মধুর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। মধু খাওয়ার নিয়ম মেনে খেলে সুস্থ ও সতেজ জীবনযাপন করা যায়। হাদিসে মধু খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বলা আছে, বলা আছে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বা, খাদ্যবিজ্ঞান আমাদেরকে অনেক রকম উপকারিতার কথা বলে।
আমাদের মনেও রয়েছে নানা প্রশ্ন– রাতে খাবো নাকি দিনে, খালি পেটে নাকি ভরা পেটে। দারুচিনি দিয়ে খাব নাকি রসুন দিয়ে খাবো। “রসুন আর মধু খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেলে কি হয়?” এই প্রশ্নের উত্তর জানতেও মনে ইচ্ছা জাগে। চেষ্টা করবো আপনাদের এইসব প্রশ্নের উত্তর এই লেখার মাধ্যমে দিতে।
মধু খাওয়ার উপকারিতা
আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে এটিকে মহাঐষধ বলা হয়, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ও একে মহাঐষধ বলেছেন। মধু সহজপাচ্য এবং বলকারক হিসেবে পরিচিত। শীতপ্রধান দেশে মদ খেয়ে লোকে শরীর গরম রাখে, এর বদলে হালাল খাবার মধুও কিন্তু খাওয়া যেতে পারে। চলুন এক নজরে কিছু উপকারিতা দেখে নেই–
১. এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ন কিছু পুষ্টিগুণ
২. এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার
৩. ডায়বেটিস রোগীদের জন্য চিনির চেয়ে মধু কম ক্ষতিকর
৪. রক্তের হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে
৫. কোলেস্টেরলের উন্নতি ঘটায়
৬. হৃদয়ের জন্য উপকারি, হার্ট ভালো রাখে
৭. বাচ্চাদের কাশি কমাতে সাহায্য করে
আরো দেখতে পারেন- চিচিংগা রান্নার রেসিপি, উপকারিতা, চাষ পদ্ধতি
মধু বনাম চিনি
১ বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের মধু খাওয়াবেন না। চিনিতে ক্যালরি কম, মধুতে বেশী। চিনি হজম করা কঠিন, মধু সহজে হজম করা যায়। ভিটামিন আর মিনারেলে মধু ভরপুর।
১ চামচ মধুতে থাকে-
- ৫৮ কিলোক্যালরি
- ১৫.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ০.১ প্রোটিং
- ০ গ্রাম ফ্যাট
এনাজাইম, এমাইনো এসিড, ভিটামিন বি ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে মধু। চিনি বেশী খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে, আপনি মুটিয়ে যাবেন- রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য চিনি অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সুতরাং ক্যালরি বেশী গ্রহণের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনা না থাকলে মধু খাওয়া উচিত। আরেকটা কথা, মধুতেও কিন্তু চিনি আছে। আর, ডায়বেটিস রোগীদের চিনি যেমন ক্ষতিকর, মধু ততটা নয়। তবে, দুটিই বর্জনীয়।
ডায়াবেটিস, মধু এবং সাদা চিনি নিয়ে আরো জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। DrFerdousUSA নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিওটি আপনাদের জন্য দেয়া হলো-
মধু খাওয়ার নিয়ম
অনেকভাবে আপনি মধু খেতে পারেন। ছোটবেলায় আমি অর্জুন গাছের ছালের গুড়োর সাথে মিশিয়ে মধু খেতাম। চায়ের সাথেও খাওয়া যায়, তবে বেশী তাপমাত্রায় মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়- এমনকি ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই চায়ের সাথে গরম করে খাবেন না। কয়েকভাবে খেতে পারেন-
- ঘুম থেকে উঠেই পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, শরীর সতেজ হবে
- লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেতে অনেকে খেতে পছন্দ করেন
- এছাড়া আরো অনেক কিছুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- খালি পেটে বা, ভরা পেটে খেতে পারেন
শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, বেশী তাপমাত্রায় যেহেতু মধু নষ্ট হয় তাই রান্নায় ব্যবহার করবেন না।
বেশি খেলে কি হয়?
চিনি বেশী খেলে যে সমস্যা হয়, মধুতেও একই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনে রাখবেন, যেকোন কিছুই বেশী খাওয়া ক্ষতিকর। বেশী মধু খাওয়ার কারণে আপনি অতিরিক্ত মোটা বা, Obese হয়ে যেতে পারেন।
মধুর নানাবিধ উপকারিতার কথা লোকমুখে শুনে এবং ব্লগে পড়ে প্রচুর পরিমাণে মধু খাওয়া শুরু করবেন না। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কোন খাবারের প্রভাবই সাথে সাথে টের পাওয়া যায় না, তবে দীর্ঘমেয়াদে বেশী খাওয়ার ফল ভোগ করতে হতে পারে। সুতরাং, পরিমিতিবোধ অপরিহার্য।
মধুর অপকারিতা
সবার জন্য মধু উপকারী নয়। কারো কারো জন্য এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। জেনে নিন কাদের জন্য মধু অপকারী–
- যাদের এলার্জি আছে, মধু খেলে তাদের সমস্যা হতে পারে
- গর্ভাবস্থায় নারীদের মধু না খাওয়ানোই ভালো
- কারো কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে
তবে, এই খাদ্যের উপকারিতাই বেশী। সুতরাং, সমস্যা না থাকলে মধু খাওয়া উচিত।
দারুচিনি ও মধু
যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে দারুচিনি এবং মধু একসাথে খেলে ৬ টি রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন–
১. দাত ও মাড়ির রোগ দূর করে, ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়
২. হার্টের সমস্যায় উপকারী প্রভাবক হিসেবে কাজ করে
৩. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে, দারুচিনির প্রভাবে
৪. শরীরের অনেক ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস করে
৫. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
৬. ক্ষতিকর অনেক ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
রসুন মধু
অনেকেই রসুন আর মধু খালিপেটে এক সপ্তাহ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কালের কন্ঠের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এতে রক্তের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা যায়। কাচা রসুনের অনেক গুণাগুণ রয়েছে।
তাই, আপনি কাচা রসুন কুচি আর, মধু একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। প্রতিদিন খালিপেটে এই মিশ্রণটি খেলে আপনার শরীর ঝরঝরে থাকবে এবং আপনি সারাদিন ক্লান্তিমুক্ত থাকতে পারবেন।
সর্দিকাশি সারানোর জন্য, রসুন, আদা, পেয়াজ, শুকনো মরিচ, লেবু কুচি কুচি করে কেটে এরপর ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। জাগোনিউজের মতে এতে সর্দিকাশি সারে।
মৌমাছি পালনের উপকারিতা কি কি?
শুধু যে মধু পাওয়া যায় তাই ই নয়, এর আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। মৌমাছি পরাগায়নে সাহায্য করে। এর ফলে, ফসলের উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়। বেকারদের জন্য খুব ভালো একটু উদ্যোগ হতে পারে মৌমাছি পালন। এটি বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনেও সহায়ক। এই দুর্মূল্যের বাজারে গরীব গ্রামীণ পরিবারগুলোর জন্য মৌমাছি পানন একটি আশির্বাদ হয়ে আসতে পারে।
আরো পড়ুন-
- কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা
- তিরামিসু রেসিপি-ইতালিয়ান খাবার
- ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কেন খাবেন?
- ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
- দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা