লেখালেখি

ছোট গল্প লেখার ৮ টি নিয়ম

play icon Listen to this article
0

শিক্ষণীয় বা, উপভোগ্য কোন ক্ষুদে গল্প, অণুগল্প বা, ছোট গল্প লেখার ক্ষেত্রে এই আটটি নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। আমরা এই ৮ টি নিয়মের ধারণা পেয়েছি বিখ্যাত আমেরিকান লেখাক Kurt Vonnegut এর দেয়া বর্ণনা থেকে। 

শিবব্রত বর্মণ তাঁর একটি লেখায় বলেছেন,

“দুনিয়ার সব লেখক এ বিষয়ে একমত হয়ে গেছেন যে গল্প লেখার কলাকৌশল কেউ কাউকে শিখিয়ে দিতে পারে না”

সাজেদা হক তাঁর লেখায় ৭টি বিষয়কে ছোটগল্প লেখার কৌশল হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনিও বলেছেন,

“সবাই একভাবে লেখা শুরু করে না, সবার শুরু করার ধরণ আলাদা”

তবে, সবাই কিছু বিষয়ের কথা বলেন বা, সবার লেখাতেই সাধারণ কিছু ব্যাপার দেখা যায়। যেমনঃ দৃশ্যকল্প, ধাঁধাঁ, বাণীর ব্যবহার, সংঘাত, রহস্য ইত্যাদি। 

এটিকে অনেকে দাবা খেলার সাথে তুলনা করেন। শুরু করার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয় বটে, জয় পরাজয় নির্ভর করে নিজের অন্তর্দৃষ্টি আর, বিশ্লেষণের উপর। কেউ চান শুরুতেই পুরো গল্পের সারবস্তু বলে দিতে, কেউ চান অনিশ্চয়তার দোলা দিয়ে যেতে।

জেনে নিন ছোট গল্প লেখার নিয়ম

১. সম্পূর্ণ অপরিচিত কারো জন্য এমন গল্প লিখুন যা পড়ে মনে হয় যে সময়ের সদ্ব্যবহার হলো

২. গল্পের অন্তত একটি চরিত্র এমন রাখুন যাতে পাঠক বা, পাঠিকা নিজেকে তার মাঝে খুজে পায়

৩. প্রতিটি চরিত্রই যেন কিছু পাওয়ার আশা রাখে, হতে পারে এক গ্লাস পানি বা, সামান্য কিছু

৪. প্রতিটি বাক্যই যেন কোন কিছু বর্ণনা করে- চরিত্রের কোন কাজ বা, চরিত্রটাকেই বর্ণনা করে। 

৫. এমন জায়গায় শুরু করবেন যেন সেটা গল্পের শেষটার সাথে সংযুক্ত থাকে

৬. চরিত্র যত নিরপরাধই হোক, তাকে নাটকীয় কিছু করাবেন। যেকোন বৈশিষ্ট্যকে নির্মমভাবে ফুটিয়ে তুলুন, যাতে পাঠক সেখানে নতুন কিছু খুজে পায়

৭. প্রসঙ্গে থাকুন, একটি বিষয় থেকে অন্য কিছুতে চলে যাবেন না। কারো চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে প্রকৃতিতে ডুব দেবেন না। 

৮. সবকিছু সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাদের স্পষ্ট ধারণা দিন।  প্রথম থেকেই তারা পুরো বইটা আন্দাজ করতে পারবে, শুধু শেষ পাতাগুলো হবে উইপোকায় খাওয়া। 

রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ- লেখক ডট মি
বিজ্ঞাপনঃ রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্য

আপনি চাইলে কবিগুরুর উপদেশও মানতে পারেন, ছোট গল্প নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা
নিতান্ত সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারটি অশ্রু জল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
জগতের শত শত অসমাপ্ত কথা যত,
অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল,
অকালের জীবনগুলো, অখ্যাত কীর্তির ধুলা,
কত ভাব, কত ভয় ভুল-

এই কথাগুলো রবীন্দ্রনাথের বর্ষাযাপন কবিতা থেকে নেয়া। সেখানে কবি তার চিরাচরিত কাব্যিক ঢঙে ছোট গল্পকে ব্যাখ্যা করেছেন। এই গল্পগুলো আবার নানারকম হয়ে পারে- প্রকৃতিকেন্দ্রীক, প্রেমবিষয়ক, সামাজিক, ভৌতিক, হাস্যরসাত্মক, উদ্ভট, সাংকেতিক, ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্বিক ইত্যাদি।

গল্প বলা শেখার জন্য কিছু বইয়ের সাজেশন

এই বইগুলো পড়লে অনেক কিছু শিখতে পারবেন, তাতে আপনার লেখা আরো শাণিত হবে। নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী বা, মনের আনন্দে লেখা যেটাই হোক সেটারই মাণের উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া বই পড়ার আনন্দ তো অন্তত পাবেন, সেটাই বা কম কি? বইগুলো দেখে নিন- 

 

 ছোট গল্প নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর

১. বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প কোনটি?

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প হচ্ছে দেনা পাওয়া, ঘাটের কথা হচ্ছে প্রথম ছোটগল্প

২. রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্য কি?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ তার বর্ষাযাপন কবিতায় ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্য বলেছিলেন, তবে তার গল্পের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি তার এই বক্তব্যের মতোই গল্পের রেশ রেখে যেতে পছন্দ করেন। 

৩. পৃথিবীর প্রথম ছোট গল্প কোনটি?

উত্তরঃ যুক্তরাজ্যের প্রথম ছোট গল্প লিখেছিলেন রিচার্ড চাম্বারল্যান্ড। এছাড়া মিসরে প্যাপিরাসে অনেক কাব্যিক গল্প লেখা হতো, প্রাচীন ভারতীয় ব্রাহ্মণেরাও লিখতেন। 

৪. কাকে ছোট গল্পের জনক বলা হয়?

উত্তরঃ Washington Irving হচ্ছেন আমেরিকান ছোটগল্পের জনক, বাংলায় রবীন্দ্রনাথ

৫. রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প কয়টি?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের ৯১টি গল্প তার গল্পের সংকলনে খুঁজে পাওয়া যায়। 

আপনি আপনার লেখা যেকোন ছোটগল্প বাংলা গল্প লেখার ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করতে পারেন। এতে আপনার লেখার মাণ আরো ভালো হবে। প্রতিদিন নিয়মিত লেখা এবং, নিয়মিত পড়া ছাড়া লেখার মাণ ভালো করার আর কোন উপায় নেই। 

 

আপনার আরো যা পড়তে ভালো লাগবে-

Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

সেরা গল্পের বই- লেখক ডট মি

সেরা ৭টি গল্পের বই

গল্পের বই কখনো হাসায়,কখনো কাঁদায়।কখনো কখনো আমাদেরকে গল্পের ছলে শিক্ষাও দিয়ে থাকে যা আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগে। কখনো কখনো

জীবনের দর্শন

যদি আমি কারো আচরণে সত্যিই কষ্ট পেয়ে থাকি,তাহলে আমার উচিত তার মতো আচরণ না করা।সে আমাকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তার

বই বিপণন ব্যবস্থা বিষয়ক ভাবনা

একটি সুস্থ,সুন্দর জাতি গঠনের জন্য পড়া আবশ্যক।বর্তমানে পাঠক বইয়ের প্রতি ঝুঁকছে।ফলে বইয়ের ব্যবসাও জনপ্রিয় হয়ে এসেছে।কয়েক বছর আগেও বই প্রকাশনাকে

“টিপস ” আটটি উপায়ে স্মরণ শক্তি বাড়ানো

আমাদের আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিদের স্মরণ শক্তি কমে যায়। এবং অনেক সময়

2 Replies to “ছোট গল্প লেখার ৮ টি নিয়ম”

Leave a Reply