তারাবীহ কত রাকাত: বিভ্রান্তি নিরসন —১

1

তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে সৌদি আরবের বিশিষ্ট সালাফী শায়খদের ফতোয়া

 

১. বিন বায রহ. এর ফতোয়া

 

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি লা মাযহাবী ইবনে বায রাহ. যাকে ৮ রাকাত তারাবীর প্রবক্তা ভাইয়েরা পীরের মতো মেনে থাকে। তিনি লিখেছেন,

 

والثلاث والعشرون فعلها عمر – رضي الله عنه – والصحابة فليس فيها نقص وليس فيها إخلال، بل هي من السنن – سنن الخلفاء الراشدين

 

উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র জামানায় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বিশ রাক’আত তারাবীহ ও তিন রাক’আত বিতর আদায় করতেন। এর মধ্যে কোনো ধরনের কমতিও ছিলো না, কোনো ধরনের ত্রুটিও ছিলো না। বরং এটাই সুন্নাহ; সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া —বিন বায: ১১/৩২৫]

 

২. সৌদি ফতোয়া বোর্ডের অবস্থান

 

সৌদি আরবের ফতোয়া বিভাগ থেকে প্রকাশিত “ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ”য় একটি প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে—

 

ولأن عمر والصحابة رضي الله عنهم صلوها في بعض الليالي عشرين سوى الوتر، وهم أعلم الناس بالسنة وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.

 

উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম কোনো কোনো রাত্রে বিতর ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। [সূত্র: ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ: ৭/১৯৮-৯৯]

 

এই ফতোয়ার মধ্যে ‘বিন বায’ এর দস্তখত রয়েছে। তবে কোনো কোনো রাত্রের বিষয়টি ভুল। যেমনটা আমরা বিন বায এর উপরিউক্ত ফতোয়া থেকে জেনেছি।

 

৩. সালেহ আল উসায়মীন রহ. এর বক্তব্য

 

শায়খ ইবনে উসায়মীন রহ.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যে ইমামের সাথে দশ রাক’আত তারাবীহ পড়ে বিতর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে। ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবীহ’র সালাত পড়ে না। তখন তিনি বলেন— “এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য, বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকা। কারণ, শত্রুরা তাদেরকে নানারকম ফাঁদে ফেলার জন্য ওঁত পেতে বসে আছে। [আশ-শারহুল মুমতি: ৪/২২৫]

 

ইবনে উসায়মীন আরো বলেন— “এ ক্ষেত্রে আমরা বলবো, বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনোটাই উচিত নয়। কেউ কেউ (লা-মাযহাব) আছেন সুন্নাহ’য় বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন, সুন্নাহ’য় যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। [²]

 

যারা আট রাক’আত তারাবীহ পড়ে তারা বিশ রাকাতের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী। এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোনো সন্দেহ নেই। কীভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (তারাবীহ) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন: “দুই-দুই রাক’আত”। তিনি তো কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। [³]

 

এ কথা সবারই জানা আছে যে, যে সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের সালাতের রাক’আত সংখ্যা জানতেন না। কারণ, যিনি সালাতের পদ্ধতিই জানেন না, রাক’আত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানারই কথা। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলবো —তিনি রাসূলের বাসার ভেতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সাহাবীকে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, এতে জানা গেলো যে, এ বিষয়টি উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাক’আত তারাবীহ’র নামায ও ১ রাকাত বিতির নামায আদায় করতে পারেন।

 

(ইবনে উসাইমীন লা-মাযহাবদের দাবী খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন,) রাসূল সা. এর বাণী صلوا كما رأيتموني أصلي তথা ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় করো’ এই হাদীসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি (আট রাক’আত) মতাবলম্বীদের নিকটও নয়। তাই তো তারা কোনো ব্যক্তির ওপর একবার ৫ রাকাত, একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতর আদায় করা ওয়াজিব বলে না। আমরা যদি এ হাদীসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি, তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনোবার ৫ রাকাত, কোনোবার ৭ রাকাত এবং কোনোবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব।

 

বরং ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় করো’ এ হাদীস দ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য; সালাতের রাক’আত সংখ্যা নয়। তবে রাক’আত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোনো দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা। [⁴]

 

যাইহোক, যে বিষয়ে শরী’আতে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেন যে, যেসব ইমাম এগারো রাক’আতের বেশি তারাবীহ’র সালাত পড়েন এরা তাদের উপর বিদ’আতের অপবাদ দেন এবং এগারো রাক’আতের পর মসজিদ ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন: “ইমাম সালাত শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী (৮০৬) এবং ‘সহীহুত তিরমিযী গ্রন্থে (৬৪৬) আলবানী হাদীসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন।

 

এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ৮ রাক’আত আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লীদের সালাতে অসুবিধা হয়।

 

আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করছি না যে তাঁরা ভালো চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না।” [⁵]

 

আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাক’আতের মধ্যে তারাবীহকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান —এরা তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে যে, তোমরা ইজমা’ থেকে বের হয়ে গেছো। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করবো যে দিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আন-নিসা: ১১৫]

 

তারা (বিশ রাকাত ওয়ালারা) এও বলে যে, তোমাদের আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২০ রাক’আত তারাবীহই পড়তেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন।” [আশ-শারহুল মুমতি: ৩/৭৩-৭৫] [⁶]

 

৪. শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর ফতোয়া

 

বিশ রাকাত তারাবীহ বিষয়ে আরবের সুপ্রসিদ্ধ সালাফী শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের জ্ঞানগর্ভ ফতোয়া।

 

প্রশ্ন: আমি প্রশ্নটি আগেও করেছিলাম। আশা করি এর উত্তর দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন। কারণ, এর আগে আমি সন্তোষজনক কোনো জবাব পাইনি। প্রশ্নটি তারাবীর সালাত সম্পর্কে। তারাবীর সালাত এগারো রাকাত নাকি বিশ রাকাত?

 

আমাদের এখানে এটি একটি সংবেদনশীল মাসআলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যিনি ১১ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ২০ রাকাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। আবার যিনি ২০ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ১১ রাকাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। এটা নিয়ে একটা ফিতনা (গোলযোগ) সৃষ্টি হয়েছে।

 

এমনকি মসজিদে হারামেও ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। তাহলে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে সুন্নাহর বিপরীত আমল হচ্ছে কেন? কেন তাঁরা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবী নামায আদায় করেন?

 

উত্তর: আলেমদের ইজতিহাদ-নির্ভর মাসআলাগুলো নিয়ে কোনো মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না —যার কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়।

 

শায়খ ইবনে উসায়মীন রহ.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যে ইমামের সাথে দশ রাক’আত তারাবীহ পড়ে বিতর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে। ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবীহ’র সালাত পড়ে না। তখন তিনি বলেন— “এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য, বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকা। কারণ শত্রুরা তাদেরকে নানারকম ফাঁদে ফেলার জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।”

 

আসলে এই মাসআলার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। আট রাক’আত পক্ষের লোকেরা বিশ রাক’আতকে একেবারে অস্বীকার করে এ আমলকে বিদ‘আত আখ্যায়িত করেন। আর বিশ রাক’আত পক্ষের লোকেরা এগারো রাক’আতে সীমাবদ্ধ লোকদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন, তারা ইজমা‘ এর খেলাফ করছে।” [¹]

 

চলুন আমরা এ ব্যাপারে শায়খ ইবনে উসায়মীন রহ. এর উপদেশ শুনি, ইবনে উসায়মীন বলেন— “এ ক্ষেত্রে আমরা বলবো, বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনোটাই উচিত নয়। কেউ কেউ (লা-মাযহাব) আছেন সুন্নাহ’য় বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন, সুন্নাহ’য় যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। [²]

 

যারা আট রাক’আত তারাবীহ পড়ে তারা বিশ রাকাতের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী। এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোনো সন্দেহ নেই। কীভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (তারাবীহ) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন: “দুই-দুই রাক’আত”। তিনি তো কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। [³]

 

এ কথা সবারই জানা আছে যে, যে সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের সালাতের রাক’আত সংখ্যা জানতেন না। কারণ, যিনি সালাতের পদ্ধতিই জানেন না, রাক’আত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানারই কথা। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলবো —তিনি রাসূলের বাসার ভেতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সাহাবীকে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, এতে জানা গেলো যে, এ বিষয়টি উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাক’আত তারাবীহ’র নামায ও ১ রাকাত বিতির নামায আদায় করতে পারেন।”

 

(ইবনে উসায়মীন লা-মাযহাবদের দাবী খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন,) “রাসূল সা. এর বাণী صلوا كما رأيتموني أصلي তথা ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় করো’ এই হাদীসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি (আট রাক’আত) মতাবলম্বীদের নিকটও নয়। তাই তো তারা কোনো ব্যক্তির ওপর একবার ৫ রাকাত, একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতর আদায় করা ওয়াজিব বলে না। আমরা যদি এ হাদীসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি, তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনোবার ৫ রাকাত, কোনোবার ৭ রাকাত এবং কোনোবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব।

 

বরং ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় করো’ এ হাদীস দ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য; সালাতের রাক’আত সংখ্যা নয়। তবে রাক’আত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোনো দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা। [⁴]

 

যাইহোক, যে বিষয়ে শরী’আতে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেন যে, যেসব ইমাম এগারো রাক’আতের বেশি তারাবীহ’র সালাত পড়েন এরা তাদের উপর বিদ’আতের অপবাদ দেন এবং এগারো রাক’আতের পর মসজিদ ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন: “ইমাম সালাত শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী (৮০৬) এবং ‘সহীহুত তিরমিযী গ্রন্থে (৬৪৬) আলবানী হাদীসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন।

 

এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ৮ রাক’আত আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লীদের সালাতে অসুবিধা হয়।

 

আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করছি না যে তাঁরা ভালো চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না। [⁵]

 

আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাক’আতের মধ্যে তারাবীহকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান —এরা তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে যে, তোমরা ইজমা’ থেকে বের হয়ে গেছো। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করবো যে দিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আন-নিসা: ১১৫]

 

তারা (বিশ রাকাত ওয়ালারা) এও বলে যে, তোমাদের আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২০ রাক’আত তারাবীহই পড়তেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন।” [আশ-শারহুল মুমতি: ৩/৭৩-৭৫] [⁶]

 

যারা আট রাক’আতের বেশি তারাবীহ’র সালাত পড়া নাজায়েয মনে করেন, তারা যে দলীল দেন সেটা হলো আবু সালামাহ ইবনে আব্দুর রহমান এর হাদীস যাতে তিনি আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘রামাদ্বানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত কেমন ছিলো? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদ্বানে ও রামাদ্বানের বাইরে এগারো রাক’আতের বেশি আদায় করতেন না। তিনি চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন —এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করো না (অর্থাৎ তা খুবই সুন্দর ও দীর্ঘ হতো)। এরপর তিনি আরো চার রাকাত সালাত আদায় করতেন —এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কেও প্রশ্ন করো না। এরপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। (একদিন) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমিয়ে যান? তিনি বললেন, ‘হে আইশাহ! আমার চোখ দু’টি ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।’ [সহীহ বুখারী: ১৯০৯, সহীহ মুসলিম: ৭৩৮]

 

তারা (লা-মাযহাবরা) বলে, এই হাদীসটি নির্দেশ করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদ্বানে ও রামাদ্বানের বাইরে রাতের বেলা নিয়মিত এভাবেই সালাত আদায় করতেন। আলেমগণ এ হাদীস দিয়ে দলীলের বিপক্ষে বলেন যে, এই হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সাব্যস্ত করছে; কিন্তু কোনো আমল দ্বারা তো ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না।

 

আর রাতের সালাত (তারাবীহ) যে কোনো সংখ্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট নয় এ ব্যাপারে বর্ণিত স্পষ্ট দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো ইবনে উমার (রা.) এর হাদীস ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (তারাবীহ) সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “রাতের সালাত দুই-দুই রাক’আত। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে সে যেনো আরো এক রাক’আত সালাত পড়ে নেয় —যাতে করে এ রাক’আতটি পূর্বে আদায়কৃত সংখ্যাকে বিতর (বেজোড়) করে দেয়।” [সহীহ বুখারী: ৯৪৬, সহীহ মুসলিম: ৭৪৯]

 

বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলেও এ কথা পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। এগারো রাক’আতের অধিক তারাবীহ পড়তে দোষের কিছু নেই।

 

হানাফী মাযহাবের আলেম ইমাম আস-সারখসী বলেন, “আমাদের মতে বিতর ছাড়া তারাবীহ’র সালাত বিশ রাক’আত।” [আল-মাবসুত: ২/১৪৫]

 

ইবনে ক্বুদামাহ বলেন, “ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী বিশ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম সুফয়ান ছাওরী, ইমাম আবূ হানীফাহ ও ইমাম শাফে’ঈ রহ.। আর ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, তারাবীহ ছত্রিশ রাক’আত।” [আল-মুগনী: ১/৪৫৭]

 

ইমাম নববী শাফে’ঈ বলেছেন, “আলেমগণের ইজমা’ অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নাহ। আর আমাদের মাযহাব হচ্ছে, তারাবীহ’র সালাত দশ সালামে বিশ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামা’আতের সাথে পড়াও জায়েয।” [আল-মাজমূ: ৪/৩১]

 

এই হচ্ছে তারাবীহ’র সালাতের রাক’আতের সংখ্যার ব্যাপারে চার মাযহাবের অভিমত। তাঁদের সবাই এগারো রাকাতের বেশী পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। সম্ভবত যে কারণে তাঁরা এগারো রাক’আতের বেশি পড়ার কথা বলেছেন সেটা হলো— ১. তাঁরা দেখেছেন যে, আইশাহ (রা.) এর হাদীস নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে না। ২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবে’ঈগণের অনেকের কাছ থেকে এগারো রাক’আতের বেশি তারাবীহ পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী: ২/৬০৪, আল-মাজমূ: ৪/৩২]

 

৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে এগারো রাক’আত সালাত আদায় করতেন তা এতো দীর্ঘ করতেন যে এতে পুরো রাত লেগে যেতো। এমনও ঘটেছে এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে তারাবীহ’র সালাত আদায় করতে করতে ফজর হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন। এমনকি সাহাবীগণ সেহেরী খেতে না-পারার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং এটা তাঁদের কাছে দীর্ঘ মনে হতো না। কিন্তু আলেমগণ খেয়াল করলেন, ইমাম যদি এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সালাত আদায় করেন তবে মুসল্লীদের জন্য তা কষ্টকর হবে —যা তাদেরকে তারাবীহ’র সালাত থেকে বিমুখ করতে পারে। তাই তাঁরা তিলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাক’আত সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন।

 

সার কথা হলো: যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে এগারো রাক’আত সালাত পড়েন সেটাও ভালো এবং এতেও সুন্নাহ পালন হয়। আর যিনি তিলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাক’আতের সংখ্যা বাড়িয়ে পড়েন সেটাও ভাল। যিনি এই দুইটির কোনো একটি করেন তাঁকে নিন্দা করার কিছু নেই। [⁷]

 

জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহ. বলেছেন, “রামাদ্বানের রাতের সালাত (তারাবীহ) আদায় করার আদেশ ও উৎসাহ-সংবলিত অনেক সহীহ ও হাসান হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো সংখ্যাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি…। [⁸]

 

শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ পরিশেষে বলেন, অতএব, হে প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীহ’র সালাত বিশ রাক’আত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ, এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

 

সূত্র: www.islamqa.info

প্রশ্ন : 9036: তারিখ: 22/11/2013

ফতোয়া প্রদানকারী: শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

 

 

 

 

 

______________________________

 

টীকা:

 

[1] এখানে বিশ রাকাত ওয়ালারা বাড়াবাড়ি করে এমনটা বলার সুযোগ নেই, কারণ আট রাক’আত ওয়ালারা বাস্তবিকপক্ষেই ইজমা‘ এর খেলাফ করছে। কারণ, বিশ রাক’আত তারাবীহ সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ সাব্যস্ত হয়েছে। আমরা অন্যত্র তা প্রমাণ করে দিয়েছি। এই প্রবন্ধের শেষের দিকেও ইজমা‘র বিষয়টি আসছে।

 

[2] মূলত এটা হচ্ছে সুন্নাহ’র নামে ফিতনাহ। কারণ, তারাবীর নির্দিষ্ট রাক’আত সংখ্যা কোনো সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। পূর্ববর্তী সকল ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত। যদি তারাবীর রাকাত সংখ্যা কোনো সহীহ হাদীসে আট রাকাত বর্ণিত হতো; তাহলে তাঁদের কেউ বিশ রাকাত তারাবী পড়তেন না। তাঁরা রাসূলের সুন্নাহ’র খেলাফ করে বিশ রাকাত পড়বেন —তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

 

যদি বলতে হয়, তারাবীহ’র সালাতের রাক’আত সংখ্যা রাসূলের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে বলতে হবে, সেটি হচ্ছে বিশ রাক’আত, যদিও হাদীসটিকে কেউ কেউ য‘ঈফ বলার চেষ্টা করেছেন। তবুও এই হাদীসের পক্ষে অনেক ‘শাওয়াহেদ’ রয়েছে বিধায় এটি সকলের ঐক্যমতে গ্ৰহণযোগ্য।

 

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, হাদীসেতে বর্ণিত রাকাতের অনুসরণ যদি করতেই হয়, তবে সেটা আট রাকাত নয়; বরং বিশ রাকাতই হচ্ছে সুন্নাহ-সম্মত আমল। এবং বিশ রাকাতই হচ্ছে খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ। শায়খ বিন বায রহ. বলেন—

 

والثلاث والعشرون فعلها عمر – رضي الله عنه – والصحابة فليس فيها نقص وليس فيها إخلال، بل هي من السنن – سنن الخلفاء الراشدين

 

উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র জামানায় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন, এর মধ্যে কোনো ধরনের কমতিও ছিলো না, কোনো ধরনের ত্রুটিও ছিলো না। বরং এটাই সুন্নাহ; খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ। [মাজমু’উল ফাতাওয়া —বিন বায: ১১/৩২৫]

 

[3] প্রিয় পাঠক দেখুন, ইবনে উসাইমীন নিজেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, রাসূল সা. তারাবীহ’র কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। তাহলে লা-মাযহাবরা কীভাবে বলে, সুন্নাহ’য় বর্ণিত সংখ্যা আট?

 

[4] এই বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তারাবীহর রাকাত সংখ্যা রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে দেননি। সুতরাং তারাবীহতে আট রাকাত পড়া সুন্নাহ এমন দাবী করা অবান্তর।

 

[5] পাঠক, খেয়াল করুন। ইবনে উসাইমীন বলেন, এ ক্ষেত্রে আট রাক’আত ওয়ালারা মুজতাহিদ; ভালোর নিয়তে তারা এমনটি করে; কিন্তু সব মুজতাহিদ তো আর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে না। অর্থাৎ তারা এ ক্ষেত্রে ভুলের ওপর আছে।

 

[6] শেষ পর্যায়ে তিনি বিশ রাক’আত ওয়ালাদের পক্ষ থেকে আট রাক’আত ওয়ালাদের প্রতি ‘তীব্র বিরোধিতা’র অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। যদিও বাস্তবিকপক্ষে এই ‘তীব্র বিরোধিতা’ থেকে বিশ রাক’আত ওয়ালারা মুক্ত।

 

কারণ, তারা আট রাক’আতের বিরোধিতা তখন করে যখন লা-মাযহাবরা বিশ রাক’আতকে বিদ‘আত আখ্যায়িত করে এবং মানুষকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে। আর এমন ক্ষেত্রে বিরোধিতা করাটাই স্বাভাবিক; বরং ঈমানী দায়িত্ব। কারণ, তারা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অশান্তি এবং বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করছে। মুমিনদের পথ থেকে নিজেরাও সরে গেছে অন্যকেও সরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।

 

অতএব বিশ রাক’আত ওয়ালাদের এই ‘তীব্র বিরোধিতা’ অমূলক নয়; বরং বাস্তবসম্মত। তাছাড়া আট রাক’আত ওয়ালাদের প্রতি তাদের অভিযোগটা অত্যন্ত দলীলসমৃদ্ধ। ইবনে উসাইমীন নিজেও দলীলটা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, “আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করবো যে দিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।”[সূরাতুন-নিসা: ১১৫]

 

বোঝাই যাচ্ছে, মূলত এই দলীল উল্লেখ করে ইবনে উসাইমীন রহ. বিশ রাকাত ওয়ালাদের নাম দিয়ে নিজেই আট রাক’আত ওয়ালাদের প্রতি সত্যের দা’ওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন।

 

আর, তাঁর পুরো বক্তব্য থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে তিনি বিশ রাকাত ওয়ালাদের পক্ষে। কারণ, তিনি আট রাক’আত ওয়ালাদের বাড়াবাড়িযুক্ত দাবীসমূহ খণ্ডন করে দিয়েছেন, কিন্তু বিশ রাকাত ওয়ালাদের এই ‘তীব্র বিরোধিতা’র কোনো খণ্ডনই করেননি। —লুবাব

 

[7] আট রাকাত তারাবীহ সুন্নাহ-সম্মত না হওয়া সত্বেও দেখা যাচ্ছে শায়খ সালিহ মুনাজ্জিদ শেষে বলছেন, দুটোই ভালো। তিনি এমনটা বলছেন, যাতে করে অতিরিক্ত ফিতনা সৃষ্টি না হয়ে যায়।

 

সত্যি কথা হচ্ছে, তারাবীহ আট রাকাত পড়লে সুন্নাহ পালন হবে না। কারণ, ইবনে বায বলেন, সুন্নাহ হচ্ছে ২০ রাকাত। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া —বিন বায: ১১/৩২৫]

 

[8] এই বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তারাবীহর রাকাত সংখ্যা রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে দেননি। সুতরাং তারাবীহতে আট রাকাত পড়া সুন্নাহ, এমন দাবী করা অবান্তর।

পড়ুন-

 

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply