তারাবীহ কত রাকাত: বিভ্রান্তি নিরসন —২

0

চার ইমাম মুহাদ্দিসও ছিলেন না, মুহাক্কিকও ছিলেন না!

একথা আমি বলিনি বরং স্বঘোষিত সালাফীরাই বলেছে। তাদেরই একজন (‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থের লেখক) লিখেছেন-

عدد ركعات صلاة التراويح: ففيه ثلاثة أقوال للعلماء: القول الأول: ركعات التراويح ثمانية – وهو قول المحدثين والمحققين. القول الثاني: ركعات التراويح عشرون ركعة – وبه قال الأئمة الثلاثة: الشافعي وأبو حنيفة وأحمد. القول الثالث: ركعات التراويح ست وثلاثون – وبه قال الإمام مالك

তারাবীর রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে ওলামাদের তিনটি মত পাওয়া যায়।

১. তারাবির রাকাত সংখ্যা ৮; এটা হচ্ছে মুহাদ্দিস এবং মুহাক্কিক (গবেষক)-দের মত।
২. তারাবির রাকাত সংখ্যা ২০; এটা হচ্ছে তিন ইমাম- শাফে’ঈ, আবু হানীফা ও আহমদ বিন হাম্বলের মত।
৩. তারাবীহর রাকাত সংখ্যা সংখ্যা ৩৬; এটা হচ্ছে ইমাম মালেকের মত।

📗 পর্যালোচনা-১

লেখকের কথা “মুহাদ্দিস এবং মুহাক্কিকদের মতে ৮ রাকাত” এর দ্বারা তিনি এটাই দাবি করছেন যে, চার ইমাম মুহাদ্দিসও ছিলেন না, গবেষকও ছিলেন না! যদি হতেন, তাহলে তো মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের মত ২০ রাকাতও হয়।

অথচ ইসলামী ইতিহাসে গবেষক বলতে প্রধানত চার ইমামকেই বুঝানো হয়ে থাকে। অবস্থাটা এমন যে, “নিজের ঘর নিজে পর”।

📗 পর্যালোচনা-২

এই কথিত ‘মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক’ কারা, জাতি তাদের দুয়েকজনের নাম জানতে চায়! লেখক যেমন চার ইমামের নাম উল্লেখ করেছেন, একইভাবে ২-৪ জন গর্বিত মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকের নামও উল্লেখ করতে পারতেন বৈকী। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেননি।

আসলে লেখক তা কখনো পারবেও না। কারণ, পৃথিবীতে সালাফযুগ থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত এমন কোনো মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক অতিবাহিত হননি, যিনি ৮ রাকাতের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের নামে ৮ রাকাতের দাবি করা লেখকের চরম মিথ্যাচার।

আর যদি লেখক ১২০০ হিজরির পরে জন্ম নেওয়া ক্ষীণমস্তিষ্ক (লা-মাযহাব)-দেরকেও মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক মনে করে থাকেনন, তাহলেও আদালত তাদেরকে মুক্তি দেবে না। (সামনের পর্যালোচনাসমূহ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে)

📗 পর্যালোচনা-৩

লেখক ‘মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক’ বলতে মূলত ১২০০ হিজরীর পরের/বর্তমান যুগের ক্ষীণমস্তিষ্ক লা-মাযহাব আলেমদেরকেই বুঝিয়েছেন! কারণ, সালাফযুগ থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত কোনো ‘মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক’ ৮ রাকাতের পক্ষে মত দেননি। অতএব, সালাফ যুগের মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের তাহকিকের সামনে লা-মাযহাবদের তথাকথিত মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের কথার শূন্যমাত্র দাম নেই।

হকদার ছেড়ে দাবীদারের কথা মেনে নেবে মুসলিম উম্মাহ- তা হাস্যকরই বটে। কথায় আছে— হাতি ঘোড়া গেলো তল, মশা বলে কত জল!

📗 পর্যালোচনা-৪

লেখক ৮ রাকাতের বিষয়টি প্রথমে উল্লেখ করে যেন এটাই দাবি করলেন যে, কথিত মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের ৮ রাকাতের মতের সামনে চার ইমামের ২০ রাকাতের মত
বাতিল। কারণ, চার ইমাম মুহাদ্দিসও ছিলেন না, মুহাক্কিকও ছিলেন না!

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ৮ রাকাতের মতই বাতিল। কারণ, ইসলামের ইতিহাসে কোনো একজন ইমামও ৮ রাকাতের দোহাই দিয়ে চার ইমামের উক্ত মতগুলোকে খণ্ডন করেননি। তাছাড়া ভুল করলে একজন করতে পারেন, একসাথে চার জন গবেষক ইমামই ভুল করবেন —এটা কেমন কথা! শুধু চার জন নয়, বরং তাদের অনুসারী সকল ইমামই ২০ রাকাতের প্রবক্তা ছিলেন। সবাই কিভাবে একটি ভুল করলেন?

📗 পর্যালোচনা-৫

লেখকের দাবি, চার ইমাম মুহাদ্দিসও ছিলেন না, মুহাক্কিক (গবেষক)ও ছিলেন না!
তো এতদসত্ত্বেও তাঁরা এতো বড় সুপ্রসিদ্ধ ইমাম হয়ে গেলেন কিভাবে? মুহাদ্দিসরাই তো উম্মাহর ইমাম হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো! অথচ ইতিহাস সাক্ষী, সাধারণ মানুষজন কখনো মুহাদ্দিসদের নিকটে কোনো মাসআলা জানতে চাইতে আসতো না। বরং মুহাদ্দিসরাই মাসআলা-মাসায়েল এর ক্ষেত্রে উল্টো ৪ ইমামের অনুসরণ করে থাকে!

মূলত মুহাদ্দিসগণ মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে তেমন একটা জ্ঞান রাখতেন না; তাঁরা কেবল হাদিস বর্ণনা করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বুঝ ছিলো দুর্বল। তাইতো তারা মাসআলা-মাসায়েল এর ক্ষেত্রে ফকীহ ইমামগণের অনুসরণ করতেন। কিন্তু একজন ফকীহ একসাথে মুহাদ্দিসও হন আবার মুহাক্কিকও হন; তবেই তো তিনি ফকীহ!

অতএব, চার ইমামকে মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকের কাতার থেকে বের করে দেওয়া মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। এবং মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের মত ৮ রাকাত- এটাও একটি মিথ্যচার। কারণ, চার মুহাক্কিক ইমামেরই মত হচ্ছে ২০ রাকাত। অন্যান্য মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের কথা না হয় বাদই দিলাম।

📗 পর্যালোচনা-৬

লেখক বলেছেন, চার ইমামের মত ২০ যথাক্রমে ৩৬। অথচ কেবল চার ইমাম নয়, বরং চার মাযহাবের সকল মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুহাক্কিক ওলামাদেরও মত ২০ রাকাত। এক কথায় জমহুর ওলামাদের মত ২০ রাকাত। নাকি লেখক বলতে চান, চার ইমাম ব্যতীত সকলেই ৮ রাকাতের পক্ষে মত দিয়েছেন, যেভাবে তিনি কেবল ৪ ইমামের কথা উল্লেখ করেছেন?

তাছাড়া চার মাযহাবে কি কোনো মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিক ছিলো না! তারা কেন চার ইমামের বক্তব্যকে খণ্ডন করেননি?

📗 পর্যালোচনা-৭

মানলাম, ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে নিয়ে তাদের চুলকানি রয়েছে। তাই তারা ইমাম আবু হানিফার কথা মানবে না। তাঁকে মুহাদ্দিস মানতেও অস্বীকৃতি জানাবে। কিন্তু বাকি তিন ইমামের কী দোষ? বাকি তিন ইমাম তো লা-মাযহাবদের দৃষ্টিতে আহলে হাদিস! ‌এমনকি ইমাম আবু হানিফা রহ.কেও তাদের শায়খরা আহলে হাদিস দাবি করে। তো বড় আহলে হাদিসরাই তো ২০ রাকাতের পক্ষে মত দিচ্ছে; কিন্তু ছোট আহলে হাদিসরা তা মানছে না কোন যুক্তিতে?

নিজেদেরকে আহলে হাদিস দাবি করা সত্ত্বেও আহলে হাদিস ইমামগণের কথা মানছে না। এ কেমন হিপোক্রেসি ভাই রে!

📗 পর্যালোচনা-৮

এ বিষয়ে শায়খী (সাইকো) ও মুহান্নার কথোপকথন

মুহান্না: আহলে হাদিসরা কী করে?
সাইকো: হাদীস অনুসরণ করে।
—ইমাম আবু হানিফা রহ. কী
—আহলুর রায়
—বাকি তিন ইমাম কী?
—আহলে হাদিস
—আহলে হাদিসরা কী করে?
—আরে একবারই তো বললাম, তারা হাদিসের অনুসরণ করে, হাদিসের বাইরে কথা বলে না।

—না মানে বলতে চাইছিলাম কী, বাকি ইমামগণ তো ২০ রাকাতের কথাই বলেছেন, কেউ ৩৬!
—তো কী হলো?
—না মানে, আহলে হাদিসরা তো নাকি হাদিসের বাইরে কথাই বলে না, আবার আপনারাই বলেন, ২০ রাকাতের পক্ষে কোন সহীহ হাদিস নেই! এই আর কী!
—তো কী হলো, কথা তো সত্য! আহলে হাদিসরা হাদিসের বাইরে কথা বলেন না, তাই তো আমরা ২০ রাকাতকে কবর দিয়ে ৮ রাকাতের কথা বলি!
—না মানে, তিন ইমাম তো ২০ রাকাতের কথা…
—আরে তারা কি আহলে হাদিস?
—ও স্যরি, তারা আহলে হাদিস নয়, তবে কি আহলুর রায়?
—হ্যাঁ তারা আহলুর…. না না, আহলুর রায় নয়, তারা আহলে হাদিস।
—কিন্তু তারা তো ২০ রাকাতের কথা বলেছেন! আহলে হাদিস হয়ে হাদিসের বাইরে কথা বলে!
—আচ্ছা মানলাম, তারা আহলে হাদিস নয়, তারাও আহলুর রায়।

—ইয়ে মানে, একটু আগে কী যেন বলেছিলেন তা কি মনে আছে? কে যেন আহলুর রায় আর কারা যেন আহলে হাদিস!

—আচ্ছা ভাই, আপনার সাথে পরে কথা হবে।

মুহান্না: ছোট্ট একটি কথা, এখনই বলে নিই- সালাফ যুগের আহলে হাদিস আর একালের আহলে হাদিসের মধ্যে এত পার্থক্য কেন জানতে পারি?
সাইকো: আরে ভাই, বললামই তো পরে কথা হবে।

📗 উল্লেখ্য

হাফিযুল হাদীস, জারাহ-তা’দীলের উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইমাম হাফেয যাহাবী রহ. বলেন, ৪ ইমামের বাইরে কোনো সত্য নেই!

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=120875917353913&id=100082945162095

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply