গীবত এর পরিচয় ও গীবতকারীর পরিণতি (২য় পর্ব)

0

গীবত করা আর জাহান্নামের গোশত ভক্ষণ করা সমান

রাসূলের হাদীসে এসেছে-

النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللَّهَ يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ، وَمَنْ كُسِيَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ جَهَنَّمَ، وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ، فَإِنَّ اللَّهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অনুবাদ: আল-মুসতাওরিদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক লোকমা ভক্ষন করবে আল্লাহ তাকে এজন্য জাহান্নাম থেকে সমপরিমাণ ভক্ষন করাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষত্রুটি বর্ণনার পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে অনুরূপ জাহান্নামের পোশাক পরাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির (কুৎসা) রটিয়ে খ্যাতি ও প্রদর্শনীর স্তরে পৌঁছবে, মহান আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তাকে ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর জায়গাতেই (জাহান্নামে) স্থান দিবেন। [সুনানে আবী দাঊদ: ৪৮৮১]

 

 

গীবতকারীর দোষ আল্লাহ খুঁজে খুঁজে বের করবেন

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ قَلْبَهُ، لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعُ اللَّهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ

অনুবাদ: আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। [সুনানে আবী দাঊদ: ৪৮৮০]

 

গীবতের পাপ সুদ অপেক্ষা বড়

কোনো কোনো হাদীসে এসেছে-

عَنْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا الِاسْتِطَالَةَ فِي عِرْضِ الْمُسْلِمِ بِغَيْرِ حَقٍّ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবচেয়ে বড় সুদ হচ্ছে, অন্যায়ভাবে কোনো মুসলমানের মান-ইজ্জতে হস্তক্ষেপ করা। [আবূ দাউদ: ৪৮৭৬]

 

গীবত জেনার চেয়েও মারাত্মক

একটি জ’ঈফ-সনদ হাদীসে এসেছে-

إيّاكُمْ والغِيبَةَ فَإنَّ الغِيبَةَ أشَدُّ مِنَ الزِّنا»، قالُوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وكَيْفَ الغِيبَةُ أشَدُّ مِنَ الزِّنا؟ قالَ: «إنَّ الرَّجُلَ قَدْ يَزْنِي، ثُمَّ يَتُوبُ فَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِ، وإنَّ صاحِبَ الغِيبَةِ لا يُغْفَرُ لَهُ حَتّى يَغْفِرَ لَهُ صاحِبُهُ

অনুবাদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা গীবত থেকে বেঁচে থাকো, কেননা গীবত যেনার চেয়েও মারাত্মক! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, তা কীভাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- কারণ, কোনো ব্যক্তি যেনার পর তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গিবতকারীকে ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ করা হবে না যতক্ষণ না যার গিবত করা হয়েছে, সে মাফ করবে। [শু’আবুল ঈমান: ৯/৯৮, মিশকাত: ৩/১৩৬৬, মিরকাতুল মাফাতীহ: ৭/৩০৫৬, আয-যুহদ: ২/৫৬৫]

 

আরো একটি য’ঈফ-সনদ হাদীসে এসেছে-

الغيبةُ أشدُّ من الزنا؛ لأنَّ المغتابَ لا يُغْفَرُ لهُ حتى يغفرَ لهُ صاحبُه

অনুবাদ: গীবত হচ্ছে জেনার চেয়েও মারাত্মক কারণ গীবতকারীকে ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ করা হয় না যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে মাফ না করে। [মীযানুল ই’তিদাল: ২/৩৭২]

সারাংশ: গীবত হলো- মদপান-ধুমপান, জুয়া, সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্ট পাপ ও কবিরা গুনাহ। কারণ, অন্যান্য পাপসমূহ আল্লাহর দরবারে খাঁটি মনে তওবা করলে মাফ হয়ে যায়; কিন্তু গিবতকারীর পাপ শুধু তওবা করার দ্বারা মাফ হয় না- যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে মাফ না করে।

গীবতের ব্যাপারে আয়েশা রা. রাসূলের উপদেশ

عَائِشَةَ، قَالَتْ: قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا، قَالَ غَيْرُ مُسَدَّدٍ: تَعْنِي قَصِيرَةً، فَقَالَ: لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ الْبَحْرِ لَمَزَجَتْهُ قَالَتْ: وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَانًا، فَقَالَ: مَا أُحِبُّ أَنِّي حَكَيْتُ إِنْسَانًا وَأَنَّ لِي كَذَا وَكَذَا

অনুবাদ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, আমি সাফিয়্যাহ (রাসূলের অন্য একজন স্ত্রী) এর নামে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে সমালোচনা করতে গিয়ে বললাম, আপনার জন্য ছাফিইয়ার এরকম এরকম হওয়াই যথেষ্ট। (এর দ্বারা তিনি ছাফিইয়ার বেঁটে সাইজ বুঝাতে চেয়েছিলেন। তো এতদশ্রবণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বললেন,) “হে আয়েশা! তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের পানির রং পাল্টে যাবে। আয়িশাহ রা. আরো বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেন, আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করবো না। [আবূ দাউদ: ৪৮৭৫, তিরমিযী, সহীহুল জামে: ৫১৪০; মিশকাত: ৪৮৪৩]

 

গীবত সম্পর্কে রাসূল ও সাহাবীদের মধ্যে শিক্ষনীয় একটি ঘটনা

আনাস ইবন মালেক রা. বলেন- আরবরা সফরে বের হলে একে অপরের খেদমত করত। আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে একজন খাদেম ছিল। একবার সফর অবস্থায় ঘুম থেকে তারা উভয়ে জাগ্রত হয়ে দেখেন যে, তাদের খাদেম তাদের জন্য খানা প্রস্তুত করেনি, তখন তারা পরস্পরকে বললেন, দেখ এই ব্যক্তিটি বাড়ির ঘুমের ন্যায় ঘুমাচ্ছে (অর্থাৎ এমনভাবে নিদ্রায় বিভোর যে, মনে হচ্ছে সে বাড়িতেই রয়েছে, সফরে নয়)। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও এবং বল আবু বকর ও ওমর আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনার কাছে তরকারী চেয়ে পাঠিয়েছেন (নাস্তা খাওয়ার জন্য)। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গেলে তিনি বললেন- তারা তো তরকারী খেয়েছে, তখন তারা বিস্মিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আপনার নিকটে এসে লোক পাঠালাম তরকারী তলব করে, অথচ আপনি বলেছেন, আমরা তরকারী খেয়েছি? তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমরা তোমাদের ভাইয়ের (খাদেমের) গোশত খেয়েছ। কসম ঐ সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি ঐ খাদেমটির গোশত তোমাদের সামনের দাঁতের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা তলব করুন। [আমাসিক আলায়কা লিসানাকা]

 

গীবতের কারণে এক সাহাবীকে রাসূলের তিরস্কার

আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রা: বলেন- একদা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেলো। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার দাঁত খিলাল করো। লোকটি বললো, কী কারণে দাঁত খিলাল করবো? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ অর্থাৎ ‘গীবত’ করেছ। [ত্বাবারানী, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, গায়াতুল মারাম: ৪২৮]

 

আখিরাতে গীবতকারীর শাস্তি ও করুণ পরিণতি

পবিত্র কুরআনে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সূরাই অবতীর্ণ হয়ছে। সূরাটির নাম ‘হুমাজাহ’। এই সূরায় মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

ويل لكل همزة لمزة. الذي جمع ماله وعدده. يحسب ان ماله اخلده. كلا لينبذن في الحطمة. وما ادراك ما الحطمة. نار الله الموقدة. التي تطلع على الافئدة. انها عليهم مؤصدة. في عمد ممددة.

অনুবাদ: দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে এবং সম্পদ জমা করে এবং তা পুনঃপুন গণনা করে। অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে। [সূরা হুমাজাহ: ১-৯]

 

গীবতকারীর শাস্তি সম্পর্কে হাদীসে এসেছে

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ

অনুবাদ: হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল আ. বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত করতো। [সুনানে আবী দাঊদ: ৪৮৭৮]

অন্যত্র এসেছে-

مَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَيْءٍ يُرِيدُ شَيْنَهُ بِهِ، حَبَسَهُ اللَّهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ

অনুবাদ: যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। [সুনানে আবী দাঊদ: ৪৮৮৩]

এ ব্যাপারে সহীহ বুখারী-মুসলিমের হাদীসে এসেছে-

ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ، فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ‏”‏، ثُمَّ قَالَ ‏”‏ بَلَى، كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فَكَسَرَهَا كِسْرَتَيْنِ، فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا كِسْرَةً‏.‏ فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ ‏”‏ لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ تَيْبَسَا أَوْ إِلَى أَنْ يَيْبَسَا‏

 

অনুবাদ: ইবনু ‘আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত- তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মাদ্বীনা বা মক্কার বাগানগুলোর মধ্য হতে কোনো এক বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এমন দু’ ব্যক্তির আওয়ায শুনতে পেলেন যে, তাদেরকে কবরে আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে, অথচ কোনো গুরুতর অপরাধে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তারপর তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ, এদের একজন তার পেশাব করতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করত না। অপর ব্যক্তি একের কথা অন্যকে গিয়ে বলতো অর্থাৎ গীবত বা চোগলখোরী করতো। [বুখারী: ২১৬, মুসলিম: ২৯২]

সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারীতে এসেছে-

مرَّ النبيُّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ بقبرينِ فقال إنهما يُعذَّبانِ وما يعذبانِ في كبيرٍ وبكى وفيه وما يعذبانِ إلا في الغيبةِ والبولِ

অনুবাদ: একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হলেন। তখন তিনি বললেন- এই দুই কবরে আযাব হচ্ছে। আর তাদেরকে বড় ধরনের কোনো গুনাহের জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না; বরং তাদেরকে কেবলই গীবত এবং প্রস্রাবের ছিটেফোঁটা থেকে বেঁচে না থাকার কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে। [উমদাতুল ক্বারী: ১/২০০]

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে, অর্থাৎ গীবত করবে, কিয়ামতের দিন তাকে পঁচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। [বুখারী]

গীবতের কাফফারা

এ ব্যাপারে সহীহ বুখারীর হাদীসে এসেছে

أَبِـيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلمَةٌ لأَخِيه مِنْ عِرضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ قبْلَ أنْ لَّا يَكُوْنَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ ؛ إنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلمَتِهِ وَإنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيهِ

অনুবাদ: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি (গীবত অন্য যেকোনোভাবে) তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের সম্মান বা অন্য কিছুতে কোন যুলুম ও অন্যায় করে থাকে, তাহলে সেদিন আসার পূর্বেই সে যেন আজই তার নিকট হতে (ক্ষমা চাওয়া অথবা প্রতিশোধ দেওয়ার মাধ্যমে) নিজেকে মুক্ত করে নেয়; যেদিন (ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য) না দীনার হবে, না দিরহাম। (সেদিন) যালেমের নেক আমল থাকলে তার যুলুম অনুপাতে নেকী তার নিকট থেকে কেটে নিয়ে (মযলুমকে দেওয়া) হবে। পক্ষান্তরে যদি তার নেকী না থাকে (অথবা নিঃশেষ হয়ে যায়) তাহলে তার (মযলুম) প্রতিবাদীর গোনাহ নিয়ে তার ঘাড়ে চাপানো হবে। [বুখারী: ২৪৪৯, ৬৫৩৪, তিরমিযী: ২৪১৯]

সহজভাবে বলতে গেলে, গীবতের কাফফারা হলো- প্রথমত খাঁটি দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করবে যে, হে আল্লাহ আমি জীবনে আর কখনো কারো গীবত করবো না। দ্বিতীয়ত: যার গীবত করা হয়েছে, সে জীবিত থাকলে তার থেকে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নেবে। আর যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গীবত এর মতো জঘন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন আমীন।

লিখনে: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

ছাত্র: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “গীবত এর পরিচয় ও গীবতকারীর পরিণতি (২য় পর্ব)”

Leave a Reply