পৃথিবীর একমাত্র শাশ্বত ধর্ম হলো ইসলাম। আর ইসলাম ধর্মের মূল হলো একজন মানুষের ঈমান। যার ঈমান নেই সে কখনোই মুসলিম মুমিন নয়। কিন্তু অধিকাংশ মুসলমান জানে না ঈমান কী? এবং কীভাবে একজনের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব, ঈমান কী? এবং ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ কী কী?
ঈমান কী?
ঈমান অর্থ হলো বিশ্বাস। কোনো কিছুর উপর ঈমান আনার অর্থ হলো সেই বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখা। আর ঈমানকে যখন ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়, তখন দাঁড়ায় যে, ইসলামের পরিপূর্ণ সকল বিধি বিধানকে মুখে স্বীকার করে, অন্তরে বিশ্বাস রেখে এবং সেইমতো কাজ করে তা আমল দ্বারা পরিপূর্ণতা দান করাই হচ্ছে ঈমান।
সহজ কথায় বলতে গেলে ইসলামের যত ধরনের বিধিনিষেধ ও বিধিবিধান রয়েছে, তা একজন মানুষ মুখে স্বীকার করে, অন্তরে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। তখন সে একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার তথা সে ইসলামের উপর ঈমান এনেছে।
ইসলাম কাকে বলে?
ইসলাম শব্দটি হচ্ছে আরবি শব্দ। যা মূলত “সিলমুন” ধাতু থেকেই এসেছে। এই সিলমুন ধাতুর অর্থ দাঁড়ায় কারো প্রতি আনুগত্য করা কিংবা কারো কাছে আত্মসমর্পণ করা। তাই সহজভাবে যদি আমরা ইসলাম শব্দের অর্থ করি, তাহলে তা দাঁড়াবে যে, কারো আনুগত্য করা, কারো প্রতি বশ্যতা স্বীকার করা, কারো প্রতি বিনয়ী হওয়া, অন্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, অন্যের আদেশ নিষেধ মেনে চলা, অন্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা, এবং কোনো আপত্তি ছাড়াই অন্যের যেকোনো হুকুম মেনে নেওয়া ইত্যাদি।
সুতরাং ইসলাম হলো আল্লাহকে মেনে নেওয়া তাঁর সমস্ত আদেশ নিষেধ মেনে নিয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত বন্দেগী করা। হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহর যাবতীয় বিধি বিধানকে মানা এবং যাবতীয় নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা সমূহ থেকে দূরে থাকাই হলো ইসলাম।
মুসলিম কাকে বলে?
আমরা বুঝতে পারলাম ঈমান কী এবং ইসলাম কী। এখন আমরা জানব মুসলিম কে বা মুসলিম কাকে বলে। আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের যাবতীয় বিধি নিষেধ আইনকানুন ইত্যাদি সমূহ যে নির্দ্বিধায় মেনে নিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাঁর উপর ঈমান আনবে, তাকেই বলা হবে মুসলিম।
অর্থাৎ একজন মানুষ যখন বুঝে শুনে আল্লাহকে মানবে, তাঁর যাবতীয় আইনকানুনের আনুগত্য করবে এবং তাঁর দেওয়া সমস্ত ইবাদত ইখলাসের সাথে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই পালন করবে, সে হবে একজন মুসলিম।
আমাদের উপমহাদেশে ঈমান আনা তথা আল্লাহকে মান্য করা ছাড়াই শুধু মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েছে বলেই তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে না। অথচ তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে গেছে। জন্মগত মুসলিম কখনোই প্রকৃত মুসলিম নয়। তাই আমরা জানি না ঈমান ভঙ্গের কারণে কীভাবে আমাদের ঈমান ধ্বংস হয়ে গেছে।
সুতরাং ঈমান, ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে না জানার কারণে আজ আমাদের উপমহাদেশে অনেকেই ঈমানহারা। তারা জানেই না কী কারণে তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে গেছে। আমরা আল্লাহর যেসব বিশ্বাস ও বিধি নিষেধের উপর ঈমান আনি। তা বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমাদের ঈমানও ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই আজ আমরা জানার চেষ্টা করব কীভাবে কী কী কারণে ঈমান ভঙ্গ হতে পারে। একইভাবে জানার চেষ্টা করব ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ কী কী।
শিরক সবচাইতে বড় যুলুম
একজন জন্মগত কিংবা ডাইভার্টেড মুসলিম তার ঈমান হারিয়ে ফেলতে পারে শুধুমাত্র শিরকের কারণে। আমরা জেনে না জেনে এতোবেশি শিরক করে ফেলি, যা আমরা কল্পনাই করি। আর এই শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম। যা আল্লাহ সুরা লোকমানে খুবই স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন।
আর তাই আল্লাহর সাথে শিরক করার কারণে ঈমানদারগণ তাদের ঈমান হারিয়ে ফেলে। সুতরাং যে ব্যক্তি শিরক করে আল্লাহর সাথে অন্যান্য ইলাহ বা উপাস্য সাব্যস্ত করে তখন তার আর ঈমান থাকে না।
আমাদের উপমহাদেশে আমরা নানান ভাবে শিরকে লিপ্ত আছি। যে কারণে আমরা বুঝতে পারি না কীভাবে আমাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন দেখব কীভাবে শিরক হয়ে থাকে।
ক) ইবাদতের মাধ্যমে শিরকঃ
একজন ঈমানদারের মূল কাজই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। যখন সে আল্লাহর ইবাদত করে কিংবা না করেও অন্যের ইবাদত করে তখন তা হয়ে ইবাদতের শিরক। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করে তারও ইবাদত করা হচ্ছে ইবাদতের শিরক।
যেমন আমরা যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর জন্য সিজদা, সিয়াম, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করে থাকি। এখন যদি ঠিক তেমনি ভাবে অন্য কোনো উপাস্যকে যেমনঃ দেবদেবী, আল্লাহর কোনো বান্দার (পীরের) জন্য বা অন্য কারো (অলি, আউলিয়ার) জন্য অথবা জীবিত বা কবরের মৃত ব্যক্তির জন্য সিজদা, সিয়াম, মান্নত, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করে থাকি। তাহলে তা হবে আল্লাহর ইবাদতের সাথে সুস্পষ্ট শিরক।
কেননা সুরা বানী ইসরাঈল ৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন যে, যদি কেউ আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য স্থির করে, তাহলে সে অবশ্যই নিন্দিত তথা দুনিয়া ও আখিরাতে বরবাদ হবে। একইসাথে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে পর্যবসিত হবে।
একইভাবে সুরা শু‘আরা ২১৩ নং আয়াতে রাসুল সাঃ কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, আপনিও যদি কোনো কারণে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে ডেকে থাকেন, তাহলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
সুতরাং আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন আল্লাহর সাথে কখনোই কোনভাবেই শরিক করা যাবে না। আর শুধু তাঁর বান্দাদের জন্য নয় বরং আল্লাহ সরাসরি তাঁর রাসুলকেও নির্দেশ দিয়েছেন শরিক না করার জন্য। অথচ আমরা সবাই জানি ও মানি সকল নবী রাসুলগন আঃ হচ্ছেন নিষ্পাপ।
তাহলে কেন আল্লাহ তাঁর রাসুল সাঃ কে দিয়ে আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছেন? তার কারণ, আল্লাহ এটা এইজন্যই ঘোষণা দিয়েছেন, যাতে করে মানুষ শিরকের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর থেকে বাঁচতে পারে। অথচ আমাদের দেশে অনেকে শিরকের সম্পর্ক কিছুই জানে না। এই না জানার কারণে তারা জায়গায় অজায়গায় বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের কবর দরবারে গিয়ে সিজদা করে, মান্নত করে, তাওয়াফ করে, কুরবানিও করে।
অথচ এইসব ইবাদত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য হচ্ছেন আল্লাহ। আর তাঁকে বাদ দিয়ে কিংবা তাঁর পাশাপাশি অন্যদেরও এইসব ইবাদত করে অনেকই তাদের ঈমান ভঙ্গ করে ফেলে। আর তাই এই ইবাদতের শিরক করাও ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের একটি।
খ) আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরকঃ
সিফাত অর্থ হলো গুণাবলী। আমরা জানি আল্লাহ অসংখ্য গুণের অধিকারী। এখন যদি কেউ আল্লাহর এইসব গুণাবলীর সাথে অন্য কাউকে একই গুণে গুণান্বিত করে, তাহলে তা হবে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক। অর্থাৎ আল্লাহর যা যা করার ক্ষমতা রাখেন বা যে যে ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর আছে, তা তাঁর পাশাপাশি তাঁর অন্যান্য বান্দাদেরও আছে কিংবা আল্লাহ যে ক্ষমতা গুণে যা করতে পারেন, তা তাঁর অন্য কোনো বান্দা বা অন্য কেউ করতে পারে এমন বিশ্বাস রাখাই হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করা।
যেমন একমাত্র আল্লাহরই ক্ষমতা আছে তাঁর বান্দাদের জীবন দেওয়া, নেওয়া, সুখ দুঃখ , সন্তান প্রদান সহ তাদের বিভিন্ন বিপদ আপদে উদ্ধার করা। এখন যদি কেউ আল্লাহর এই ক্ষমতা তাঁর অন্য কোনো বান্দার আছে বলে বিশ্বাস করে এবং মান্য করে তাহলে তা হবে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক।
আল্লাহ এই বিষয়ে কুরআনে সুস্পষ্ট করে বলেছেন সুরা রাদ এর ১৬ নং আয়াতে। তিনি তাঁর রাসুল সাঃ কে দিয়ে মুশরিকদের কাছে প্রশ্ন করেন, হে মুশরিকরে, তোমরা আল্লাহকে না মেনে আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে এমন অভিভাবক স্থির করেছ। যারা তোমাদের ভালও করতে পারে না আবার খারাপও করতে পারে না।
একইভাবে তিনি সুরা আশ শূরা ৪৯ ও ৫০ নাম্বার আয়াতে দাবি করেন, একমাত্র আল্লাহই সমস্ত আসমান জমিনের মালিক। আর তাই তিনি যাকে ইচ্ছা মেয়ে সন্তান দেন আবার যাকে ইচ্ছা ছেলে সন্তান দেন। আবার যাকে ইচ্ছা করেন ছেলে মেয়ে দুটোই দিয়ে দেন। একইভাবে তাঁর ইচ্ছা হলেই কাউকে ছেলেমেয়ে কিছুই না দিয়ে বন্ধ্যা করে দেন।
অর্থাৎ মানুষের সন্তান কী হবে কী হবে না তা একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ার ভুক্ত। এখানে কারো ক্ষমতা আছে বলে আল্লাহ উল্লেখ করেন নাই। অনুরুপভাবে আল্লাহ সূরা আনআম এর ১৭ নাম্বার আয়াতে আরো বলেন যে, মানুষের যত দুঃখ কষ্ট দুর্দশা এবং সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি সবকিছুই তার ইখতিয়ারভুক্ত। তিনিই এইসব সুখ দুঃখ মানুষকে দিয়ে থাকেন।
সুতরাং এই আয়াত গুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মানুষকে সন্তান দেওয়া না দেওয়া সহ, যাবতীয় সুখ দুঃখ কষ্ট সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ দিয়ে থাকেন। এমনকি আল্লাহ তাঁর এই একক ক্ষমতা আর কাউকে প্রদান করেননি যে, তিনি ছাড়া তাঁর সমকক্ষ কেউ কিংবা তাঁর বান্দাদেরও কেউ এইসব দিতে পারেন, যেমনি ভাবে আল্লাহ দিয়ে থাকেন এবং দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
আর তাই যদি কেউ এমন মনে করে যে, আল্লাহ ছাড়াও আমাদের সন্তান দিতে পারেন, কিংবা সুখ দুঃখ দিতে পারেন। অথবা কাউকে মান্য না করলে তিনি আমাদের দুঃখ দিবেন কিংবা দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাহলে তা হবে সুস্পষ্ট আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক।
আর এই শিরক করার সাথে সাথে আমাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করা ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
গ) আল্লাহর রাজত্বের সাথে শিরকঃ
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে তাঁর রাজত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে নানান বর্ণনা দিয়েছেন। একইসাথে তার রাজত্বের জন্য তিনি দিয়েছেন অসংখ্য আইনকানুন ও বিধি বিধান। এইসব বিধিবিধান তিনি তৈরি করে দিয়েছেন যাতে মানুষ এইসব মেনে তাদের জীবনযাপন করে। যেকারণে ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে বিধান বা সংবিধান দিয়ে মুসলমানগণ তাদের সকল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করবে।
এখন আমরা যদি আল্লাহর নানান বিধি বিধান ও বিধি নিষেধ না মেনে তার পরিবর্তে নতুন কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান ও আমাদের সুবিধা মতো আইনকানুন বানায় এবং (বাধ্যতামূলক না হলে আপোষে) মেনে নেই বা প্রতিষ্ঠা করি বা করার জন্য সাহায্য সহযোগিতা করি, তাহলে তা হবে আল্লাহর রাজত্বের সাথে শিরক।
কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সূরা আরাফ এর ৫৪ নং আয়াতে সুস্পষ্ট করে বলেন, সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহর, আর তাই তাঁর সৃষ্টির উপর ক্ষমতাও একমাত্র আল্লাহর। একইসাথে তিনি সূরা আন আনাম এর ৫৭ নং আয়াতে বলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই”।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এই ঘোষণা ও নির্দেশনা দিচ্ছেন যে, সবকিছুরই মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। আর তাই তাঁর সৃষ্টির উপর একমাত্র তাঁরই বিধিবিধান ও আইনকানুনের ক্ষমতা চলবে। এক্ষেত্রে দুনিয়ার আর কারো কোনো বিধান বা সংবিধান কখনোই প্রযোজ্য হবে না। যদি কেউ আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো বিধান চায় কিংবা মানে, বা মানানোর জন্য জোর করে তাহলে তা হবে শিরক।
যেমন আমাদের বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রায় সকল ইসলামী দেশেই ইসলামী আইনের পরিবর্তে নিজস্ব আইন কিংবা গনতন্ত্র রাজতন্ত্র ইত্যাদি চলে। একইসাথে পৃথিবীর সকল দেশেই নিজ নিজ আইনে দেশ পরিচালনা করে।
অথচ আল্লাহর আদেশ হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর আইনেই চলবে সমগ্র বিশ্ব। সেখানে মুসলিম দেশেও আল্লাহর আইন নেই। তাছাড়া আমাদের দেশেও কোনো ইসলামী আইন নেই। বরং ইসলামের আইনের পরিবর্তে আমরা নিজেদের সুবিধা মতোন নানান আইন তৈরি করছি। এই যে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে নিজস্ব আইন করছি, এটাই হচ্ছে শিরক।
এছাড়াও আমরা যারা রাজনীতি করে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছি, তারাও সরাসরি আল্লাহর বিরুদ্ধে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয়ে গেছে। অথচ এই শিরক করার কারণে আমাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে গেছে। শিরকই ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক।
২) কারো মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়াঃ
আমরা পবিত্র কুরআন থেকে জানতে পারি আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের সকল (অন্তরের এবং বাহিরের) কথা শোনেন এবং দেখেন। একইসাথে তাঁর বান্দাদের মধ্যে যখন যার যা প্রয়োজন তখন তিনি তার প্রয়োজনে সাড়া দিতে পারেন। অর্থাৎ মানুষের যেকোনো বিপদে আপদে যেকোনো সময় বান্দাদের উদ্ধার করতে পারেন।
আল্লাহর এই ক্ষমতা সম্পূর্ণ তাঁর একক। অর্থাৎ তিনি ছাড়া আর কারো কোনো ক্ষমতা নেই মানুষের উপকার করার। এরপরও কেউ যদি আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে বা বিপদে উদ্ধার হতে আল্লাহর কোনো মৃত বান্দাকে মাধ্যম ধরে বা উছিলা মনে করে, তবে তা হবে শিরক। অর্থাৎ এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ অমুকের উছিলায় আমাকে বা আমাদেরকে উদ্ধার করো। এটা বলা শিরক।
কেননা আল্লাহ সরাসরি শুনেন এবং তাঁর বান্দার অভাব পূরণের ক্ষমতা রাখেন। সেজন্য আমাদের তার উপরই ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদাহর ২৩ নং আয়াতে বলেন যে, তোমরা যদি নিজেদের মুমিন দাবি করো, তাহলে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা কর।
একইভাবে তিনি সুরা যুমারের ৩৮ নং আয়াতে তাঁর রাসুল সাঃ কে এই শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তিনি যেন সবাইকে বলেন, তাঁর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং যারা নির্ভরকারীরা তারা অবশ্যই আল্লাহর উপর নির্ভর করে।
অর্থাৎ যারা ঈমান এনে ঈমানদার দাবি করবে, তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরই ভরসা করবে। যারা সরাসরি আল্লাহকে না ডেকে অন্য কাউকে আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য মাধ্যম বানাবে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা হয়ে যাবে।
এই বিষয়ে কুরআনের সুরা ইউনুসের ১৮ নং আয়াতে এসেছে যে, যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারো ইবাদত করে, তারা তাদের কোনো উপকার করতে পারে না। তাহলে তারা কেন তাদের ইবাদত করে? এই প্রশ্নের জবাবে তারা উত্তর দিত, আমরা এগুলোর ইবাদত করি, কারণ এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের পক্ষে সুপারিশকারী। অথচ সমস্ত শরিকদের থেকে মুক্ত।
মুশরিকদের এই একই দাবি সূরা যুমারের ৩ নং আয়াতেও করা হয়। অর্থাৎ তারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যান্যদেরও ডাকে বা ইবাদত করে এই জন্য যে, তারা তাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি বা আল্লাহর কাছে আল্লাহর প্রিয় বানিয়ে দেবে।
উপরোক্ত এইসব আয়াতে মুশরিকদের এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সুতরাং যারা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগাবে বা প্রয়োজন মনে করবে। তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে সরাসরি শিরক।
যেমন আমাদের উপমহাদেশে যেকোনো বিপদে আপদে উদ্ধার হওয়ার জন্য মৃত অলি আউলিয়াদের নামে সাহায্য চাওয়া হয়। একইভাবে কবরবাসীর নামে বা তার কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়। এছাড়াও আল্লাহর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত পীর ও মৃত অলি আউলিয়ার নামে বা দরবারে গিয়ে তাদের নাম করে সিজদা মান্নাত কুরবানি করা শিরক। আর এই শিরকের কারণে বান্দার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। এই কারণে অন্য কারো অন্য কারোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে একটি।
৩) মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করাঃ
আমাদের মুসলিম সমাজে এখন খারাপ কে কেউ খারাপ মনে করে না। যেকারণে আমাদের মধ্যে দ্বীন ধর্ম দিনদিন উঠে যাচ্ছে। আর তাই কেউ যদি স্বীকৃত মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করে, কিংবা তারা আসলেই কাফির কিনা সন্দেহ পোষণ করা, অথবা তারা কাফির আমার তাতে কী? তারা তো মানুষ খারাপ না ইত্যাদি চিন্তা করে, তাদেরকে খারাপ মনে না করে তাহলে ঐ ব্যক্তির ঈমান চলে যাবে।
কেননা আল্লাহ সুস্পষ্ট করে কুরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’-সুরা তওবা আয়াত ২৮। একইসাথে এটাও সরাসরি উল্লেখ করেছেন যে, ইহুদী নাসারাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা সরাসরি চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
অতএব এটা আল্লাহর চূড়ান্ত ঘোষণা যে, ইহুদী, নাসারা, মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে) তারা অবশ্যই চিরস্থায়ী জাহান্নামী। এখন আমাদের কোনো মুসলমান ভাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে, তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এটা চিন্তা করে কিংবা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা কাফির নয় তারাও আল্লাহর বান্দা তারাও ভালো কাজে নাজাত পাবে।
এই চিন্তা যারাই করবে এবং যারাই এই সিদ্ধান্ত নিবে এবং তাদের ব্যাপারে সন্দেহ করবে। তাহলে ঐ ব্যক্তির আর ঈমান থাকবে না। কেননা সে আল্লাহর নির্দেশের বাইরে চিন্তা করছে। একারণে কাফির মুশরিকদের বিধর্মী মনে না করা ঈমান ভঙ্গের কারণ।
আমাদের দেশে ও এই উপমহাদেশে যারা সুফিবাদী ইসলাম পালন করে। তারা কখনোই বিধর্মীদের কাফের মুশরিক মনে করে না। তারা তাদেরকে ভাই মনে করে। যেকারণে তাদের উরস বা পীর আউলিয়াদের বিভিন্ন জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের ব্যাপক পদচারণা দেখতে পাওয়া যায়। যা সরাসরি আল্লাহর আইন বিরোধী।
এরা এখানে ইসলাম গ্রহণ কিংবা ঈমান আনার জন্য আসে না। আর এইসব পীর আউলিয়াদের দরবারও তাদের ঈমান আনিয়ে মুসলমান বানায় না বা বানানোর চিন্তাও থাকে না। তারা তাদের দরবারের লাভের জন্য বিধর্মীদের সাথে আতাত রাখে। যা সরাসরি ঈমান ভঙ্গের একটি কারণ।
৪) ইসলামের বিধানকে অচল মনে করাঃ
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে যে আইন দিয়েছেন তা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষকে মেনে চলতে হবে। এটাই আল্লাহর আদেশ এবং নির্ধারিত বিধান। এখন আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে প্রাগৈতিহাসিক ও পুরোনো অচল ইত্যাদি মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।
অথবা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের দেওয়া সকল বিধিবিধান কিংবা আংশিক বা কোনো একটিও না মেনে অন্য কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান ও সংবিধান নিজেরা রচনা করে এবং তা মেনে চলা এবং ঐটাকেই যথার্থ মনে করে, তাহলে তার আর ঈমান থাকবে না।
সোজা কথায় বর্তমান দুনিয়ায় যারা ইসলামী আইনকানুনের পরিবর্তে মানুষের তৈরি ও বানানো গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলে এবং পছন্দ করে তাহলে তার আর অবশিষ্ট থাকবে না। মোটকথ যারা আপোষে কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইসলামী যাবতীয় বিধি বিধান কিংবা একটিও বিধান মানবে না এবং দুনিয়াবী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠা করবে এবং মানবে তাহলে তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ইসলামী বিধান না মানা কিংবা হেয় করা ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের একটি।
যেকারণে আল্লাহ সুরা আহযাবের ৩৬ নং আয়াতে বলেন যে, অবশ্যই সকল মুসলমানকে অবশ্যই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের সাঃ এর দেওয়া যাবতীয় আদেশ মানতে হবে এবং এ ছাড়া তাদের আর কোনো দ্বিতীয় পথ নেই। যদি তারা তা না মানে তাহলে তারা গোমরাহী তথা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
একইভাবে সুরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, কারো কাছে কুরআনের সত্য সুন্দর পথ দেখার পরও সে এর বিরুদ্ধে চলে, তাহলে আল্লাহ তাকে সেই ভুল পথেই তাকে চালাবে। এবং শেষপর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
পবিত্র কুরআনের এইসব আয়াতসহ আরো অন্যান্য আয়াত দ্বারাও এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে তাঁর ও তাঁর রাসুলের আইনকানুন ব্যতীত আর কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কোনো মুসলমান যদি ইসলামকে ছাড়া অন্য কিছু মানে, ভালো লাগে বা অন্য কেউ মানতে না চাইলেও জোর করে মানাতে চায় কিংবা অন্যকে উৎসাহিত করে, তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেমন আজকাল অধিকাংশ মুসলিম দেশে ইসলামী আইন কানুন নেই। বরং অধিকাংশ মুসলমান ইসলামের আইন পছন্দ করে না। বা স্বার্থের কারণে ইসলামী আইন কে বাতিল করতে চায়। কিংবা ইসলামী আইন না হওয়ার জন্য চাপ দেয় তাহলে এইসব নামধারী মুসলমানদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
বিশেষকরে মুসলিম গনতান্ত্রিক দেশে যারা গনতন্ত্রের জন্য কাজ করে এবং ইসলামকে তারা নিজেদের শত্রু মনে করে তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৫) ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করলেঃ
আমাদের মধ্যে কিছু মুসলমান আছে, যারা নামাজ কালাম পড়ে ইসলামও পালন করে। কিন্তু ইসলামের কিছু কিছু বিধানকে মানতে চায় না। কিংবা কিছু কিছু বিধান মেনে চলে না। অথবা ইসলামের কোনো বিধানকে যেকোনো কারণে অপছন্দ করলে, সাথে সাথে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা কোনো অবস্থাতেই কোনো ঈমানদারই ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করতে পারবে না।
কেননা আল্লাহ সুরা মুহাম্মাদের ৯ নং আয়াতে বলেন, তিনি তাদের সকল আমল ধ্বংস করে দিবেন, যারা তাঁর বিধি বিধান আইনকানুন এবং তিনি যা মানুষের জন্য নাযিল করেছেন তা অপছন্দ ও অবজ্ঞা করে। আর তাই আল্লাহ সুরা আল বাকারার ৮ নাম্বার আয়াতে আরও বলেন, মুসলমানদের মধ্যে এমন মানুষ আছে, যারা বলে আমরা ঈমান এনেছি এবং শেষ বিচারের দিনের প্রতি বিশ্বাসও রাখি। কিন্তু তারা কখনোই ঈমানদার নয়।
সুতরাং এইসব আয়াত থেকে বুঝা যায়, ঈমান এনে বা না এনে যেকোনো মানুষের আমল সমূহ ধ্বংস হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধি বিধানকে অপছন্দ করা। একারণে কেউ ঈমানদার হয়ে আমল করলেও, আল্লাহর বিধান অপছন্দ করার কারণে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
উদাহরণ স্বরুপ কারো পর্দার বিধান ভালো লাগে না যদিও সে পর্দা করে। অথবা কারো জিহাদের কথা ভালো লাগে না কিংবা স্বামীর একাধিক বিয়ের অনুমতিও ভালো লাগে না। এইসব ভালো না লাগার কারণে যদি কেউ মুসলমান হলেও তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬) ইসলামের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করাঃ
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে। নিয়মিত না হলেও জুমার দিনে নামাজ পড়ে। কিন্তু কিছু কিছু ইসলামী আইনকানুন ভালো লাগে না বলে, নিজেও পছন্দ করে না। এবং অন্য কেউ তা পালন করতে চাইলে কিংবা সেই অনুযায়ী চললে তাকে নানাভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। তাহলে তার আর ঈমান অবশিষ্ট থাকবে না। এইসব কাজ করার সাথে সাথে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেমন তৎকালীন সময়ে কিছু কিছু মুসলমানের কথা কুরআনে এসেছে যারা ঈমান এনেছিল। কিন্তু ইসলামকে নিয়ে কুরআনের আয়াত নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিল। তাদের কথা আল্লাহ সুরা আত তাওবাহর ৬৬ নং আয়াতে বলেন, তোমরা কোনো প্রকার ওযর আপত্তি আল্লাহর সামনে পেশ করিও না। তোমরা অবশ্যই তোমাদের ঈমানের পর কুফরী করেছ।
অথচ তাদের এব্যাপারে সুরা আত তাওবাহর ৬৫ নং আয়াতে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে, আমরা তো দুষ্টুমি করছিলাম! অথচ আল্লাহর আয়াত ও রাসুলের সাথে দুষ্টুমি করা কি সাজে?
সুতরাং উপরোক্ত আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল ও তাঁর আয়াত নিয়ে কেউ যদি খেল, তামাশা, বিদ্রুপ, মজা ইত্যাদি করলে তার অবশ্যই ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেমন, আমাদের অনেক মা বোনসহ অনেক ভাইও ছেলেদের দাড়ি রাখা, ছেলেদের টাকনুর উপর কাপড় পড়া, বিভিন্ন বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ হাসি তামাশা করে। যা কখনোই উচিত।
কেননা আল্লাহ সুরা ইউনুস এর ১১ নাম্বার আয়াতে বলেন, যারাই আল্লাহকে বিশ্বাস না করে তাঁর সাথে দেখাসাক্ষাৎ তথা কিয়ামত ও পরকালে তাদের বিচার হবে এমন বিশ্বাস রাখে না। আল্লাহ তাদের তাদের মতোই দুষ্টুমিতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
আর এইসব গোমরাহী মানুষ গুলো আল্লাহ না চাইলে কখনোই হিদায়াতের রাস্তা পাবে না। তারা এইসব দুষ্টুমি করেই জীবন পার হবে। আর তাই এই জাতীয় মানুষের সাথে চলাফেরা যোগাযোগ ইত্যাদি রাখা যাবে না।
এই বিষয়ে আল্লাহ সুরা নিসার ১৪০ নং আয়াতে বলেন, যদি কেউ দেখে যে কোথাও আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং ইসলাম তথা কুরআনের আয়াতের বিরুদ্ধে ঠাট্টা বিদ্রুপ ও অস্বীকৃতি জানায়। তাহলে তাদের সাথে কোনো প্রকার উঠাবসা করা যাবে না। কেননা এদের সাথে চললে ঈমানদারও তাদের মতো হয়ে যেতে পারে। আর আল্লাহ মুনাফিক ও কাফেরদের একসাথে জাহান্নামে দিবেন।
শুধু তাইনয় যারা এইরূপ করবে তাদেরকে বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবেনা এবং তাদের থেকে সকল ঈমানদারের সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যেকারণে আল্লাহ সুরা মায়েদাহর ৫৭, ৫৮ নং আয়াতে বলেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, যারা আমাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে উপহাস ও হাসি খেলা মনে করে। একইসাথে যারা নামাজ কালামকেও হাসি ঠাট্টা তামাশা মনে করে, তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বন্ধুত্ব করা যাবে না।
অতএব দ্বীন ইসলাম নিয়ে যারাই হাসি ঠাট্টা বিদ্রুপ করবে, অস্বীকার করবে তাদের থেকে তৎক্ষণাৎ আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে। কেননা দ্বীন ইসমামের নানান বিধি বিধান নিয়ে তামাশাকারীরা হচ্ছে মুনাফিক। আর মুনাফিকদের জায়গা হচ্ছে জাহান্নামে।
আমাদের উপমহাদেশে যারা সুফিবাদে বিশ্বাসী তারা নামাজ কালাম হজ্জ্ব যাকাত কুরবানী ইত্যাদির প্রতি উদাসীন এবং এইসব তারা মানে না একইসাথে এইসব নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপও করে। এমনকি বাউল শ্রেণী নামে একটি গোত্র বা গোষ্ঠী রয়েছে। যারা সরাসরি গান বাজনার মাধ্যমে নামাজ রোজা হজ্জ্ব যাকাতের বিরুদ্ধে গান গায়। সুতরাং যারা এমন করে, তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়।
৭) জাদু টোনা বা কুফরী কালাম করাঃ
প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে তাঁর উপর ভরসা করা। এখন কেউ আল্লাহর উপর বিশ্বাসের পরিবর্তে জাদু টোনা বা শয়তানী কুফরি কাজের মাধ্যমে কিছু পেতে চায় বা কারো ক্ষতি করতে চায় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ঈামান ভঙ্গের কাজ। এই কুফরি কাজের মধ্য দিয়ে যত ভালো কাজই হোক না কেন তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা ইসলামে কুফরি কালামের সাহায্যে সকল প্রকার জাদু টোনা করা হারাম।
আল্লাহ সুরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন। বলেন,
‘”আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না।’ এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা নিশ্চয় জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা বুঝত।”
সুতরাং নিজেদের মুসলমান দাবি করে যারাই এইসব জাদু টোনা কুফরি কাজ গুলো করবে তাদের আর ঈমানের অস্তিত্ব থাকবে না। এবং তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আজ আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষই কুফরি কালাম তথা তাবিজ কবজে লিপ্ত। আমাদের মুসলমানদের ঘরে ঘরে তাবিজ করা এখন একটি স্বাভাবিক বিষয়। স্ত্রী স্বামীর জন্য স্বামী স্ত্রীর জন্য মা তার সন্তানের জন্য যার যেমন প্রয়োজন, সে তেমন ভাবেই তাবিজ কবজ করেই যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের একশ্রেণির আলেম ওলামারা সরাসরি জড়িত। অথচ এইসব কুফুরি তাবিজ কবজ করা ঈমান ভঙ্গের কারণ।
৮) ইসলামের বিপক্ষে কাফিরদের সাহায্য করাঃ
যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহর বিধি বিধানের তোয়াক্কা করে না তারা হচ্ছে কাফির। অর্থাৎ আল্লাহর বিরুদ্ধকারী। এখন কোনো ঈামানদার যদি ইসলামের বিপক্ষে গিয়ে কোনো কাফির মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করে এবং তাদের সাথে আতাত করে চলে, তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আল্লাহ সূরা আত তাওবাহ্ ২৩ নং আয়াতে বলেন,
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের পিতৃবর্গকে ও তোমাদের ভ্রাতৃবৃন্দকে তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা বিশ্বাসের চাইতে অবিশ্বাসকেই ভালোবাসে। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের মুরব্বীরূপে গ্রহণ করে তবে তারা নিজেরাই হবে অন্যায়কারী ।
অন্য আয়াতে বলেন,
ওহে যারা ঈমান এনেছ! ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তাদের একদল অন্যদের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যের যে তাদের মুরব্বী বানায় সে তবে নিশ্চয় তাদেরই মধ্যেকার। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ পথ দেখান না অন্যায়কারী সম্প্রদায়কে। (সুরা মায়েদাহ ৫১)।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উপরোক্ত আয়াতের মতো আরও অসংখ্য আয়াতে বিধর্মী কাফির মুশরিক ইহুদী নাসারাদের সাথে বন্ধুত্ব তাদের সাহায্য সহযোগিতা ইত্যাদি না করার জন্য মুসলমানদের তাগিদ দিয়েছেন।
কেননা তারা ইসলামের শত্রু। এছাড়াও তারা একে অন্যের বন্ধু। তাই যেকোনো সময় অতীত বর্তমান ভবিষ্যতেও তারা ইসলামের বিরুদ্ধে সবাই একত্রিত হয়েই লড়ছে এবং লড়বে। তাই একজন ঈমানদার থেকে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয় সে বিধর্মীদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব রাখবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, অবশ্যই দুনিয়াবী প্রয়োজনে অন্যান্য বিধর্মীদের সাথে যোগাযোগ এবং সখ্যতা রাখা যাবে। তবে দ্বীনের দাওআতের নিয়ত ছাড়া শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যও অতিরিক্ত আন্তরিকতা রাখাও ইসলাম পছন্দ করে না। কেননা কেউ অন্য ধর্মের সাথে অতিরিক্ত আন্তরিকতা পোষণ করে, তাহলে সে শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হতে পারে।
সুতরাং ইসলামের বিপক্ষে গিয়ে বিধর্মীদের কখনো সাহায্য করলে যেকোনো ঈমানদারের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনকি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম।
আজ বর্তমান বিশ্বে অনেক নামমাত্র মুসলিম রাষ্ট্রও ইহুদি নাসারাদের সাথে দুনিয়াবী প্রয়োজনে আতাত করে চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য মুসলিম দেশের বিরুদ্ধেও তাদের সাহায্য করছে। যা সুস্পষ্ট ঈমান ভঙ্গের কারণ।
৯) কাউকে দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে করাঃ
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদার তিন নাম্বার আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ইসলামে কোনো ঘাটতি নেই। ফলে ইসলামে নতুন করে কোনো কিছু যোগ কিংবা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।
একইভাবে আল্লাহর রাসুল সাঃ ও তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামের সবকিছু তাঁর সাহাবীদের দিয়ে গেছেন বলেও হাদিস শরিফে এসেছে। সুতরাং ইসলামে নতুন কোনো আইনকানুন বিধি বিধান ইবাদত বন্দেগী ইত্যাদি আর সংযোগ হওয়ার কোনো উপায় নেই।
এই অবস্থায় কেউ যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আনীত শরীয়তের নির্দিষ্ট বিধি বিধান থাকার পরও নতুন করে অন্য কারো মতে বা অনুসরণে ইসলাম পালন করে এবং করতে চায়। তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। অর্থাৎ রাসুলের দেওয়া বিধানের উপর বা ত্বরিকার উপর না চলে অন্য কারো দেওয়া বিধান কিংবা রাসুলের চাইতে অন্য কোনো পীর বুজুর্গ, অলি আউলিয়াদের দেওয়া ত্বরিকাকে বেশী উপযুক্ত মনে করে তা আমল করে। তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
সোজা কথায় রাসুলের উপর অন্য অন্য কাউকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের একটি। কেননা ইসলাম দুনিয়ায় এনেছেন রাসুল সাঃ। আর তাঁর আদেশ নির্দেশ মোতাবেকই চলবে ইসলাম।
এখন কেউ যদি পীর অলি আউলিয়াকে শরীয়তের উৎস মনে করে (তাদের স্বপ্নের বার্তা, কাশফ) ইত্যাদি বিভিন্ন বিধি বিধান চালু এবং পালন করে তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা ইসলামে একমাত্র অনুসরণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ।
আল্লাহ বলেন,
“বলো — ”তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাস তবে তোমরা আমায় অনুসরণ করো, তা হলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন, আর তোমাদের পরিত্রাণ করবেন তোমাদের অপরাধ থেকে। কেননা আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।” (সুরা আলে ইমরান ৩১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন,
“তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অনুসরণ করো আর তাঁকে বাদ দিয়ে অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। অল্পই যা তোমরা মনে রাখো।” (সুরা আরাফ ৩)
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরও অসংখ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে একমাত্র রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। একইসাথে রাসুলের প্রদর্শিত নির্দেশিত ত্বরিকা ছাড়া ছাড়া অন্য কারো ত্বরিকায় ইসলাম পালন করা যাবে না।
১০) শরীয়তের বিধিবিধানে কম বেশী বা নতুনত্ব সৃষ্টি করাঃ
আমরা আগেই জেনেছি যে, ইসলাম পরিপূর্ণ। ইসলামে নতুন করে কোনো কিছু যোগ বিয়োগ হবে না। তাই কেউ যদি মনে করে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল কতৃক আনীত ইসলামের মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে। কিংবা আরও নতুন নতুন কিছু বিধি যোগ করলে বোধহয় ভালো হবে।
কিংবা খারাপ নয় ভালো ভালো কিছু কাজ ইসলামের নামে নতুন করে শুরু করলে অথবা ইসলামের কোনো বিধানে ইবাদতে কম বা বেশী করলে কখনোই একজন ঈমানদারের ঈমান থাকবে না।
অর্থাৎ কেউ যদি রাসুলুল্লাহর দেওয়া শরীয়তের নির্ধারিত বিধি বিধানের মধ্যে অর্থাৎ ঈমান, আকিদা, আমলে ইত্যাদিতে কম বেশী বা নতুনত্ব (বিদআত) সৃষ্টি করে বা এইসব নতুন কাজ গুলোকে জায়েজ মনে করে এবং সেইমতো আমলেও করে তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কেউ ইসলামের কোনো আমলে নতুনত্ব আনা বা বাদ দেওয়ার অর্থ হলো তারা রাসুলুল্লাহ রিসালাতকে অস্বীকার করা। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ রাসুল সাঃ কে দিয়ে যে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেটা মিথ্যা হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ বলেন,
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” (সুরা আন নিসা ১১৫)
এই আয়াতসহ আরো অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ এটা সুস্পষ্ট ভাবে বিশ্বাবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনুসরণেই দ্বীন ইসলাম পালন এবং জীবনযাপন করতে হবে।
কেননা আল্লাহ সুরা মায়েদায় আগেই বলেছেন ইসলাম পরিপূর্ণ। সুতরাং এখানে নতুন করে কারো দ্বারা কোনো কিছু যোগ করার সুযোগ নেই। কেই এমন করলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আমাদের উপমহাদেশে সুফিবাদী সুন্নিরা ইসলামের নামে নতুন নতুন নানান ত্বরিকা সৃষ্টি করে তার উপর মানুষকে আমল করার জন্য আহবান করে। অথচ এইসব ত্বরিকা রাসুল তৈরি করে যাননি এবং সাহাবীগণও এইসবের উপর আমল করেননি। সুতরাং এইসব পালন করার মানেই ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাওয়া।
১১) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশঃ
আমাদের মুসলমানদের মধ্যে কিছু উদারপন্থী মুসলমান রয়েছেন। যারা মনে করেন ইসলামের পাশাপাশি কিছু ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও আল্লাহর কাছে নাজাত পেয়ে যাবেন। অথবা যারা মাুসলমান হয়েও অন্যান্য ধর্মকে সঠিক মনে করে এবং তা পালন করে তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কেননা আল্লাহ বলেন,
“আর যে কেউ ইসলাম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম অনুসরণ করে তা হলে তার কাছ থেকে কখনো তা কবুল করা হবে না। আর আখেরে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” (সুরা আল ইমরান ৮৫)
আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন যে, ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোনো ধর্মই আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। অতএব কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কেউ পালন করে, পছন্দ করে কিংবা ইসলামের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মকেও সঠিক মনে করে তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। এবং সে অবশ্যই জাহান্নামের অন্তর্ভুক্ত হবে।
১২) দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াঃ
আমাদের উপমহাদেশে অধিকাংশ মুসলমানই জন্মগত মুসলিম বলে, তাদের মধ্যে ঈমান আকিদা আমলের তেমন গরজ লক্ষ্য করা যায় না। তারা মনে করে যে, মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই বুঝি মুসলমান হয়ে যায়। অথচ মুসলমান হওয়া কখনোই জন্মগত বিষয় নয়। মুসলমানের সম্পর্ক ঈমান আকিদার সাথে।
কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আর সেই কারণেই আমাদের মধ্যে দ্বীন সম্পর্কে একধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ কেউ যদি দ্বীন ইসলামের বিধি বিধান বা ইবাদত আমল ইত্যাদিকে বোঝা মনে করে, অথবা এইসব পালনে গুরুত্ব না দেয়, এইসব আমল করা থেকে বিরত থাকে তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহর বিধানকেই অবহেলা করল। অথচ সে যদি ঈমানদার দাবি করে, তাহলে তার ঈমানের দাবি হলো, সে অবশ্যই ইসলামের আমল করবে
আল্লাহ বলেন,
“আর কে তার চাইতে বেশী অন্যায়কারী যাকে তার প্রভুর নির্দেশাবলী দ্বারা উপদেশ দেওয়া হয়েছে, তথাপি সে তা থেকে ফিরে যায়? নিঃসন্দেহ অপরাধীদের থেকে আমরা পরিণতি আদায় করেই থাকি।” (সুরা সেজদা ২২)
অর্থাৎ যারা আল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ঈমান এবং আমল না করে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, কিংবা যারা ইসলামের হুকুম আহকামকে বোঝা মনে করে আমল করে না। তারা আল্লাহর কাছে নিশ্চিত অপরাধী। আর যারা দ্বীনের বিভিন্ন আমল ও বিধি নিষেধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে তাদের ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়।
আল্লাহ আরো বলেন,
“আর যেইজন আমার স্মরণ (ঈমান, আমল, জিকির ) থেকে ফিরে যাবে তার জন্যে তবে নিশ্চয়ই রয়েছে সংকুচিত (কষ্টে পতিত) জীবিকানির্বাহের উপায়, আর কিয়ামতের দিনে আমরা তাকে তুলব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে — ”আমার প্রভু! কেন তুমি আমাকে অন্ধ করে তুলেছ, অথচ আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান? তিনি বলবেন — ”এইভাবেই আমাদের নির্দেশাবলী তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা অবহেলা করেছিলে, সুতরাং সেইভাবেই আজকের দিনে তুমি অবহেলিত হলে।” (সুরা ত্বোহা ১২৪-১২৬)
অতএব দ্বীন ইসলাম থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, দ্বীন ইসলামের আমল আকিদাকে বোঝা মনে করবে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইসলামী আকিদাহ, ঈমান, আমলের পরও কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে জড়িত হয়, তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর উপরের উল্লেখিত ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ যদি কারো কাছে পাওয়া যায়, তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের চলার জীবনে আমাদেরকে এমন ভাবে চলা উচিত, যাতে করে আমরা আমাদের ঈমান আকিদাকে সঠিকভাবে আঁকড়ে ধরতে পারি। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দিয়ে বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দিক – আমিন।
আপনি আরো যা পড়তে পারেন
- ১০০+ মোটিভেশনাল উক্তি, এসএমএস, স্ট্যাটাস ও ছবি ডাউনলোড
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- হযরত মুহাম্মদ সা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
- ইমাম বুখারি (রহ.) এর জীবনী
- হযরত উসমান (রা.) এর জীবনী
- হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আদম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আলী (রা.) এর জীবনী
- হযরত ওমর (রা.) এর জীবনী
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
- ১০ টি সেরা ইসলামিক বই–যা অবশ্যই পড়া উচিত
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- হযরত আবু বকর (রা.) এর জীবনী