জুমা মোবারক বা জুমার দিনের আমল ফজিলত করণীয় ও বর্জনীয়

জুমা মোবারক, জুমার দিনের আমল, ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়

0

পবিত্র জুমা বা জুম্মা, যা মুসলমানদের একটি সাপ্তাহিক শ্রেষ্ঠ দিন। যে দিনে আমরা সবাই সবাইকে জুমা মোবারক দিয়ে থাকি। ইসলামে এই “জুমার দিন বা শুক্রবার” বিভিন্ন কারণে নানান গুরুত্ব বহন করে। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে এই দিনের মর্যাদা অধিক হলেও, আমরা অনেকেই জুমার খুতবা ও নামাজ, এই দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত, জুমার নিয়ত ও আমল, এমনকি জুমার নামাজ কত রাকাত তাও বিস্তারিত জানি না।  আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পবিত্র জুমার দিন বা জুম্মা মোবারক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

জুমা, জুম্মা বা জুমু’আহ

জুমাকে আরবিতে জুমু’আহ বলা হয়। জুমা শব্দটির অর্থ হলো  একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। প্রতিদিনের নিয়মিত যোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার দিনে বিশেষ দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজ প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করে। যাকে জুমার নামাজ বলা হয়। জুমার দিনের বিশেষত্ব হলো “জুমার নামাজ।” যার গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত অপরিসীম।

জুমা বা জুম্মার দিনের ইতিহাস

হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর পর্যায়ক্রমে সকল মুসলিমের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। প্রথম হিজরি সনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে যখন হিজরত করে মদিনা গেলেন। তখন তাঁর মদিনায় পৌঁছার দিনটি ছিল ইয়াওমুল আরুবা বা শুক্রবার। যখন তিনি বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলেন তখন জোহর নামাজের  সময় হয়ে যায়। সেখানে তিনি জোহর নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমা। 

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জুমার সূচনা হয় আরো পরে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। সেখানে তাঁরা ইহুদি নাসারাদের নিজস্ব সাপ্তাহিক একটি বিশেষ দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাঁদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়, যদি তাদেরও এমন একটি বিশেষ দিন থাকতো। যেদিন তারা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং  নামাজ  আদায় করবে। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা বা  শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন। এইদিনকে গ্রহণ করার কারণ হলো, ইহুদিরা শনিবার এবং খ্রিস্টানরা রবিবারকে বিশেষ দিন হিসাবে পালন করে। তাই তারা ইয়াওমুল আরুবা বা  শুক্রবারকে ‘জুমার দিন’ নামকরণ করলেন। (সিরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিজি)

তাফসিরে জাকারিয়ায় এসেছে মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে “ইয়াওমে আরূবা” বলা হত। বলা হয়ে থাকে যে, আরবে কা’ব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম “ইয়াওমুল জুমা” রাখেন। কারণ, জুমা শব্দটির অর্থ একত্রিত করা। এই দিনে কুরাইশদের সমাবেশ হত এবং কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। সারকথা এই যে, ইসলাম পূর্বকালেও কা’ব ইবনে লুয়াই-এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দান করা হত। তিনিই এই দিনের নাম জুমার দিন রেখেছিলেন। কিন্তু সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় যে, “আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টিকে এই দিন একত্রিত করা হয়েছিল বলেই এই দিনকে জুমা নামকরণ করা হয়েছে।” (মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৪১২, নং: ১০২৮, সহিহ ইবনে খুযাইমাহ ৩/১১৮, নং: ১৭৩২, ত্বাবরানী: মুজামুল কাবীর ৬/২৩৭ নং ৬০৯২, মুজামুল আওসাত্ম: ১/২৫০, নং ৮২১, মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ২/৩৯০)

কুরআনে জুমার ঘোষণা

ইসলামে জুমার গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সম্পূর্ণ একটি সুরা নাযিল করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বুঝো। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)

হাদিসের জুমার ঘোষণা

পবিত্র হাদিসে জুমার গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে এভাবে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামাতের দিন আমরা মর্যাদার ব্যাপারে সবার পূর্বে। ব্যতিক্রম এই যে, আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তাদের সে দিন (শুক্রবার) যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছে। কিন্তু সে (জুমার) বিষয়ে আল্লাহ আমাদের হিদায়েত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইহুদিদের (সম্মানীয় দিন হচ্ছে) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রোববার)। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৮৭৬)

জুমার নামাজের শর্তসমূহ 

জুমার নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যা পূরণ হলে তবেই জুমার নামাজ আদায় সহি শুদ্ধ হবে। এগুলো হলো,

  • স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রে জুমার নামাজ  আদায় করা। অর্থাৎ যে স্থানে জুমা নামাজ আদায় করা হবে, সেখানে সরাসরি নামাজ আদায়ের কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকা যাবে না।
  • যথেষ্ট জনসংখ্যার নূন্যতম বড় গ্রাম/উপশহর হওয়া। যেখানে প্রয়োজনীয় সকল কিছুই পাওয়া যায়।
  • জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকা। 
  • নামাজের ওয়াক্ত বা নির্ধারিত সময় হওয়া। অর্থাৎ জোহর নামাজের সময়ের মতো জুমার নামাজও ঐ সময়ে আদায় করতে হবে। এর আগে বা পড়ে আদায় করলে তা সহি শুদ্ধ হবে না। 
  • জামায়াতে নামাজ আদায় করা। নূন্যতম পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্ক সহকারে জামাত হওয়া। 
  • জুমার খুতবা দেওয়া। জুমার খুতবা প্রদান ছাড়া কখনোই জুমার নামাজ পরিপূর্ণ হবে না। 

জুমার আযান

প্রতি নামাজের জন্য একটি আযান দেওয়া হলেও জুমার নামাজের জন্য দুটি আযান  বর্তমানে চালু আছে। একটি জুমার নামাজে আহবানের জন্য বড় করে দেওয়া হয়। অপরটি খতিব সাহেব আরবিতে খুতবা দেওয়ার আগে তাঁর সামনে দেওয়া হয়।   যদিও এই দুই আযান দেওয়াটা সুন্নাত সম্মত নয়। জুমার আযানের সুন্নাত হলো ইমাম যখন খুৎবা দেওয়ার জন্য যখন মিম্বারে বসবেন, তখন মুয়াযযিন আযান দিবে। (বুখারি, হা/৯১৫, ৯১৬)। রাসুল (সা.), হযরত  আবু বকর (রা.)  ও হযরত উমার (রা.) এর আমলে এবং হযরত উসমান (রা.) এর খেলাফতের প্রথমাংশ পর্যন্ত  জুমার আযান একটিই ছিল। পরে যখন মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে গেল, তখন উসমান (রা.) মসজিদে নববির অনতি দূরে “যাওরা” নামক বাজারে জুমার পূর্বে আরেকটি আযান চালু করেন। (বুখারি, হা/৯১২; মিশকাত হা/১৪০৪)

উসমান (রা.) যে কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান চালু করেছিলেন, কোথাও যদি ঐ কারণ প্রযোজ্য থাকে, তাহলে তা এখনও জায়েয হবে। কারণ খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতও অনুসরণযোগ্য। উসমান (রা.) এর আযান যদি সকল মসজিদের জন্য করণীয় হতো, তাহলে তিনি মক্কায়ও তা চালু করতেন। অথচ তাঁর আমলে মক্কায় দুই আযান চালু ছিলো না।

ওমর ইবনু আল ফাকেহানী (১২৫৬-১৩৩৪খৃ:) বলেন যে, ডাক (আযান) প্রথম বসরায় চালু করেন যিয়াদ এবং মক্কায় চালু করেন হাজ্জাজ। আর আমার কাছে এখন খবর পৌঁছেছে যে, নিকট মাগরীবে অর্থাৎ আফ্রিকার তিউনিস ও আলজেরিয়ার পূর্বাঞ্চলের লোকদের নিকট কোন আযান নেই, মূল এক আযান ব্যতীত। (মিরআত ২/৩০৭) যা আজও চালু আছে । আলী (রা.) এর রাজধানী কুফাতেও এই আযান চালু ছিল না। (তাফসিরে কুরতুবি, জুমা, আয়াত ৯)

জুমার দিনের খুতবা

জুমার খুতবা

জুমার নামাজ দুই রাকাত। অথচ জোহরের নামাজ চার রাকাত। তাই এই চার রাকাত নামাজকে জুমার দুই রাকাত ফরজ ও ইমামের খুতবার মধ্যে বাকি দুই রাকাতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। খুতবা জুমার নামাজের একটি শর্ত বা ফরজ। এইকারণে জুমার খুতবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। 

খুতবার অর্থ হলো বক্তব্য দেওয়া বা বক্তৃতা করা। ইসলামে খুতবা বলা হয় এমন বক্তব্য বা বক্তৃতাকে, যেখানে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর  একত্ববাদের ঘোষণা, হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রতি দরুদ এবং উপস্থিত সাধারণের প্রতি সমসাময়িক এবং দিনের বিভিন্ন আদেশ উপদেশ ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে। যে ইমাম খুতবা দেন তাকে বলা হয় খতিব। এসময় দুইটি খুতবা দেয়া হয়। দুই খুতবার মাঝখানে অল্প কিছু সময়ের বিরতি নেওয়া হয়। মসজিদের প্রতিদিনের ইমাম খুতবা দিতে পারেন বা জুমার দিন বিশেষ কেউ খুতবা দিতে পারেন।

জুমার ফরজ নামাজের আগে খুতবা পাঠ বা বক্তব্য দেওয়া নামাজেরই একটি অংশ। আরবিতে খুতবা দেওয়া সুন্নাহ। তবে খতিব সাহেব যেহেতু খুতবায় উপস্থিত জনসাধারণের জন্য  সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও কুরআন এবং হাদিসের আলোকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন, সেহেতু আরবিতে খুতবা দেওয়ার আগে জুমা এলাকার নিজস্ব ভাষায় খুতবার বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন।

সাধারণ দিনের চাইতে জুমার দিনে অধিক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। একারণে দিন ইসলামের বিভিন্ন বিষয়সহ সমাজে প্রচলিত অন্যায়-অবিচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, মজুতদারি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, ইত্যাদি সামাজিক অনাচার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের লোকদের খতিব সাহেব তাঁর খুতবার মাধ্যমে সতর্ক করেন। একইসাথে গরিব, অভাবী, মিসকিন, অনাথ আত্মীয়স্বজন, অভাবগ্রস্ত পাড়া-প্রতিবেশী, অভুক্ত অনাহারী ও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে সামর্থ্যবানদের সহযোগিতার জন্য ওয়াজ নসিহত করে থাকেন। এভাবে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রকৃত ইসলামকে তুলে ধরার মাধ্যমে যেমন দিনের ভিত্তি শক্ত হয়, ঠিক একইভাবে বর্তমান দুনিয়ার বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং আদর্শ জাতি গঠনে ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে খুতবা একটি  উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

জুমার খুতবার সুন্নাহ

জুমার খুতবার বিভিন্ন সুন্নাহ রাসুল (সা.) এর হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। এগুলো হলো, অবশ্যই পাক পবিত্র হয়ে খুতবা প্রদান করা। খুতবার আগে মনে মনে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা। দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়া। হাদিস এসেছে, হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করতেন। (মুসলিম শরিফ: ১/২৮৩) আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে খুতবা শুরু করা। খুতবায় আল্লাহ‌র এমন প্রশংসা করা, যার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা। হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) উপর দরুদ পাঠ করা। আল্লাহ‌র প্রসংশা ও দরুদ পাঠের পরে “আম্মা বা’দ” বলে মুসল্লিদের দিকে মুখ করে খুতবা পাঠ করা। 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মিম্বরে দাঁড়াতেন, তখন আমরা তার সম্মুখ হয়ে বসতাম। (সুনানে তিরমিজি: ১/১১৪) খুতবা অবশ্যই উচ্চস্বরে প্রদান করা। যাতে  মুসল্লিরা সহজে খুতবা শুনতে করতে পারে। ওয়াজ-নসিহত করা। ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করা। দ্বিতীয় খুতবায় আল্লাহপাকের প্রশংসা এবং নবি করিম (সা.) এর ওপর দরুদ পাঠ করা। সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম নরনারীর জন্য দোয়া করা। জুমার খুতবা দুইটি হওয়া সুন্নত এবং খুতবা মিম্বরে দেয়া সুন্নত। কেননা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করতেন। হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুইটি খুতবা পাঠ করতেন এবং উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন। তিনি কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। ‘ (মুসলিম শরিফ: ১/২৮৩)

জুমার দিনের মর্যাদা

জুমার মর্যাদার সম্পর্কিত অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৪১০) সুতরাং সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে শুক্রবার তথা জুমার দিনই হচ্ছে আল্লাহ‌র কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। 

জুমার দিনের ফজিলত
জুমা, জুমার খুতবা, জুমার আমল

জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত

জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অসংখ্য হাদিস থেকে আমরা জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারি। 

দোয়া কবুলের বিশেষ সময়

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (সহিহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)

হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০, তিরমিজি : ৪৮৯)

গুনাহের ক্ষমা পাওয়া 

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার সলাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সলাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমার) সলাত আদায় করল, এতে তার দু’ জুমার মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস ১৮৭২)

জুমার নামাজের ফজিলত

জুমার দিনে জুমার নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব খুবই অপরিসীম। বিশেষ করে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যাওয়া উপলক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেখানে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার জন্য কুরবানির সওয়াব হয় বলে রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন। নিম্নে হাদিসটি দেওয়া হলো, 

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।

জুমার দিনের আমল

জুমার দিনে আমল করার জন্য  রাসুল (সা.) থেকে অসংখ্য সুন্নাহ প্রমাণিত। নিম্নে তা দেওয়া হলো। 

গোসল করা

আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে আসলে সে যেন গোসল করে। (বুখারি, হাদিস নং ৮৭৭)

মিসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহার 

রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির উপর শুক্রবার গোসল করা জরুরী এবং মিসওয়াক করা ও সুগন্ধি লাগানো তার জন্য যা সম্ভব হয়। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস  ১৩৭৫)

উত্তম পোশাক পরিধান

নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জুমা‌র দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমা‌র সলাতে এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দু’জনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা‌র মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহমসূহ ক্ষমা করা হয়। (আহমাদ ২১০২৯ তাহক্বীক্ব আলবানী: হাসান সহিহ, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১০৯৭)

আজান সাথে সাথেই মসজিদে আসা  

জুমার দিনে আযান দেওয়ার আগেই মসজিদে আসার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে আযানের সাথে সাথে বা আগে থেকে মসজিদে পৌঁছানো যায়। কেননা আল্লাহ  পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন (জুমার) নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা অনুধাবন করো।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)

ইমামের নিকটে বসা ও পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমা‌র জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৫)

নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা নসীহতের সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের নিকটবর্তী হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস  ১১০৮)

মসজিদে প্রবেশ করেই দু রাকাত নামাজ আদায় করা

জুমার দিন নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, নামাজ আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, দু’রাক’আত নামাজ আদায় কর। (বুখারি, হাদিস  ৯৩১)

দুরুদ পড়া 

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হল জুমার দিন। কাজেই এদিন তোমরা আমার উপর বেশী দরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।   (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস  ১০৪৭)

জুমার দিনে ফজরের নামাজ

নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমার দিন ফজরের নামাজে সুরা সেজদা এবং সুরা   দাহর এই দু’টি সুরা তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, ৮৮০ বুখারি, হাদিস  ৮৯১)

বর্জনীয় কাজ সমূহ 

কাঁচা পেঁয়াজ রসুন খেয়ে মসজিদে না আসা 

নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ হতে অর্থাৎ কাঁচা রসুন খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদে না আসে। (বুখারি, হাদিস  ৮৫৩)

দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমার দিন ইমামের খুত্ববাহ চলাকালে কাউকে হাঁটু উপরে উঠিয়ে কাপড় জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১১০)

মুসল্লিদের ঘাড় না  ডিঙানো

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি শুক্রবারে তাঁর পাশে বসা ছিলাম, তারপর তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে আসছিল, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, বসে পড়, তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ।” (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস ১৩৯৯)

কাউকে উঠিয়ে না বসা

নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। (বুখারি, হাদিস নং ৯১১)

কাউকে চুপ করো না বলা 

আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমু’আর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে। (বুখারি, হাদিস নং ৯৩৪)

মুসল্লির সামনে না হাঁটা

আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো। (বুখারি, হাদিস নং ৫১০)

জুমার নামাজের নিয়ম বা জুমার নামাজের নিয়ত

আমাদের উপমহাদেশে জুমার নামাজের নিয়ম প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা থেকে আলাদা। আমরা যারা জন্মগতভাবে মুসলিম তারা জুমার নামাজের নিয়ম বলতে চার রাকাত কাবলাল জুম্মা, দুই রাকাত ফরজ এবং এর পরবর্তী চার রাকাত বাদাল জুম্মাকেই মনে করি। যা কখনোই শুদ্ধ নয়। এমনকি যারা এইরূপ জুমার নামাজের নিয়ম আবিষ্কার করেছে তারা বিভিন্ন বিদআতের সৃষ্টি করেছে। তারা জুমার নামাজের নিয়ত নামে একটি বিদআতের আমল করে। যেমন তারা চার রাকাত কাবলাল জুম্মার নিয়তও আরবিতে বানিয়েছে। 

যার বাংলা উচ্চারণ, নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবা রাকাআতি ছালাতি কাবলাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসুলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

এবং যার অর্থ দাঁড়ায়, আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুম্মার সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর। 

একইভাবে জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়তও আরবিতে বলা হয়। যার বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসকিতা আন জিম্মাতী ফারদুজ্জহরি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

একইভাবে এর অর্থ হচ্ছে, আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর। এইভাবে চার রাকাত বাদাল জুমার নিয়তও তারা আরবিতে মুখে উচ্চারণ করে যা কখনোই রাসুলের সুন্নাহ নয়। এমনকি এটা ইসলামের রীতিনীতিও নয়। কুরআন হাদিসের কোথাও এই জাতীয় মুখে আরবিতে নামাজের নিয়ত নেই।

প্রকৃত জুমার নামাজ

আমাদের উপমহাদেশে জুমার নামে ফরজ সুন্নাত নফল মিলিয়ে মোট ১৮  রাকাত নামাজ প্রচলিত আছে। যদিও কুরআন হাদিস দ্বারা এর সত্যতা নেই। জুমার দুই রাকাত নামাজ হচ্ছে ফরজ। এই নামাজে রাসুলুল্লাহ সা. সুরা জুমা এবং সুরা মুনাফিকুন পড়তেন। (মুসলিম, হাদিস ১৯১২) তবে ফরজ নামাজের আগে কমপক্ষে দুই রাকাত তাহহিয়্যাতুল  মসজিদের নামাজ হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। 

এক জুমার দিন নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, নামাজ আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, দু’রাক’আত নামাজ আদায় কর। (বুখারি হাদিস  ৯৩১)

আমাদের উপমহাদেশে কাবলাল জুমা অর্থাৎ জুমার আগে নামাজ নামে নির্দিষ্ট চার রাকাত চালু আছে। যার স্বীকৃতি প্রসিদ্ধ কোনো হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায় না। তবে যে কেউ চাইলেই খুতবা বা খতিবের বায়ানের আগে তার সুবিধা মত যত রাকাত ইচ্ছে নফল নামাজ আদায় করতে শরিয়ত মতে কোনো অসুবিধা নেই।

ঠিক একইভাবে জুমা নামাজের পরে বাদাল জুমা বা জুমার পরের নামাজ নামে নির্দিষ্ট চার রাকাত প্রচলিত আছে। যার স্বীকৃতি হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে দুটি মতামত মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো জুমার পরে মসজিদে চার রাকাত আদায় করা।

রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুমু’আর নামাজ আদায় করে তখন সে যেন তার পরে চার রাক’আত নামাজ আদায় করে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস ১৪২৬, মুসলিম হাদিস ১৯২১)

অন্য আরেকটি মতামত হলো জুমার নামাজ আদায় শেষে বাড়িতে গিয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করা। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার সলাত আদায় করে ফিরে এসে নিজ বাড়িতে দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করতেন। তিনি পুনরায় বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করতেন। (মুসলিম, হাদিস নং ১৯২৪ সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস  ১৪২৮)

সুতরাং যারা সুন্নাতের অনুসরণ করতে চায় তারা মসজিদে চার রাকাত কিংবা বাড়িতে দু রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন। এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, জুমার নামাজে বা জুমার নামাজের নিয়মে কোথাও মুখে আরবিতে নিয়ত বলার নিয়ম নেই। মুখে আরবিতে নিয়ত করা সম্পূর্ণ  বিদআত। 

নিয়তের অর্থ হলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সুতরাং কেউ যে নামাজের নিয়তে নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন মনে মনে সে যে নামাজ আদায় করবে, সেটাই হবে তাঁর নিয়ত। অর্থাৎ কেউ জুমার নামাজের জন্য দাঁড়ালে সে জুমার ফরজ নামাজ আদায় করছে এটা মনে মনে বললেই তার নিয়ত শুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে কখনোই আরবিতে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। 

জুমার দিনে মহিলাদের আমল

পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে জুমাসহ সকল নামাজই পুরুষ এবং মহিলাদের মসজিদে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। সুতরাং জুমার নামাজও চাইলে মহিলারা মসজিদে আদায় করতে পারেন যদি সেই ব্যবস্থা থাকে। 

যদি মহিলারা মসজিদে না যায় তাহলে তারা জুমার দিন তাদের নির্ধারিত জোহরের নামাজ নির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করবে। এক্ষেত্রে তারা জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। আমাদের উপমহাদেশে জুমার পরে মহিলাদের নামাজ আদায়ের যে রসম দেখা যায় তার কোনো ভিত্তি নেই। নামাজ ছাড়া বাকি যেসব ফজিলতের  আমল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তার সবই মহিলারাও আমল করবে।

জুমার নামাজ পরবর্তী করণীয় 

আমাদের দেশসহ প্রায় সকল মুসলিম দেশেই শুক্রবার তথা জুমার দিনকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ এই দিনে সকল কাজকর্ম থেকে মানুষ বিরত থাকে। অথচ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “এরপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সুরা জুমা : আয়াত ১০)

এ আয়াতে “পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর” এর অর্থ হলো জাগতিক সকল  কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থাৎ জুমার নামাজ শেষে সবাই যেন তাদের কাজকর্মে পুনরায় যোগ দিয়ে রিজিকের সন্ধান করে। এটা দ্বারা এই উদ্দেশ্য যে,  জুমার দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরি নয়। শুধুমাত্র জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করা পর্যন্ত তা বন্ধ রাখা জরুরি।

জুম্মা মোবারক বা জুমা মোবারক

আজকাল আধুনিক যুগ ডিজিটাল এবং তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ফলে আধুনিকতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচার ও প্রসারতা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব ইসলামেও পড়ছে ধীরে ধীরে। ইদানিং কালে আধুনিক ছেলেদের মধ্যে জুমা একটি ট্রেন্ড চালু হয়েছে। যে ট্রেন্ড হচ্ছে শুভেচ্ছা জানানোর ঐতিহ্য! তাও আবার জুমা নিয়ে।

আমাদের উপমহাদেশে সম্প্রতিককালে  শুক্রবার এলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে ‘জুমা মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানানো যেন একটি প্রতিযোগিতায় পরিনত হয়েছে। এই শুভেচ্ছা জানানোর  বিশেষ প্রবণতায় কতটুকু শরীয়তসম্মত কিংবা জুমাবারে এ ধরনের ‘জুমা মোবারক’ দিয়ে শুভেচ্ছাবাক্য বিনিময় করা কতটুকু ইসলাম সমর্থিত তা আমাদের জানা দরকার। 

আমরা যদি একে অপরকে ‘জুমা মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানাই, তার অর্থ হলো,  আপনার জুমার দিন বরকতময় হোক! যা একটি খুবই সুন্দর এবং দোয়ামন্ডিত বাক্য। যাতে আপাতদৃষ্টিতে কোনো অপরাধ আছে বলে মনে হয় না। তাই যেকেউ এটা একে অপরকে এটা বললে গুনাহ হওয়ার কথা নয়। 

কিন্তু এটা যখন একটা ট্রেন্ড বা ঐতিহ্যে বা রসমে পরিনত হয়ে প্রত্যেক শুক্রবারে নিয়ম করেই এইজাতীয় একইধরনের শুভেচ্ছা বিনিময় করা, আদৌ কি  রাসুলুল্লাহর (সা.) এর  সুন্নাহ দ্বারা সমর্থন কিনা আমাদের জানা দরকার। অথচ রাসুল (সা.) থেকে কিংবা সাহাবায়ে কেরামের (রা.) থেকেও তাদের আমল দ্বারাও এরকম শুভেচ্ছা বিনিময় প্রমাণিত নয়। 

তথাপি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ যে, কেউ এমন কোনো আমল করল, যা ইসলামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় (অর্থাৎ রাসুল (সা.) কিংবা তাঁর পরবর্তী সাহাবীদের রাঃ আমল দ্বারা প্রমাণিত নয়),  তাহলে ঐ আমল প্রত্যাখ্যাত হবে অর্থাৎ বাতিল হবে। (মূল হাদিস বুখারি ও মুসলিম) অথচ যারা জুমা মোবারক প্রথা চালু করেছে, তারা সওয়াবের নিয়তেই তা বলা শুরু করেছে। 

অপর হাদিসে এসেছে, কেউ যদি ইসলামে নতুন কোনো কিছু (আমল) শুরু করে যা এর (অর্থাৎ রাসুল এবং তাঁর সাহাবীদের শিক্ষা দ্বারা প্রমাণিত নয়)  অন্তর্ভুক্ত নয়, তা বাতিল বলে গণ্য হবে। (বুখারি ও মুসলিম) 

সুতরাং ‘জুমা মোবারক’ বলে আমাদের ইয়ং জেনারেশন যে একটি প্রথা আবিষ্কার করেছে তা কখনোই সুন্নাহ সমর্থিত আমল নয়। তাই এই নব্য আমলকে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরামগণ বিদয়াত বলেছেন।

সুতরাং আমাদের উচিত হবে ‘জুমা মোবারক’ নামে এই বিদআতী প্রথা থেকে সরে আসা। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, ‘জুমা মোবারক’ প্রথাটি কারা আবিষ্কার করেছে এবং কেন করেছে।

এটার ব্যবহার শুধু তারাই করছে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকে। এই শ্রেণীর মানুষদের দ্বীন ধর্মের প্রকৃত কোনো আগ্রহ নেই। এদের অধিকাংশই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে না। তাই তারা যখন একদিন জুমার দিনে নামাজে যায়, তখন তারা ছবি তুলে আপলোড দিয়ে ‘জুমা মোবারক’ জানায়। অথবা যারা সারাদিন ফেইসবুকে পড়ে থাকে, তারা অন্যের সামনে নিজেকে নামাজী সাজানোর জন্য ‘জুমা মোবারক’ লিখে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। এদের দেখাদেখি কিছু ঈমানি ভাইও সঙ্গদোষে এইসব পোস্ট ফেইসবুকে ছাড়ে। যারা এমন করে এবং করছে, তারা নিজের ঈমান আমলকে রিয়া দিয়ে পরিপূর্ণ করছে। যা একপ্রকার শিরক। অতএব আমাদের এই জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার পরিনতি

পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে জুমার নামাজ খুতবাসহ বিভিন্ন আমল বর্ণিত হয়েছে। যা আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এরপরেও যারা বিভিন্ন অজুহাত ও বিনাকারণে  জুমা ছেড়ে দেয়, তাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক হুশিয়ারি দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ও আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন : যারা জুমার সলাত ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস ১৮৮৭)

সুতরাং যারা নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি জুমার নামাজও আদায় করে না আল্লাহ  তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়। ফলে   ধীরে ধীরে তারা গাফিলদের তথা মুনাফিকদের দলে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। আর যারা মুনাফিকদের অন্তর্ভূক্ত হয় তারা কখনোই সঠিক পথ পায় না। তাই কোনো অবস্থাতেই নিয়মিত নামাজসহ জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। 

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা জুমার নামাজের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম। এও জানলাম জুমার দিনে আমল যা প্রতিটি মুসলমানের করণীয় এবং বর্জনীয়। আসুন আমরা সঠিক ইসলাম জেনে তা মানার চেষ্টা করি। এবং প্রতিটি  জুমাকেই আমরা নেক আমলের হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাই।

প্রশ্নোত্তর 

জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব

পবিত্র জুমার দিন শুক্রবার জুমার নামাজ হচ্ছে ফরজ। আমরা যখন নিয়ত করব তখন ফরজ বা ওয়াজিব এভাবে কোনো আলাদা শব্দ মুখে উল্লেখ করার দরকার নেই।  বরং উচিত হবে যে, আমি জুমার নামাজ আদায় করছি এটা মনে মনে বলা। 

এই নামাজ  জোহরের নামাজের পরিবর্তে আদায় করতে হয়। আমরা জানি যোহরের ফরজ নামাজ হচ্ছে ৪ রাকাত। আর জুমার ফরজ নামাজ হচ্ছে ২ রাকাত। বাকি ২ রাকাত নামাজের পরিবর্তে জুমার খুতবা শোনা ওায়াজিব। শুধু তাইনয় এই দিন বিশেষ ইবাদতের দিন। তাই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে জুমার নামাজের জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।  

জুমার নামাজ কত রাকাত

রাসুল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীদের আমল থেকে শরিয়তসম্মত ভাবে প্রমাণিত যে, জুমার দিন জুমার নামাজ ২ রাকাত হচ্ছে ফরজ। এটা নিয়ে কারো মতপার্থক্য নেই। তবে আমাদের উপমহাদেশে বিভিন্ন নামাজের বইয়ে  ২ রাকাত ফরজের আগে ২ রাকাত ওজুর নামাজ, ২ রাকাত মসজিদের নামাজসহ ৪ রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নাত ও ফরজের পরে ৪ রাকাত বাদাল জুমা সুন্নাত এবং ২ রাকাত সুন্নাত ও আরও ২ রাকাত নফল মিলিয়ে মোট ১৮ রাকাত নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ আছে। যে কারণে আমরা এই ১৮ রাকাত নামাজ পড়তে অভ্যস্ত। এছাড়াও যারা একেবারেই কম পড়েন, তারা ফরজ সুন্নাত মিলিয়ে কমপক্ষে ১০ রাকাত নামাজ পড়েন।

অথচ পবিত্র হাদিস এবং সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত যে, ২ রাকাত ফরজের আগে নির্দিষ্ট ৪ রাকাত কাবলাল জুমা নামে কোনো নামাজ নেই। বরং সুন্নাহ হিসাবে জুমার খুতবার আগে অনির্দিষ্ট ভাবে আপনার ইচ্ছামত নামাজ আদায় করা যায়। তবে যে সুন্নাত নামাজের জন্য রাসুল (সা.) জোর তাগিদ দিয়েছেন, সেই দুই রাকাত নামাজের ব্যপারে আমাদের সকলের অনিহা রয়েছে। যা জুমার দিন মসজিদে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথেই না বসে আদায় করতে হয়।

একইভাবে জুমার ফরজ নামাজের পর রাসুল (সা.) থেকে প্রমাণিত যে, তিনি মসজিদে উপস্থিত থাকলে শুধু চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আর যদি ঘরে চলে যেতেন, তাহলে শুধু ঘরে দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করতেন। 

 

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

 

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

 

আপনি আরো যা পড়তে পারেন

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply