
اَللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ، اَللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ، وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلَا نَكْفُرُكَ، وَنُؤْمِنُ بِكَ، وَنَخْضَعُ لَكَ، وَنَخْلَعُ مَنْ يَكْفُرُكَ
আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু, ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওনাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস‘আ, ওয়া নাহ্ফিদু, নারজূ রাহ্মাতাকা, ওয়া নাখশা ‘আযা-বাকা, ইন্না ‘আযা-বাকা বিলকা-ফিরীনা মুলহাক্ব। আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নুছনী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়ালা-নাকফুরুকা, ওয়ানূ’মিনু বিকা, ওয়া নাখদ্বা‘উ লাকা, ওয়ানাখলা‘উ মাই ইয়াকফুরুক
হে আল্লাহ্! আমরা আপনারই ইবাদত করি; আপনার জন্যই সালাত আদায় করি ও সিজদা করি; আমরা আপনার দিকেই দৌড়াই এবং দ্রুত অগ্রসর হই; আমরা আপনার করুণা লাভের আকাঙ্ক্ষা করি এবং আপনার শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয় আপনার শাস্তি কাফেরদেরকে স্পর্শ করবে। হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা চাই, আপনার উত্তম প্রশংসা করি, আপনার সাথে কুফরি করি না, আপনার উপর ঈমান আনি, আপনার প্রতি অনুগত হই, আর যে আপনার সাথে কুফরি করে আমরা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। (ইরওয়াউল গালীলঃ ২/১৭০, বায়হাকীঃ আস-সুনানুল কবরা- ২/২১১)
বিতর নামাজের কুনুতের দোয়া ২
رَبِّ أَعِنِّيْ وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ وَانْصُرْنِيْ وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ وَاهْدِنِيْ وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي (إِلَيَّ) وَانْصُرْنِيْ عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ رَبِّ اجْعَلْنِيْ لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا لَكَ رَهَّابًا لَكَ مِطْوَاعًا لَكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيْبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِيْ وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِيْ وَثَبِّتْ حُجَّتِيْ وَسَدِّدْ لِسَانِيْ وَاهْدِ قَلْبِيْ وَاسْلُلْ سَخِيْمَةَ صَدْرِيْ
রাব্বি আ‘ইন্নি ওয়ালা তু‘ইন আলাইয়্যা ওয়ান্-স্বুর্নী ওয়ালা তান্স্বুর আলাইয়্যা ওয়াম্কুর লি ওয়ালা তাম্কুর আলাইয়্যা ওয়াহ্দিনী ওয়া-ইয়াস্ ‘সিরিল হুদা লি (ইলাইয়্যা) ওয়ান্-স্বুরনী ‘আলা মান- বাগা ‘আলাইয়্যা রব্বিজ্ ‘আলনী লাকা শাক্বারান লাকা যাক্বারান লাকা রাহ্‘হাবান লাকা মিত্বওয়া-‘আন লাকা মুখ্বিতান ইলাইকা আওয়া-‘হান মুনিবান। রব্বি তাক্বাব্বাল তাওবাতি ওয়াগ্সিল ‘হাওবাতি ওয়াআজিব দা‘ওয়াতি ওয়া ‘ছাব্বিত হুজ্জাতি ওয়া ‘সাদ্দিদ লিসা-নী ওয়াহ্দী ক্বলবী ওয়াস্‘লুল সাখি‘মাতা স্বাদরি
হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে শক্তি-সহায়তা প্রদান করুন, আর আমার বিরুদ্ধে সহায়তা প্রদান করবেন না। এবং আপনি আমাকে সাহায্য করুন, আর আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন না। এবং আপনি আমার জন্য কৌশল করুন, আর আমার বিরুদ্ধে কৌশল করবেন না। এবং আপনি আমাকে হেদায়াত করুন এবং আমার জন্য হেদায়াত সহজ করুন। আপনি আমাকে সাহায্য করুন যে আমার উপর অত্যাচার করেছে তার বিরুদ্ধে। হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে বানিয়ে দিন আপনার জন্য অধিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী, আপনার অধিক যিক্রকারী, আপনার প্রতি অধিক ভীতিসম্পন্ন, আপনার অধিক আনুগত্যকারী, আপনার প্রতি বিনয়ী এবং আপনার দিকে বেশি বেশি তাওবা কারী। হে আমার প্রতিপালক, আপনি কবুল করুন আমার তাওবা, ধুয়ে দিন আমার পাপ, কবুল করুন আমার দোয়া, প্রতিষ্ঠিত করুন আমার প্রমাণ, পবিত্র-সুসংরক্ষিত করুন আমার জিহ্বা, সুপথে পরিচালিত করুন আমার অন্তর, বের করে দিন আমার অন্তরের সব হিংসা, বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতা।
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এ দোয়া করতেন। হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী আবুল হাসান তানাফিসী (রহ) বলেন, আমি হাদীসের রাবী ইমাম ওয়াকী ইবনুল জাররাহকে (রহ) [১৯৬ হি.] জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি বিতর-এর কুনুতে এ দোয়াটি বলব? তিনি বললেন: হ্যাঁ। (তিরমিজিঃ ৩৫৫১)
বিতর নামাজের কুনুতের দোয়া ৩
اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
আল্লা-হুম্মাহ্ দিনী ফীমান হাদাইতা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা, ওয়া বা-রিক লী ফীমা- আ’অ্তাইতা, ওয়া ক্বিনী শার্রা মা- ক্বাদ্বাইতা, ফাইন্নাকা তাক্বদ্বী, ওয়ালা- ইউক্বদ্বা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা- ইয়াযিল্লু মান ওয়া-লাইতা, ওয়ালা- ইয়া’ইঝ-ঝু মান ‘আ-দাইতা, তাবা-রাক্তা রাব্বানা- ওয়া তা’আ-লাইতা
হে আল্লাহ্, আমাকে হেদায়েত দান করুন, যাদেরকে আপনি হেদায়েত করেছেন তাদের সাথে। আমাকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ও সুস্থতা দান করুন, যাদেরকে আপনি নিরাপত্তা দান করেছেন তাদের সাথে। আমাকে ওলী হিসাবে গ্রহণ করুন (আমার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করুন), যাদেরকে আপনি ওলী হিসাবে গ্রহণ করেছেন তাদের সাথে। আপনি আমাকে যা কিছু প্রদান করেছেন তাতে বরকত প্রদান করুন। আপনি যা কিছু আমার ভাগ্যে নির্ধারণ করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কারণ আপনিই তো ভাগ্য নির্ধারণ করেন, আপনার বিষয় কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারে না। আপনি যাকে ওলী হিসাবে গ্রহণ করেছেন সে অপমানিত হবে না। আর আপনি যাকে শত্রু হিসাবে গ্রহণ করেছেন সে কখনো সম্মানিত হবে না। মহামহিমান্বিত বরকতময় আপনি, হে আমাদের প্রভু, মহামর্যাদাময় ও সর্বোচ্চ আপনি।
এ কুনুতটি সম্পর্কে হাসান ইবন আলী (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিয়েছেন বিতরের সালাতে বা বিতরের কুনুতে বলার জন্য।” (আবু দাউদঃ ১৪২৫)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত সংখ্যা
প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের দৈনিক নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। ফরজ অর্থ যা অবশ্যই পালনীয়। এবং শরিয়তের কোনো কারণ ছাড়া, ফরজ তরক বা বাদ দেওয়া কিংবা পালন না করা যাবে না। যদি কেউ ফরজ পালন না করে, তবে তার জন্য কঠিন শাস্তি অবধারিত। সুতরাং ফরজ নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। আর এই ফরজ নামাজের পাশাপাশি প্রতিটি নামাজের ওয়াক্তে ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল নামাজ রয়েছে। যা আদায়ের জন্য পবিত্র হাদিসে দিক নির্দেশনা রয়েছে। আমরা নিচে বিভিন্ন ওয়াক্তে কত রাকাত ফরজ সুন্নাত ওয়াজিব নফল নামাজ রয়েছে তার তার তালিকা দিলাম।
ফজরের নামাজের নিয়ম:
ফজরের নামাজে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত আদায় করতে হয়। এবং পরবর্তীতে দুই রাকাআত ফরজ।
জোহর নামাজের নিয়ম:
জোহরের নামাজে চার রাকাত ফজর, ছয় রাকাত সুন্নাত রয়েছে। এই ছয় রাকাত সুন্নাতের মধ্যে ফরজের আগে চার রাকাত এবং ফরজ নামাজের পর চার রাকাত। এক্ষেত্রে চাইলে আরও অতিরিক্ত দুই নফল নামাজও পড়া যায়।
আসর নামাজের নিয়ম:
আসরের নামাজে ফরজ হচ্ছে চার রাকাআত। তবে এই ফরজের আগে চাইলে চার রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে যা রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে আদায় করতেন এবং মাঝে ছেড়ে দিতেন। এখানে জেনে রাখা ভালো, আসরের ফরজ নামাজ আদায় হয়ে গেলে আর কোনো নামাজ আদায় করা যায় না।
মাগরিব নামাজের নিয়ম:
মাগরিব নামাজের ফরজ হচ্ছে তিন রাকাআত। এই তিন রাকাতের পর দুই রাকাআত সুন্নাত রয়েছে। যা রাসুল (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন এবং সবাইকে আদায়ের নির্দেশ দিতেন। এরপর চাইলে দুই রাকাআত নফলও পড়া যায়।
ইশার নামাজের নিয়ম:
ইশার নামাজে ফরজের আগে চার রাকাত সুন্নাত পড়া যায়। যা অত্যাবশ্যকীয় নয়। এই সুন্নাত পড়া ছাড়াও চার রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। ফরজের পর দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। এরপর যারা তাহাজ্জুদ আদায় করে না এবং তাহাজ্জুদের নিয়ত নেই। তারা তিন পাঁচ বা সাত রাকাতের বিতর নামাজ করে নিবে যা ওয়াজিব। আমাদের উপমহাদেশে তিন রাকাতের বিতর নামাজ আদায় করে।
আর যাদের তাহাজ্জুদ আদায় করার নিয়ত থাকবে তারা চাইলে দুই রাকাত নফল আদায় করতে পারে। আর ফজরের আগে তাহাজ্জুদ আদায় করে এক রাকাত বিতর আদায় করতে পারে। এক রাকাত ছাড়াও তিন রাকাতও বিতর আদায় করা যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ফজরের ২ রাকাআত; জোহরর ৪ রাকাআ, আসরের ৪ রাকাআত, মাগরিবের ৩ রাকাআত এবং ইশার ৪ রাকাআত ফরজ নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। বাকি যেসব সুন্নাত নফল রয়েছে, তা আদায় করলে বিপুল পরিমাণ সওয়াব রয়েছে। তবে আদায় না করলে গুনাহ নেই। তাই আমাদের ফরজ নামাজের প্রতি বেশী যত্মশীল হতে হবে।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর (وتر) একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো বিজোড়। এই নামাজ মূলত বেজোর সংখ্যায় আদায় করতে হয় বলে এই নামাজকে বিতর বলা হয়। আর এই নামাজ এক, তিন, পাঁচ এইভাবে যেকোনো বেজোর সংখ্যায় আদায় করা যায়। বিতরের নামাজ আদায় করার সময় হলো, ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। তবে কোনো কোনো ইমামের মতো এই নামাজ এশার নামাজের পর পরই পড়া ওয়াজিব মনে করেন।
বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আবু দাউদ হাদিস শরিফে একটি হাদিস এসেছে। সেখানে এই নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেছেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর নামাজ আদায় করে না, আমাদের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই নামাজ পড়া ওয়াজিব।
সারাবছর আমাদের দেশে ইশার নামাজের পর একাকী বিতর আদায় করলেও, রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়ার পর জামাআতের সঙ্গে ইমাম সাহেব সবাইকে নিয়ে বিতরের নামাজ পড়ান।
কিছু ইমামের মতে বিতরের নামাজ অন্যান্য ফরজ নামাজের মতোই। তবে এতে প্রথম দুই রাকাতের পর তাশাহুদ পড়ে উঠে যেতে হবে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য সূরা ফাতিহা পড়ে এর সাথে একটি সুরা মিলাতে হবে। তৃতীয় রাকাতে সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর তাকবীর দিয়ে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত আবার বাঁধতে হবে। এরপর নিঃশব্দে তৃতীয় রাকাতেই দোয়া কুনুত পড়তে হবে।
দোয়া কুনুত পড়া শেষ হলে স্বাভাবিক নামাজের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফেরাতে হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, তৃতীয় রাকাআতে কোনো কারণে দোয়া কুনুত পড়তে ভুলে গেলে তা নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও বিতর নামাজের আরও অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে। যা সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত। যে রাসুল (সা.) শেষ রাতের আগে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। এবং ফজরের সময়ের আগে শুধু এক রাকাত দিয়ে বিতর শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারির ইফাঃ ৯৩৭–৯৪০, আধুঃ ৯৩২—৯৩৫)
একইভাবে বিতর নামাজ তিন রাকাতে পড়লেও তা কখনো মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবেনা এমন কথাও এসেছে। অর্থাৎ মাগরিবে যেমন দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ে উঠে গিয়ে আর এক রাকাতে নামাজ শেষ হয়। এভাবে বিতর না পড়ে দ্বিতীয় রাকাতে না বসে উঠে যেতে হবে। এবং তৃতীয় ও শেষ রাকাতে সুরা ফাতিমা ও একটি সুরা পড়ে দোয়া কুনুত পড়তে হবে। এরপর রুকু সিজদা করে তাশাহুদ এবং দোয়া পড়ে সালাম ফেরাতে হবে। (হাকেম:১১৪০)
মহিলাদের নামাজের নিয়ম
আমাদের উপমহাদেশে নারী ও পুরুষদের আলাদা নামাজের নিয়ম প্রচলিত। যেহেতু নারী পুরুষের শারীরিক গঠন ও অন্যান্য কারণে নারী পুরুষের নামাজের ভিন্নতা রয়েছে বলে বিভিন্ন ইমাম এবং ফকিহগহ মতামত দিয়েছেন। এর স্বপক্ষে তারা বিভিন্ন হাদিসের রেফারেন্সও উল্লেখ করে। একইভাবে কিছু অনুসারী রয়েছে, যারা নারি পুরুষের নামাজ একই মনে করে। এবং তার স্বপক্ষেও তারা দলিল দেয়। তাই যাদের ইচ্ছা নারী পুরুষ আলাদা কিংবা পদ্ধতিতে নামাজ করলে তা ইনশাআল্লাহ আদায় হয়ে যাবে।
নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য
তাকবীরে তাহরিমাতে পুরুষ কান পর্যন্ত হাত তুললেও মহিলারা একাধিক পর্যন্ত তুলবে।
সিজদায় পুরুষরা ভূমি থেকে হাত বুক ইত্যাদি ফাঁকা রাখলেও মহিলারা জড়সড় হয়ে আদায় করবে।
তাশাহুদে বসা পুরুষ পায়ের উপর বসলেও মহিলারা নিতম্বের উপর বসবে।
উপরোক্ত পার্থক্য যারা করে তারা এর স্বপক্ষে শক্তিশালী দলিল উপস্থাপন করতে পারে না। এর অধিকাংশ নিয়মই কিয়াসের ভিত্তিতে করা। পক্ষান্তরে নারী পুরুষের নামাজ একই এটা শক্তিশালী হাদিস থেকে প্রমাণিত। নারী পুরুষের নামাজ আলাদা হলে তা যারা নামাজের হাদিস বর্ণনা করেছেন তা তাদের হাদিস থেকে প্রমাণিত হতো। যা বিশুদ্ধ পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন নামাজের নিয়মাবলী
তাহাজ্জুদ নামাজ এর নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল ((সা.)) সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ। যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায় করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই নামায আদায় করতে হবে।
তাহাজ্জুদের নামাজ
তাহাজ্জুদের নামায খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। এই নামাজ রাসুল (সা.) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ।
তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত
তাহাজ্জুদ এর সঠিক অর্থ হলো ঘুম থেকে জেগে উঠা। অর্থাৎ রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পরই উঠে নামায আদায় করা। তাহাজ্জুদ সালাতের মসনূন সময় হলো, লোকারা এশার নামাযের পর ঘুমিয়ে পড়বে। এবং অর্ধেক রাত পার হওয়ার পর উঠে নামায আদায় করবে।
আমাদের রাসুল (সা.) কখনো কখনো মধ্য রাতে, আবার কখনো কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং তাহাজ্জুদ আদায় করতেন।
তাহাজ্জুদ নামাযের সময়
এই নামাজের মূল সময় হলো অর্ধ রাত পরবর্তী সময়। তবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। আধুনিক হিসাবে রাত ৩টা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত এই তাহাজ্জুদের সময় থাকে। মোটকথা এশার পর ঘুমিয়ে রাতের দিকে উঠেই তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামায কত রাকআত
এই নামাজ সর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকআত পর্যন্ত পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ আদায়ের পর বিতর আদায় করা রাসুলের উত্তম ত্বরিকা। রাসুল (সা.) ৮রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করে এর বিতরের নামায ৩ রাকাত পড়ে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন। তাই তাহাজ্জুদের নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পর্যন্ত আদায় যায় (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ) প্রথমে দু’রাকাত ছোট ছোট সুরা মিলিয়ে হালকাভাবে পড়ে এই নামাজ আরম্ভ করা যায় (মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
কসর নামাজের নিয়ম
কসর শব্দের মূলভাব হলো সংক্ষেপ বা সংক্ষিপ্ত করা। আমরা যখন নিজ আবাসস্থলে থাকি, তখন আমাদের নিয়মিত সালাত নিয়ম মতোই আদায় করতে হয়। কিন্তু আমরা যখন সফরে কিংবা ভ্রমনে বের হই। তখন ইসলামি বিধান অনুযায়ী নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে হয়।
অর্থাৎ তিন রাকাত ও চার রাকাত নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাতে পড়া। যা বাধ্যতামূলক। আর মানুষ যখন নিজ অবস্থান থেকে সফরের উদ্দেশ্যে তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল কিংবা ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হয়, তাহলে তার নামাজ কসরে আদায় করতে হবে। কেননা এই দূরত্বে কেউ কোথাও গেলে সে তখন মুসাফিফর হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
কসর নামাজের নিয়ম
কসরের নামাজ স্বাভাবিক নামাজের মতোই। যেখানে চার রাকাত নামাজ থেকে সেখানে সেই নামাজ দুই রাকাত আদায় করতে হবে। তবে তিন কিংবা দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ একই পড়বে অর্থাৎ কম বেশি পড়বে না।
ইশরাকের নামাজের নিয়ম
রাসুল (সা.) এর বিভিন্ন হাদিসের রেফারেন্স থেকে ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে জানা যায়। সেখানে সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পরেই এশরাকের নামাজের সময় হয় বলা হয়েছে। যেমন শামী কিতাবে এসেছে সূর্য যখন এক নেজা বা দুই নেজা উর্ধ্বে উঠলে ইশরাকের নামাজের সময় হয়। এখানে নেজার পরিমাণ সম্পর্কে বলা হয় ছয় হাতের সমান।
একইসাথে ’মালাবুদ্দা মিনহু’ কিতাবে এসেছে ফজরের নামাজ আদায়ের পর কিছুক্ষণ সময় বিভিন্ন জিকির আজকার, দোয়া কালেমা পড়ে যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করবে, তার আমলনামায় একটি পূর্ণ হজ্ব ও একটি পূর্ণ ওমরার ছওয়াব লেখা হবে।
একইসাথে তিরমিজী শরীফে এসেছে যেখানে আল্লাহ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি চার রাকায়াত এশরাকের নামাজ পড়ে তাহলে তিনি সারাদিন তার সাহায্যকারী হয়ে যান। এই হাদিসটি হযরত আনাস (রা.) হতে মরফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে আশাকরি আমরা নামাজের শুদ্ধ নিয়মাবলী শিখতে পেরেছি। আমরা যদি এই নিয়মে সালাত আদায় করতে পারি তাহলে তা আমাদের ঈমান আমলকে মজবুদ করবে ইনশাআল্লাহ।
Source: দোয়া ও রুকিয়াহ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD