ডাবের পানি

ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

0

ডাবের পানি, নারকেল জল, নারকেলের পানি যাই বলুন না কেন, এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। সাধারণত কচি অবস্থায় বলা হয় ডাব, আর যখন ভেতরের শাস শক্ত হয়, পানির স্বাদ কিছুটা বদলায় তখন এটিকে বলা হয় নারকেল।

ডাবের পানির উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, অপকারিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বলার চেষ্টা করবো। ত্বকের রূপচর্চায় ডাবের পানির জুড়ি মেলা ভার। কখন খাওয়া উচিত, কেন খাওয়া উচিত এগুলোই থাকছে এই আর্টিকেলে। 

চেষ্টা করবো সবকিছু সম্পর্কে ঠিক তথ্য দিতে। যখন প্রচন্ড গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, আবার যখন সমূদ্রের তীরে আমরা ঘুরতে যাই তখন একটা ডাব নিয়ে পানি খেতে বসার মজাই আলাদা।

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা

মুখে ডাবের পানি মেখে মেয়েরা এমনিতেই বসে থাকে না, এর বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে। ত্বকের যত্নে এই পানির কোন বিকল্প নেই। এটিকে আপনি তিনভাবে ব্যবহার করতে পারেন-

  • ১. ক্লিঞ্জার হিসেবেঃ এটি ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। এবং একইসাথে ত্বকের ময়লা দূর করে। একটি পাত্রে ডাবের জল নিয়ে তাতে একটি কটন বল চুবিয়ে এরপর ত্বকে ঘষতে থাকুন।
  • ২. টোনার হিসেবেঃ পানি এবং গোলাপ জল মিশিয়ে কটন বল দিয়ে মুখে ঘসুন। এতে মুখের ত্বকের আদ্রতা বাড়বে, Ph লেভেল ঠিক থাকবে আর, ত্বকের পোরস ছোট থাকবে।
  • ৩. স্ক্যাবার হিসেবেঃ চালের গুড়া, মধু এবং ডাবের পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। তারপর ২ মিনিট মাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এছাড়া, মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ডাবের পানি, মসুর ডালের পাউডার এবং এলোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ২০ মিনিট মাখিয়ে রেখে এরপর ধুয়ে ফেলবেন।

বসন্তের দাগ, মুখের ছোপ ছোপ দাগ এবং নানারকম দাগ দূর করে। এতে মুখের উজ্জলতা বাড়ে। মুখের ত্বকে স্কিক লাইটেনিং ক্রিমের বদলে এটি আপনারা ব্যবহার করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় উপকারিতা

গর্ভবতী নারী

ডাবের পানি শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে ইউরিনারি ট্যাক্ট পরিষ্কার থাকে এবং নানারকম সংক্রমণ থেকে গর্ভবতী নারীরা রক্ষা পায়।

  • মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে
  • ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে
  • পানির চাহিদা পূররণ করে
  • ওজন ঠিক রাখে

হজমের সমস্যা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম সহ নানারকম পুষ্টি উপাদান। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের শরীরের ওজন ঠিক রাখাটা জরুরি। এই পানি ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

যাইহোক, এই ব্যাপারে একজন পুষ্টিবিদের ভিডিও দেখে নিতে পারেন-

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা

কচি ডাবের পানিতে আছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট, এমাইনো এসিড এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। তবে, ডায়েবেটিস রোগীরা খাওয়ার আগে ভেবে নেবেন, কারণ এতে অনেক চিনি আছে। শরীরকে চাঙ্গা করতে এই পানির কোন বিকল্প নেই।

খালি পেটে ডাবের পানি

খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া কি উচিত?

যেসব খাবারে বেশী এসিডিটি তৈরি করে সেসব খাবার কখনোই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। তবে, ডাবের পানি সেরকম খাবারের তালিকায় পড়ে না। এটির কারণে পাকস্থলিতে খুব সামান্য এসিড তৈরি হয়। তাই, নিশ্চিন্তে খালি পেটে ডাবের পানি খেতে পারেন। তবে, এসিডিটি সংক্রান্ত মারাত্মক কোন রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

এবারে চলুন এর উপকারিতাগুলো দেখে নেই(খালি পেটে বা, ভরে পেটে যেভাবেই খান)-

  •  এতে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে
  • শরীর থেকে ক্ষতিকর সব উপাদান বের করে দিয়ে শরীরকে নিরোগ করে তোলে
  • ফাইবার শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করে
  • পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, তবে, কিডনির রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
  • পানির ঘাটতি দূড় করে এবং মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে
  • ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে
  • ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার কারণ, ডাবের পানি ডিহাইড্রেশন দূর করে মাথাব্যাথাও দূর করে
  • এনার্জি ড্রিঙ্কের তুলনায় অনেক কম ক্যালরি এবং চিনি থাকে, সেরা বিকল্প হতে পারে
  • খেলোয়াড়েরা এবং শারিরিক পরিশ্রম যারা করেন তাদের জন্য খুব উপকারী

গরমে বা, শীতের সময়ে যেকোন সময় ডাবের পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।  তবে, অতিরিক্ত পানির চাহিদা পূরণ করে বলে, গ্রীষ্মকালে ডাবের চাহিদাও বেশী থাকে।

ডাবের পানির অপকারিতা

সুস্থ মানুষের জন্য কোন অপকারিতা নেই, তবে রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যক। কিডনি রোগীদের কিছু সমস্যা হতে পারে। আবার উচ্চ রক্তচাপ যাদের আছে তাদেরও সমস্যা হতে পারে। চলুন কিছু অপকারিতা দেখে নেই-

  • কিডনি রোগীদের শরীরের পটাশিয়াম বের হতে সমস্যা হয়। আর, ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে। পানি বেশী খেলেও কিডনির সমস্যা হতে পারে
  • ওজন কমাতে চাইলে ফ্রেশ পানি খান, ডাবের পানিতে চিনি থাকে 
  • ডায়বেটিস রোগীরা এই পানি না খাওয়াই ভালো
  • সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায়, ডাবের পানিতে সোডিয়াম থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা এড়িয়ে চলুন

কিছু অপকারিতা থাকলেও সেগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আর, নির্দিষ্ট পরিমাণে সবাই পান করতে পারেন। রোগীদের জন্য একটু ভেবে নিতে হবে।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই খেতে পারেন। শ্রীলঙ্কায় শুনেছি নারকেল তেল দিয়ে রান্না করে খায়। আপনারাও চাইলে নারকেল তেল বানিয়ে রান্না করে খেতে পারেন। আর, এমনিতে তিনভাবে খেতে পারেন-

  • ডাবের উপরে বা, নিচে একপাশে ধারালো কিছু দিয়ে কেটে সেখানে মুখ লাগিয়ে
  • স্ট্র ব্যবহার করে, তবে রাস্তার পাশে যে স্ট্রগুলো দেয় সেগুলোতে ময়লা থাকে। পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো হয়
  • নারকেল তেল বানিয়ে রান্না করে

অপকারিতা, উপকারিতা সবই তো জানলেন। এখন আপনার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে কতটুকু পানি আপনার খাওয়া উচির, আদৌ খাওয়া উচিত কি না। তবে,  সুস্থ শরীরের সবাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

 

আরো পড়ুন-  


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

খালি পেটে রসুন ও মধু খেলে কি হয়?

আপনার যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান। কারণ খাবারের

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? আজকে একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলবো ওজন বাড়াতে সকাল দুপুর রাতে কি খাবেন? কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?
Untitled design

কোন বয়সে কতটুকু ভাত খাবেন

আসসালামু আলাইকুম এশিয়া মহাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ভাত খাওয়ার অভ্যেসকেই। প্রিয়

সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব।

Leave a Reply