নিফাক হলো অন্তরের রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের বলা হয় মুনাফিক। আমাদের সমাজে অসংখ্য মুনাফিক রয়েছে যাদের পরিচয় ও পরিনতির কথা আমরা জানি না। অথচ এইসব মুনাফিকরা আমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। যাদের দেখে বুঝা যাবে না তারা মুনফিক। তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করব নিফাক কী? মুনাফিকের পরিচয় ও পরিনতি কী।
মুনাফিক কাকে বলে
আরবিতে একটি শব্দ হচ্ছে নিফাক। যার অর্থ হলো গোপন করা, কপটতা, প্রতারণা করা, ভন্ডামী করা, বা মনে এক রকম ধারণা পোষণ করে এবং বাইরে অন্য রকম প্রকাশ করা ইত্যাদি। যখন কোনো ব্যক্তি অন্তরে এই নিফাক ধারণ করে তখন তাকে বলা হয় মুনাফিক।
সোজা কথায়, কোনো নামধারী মুসলিম যদি অন্তরে কুফরি গোপন রেখে মুখে ঈমানের কথা বলে বা স্বীকার করে। কিংবা ঐ ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানাদি বা ইবাদত পালন করে, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় মুনাফিক।
অর্থাৎ কোনো লোক যদি ঈমান এনে কিংবা জন্মগত মুসলমান হয়ে, নিজেকে সবার কাছে মুমিন হিসাবে পরিচয় দেয়। আবার গোপনে গোপনে যদি তার মনে আল্লাহ বিরোধী চিন্তা চেতনা কাজ করে তাহলে এটা তার মুনাফিকের পরিচয় অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি হচ্ছে একজন মুনাফিক।
উপরোক্ত কারণ ছাড়াও এমনও অনেক মুসলমান আছে যাদের ইসলামের প্রতি কিংবা ইসলামের বিধি বিধান পালনের প্রতি কোনো প্রকার আগ্রহ নেই। বরং প্রচন্ড অনীহার কারণে ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই অর্জন করে না। সেও একধরনের মুনাফিক।
এইরূপ ইসলামের প্রতি অনীহার কারণে শুধু মুখে ও অন্তরে আল্লাহ আছে বিশ্বাস করে। কিন্তু এইসব লোক জেনে না জেনে এমন এমন সব কাজ করে, যেকারণে তাদের ঈমানও নষ্ট হয়ে যায়। আর ঈমানের এই দূর্বলতার কারণে তারা মুনাফিকিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ তারা নিজেরাই জানতে পারে না তারা যেসব কর্মকান্ড করছে তা তাদের মুনাফিকিতে পরিনত করছে।
মুনাফিক কত প্রকার ও কী কী
আমরা বুঝতে পারলাম অন্তরের বিশ্বাস এবং কর্মের মাধ্যমে একজন মুসলমান মুনাফিকীতে পরিনত হয়। এই হিসাবে আমরা বুঝতে পারলাম মুনাফিক দুই ধরনের।
- বিশ্বাসগত মুনাফিক
- কর্ম বা আমলগত মুনাফিক
বিশ্বাসগত মুনাফিক কাকে বলে
যদি কোনো মুসলমান প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে মনে মনে আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে বিরুপ ও খারাপ ধারণা পোষণ করে। কিংবা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে ঘৃণা প্রকাশ করে এবং প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে ঐ নামধারী মুসলমান হচ্ছে বিশ্বাসগত মুনাফিক।
এই জাতীয় মুনাফিক রাসুল (সাঃ) জীবদ্দশায় ছিলো। তৎকালীন এই জাতীয় মুনাফিকরা সবার সামনে ঈমানের দাবি করত। এবং মুসলমানের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করত। আবার সুযোগ পেলেই সময়ে অসময়ে রাসুলের বিরুদ্ধে অপবাদ এবং তাঁর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করতো।
শুধু তাইনয় তৎকালীন সময়ের মুনাফিকরা কাফিরদের সাথে মিলিত হয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনায়ও করেছিল। এইজাতীয় মুনাফিকরা হচ্ছে কাফেরের সমতুল্য। এদের অবস্থান সরাসরি জাহান্নামে। বর্তমানে কিছু এজেন্টধারী মুনাফিক ছাড়া এমন মুনাফিক সচারচর নেই।
কর্ম বা আমলগত মুনাফিক কারা
আমাদের সমাজে এমন কিছু মুসলমান রয়েছে, যারা মুখে ঈমানের দাবি করলেও অন্তরে ঈমানের পরিপন্থী ধারণা পোষণ করে এবং একইসাথে তা তাদের কাজে কর্মে প্রকাশও করে। একইসাথে ইসলামী আমলে অলসতা ও বিরুপ মনোভাব প্রকাশ করে। ইসলামী আইনকানুনের প্রতি বিদ্বেস পোষণ করে। সর্বোপরি ইসলামের যাবতীয় আমলের ব্যাপারে গাফিলতির মাধ্যমে তাদের মুনাফিকের পরিচয় দেয়। আর এই জাতীয় ব্যক্তিরাই হচ্ছে আমলগত মুনাফিক।
আমলগত মুনাফিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে নয় বরং ইসলামের ইবাদত বন্দেগী ও আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। এরা মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দেয় কিন্তু ঈমানের দাবি ও শর্ত সমূহ পূরণ করে না। অর্থাৎ একজন মুসলমান হিসাবে যেসব আমল করা দরকার তা তারা পরিত্যাগ করে এবং যেসব আমল বর্জন করা দরকার তা তারা করে।
মোটকথা যারাই দ্বীন ধর্মের প্রতি উদাসীন তারা এই মুনাফিক শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে এইজাতীয় মুনাফিকের সংখ্যাই দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা এই শ্রেণীর মুনাফিক তারা তাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ধীরে ধীরে কুফরি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যা তাদেরকে ধীরে ধীরে কুরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়ে ঈমানহারা করে দেয়।
বর্তমান সমাজের মুনাফিকের পরিচয়
আমরা পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের আলোকে মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পেয়ে থাকি। তাই মুনাফিক চেনার জন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত এবং রাসুল সাঃ অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমরা যদি গভীরভাবে এইসব আয়াত এবং হাদীস পর্যালোচনা করি তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাঃ কাদের কাদের মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
একইসাথে আমরা মুসলমানদের বিভিন্ন আমল ও আলামত দেখে মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে অবগত হতে পারব। বিশেষকরে আধুনিক মুসলিম সমাজে আজ দ্বীন ইসলামের কোনো চর্চাই হয় না। ফলে মুসলমানদের মধ্যে দিনদিন ইসলাম সম্পর্কে অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে। আর এই অনীহা থেকেই জন্ম হচ্ছে মুনাফিকের। আসুন আমরা বর্তমান সমাজের মুনাফিকের পরিচয় জানার চেষ্টা করি।
আল্লাহর বিধিবিধান বিদ্বেষী মুনাফিক
আমাদের জন্মগত মুসলমানদের কিছু মুসলমান রয়েছে যারা শুধু দুনিয়ামুখী জীবনযাপন করে। আর এই দুনিয়াদারি করার জন্য তারা কোনো কিছুরই পরোয়া করে না। আর তাই তারা আল্লাহর বিভিন্ন আইনকানুনকে কটাক্ষ করে।
বিশেষ করে যেসব আইনকানুন তাদের জীবনযাপনের বিরুদ্ধে যায় তারা সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও এইসব মুসলমানরা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কুরআনে বলেন,
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন যে, এমন কিছু মুসলমান আছে যারা শুধু মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু কখনোই তাদের কর্মকান্ড ঈমানের পক্ষে প্রমাণ দেয় না। অর্থাৎ তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমই বলে দেয় যে তারা ঈমানদার নয়। সুতরাং এরা মুনাফিক। যেমন আল্লাহ আরও বলেন –
অর্থাৎ এই জাতীয় মুনাফিককে যখন আল্লাহ এবং রাসুলের পথে চলার এবং আমল করার জন্য বলা হয়, তখন তারা আল্লাহ এবং রাসুলের নির্দেশিত পথে না এসে অবজ্ঞা ও অবহেলার সাথে অন্যদিকে ফিরে যায় আর তাদের আমলের দ্বারাই তাদের মধ্যে মুনাফিকের পরিচয় পাওয়া যায়।
এখন আমাদের বর্তমান আধুনিক সমাজে এমন মুসলমানের ছড়াছড়ি। যারা শুধুমাত্র জন্মগত ভাবেই মুসলমান। এইসব মুনাফিকরা ইসলামের আইনকানুন বিধিনিষেধের প্রতি কোনো প্রকার তোয়াক্কা করে না। আর তাই তারা ইসলামের কোনপ্রকার আমলের ধার ধারে না।
এই জাতীয় মুনাফিকরা দুনিয়াবী ক্ষমতার লোভে আখিরাতকে পিছনে ফেলে দেয়। এদেরকে ইসলামের বিভিন্ন বিধিনিষেধ আইনকানুন ইবাদত আমল ইত্যাদির কথা বললেই তারা নানান ছলছুতোয় পার পাওয়ার চেষ্টা করে। শুধু তাইনয় এরা কুরআনের পাল্টা দুনিয়াবী নানান যুক্তি দিয়ে নিজের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। এরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে দুনিয়াদারীকেই বেশী প্রাধান্য দেয়। আর তাই তাদের মধ্যে আখিরাতের চিন্তাও নেই। এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুনাফিক এবং এদের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আমরা মুনাফিকের পরিচয় লক্ষ্য করি।
আচরণগত মুনাফিক
আমরা যদি আচরণগত মুনাফিকের পরিচয় জানতে চাই, তাহলে দেখব যে, যাদের আচার আচরণে মুনাফিকীর নানান আলামত প্রকাশ পায় তাদেরকে আচরণগত মুনাফিক বলে। এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেসব হাদিসের মাধ্যে মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি। এই ব্যাপারে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হচ্ছে-আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ‘স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
এই হাদিসটি আমাদের কাছে খুবই সুপ্রসিদ্ধ। এই হাদীস অনুসারে যদি আমরা আমাদের উপমহাদেশের মুসলমানদের বিবেচনা করি, তাহলে শতকরা আশি জনেরও বেশী মুসলমান মুনাফিকীতে লিপ্ত।
এর কারণ হচ্ছে, বর্তমান সময়ে মিথ্যা কথা বলে না এমন একজন মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে। আর ওায়াদা ভঙ্গ এবং আমানত খিয়ানত করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর অশ্লীল ভাষায় গালাগালি এধরনের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। সুতরাং এইসব আচার আচরণ অভ্যাস আমাদেরকে আমাদেরই অজান্তে মুনাফিক বানিয়ে দিচ্ছে।
নামাজ পরিত্যাগকারী মুনাফিক
আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমানই নামাজ কালামের ধার ধারে না। অথচ এই সালাত বা নামাজ প্রতিটি মুসমমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এই আমল ছাড়া কখনোই একজন মুসলমান পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। তাই নামাজ এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদত ছাড়া একজন মুসলমান মুনাফিকীতে পরিনত হয়।
শুধু সালাত বা নামাজ আদায় নয় বরং যে ব্যক্তি জামায়াতে নামাজ পড়ে না বা জামায়াতে সালাত আদায় না করা হচ্ছে মুনাফিকের পরিচয়। একারণে তাকে আল্লাহর রাসুল মুনাফিকের সাথে তুলনা করেছেন। পবিত্র হাদীসে এসেছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা সঠিক ও যথাযথ ভাবে আযানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের প্রতি বিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই হচ্ছে হিদায়াতের অন্যতম পথ।
মহান আল্লাহ এবং তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের মাধ্যমে হিদায়াতের পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক ছাড়া কেউ জামায়াতে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা এতোটাই দুর্বল ও অসুস্থ যে দু’জনের উপর ভর করে মসজিদে যেত এবং তাকে সলাতের বা নামাজের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হত।
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (সলাতের স্থান) নেই। তোমরা যদি মসজিদে আসা বন্ধ করে দিয়ে ঘরেই (ফরয) সলাত আদায় কর তাহলে তোমরা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতকেই বর্জন করলে। আর তোমরা তোমাদের নাবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই কুফরীতে জড়িয়ে পড়বে। (সহীহ্ মুসলিমে এসেছে ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ শব্দে। আর এটাই মাহফূয।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৫০, ইবনে মাজাহ হাদীস শরীফে ৭৭৭ নং এবং মুসলিম ৬৫৪, আহমাদ ৩৫৫৪, দারিমী ১২৭৭। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ৩৮৮, সহীহ আবূ দাউদ ৫৫৯। একটি হাদীস এসেছে, যেখানে বলা হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতের সহিত আদায় না করা মুনাফিকের লক্ষণ। অর্থাৎ শুধুমাত্র মুনাফিকরাই জামায়াতে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকত।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে সালাত আদায় এবং জামাতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ হুশিয়ারি এসেছে। আর তা এমন যে, শুধু নামাজ নয় বরং জামাতে নামাজ আদায় না করলেই তাকে মুনাফিক ধরা হচ্ছে।
অথচ আজ আমাদের বর্তমান সমাজে নামাজ জামায়াতে পড়া তো দূরের কথা, সালাতই আদায় করে না অধিকাংশেরও বেশি মুসলমান। যদি রাসুলের জামানায় শুধুমাত্র জামায়াতে সালাত আদায় না করাকেই মুনাফিকের লক্ষণ ও মুনাফিকের পরিচয় ধরা হতো। তাহলে আমাদের আধুনিক সময়ে যারা এক ওয়াক্তও সালাত বা নামাজই আদায় করে না তাদের কী বলা হবে?
মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত এই হাদিসে স্পষ্ট এসেছে যে, মুনাফিকরাই শুধু জামাতে অংশ নিতো না। আর আমাদের দেশে শতে নব্বই জনেরও বেশী জন্মগত মুসলমানই নামাজ কালাম আদায় করে না। তাহলে এতো বেশী সংখ্যক নামধারী মুসলমান কীভাবে আর মুসলিম থাকতে পারে?
সুতরাং আমরা যারা সাধারণ মুসলমান আছি যারা কোনোপ্রকার নামাজ কালামের ধার ধারি না, তাদের চিন্তা করা উচিত, আসলেই কি আমাদের ঈমান আর অবশিষ্ট আছে? আমরা যে কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়ে ঈমান এনেছি। তা আসলেই কতটুকু আমরা পালন করতে পারছি? নাকি শুধু মুখেই ঈমান এনে অন্তরে আল্লাহকে অস্বীকার করছি।
আর যারা নামাজ কালামকে অবজ্ঞা করে অস্বীকার করে কিংবা অলসতা করে নামাজ কালাম আদায় করে না। তাদেরকে আল্লাহর রাসুল কাফিরদের সাথে তুলনা করেছেন। একটি হাদিস জাবির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেন,
নামাজ সংক্রান্ত উপরোক্ত হাদিস গুলো এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাদের হাদিসের কিতাব গুলোতে গুরুত্ব সহকারে স্থান দিয়েছেন।
এখানে আল্লাহর রাসুল সাঃ নামাজ আদায় না করাকে সরাসরি কুফরের সাথে তুলনা করেছেন। সুতরাং নামাজ না পড়া বা আদায় না করা খুবই মারাত্মক একটি বিষয়। যা একজন মুসলমানকে কাফির সমপর্যায়ে নিয়ে যায়। তাই আমাদের মধ্যে যারা এখনো নামাজ কালামের ধারে নেই। তাদের উচিত হবে এখনই নামাজ কালামের চর্চা শুরু করা।
সালাতে অলসতাকারীরা মুনাফিক
মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমরা এতক্ষণ জানলাম যারা নামাজ কালাম বা সালাত আদায় করে না তারা মুনাফিক। অথচ আমাদের সমাজে এমন কিছু মুসলমান আছে যারা নামাজ কালাম সালাত আদায় করার পরও মুনাফিক হয়ে যায়। তাদের কথা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এভাবে বলেছেন,
এই আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে মুনাফিক বলে সাব্যস্ত করেছেন, যারা নামাজ পড়লেও আন্তরিকভাবে নামাজ আদায় করে না। অর্থাৎ যাদের নামাজের মধ্যে খুযু খুশু নেই। একইসাথে যারা শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে এবং মসজিদে যায় তাদেরকেও আল্লাহ মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই হিসেবে যারাই নামাজ আদায়ের শিথিলতা করে প্রদর্শন করে তাদেরকে মুনাফিক হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই বৃদ্ধ বয়সে বুড়ো হলে তবেই নামাজ কালাম করে। এরা কখনোই শক্তি সামর্থ্য থাকা অবস্থায় মসজিদের বারান্দা দিয়েও হাটে না।
যখন তারা যৌবনে শক্তি থাকা অবস্থায় টাকা পয়সা উপার্জনে সময় দিতো। তখন তারা আল্লাহর ইবাদত করার মতো সময় তাদের হাতে ছিলো না।
এখান নিজে বয়সের ভারে বৃদ্ধ। তাই তার ঘরে কোনো কাজ কর্ম নেই। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে টাকাপয়সা উপার্জন করছে বলে বাবা ঘরে বেকার। আর বেকার মানুষ ঘরে বসে থেকেই বা কী করবে? তাই সময় কাটানোর জন্য এরা মসজিদকেই বেছে নেয়। এইজাতীয় মানুষেরা বুড়ো বয়সে যথেষ্ট সময় মসজিদে পড়ে থাকে। আবার কিছু মুসলমান আছে ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তবেই মসজিদে নামাজ কালাম পড়ে। এইসব করা মানেই স্পষ্টত মুনাফিকের পরিচয় বহন করা।
এছাড়াও আমাদের সমাজে এমন কিছু পয়সাঅলা মানুষ আছে যাদের টাকাপয়সার কোনো অভাব নেই। সমাজে তাদের প্রচুর নাম ডাক। এই মানুষ গুলোই একটু বয়স হলেই মসজিদে ঢু মারে। তার কারণ তারা মানুষের সম্মান এবং খ্যাতি পেতে চায়। আর এই সম্মান ও খ্যাতি পাওয়ার উপযুক্ত জায়গা হলো মসজিদ।
আর যখন এইসব ধনী ব্যক্তিরা নিয়মিত মসজিদে যাওয়া আসা করে, তখন এলাকার লোকেরা তাদের বিভিন্ন পদ পদবী দিয়ে মসজিদ কমিটিতে জায়গা করে দেয়। মসজিদ কমিটিতে জায়গা পাওয়ার জন্য তাদের যোগ্যতা হয় টাকা। আর এই টাকা দিয়েই তারা দুনিয়া এবং আখিরাত কিনে ফেলতে চায়। উপরোক্ত চিন্তা চেতনার খারাপ অভ্যাসের মধ্য দিয়েই সমাজের মুনাফিকের পরিচয় পাওয়া যায়।
সুতরাং যারাই শুধু লোক দেখানোর জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে তাদেরকে আল্লাহ মুনাফিকের সাথে তুলনা করেছেন। আর তাই আমরা যারাই এই জাতীয় মুসলমান আছি, তাদের চিন্তা করা উচিত আসলেই আমাদের ঈমান আজ কতটুকু অবশিষ্ট আছে।
কুরআন অস্বীকারকারীরা মুনাফিক
আমরা জানি যারা কুরআন কিংবা কুরআনের আয়াত অস্বীকার করে তারা সরাসরি কাফির। কিন্তু এছাড়াও কিছু নামধারী মুসলমান আছে, যারা ঈমানের দাবির পাশাপাশি কৌশলে কুরআনকে অস্বীকার করে। এইজাতীয় মুসলমানরা নানান ফন্দি ফিকির করে কুরআনকে বিভিন্ন ভাবে অস্বীকার করার চেষ্টা করে মুনাফিকের পরিচয় দিচ্ছে। একটি হাদিসে এসেছে যা আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে (সূরা মারইয়্যামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় একটা সময় আসবে যখন একশ্রেণির মুসলমানরা পবিত্র কুরআন পড়বে কিন্তু তারা কুরআন পড়ার পরও তা অস্বীকার করবে। অর্থাৎ তাদের কুরআন পড়াটা হবে শুধু তিলাওয়াত।
এরা কখনোই কুরআনের অন্তর্নিহিত অর্থ ও ব্যাখ্যা জানবে না এবং জানার চেষ্টাও করবে না। এই অর্থ না জানার কারণে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ কী দিয়েছেন কী বলেছেন, কী নিষেধ করেছেন, কী আদেশ করেছেন ইত্যাদি তার কিছুই তারা অবগত হতে পারে না।
এরফলে তারা আল্লাহর যাবতীয় বিধি নিষেধ থেকে সম্পূর্ণ গাফেল থাকবে। আর তাদের এই গাফিলতির জন্য কুরআন না জানার কারণে তারা কুরআন ও ঈমান আকীদা বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে মুনাফিকের পরিচয় দিবে। আর এতে করে তারা মুনাফিকে পরিনত হয়ে তাদের ঈমানই ভঙ্গ করে ফেলবে।
উপরোক্ত শ্রেণী ছাড়াও আরেকটি শ্রেণী আছে। যারা কুরআন পড়ে এবং এই কুরআনের মধ্যে কী আছে কী নেই তাও জানে। কিন্তু এরা কখনোই এইসব জেনেও সেই অনুযায়ী আমল করে না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুরআনের বিরুদ্ধে আমল আকিদা পোষণ করে মুনাফিকে পরিনত হয়।
আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলমানই কুরআন তেলাওাত করে। কিন্তু তারা কখনোই জানে না এই কুরআনে আল্লাহ কী বলেছেন কী জানিয়েছেন। আবার কিছু মানুষ যারা আলেম ওলামা তারা কুরআন পড়ে এবং কুরআন সম্পর্কে জানে। কিন্তু তারা নিজেরাই কখনো সেই অনুযায়ী আমল করে না। অন্যকেও আমল করতে বলে না।
অতএব আমরা শুধু রিডিং কুরআন তিলাওয়াত করলেই সেই সমস্ত নেকী কাজে আসবে না। যতক্ষন না আমরা সেই অনুযায়ী আমল করতে না পারছি। কেননা কুরআনে আল্লাহ এমন এমন বিধি বিধান ও আদেশ নিষেধ দিয়েছেন, যা পালনে ভুল হলে যেকোনো মানুষ তার ঈমানও হারিয়ে ফেলতে পারে। সুতরাং যদি কুরআন পড়েও কুরআন অনুযায়ী আমল করতে না পারি, তাহলে আমরা কুরআন পড়ার পরও মুনাফিকই রয়ে যাবো। আর কুরআন না পড়া এবং কুরআন জানতে না চাওয়ার মধ্যেই রয়েছে মুনাফিকের পরিচয়।
ইসলামের জ্ঞান না থাকলেও মুনাফিক
আমরা পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে জানি যে প্রতিটি মুসলমানের ইসলামের জ্ঞানার্জন করা ফরজ। অর্থাৎ প্রতিটি আমাদের প্রত্যেক মুসলমানকেই ইসলামী শরীয়তের নূন্যতম হুকুম আহকাম আদেশ নিষেধ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা লাগবে। এইজন্যই মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত আরেকটি হাদীসে এসেছে, যা আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এছাড়াও আল্লাহ নিজেই বলেন,
সুতরাং কুরআন এবং হাদিসের আলোকে প্রতিটি মুসলমানের অবশ্যই দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেননা যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানে না বা জানার চেষ্টা করেনা তারমানে ঐ ব্যক্তি দ্বীন পালনে বা দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন। যা কখনোই একজন মুসলমান থেকে ইসলাম সমর্থন করে না। মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত একটি হাদীসে এসেছে, যা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
এই হাদীস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, কেউ দ্বীনের ব্যাপারে কিছু না জানা হচ্ছে মুনাফিকী। অর্থাৎ কেউ যদি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান না রাখে, তার অর্থ হলো ঐ ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন। এবং ঐ ব্যক্তির মাধ্যে দ্বীনের ঈমান আকিদা ও আমলে ঘাটতি রয়েছে।
অথচ কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবি করে তাহলে তাকে অবশ্যই দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। আমরা যদি মনে করি মুসলমানের ঘরে জন্মেছি বলেই আমরা মুসলমান হয়ে যাবো ব্যাপারটা কখনোই এমন নয়।
প্রকৃত মুসলমান হতে হলে আমাদের অবশ্যই কালেমা বুঝে তবেই ঈমান আমল করতে হবে। আর এই জন্যই আমাদের ঈমান আকিদার মূল বিষয়সহ ইসলামের যাবতীয় সাধারণ খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানও রাখতে হবে। এইক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, ইসলামের মূল যে বেসিক বিষয় গুলো, যেমনঃ তাওহীদ, শিরক, বিদআত ইত্যাদি সম্পর্কে অবশ্যই পরিষ্কার এবং পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। ইসলামের এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার অর্থই হলো মুনাফিকের পরিচয় বহন করা।
কেননা এইসব এমন সব বিষয় যা না জানার কারণে আমাদের ঈমান আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যেকারণে আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান নামে মুসলিম হলেও তাদের ঈমান আমলে শিরক বিদআতে ভরপুর।
অথচ আমরা এই দুনিয়ায় দুমুঠো ভাত খাওয়ার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলি। এই দুনিয়াবী শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সন্তানদের পেছনে পড়ে থাকি।
অথচ এই দুইদিনের দুনিয়াদারি আল্লাহ এবং পরকালের কাছে কিছুই নয়। আমাদের এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এই জীবনের চাইতে আমাদের আখিরাতের জীবনকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তাই আমরা যদি নিজেদের একজন প্রকৃত ঈমানদার মনে করি, তাহলে আমাদের অবশ্যই দুনিয়ার চাইতে আখিরাতকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে। আর এই জন্যই আমাদের প্রত্যেকের দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
আমরা যারা এই উপমহাদেশের মুসলমান, আমাদের অধিকাংশেরও বেশী হচ্ছে সুফিবাদী মুসলমান। যাদের ঈমান আকিদায় কুরআন হাদিসের কোনো চিহ্ন নাই। যেকারণে পীর অলি আউলিয়া নিয়ে এই সুফিবাদী সুন্নিরা দ্বীন ইসলামের হুকুম আহকাম ইত্যাদি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায় না।
এই সুফি সুন্নিরা শুধুমাত্র বছরে দু একবার তাদের নিজস্ব ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার মাধ্যমে দ্বীন জানার চেষ্টা করে। তাও আবার বেশীরভাগ সময় তবারুক দেওয়ার আগে মাহফিলে বসে। এরফলে সিংহভাগ মানুষই দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে গাফেল থাকে। শুধু তাইনয় এরা নিয়মিত জুমার নামাজও পড়লেও কখনোই ঠিকমতো খুতবা শোনে না। যারফলে তারা কোনোভাবেই দ্বীনের জ্ঞানার্জন করতে পারে না।
এছাড়াও সুফি সুন্নিদের প্রপাগান্ডায় শতকরা ৯৫ শতাংশ মুসলমান কুরআন পড়ে বুঝার চেষ্টা করে না। কেননা এদের হুজুররাই সাধারণ মুসলমানদের কুরআন বুঝে না পড়ার জন্য হুমকি লাগায়! তারা প্রচার করে যে, নিজে নিজে কুরআন বুঝে পড়তে গেলে মানুষ গোমোরাহ হয়ে যাবে। তাই কখনোই তারা কুরআনের বাংলা পড়ে না।
আর এই কারণে এইসব মানুষ কখনোই জানতে পারে না যে, আল্লাহ কুরআনে কী আদেশ দিয়েছেন এবং কী নিষেধ করেছেন। এই না জানার কারণে এইসব সুফি সুন্নিরা সঠিক দ্বীন ইসলাম পালন করতে পারে না বা করে না। যারফলে এরা সরাসরি মুনাফিকের পরিচয় দিয়ে মুনাফিকিতে পরিনত হয়।
আল্লাহ ভুলে দুনিয়ামুখী হওয়া
মুনাফিকদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুসলমানরা সর্বদা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। অথচ আমাদের অধিকাংশ জন্মগত মুসলমান দুনিয়াবী প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার লোভে সৎ কাজের পরিবর্তে অসৎ কাজের আদেশ দেয়। একইসাথে কেউ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হলে তাকেও থামিয়ে দেয়।
এছাড়াও তারা এমনভাবে দুনিয়াবী কাজকর্ম করে, যেন পরকাল বলে কিছুই নেই। অর্থাৎ তারা আল্লাহ এবং ইসলামকে ভুলে দুনিয়াদারি নিয়ে এমন ব্যস্ত হয়ে যায় যে, ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই দুনিয়াদারীই তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্য মুনাফিকিতে পরিনত করে। তাই আল্লাহ বলেন,
এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যারাই অসৎ কাজের আদেশ দিয়ে সৎকাজ সমূহ বন্ধের নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না তারা স্পষ্টত মুনাফিক। আর এইজাতীয় মুনাফিক মানুষ আমাদের আজ সমাজে অহরহ।
আমাদের সমাজে একটি শ্রেণী আছে যারা ইসলামের বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রম পছন্দ করে না। বরং এইসব দ্বীনি কাজকর্ম বাদ দিয়ে নাচগানে সময় দেয় এবং টাকাপয়সা দিয়ে আয়োজনে নিয়োজিত থাকে। তারাই হচ্ছে বর্তমানে সময়ের খুবই খারাপ প্রকৃতির মুনাফিক।
এরা মুখে ঈমানের দাবি করে। পোশাক আশাকে তারা আল্লাহর অলি সেজে থাকে। কিন্তু কখনোই দ্বীন ইসলামের পথে চলে না। কেউ চললেও কটাক্ষ করে। এমনকি এরা কখনোই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না। আবার কেউ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে চাইলে সেখানেও বাঁধা দেয়। এদের মুখোশের আড়ালে কিন্তু মুনাফিকের পরিচয় নিহিত।
আমাদের বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আজ এই জাতীয় মুনাফিকীতে লিপ্ত হয়ে আছে। তারা রাজনীতির গরমে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না। সমাজে কেউ ভালো কোনো কাজ করলে সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা বরং তার পেছনে পড়ে থাকে। অথচ তারা নিজেরাই যাবতীয় অন্যায় করলে করার কিছু নাই।
মুনাফিকদের শাস্তির বিবরণ
মুনাফিক কাফির মুশরিক মুরতাদের চেয়েও খারাপ। কেননা মুনাফিকের পরিচয় সহজে পাওয়া যায় না বলে এরা ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ইসলামের অন্যান্য শত্রুদের সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকলেও, মুনাফিকদের আমরা এড়িয়ে চলি কিংবা তাদেরকে ঘাটায় না। এরফলে এরা দ্বীন ধর্ম নিয়ে বিবিধ ষড়যন্ত্র করে। যা বর্তমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং যাবতীয় সরকাররা করে আসছে।
এই কারণে এদের শাস্তি হওয়া উচিত বেশী। আর তাই পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে মুনাফিকদের বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। কুরআনে আল্লাহ মুনাফিকদের নানানভাবে তিরস্কার করেছেন। একইসাথে তাদের জন্য দুনিয়াবী এবং পরকালের শাস্তির কথাও কঠোরভাবে উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তাদের শাস্তির তালিকা দেওয়া হলো।
জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান
আল্লাহ প্রত্যেক জালিমদের তথা কাফির, ফাসেক, মুশরিক, মুরতাদ, মুনাফিকদের জন্য জাহান্নামের সাতটি স্তর রেখেছেন। এইসব পাপীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপী কাফির হলেও, তারচেয়ে নিকৃষ্ট জাহান্নামে যাবে মুনাফিকরা। তাই তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর বা সর্বনিকৃষ্ট জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, মুনাফিকদের অবশ্যই অবশ্যই জাহান্নামে যেতে হবে এবং তা হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। সুতরাং এই জাহান্নাম থেকে মুনাফিকদের ফিরে আসার সুযোগ খুবই ক্ষীণ। কেননা আল্লাহ কুরআনে ফয়সালা করেছেন মুনাফিক এবং কাফিরদের একই সাথে জাহান্নামে পাঠাবেন। আল্লাহ বলেন,
কুরআনের মুনাফিকের পরিচয় দিতে গিয়ে এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, মুনাফিক এবং কাফির একই শ্রেণীভুক্ত। অর্থাৎ ঈমান না আনার কারণে কাফেররা যেমন জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। ঠিক তেমনি ঈমান এনেও মুনাফিকী আচরণের কারণেও অধিকাংশ মুসলমান জাহান্নামে কাফিরদের সাথে অবস্থান করবে।
এই আয়াত থেকে বুঝা যায় ঈমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু মুখে কালেমা পড়লেই মুসলমান হওয়া যায় না। কিংবা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। মুনাফিকরাও আল্লাহর উপর ঈমান আনে আবার আল্লাহর বিরুদ্ধেও চলে। এরফলে তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে গেল। কেননা তারা তাদের ঈমানের শর্ত পূরণ করেনি। আর আমাদের উপমহাদেশে সুফিবাদী সুন্নিরা জানেই না ঈমান কী এবং ঈমান কী কারণে ভেঙে যায়?
সুফি সুন্নিরা আজীবন পীর অলি আউলিয়াদের পেছনেই ছুটে যাচ্ছে। তাদেরকে কুরআন হাদিসের দিকে আহবান করা হলেও তারা সেদিকে কখনোই মুখ ফেরায় না। বাপ দাদারা যা করেছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। কখনোই খুঁজে দেখেনা আল্লাহ এবং রাসুল কীসে সন্তুষ্ট।
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
এই পৃথিবীতে শুধু কাফিররাই ইসলামের বিরুদ্ধে আছে, এটাই আমরা অধিকাংশ মুসলমান মনে করি। কিন্তু কাফিরদের চাইতে মুনাফিকরাও কম ভয়ংকর নয়। আর তাই আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআনে যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
এখানে মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহর অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আর এটা এমন নয় যে, শুধু তৎকালীন মুনাফিকদের এই আয়াত নাযিল হয়েছে। বর্তমানে মুনাফিকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বর্তমান সময়েও যারা নামধারী মুসলমান সেজে মুনাফিক লুকিয়ে আছে, তাদের ব্যাপারে আমাদের হুশিয়ার হতে হবে।
কেননা এই আয়াতে আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন যারা মুনাফিক তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অথচ আমাদের বর্তমান সমাজে মুনাফিকরাই বড় বড় পদে বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া তো দূরের কথা, তাদের ছাড়া আমাদের অধিকাংশেরই দিন চলে না। আর তাই মুনাফিকদের সাথে উঠাবসা করতে করতে অধিকাংশ মুসলমান আজ মুনাফিকই চিনে না।
তারপরও যারা প্রকৃত ঈমানদার তাদের অবশ্যই উচিত হবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো অবস্থায় মুনাফিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। যদিও বর্তমান সময় ও পরিস্থিতিতে এটা খুবই অসম্ভব ব্যাপার। তারপরও ঈমানের খাতিরে আমাদেরকে অবশ্যই ঈমান ধরে রাখতে হবে।
আর আমরা সমাজের অন্যান্যদের ছাড়া কখনোই ইসলাম পরিপূর্ণ করতে পারব না। তাই মুনাফিকদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলমান রাখতে হবে। আর এই যুদ্ধ বর্তমানে কখনোই সরাসরি প্রতিহত করা যাবে না। তাই আমাদের দ্বীনের দাওআতের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।
কুরআন অবহেলার শাস্তি
মুনাফিকদের আল্লাহ বিভিন্ন কারণে শাস্তি দিবেন। তারমধ্যে অন্যতম কারণ হলো কুরআনের অবহেলার জন্য শাস্তি। আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য একটি জীবনবিধান পাঠিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের উচিত সেইমতো জীবনযাপন করা। আর তাই যারা ঈমান আনে, তারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা বদ্ধ যে, তারা আল্লাহর বিধান তথা কুরআনের আইনেই জীবনযাপন করবে।
অথচ যারা মুনাফিক তারা ঈমান আনে ঠিকই, কিন্তু ঈমান অনুযায়ী আমল করে না। ফলে তারা দুনিয়াবী জীবনযাপন অভ্যস্ত হয়ে পড়ে কুরআনের বিধি বিধানকে অবহেলা করতে থাকে। আর এই কারণেই তাদের আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ বলেন,
এই আয়াতে আল্লাহ কুরআনের মাহাত্ম্য এবং মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, পবিত্র কুরআনের মূল্য এতো বেশী যে, তা পাহাড় পর্বতমালা ভয়ে গ্রহণ করেনি। কিন্তু মানুষ এটা গ্রহণ করেছে। কারণ এই কুরআন গ্রহণে রয়েছে অগণিত নেকী। অর্থাৎ আল্লাহর এই আমানতের প্রতি আনুগত্যে করলে আল্লাহ নেকী দিবেন। একইসাথে এই কুরআন জীবনে ধারণ করতে পারলে আল্লাহ থেকে এর প্রতিদানও পাওয়া যাবে। এইসব দেখে মানুষ কুরআনের মতো কঠিন বিষয়েরও গুরুভার বহন করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেল।
আর এই কারণেই মানুষের দায়িত্ব হলো কুরআনের এই আমানত সঠিকভাবে রক্ষা করা। তাই যারা ঈমান আনবে তাদের দায়িত্ব হলো কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন করা। অথচ যারা মুখে ঈমান এনে সেইমতো জীবনযাপন না করে মুনাফিকি করলো, তারা কুরআনের এই আমানত রক্ষা করলো না। যারফলে তাদের শাস্তি দেওয়ার কথা আল্লাহ পরের আয়াতেই উল্লেখ করছেন এভাবে,
অতএব কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন না করার মানেই হলো মুনাফিকি করা। আর তাই আল্লাহ মানুফিকদের শাস্তি দিচ্ছেন। কেননা ঈমান আনার মাধ্যে তারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছে যে, তারা কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন করবে। কিন্তু তারা তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা এই শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাই তাদের শাস্তির দেওয়ার ঘোষণা আল্লাহ দিচ্ছেন।
আমাদের উপমহাদেশের সুফিবাদী সুন্নি মুসলমানদের এই আয়াত থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার যে, কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন কেন গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে প্রতিটি মুসলমানের জন্য ঈমানের দাবি পূরণ করা কতটুকু আবশ্যকীয়। কেননা আল্লাহ প্রতিটি পদে পদে মানুষ থেকে ঈমানের হিসাব নিবেন। একইসাথে কতটুকু কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন করেছি তারও হিসাব নিবেন।
অথচ আমরা সুফি সুন্নিরা কখনোই ঈমানের ধারে কাছেও নেই। কুরআনের অনুসারে জীবনযাপন তো দূরের কথা। কুরআন সম্পর্কেই আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। তাহলে আমরা কীভাবে প্রকৃত ঈমানদার হলাম? আর কীভাবেই বা আল্লাহর কাছে জবাব দিব?
মুনাফিক চেনার উপায়
আমরা ইতিমধ্যে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে মুনাফিকের পরিচয় জানতে পেরেছি। এতে করে আমাদের মুনাফিক চেনার উপায় খুঁজে পেতে সহজ হয়েছে। আমরা এখন সমাজের মুনাফিক চেনার জন্য তাদের কতগুলো বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করব।
প্রথমত এরা কুরআন বিদ্বেসী
যারা মুনাফিক তাদের কাছে কুরআনের আইনকানুন বিধি বিধান কখনোই ভালো লাগে না। তাই তারা প্রতিনিয়ত কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। (সূরা নিসা আয়াত ৬১)
দ্বিতীয়ত এরা আমলে অলসতাকারী
যারা প্রকৃত মুনাফিক তারা কখনোই ইসলামের জরুরী ইবাদত বন্দেগী কখনোই পরিপূর্ণ ভাবে পালন করে না। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তারা ঠিকমতো আদায় করে না। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)
তৃতীয়ত এদের দ্বিমুখী মনোভাব
অর্থাৎ এরা সবদিক ম্যানেজ করে চলে। এদের বেশি প্রচলন ছিলো রাসুলের যুগে। তৎকালীন মুনাফিকরা ঈমানের কথা বলে মুসলমানদের সাথেও থাকত আবার কাফিরদের সাথেও উঠাবসা করত। যেমন আমাদের বর্তমান সময়েও কিছু মানুষ আলেম উলামাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। আবার ইসলাম বিদ্বেসী রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের দহরম মহরম রয়েছে। এই বিষয়ে সুরা মায়েদার ৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
খিয়ানতকারী
আমাদের সমাজে আজকাল এক শ্রেণী বের হয়েছে। যারা রাজনৈতিক ছত্রছাঁয়ায় বিভিন্ন বিচার মজলিসে উপস্থিত থেকে বিচার ফয়সালা করে। মানুষ এদের না জেনে বিশ্বাস করে। পরবর্তীতে এরাই আমানতের খিয়ানত করে। যা বুখারি শরিফের ৬০৯৫ নং হাদিসে এসেছে।
অশ্লীলতা করা
আজকাল দ্বীন ইসলামের কোনো চর্চাই কোথাও হচ্ছে না। ঘরে বাইরে অফিস আদালতে কোথাও ইসলাম নেই। ফলে মানুষের মধ্যে আধুনিকতা প্রবেশ করে মানুষ অশ্লীল হয়ে গেছে। একারণে আজ পথেঘাটে যে যেখানে পারছে অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়ে আছে। এরাই হচ্ছে মুনাফিক। যা সুরা তাওবার ৬৭ নং আয়াতে এসেছে।
অনর্গল মিথ্যা বলা
যাদের চরিত্রে মুনাফিকী আছে তারা অনর্গল মিথ্যা কথা বলতে পারে। এই মিথ্যার মাধ্যমে তারা দ্বীন থেকে দূরে থাকে এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাই মিথ্যাবাদী মানেই মুনাফিক। যাদের কথা সুরা মুনাফিকুনের ১ নং আয়াতে এসেছে।
বাচাল হওয়া
যারা মুনাফিক হয় তারা অসম্ভব বাচাল ও বাকপটু হয়। তাদের কথার মারপ্যাঁচ কেউ সহজে ধরতে পারে না। নানান কথায় তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের ফায়দা উসুল করে। এদের কথা তিরমিজি হাদিসে ২০২৭ নং হাদিসে এসেছে।
ধোঁকাবাজি করা
যারা ধোঁকাবাজি করে তারা মূলত মুনাফিক। কেননা ধোঁকাবাজি কখনোই ঈমানদারের লক্ষণ নয়। যার কথা সুরা বাকারার ৮-১০ নং আয়াতে এসেছে।
প্রতিশ্রুতি না রাখা
কথা দিয়ে কথা না রাখা ব্যক্তি মুনাফিকীতে লিপ্ত। (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৫)
উপরোক্ত বৈশিষ্ট দেখলেই আমরা বলতে পারি যে এরা মুনাফিক।
শেষ কথা
নিফাক এবং মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, যেকোনো মুসলমান ঈমানের দাবি করলে অবশ্যই তাকে ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ সঠিক জ্ঞান এবং ধারণা থাকতে হবে। এইজন্য অবশ্যই যেকোনো ঈমানদারকে দ্বীনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।
আর এই জ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই সে ইসলামের যত হুকুম আহকাম ইবাদত বন্দেগী আছে তা পরিপূর্ণভাবে পালনে চেষ্টা করতে হবে। কেননা ঈমান এনে ঈমানের দাবি পূরণ না করার অর্থই হলো মুনাফিকের পরিচয় দেওয়া।
আজ আমাদের সমাজে প্রতিটি জায়গায় এমন মানুষের অভাব নেই যাদের এইসব মুনাফিকী গুণাবলী আছে। আমরা জন্মগত মুসলমানরা নিজেরাই জানি না যে আমাদের কী কী কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা মুনাফিক হয়ে যাচ্ছি। অতএব আমাদের চেষ্টা করা উচিত যাতে আমাদের কাজ কর্ম দ্বারা কখনোই মুনাফিকের পরিচয় পাওয়া না যায়। কেননা মুনাফিকের স্থান হবে সরাসরি জাহান্নামের নিম্নস্তরে।
প্রশ্নোত্তর
নিফাক শব্দের অর্থ কি
নিফাক একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ করা হয় দ্বিমুখী ভাব পোষণ করা, ভন্ডামি করা, কপটতা দেখানো, ধোঁকাবাজি করা, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা করা ইত্যাদি। আমরা যদি নিফাকের ব্যবহারিক অর্থ জানার চেষ্টা করি, তাহলে এর উত্তর হবে, অন্তরে একরকম চিন্তা ভাবনা রেখে বাইরে এর বিপরীত কিংবা ভিন্ন চিন্তা ভাবনা অবস্থা ইত্যাদি প্রদর্শন করা। সহজ ভাবে বললে নিফাক অর্থ দাঁড়ায় অন্তরে একরকম ধারণা পোষণ করে বাইরে ভিন্ন ধারণার প্রকাশ করা।
মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি ও কি কি
কুরআন হাদিসের আলোকে মুনাফিকের বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। তবে কয়েকটি হাদিসে সুস্পষ্ট কয়েকটি লক্ষণ আল্লাহর রাসুল সাঃ উল্লেখ করেছেন। যেমন একটি হাদিসে এসেছে, প্রসিদ্ধি সাহাবী আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে মুনাফিকের পরিচয় পাওয়া যাবে তিনটি চিহ্ন দেখে- এগুলো হলো,
- মুনাফিক যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে
- মুনাফিক যখন কোনো অঙ্গীকার বা ওয়াদা করে, তা তারা পূর্ণ না করে ভঙ্গ করে
- এদের কাছে কোনো আমানত দিলে তারা তা খেয়ানত করে। (মূল হাদিস বুখারী হাদিস নং-২৬৮২, মুসলিম ১/২৫)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, যা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। যে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন যে, যার মধ্যে চারটি স্বভাব পাওয়া যাবে সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। এমনকি যতক্ষণ না পর্যন্ত তার মধ্যে একটি স্বভাবও পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুনাফিক হিসাবেই গণ্য হবে।
এই স্বভাব গুলো হচ্ছে-
- আমানতের খেয়ানত করা
- অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করা
- ঝগড়া করলে অশ্লীলভাবে গালাগালি করা
- কথা বললে মিথ্যা বলা
(মূল হাদিস বুখারী-২২৫৯, মুসলিম ১/২৫)
আপনি আরো যা পড়তে পারেন
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর ব্যাখ্যা (পর্ব-১)
- ঈমান কী? এবং ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ কী কী?
- ইসলাম কাকে বলে? ইসলামের পরিচয়, ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
- জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ?
- ১০০+ মোটিভেশনাল উক্তি, এসএমএস, স্ট্যাটাস ও ছবি ডাউনলোড
- সহি শুদ্ধ সকল নামাজের নিয়মাবলী
- জুমা মোবারক, জুমার দিনের আমল, ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- হযরত মুহাম্মদ সা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
- ইমাম বুখারি (রহ.) এর জীবনী
- হযরত উসমান (রা.) এর জীবনী
- হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আদম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আলী (রা.) এর জীবনী
- হযরত ওমর (রা.) এর জীবনী
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
- ১০ টি সেরা ইসলামিক বই–যা অবশ্যই পড়া উচিত
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- হযরত আবু বকর (রা.) এর জীবনী
- যে আমলে নেকী বৃদ্ধি হয়

মুনাফিকদের ভয়ংকর চক্রান্ত থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করার এবং আমাদের কর্ম থেকেও নেফটি দূর করুন।