গল্প এ বাঁধন ছেঁড়া যাবে না আফছানা খানম অথৈ

0

এ বাঁধন ছেঁড়া যাবে না

আফছানা খানম অথৈ

নীল পরিবারের একমাত্র ছেলে।লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যে মন দিলো।ব্যবসার কাজে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শহরে অধিকাংশ সময় আসা যাওয়া করে।একদিন তার সাথে পরিচয় হয় অনার্স এ পড়া কনার সঙ্গে।কনা ভার্সিটিতে যাবে ষ্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।ঠিক তখনি নীল গাড়ি থামিয়ে বলল,
“এক্সিউজ মি”
কোথায় যাবেন?
কনা আশ পাশ তাকিয়ে দেখল আর কেউ নেই।তখনি বলল,
আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ আপনাকে।
আমি ভার্সিটিতে যাব।গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।
উঠুন আমার গাড়িতে। আমি পৌছে দেব।
কনার ভার্সিটির সময় বয়ে যাচ্ছে।কিন্তু গাড়ি আসছে না।এখন তার যাওয়াটা সমুচীন হবে।তাই ভেবেচিন্তে গাড়িতে উঠে বসলো।দু’জনের মাঝে আলাপ পরিচয় হলো।ভার্সিটির গেটে কনাকে নামিয়ে দিয়ে নীল অফিসে গেল।
কিন্তু সে কি!কনাকে সে ভুলতে পারছে না।বারবার তার কথা মনে পড়ছে।পরদিন একই সময় কনার সাথে আবার ও তার দেখা।সেদিনও নীল তাকে লিফট দিয়েছিল।এমনিভাবে কয়েক দিন কনাকে নীল লিফট দিয়েছিল।তারপর থেকে দু’জনের মাঝে ভালো ভাবসাব তৈরী হয়।কনা পরিবারের বড় মেয়ে।বাবা নেই,মা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকরী করে তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছেন।মোটামুটিভাবে চলছে তার ছোট্ট সংসার।কনা পড়ালেখায় খুব ভালো।মায়ের ইচ্ছা মেয়েকে বড় বিদ্যান বানাবেন।তাই শত কষ্টকে বুকে চেপে মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন সর্বদা।কনা শুধু মেধাবি না,খুব সুন্দরী বটে।তাই প্রথম দেখাতে নীল চৌধুরী তার প্রেমে পড়ে যায়।একদিন ফোন করে কনাকে নীল বলল,
I love you.কনা।
কনা না বুঝার ভান করে বলল,
কী বললেন।আমি বুঝিনি।আবার বলেন।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
হোয়াট?
সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নীল সাহেব এটা নাটক মুভিতে শোভা পাই।বাস্তবে নয়।
আমি বাস্তবে তা পরিণত করব।
কখনো পারবেন না।বাস্তব বড় কঠিন।তাছাড়া অর্থ,প্রাচুর্য ঐশ্বর্য ফ্যামিলি স্ট্যাটার্স সবদিক দিয়ে আপনার আর আমার মাঝে অনেক ফাঁরাক।এ ফাঁরাক কখনো ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করা যাবে না।অতএব আপনি আপনার প্রস্তাব ফিরিয়ে নিন।
না কনা আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমার দু’চোখের পাতায় শুধু তুমি।আর কেউ না।
এটা বিত্তশালী পুরুষদের একরোখা চাওয়া পাওয়া, বয়সের দোষ,আবেগের মোহ, কিছুদিন যাক ঠিক ভুলে যাবেন।
না কনা আমি তোমাকে মৃত্যু অবধি ভুলবো না।
বিশ্বাস করি না।
সত্যি সত্যি,তিন সত্যি।
ক’দিনের জন্য এ ভালোবাসা?
চিরদিনের জন্য।
তার প্রমাণ?
একবার ভালোবেসে দেখ না।
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে,ক’দিন ফুর্তি করে আবার ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন নাতো?
না দেবো না।সারা জীবন বুকে জড়িয়ে রাখব।তুমি কাল একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
হুম পারবো।
ওকে। এখন রাখি বাই বাই।
পরদিন কনা সময়মতো নীলের সঙ্গে দেখা করলো।নীল কোনকিছু না বলে কনাকে নিয়ে গেল কাজী অফিসে।তারপর বিয়ে করে সরাসরি নিজের বাসায় নিয়ে আসল।নীলের বাবা নেই,মা আছেন।আর আছেন আদরের একটা ছোট্ট বোন।কলিংবেল টিপতেই দরজা খুলে ছোট্ট বোন মম একি দেখল, শাড়ী পরিহিতা টুকটুকে লাল একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দেখতে হুবাহুব বউয়ের মতো লাগছে।মম মিষ্টি হেসে বলল,
ভাইয়া উনি কে?বউ বউ লাগছে?
ঠিক বলেছিস।তোর ভাবী ভিতরে নিয়ে যা।
সত্যি বলছিস ভাইয়া?
হুম সত্যিরে?
তাদের উচ্চ বাক্যালাপ শুনে ছুটে আসলেন মাতা রোজা চৌধুরী।রোজা চৌধুরী বদমেজাজি ও অহংকারী টাইপের।গরীব দু:খী আত্মীয় অনাত্মীয় কাউকে এলাউ করেন না।আর উনি মানবেন নিন্ম শ্রেণির একজন মেয়েকে একমাত্র ছেলের পুত্রবধু হিসেবে প্রশ্নই উঠে না।ছেলের পাশে বউ বেশ একটা মেয়েকে দেখে বললেন,
নীল মেয়েটি কেরে?
নীল নি:সংকোচে উত্তর দিলো,
আমার স্ত্রী কনা চৌধুরী।
কী বললি,তুই বিয়ে করলি কখন?
আজকে কাজী অফিসে।মাকে সালাম কর কনা।
কনা এগিয়ে গেল সালাম করার জন্য।আর তখনি রোজা চৌধুরী পা সরিয়ে নিয়ে বললেন,
আমি এ বিয়ে মানি না।
কেনো মা?
কোথাকার কোন আজে বাজে মেয়ে হবে চৌধুরী বংশের বউ। হতে পারে না।তুই ওকে ওর বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আয়।
জ্বি না মা।কনা আমার বিবাহিতা স্ত্রী।ওহ্ আমার সঙ্গে এ বাড়িতে থাকবে।এসো কনা।
কনার হাত ধরে নীল তাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল।ঠিক তখনি রোজা চৌধুরী তার পথ আটকে বলল,
এই তুমি এ বাড়িতে যাবে না।
নীল উত্তর দিলো,
মা যদি কনাকে তাড়িয়ে দাও।আমিও তার সঙ্গে চলে যাব।তুমি পারবে তো একা একা থাকতে?
কিছুক্ষণের জন্য রোজা চৌধুরী থমকে গেল।আর তখনি নীল কনাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।কনা যেমন রুপবতী তেমনি গুনবতী।অল্প সময়ের মধ্যে সংসারের কাজকর্ম গুছিয়ে নিয়েছে।কাজের লোক থাকা সত্ত্বে ও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে।তারপর সবার জন্য নাস্তা বানায়।একদিন নীল বলল,

কনা কাজের লোক থাকা সত্বেও তুমি রান্না কর কেনো?
নীল সাহেব আল্লাহর হাবীবের নির্দেশ বিয়ের পর প্রত্যকে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ানো।এতে পূন্যে হয়।আদর ভালোবাসা বাড়ে।সংসারে সুখ শান্তি বিরাজ করে।
তাই নাকি?
জ্বি সাহেব তাই।
তাহলে একটু কাছে আস আদর করি।
প্লিজ নীল সাহেব এখন নয়।হাতের কাজগুলো সেরে আসি তারপর।
নীল এমন একটা বউ পেয়ে খুব খুশি।কিন্তু মা কিছুতে কনাকে পুত্রবধু হিসেবে মানছেন না।কথায় কথায় ছোট লোক বলে খোটা দেন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাষা ব্যবহার করেন।বউয়ের কোন কাজে উনি সন্তুষ্ট নয়।পান থেকে চুন খসলে আজেবাজে ভাষা ব্যবহার করেন।শুধু তাই নয় তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি ও দেন।কনা নীরবে নিভৃতে সবকিছু হজম করে চলেছে।প্রতিবাদ করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারছে না।এর ফাঁকে কেটে গেল কিছু সময়।নীল ব্যবসার কাজে বাইরে গেল।কনার মা নিলুফার ইয়াসমিন মেয়েকে দেখতে আসলেন।সঙ্গে কিছু ফল ফলাদি ও মিষ্টি নিয়ে আসলেন।কলিংবেল টিপতেই কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো।তিনি ভিতরে ঢুকতেই দেখা হলো বেয়াইনের সঙ্গে।তাকে সম্মানের সহিত সালাম দিলেন।তিনি সালামের জবাব না দিয়ে বললেন,
আপনি কে?কথাবার্তা ছাড়া আমার বাসায় ঢুকে পড়লেন?
আমি কনার মা।কেমন আছেন আপনি?
শুরুতে কটু ভাষা।
এই যা ছোট লোকেরা এমন হয়।সম্পদের লোভে বড় লোকের বাড়িতে আপনা আপনি ঢুকে পড়ে।যেমন ঢুকিয়ে দিয়েছে মেয়েটাকে আমার বাড়িতে।আবার নিজেও চলে এসেছে।কী মতলব আপনাদের বলেন তো?টাকার জন্য বুঝি এসব অভিনয় করছেন?
বেয়াইন এসব কী বলছেন টাকার জন্য অভিনয় করব কেনো?আপনার ছেলেতো আমার মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।কনা এ বাড়ির বউ।
প্রশ্নই উঠে না।এ দু’টাকার মেয়ে কখনো চৌধুরী বাড়ির বউ হতে পারে না।আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যান।আমি কখনো তাকে এ বাড়ির বউ হিসেবে এলাউ করবো না।
কথাগুলো শুনার পর কনার মায়ের হৃদকম্প শুরু হয়ে গেল।তখনি সেখানে উপস্থিত হলো কনা।কনা মাকে দেখে বলল,
মা তুমি কখন এলে?
এইতো কিছুক্ষণ।
মা চলো ভিতরে চলো।
মায়ের হাত ধরে কনা ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল।তখনি রোজা চৌধুরী কড়া ধমক দিয়ে বলল,
কনা তোমার এত বড় স্পর্দা, এই ছোট জাতের মহিলাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছ।এক্ষণই মা মেয়ে দু’জন বেরিয়ে যাও।তানা হলে দারোয়ান ডেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।
এতদিন পর কনার মুখ ফোটেছে।সেও পাল্টা জবাব দিলো,
দেখুন মা, এতদিন মুখ বুঝে আমি অনেক সহ্য করেছি,আর নয়।আমার স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আমি এক পাও নড়ব না।
এটা তোমার স্বামীর বাড়ি নয়।আমার স্বামীর বাড়ি।
মা আপনি ভুল বলেছেন।আপনার যেমন স্বামীর বাড়ি আমারও তেমনি স্বামীর বাড়ি।আমার স্বামী তাড়িয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমি এ বাড়িতে থাকব।
এতো বড় সাহস, আমার মুখে মুখে তর্ক।
প্লিজ মা শান্ত হউন।আমি তর্ক করিনি।শুধু ভুলটা দেখিয়ে দিয়েছি।মা আপনি নিজে ওতো একজন নারী।নারী হয়ে কেনো নারীকে অসম্মান করছেন?
কী আমি তোমাকে অসম্মান করছি।আসম্মান তো তুমি আমাকে করছ।যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা।আমি তোমাকে এ বাড়িতে থাকতে দেবো না।
বলতে না বলতে তিনি মা মেয়ে দু’জনকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন।ভিতরে ঢুকবার কোন উপায় নেই।তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন।কনার শত অনুরোধেও তিনি দরজা খুললেন না।নিরুপায় হয়ে কনা মায়ের সঙ্গে চলে গেল।
এদিকে নীলের আসার ও সময় হলো।তাই বউকে খবরটা বলার জন্য মুঠোফোনে ফোন করলো।কিন্তু কোন কানেকশন হলো না।বারবার চেষ্টা করার পরও কোন সংযোগ স্থাপন হলো না।নীল খুব টেনশনে পড়ে গেল।মাকে কনার কথা কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন।তাই কিছু জিজ্ঞাসা না করে সময়মতো দেশে ফিরে আসল।বাসায় ফিরে প্রথমে মায়ের সাথে দেখা হলো।তারপর কনাকে না দেখে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল,
মা কনাকে দেখছি না যে?সে কোথায়?
ছেলেকে ভুলানোর জন্য মা মায়া কান্না কেঁদে ইনিয়ে বিনিয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলতে শুরু…,
বাবা নীল এই ছোট জাতের মেয়েটার কথা মুখে আনিস না।ওকে ভুলে যা।এই মেয়ে খারাপ চরিত্রহীনা।সে তোকে ভালোবাসে না।তার অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশন আছে।
প্লিজ মা থাম।আমি এইসব বিশ্বাস করি না।
বাবা নীল এই মেয়ে তোকে জাদু করেছে।তাই আমার কথা বিশ্বাস করছিস না।কিন্তু আমি তো মা আমি তা সহ্য করবো কিভাবে।তাই সত‍্য কথাগুলো না বলে পারলাম না।তুই চলে যাবার পর কনা ছেলেটার সঙ্গে রোজ রোজ কথা বলত।যখনি আমার কাছে ধরা পড়লো।তখনি সবকিছু অস্বীকার করলো।শুধু তাই নয়।আমার সঙ্গে অনেক বাজে আচরণ করলো।অনেক তর্কও করলো।তারপর ফোন রেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে চলে গেল।
কোথায় গেল?
কোথায় আবার, হয়তো ঐ ছেলেটার সঙ্গে পালিয়েছে।বাবা তুই ওকে ভুলে যা।আমি তোকে অনেক বড় ঘরে বিয়ে দেব।
হাজার হলেও মাতো,ছেলের মনে কিছুটা হলেও বিশ্বাসের আলো ছড়িয়েছে।তাই আর কোন কথা না বলে চুপ হয়ে গেল।তারপর ছুটে গেল শ্বশুর বাড়িতে।দরজার কড়া নাড়তেই কনার ছোট বোন দরজা খুলে দিলো।নীল বলল,
রিয়া তোমার আপু কোথায়?
এশার নামাজ পড়ছে।
নামাজের কথা শুনে নীল বলল,
সে কী মা বলল কি আর হলো কী।তবে কি মা সব বানিয়ে বলল।না তবুও একবার সত্য মিথ্যা যাচাই করা দরকার।ভাবনার অবসান হতে না হতে কনা তার পাশে এসে দাঁড়াল তারপর আস্তে করে বলল,
নীল সাহেব কখন এসেছেন?
এইতো কিছুক্ষণ।তুমি আমাকে না জানিয়ে এভাবে চলে এলে কেনো?
নীল সাহেব আমি আসেনি।মা জোর করে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু মা যে বলল…।
আমি আপনা আপনি চলে এসেছি।
হ্যাঁ তাই।
ওটা সম্পূর্ণ মিথ্যে বানোয়াট গল্প।শুধু তাই নয়।মা আমাকে তাড়ানোর প্ল্যান করছে।তাই এসব মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে।মা চান আমি তোমাকে ত্যাগ করি।তাই আজে বাজে কথা বলে তোমার কান ভারী করছে।আর তুমি ও সব বিশ্বাস করলে?
না কনা ঠিক তাই নয়।এখন চলো।
কোথায়?
আমার বাসায়।
মা যদি আবার তাড়িয়ে দেন।
আমি আছি।কিচ্ছু হবে না।চলো।
নীল কনাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।তারপর নীল মাকে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলল,
মা কনা খুব ভালো মেয়ে।ওকে
পুত্রবধু হিসেবে মেনে নাও।সে তোমার সবকাজ করে দেবে।তোমার অনেক সেবাযত্ন করবে।
মা রেগে উঠে বলল,
নীল আমাকে জ্ঞান দিস নাতো। আমি কখনো এই দু’টাকার নিচু তলার মেয়েকে বউ হিসেবে এলাউ করবো না।ওকে এই বাড়ি ছাড়তে হবে।যেমন করে হোক ওকে আমি তাড়াবোই।
মা আমি ওকে ভালোবাসি।ভালোবাসার বন্ধন চিরস্থায়ী বন্ধন।এ বাঁধন ছেঁড়া যাবে না।খোলা যাবে না।তাই বলছি, প্লিজ মা নাটক মুভির মতো আর অভিনয় না করে ভালো হয়ে যাও।আমি চাই না,আমার মাকে অন্য লোক অপমান করুক।আমি হাত জোড় করে বলছি, এখনো সময় আছে মা ভালো হয়ে যাও।কনাকে বউ হিসেবে মেনে নাও।তবে আমরা সবাই সুখী হব।এর ব্যতিরেকে নয়।
তিনি আপাতত থামলেন। কিন্তু মনের কলুষতা দূর হলো না।মনের ভিতর কনাকে তাড়ানোর জিলাপির প্যাঁচ তৈরী করছেন।
এর ফাঁকে কেটে গেল কিছু সময়।নীল কনাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।আর এই সুযোগে মা তার অলংকারের বক্সটা কনার ঘরে রেখে এসেছে।পরদিন তিনি পাটিতে যাবেন।এই উছিলায় অলংকার খুঁজছেন।সারা আলমিরা তন্ন করে দেখলেন।কোত্থাও অলংকার নেই।তারপর চিৎকার জুড়ে দিলেন।নীল ছুটে এসে বলল,
মা এমন চিৎকার করছ কেনো?কী হয়েছে?
আমার অলংকারের বক্স খুঁজে পাচ্ছি না।
ভালো করে দেখ।
ভালো করে খুঁজেছি।কোত্থাও নেই।তোর বউকে জিজ্ঞাসা কর অলংকার নিয়েছে কিনা?
কনা এগিয়ে এসে বলল,
মা আমি আপনার অলংকার নেইনি।
সত্যি বলছতো?
জ্বি মা সত্যি।
মুখের কথায় বিশ্বাস নেই।আমি তোমার ঘর চেক করবো।
বলতে না বলতে তিনি ছুটে গেলেন কনার ঘরে।তিনি জানেন অলংকার কোথায়।তবুও কিছুক্ষণ সময় নিয়ে খোঁজা খুঁজি করলেন।তারপর অলংকারের বক্সটা বের করে কনাকে বললেন,
আমার অলংকার চুরি,না?তোমার আর এই বাড়িতে জায়গা হবে না।চোর,ছোট লোক কোথাকার,বের হও আমার বাড়ি থেকে।
কনা অনুনয় বিনয় করে বলে,
মা আমি চুরি করিনি।
তাহলে তোমার বক্সে আমার অলংকার এলো কি করে?
সত্যি বলছি মা আমি জানি না।
কে শোনে কার কথা।রোজা চৌধুরী কনাকে টেনে হেঁচড়ে বের করে দিচ্ছে।নীল জানে এটা ষড়যন্ত্র।কনাকে বের করার জন্য মা ষড়যন্ত্র করেছেন।যেমন করে হোক কনাকে বের করে ছাড়বেন।উনাকে কিছুতেই থামানো যাবে না।তাই নীল নিমিষেই কীটনাশক ঔষধ ঢগঢগ করে খেয়ে ফেলল।কনা তা দেখে বলল,
আপনি একা মরবেন কেনো?আমি ও আছি আপনার সাথে।সে আর দেরী করলো না।বাকী ঔষধটুকু খেয়ে নিলো।দুজন কাত হয়ে পড়ে গেল।রোজা চৌধুরী কেঁদে কেঁদে বলল,
নীল তুই একি করলি।আমাকে ছেড়ে চলে গেলি।
মা আমি ঠিক করেছি।তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না।কনা চুরি করেনি।আমি জানি এটা তোমার ষড়যন্ত্র।মা তুমি আমাদেরকে আলাদা করার জন্য আর কত নিচে নামবে।ছি: মা ছি: তুমি শেষ পর্যন্ত কনাকে চুরির অপবাদ দিলে?জানি মা আমরা বেঁচে থাকলে তুমি বারবার ষড়যন্ত্র করবে।তাই মরে সব সমস্যার সমাধান করলাম।বলেছি না মা “এ বাঁধন ছেঁড়া যাবে না”।মা তোমার সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলো।পারলে না আমাদেরকে আলাদা করতে।আ….মা……কে…ক্ষ….মা….ক….রে. ..দিও।নীল কনার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেল।তারা মারা গেল।রোজা চৌধুরী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to “গল্প এ বাঁধন ছেঁড়া যাবে না আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply