আহলে হাদীস কারা —১

0

আহলে হাদীস কারা —১

 

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। কলিমদ্দি সলিমুদ্দি, পুব পাড়ার মাছ ব্যাপারী, বাজারের সুদী কারবারী ও বিশেষ করে শুদ্ধ উচ্চারণে সূরা ফাতেহাটা পড়তে না পারা নাদান লোকটাও আজকাল নিজেকে আহলে হাদিস দাবি করে! এবং এর পক্ষে বিভিন্ন অপযুক্তি, অপদলিল ও অপব্যাখ্যাও দিয়ে থাকে।

সেই অপদলিল (অপব্যাখ্যা বা জালিয়াতির) ধারাবাহিকতায় কোনো এক জাহেল লিখেছে-

শায়খুল ইসলাম হাফিয ইবনু তায়মিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসের উপর আমলকারী সাধারণ লোকদেরকেও ‘আহলে হাদীস’ আখ্যা দিয়েছেন। (মাজমূউ ফাতাওয়া, ইবনু তায়মিয়াহ ৪/৯৫)”।

 

এবার আমরা দেখবো- ইবনে তায়মিয়্যাহ রহ. আসলেই কি ‘হাদিসের উপর আমলকারী’ সাধারণ লোকদেরকে আহলে হাদিস বলেছে, নাকি ঘটনা সম্পূর্ণ এর বিপরীত?

 

বাস্তবতা হচ্ছে- হাদিসের উপর আমলকারী সাধারণ লোকদেরকে তো দূরের কথা বরং যারা হাদিস শাস্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত তাদেরকেও তিনি আহলে হাদিস মনে করেন না। অর্থাৎ যারা হাদিস শ্রবণ করে ও লিপিবদ্ধ করে এবং হাদিস বর্ণনাও করে; তাঁর দৃষ্টিতে তারাও আহলে হাদিস নয়।

 

ভাবুন বিষয়টা কতো বিপরীতার্থবোধক! সাধারণ লোক তো অনেক পরের বিষয় খোদ হাদিসের ছাত্র ও বর্ণনাকারীকেও তিনি আহলে হাদিস বলতে রাজি নন।

 

তো তিনি কাদেরকে আহলে হাদিস বলতে চান?

 

ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ মূলত বলেছেন- আহলে হাদিস হওয়ার জন্য কেবল হাদীস শোনা, লেখা ও বর্ণনা করাই যথেষ্ট নয় বরং আহলে হাদিস হতে হলে ১. দৃঢ়ভাবে হাদীস মুখস্থ করতে হবে ২. হাদীসের মা’রিফাত তথা হাদীস শাস্ত্রের কায়দা-কানুন বা উসূলের ভিত্তিতে হাদীসসমূহ পূর্ণরূপে জানতে হবে ৩. হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে গভীর থেকে বুঝ অর্জন করতে হবে ৪. হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এরপরেই তাকে আহলে হাদিস বলা যাবে।

 

তিনি সুস্পষ্টভাবেই বলেন-

 

وَنَحْنُ لَا نَعْنِي بِأَهْلِ الْحَدِيثِ الْمُقْتَصِرِينَ عَلَى سَمَاعِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ رِوَايَتِهِ بَلْ نَعْنِي بِهِمْ: كُلَّ مَنْ كَانَ أَحَقَّ بِحِفْظِهِ وَمَعْرِفَتِهِ وَفَهْمِهِ ظَاهِرًا وَبَاطِنًا وَاتِّبَاعِهِ بَاطِنًا وَظَاهِرًا وَكَذَلِكَ أَهْلُ الْقُرْآنِ.

 

আমরা আহলে হাদিস বলতে তাদেরকে বোঝাই না, যারা কেবল হাদীস শ্রবণ ও লিপিবদ্ধকরণ এবং বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন; বরং আহলে হাদিস বলতে আমরা ঐ সকল ব্যক্তিকেই বোঝাই- যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে হাদীস মুখস্থ করেছে ও হাদীসের মা’রিফাত অর্জন করেছে। (তথা হাদীস শাস্ত্রের কায়দা-কানুন বা উসূলের ভিত্তিতে হাদীসটিকে পরিপূর্ণভাবে জেনেছে) এবং হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে গভীর থেকে বুঝ অর্জন করেছে এবং হাদীসের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ বা আমল করে। আহলে কুরআনের ক্ষেত্রেও একই কথা। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ৪/৯৫]

 

তাদের জালিয়াতির স্বরূপ উন্মোচন।

 

তারা সর্বদা ভুল অনুবাদ বা অনুবাদ-জালিয়াতির মাধ্যমেই সাধারণ মানুষকে বোকা বানায়। এ ক্ষেত্রেও তারা একই নোংরামো করেছে। তারা ইবনে তাইমিয়্যাহ’র বক্তব্যের ভুল অনুবাদ করেছে এভাবে-

 

وَنَحْنُ لَا نَعْنِي بِأَهْلِ الْحَدِيثِ الْمُقْتَصِرِينَ عَلَى سَمَاعِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ رِوَايَتِهِ…

“আমরা আহলেহাদীছ বলতে কেবল তাদেরকেই বুঝি না যারা হাদীছ শুনেছেন, লিপিবদ্ধ করেছেন বা বর্ণনা করেছেন। বরং আমরা আহলেহাদীছ দ্বারা ঐ সকল ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকি, যারা হাদীছ মুখস্থকরণ…

 

জালিয়াতি —১

 

তারা অনুবাদ করেছে- “আমরা আহলেহাদীছ বলতে কেবল তাদেরকেই বুঝি না”

 

✍️

তাদের অনুবাদের ভিতরে একটি শব্দ আছে “কেবল”। এ “কেবল” শব্দটির মাধ্যমেই তাদের জালিয়াতির সূত্রপাত। “কেবল” শব্দটি তারা বাক্যের যথাস্থানে বসায়নি বরং এমন স্থানে বসিয়েছে যেখানে শব্দটি বসবে না; আর এমন স্থান থেকে “কেবল” শব্দটিকে হটিয়ে নেওয়া হয়েছে যেখানে মূলত শব্দটি বসবে। অর্থাৎ সঠিক অনুবাদটি এভাবে হবে-

 

وَنَحْنُ لَا نَعْنِي بِأَهْلِ الْحَدِيثِ الْمُقْتَصِرِينَ عَلَى سَمَاعِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ رِوَايَتِه

আমরা আহলে হাদীস বলতে তাদেরকে বোঝাই না- যারা “কেবল” হাদীস শ্রবণ ও লিখন এবং বর্ণনা করাতেই সীমাবদ্ধ। বরং আহলে হাদিস বলতে আমরা ঐ সকল ব্যক্তিকেই বোঝাই- যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে হাদীস মুখস্থ করেছে….

 

মূলত অনুবাদের এই হেরফেরের কারণেই বক্তব্যের মূল অর্থটাই পাল্টে গিয়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ‘দিন’ হয়ে গেছে ‘রাত’। বোঝাতে চেয়েছেন সিংহ, হয়ে গেছে বেড়াল।

 

তাদের কাছে আমার প্রশ্ন

 

১. “কেবল” শব্দটি কোন আরবী শব্দের অনুবাদ?

 

২. আরবি বাক্য অনুযায়ী উক্ত স্থানে তো “কেবল” শব্দটি থাকার কথা নয়; তো এখানে “কেবল” শব্দটি কেন এসেছে।

 

৩. অনুবাদে ‘কেবল’ শব্দটিকে বাক্যের প্রথমাংশে এসেছে- এটা কোন নিয়মের ভিত্তিতে?

 

৪. ইবারতের مقتصرين শব্দটির অনুবাদ কেনো করা হয়নি।

 

আমি লা-মাযহাব ভাইদের কাছে এই চারটি প্রশ্নের উত্তর চাইবো।

 

এবার প্রশ্নগুলো আমাদের দিকে ফিরানো যাক; আমরা কেন “কেবল” শব্দটিকে বাক্যের দ্বিতীয় অংশে এনেছি। তা বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই আরবিতে সামান্য হলেও দক্ষ হতে হবে। আমরা সহজে বোঝার সুবিধার্থে মূল অংশের আরবী ইবারতটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে অনুবাদ করছি-

 

প্রথম অংশ

 

نَحْنُ لَا نَعْنِي بِأَهْلِ الْحَدِيثِ

আমরা আহলে হাদিস বলতে তাদেরকে বোঝাই না

 

দ্বিতীয় অংশ

الْمُقْتَصِرِينَ عَلَى سَمَاعِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ رِوَايَتِهِ

 

যারা কেবল হাদিস শ্রবণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ।

 

যদি আমরা শব্দ বিশ্লেষণে যাই তখন দেখা যাবে, দ্বিতীয় বাক্যের প্রথম শব্দটি হচ্ছে مقتصرين। এই مقتصرين শব্দটি এসেছে اقتصار শব্দটি থেকে। আর اقتصار শব্দের অর্থ হচ্ছে, সীমাবদ্ধ হওয়া, সীমাবদ্ধ থাকা, ক্ষান্ত হওয়া, সন্তুষ্ট থাকা। সে হিসেবে مقتصرين শব্দটির অর্থ হচ্ছে সীমাবদ্ধ।

 

এবার প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের অনুবাদ মিলিয়ে দেখা যাক-

 

১. আমরা আহলে হাদিস বলতে তাদেরকে বোঝাই না ২. যারা কেবল হাদিস শ্রবণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ।

 

জেনে রাখা ভালো, ‘কেবল’ শব্দটি মূল আরবি অংশে নেই। তবে বাংলা ভাষার প্রচলন হিসেবে ‘সীমাবদ্ধ’ শব্দের সাথে “কেবল” শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

 

যেমন আমি কাউকে বললাম, ‘তুমি হাদিস লেখাতেই সীমাবদ্ধ থেকো না, বরং হাদিস গবেষণাতেও মনোযোগ দাও’। হাঁ, এতটুকুতেই আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। কিন্তু কথাটাকে আরো অর্থপূর্ণ করতে “কেবল” শব্দটি বৃদ্ধি করে এভাবেও বলা যায়- ‘তুমি কেবল হাদিস লেখাতেই সীমাবদ্ধ থেকো না, বরং হাদিস গবেষণাতেও মনোযোগ দাও’।

 

অর্থাৎ ‘সীমাবদ্ধ’ শব্দের সাথে “কেবল” শব্দটি যুক্ত করে দিলে বাক্যের অর্থটা আরো গম্ভীর হয়।

 

কাজেই আমরা বাংলা ভাষার ব্যবহার হিসেবে বাক্যের দ্বিতীয় অংশে “কেবল” শব্দটি যুক্ত করেছি। হাঁ, ব্যবহার আছে বিধায় আমরা যুক্ত করেছি জালিয়াতির উদ্দেশ্যে নিজ থেকে এনে যুক্ত করিনি। কিন্তু আমাদের লা-মাযহাব বন্ধুরা পরের অংশের “কেবল” শব্দটি আগের অংশে নিয়ে গেছে কোন যুক্তিতে? জালিয়াতির উদ্দেশ্যে নয় কি?

 

কিন্তু কেউ যদি মানতে নারাজ হোন, তবে আমরা কেবল শব্দটিকে বাদও দিয়ে দিতে পারি, কারণ, “কেবল” শব্দটি যুক্ত না করলেও অর্থ ঠিক থাকে এবং “কেবল” শব্দটি ছাড়াও লেখকের মনের ভাব ফুটে ওঠে; কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে কেবল শব্দটিকে আগে নিয়ে আসলে লেখকের মনের ভাব তো দূরের কথা বরং তাঁর উল্টো মনোভাব প্রকাশ পায়।

 

তো আমরা যদি বাংলা ভাষার প্রচলন না মেনে “কেবল” শব্দটি বাদ দিয়ে সরাসরি আরবি বাক্য থেকে শাব্দিক অর্থ করি, তখন অর্থটি হবে এমন-

 

১. আমরা আহলে হাদিস বলতে হাদিস শ্রবণ ও লিপিবদ্ধকরণ এবং বর্ণনাতে সীমাবদ্ধ থাকা ব্যক্তিদেরকে বোঝাই না; বরং…

 

২. আমরা আহলে হাদিস বলতে তাদেরকে বোঝাই না- যারা হাদিস শ্রবণ ও লিখন এবং বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে; বরং আমরা আহলে হাদিস বলতে ঐ সকল ব্যক্তিকেই বোঝাই যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে হাদীস মুখস্থ করেছে ও হাদীসের মা’রিফাত অর্জন করেছে (তথা হাদীস শাস্ত্রের কায়দা-কানুন বা উসূলের ভিত্তিতে হাদীসসমূহ পরিপূর্ণভাবে জেনেছে) এবং হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে গভীর থেকে বুঝ অর্জন করেছে এবং হাদীসের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ বা আমল করে। আহলে কুরআনের ক্ষেত্রেও একই কথা। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ৪/৯৫]

 

যাইহোক, জালিয়াতির সূত্রপাত যেহেতু “কেবল” শব্দ নিয়ে। তাই এ শব্দটি নিয়ে একটু লম্বা আলোচনা করা হয়েছে। আর “কেবল” শব্দটি বাদ দিলেও অর্থ ঠিকই থাকে। কিন্তু চালাকির মাধ্যমে “কেবল” শব্দটিকে বাক্যের প্রথম অংশে নিয়ে আসলে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়। যা আমাদের লা-মাযহাব বন্ধুগণ করেছেন, কিন্তু আল্লাহ তাদের মুখোশ উন্মোচনও করে দিয়েছেন।

 

যেহেতু মূর্খতার যুগ, কেউ কেউ ভাবতে পারেন “কেবল” শব্দটি বাক্যের প্রথম অংশে নিয়ে আসলে এক অর্থ দ্বিতীয় অংশে নিয়ে আসলে আরেক অর্থ হবে কেন; এটা বরং লেখকের মূর্খতা! কারণ, এমন বহু শব্দ আছে যেগুলোকে বাক্যের মধ্যে আগে পরে করলেও অর্থ কিন্তু একই থাকে। তাদের উদ্দেশ্যে আরেকটু বিশদ আলোচনা করা যাক-

 

“কেবল” শব্দটি অন্য অনেক শব্দের মত কোনো শব্দ নয়, বরং এটি এমন একটি বিশেষ শব্দ যা বাক্যের শুরুতে আসলে এক অর্থ, শেষে আসলে আরেক অর্থ হয়। বোঝার সুবিধার্থে দুটো উদাহরণ দিচ্ছি—

 

উদাহরণ (ক)

 

১. জায়েদ কেবল কলম দ্বারা লিখেছে।

২. কেবল জায়েদ কলম দ্বারা লিখেছে।

 

দেখুন এই দুই বাক্যের মধ্যে শাব্দিক কোনো তফাৎ নেই, উভয় বাক্যে একই শব্দসমষ্টি। কিন্তু শুধু “কেবল” শব্দটির আগে পরে হওয়ার কারণে অর্থও পরিবর্তন হয়ে গেছে।

 

প্রথম বাক্যের অর্থ হচ্ছে, জায়েদ কেবল কলম দ্বারাই লিখেছে, সে পেন্সিল বা অন্য কিছু দ্বারা লিখেনি। আর দ্বিতীয় বাক্যের অর্থ হচ্ছে অনেকের মধ্যে কেবল জায়েদই কলম দ্বারা লিখেছে, অন্যরা পেন্সিল বা অন্য কিছু দ্বারাও লিখেছে। অর্থাৎ প্রথম বাক্যে “কলম” খাস, দ্বিতীয় বাক্যে “জায়েদ” খাস।

 

উদাহরণ (খ)

 

১. জায়েদ বকরকে মেরেছে কেবল বেত দ্বারা।

২. জায়েদ কেবল বকরকে মেরেছে বেত দ্বারা।

 

এই দুই বাক্যের মধ্যেও শাব্দিক কোনো তফাৎ নেই, উভয় বাক্যে একই শব্দসমষ্টি।কিন্তু শুধু “কেবল” শব্দটির আগে পরে হওয়ার কারণে এই বাক্যের অর্থও পরিবর্তন হয়ে গেছে।

 

প্রথম বাক্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, জায়েদ বকরকে অন্য কিছু দ্বারা মারেনি কেবল বেত দ্বরাই মেরেছে। কিন্তু যখন “কেবল” শব্দটিকে আগে নিয়ে আসা হলো তখন অর্থ অন্যরকম হয়ে গলো। অর্থাৎ দ্বিতীয় বাক্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, জায়েদ বেত দ্বারা কেবল বকরকেই মেরেছে, অন্য ছাত্রদেরকে নয়। প্রথম বাক্যে “বেত” খাস, দ্বিতীয় বাক্যে “বকর” খাস।

 

মূল কাহিনীটা হচ্ছে, সেই যুগে কিছু কিছু মানুষ ঐ সমস্ত সাধারণ লোকদেরকেও আহলে হাদিস মনে করতে শুরু করে, যারা কেবল হাদিস শুনে লিখতো ও অন্যের কাছে বর্ণনা করতো। তাই তিনি এই ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বলেছেন- না, আহলে হাদিস হওয়ার জন্য কেবল এই তিনটি কাজ তথা ১. শ্রবণ ২. লিখন ৩. বর্ণনা করাই যথেষ্ট নয় বরং আহলে হাদিস হওয়ার জন্য এসবের সাথে সাথে তাকে পরিপূর্ণভাবে হাদীসটি মুখস্ত করতে হবে এবং উসূলের ভিত্তিতে হাদীসটিকে যাচাই-বাছাই করতে জানতে হবে, এবং হাদিসের প্রকাশ্য ও গোপন বুঝ ভালোভাবে অর্জন করতে হবে এবং পরিশেষে হাদীসের উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করতে হবে; তবেই তাকে আহলে হাদিস বলা যাবে।

 

তার ভাষায় আবারো শুনি- বিষয়টি বুঝে আসবে,

 

আমরা আহলে হাদিস বলতে তাদেরকে বোঝাই না- যারা কেবল হাদিস শ্রবণ, লিখন এবং বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন; বরং আমরা আহলে হাদিস বলতে ঐ সকল ব্যক্তিকেই বোঝাই যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে হাদীস মুখস্থ করেছে ও হাদীসের মা’রিফাত অর্জন করেছে (তথা হাদীস শাস্ত্রের কায়দা-কানুন বা উসূলের ভিত্তিতে হাদীসটিকে পরিপূর্ণভাবে জেনেছে) এবং হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে গভীর থেকে বুঝ অর্জন করেছে এবং হাদীসের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ বা আমল করে। আহলে কুরআনের ক্ষেত্রেও একই কথা। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ৪/৯৫]

 

কিন্তু লা-মাযহাব বন্ধুদের অনুবাদ-জালিয়াতি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্যটিকে একেবারে দাফন করে দিয়েছে।

 

তারা অনুবাদ করেছে- “আমরা আহলেহাদীছ বলতে কেবল তাদেরকেই বুঝি না যারা হাদীছ শুনেছেন, লিপিবদ্ধ করেছেন বা বর্ণনা করেছেন। বরং আমরা আহলেহাদীছ দ্বারা ঐ সকল ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকি, যারা হাদীছ মুখস্থকরণ এবং গােপন ও প্রকাশ্যভাবে তার জ্ঞান লাভ ও অনুধাবন এবং অনুসরণ করার অধিক হকদার। অনুরূপভাবে আহলে কুরআন দ্বারাও এরাই উদ্দেশ্য।”

 

তাদের অনুবাদ ও ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, যারা হাদিস শ্রবণ করে এবং লেখে এবং বর্ণনা করে কেবল তাদেরকেই আহলে হাদিস বলা হয় না, বরং যারা হাদিসের উপর আমল করে তারাও আহলে হাদিস।

 

অথচ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যারা কেবল হাদিস শুনে, লেখে এবং বর্ণনা করে তাদেরকে আহলে হাদিসই বলা হয় না, তাঁর দৃষ্টিতে আহলে হাদিস হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- শ্রবণ, লিখন, ও বর্ণনার সাথে সাথে হাদীসের মুখস্থকরণ, হাদীসের মা’রিফাত, হাদীসের প্রকাশ্য ও গোপন ‘ফাহম’/বুঝ এবং বাতেনী ও যাহেরী আমল- এই অতিরিক্ত চারটি বিষয় থাকতে হবে। শুধু থাকলে হবে না বরং এই চারটি বিষয়ে পরিপূর্ণ হক আদায় করতে হবে।

 

চারটি বিষয়ে পরিপূর্ণ হক আদায় করতে হবে- তা বোঝানোর জন্য তিনি বাক্যের শুরুতেই أحق শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং এরপরে চারটি বিষয় عطف এর মাধ্যমে সংযুক্ত করে দিয়েছেন- আর এটাই হচ্ছে আরবী ভাষার নিয়ম। অর্থাৎ চারটি বিষয়েই পরিপূর্ণ হক আদায় করতে হবে। কিন্তু আমাদের আহলে হাদিস বন্ধুরা যা অনুবাদ করেছে তা একজন আরবী জানা লোকের জন্য বড্ড হাসির খোরাকই বৈকি। তারা অনুবাদ করেছে- “গােপন ও প্রকাশ্যভাবে তার জ্ঞান লাভ ও অনুধাবন এবং অনুসরণ করার অধিক হকদার”। হা হা হা।

 

আমি বুঝলাম না, “অনুসরণ করার অধিক হকদার” মানে কী? কেউ বুঝলে আমাকে দয়া করে জানাবেন।

 

বাকী অংশ

https://lubaabhasansafwaan.blogspot.com/2023/01/blog-post_22.html

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “আহলে হাদীস কারা —১”

Leave a Reply