আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নামের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা —১

0

কুরআন-হাদীসের আলোকে আল্লাহ তা’আলার সুন্দর সুন্দর ৯৯টি নামের পরিচয়

একজন মানুষের যেমন সুন্দর সুন্দর নাম থাকে; তেমনি আল্লাহ তা’আলারও সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো নাম রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর এসব সুন্দর সুন্দর নামসমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। এবং সেসব নামসমূহের মাধ্যমে দোয়া করার উপদেশও দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, তার রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। [সূরা আল হাশর, আয়াত: ২৪]

অন্যত্র আরও এসেছে

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ

আল্লাহ; তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তাঁর রয়েছে সৌন্দর্যমণ্ডিত নামসমূহ (সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ৮)

আরো এসেছে-

قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَٰنَ ۖ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ

বলুন, আল্লাহ বলে আহ্বান কর কিংবা রহমান বলে আহ্বান করো, যে নামেই আহবান করো না কেন, সব সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১১০)

আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম মুখস্থ করার ফযীলত

সহীহ বুখারীর হাদিসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رِوَايَةً قَالَ لله تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ اسْمًا مِائَةٌ إِلاَّ وَاحِدًا لاَ يَحْفَظُهَا أَحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ وَتْرٌ يُحِبُّ الْوَتْرَ

আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম আছে, এক কম একশতটি নাম। যে ব্যক্তি এ নামগুলোর হিফাযাত (মুখস্থ) করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বিজোড়। তিনি বিজোড় পছন্দ করেন। [বুখারী: ৫৮৫৫]

 

তবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা’আলার জাতি নাম/ভিত্তি নাম একটিই; আর তা হলো আল্লাহ।

এই নামসমূহের আলাদা আলাদা আরো অনেক ফযীলতও রয়েছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু কোন নামের কী ফযীলত বা আল্লাহর কোন নামটি কতবার করে পাঠ করলে সুনির্দিষ্টভাবে কী ফযীলত হাসিল হবে; তা কুরআন-হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।

বিভিন্ন ছোট ছোট পুস্তিকা কিংবা ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আল্লাহ তা’আলার ৯৯ নামের বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ফযীলত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- এই নামটি এতো এতোবার পাঠ করলে এই এই ফযীলত বা এই এই উদ্দেশ্য হাসিল হবে। এগুলো সবই ভিত্তিহীন ও দলীলবিহীন কথা।

তবে প্রত্যেকটি নামের অর্থ অনুযায়ী আলাদা আলাদা ফযীলত তো অবশ্যই রয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা তা যথাসাধ্য উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। এবং আমরা প্রত্যেক নামের সাথে রেফারেন্সও উল্লেখ করবো যে, নামটি কুরআনে ব্যবহার হয়েছে কি হয়নি! কুরআনে না থাকলে হাদিসে আছে কি নেই! কারণ, অনেকেই আল্লাহ তা’আলার ৯৯টি নাম জানে ঠিক, কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথায় এ নামগুলো আছে তা জানে না। আমরা এই প্রবন্ধে সে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম [১ থেকে ৩০]

১ থেকে ১০

১. الله [আল্লাহ] = আল্লাহ (এটি আল্লাহর জাতি নাম; এ নামের অর্থ করা অনুচিত)

ব্যাখ্যা: এটি এমন একটি মহাপবিত্র নাম যা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয়েছে। এ নামটি যতই উচ্চারণ করা হয় একজন আল্লাহ প্রেমিকের কাছে ততই মধুর অনুভূত হয়। আল্লাহ নামটি অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মতে ইসমে আজম হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ এই নামের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালার যত নাম রয়েছে প্রত্যেকটি নামের অর্থ এই নামটির মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নাম হিসেবে এ নামটি সবচেয়ে বেশিবার এসেছে; প্রায় ১৮৩২ বার।

উদাহরণস্বরূপ আমরা কুরআনের প্রথম দুটি আয়াত উল্লেখ করবো।

بسم الله الرحمن الرحيم • الحمد لله رب العالمين

পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমগ্র জাহানের পালনকর্তা। [সূরা ফাতিহা আয়াত: ১]

আমল: কেউ যদি বেশি বেশি এই নামের জিকির করে ইনশাআল্লাহ সে সব সময় ভালো কাজ করার তৌফিক পাবে। এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরে থাকার শক্তি পাবে।

২. الرَّحْمَنُ [আর-রাহমান] = সবচেয়ে দয়ালু, পরম করুণাময়, দয়াময়, মায়াময়

ব্যাখ্যা: আল্লাহ ব্যাপক ও পরিপূর্ণ রহমতের অধিকারী। তাঁর রহমত ঊর্ধ্বজগত, নিম্নজগত, সমস্ত সৃষ্টিজগত, দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বত্রই পরিপূর্ণ।

মূলত ‘আর-রহমান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় ব্যাপকার্থে; অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মুসলিম-অমুসলিম, গাছপালা-তরুলতা জীবজন্তু সকল কিছুর প্রতি দয়াবান। আল্লাহ সবাইকেই খাদ্য প্রদান করেন, রিজিক প্রদান করেন।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে ‘বিসমিল্লাহ’য়সহ এই নামটি মোট ১৬৯ বার এসেছে। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

ثُمَّ لَنَنْزِعَنَّ مِنْ كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَٰنِ عِتِيًّا

অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৬৯)

جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدَ الرَّحْمَٰنُ عِبَادَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّهُ كَانَ وَعْدُهُ مَأْتِيًّا

তাদের স্থায়ী বসবাস হবে যার ওয়াদা দয়াময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন। অবশ্যই তাঁর ওয়াদা তারা পৌঁছাবে। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৬১)

وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ

আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৬৩)

يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِنَ الرَّحْمَٰنِ فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا

হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৪৫)

আমল: কেউ যদি এই নামটি বেশি বেশি জিকির করে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে সদয় হবেন এবং কেউ যদি এই নামের উসিলায় আল্লাহর কাছে দয়া কামনা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে দয়া করবেন।

৩. الرحيم – [আর-রাহীম] – অতিশয় মেহেরবান, করুণার আধার

ব্যাখ্যা: ‘আর-রাহমান’ এর মতো ‘আর-রাহীম’ অর্থও দয়াবান। তবে পার্থক্য হল- ‘আর-রাহমান’ (আল্লাহ দয়ালু) এটা ব্যাপকার্থে; যেমনটা উপরেও উল্লেখ করেছি। কিন্তু ‘আর-রাহীম’ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বিশেষভাবে পরকালে মুসলিমদের প্রতি দয়াবান।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

পবিত্র কুরআনে এই নামটি ‘বিসমিল্লাহ’য়সহ মোট ১৪৬ বার এসেছে। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي ۖ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ বললেন, সত্বরই আমি পালনকর্তার কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইব। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালূ। (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৯৮)

وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৬৩)

فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৩৭)

قالَ عَذَابِيٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنۡ أَشَآءُۖ وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡ

“তিনি বললেন, ‘আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ

“নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩]

যিনি প্রত্যেক ফজর নামাজের পরে এই নামটি ১০০ বার পাঠ করবে তিনি প্রত্যেকে তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হতে দেখবেন এবং তিনি সমস্ত দুনিয়াবী বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকবেন।

আমল: কেউ যদি ‘আর-রাহমান’ এর মতো এই নামটিও বেশি বেশি জিকির করে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দুনিয়া আখিরাতে সদয় হবেন এবং কেউ যদি কোনো বিষয়ে আল্লাহর দয়া কামনার লক্ষ্যে এই নামটি বেশি বেশি জিকির করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে উক্ত বিষয়ে দয়া করবেন।

৪. الْمَلِكُ [আল-মালিক] = অধিপতি, রাজাধিরাজ, একচ্ছত্র ক্ষমতাবান

ব্যাখ্যা: যাঁর একচ্ছত্র মালিকানা রয়েছে তিনিই আল-মালিক। ঊর্ধ্বজগত ও নিম্নজগতের সব কিছুর ওপর তাঁর রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য, সবাই তাঁর দাস-দাসী ও তাঁর কাছেই অভাবী ও মুখাপেক্ষী। তিনি আদেশদাতা, নিষেধকারী, সম্মানদানকারী, সম্মান হরণকারী, তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বান্দার সব কিছু পরিচালনা করেন, তিনি যেভাবে চান সেভাবে তাদের কার্য পরিবর্তন করেন

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ

“বিচার দিবসের মালিক।” [সূরা ফাতিহা, আয়াত: ৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ ٱلۡمَلِكُ ٱلۡحَقُّۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡكَرِيمِ

“সুতরাং সত্যিকারের মালিক আল্লাহ মহিমান্বিত, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের রব।” [সূরা মুমিনূন, আয়াত: ১১৬]

আমল: কেউ যদি বেশি বেশি এই নামের জিকির করে; আশা করা যায় আল্লাহ তাকে ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দিবেন।

৫. الْقُدُّوسُ [আল-ক্বুদ্দূস] = পূতঃপবিত্র, নিখুঁত

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা’আলা সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে চিরপবিত্র। কোন ত্রুটি বিচ্যুতি তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি মানবীয় দুর্বলতা থেকেও চিরপবিত্র।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

يُسَبِّحُ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

রাজ্যাধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও যা কিছু আছে ভূমন্ডলে। (সূরাঃ আল জুমুআহ, আয়াতঃ ১)

আমল: কেউ যদি এই নামটি বেশি বেশি করে জিকির করে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত অন্যায় অনাচার এবং খারাপ কাজ থেকে পুতপবিত্র রাখবেন।

৬. السَّلَامُ [আস-সালাম] = শান্তি, নিরাপত্তা, ত্রাণকর্তা

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালাই সমস্ত বিপদ আপদ থেকে বান্দাদারকে নিরাপত্তা প্রদানকারী। আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা ছাড়া কেউ এক সেকেন্ডের জন্যও নিরাপদ নয়।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

যে ব্যক্তি এই নামটি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে ১৬০ বার পাঠ করবে , আল্লাহ তাকে সুস্থ করতে সহায়তা করবেন যিনি এই নামটি ঘন ঘন পাঠ করবে আল্লাহ তাকে সমস্ত দুনিয়াবী বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন ।

৭. الْمُؤْمِنُ [আল-মু’মিন] = আশ্রয়দাতা

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ তায়ালা তার সকল বান্দাদেরকে বিপদে আশ্রয় দিয়ে থাকেন। পৃথিবীতে যখন আশ্রয় খুঁজে পাওয়া যায় না তখন একমাত্র আশ্রয় আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কাজেই তিনি আশ্রয়দাতা।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

আমল: কেউ যদি বেশি বেশি এই নামের জিকির করে, আশা করা যায় আল্লাহ তাকে সমস্ত বিপদ-আপদ ও মুসিবতে আশ্রয় প্রদান করবেন।

৮. الْمُهَيْمِنُ [আল-মুহায়মিন] = অভিভাবক

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র যোগ্য অভিভাবক; তিনিই আমাদের ও সকল সৃষ্টি জীবের দেখাশোনা করেন।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

আমল: যে ব্যক্তি এই নামটি বেশি বেশি জিকির করবে ইনশাল্লাহ তার দায়িত্ব আল্লাহ নিজ হাতে নিয়ে নিবেন।

৯. الْعَزِيزُ [আল-’আযীয] = মহা পরাক্রমশালী

ব্যাখ্যা: পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নাই যে শক্তি আল্লাহকে প্রতিহত করতে পারে।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

কুরআনে এ নামটি মোট ৬৪ বার এসেছে। কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো।

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْقَصَصُ الْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ নিঃসন্দেহে এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহ; তিনিই হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৬২)

 

هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে, যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৬)

১০. الْجَبَّارُ [আল-জাব্বার] = দুর্নিবার, মহা শক্তিশালী, অজেয়, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, প্রতাপশালী, প্রভাবশালী

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

১১ থেকে ২০

১১. الْمُتَكَبِّرُ [আল-মুতাকাব্বির] = গৌরবান্বিত, অহংশীল, বড়ত্বের অধিকারী

ব্যাখ্যা: অহংকার তার জন্যই মানায় যিনি অহংকারের উপযুক্ত; যার কোন ত্রুটি নেই। আল্লাহ তাআলা সেই সত্তা যার কোন ত্রুটি নেই। অতএব অহংকারের একমাত্র হকদার মহান আল্লাহ তায়ালা।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যপূর্ণ। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৩)

আমল: যে ব্যক্তি এই নামটি অধিকহারে পাঠ করবে, আশা করা যায় তাকে মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হবে। সে কোথাও অপদস্থ হবে না।

১২. الْخَالِقُ [আল-খালিক্ব] = সৃষ্টিকর্তা, সৃজনকারী

ব্যাখ্যা: পৃথিবীতে এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেননি। যা আমরা বাহ্যত দেখি মানুষ সৃষ্টি করেছে, মূলত তাও আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি; কারণ, আল্লাহর সৃষ্টি ছাড়া কোনো সৃষ্টিই পূর্ণতা পায় না।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

বাংলা অনুবাদঃ তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৪)

أَأَنْتُمْ تَخْلُقُونَهُ أَمْ نَحْنُ الْخَالِقُونَ

তোমরা তাকে সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (সূরাঃ আল ওয়াক্বিয়া, আয়াতঃ ৫৯)

أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ

তোমরা কি বা’আল দেবতার এবাদত করবে এবং সর্বোত্তম স্রষ্টাকে পরিত্যাগ করবে। (সূরাঃ আস-সাফফাত, আয়াতঃ ১২৫)

أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ

তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? (সূরাঃ আত্ব তূর, আয়াতঃ ৩৫)

ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (সূরাঃ আল মু’মিনূন, আয়াতঃ ১৪)

১৩. الْبَارِئُ [আল-বারী] = বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, উদ্ভাবক

ব্যাখ্যা: পৃথিবীতে কত কিছুই না আবিষ্কার হয়; সব কিছুরই আবিষ্কারক মহান আল্লাহ তা’আলা। আল্লাহর আবিষ্কার ছাড়া কোন আবিষ্কারই সফলতা পেতে পারে না। পৃথিবীতে এমন কোন আবিষ্কার নেই যে আবিষ্কারের পিছনে আল্লাহ তায়ালার কোন সৃষ্টি নেই।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৪)

১৪. الْمُصَوِّرُ [আল-মুসাওয়ির] = (উত্তম) আকৃতিদানকারী

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা সুন্দর আকৃতিতে মানবজাতির সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও তিনি সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই তিনি উত্তম আকৃতিদানকারী।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ২৪)

১৫. الْغَفَّارُ [আল-গাফফার] = পুনঃপুনঃ মার্জনাকারী, বারবার ক্ষমাকারী

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে বারবার গুনাহ করা সত্ত্বেও বারবার ক্ষমা করে দেন। মানুষ গুনাহ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতে করতে ক্লান্ত হন না।

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

تَدْعُونَنِي لِأَكْفُرَ بِاللَّهِ وَأُشْرِكَ بِهِ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَأَنَا أَدْعُوكُمْ إِلَى الْعَزِيزِ الْغَفَّارِ

তোমরা আমাকে দাওয়াত দাও, যাতে আমি আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সাথে শরীক করি এমন বস্তুকে, যার কোন প্রমাণ আমার কাছে নেই। আমি তোমাদেরকে দাওয়াত দেই পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। (সূরাঃ আল-মু’মিন, আয়াতঃ ৪২)

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

 

তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৫)

رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

তিনি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, পরাক্রমশালী, মার্জনাকারী। (সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৬৬)

 

আমল: কেউ যদি এই নামটি বেশি বেশি জিকির করে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন।

 

১৬. الْقَهَّارُ [আল-ক্বাহহার] = রাগান্বিত, ক্রোধান্বিত, পরাক্রমশালী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা যেমনভাবে বান্দার উপর দয়াবান আবার তিনি বান্দার উপর রাগান্বিতও হন- বান্দা যখন সীমালংঘন করে। আর আখেরাতেও আল্লাহ তায়ালা নাফরমান বান্দাদের প্রতি রাগান্বিত থাকবেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

يَوْمَ هُمْ بَارِزُونَ ۖ لَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّهِ مِنْهُمْ شَيْءٌ ۚ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ۖ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

বাংলা অনুবাদঃ যেদিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর। (সূরাঃ আল-মু’মিন, আয়াতঃ ১৬)

 

يَوْمَ هُمْ بَارِزُونَ ۖ لَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّهِ مِنْهُمْ شَيْءٌ ۚ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ۖ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

বাংলা অনুবাদঃ যেদিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর। (সূরাঃ আল-মু’মিন, আয়াতঃ ১৬)

 

يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

 

হে কারাগারের সঙ্গীরা! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৩৯)

 

আমল: কেউ যদি আল্লাহ তায়ালার এ নামটি বেশি বেশি জিকির করে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলার রাগ থেকে সে বাঁচতে পারবে।

 

১৭. الْوَهَّابُ [আল-ওয়াহহাব] = দানকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে অগণিত নেয়ামত দান করেন। বাহ্যত বান্দার মাধ্যমে যা দান করা হয় তাও আল্লাহ তাআলারই দান। আল্লাহ বান্দার মাধ্যমে তা পাঠিয়েছেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

 

হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৩৫)

 

أَمْ عِنْدَهُمْ خَزَائِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ الْعَزِيزِ الْوَهَّابِ

 

নাকি তাদের কাছে আপনার পরাক্রান্ত দয়াবান পালনকর্তার রহমতের কোন ভান্ডার রয়েছে? (সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৯)

 

 

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

 

হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৮)

 

আমল: এই নামটি বেশি বেশি জিকির করলে আল্লাহ তাআলা তাকে অগণিত নেয়ামত দান করবেন বলে আশা করা যায়।

 

১৮. الرَّزَّاقُ [আর-রযযাক্ব] = রিযিক প্রদানকারী

 

ব্যাখ্যা: জলে স্থলে যত পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ আছে আল্লাহ তায়ালা সবাইকেই রিজিক প্রদান করেন। এর মধ্যে কোন তারতম্য নেই। যে যে পরিমাণ খেতে পারবে তাকে সেই পরিমাণই দেওয়া হয়।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

 

আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। (সূরাঃ আয-যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৮)

 

আমল: যে ব্যক্তি অধিকহারে এ নামটি পাঠ করবে, আশা করা যায় আল্লাহ তার রিজিকে প্রশস্ততা দান করবেন, সে কখনো অভাব অনটনে পড়বে না।

 

১৯. الْفَتَّاحُ [আল-ফাত্তাহ] = বিজয়দানকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলার দয়া ও রহমত ছাড়া কেউ কখনো বিজয় অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ চাইলে অল্প সংখ্যক সৈন্যকেও বিজয় দান করতে পারেন। আবার তিনি চাইলে হাজার হাজার সৈন্যকেও পরাজিত করতে পারেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

قُلْ يَجْمَعُ بَيْنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفْتَحُ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَهُوَ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ

 

বলুন, আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে সমবেত করবেন, অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। তিনি ফয়সালাকারী, সর্বজ্ঞ। (সূরাঃ সাবা, আয়াতঃ ২৬)

 

আমল: যে ব্যক্তি এই নামটি অধিকহারে পাঠ করবে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বক্ষেত্রে বিজয় দান করবেন।

 

২০. الْعَلِيمُ [আল-’আলীম] = সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী

 

ব্যাখ্যা: পৃথিবীর এমন কোন বিষয় নেই, যে বিষয়ে মহান আল্লাহ জ্ঞান রাখেন না। মানুষ যা ভাবেও না, আল্লাহ তার ভাবনার আগেও তা জেনে থাকেন। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার মধ্যে রয়েছে। আর মানুষকে দান করা সকল জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহ তা’আলা নিজেই। কাজেই তিনি সর্বজ্ঞানী।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

কুরআনে এ নামটি মোট ৩৩ বার এসেছে। চারটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

 

قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنْفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

 

তিনি বললেন- কিছুই না, তোমরা মনগড়া একটি কথা নিয়েই এসেছ। এখন ধৈর্য্যধারণই উত্তম। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে আমার কাছে নিয়ে আসবেন তিনি সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৮৩)

 

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১২৭)

 

قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

 

তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৩২)

 

قُلْ يَجْمَعُ بَيْنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفْتَحُ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَهُوَ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ

 

বলুন, আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে সমবেত করবেন, অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। তিনি ফয়সালাকারী, সর্বজ্ঞ। (সূরাঃ সাবা, আয়াতঃ ২৬)

 

আমল: যে ব্যক্তি এ নামটি অধিকহারে পাঠ করবে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে অনেক জ্ঞানের অধিকারী করবেন।

২১ থেকে ৩০

 

২১. الْقَابِضُ [আল-ক্বাবিদ] নিয়ন্ত্রণকারী, সংকুচিতকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ চাইলে তার রহমতকে বান্দার জন্য সুপ্রসারিত করে দেন চাইলে আবার সংকুচিতও করে নেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

কুরআনে হুবুহু এ নামটি না আসলেও এর ক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে।

 

وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

 

তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৬৭)

 

ثُمَّ قَبَضْنَاهُ إِلَيْنَا قَبْضًا يَسِيرًا

 

অতঃপর আমি একে নিজের দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনি। (সূরাঃ আল-ফুরকান, আয়াতঃ ৪৬)

 

 

مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

 

এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৪৫)

 

আমল: যে ব্যক্তি এ নামটি বেশি বেশি পাঠ করবে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তার থেকে কোন নেয়ামত ছিনিয়ে নেবেন না।

 

 

২২. الْبَاسِطُ [আল-বাসিত] = প্রসারণকারী, প্রশস্ততা দানকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা কখনো কখনো বান্দার নেয়ামতকে সুপ্রসারিত করে দেন আবার কখনো কখনো তার সংকুচিতও করেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

এ নামটিও কুরআনে হুবুহু আসেনি। তবে একাধিক জায়গায় এ নামের ক্রিয়া উল্লিখিত হয়েছে।

 

إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا

 

নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৩০)

 

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

 

আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রুযী প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। তারা পার্থিব জীবনের প্রতি মুগ্ধ। পার্থিবজীবন পরকালের সামনে অতি সামান্য সম্পদ বৈ নয়। (সূরাঃ রা’দ, আয়াতঃ ২৬)

 

أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِنْ رَبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِنْكُمْ لِيُنْذِرَكُمْ ۚ وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ وَزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

 

তোমরা কি আশ্চর্য্যবোধ করছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে কওমে নূহের পর সর্দার করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশী করেছেন। তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর-যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়। (সূরাঃ আল আ’রাফ, আয়াতঃ ৬৯)

 

مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

 

এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৪৫)

 

২৩. الْخَافِضُ [আল-খাফিদ্ব] = অপমানকারী, নিচুকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ চাইলে বান্দাকে উঁচু করেন, আবার চাইলে নিচুও করেন। আল্লাহ কাউকে নিচু করতে চাইলে কেউ তাকে উপরে উঠাতে পারে না।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

এ নামটি কুরআনে আসেনি; কিন্তু বিভিন্ন হাদীসে এ নামের ক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে।

 

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাড়িয়ে কয়েকটি কথা বললেন-

 

إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَنَامُ وَلاَ يَنْبَغِي لَهُ أَنْ يَنَامَ يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُهُ يُرْفَعُ إِلَيْهِ عَمَلُ اللَّيْلِ قَبْلَ عَمَلِ النَّهَارِ وَعَمَلُ النَّهَارِ قَبْلَ عَمَلِ اللَّيْلِ حِجَابُهُ النُّورُ

 

১. আল্লাহ কখনো নিদ্রা যান না। ২. নিদ্রিত হওয়া তার সাজেও না। ৩. তিনি তাঁর ইচ্ছানুসারে মীযান (দাড়িপাল্লা) নামান এবং উত্তোলন করেন। তিনি নূরের পর্দায় আচ্ছাদিত। [মুসলিম: ৩৩৪]

 

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ يَدُ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ـ وَقَالَ ـ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ ـ وَقَالَ ـ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ ‏”‏‏.‏

 

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহর হাত পূর্ণ, রাতদিন খরচ করলেও তাতে কমতি আসে না। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা কি দেখেছ? আসমান যমীন সৃষ্টি করার পর থেকে তিনি যে কত খরচ করেছেন, তা সত্ত্বেও তাঁর হাতে যা আছে, তাতে এতটুকু কমেনি। এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর অন্য তাতে আছে দাঁড়িপাল্লা, যা কখনও তিনি নিচে নামান আবার কখনও উপরে উঠান। [বুখারী: ৬৯০৭]

 

২৪. الرَّافِعُ [আর-রাফি’] উন্নতকারী

 

ব্যাখ্যা: আল্লাহ মানুষকে উপরে উঠান, সম্মান দান করেন। আল্লাহ কাউকে উপরে উঠাতে চাইলে কেউ তাকে নিচে নামাতে পারে না।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ

 

আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরাঃ আন-নূর, আয়াতঃ ৩৬)

 

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

 

তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদের কে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৬৫)

 

بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

 

বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১৫৮)

 

২৫. الْمُعِزُّ [আল-মু’ইযয] = সম্মানপ্রদানকারী

 

ব্যাখ্যা: কেউ নিজের বাহু বলে সম্মান অর্জন করতে পারে না যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে সম্মান প্রদান করেন। আল্লাহ কাউকে সম্মান প্রদান করলে কেউ তাকে অসম্মানিত করতে পারে না।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

 

বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ২৬)

 

২৬. الْمُذِلُّ [আল-মুযিল্ল] = (অবিশ্বাসীদের) বেইজ্জতকারী

 

ব্যাখ্যা: কাউকে সম্মান দেওয়ার মালিক যেমন আল্লাহ, আবার কাউকে অসম্মান করার মালিকও আল্লাহ। আল্লাহ চাইলে মানুষকে সম্মান দান করেন, চাইলে অপদস্থ করেন। আল্লাহ যদি কাউকে বেইজ্জত করতে চান কেউ তাকে ইজ্জত দিতে পারে না।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

 

বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ২৬)

 

২৭. السَّمِيعُ [আস-সামী’] = সর্বশ্রোতা

 

ব্যাখ্যা: মানুষ গোপনে বা মনে মনে যাই বলুক না কেন আল্লাহ তাআলা সকল কথাই শুনেন। এমন কি গর্তের পিপিলিকার চলার আওয়াজও তিনি শুনতে পান।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

وَلَهُ مَا سَكَنَ فِي اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

যা কিছু রাত ও দিনে স্থিতি লাভ করে, তাঁরই। তিনিই শ্রোতা, মহাজ্ঞানী। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৩)

 

قُلْ أَتَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا ۚ وَاللَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর যে, তোমাদের অপকার বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৭৬)

 

فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৩৭)

 

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১২৭)

 

২৮. الْبَصِيرُ [আল-বাছীর] সর্বদ্রষ্টা, সর্ববিষয়-দর্শনকারী

 

ব্যাখ্যা: তিনি বান্দার সকল কার্যক্রম দেখে থাকেন যদিও তা তিমির অন্ধকারে হয় এবং দরজা জানালা সবই বন্ধ থাকে। বলা হয় কালো পাথরের উপর কালো পিঠটা হেঁটে গেলেও তিনি ওই পিঁপড়াকে দেখেন।

 

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

 

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। (সূরাঃ আশ-শুরা, আয়াতঃ ১১)

 

إِنَّ الَّذِينَ يُجَادِلُونَ فِي آيَاتِ اللَّهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ ۙ إِنْ فِي صُدُورِهِمْ إِلَّا كِبْرٌ مَا هُمْ بِبَالِغِيهِ ۚ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

 

নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের কাছে আগত কোন দলীল ব্যতিরেকে, তাদের অন্তরে আছে কেবল আত্নম্ভরিতা, যা অর্জনে তারা সফল হবে না। অতএব, আপনি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। (সূরাঃ আল-মু’মিন, আয়াতঃ ৫৬)

 

 

وَاللَّهُ يَقْضِي بِالْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لَا يَقْضُونَ بِشَيْءٍ ۗ إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

 

আল্লাহ ফয়সালা করেন সঠিকভাবে, আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, তারা কিছুই ফয়সালা করে না। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। (সূরাঃ আল-মু’মিন, আয়াতঃ ২০)

 

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

 

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১)

 

 

২৯. الْحَكَمُ [আল-হাকাম] বিচারপতি, প্রজ্ঞাময়

 

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ তায়ালা সকল বিচারপতির বিচারপতি। তিনি বিচার করার ক্ষেত্রে কারো পক্ষপাতিত্ব করেন না; তিনি বিচার করেন প্রজ্ঞার মাধ্যমে।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ নেই; তবে কাছাকাছি শব্দ (হাকীম) রয়েছে।

 

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

 

আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ ইব্রাহীম, আয়াতঃ ৪)

 

وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ

 

তিনিই পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। তিনিই জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৮)

 

 

إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيم

 

যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ১১৮)

 

إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْقَصَصُ الْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

 

নিঃসন্দেহে এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহ; তিনিই হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৬২)

 

 

৩০. الْعَدْلُ [আল-‘আদল] = ন্যায়বিচারক

 

ব্যাখ্যা: তিনি কখনো বান্দার সাথে অবিচার করেন না; তিনি নিজেও ন্যায় বিচার করেন এবং বান্দাদেরকেও ন্যায় বিচারের আদেশ দেন।

 

কুরআনে এ নামের উল্লেখ

 

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا

 

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৫৮)

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

 

আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৯০)

 

আমল: কেউ যদি এই নামটি বেশি বেশি পাঠ করে আশা করা যায় সে সর্বত্র ন্যায়বিচার পাবে।

 

আল্লাহর ৯৯ নাম মুখস্ত করার সহজ উপায়

 

মুখস্থ করার অনেক পদ্ধতিই থাকতে পারে; তবে আমার অভিজ্ঞতায় যা সবচেয়ে উত্তম মনে হচ্ছে, তা হলো- প্রথমত: ৯৯টি নামকে পাঁচ দিনে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। দৈনিক ২০টি করে।

 

প্রথম দিন: একসাথে পাঁচটি নাম লাগাতার ২০ থেকে ৩০ বার করে পাঠ করবে। মুখস্থ হয়ে গেলে আবার নতুন পাঁচটি নাম আগের মতো করে ২০ থেকে ৩০ বার পাঠ করবে। মুখস্থ হয়ে গেলে একসাথে দশটি নাম ১৫ থেকে ৩০ বার পাঠ করবে। একইভাবে আবারো পাঁচটি পাঁচটি করে দশটি নাম মুখস্থ করবে। এরপর একসাথে ২০টি নাম আবার ২৫-৩০ বার পাঠ করবে। এভাবেই বাকি ৮০টি নাম মুখস্থ করবে।

যখন চল্লিশটি নাম মুখস্থ হয়ে যাবে; তখন আগের দিনের বিশটি নামসহ একসাথে চল্লিশটি নাম কমপক্ষে ২৫ বার পড়বে। একইভাবে সবগুলো, অর্থাৎ পরে মুখস্থ করা নামগুলোর সাথে আগে মুখস্থ করা নামগুলো মিলিয়ে পড়বেন।

 

মুখস্থের কাজটা ফজরের পর থেকে শুরু করলে ভালো হবে, তাহলে পুরো দিন নামগুলো হাঁটতে চলতে মুখে আওড়ানো যাবে।

 

মনে রাখবেন, অনেকের ক্ষেত্রেই অল্প কয়েকবার পড়লে মুখস্ত হয়ে যায়, তাই তারা বেশি করে পড়তে চায় না। কিন্তু আমি বলবো, অল্প কয়েকবার পড়লে পড়া মুখস্ত হয়ে যায় সত্য; কিন্তু এ মুখস্ত বেশিদিন থাকে না। এর সাক্ষী আমি নিজেই।

আপনি যদি আপনার মুখস্ত পড়াটা বেশিদিন মনে রাখতে চান, তাহলে মুখস্থ হওয়ার পরেও আপনাকে বারবার পাঠ করতে হবে; তাহলে বিষয়টা একেবারে ঠোঁটস্থ হয়ে যাবে। আপনি চাইলেও জীবনে কখনো ভুলতে পারবেন না। কারণ, বারবার পাঠ করার কারণে তা আপনার ঠোঁটে এসে গেছে।

চলবে

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply