ইমাম আবু হানিফার রহ. এর সমালোচনায় আহমদ বিন হাম্বল রহ. ও জবাব

0

ইমাম আবূ হানীফাহ রাহ. এর প্রতি আহমদ বিন হাম্বলের আপত্তি ও জবাব

 

📒 আপত্তি

 

আহমদ বিন হাম্বল বলেছে, ইমাম আবু হানিফার হাদীসও দুর্বল, তাঁর রায়ও দুর্বল।

 

📗 জবাব

 

আহমদ বিন হাম্বলের এ সব কথার ন্যুনতম ই’তিবার (গ্রহণযোগ্যতাই) নেই।

 

কারণ, আহমদ বিন হাম্বল ব্যাপকহারে স্ববিরোধী কথাবার্তা বলে থাকেন —যার কোনো ন্যুনতম গ্ৰহণযোগ্যতা নেই। তিনি হুবুহু বা প্রায় এমন এস অগ্রহণযোগ্য কথা অন্যান্য মহান ইমামগণের শানেও বলেছেন। তো তাতে কি তাঁরা দুর্বল হয়ে গেছে?

 

যেমন, তাঁকে তিন ইমামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন—

 

১. ইমাম আওযা’ঈর হাদীসও দুর্বল, তাঁর রায়ও দুর্বল। [তারীখে বাগদাদ: ১৩/৪১৮]

 

২. ইমাম মালেকের হাদীস সহীহ বটে, তবে রায় দুর্বল। [তারীখে বাগদাদ: ১৩/৪১৮]

 

তিনি ইমাম শাফে’ঈর রায়কে মুখে সহীহ বললেও হৃদয় থেকে দুর্বল মনে করতেন। তাই তো তিনি ইমাম শাফে’ঈর ফিকহ ও উসূলকে গ্রহণ করেননি; বরং উস্তাদ শাফে’ঈর মাযহাব ছেড়ে নিজস্ব মাযহাব তৈরি করেছেন। ‘মাদারেক’ গ্ৰন্থে বর্ণিত আছে- উসূলের ক্ষেত্রে আহমদ বিন হাম্বলের দৃষ্টিভঙ্গি স্বীয় শিক্ষক শাফে’ঈর বিপরীত ছিলো। [আল-ফিকরুস সামি: ২/২৭]

 

ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ব্যাপারে তো এর চেয়ে হাস্যকর কথাও পাওয়া যায়। তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন-

 

ইমাম আবু হানীফার রায়ও নেই, হাদীসও নেই। [তারীখে বাগদাদ: ১৩/৪১৮] [¹]

 

ব্যাপারটা বড়ই হাস্যকর! প্রথমে তিনিই বললেন, আবূ হানীফার হাদীসও য’ঈফ, রায়ও য’ঈফ। আবার সেই একই ব্যক্তি সম্পর্কে পরবর্তীতে তিনিই বলছেন, তার হাদীসও নেই, রায়ও নেই! এদিকে ইমাম আবু হানীফার উপর পূর্বের করা মন্তব্যটি ইমাম আওযা’ঈর উপর চালিয়ে দিয়েছে।

 

হা হা হা, কখন কী বলে নিজেই জানে না, কেবল বলতেই থাকে বলতেই থাকে…। অতএব এমন ভোলাভালা ইমামের এ ধরনের শিশুসুলভ কথা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

 

যাইহোক, তার কথার ওপর অনেকগুলো আপত্তিও উত্থাপিত হয়।

 

📗 আপত্তি -১

 

📒 যদি ইমাম আবু হানীফার রায়ও না থাকে, হাদীসও না থাকে, তাহলে তার রায় ও হাদীস য’ঈফ হলো কীভাবে?

 

📒 যদি তাঁর রায়ও না থাকে, হাদীসও না থাকে, তাহলে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো কেন? যার রায়ও নেই, হাদীসও নেই তাঁর রায় ও হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার মানেই বা কী? থাকলেই তো জিজ্ঞেস করা হয়, না থাকলে কেনো জিজ্ঞেস করা হলো?

 

📒 যদি তাঁর রায়ও না থাকে, হাদীসও না থাকে, তাহলে তিনি ইমাম এবং ফক্বীহ হলেন কিভাবে? রায় ও হাদীস ছাড়াও কি বিশ্ব বরেণ্য ইমাম হওয়া যায়? সে যুগে কীভাবে তিনি এতো বড়ো ফকীহ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন? তিনি কি ‘মুরগির দেশের শেয়াল’ ছিলেন যে, সবাই তাকে রাজা মানতে বাধ্য হয়েছে?

 

📒 যদি বলা হয়- তিনি ইমামও নন, ফক্বীহও নন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাকে ইমাম ও ফক্বীহগণের সাথে কেনো উল্লেখ করা হয়েছে? প্রশ্নের ধরন থেকে তো স্পষ্টই বোঝা যায় যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. তৎকালীন সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ ও ইমামগণ (যেমন, ইমাম মালেক ও শাফে’ঈ) এর মধ্য থেকে ছিলেন।

 

📒 সে যুগে তো আরো অনেক ফকীহ ছিল; তাদের কথা উল্লেখ না করে ইমাম আবু হানিফার কথা কেন উল্লেখ করা হয়েছে- যদি তাঁর রায় ও হাদীস না থাকবে এবং তিনি সুপ্রসিদ্ধ ইমাম না হবেন?

 

📗 আপত্তি -২

 

ইমাম মালেক এর হাদীস সহীহ, রায় দূর্বল।

 

📒 এর মানে হলো, ইমাম মালেক যখন হাদীস বলতেন তখন সহীহ হাদীস বলতেন ঠিকই; কিন্তু যখন রায় দিতেন তখন সহীহ হাদীস অনুযায়ী দিতেন না। বরং সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করে নিজ থেকে বানিয়ে মনগড়া রায় দিতেন। কাজেই তার রায়টি দুর্বল হয়ে পড়তো। এটা কি ইমাম মালেক এর উপর অপবাদ নয়?

 

📒 ‘তাঁর রায় দুর্বল’ —এর থেকে এও বোঝা যায়, ইমাম মালেক দুর্বল হাদীস অনুসারে দুর্বল রায় দিতেন। এটাও তো ইমাম মালেক এর উপর অপবাদ। কারণ, আহমদ বিন হাম্বল নিজেই বলেছেন, ইমাম মালেকের হাদিস সহীহ। অর্থাৎ তিনি য’ঈফ হাদীস গ্রহণ করেন না।

 

📗 আপত্তি -৩

 

ইমাম শাফে’ঈর হাদীসও সহীহ, রায়ও সহীহ।

 

📒 ইমাম শাফেঈর হাদীস এবং রায় উভয়টি যদি সহীহ-ই হয় তাহলে আহমদ বিন হাম্বল ইমাম শাফে’ঈর বিপরীতে রায় দিয়েছেন কেনো —যার থেকে পরবর্তীতে হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হলো?

 

তার দৃষ্টিতে ইমাম শাফে’ঈর হাদীস ও রায় এমন সহীহ যে, খোদ তিনি (আহমদ বিন হাম্বল) নিজেই মানতে পারেনি! আল-মাদারেক গ্ৰন্থে বর্ণিত আছে-

 

دون الإمامة في الفقه وجودة النظر في مأخذه عكس أستاذه الشافعي

 

আহমদ বিন হাম্বল ফিকহের ক্ষেত্রে ইমামতের নিচে (ইমাম নন)। উসূলের ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি স্বীয় শিক্ষক শাফে’ঈর বিপরীত। [আল-ফিকরুস সামি: ২/২৭]

 

📗 উপসংহার

 

পরিশেষে বলবো, আহমদ বিন হাম্বলের কথায় যদি কেউ বা কারো হাদীস ও রায় দুর্বল হয়ে যেতো তাহলে ইমাম আওযা’ঈ এবং তাঁর হাদীস ও রায় দুর্বল হয়ে যেতো। অথচ ইতিহাস জানে ইমাম আওযা’ঈর অবস্থান।

 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিনি নিজেকে ছাড়া কাউকে গোণাতেই ধরেন না; তার দৃষ্টিতে সবার রায় য’ঈফ। সবার বলছি; কারণ, ইমাম মালেক ও আওযা’ঈ এর মত ব্যক্তির রায় যদি দুর্বল হয় তাহলে অন্যদের কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না। অতএব ক্ষুদ্র হয়েও বড় কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, মূলত আহমদ বিন হাম্বল এর নিজের রায়-ই য’ঈফ। কারণ, তিনি কখন কী বলেন তার ঠিক ঠিকানা নেই। তাকে সে যুগে কেউ ফকীহ হিসেবে গণ্যই করতো না। [দেখুন নিচের লিংকে]

 

আহমদ বিন হাম্বল রহ. সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

 

📗 আহমদ বিন হাম্বলের হানাফী-বিদ্বেষ

 

নানা কারণে আহমদ বিন হাম্বলের হানাফীদের প্রতি প্রচুর বিদ্বেষ ছিলো। মূলত ভুল বোঝাবুঝিই এর অন্যতম কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদা’আতীরা নিজেদের ভ্রান্ত মতকে চালানোর জন্য ইমাম আবু হানীফাহ’র নাম ব্যবহার করতো- যাতে করে মানুষ ইমাম আবু হানীফাহ’র নাম দেখে চুপ হয়ে যায়। এতে করে ইমাম আবু হানীফাহ রহ. যা বলেননি তা-ও তাঁর নামে বিদ’আতীরা প্রচার করতো। এইসব ভুল প্রচারের কারণেই মূলত আহমদ বিন হাম্বল তাঁর প্রতি বিরাগভাজন হয়ে পড়েন।

 

এ ব্যাপারে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার খুবই সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন-

 

“ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের উপর নির্মম অত্যাচারের হোতা মুতাযিলী গুরু, খলীফা মামুন, মু’তাসিম ও ওয়াসিকের প্রধান মন্ত্রণাদাতা বিচারপতি আহমদ ইবন আবী দুওয়াদ ছিলেন প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ। তার উপস্থিতিতে এবং বারবার তারই ইন্ধনে খলীফা মু‘তাসিম ইমাম আহমদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। তৎকালীন সময়ের মুতাযিলীগণ সকলেই ফিকহী বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসরণ করতেন এবং আকীদার ক্ষেত্রেও তিনি তাঁদের পক্ষে ছিলেন বলে প্রমাণের চেষ্টা করতেন। কাজেই ইমাম আহমদের মনে সামগ্রিকভাবে হানাফী ফকীহগণ, হানাফী ফিকহ ও ইমাম আবূ হানীফার প্রতি বিরক্তি ও ক্ষোভ থাকাই স্বাভাবিক।”

 

এখানে একটা কথা লক্ষনীয়: কেউ ইমাম আবু হানীফাহ’র অনুসারী দাবি করলে তার সবকিছু হানাফী মাযহাবের উপর কিংবা ইমাম আবু হানীফাহ’র উপর বর্তাবে না। যেমন, কেউ যদি নিজেকে হাম্বলী দাবি করে বিভিন্ন বিদ’আত ও অপকর্মে লিপ্ত হয়- এর দায়ভার কিন্তু হাম্বলী মাযহাব কিংবা আহমদ বিন হাম্বলের উপর বর্তাবে না।

 

📗 মানবীয় দুর্বলতা

 

মানুষমাত্রই মানবীয় গুণের অধিকারী। প্রত্যেক মানুষের মনেই হিংসা-বিদ্বেষ ও মানবিক দুর্বলতা থাকে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.ও তার উর্ধ্বে নন। তিনি ইমাম আবূ হানীফাহ’র ক্ষেত্রে হিংসা ও ঈর্ষার স্বীকার হয়েছেন। কারণ, তৎকালীন যুগে সর্বত্রই ইমাম আবু হানীফাহ’র জয়জয়কার ছিলো! প্রত্যেক মাসআলা ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা’র মতামত কী- তা জিজ্ঞেস করা হতো। ইমাম আবূ হানীফাহ ছাড়া যেন কোনো আলেমই ছিলো না- ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টা সহজে বোঝানোর জন্য ছোট ছোট তিনটি বর্ণনা উল্লেখ করছি-

 

তৎকালীন যুগে এমনও বলা হয়েছে যে- “প্রত্যেক ঘরে ঘরে আবু হানীফাহ’র অনুসারী থাকার চেয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে মদ বিক্রেতা থাকা উত্তম”। কেউ কেউ বলতেন- “যারা ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসরণ করে না তাদের প্রতি আল্লাহ রহম করুন”। “এক লোক একজন ইমামের কাছে গেলেন। ইমাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় থেকে এলে? আগন্তুক বললো, অমুক শহর থেকে। তখন ইমাম বললেন, তোমাদের শহরে কি ইমাম আবু হানীফার ফিকহ চর্চা করা হয়? আগন্তুক বললো, হ্যাঁ। তখন ইমাম বললেন, তোমার শহর বসবাসের উপযুক্ত নয়”[²]। এই তিনটি বর্ণনায় ইমাম আবূ হানীফাহ’র প্রতি যদিও বাহ্যিক নিন্দা রয়েছে কিন্তু এই বর্ণনাগুলোর দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায়- তৎকালীন যুগে কী পরিমাণ মানুষ ইমাম আবু হানীফাহ’র অনুসরণ করতো আর কী পরিমাণ তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিলো।

 

এমন কোনো শহর কিংবা দেশ ছিলো না যেখানে ইমাম আবু হানীফাহ’র অনুসারী ছিলো না বা তাঁর ফিকহ চর্চা করা হতো না। কাজেই এমন এক চর্চিত ব্যক্তির প্রতি হিংসা কিংবা বিদ্বেষ তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক।

 

আর কথায় আছে- লেবু বেশি টিপলে তিতো হয়ে যায়। কাজেই যখন কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে অতিরক্ত মাতামাতি করা হয়, তখন ঐ ব্যক্তি স্বভাবতই একদলের রোষানলে পড়ে যায়। ফলে এমনিতেই কিছু কিছু মানুষ তাকে অপছন্দ করতে শুরু করে। সে ভালো কথা বললেও খারাপ লাগে; সঠিক বললেও বেঠিক মনে হয়।

 

অতএব বলতে দ্বিধা নেই যে- আহমদ বিন হাম্বল রহ.ও ইমাম আবূ হানীফাহ’র ক্ষেত্রে ঈর্ষা ও বিদ্বেষাক্রান্ত হয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। রাহিমাহুল্লাহ।

____________________

 

ফুটনোট:

 

[¹] আহমদ বিন হাম্বলকে ইমাম মালেক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তার হাদীস সহীহ কিন্তু তার রায় যঈফ। ইমাম আওযাঈ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তার হাদীসও যঈফ, রায়ও যঈফ। ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তার হাদীসও নেই রায়ও নেই। শাফেঈ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তার হাদীসও সহীহ রায়ও সহীহ। [তারীখে বাগদাদ: ১৩/৪১৮]

 

[²] এই তিনটি ঘটনা হানাফী বিদ্বেষীরা ইমাম আবু হানীফাহ রহ. এর নিন্দায় প্রচার করে থাকে। তাই আর রেফারেন্স উল্লেখ করলাম না। আর এই তিনটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে নিন্দাকারীদের জাহালাত ছাড়া কিছুই প্রমাণ হবে না। কারণ-

 

১. যতো যাই-হোক, ঘরে ঘরে ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসারী থাকার চেয়ে ঘরে ঘরে মদ বিক্রেতা থাকা কখনো উত্তম হতে পারে না। এটা কত বড় অন্ধবিদ্বেষ তা একজন সাধারণ জ্ঞানের অধিকারীও বুঝবেন।

 

আর এদিকে আমরা জেনে নিতে পারলাম- তৎকালীন যুগে ঘরে ঘরে ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসারী ছিলো; তাই তো ঘরে ঘরে মদ বিক্রেতা থাকাকে উত্তম বলা হয়েছে।

 

২. যারা ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসরণ করে না তাদের জন্য রহমতের দোয়া করা এটাও হাস্যকর। বরং যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করাটাই যুক্তিযুক্ত ছিলো। অতএব এই বর্ণনা থেকে উল্টো নিন্দাকারীদের অসহায়ত্বই ফুটে উঠে। কারণ, তাঁরা মানুষকে ইমাম আবূ হানীফাহ’র অনুসরণ থেকে ফেরাতে পারছে না তাই তাদেরকে অনুসরণ না করলে রহমতের দোয়ার লোভ দেখানো হচ্ছে।

 

এই বর্ণনা থেকেও সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয় যে- তখনকার সোনালী মানুষজন দলে দলে ইমাম আবু হানীফাহ’র অনুসরণ করতেন। অল্প কিছু লোক করতো না, ঐ বেচারাদের জন্যই রহমতের দোয়া করা হয়েছে। কারণ করুণা তো অল্প লোকেরাই পায়।

 

৩. ইমাম আবু হানীফাহ’র ফিকহ চর্চা হয় এ কারণে শহর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়াটাও হাস্যকর। বরং নিন্দাকারীর উচিত ছিলো নিজের জ্ঞান-গরিমা দিয়ে সমস্ত শহরগুলো আবূ হানীফাহ-মুক্ত করে ফেলা; অথচ তিনি তা করতে না পেরে মানুষদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন- তোমরা শহর ছেড়ে চলে যাও, এই শহরে বাস করা উচিত নয়; হাস্যকর।

 

বরং এই ঘটনা থেকেও আমরা জানতে পেরে গেলাম- তখনকার প্রায় প্রত্যেকটি শহরে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ফিকহ চর্চা করা হতো।

 

তাছাড়া ঠাণ্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন, একজন মহান ইমাম, তিনি কী এমন অপরাধ করেছেন- যার কারণে তাঁর ফিকহ চর্চা হয় কেনো এই অপরাধে শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে? অথচ সেই ইমাম আজও পর্যন্ত দল-মত-নির্বিশেষে সকল আলেম-ওলামা ও বিজ্ঞজনের হৃদয়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ও পরম শ্রদ্ধার পাত্র।

 

তিনি যদি এতই পথভ্রষ্ট হতেন তাহলে তো আজ জমহূর আলেম-ওলামার নিকটেই তিনি পথভ্রষ্ট হিসেবেই বিবেচিত হতেন। অথচ বর্তমানে তার প্রতি বিদ্বেষ রাখে এমন কোনো সত্যপন্থী আলেম নেই বললেই চলে। অতএব নিন্দাকারীদের এমন অন্ধ-বিদ্বেষমূলক নিন্দা নিজেদেরকে লজ্জিত করা ছাড়া আর কী কাজে আসলো?

 

#Debateforsunnah

#Lubaabswritings

#Ahnaafwritersworld


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “ইমাম আবু হানিফার রহ. এর সমালোচনায় আহমদ বিন হাম্বল রহ. ও জবাব”

Leave a Reply