মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের হক ও সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার হক-সমূহ (১ম কিস্তি)

0

মা-বাবা যেন এই ছোট্ট ভুবনে ছোট্ট একটি জান্নাত। মা বাবা ছাড়া জগতটা যেন দরজা আঁটা বিশাল প্রাসাদ। মা বাবার কথা মনে করে আশি বছরের বৃদ্ধ লোকটিও কেঁদে উঠতে পারে। দু মাসের ছোট্ট শিশুটিও মা বাবাকে চেনে। মা বাবা এমনই বড় এক নেয়ামত যে, এই নেয়ামতের কোনো বিকল্প হয় না। 

মা বাবা নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়ান। নিজে না পরে আমাদের পরান। আল্লাহর পরে সন্তানের প্রতি বাবা-মার মত দয়ালু আর কেউ নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা সন্তানের উপর বাবা-মার প্রতি কিছু কর্তব্য ও হক রেখেছেন। একইভাবে সন্তানও বাবা মার জন্য জান্নাত তুল্য। কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু একটা সন্তান নাই সে যেন কোটিপতি হওয়া সত্বেও একজন ভিক্ষুক। এই সন্তান আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় দান। কাজেই সন্তানের প্রতিও বাবা-মার কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

আজ আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি আলোকপাত করবো। আগে আমরা জানবো সন্তানের উপর বাবা-মার কী কী হক রয়েছে।

সন্তানের উপর বাবা-মার হক ও দায়িত্বসমূহ

 

১. তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা

কালামে হাকীমের মধ্যে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন

وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا…

বাংলা অনুবাদঃ যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে…। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৮৩)

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-

قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا…

বাংলা অনুবাদঃ আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো…। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৫১)

অন্য আয়াতে আরো বলা হয়েছে

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا ۚ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي ۖ إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

বাংলা অনুবাদঃ আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে; বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। (সূরাঃ আল আহক্বাফ, আয়াতঃ ১৫)

আরো বর্ণিত হয়েছে

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

বাংলা অনুবাদঃ আর আমি মানুষদেরকে জোর নির্দেশ দিয়েছি যে, তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে, দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যদান করেছে, (কাজেই তোমরা যেন) আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। (সূরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ১৪)

তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে

وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অনুবাদঃ পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। (সূরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ১৫)

সূরা আনকাবূতে আল্লাহ তা’আলা বলেন

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অনুবাদঃ আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। (সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৮)

তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলবে না

সূরা বনী ইসরাঈলে রাব্বে কারীম খুবই হৃদয়গ্ৰাহী উপদেশ প্রদান করেন-

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

বাংলা অনুবাদঃ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ২৩)

 

২. তাঁদের সামনে সর্বদা নম্র ও মাথা নত করে চলবে

এ বিষয়টি উপরিউক্ত আয়াতসমূহ থেকেও প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেন-

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

বাংলা অনুবাদঃ তাদের সামনে দয়ার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ২৪)

৩. তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে

মহান আল্লাহ তা’আলা কালামে হাকীমে মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

বাংলা অনুবাদঃ আর আমি মানুষদেরকে জোর নির্দেশ দিয়েছি যে, তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে, দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যদান করেছে, (কাজেই তোমরা যেন) আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। (সূরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ১৪)

৪. তাঁদের পেছনে মাল সম্পদ খরচ করবে

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ ۖ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ

বাংলা অনুবাদঃ তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২১৫)

উল্লেখ্য: বাবা-মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবেন, তখন তাঁরা সন্তানের সম্পদ থেকে প্রয়োজন মাফিক খরচ করতে পারবেন। এতে সন্তানের অনুমতি নেওয়া লাগবে না।

৫. তাঁদের আদেশ পালন করবে

আদেশ পালনের বিষয়টি মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যহারের আয়াতসমূহ থেকে বোঝা যায়। আবার নিচের আয়াতসমূহে বলা হয়েছে, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে তবে তাঁদের অন্যায় আদেশ পালন করবে না। এর থেকেও বোঝা যায় যে- তাঁদের ন্যায়াদেশ পালন করতে হবে।

তাঁদের অন্যায় আদেশ পালন করবে না

কারণ, আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে বান্দার আনুগত্য করা যাবে না। ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অনুবাদঃ পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। (সূরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ১৫)

সূরা আনকাবূতে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অনুবাদঃ আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। (সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৮)

৬. তাঁরা মারা গেলে তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

বাংলা অনুবাদঃ তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ২৪)

পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে-

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

বাংলা অনুবাদঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সূরাঃ ইব্রাহীম, আয়াতঃ ৪১)

আল্লাহ তা’আলা আরো উপদেশ দেন-

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا

বাংলা অনুবাদঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর যারা মুমিন অবস্থায় আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। (সূরাঃ নূহ, আয়াতঃ ২৮)

সন্তানের উপর যেমন বাবা-মার প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে একইভাবে বাবা-মার উপরও সন্তানের প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

বাবা মার উপর সন্তানের হক ও দায়িত্বসমূহ

সন্তান আল্লাহ তা’আলার অনেক বড় নিয়ামত। আল্লাহ এ নেয়ামত যাকে ইচ্ছা দান করেন, যাকে ইচ্ছা এই নিয়ে আমার থেকে বঞ্চিত করেন। যাকে ইচ্ছা ছেলে দান করেন যাকে ইচ্ছা মেয়ে দান করেন। এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ ফরমান-

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ إِنَاثاً وَّيَهَبُ لِمَن يَّشَاءُ الذُّكُوْرَ- أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَاناً وَّإِنَاثاً وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَاءُ عَقِيْماً إِنَّهُ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ.

অনুবাদ: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা: ৪৯-৫০)

যেহেতু সন্তান অনেক বড় একটি নেয়ামত সেহেতু সন্তানের প্রতিও বাবা মার কিছু হক রয়েছে। কারণ, প্রত্যেক নেয়ামতেরই হক থাকে। যখন সন্তানের এই হকগুলো যথাযথভাবে পালন করা তখন আমাদের সন্তান আমাদের জন্য হয় রহমতস্বরূপ! আর যদি সন্তানের হকগুলো যথাযথভাবে পালন করা না হয়, তখন আমাদের সন্তানগুলো আমাদের জন্য হয় বোঝাস্বরূপ। কারণ যথাযথভাবে হক পালন না করার কারণে আমাদের সন্তানগুলো অবাধ্য হয়ে যায় এবং আমরা হাহুতাশ করি।

হাদীসে এসেছে

مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ.

অনুবাদ: প্রতিটি শিশুই ফিতরাত (স্বভাব ধর্মের) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতপর তার পিতা-মাতাই তাকে ইহুদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। [শরহু মুশকিলিল আসার: ১৩৯৩, কানযুল উম্মাল: ১৩০৬]

এর কারণ হচ্ছে, মাতা পিতা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলে না। কাজেই তারা স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করে কিংবা অধার্মিক হয়ে ওঠে। আর যদি সন্তানের হকগুলো ঠিকমত আদায় করা হয়, তখন আমাদের সন্তান আমাদের কল্যাণের কারণ হবে এবং আমাদের জান্নাতের কারণ হবে।

কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, অনেকে মাতা-পিতার হক সম্পর্কে জানলেও সন্তানের হক সম্পর্কে মোটেই জানে না। তারা ভাবে, সন্তানের আবার হক আছে নাকি বরং সন্তানরাই তো সবসময় মাতা পিতার হক আদায় করবে।

অথচ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, সন্তানের উপর যেমন মাতা পিতার হক রয়েছে একইভাবে মাতা পিতার উপরও সন্তানের হক রয়েছে।

হাদীসের আলোকে মাতা-পিতার ওপর সন্তানের হকসমূহ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

قال رسول الله صلى اللَّه عليه وآله : حَقُّ الوَلَدِ علَى الوالِدِ أن يُحَسِّنَ اسمَهُ ، ويُحَسِّنَ أدَبَهُ ويُحَسِّنَ مَوضِعَهُ وفي روايات ويُعَلِّمَهُ القرآنَ ويُعَلِّمُهُ الكِتابَةَ ، ويُزَوِّجُهُ إذا بَلَغَ

অনুবাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পিতার উপর সন্তানের হক হচ্ছে, তার সুন্দর একটি নাম রাখবে। তাকে উত্তম আচার-আচরণ শিক্ষা দেবে ও (ধন সম্পদের দিক থেকে) ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেবে। অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে, তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে, লেখা দেখাবে। আর প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিয়ে করাবে। [কানযুল উম্মাল: ৪৫৯৩৩, মীযানুল হিকমাহ: ৫৭৪]

অন্যত্র তিনি আরো বলেন-

قال رسولُ اللَّهِ صلى اللَّه عليه وآله : حَقُّ الوَلَدِ على‏ والِدِهِ أن يُعَلِّمَهُ الكِتابَةَ ، والسِّباحَةَ ، والرِّمايَةَ ، وأن لا يَرزُقَهُ إلّا طَيِّباً

অনুবাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পিতার উপর সন্তানের হক হলো, তাকে লেখালেখি, সাঁতার কাটা এবং তীর চালনা শেখানো এবং তার হাতে উত্তম ব্যতীত কিছুই না দেওয়া। [মীযানুল হিকমাহ: ৫৭৫]

উপরিউক্ত হাদীসদ্বয়ে যে হকগুলোর কথা রয়েছে এর বাইরেও মাতা পিতার উপর সন্তানের প্রতি আরো অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য

১. গর্ভকালে নিজেকে পুতঃপবিত্র রাখা

এ ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টি আসে তা হচ্ছে, গর্ভের সন্তানকে হত্যা না করা অর্থাৎ গর্ভপাত না করা। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন-

قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ

বাংলা অনুবাদঃ আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো। স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দিয়ে থাকি।

দ্বিতীয়ত: যে বিষয়টি আসে, তা হলো- নিজেকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

অনুবাদ: আর তোমরা নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য। যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝতে পারো। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৫১)

মূলত গর্ভকালে মা যেমন আচরণ করবে সন্তানের মস্তিষ্ক তা অতি তাড়াতাড়ি গ্রহণ করে নেবে। একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কাজেই গর্ভকালীন মাকে অতি সংযত হতে হবে। কোন ধরনের পাপাচার কিংবা খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে।

২. জন্মের পর নবজাতকের দুই কানে আযান ও ইকামত দেওয়া

হাদীসে এসেছে-

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلَاةِ حسن

অনুবাদ: আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে সালাতের আযানের মতো করে আযান দিতে দেখেছি। [সুনানে আবী দাঊদ: ৫১০৫]

৩. আকীকা করা

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীকাহর বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীকাহ করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। [সুনানে আবী দাঊদ: ২৮৩৮]

৪. চুল মুণ্ডন করে সমপরিমাণ রৌপ্য সাদাকাহ করা

 عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ ‏ “‏ يَا فَاطِمَةُ احْلِقِي رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِي بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَوَزَنَتْهُ فَكَانَ وَزْنُهُ دِرْهَمًا أَوْ بَعْضَ دِرْهَمٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَإِسْنَادُهُ لَيْسَ بِمُتَّصِلٍ ‏.‏ وَأَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ لَمْ يُدْرِكْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ ‏.‏

অনুবাদ: আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একটি বকরী দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসানের আকীকা করেন এবং বলেনঃ হে ফাতিমা! তার মাথা নেড়া করে দাও এবং তার চুলের ওজনের অনুরূপ রূপা দান কর। তদানুযায়ী আমি তার চুল ওজন করলাম এবং তার ওজন এক দিরহাম বা তার কাছাকাছি হয়। [তিরমিযী: ১৫১৯]

৫. তাহনীক করা (মুখে মিষ্টি দিয়ে বরকতের দোয়া করা)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক এবং বরকতের জন্য দো‘আ করতেন। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَوَّلُ مَوْلُوْدٍ وُلِدَ فِي الْإِسْلَامِ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ أَتَوْا بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم تَمْرَةً فَلَاكَهَا ثُمَّ أَدْخَلَهَا فِيْ فِيْهِ فَأَوَّلُ مَا دَخَلَ بَطْنَهُ رِيْقُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (হিজরাতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়েরই জন্মলাভ করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই প্রথম যে জিনিসটি তার পেটে গেল তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথু। [বুখারী: ৩৬২৬]

عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا حَمَلَتْ بِعَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَتْ فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَيْتُ الْمَدِيْنَةَ فَنَزَلْتُ بِقُبَاءٍ فَوَلَدْتُهُ بِقُبَاءٍ ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَوَضَعْتُهُ فِيْ حَجْرِهِ ثُمَّ دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا ثُمَّ تَفَلَ فِيْ فِيْهِ فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيْقُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ وَبَرَّكَ عَلَيْهِ وَكَانَ أَوَّلَ مَوْلُوْدٍ وُلِدَ فِي الْإِسْلَامِ تَابَعَهُ خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ عَنْ عَلِيِّ بْنِ مُسْهِرٍ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا هَاجَرَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهِيَ حُبْلَى

অনুবাদ: আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বেলন, তখন তাঁর পেটে ছিলেন আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়ের, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরাত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মদিনায় এসে কুবা’তে অবতরণ করি। এ কুবায়ই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনালেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে থুথু দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আবদুল্লাহর পেটে গেল তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থুথু। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য চিবান খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দু’আ করলেন এবং বরকত চাইলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি হিজরাতের পর মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। খালিদ ইবনু মাখলদ (রহ.) উক্ত রেওয়ায়াত বর্ণনায় যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। এতে রয়েছে যে, আসমা (রাঃ) গর্ভবতী অবস্থায় হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসেন। [বুখারী: ৩৬২৫]

৬. সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা

قال رسول الله صلى اللَّه عليه وآله : حَقُّ الوَلَدِ علَى الوالِدِ أن يُحَسِّنَ اسمَهُ ، ويُحَسِّنَ أدَبَهُ ويُحَسِّنَ مَوضِعَهُ وفي روايات ويُعَلِّمَهُ القرآنَ ويُعَلِّمُهُ الكِتابَةَ ، ويُزَوِّجُهُ إذا بَلَغَ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পিতার উপর সন্তানের হক হচ্ছে, তার সুন্দর একটি নাম রাখবে। তাকে উত্তম আচার-আচরণ শিক্ষা দেবে ও (ধন সম্পদের দিক থেকে) ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেবে। অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে, তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে, লেখা দেখাবে। আর প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিয়ে করাবে। [কানযুল উম্মাল: ৪৫৯৩৩, মীযানুল হিকমাহ: ৫৭৪]

৭. উত্তমভাবে ও আদর স্নেহ দিয়ে প্রতিপালন করা

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَبَّلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ جَالِسًا‏.‏ فَقَالَ الأَقْرَعُ إِنَّ لِي عَشَرَةً مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا‏.‏ فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ ‏ “‏ مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ ‏”‏‏.‏

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমারতো দশটি সন্তান কিন্তু আমিতো কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর স্নেহ করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যের প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না।” [সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭]

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ تُقَبِّلُونَ الصِّبْيَانَ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَوَ أَمْلِكُ لَكَ أَنْ نَزَعَ اللَّهُ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ ‏”‏‏.

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো। আপনারা শিশুদের চুম্বন করেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় হতে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে তোমার উপর আমার কি কোন অধিকার আছে? [বুখারী: ৫৪৫৯, মুসলিম ২৩১৭]

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم سَبْىٌ، فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ السَّبْىِ قَدْ تَحْلُبُ ثَدْيَهَا تَسْقِي، إِذَا وَجَدَتْ صَبِيًّا فِي السَّبْىِ أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا وَأَرْضَعَتْهُ، فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَتَرَوْنَ هَذِهِ طَارِحَةً وَلَدَهَا فِي النَّارِ ‏”‏‏.‏ قُلْنَا لاَ وَهْىَ تَقْدِرُ عَلَى أَنْ لاَ تَطْرَحَهُ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ اللَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هَذِهِ بِوَلَدِهَا

উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কতকগুলো বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল। তার স্তন ছিল দুধে পূর্ণ। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে কোলে তুলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার চেয়েও বেশি দয়ালু। [বুখারী: ৫৪৬০, মুসলিম: ২৭৫৪] (

৮. আদব-কায়দা ও উত্তম আচরণ শেখানো

লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বললেন,

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ

 وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ

অনুবাদ: আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।” [সূরা লুকমান: ১৮,১৯]

[আগামী পর্বে সমাপ্য]

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

ছাত্র: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের হক ও সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার হক-সমূহ (১ম কিস্তি)”

Leave a Reply