ইসলামের জীবন বিধান দর্শন জ্ঞান-(এক)
ইসলামী জীবন বিধানের মূল কন্ঠস্বর হলো কোরআনের জ্ঞান দর্শণ ও আহলে বাইত প্রেম দর্শণ এবং এর যুগপৎ মিলন, যা নবী (সাঃ) কর্তৃক প্রদত্ত বিদায় হজ্জ্ব ভাষণের মূলভাব বাস্তবায়ন। উক্ত ভাষণে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সত্য-সঠিক পথ সিরাতাল মুস্তাকিমে থাকার এবং পথভ্রষ্ট না হওয়ার একমাত্র উপায় হলো- কোরআনের জ্ঞানার্জন প্রেম ও ইতরাত তথা আহলে বাইত প্রেম অন্তরে লালন করা। এহেন পন্থাই হলো ইসলামী জীবন বিধান এর মূল দর্শণ জ্ঞান এবং আমল-ইবাদতের মূল নির্যাস। সেই দর্শণ জ্ঞান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য-সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তা প্রতিপন্ন করাই অত্র নিবন্ধের মূল লক্ষ্য।
আল্লাহ–রাসূলের মহব্বতপূর্ণ স্বভাব গঠনই প্রকৃত জীবন বিধান দর্শণ জ্ঞানঃ
আল্লাহ বলেন- وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا آسَدُّ حُبَّا لِلَّهِ.
যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর সাথেই অত্যধিক মহব্বত রাখে।-বাকারাঃ১৬৫ আয়াত
এ আয়াতকে অন্যভাবে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহপাক বলেন- ‘আমি একটি নিহিত ধনাগার ছিলাম; নিজেকে পরিচিত করার জন্য ভালবেসে প্রকাশিত হলাম এবং আমাকে চিনার জন্য গগণ-ভূবণের সবকিছু সৃষ্টি করলাম।’ (হাদীসে কুদসী)
এর মানে, আল্লাহর তাবৎ সৃষ্টিই হলো তাঁর প্রেমের প্রতীক এবং বস্তুত প্রেমই সকল সৃষ্টি বিকাশের প্রজন্ম ধারা। প্রেম ছাড়া কোনো সৃষ্টির জন্মবিকাশ নেই। মনুষ্য জন্মপ্রক্রিয়াও সেই একই প্রেমের ফসল। তাই প্রেমগত সৃষ্টিকে স্বভাবগত কারণেই আল্লাহর প্রেমের মুখাপেক্ষী হতে হয়। প্রেম ছাড়া কোনো আমল-ইবাদতই বান্দার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ পাক আদম আলাইহিস সালামকে নিজ ছুরতে তৈরী করেছেন, তিনি বলেছেন- ‘ইন্নি খালাকা আদামা আলা ছুরাতিহী (কোরআন)। যে কারণে আদম সন্তানকে তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে- ‘তাখাল্লাকু বি আখলাকিল্লাহ- তোমরা আল্লাহর স্বভাবে স্বভাব গঠন করো (হাদীসে কুদসী)’ এবং কালামেপাকে আরো বলেছেন- صِبْغَةَ اللَّهِ. ছিবগাতাল্লাহ-আল্লাহর রঙে রং ধারণ করো বা স্বভাবে স্বভাব গঠন করো । (বাকারাঃ১৩৮)
এহেন স্বভাব গঠন করতে হলে সত্য-সঠিক-সিরাতাল মুস্তাকিম পথে থেকে কঠোর রিয়াজত সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগী করে যেতে হয় আজীবন।তাই আল্লাহপাক বলেন- اَلَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِسْنَا لَنَهْدِ يَنَّهُمْ سُبُلَنَا ط
অর্থাৎ যারা আমার পথে (তরিকতে) কষ্ট সহ্য করে, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে আমার নৈকট্য ও পূণ্যের পথ দেখাবো।(আনকাবুত:৬৯ আয়াত)
এহনে নৈকট্য ও পূণ্যের পথের মাধ্যম হলেন আল্লাহর হাবীব (সাঃ); যাকে ভালো না বাসলে, যার সুন্নত ও নৈতিক চরিত্র অনুসরণ-অনুকরণ না করলে আল্লাহর মহব্বত ও সন্তুষ্টি আদায় করা সম্ভব নয়। তাই আখেরী নবী (সাঃ) বলেছেন-‘তোমরা (ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ) মোমেন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের জান-মাল, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা এবং সমগ্র মানবকূল অপেক্ষা আামার সাথে (সর্বাধিক) বন্ধুত্ব রাখবে। (হাদীস)
তাই ইশকে রাসূল হলো ইশকে ইলাহীর মাধ্যম ও মানদণ্ড।
হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে- লাওলাকা লামা খালাকতু আফলাখ-(হে নবী) আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তবে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’ কারণ, তিনিই আদি সৃষ্টি, আদম নবীরও আগে তাঁর সৃষ্টি; একথারই প্রতিধ্বনী হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই বাণী- ‘হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন পানি ও মাটির কাদায় ছিলেন তখনো আমি নবী ছিলাম। (হাদীস)
তাই তিনি (নবী) নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন- যে আমাকে ভালোবাসলো, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহকে ভালোবাসলো। যে আমাকে অনুসরণ করলো সে আল্লাহকে অনুসরণ করলো, যে আমাকে দেখলো নি:সন্দেহে সে আল্লাহকেই দেখেছে। (হাদীস)
এটাই আল্লাহ প্রাপ্তির মাধ্যম অবলম্বন বা সিরাতাল মুস্তাকিম এর প্রকৃত নীতিজ্ঞান ও ইসলামী জীবন বিধানের সংবিধান।
ইসলামী জীবন বিধানে মাধ্যম অবলম্বনের দালিলিক প্রমাণঃ
কোরআন বলছেঃ
يَاَূيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوْূا اِلَيْهِ الْوَ سِيَلَةَ وَخَا هِدُ وْا فِىْ سَبِيْلِهِ لَعَلَّكُمْو تُفْلِحُوْنَ ০
‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু’ত্তাকু’ল্লাহা ওয়াবতাগু’ ইলাইহিল ওয়াসিলাতা, ওয়া যাহিদু’ ফি’সাবিলিহি লাআল্লাকুম তুফলিহুন -হে ঈমানদারগণ! (তোমরা) আল্লাহকে ভয়-মহব্বত করো এবং আল্লাহরই জন্য মাধ্যম অন্বেষণ বা ওসিলা তালাশ করো , আর তার পথে (আত্মিক ও কায়িকভাবে) জিহাদ করো; যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৩৫); সূরা বাকারা ১৪৩ আয়াতে বলা হয়েছে-
وَكُظَلِكَ جَعَلْنَكُمْو اُمَّتً وَّسَطًا لّ ِتَكُوْنُوْا شُهَدَاূءَ عَلَى النَّا سِ
এমনিভাবে আমি তোমাদেরকেকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্টিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পারো এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন।’ এর মানে উম্মতে মুহাম্মদীর পরিচয়ই হচ্ছে- মাধ্যম ও মধ্যপন্থা অবলম্বনের জাতিরূপ।
আল্লাহ বলছেন- فَلَا تَخَا فُوْهُمْو وَخَا فُوْنِ
‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভক্তি-ভয়-মহব্বত করো। (আলে ইমরানঃ ১৭৫ আয়াত);
এই আল্লাহর ভীতিময় প্রীতি যার অন্তরে বিরাজমান থাকে সেই হতে পারেন নেক্কার মুমিন মুহাম্মদী উম্মত ও আল্লাহর প্রিয় (ওলী) বান্দা। কিন্তু মনুষ্য যাপিত জীবনের ক্ষেত্রে বেশীরভাগই দেখা যায় যে, তারা আল্লাহর পরিবর্তে আল্লাহরই সৃষ্টিবস্তুকে অধিক বেশী ভালোবাসে, যা শেরেকীর পর্যায়ভূক্ত হচ্ছে ও হবার। এরাই পথভ্রষ্ট সিরাতাল মুস্তাকিম বিপরীত ধারার পথের পথিক। এদের পূর্বসূরীরাই ছিলো এজিদী-আবু জাহেলী চরিত্রের বেঈমান বদকার মালউনী (অভিশপ্ত) বান্দা, কাফের-মুশরিক-ফাসেক-মোনাফেক বান্দা।
যাপিত জীবন বোধের ইসলামী দর্শণলব্ধ নীতিজ্ঞানঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ আনহু বর্ণিত হাদিস মতে – নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে, সে যেন উত্তম কথা বলে কিংবা চুপ থাকে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বদনাম করার উদ্দেশ্যে কোনো কথা প্রচার করে, কেয়ামত দিবসে সে কারণে আল্লাহ তা’আলা তাকে আগুনে নিক্ষেপ করে হেয় করবেন।’
হযরত আবু দারদা রাদিআল্লাহ আনহু সূত্রে বর্ণিত হাদীসে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- দুনিয়াতে কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে, তবে আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করে হেয় করবেন।’
বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি সাতটি কথা (প্রশ্নের উত্তর) জানার জন্য সাতশ’ ফরশখ (প্রতি তিন মাইলে এক র্ফসখ) সফর করে এক তত্ত¡জ্ঞানীর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে জ্ঞান দান করেছেন, তা থেকে কিছু আহরণ করার জন্য আমি এসেছি। আপনি বলবেন কি?-
১ আসমানের ওজন কি পরিমাণ এবং আসমানের চেয়ে বেশী ওজনী কোন জিনিস?
১. জমিনের ওজন কত এবং এর চেয়ে কোন বস্তু ভারী?
২. পাথর সম্পর্কে বলুন, এর চেয়ে শক্ত ও কঠিন বস্তু কোনটি?
৩. আগুন সম্পর্কে বলুন, এর চেয়ে উত্তপ্ত কোন জিনিস?
৪. যামহারীর (সীমাহীন ঠাণ্ডা দোযখ) সম্পর্কে বলুন, এর চেয়ে অধিক ঠাণ্ডা কোন বস্তু?
৫. সাগর সম্পর্কে বলুন, এর চেয়ে বেশী প্রশস্ত কি?
৬. এতীম সম্পর্কে বলুন, এর চেয়ে হেয়-লাঞ্ছিত কে?
তত্ত্বজ্ঞানী জবাব দিলেন-
১. নিষ্পাপ-নির্দোষ লোকের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে আসমানের চেয়েও ভারী গুনাহ।
২. হক (সত্য ও ন্যাসঙ্গত) কথা জমিন অপেক্ষা অধিক ওজনী।
৩. কাফেরের অন্তর পাথরের চেয়েও অধিক শক্ত ও কঠিন।
৪. লোভ-হিংসা আগুন অপেক্ষাও অধিক উত্তপ্ত।
৫. নিকটাত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনের কাছে কোনো অভাব এবং প্রয়োজন পেশ করার পর তা পূরণ না
হওয়া তা যমহারীর অপেক্ষাও অধিক ঠাণ্ডা।
৬. অল্পে তুষ্ট ব্যক্তির অন্তর সাগর অপেক্ষাও বেশী প্রশস্ত।
৭. চোগলখোরের (গীবতকারীর) অপকর্ম যখন প্রকাশ পেয়ে যায়, তখন সে এতীম-অনাথের চেয়েও
অধিক হেয়-অপদস্থ হয়। (মুকাশাফাতুল কুলূব)
অধিকার আদায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধে করণীয় বৈধ বিধানঃ
আল্লাহপাক মন্দ লোকদের মন্দ কুটকৌশল মোকাবেলায় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ব্যবস্থাও করে রেখেছেন কোরআনে, যেন তারা বলতে না পারে যে, মন্দ লোকের সাথে মন্দ আচরণ করা কোরআনে নিষিদ্ধ, গীবতকারীর বিরুদ্ধে গীবত করা যাবে না, খুনের বিপরীতে কাউকে খুন করাও যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কালামেপাক কোরআনের একটি আয়াতের আলোকে ক্ষেত্র বিশেষে গীবত করাও জায়েয আছে, যদি গীবত সর্ব্বে পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ- সূরা নিসা ১৪৮ আয়াতে বলা হয়েছে- لَايُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوْূءِ مِنَ الْقَوْلِ اِلَّا مَنْ ظُلِمَو ط
‘মানুষ মন্দ কথাবার্তা বলুক তা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে তার ব্যাপারটি আলাদা (স্বতন্ত্র)।’ অর্থাৎ নির্যাতিত ব্যক্তির জন্য তার অধিকার আদায়ে, বিচার প্রার্থনায়, অন্যায়ের প্রতিবাদে, লোকজনকে জানানোর লক্ষ্যে গীবত (মন্দ লোকের আচরণ অন্যকে অবহিত) করাসহ শালিনতার মধ্যে মন্দ বলাও জায়েয আছে।
কোনো ব্যক্তি কোনো দোষের কাজে বা পাপাচারে লিপ্ত থাকলে সে সম্পর্কে এমন ব্যক্তিকে অবহিত করা গীবত হবে না – (১) যে তাকে বারন করতে পারবে, (২) উপদেশ দিতে পারবে বা (৩) তার উপর প্রভাব খাটিয়ে তার সংশোধন করতে পারবে। কারণ, এ ধরনের গীবতের দ্বারা অভিযুক্ত ব্যক্তিরই উপকার হয়।
‘লজ্জা দিয়ে পাপ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে গীবত করা জায়েয। কোনো ব্যক্তি কোনো দোষের কাজে লিপ্ত থাকলে এ উদ্দেশ্যে তার গীবত করা বৈধ যে, তার দোষের কথা অপর ব্যক্তি জেনে ফেলেছে এ কথা জানতে পেরে সে লজ্জিত হয়ে দোষের কাজ পরিহার করবে। (কবীরা গুনাহ ও গীবতঃ পৃ: ২৩৭)
কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত থাকলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তাঁর গীবত করা বৈধ। যেমন- কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ে না অথবা লোকদের উপর জুলুম করে অথবা
মদ পান করে ইত্যাদি। এ জন্য সাধক ও আলেমগণ স্বৈরাচারী শাসকের গীবত করেন। (নুযহাতুল মাজালিস, রুদ্দুল মুহতার, শারহু সহীহ মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে এ প্রকারের গীবত বৈধ বলা হয়েছে।)
সুফিয়ান ইবনে উমাইয়া রহমতুল্লাহে আলাইহি বলেন, তিন ব্যক্তির গীবত করা বৈধ:
১. যালেম শাসক, (২) প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি ও (৩) বিদআতী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তি, যে অন্যদেরও বিদআত শেখায়। (দুররুল মানছুর); হাসান বসরী রহমতুল্লাহে আলাইহি-ও অনুরূপ কথা বলেছেন। (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন)
এক ব্যক্তি দ্বারা অপর ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিন্তু সে (ক্ষতিকর ব্যক্তি) অবহিত নয় যে, তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় তার গীবত করা বৈধ, যাতে সে অন্য লোকের ক্ষতির কারণ না হয়। (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, নুযহাতুল মাজালিস, মাতালিবুল মুমিনীন, রুদ্দুল মুহতার, শারহু সহীহ মুসলিম কিতাবে এ শ্রেনীর গীবতকে অনুমোদন করা হয়েছে।)
যে ব্যক্তি নির্লজ্জোভাবে প্রকাশ্যে পাপ কাজ করে বেড়ায় এবং কেউ সমালোচনা করলে বা সতর্ক করলে তার কোনো প্রভাব তার উপর পতিত হয় না- এ ধরনের লোকদের গীবত করা বৈধ। এ কারনেই সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহ আনহু)গণ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নয়নমণি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিআলাহ আনহু শহীদে কারবালার হত্যাকারীদের গীবত করতেন এবং তাদের ভর্ৎসনা করতেন। কারণ, তারা ছিল নির্লজ্জো এবং তারা নিজেদের এহেন জঘন্য দোষ-অপকর্মকেও পরিপক্ক বুদ্ধির কাজ বলে মনে করতো। তাই তাদের বিরুদ্ধে এহেন গীবতকে অনুমোদন করা হয়েছে – এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, আইনুন ইলম, দুররুল মুখতার, রুদ্দুল মুহতার, মাতালিবুল মুমিনীন ও সীরাতে আহমাদিয়া গ্রন্থে। মোনাফেকীর বিরুদ্ধে গীবত করাও বৈধ।
শেখ সাদী (রহ)-এর ভাষায়- তিন ব্যক্তির গীবত করা বৈধ: বেহায়ার, স্বৈরাচারী শাসকের এবং যার গোপন পাপাচার অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়। (কবিরা গুনাহ ও গীবতঃ পৃ: ২৪০)
তাছাড়া দু:খ ও আক্ষেপের আকারে গীবত করা বৈধ; কোনো ব্যক্তির নামোল্লেখ না করে তার গীবত করা বৈধ; মানুষকে পাপাচার বা তার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য কোনো জীবিত ব্যক্তির বা মৃত ব্যক্তির গীবত করা এবং এর সাথে তার শাস্তির কথা উল্লেখ করা বৈধ।
অর্থাৎ প্রমাণিত হলো যে, ইসলামী জীবন বিধান ভারসাম্যমূলক, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমূলকও বটে। সরাসরি কাউকে আঘাত নয় কিন্তু আঘাত প্রাপ্ত হলে প্রতিঘাত করা যাবে, প্রতিরোধ করা যাবে আত্মরক্ষার বিধানে। (চলবে)
