তিন তালাকে কয় তালাক: তিন তালাক

0

তিন তালাকে কয় তালাক

 

লা-মাযহাব বন্ধুরা সূরা ত্বালাক এর প্রথম আয়াত দ্বারা দলীল দেয় যে, একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হবে না বরং এক তালাকই হবে

 

কিন্তু আমরা উক্ত আয়াত থেকেই প্রমাণ করে দেবো, একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হবে, এক তালাক নয়।

 

এই ব্যাপারে সূরা ত্বালাকের নিম্নোক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে

 

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ ۖ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ۚ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَٰلِكَ أَمْرًا

 

বাংলা অনুবাদ: হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।

[সূরা: আত্ব-ত্বালাক্ব, আয়াত: ১]

 

অনুবাদটি আমরা চারটি পয়েন্টে পড়বো।

 

১. হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয়।

 

২. যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়।

 

৩. এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা।

 

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। তুমি জানো না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন। [ত্বালাক: ১]

 

এবার আমরা আয়াতের প্রত্যেকটি অংশ নিয়ে আলাদা আলোচনা করব ইনশাল্লাহ

 

📗 আয়াতের প্রথম অংশ: এ অংশে তালাকের পদ্ধতি বলা হয়েছে

 

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ ۖ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ

 

হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয়।

 

আয়াতের এই অংশ থেকে দুইটা হুকুম বের হয়, ১. ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এক তালাক দেওয়া। ২. স্ত্রীকে ঘর থেকে বহিস্কার না করা।

 

এই গেলো তালাকের ১নং পদ্ধতি। ২নং পদ্ধতি আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকে পাওয়া যাবে।

 

📗 আয়াতের দ্বিতীয় অংশ: এ অংশে তালাকের পূর্বোক্ত পদ্ধতি তথা এক তালাক পদ্ধতি কতক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বা উক্ত নিয়ম কতক্ষণ পর্যন্ত মানতে হবে- তার বর্ণনা

 

আল্লাহ তো বলেছেন ইদ্দত গুনে গুনে তালাক দেওয়ার জন্য, তো প্রশ্ন আসে, সব সময়ই কি এই এক তালাক পদ্ধতিতে তালাক দিতে হবে? বা এক তালাকের পদ্ধতিটা কি সবসময়ের জন্য? এই পদ্ধতি ছাড়া কি অন্য কোন পদ্ধতিতে অর্থাৎ তিন তালাক দেওয়া যাবে না?

 

আল্লাহ এই অংশে এই সব প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, (উপরিউক্ত পদ্ধতি তথা এক তালাকের পদ্ধতি তো ততক্ষণ পর্যন্ত)

 

إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ

“যতক্ষণ না তারা কোন সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়”।

 

[ওহ থ্যাংকস আল্লাহ! তুমি কত সুন্দর করে সব বলে দিয়েছো কিন্তু তারা বোঝে না]

 

তার মানে, স্ত্রী গর্হিত কাজে লিপ্ত হলে তালাকের পদ্ধতি ভিন্ন হবে! এক তালাকের পদ্ধতি চলবে না।

 

মোদ্দা কথা: স্ত্রী সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত না হলে তখন উপরে বর্ণিত এক তালাক পদ্ধতিতে তালাক দেওয়া হবে। আর যদি স্ত্রী কোন সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তখন আর এক তালাকের উক্ত পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে না। বরং স্বামী তিন তালাক দিয়ে ঘর থেকে বহিস্কার করে গর্হিত কাজ ও নোংরামির উৎসমূল উপড়ে দিবে। আল্লাহ উক্ত আয়াতে এটাই বলেছেন।

 

অতএব আয়াতের এ অংশ থেকে আরো দুইটা হুকুম বেরিয়ে এসেছে: তা হলো, ১. তিন তালাক দেওয়া। ২. ঘর থেকে বহিস্কার করা। এই গেলো তালাকের ২নং পদ্ধতি

 

📗 বাস্তবতার আলোকে কিছু কথা

 

আর বাস্তবেও এমন দেখা যায়, কখনো কখনো স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে ঘর থেকে বহিস্কার করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে, কারণ স্ত্রী স্পষ্ট কোনো গর্হিত কাজ— যেমন পরকীয়া বা যিনায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এখন স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে ঘর থেকে বহিষ্কার না করলে সে ফ্যামিলিতে থেকে আরো বেশি নোংরামি করবে এবং নিজের দোষ ঢাকতে উল্টো স্বামীকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করবে। কখনো কখনো এমন ঘটনাও ঘটে যে, নিজের দোষ ঢাকতে গিয়ে স্বামীকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে।

 

তো এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তেও কি কোনভাবেই এক তালাক পদ্ধতির ব্যত্যয় করা যাবে না? স্ত্রী যতই নোংরামি এবং গর্হিত কাজ করুক স্বামী কি তাকে তিন তালাক দিতে পারবে না?

 

তাই আয়াতের দ্বিতীয় অংশে আল্লাহ তাআলা নিজেই এর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। (ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এক তালাক দেওয়া এবং ঘর থেকে বহিষ্কার না করার হুকুম তো ততক্ষণ পর্যন্ত)

إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ

যতক্ষণ না তারা (স্ত্রীরা) কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়।

 

ফলাফল: যদি স্ত্রী কোনো সুস্পষ্ট কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তখন উপরিউক্ত হুকুম দুটি লঙ্ঘন করতে কোনো বাধা নেই। এবং একসাথে তিন তালাক দিলেও সমস্যা নেই। ঘর থেকে বহিস্কার করলেও সমস্যা নেই। কারণ, শরীরের ভালো অঙ্গগুলোকে বাঁচাতে হলে পঁচা অঙ্গ কেটে ফেলতে হবে। যেমনটি সাহাবাগণও করেছেন স্বয়ং রাসূল সা. এর সামনেই। (দ্বিতীয় পর্বে হাদীস উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ)

 

তাহলে আমরা তালাকের মোট দুইটি পদ্ধতি পেলাম, ১. এক তালাক দেওয়া। এটাও আল্লাহর বিধান। ২. তিন তালাক দেওয়া। এটাও আল্লাহর বিধান

 

প্রথম বিধান হচ্ছে, স্ত্রী যদি সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত না হয়, তখন। দ্বিতীয় বিধান হচ্ছে, স্ত্রী যদি সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়, তখন।

 

📗 আয়াতের তৃতীয় অংশ: এই অংশে উপরের এসব নীতিমালা ও যে এই নীতিমালা লঙ্ঘন করবে, তার ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

 

وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ

 

এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে।

 

📗 তিন পয়েন্টে আলোচনা

 

১. এগুলো আল্লাহর দেওয়া সীমা। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে। ৩. সে নিজের উপরই জুলুম করে।

 

তিনটি বিষয় লক্ষণীয়: আল্লারহর দেওয়া সীমা, সীমালংঘন ও নিজের উপর জুলুম

 

📗 আল্লাহর দেওয়া সীমা: তা হচ্ছে—

 

(ক) স্ত্রী সুস্পষ্ট কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত না হলে ইদ্দত এর প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দেওয়া।

(খ) এবং স্ত্রীকে ঘর থেকে বহিষ্কার না করা

(গ) আর স্ত্রীও নিজ থেকে ঘর হতে বের না হওয়া।

(ঘ) স্ত্রী কোনো সুস্পষ্ট কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত হলে তিন তালাক দেওয়া।

(ঙ) এবং স্ত্রীকে ঘর হতে বহিস্কার করা।

 

📗 সীমালংঘন: তা হচ্ছে-

 

(ক) স্ত্রী গর্হিত কাজে লিপ্ত না হওয়া সত্ত্বেও এক তালাক নীতি উপেক্ষা করে একসাথে তিন বা ততোধিক তালাক দেওয়া

(খ) এবং স্ত্রীকে ঘর থেকে বহিস্কার করা।

(গ) স্ত্রী নিজে নিজেই স্বামীর ঘর থেকে বের হওয়া।

(ঘ)স্ত্রী সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে তিন তালাক না দেওয়া।

(ঙ) এবং ঘর থেকে বহিস্কার না করা।

 

পুনশ্চ: স্ত্রী সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে চূড়ান্ত তালাক না দেওয়া। এবং ঘর থেকে বহিস্কার না করাটাও সীমালংঘন।

 

📗 নিজের উপর জুলুম

 

এখন প্রশ্ন আসে সীমালংঘনকারী নিজের উপরে নিজেই জুলুম করে কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরও আল্লাহ আয়াতের চতুর্থ অংশে দিয়েছেন!

 

আয়াতের চতুর্থ অংশ:

لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَٰلِكَ أَمْرًا

তুমি জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।

 

অর্থাৎ যে কুরআনে বাতলানো পদ্ধতিতে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এক তালাক দেবে, আল্লাহ হয়তো তার জন্য স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো একটা উপায় বের করে দেবেন।

 

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া সীমা লংঘনকারী তথা আল্লাহর বিধান ‘ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য’ না রেখে একসাথে তিন তালাকের মাধ্যমে আল্লাহর সীমা লংঘন করে ফেলেছে, তার জন্য আল্লাহ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোন উপায় বের করবেন না। সে এভাবেই নিজের উপর নিজে জুলুম করলো।

 

বিষয়টি সহজে বুঝতে আয়াতের শেষাংশে আবার ভালোভাবে খেয়াল করুন। আল্লাহ বলেন, ১. “যে আল্লাহর সীমা লংঘন করলো, সে নিজের উপর জুলুম করল। ২. “তুমি জানো না, হয়তো আল্লাহ কোন উপায় বের করে দেবেন।”

 

এর থেকে বোঝা যায়, যে আল্লাহর সীমা লংঘন করবে, তার জন্য স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো পথ আল্লাহ বের করবেন না, তার স্ত্রী সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। আর এভাবেই সে নিজের ক্ষতি নিজে করল।

 

পক্ষান্তরে যে লোক আল্লাহর সীমা মেনে এক তালাক দিবে, আল্লাহ তার জন্য স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার একটা পথ বের করে দেবেন। আর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগটা একটা নেয়ামত। কোনো সীমালংঘনকারী এই নিয়ামত পাবে না। অতএব সে নিজের ক্ষতি নিজেই করল।

 

আরো সহজে বিষয়টা ভাবুন, আল্লাহ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার নেয়ামত কাকে দেবেন? যে আল্লাহর দেওয়া সীমা মেনে এক তালাক দিবে তাকেই তো, নাকি যে আল্লাহর সীমা লংঘন করে তিন তালাক দিবে তাকেও?

 

অবশ্যই! ফিরিয়ে নেওয়ার নেয়ামত সে-ই পাবে যে আল্লাহর সীমা মেনে এক তালাক দিবে। আর যে আল্লাহর সীমালংঘন করে তিন তালাক দিবে সে তো নিজের ক্ষতি নিজেই করল! অর্থাৎ তার স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম। স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার নেয়ামত পাবে না, তাই তো আল্লাহ বলেন, সে সীমালংঘন করার কারণে সে নিজের ক্ষতি নিজেই করল।

 

এখন কেউ যদি বলে, যে আল্লাহর বিধান ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিল সেও ফিরিয়ে নেওয়ার নেয়ামত পাবে। আর যে আল্লাহর এই বিধানের সীমালংঘন করে তিন বা ততোধিক তালাক দিবে সেও ফিরিয়ে নেওয়ার নেয়ামত পাবে। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হল? সীমা লংঘন করার কারণে সে নিজের ক্ষতি নিজে কী করলো?

 

অথচ আল্লাহ বললেন, সীমালংঘনকারী নিজের ক্ষতি নিজেই করল। কিন্তু স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার পেলে তো সীমালংঘনকারীর কোনো ক্ষতিই হলো না!

 

📗 একটা প্রশ্ন

 

এখন একটা প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা উপরে জেনে এসেছি যে স্ত্রী সুস্পষ্ট কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত হলে তিন তালাক দেওয়াটাই আল্লাহর সীমা। আর যে আল্লাহর সীমা লংঘন করবে সে নিজের উপর নিজেই উপর জুলুম করবে। প্রশ্ন হলো, এ ক্ষেত্রে জুলুমটা আসলে কীভাবে হচ্ছে?

 

দেখুন, এই নোংরা স্বভাবের মহিলাকে চূড়ান্ত তালাক না দিয়ে আল্লাহর সীমা লংঘন করলে তার পুরো ফ্যামিলি ধ্বংস হবে, গ্রামবাসী ধ্বংস হবে। তার ছেলেমেয়ে ধ্বংস হবে। এমনকি নিজের গর্হিত অপরাধ ঢাকার জন্য সে স্বামীকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে পারে। যা আজকাল অহরহ ঘটেও থাকে। তো এমন নোংরা স্ত্রীকে তিন তালাক তালাক না দেওয়ার কারণে স্বামী নিজের উপর নিজেই জুলুম করল। নিজের ক্ষতি নিজেই করল। তাই এমন ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালাক অর্থাৎ তিন তালাক দিয়ে ঘর থেকে বহিষ্কার করাটাই আল্লাহ তাআলার বিধান।

 

আরেকটা মোটাদাগের কথা হচ্ছে- তিন তালাক দিলে যদি তিন তালাক না-ই হবে, তাহলে রাসূল সা. যখন শুনতেন কেউ তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিয়েছে, তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে যেতেন কেন?

 

কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম জানতেন, এখন আর তার স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার কোনো পথ বাকি নেই। তার স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গেছে। “সে আল্লাহর সীমা লংঘন করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারলো।” (সূরা তালাক: ১)

 

প্রয়োজনে একসাথে তিন তালাকের ব্যবস্থা কেনো জরুরী?

 

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আল্লাহ কখনো কারো প্রতি জুলুম করেন না।

এখন একসাথে তিন তালাকের বিধান যদি না থাকে তাহলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের প্রতি জুলুম হয়ে যায়।

 

যেমন ধরুন: স্ত্রী যদি কোনো সুস্পষ্ট গর্হিত কাজ- যিনা বা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও যদি তিন তালাকের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে এটা স্বামীর উপর অনেক বড় জুলুম, সামান্য বিবেক খাটালেই এটা বুঝে আসে।

 

মনে করুন, আপনার আদরের স্ত্রী আপনার পাশে শুয়ে শুয়ে পর পুরুষের সাথে পরকীয়া করছে! কিংবা অফিস থেকে এসে দেখলেন সে কোন ভিন্ন পুরুষের সাথে সঙ্গম লিপ্ত। এটা দেখার পর কখনো কি আপনি তাকে চোখের সামনে দেখতে চাইবেন? নাকি চাইবেন তাৎক্ষণিকভাবে তিন তালাক দিয়ে বিদায় করে দিতে? আপনার রুচিবোধ কী বলে?

 

রুচিবোধসম্পন্ন কোনো মানুষ তো মুহূর্তের জন্যও তা মানবে না। আর যদি মানতেই হয়, এটা হবে তার জন্য মরণকষ্টসম! এখন তিন তালাক দিতে না পারাটা কি তার জন্য জুলুম নয়? আর আল্লাহতো কখনো জুলুম করেন না।

 

এখান থেকেও বোঝা যায়, তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। এ বিধান ইসলামে অবশ্যই রয়েছে। যদি না থাকে তবে স্বামীদের উপর জুলুম লাজিম আসে। আর ইসলাম কারো প্রতি জুলুম করে না।

 

আর সহবাসহীন তুহুরে এক এক করে তালাকের বিধানও আল্লাহ নারী এবং পুরুষকে জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্যই করেছেন।

 

এই পদ্ধতি যদি না থাকতো তাহলেও কয়েকটা সমস্যা দেখা দিত।

 

১. ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য না রেখে তালাক দিলে গর্ভের সন্তান নিয়ে পরবর্তীতে সংশয় সৃষ্টি হবে, সন্তানটি আসলে কার? এ নিয়ে তার পরবর্তী স্বামী তার সাথে দ্বন্দ্ব ও বিবাদে জড়াতে পারে। আর এই দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্যই আল্লাহ তাআলা সহবাসহীন তুহুরে তালাক দেওয়ার বিধান নাযিল করেছেন।

 

২. একসাথে তিন তালাক দিলে কখনো কখনো স্ত্রীর প্রতি জুলুম হয়ে যায়। কারণ, স্ত্রীর কোনো ভুল থেকে থাকলেও একসাথে তিন তালাকের কারণে হারাম হয়ে যায় বিধায় সে নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায় না। আবার কখনো ভুল বুঝাবুঝি থেকেই তিন তালাক দেওয়ার কারণে সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। পরে ভুল ভাংলেও আর ফিরিয়ে নিতে পারে না। তাই আল্লাহ এই এক তালিকের পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন।

 

৩. আবার কখনো কখনো তিন তালাকের মাধ্যমে স্ত্রী হারাম হয়ে যাওয়ার পর স্বামীরও অনুশোচনা জেগে ওঠে। সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। তারপর বাকী জীবন সে আফসোস করে ফিরিয়ে নিতে না পারার জন্য।

 

তাই স্ত্রীদেরকে জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য এবং স্বামীদেরকে অনুশোচনা থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত কুরআনে এক তালাকের বিধান বলেছেন। কারণ একসাথে তিন তালাক দিলে স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। যদি ফিরে পাওয়া যেত তাহলে আল্লাহ আর ভেঙে ভেঙে তালাক দেওয়ার কথা বলতেন না এবং সীমা লংঘন করলে নিজের ক্ষতি হবে তাও বলতেন না।

 

অতএব আল্লাহ তা’আলা তালাকের এমন একটা সুন্দর ব্যবস্থা বাতলে দিয়েছেন যে পদ্ধতিতে তালাক দিলে স্ত্রীকে চাইলে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে আর স্ত্রীও নিজেকে শুধরে নিতে পারবে। এবং স্বামীও অনুশোচনা থেকে বাঁচতে পারবে।

 

এখন কেউ যদি আল্লাহ তাআলার এই সুন্দর ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে, তাঁর দেওয়া সীমাকে লংঘন করে তিন তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে সে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারলো, নিজের ক্ষতি নিজে করল। যেমনটি আল্লাহ উপরিউক্ত আয়াতে বলেছেন। কারণ, এতে করে সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললো।

 

এই বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে। লা-মাযহাবীরা যেহেতু এই আয়াত দ্বারা তিন তালাকে এক তালাকের দলীল পেশ করে। তাই আমি একই আয়াত দ্বারা তিন তালাকে তিন তালাকের দলীল পেশ করতে চেয়েছি বিধায় এখানে কোন হাদীস উল্লেখ করিনি। কিন্তু কমেন্ট বক্সে হাদীস দেওয়া হবে ইনশাল্লাহ।

 

তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, অকারণে একসাথে তিন তালাক দেওয়া অনুচিত ও গর্হিত কাজ।

 

 

সারসংক্ষেপ: উপরিউক্ত আয়াত থেকে তালাকের দুইটা পদ্ধতি পাওয়া যায়

 

১. ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এক তালাক দেওয়া, এটাও আল্লাহর বিধান।

২. তিন তালাক দেওয়া, এটাও আল্লাহর বিধান।

 

প্রথম বিধান হচ্ছে, স্ত্রী যদি সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত না হয়, তখন। দ্বিতীয় বিধান হচ্ছে, স্ত্রী যদি সুস্পষ্ট গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়, তখন। বরং এ ক্ষেত্রে তিন তালাক না দেওয়াটাই হবে সীমালংঘন। আর যে আল্লাহর এই সীমা লংঘন করবে সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে।

 

📗 উপসংহার

 

সূরা ত্বালাকের এই আয়াতকে ইমাম বুখারী রহ.ও তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে- এর দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। দেখুন বুখারীর তালাক অধ্যায়।

 

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply