কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

0

আমাদের রান্নাঘরে অতি মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার হচ্ছে কিশমিশ। মিষ্টি জাতীয় খাবারে কিশমিশ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি কি জানেন কিশমিশ আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী? আজকে কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চলেছি।

আমরা অনেকেই কিশমিশের সাথে পরিচিত হলেও কিভাবে কিশমিশ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে একটুও ধারনা রাখেন না। অনেকেই ভাবতে পারেন কিশমিশ সরাসরি কোনো গাছ থেকে পাওয়া যায়।

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা

কিন্তু বাস্তবে কিশমিশের কোনো গাছ নেই। বরং এটি আলাদা একটি ফল থেকে পাওয়া যায় আঙ্গুর ফল শুকিয়ে কিশমিশ তৈরি করা হয়। কি অবাক হচ্ছেন? আঙ্গুর ফলকে রোদের শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে কিশমিশ প্রস্তুত করা হয়।

কিশমিশ আকারের ছোট, শুষ্ক এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। কিশমিশ খেতে মিষ্টি এবং এতে প্রচুর গ্লুকোজ রয়েছে। গ্লুকোজ মানুষের শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। তবে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে আপনি কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন।

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা

কিশমিশ একটি ছোট শুষ্ক ফল জাতীয় খাবার, যার ভেতরে রসালো অংশটি অত্যান্ত মিষ্টি। এর রসালো অংশটির প্রধান উপাদান হচ্ছে গ্লুকোজ ও শর্করা। গ্লুকোজ আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে।

আমরা চিনি থেকেও গ্লুকোজ পাই, কিন্তু কিশমিশ থেকে পাওয়া গ্লুকোজের খাদ্যমান অনেক বেশি। চিনি খেলে আমাদের শরীরের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু কিশমিশ থেকে পাওয়া গ্লুকোজ কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না

আমাদের সরাসরি কিশমিশ গ্রহণ করা উচিত নয়। কিশমিশকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর পানিসহ কিসমিস খাওয়া উচিত। এতে পানিতে কিশমিশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন লৌহ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, বোরন ইত্যাদি মিশে যায়। এই পানি আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে।

কিশমিশ থেকে প্রাপ্ত লৌহ উপাদানটি আমাদের রক্ত উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বোরন আমাদের শরীরের হাড় গঠনেও ভূমিকা পালন করে। যারা হাড়জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো পানি খেতে পারেন।

আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের ওজন খুবই কম। দেখতে রোগা রোগা লাগে বলে লোকে মুখে লজ্জাজনক কোথাও শুনতে হয়। তাদের জন্য কিশমিশ একটি উৎকৃষ্টমানের খাবার হতে পারে।

কিশমিশ রয়েছে গ্লুকোজ, প্রতিদিন সকালে মাত্র কয়েকটি কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে খেলে অভাবনীয় উপকার পাওয়া যায়। কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা পাবেন যখন কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে খাবেন।

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা

কিশমিস আমাদের ত্বককে করে মসৃণ। এছাড়া ক্যান্সার বা টিউমার জাতীয় রোগ থেকেও রক্ষা করতে কিশমিশের ভূমিকা রয়েছে। খাদ্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রক্তশূন্যতা কিংবা রক্ত ক্যান্সার দূর করতে কিশমিশ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কোষ্টকাঠিন্য রোগে আমরা অনেকেই প্রায় ভুগে থাকি। এই অতি কমন রোগটির নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন সকালে কয়েক টুকরো কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। কয়েদিনের মধ্যেই ফলাফল পেয়ে যাবেন।

কিশমিশ খাওয়ার নিয়ম

মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, যেমন পায়েশ, রান্না করার সময় আমরা কিশমিশ ব্যবহার করি। আবার অনেকেই তো কিশমিশ সরাসরি খেয়ে থাকেন। তবে এই দুই পদ্ধতিতে কিশমিশ খাওয়া একেবারে ভুল।

আপনি যদি কয়েক টুকরো কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গ্রহণ করেন তবে কিশমিশের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। তাই কিশমিশ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে কিশমিশগুলোকে কিছুক্ষণ যাবৎ বিশুদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে খেতে হবে।

শুধু কিশমিশ নয়, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই পানিতে রয়েছে লৌহ, যা আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। এছাড়া বোরন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদানগুলো আমাদের হাড়ের জন্য খুবই উপকারী।

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা আপনি তখনই পাবেন যখন আমাদের প্রদত্ত কিশমিশ খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে চলবেন।

কিশমিশের অপকারিতা

এখন পর্যন্ত কিশমিশ খাবার কোনো অপকারিতা পাওয়া যায়নি। কিশমিশ অত্যন্ত মিষ্টি হওয়ায় এটিতে প্রচুর গ্লুকোজ রয়েছে। এই গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। এছাড়া বিভিন্ন খনিজ, যেমন লৌহ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বোরন ইত্যাদিও আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য।

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো কিছুই আমাদের অতিরিক্ত গ্রহণ করা আমাদের শরীরের জন্য মঙ্গলজনক নয়। অর্থাৎ কেউ যদি বেশি পরিমাণে কিশমিশ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তার শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা দিতে পারে।

তাই বেশি করে কিশমিশ খাওয়া আমাদের পরিহার করা উচিত। তবে কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত কয়েকটি করে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস আমাদের প্রত্যেকের গড়ে তোলা উচিত।

কিশমিশের দাম

এবার চলুন আমরা আলোচনা করি কিশমিশের দাম সম্পর্কে। ইতিমধ্যেই আপনি জেনেছেন কিশমিশ আঙ্গুর ফলকে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এমনিতেই বাজারে আঙ্গুর ফলের দাম অন্যান্য যেকোনো ফলে তুলনায় খানিকটা বেশি হয়ে থাকে।

তাই কিশমিশের দামও সাধারণত বেশি হয়। প্রতি কেজি কিশমিশের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যদিও কিশমিশের মানের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দাম কিছুটা নামাও করতে পারে।

তবে জানিয়ে রাখা ভালো কিশমিশের দাম বেশি হলেও দৈনন্দিন জীবনে আমাদের খুব কম পরিমাণ কিশমিশ গ্রহণ করতে হয়। এমনকি দৈনিক মাত্র দুই টুকরো কিশমিশ আমাদের শরীরে বড় রকম পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।

কিশমিশ in english

আমরা বিভিন্ন খাদ্যের ইংরেজি নামগুলো জানি। কিন্তু কিসমিসের ইংরেজি নাম কি? অনেকে হয়তো এ সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। আবার অনেকে মনে করেন কিশমিশ শুধু বাংলাদেশের মানুষ ব্যবহার করে।

যদিও ইংরেজিতে কিসমিসকে raisin বলা হয়। raisin শব্দের অর্থ শুকনো করে রাখা আঙ্গুর।

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর

কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের নানারকম প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা রয়েছে। তারই মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এবার আমি আলোচনা করব।

প্রশ্ন: সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি?

উত্তর: গুরুজনেরা আমাদের সকালে খালি পেটে কিশমিশ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সকালে খালি পেটে কিশমিশ খেলে নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। কিশমিশ ভেজানো পানি আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ থেকে মুক্ত রাখে।

এছাড়া অ্যাসিডিটি থেকে মুক্ত পেতে হলে মুক্ত পাওয়ার মহা ঔষধ হচ্ছে পানিতে ভেজানো কিশমিশ। এছাড়া কিশমিশে রয়েছে পর্যাপ্ত লৌহ। এই লৌহ আমাদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন: কিশমিশ কি হাড় সুস্থ রাখে?

উত্তর: হ্যাঁ, নিয়মিত কিশমিশ খাওয়ায় আমাদের হাড় আরো সুস্থ ও মজবুত হয়। কিশমিশে রয়েছে বোরন নামক এক মহা উপকারী উপাদান, যা আমাদের হাড় গঠনে সহায়তা করে।

এছাড়া বোরন হাড়ের অস্টিওপোরোসিস রোগ প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখে। বোরনের পাশাপাশি কিশমিশে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড় গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

প্রশ্ন: ভিজিয়ে কিশমিশ খেলে কি বেশী উপকার পাওয়া যায়?

উত্তর: শুকনো বা অন্যান্য খাবারের সাথে কিশমিশ খাওয়ার চেয়ে ভিজিয়ে কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। কিশমিশ একটি শুষ্ক জাতীয় খাবার। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কিশমিশের বহিরাবণ থেকে ভিতরে পানি প্রবেশ করে।

এতে কিশমিশের খাদ্যগুণ অনেকটাই বেড়ে যায়। এমনকি কিশমিশ ভেজা পানি দিলে লৌহ, ক্যালসিয়াম, বোরন, পটাশিয়াম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে যায়।

এই পানি আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় আমাদের যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ কিংবা আমশায় রোগ রয়েছে তাদের জন্য কিশমিশ ভেজানো পানি খুবই উপকারী।

প্রশ্ন: ঘুম থেকে উঠে রোজ ২ টি কিশমিশ খেলে কি হয়?

উত্তর: যাদের কোষ্ঠকানিষ্ঠ, আমাশয়, রক্তজনিত সমস্যা কিংবা ওজন কম তাদের জন্য ঘুম থেকে উঠে রোজ দুটি কিশমিশ খাওয়া উচিত। কেননা কিশমিশে রয়েছে প্রায় এক ডজন খনিজ জাতীয় উপাদান, যা আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করে

এছাড়া লৌহ, বোরন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর অভাব পূরণ করতে সক্ষম। দুটি কিশমিশ খাওয়া হয়তো আপনার কাছে খুবই কম পরিমাণ মনে হতে পারে।

কিন্তু খালি পেটে দুটি কিশমিশ খেলেই কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনি একসাথে অনেকগুলো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। তবে এতেই শেষ নয়। আরো পড়ুন–


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Farhan Mahin

Author: Farhan Mahin

ফারহান মাহিন পড়াশোনা করছেন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

খালি পেটে রসুন ও মধু খেলে কি হয়?

আপনার যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান। কারণ খাবারের

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? আজকে একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলবো ওজন বাড়াতে সকাল দুপুর রাতে কি খাবেন? কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?
Untitled design

কোন বয়সে কতটুকু ভাত খাবেন

আসসালামু আলাইকুম এশিয়া মহাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ভাত খাওয়ার অভ্যেসকেই। প্রিয়

সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব।

2 Replies to “কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা”

Leave a Reply