সুলতান মাহমুদ গজনবী কি মাযহাব পরিবর্তন করেছেন

0

সিরিজের সবগুলো লেখা-

সুলতান মাহমুদ গজনবীর হানাফী থেকে শাফে’ঈ হওয়ার কল্পিত গল্প ও শাফে’ঈদের জঘন্য নোংরামো —১

📗

রূপকথার গল্প • রাজ-রাজড়ার কল্পকথা • প্রাচীন কল্পকাহিনী

 

أن السلطان محمودًا المذكور كان على مذهب أبي حنيفة، ﵁، وكان مولعًا بعلم الحديث، وكانوا يسمعون الحيث من الشيوخ بين يديه، وهو يسمع، وكان يستفسر الحاديث، فوجد أكثرها موافقًا لمذهب الشافعي ﵁، فوقع في جلده حكة، فجمع الفقهاء من الفريقين في مرو، والتمس منهم الكلام في ترجيح أحد المذهبين على الآخر، فوقع الاتفاق على أن يصلوا بين يديه ركعتين على مذهب الإمام الشافعي، وعلى مذهب أبي حنيفة، ﵁، لينظر فيه السلطان، ويتفكر ويختار ما هو أحسنهما، فصلى القفال المروزي – وقد تقدم ذكره – بطهارة مسبغة وشرائط معتبرة من الطهارة والسترة واستقبال القبلة، وأتى بالأركان والهيئات والسنن والآداب والفرائض على وجه الكمال والتمام، وقال: هذه صلاة لا يجوز الإمام الشافعي دونها ﵁، ثم صلى ركعتين على ما يجوز أبو حنيفة ﵁، فلبس جلد كلب مدبوغًا ولطخ ربعه بالنجاسة، وتوضأ بنبيذ التمر، وكان في صميم الصيف في المفازة، واجتمع عليه الذباب والبعوض، وكان وضوءه منكسًا منعكسًا، ثم استقبل القبلة، وأحرم بالصلاة من غير نية في الوضوء، وكبر بالفارسية دو بركك سبز، ثم نقر نقرتين كنقرات الديك من غير فصل ومن غير ركوع، وتشهد، وضرط في آخره، من غير نية السلام، وقال: أيها السلطان، هذه صلاة أبي حنيفة، فقال السلطان، لو لم تكن هذه الصلاة صلاة أبي حنيفة لقتلك، لأن مثل هذه الصلاة لا يجوزها ذو دين، فأنكرت الحنفية أن تكون هذه صلة أبي حنيفة، فأمر القفال بإحضار كتب أبي حنيفة، وأمر السلطان نصرانيًا كاتبًا يقرأ المذهبين جميعًا، فوجدت الصلاة على مذهب أبي حنيفة على ما حكاه القفال، فأعرض السلطان عن مذهب أبي حنيفة، وتمسك بمذهب الشافعي

 

সুলতান মাহমূদ গজনভী (মৃ: ৪২১ হি:) হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ইলমে হাদীসের প্রতি তিনি খুবই আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁর হাতের নাগালে থাকা শায়খদের থেকে তিনি হাদীস শ্রবণ করতেন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন। এতে তিনি অধিকাংশ হাদীস শাফে’ঈ মাযহাবের অনুকূলে পেতেন। ফলে তার হৃদয়ে শাফে’ঈ মাযহাবের প্রতি একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একদিন তিনি বিচার-বিবেচনার জন্য হানাফী ও শাফে’ঈ মাযহাবের ফক্বীহদের একত্রিত করে যেকোনো একটি মাযহাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানালেন। তারা সকলে এ মর্মে একমত হলেন যে, সুলতানের সামনে দুই মাযহাবের পদ্ধতিতে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা হবে। তিনি তা পর্যবেক্ষণ করে যেটি সুন্দর ও উত্তম মনে করবেন সেটি গ্রহণ করবেন। অতঃপর শাফে’ঈদের সাথী আবূ বকর আল-ক্বাফফাল মারওয়াযী প্রথমে শাফে’ঈ মাযহাবের পদ্ধতিতে সালাত আদায় করলেন।

 

প্রথমে তিনি শাফে’ঈ মাযহাবের শর্তাদি ও রুকন-অনুযায়ী সুন্দরভাবেই ওযূ করলেন এবং পবিত্র পোশাক পরিধান করে কিবলামুখী হয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করলেন। অতঃপর সালাতের রুকন, সুন্নাত, আদব ও ফরযসহ যাবতীয় কার্যাবলী যথাসাধ্য পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করলেন- যেগুলো ব্যতীত (ইমাম) শাফে’ঈ সালাত আদায় জায়েয মনে করতেন না।

 

এরপর তিনি হানাফীদের পদ্ধতিতে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। প্রথমে তিনি কুকুরের পরিশোধিত (দাবাগাতকৃত) চামড়া পরিধান করে তার এক চতুর্থাংশে নাপাকি লাগিয়ে নিলেন। অতঃপর খেজুরের পঁচা রস (নাবীয) দিয়ে ওযূ করলেন। তখন মরুভূমিতে গ্রীষ্মকাল হওয়ায় নাবীযের দুর্গন্ধে মাছি ও মশা তাকে ঘিরে ফেললো। এভাবেই তিনি সম্পূর্ণ উল্টো পদ্ধতিতে নিয়ত ছাড়াই ওযূ সম্পন্ন করলেন। অতঃপর ক্বিবলা সামনে করে তিনি ফারসী ভাষায় তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করলেন। অতঃপর ফারসীতে ক্বিরা’আত دو برگ سبز (সূরা রাহমানের مُدْهَامَّتَانِ -এর ফারসী) পাঠ করলেন। এরপর রুকূ থেকে মাথা ভালোভাবে না উঠিয়েই সাজদা’য় চলে গেলেন। অতঃপর মোরগের ঠোকর দেওয়ার মতো করে দুই সাজদা’ করলেন। এরপর তাশাহহুদের পর বায়ু নিঃসরণ করলেন (পাদ মারলেন- খবীশ)। অতঃপর সালাম না ফিরিয়ে সালাত সম্পাদন করে সুলতান মাহমূদকে বললেন, এটিই আবূ হানীফাহ’র সালাত।

 

তখন সুলতান মাহমূদ বললেন, এটি যদি আবূ হানীফার সালাতের পদ্ধতি না হয়, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব। কারণ কোন দ্বীনদার ব্যক্তি এরূপ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করাকে জায়েয বলতে পারে না। এদিকে হানাফীগণ এটাকে ইমাম আবূ হানীফার সালাত মানতে অস্বীকার করলো। তখন ক্বাফফাল আবূ হানীফার কিতাবগুলো নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। কিতাবগুলো নিয়ে আসা হলে সুলতান একজন খৃষ্টান লেখককে তা পাঠ করতে বললেন। যখন উক্ত ব্যক্তি তা পাঠ করলো তখন সুলতান মাহমূদ বুঝতে পারলেন যে, ক্বাফফাল ঠিকই বলেছে। অতঃপর তিনি হানাফী মাযহাব ত্যাগ করে শাফে’ঈ মাযহাব গ্রহণ করলেন। [সূত্র: মুগীসুল খালক্ব: পৃষ্ঠা-৫৮]

 

✍️✍️✍️

দুই নিঃশ্বাসে পড়ে নিলেন একদম টাটকা একটি মিথ্যা গল্প। গল্পটি একাধিক কারণে বাতিল ও জাল। বরং জালেরও অধম।

 

১. এ ঘটনার কোনো সনদই নেই বরং সম্পূর্ণ সনদবিহীন একটি বানোয়াট কল্পকাহিনী বা রাজ-রাজড়ার রূপকথা। ঘটনাটি শুরু হয়েছে “কথিত আছে” শব্দ দিয়ে। আর “কথিত আছে” এমন শব্দে বর্ণিত কোনো ঘটনারই বাস্তবতা নেই। বিশেষ করে দ্বীনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।

 

ঘটনাটি যাহাবী ও ইবনু খাল্লিকান প্রমূখের গ্রন্থাদিতে থাকলেও তারা এই ঘটনাটি নিয়েছেন বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বেষী শাফে’ঈ আলিম জুয়াইনা’ঈর “মুগীসুল খালক্ব” নামক গ্ৰন্থ থেকে। আর ঐ মূল কিতাবেই ঘটনাটি “কথিত আছে” শব্দে সনদবিহীন বর্ণিত হয়েছে।

 

২. আপনি সামান্য কমনসেন্স খাটালেই বুঝবেন ঘটনাটির অসারতা ও জাল হওয়ার বিষয়টি। ক্বাফফাল- যিনি উভয় মাযহাবের সালাত আদায় করিয়ে দেখিয়েছেন তিনি একজন শাফে’ঈ মাযহাবের ফক্বীহ, আর একজন ফক্বীহ কখনোই এমন খবীশ ও নিচু মানসিকতার হতে পারে না যে, নিজের মাযহাবের আমলটা খুব সুন্দরভাবে করে দেখাবে আর অন্য মাযহাবের আমলটা সবচেয়ে নোংরা পদ্ধতিতে করে দেখাবে।

 

মনে রাখবেন, প্রত্যেক বিষয়/আমলের তিনটা পদ্ধতি থাকে। একটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি, অতঃপর স্বাভাবিক পদ্ধতি, অতঃপর কোনোরকমে জায়েয- যে পদ্ধতিতে অপারগতা ও ওজরের ক্ষেত্রে আমল করা হয়। তো এই ফক্বীহ নিজের মাযহাবের আমলটা উত্তম পদ্ধতিতে করলেন আর হানাফী মাযহাবের আমলটা জায়েয পদ্ধতিতে করলেন (কিছু কিছু ক্ষেত্রে জায়েযও না)। যা সম্পূর্ণ প্রতারণার শামিল, আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়”। [সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৭] এবার একটু ভেবে দেখুন, এই ফক্বীহ (?) কি মুসলমানের দলভুক্ত আছেন?

 

এবার আমাদেরকে বলতেই হবে, হয়তো তিনি এমনটা করে মুসলমানদের কাতারের বাইরে চলে গেছেন নয়তো তিনি এমনটা কখনোই করেননি, বরং এটি কল্পকাহিনী। যেমন বিভিন্ন রাজা-রানী নিয়ে বিভিন্ন কল্পকথা সমাজে প্রচলিত থাকে- এটিও সেগুলোর মধ্যে একটি কল্পকাহিনী বা রূপকথা।

 

৩. রুকূ থেকে ভালোভাবে না দাঁড়ানো ও কাকের মতো দুই ঠোকর মারা যে, হানাফী মাযহাবের আমল নয় বরং নিষিদ্ধ- এটাতো হানাফী মাযহাবের একদম জানী দুশমনও অস্বীকার করতে পারবে না। আর হানাফী মাযহাবের কোন গ্রন্থে এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা যাবে- বলা হয়েছে? এটাতো সম্পূর্ণ হানাফী মাযহাবের সাথে প্রতারণা।

 

অতএব একজন ফক্বীহ- যিনি চার মাযহাব সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত- তিনি কিভাবে এমন প্রতারণা ও মূর্খতাপূর্ণ কাজ করতে পারেন? বর্তমানের কোনো হানাফী বিদ্বেষী সাধারণ/কঠোর লা-মাযহাবীকেও যদি বলা হয় হানাফী পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে দেখাতে সেও তো উপরিউক্ত নোংরা পদ্ধতিতে সালাত আদায় করবে না, বরং সে হানাফীদের মতো (নাভির নিচে হাত বেঁধে ও রাফ’উল ইয়াদাইন না) করেই দেখাবে।

 

সে জায়গায় একজন সম্মানিত ফকীহ এমন হীন কাজ করেছেন- এটা কল্পকাহিনী ছাড়া কোথাও ঘটতে পারে না।

 

৪. খেজুর পঁচা রস দ্বারা ওযু করা, চারপাশে মশা মাছি ভনভন করা, কুকুরের চামড়ায় তৈরি পোশাক পরা, অতঃপর এক চতুর্থাংশ কাপড়ে ইচ্ছাকৃত নাপাকি লাগিয়ে দেওয়া এবং তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে পাদ মারা (বায়ু নিঃসরণ করা) এসব কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তির কাজ হতে পারে কিনা আপনারাই বিবেচনা করুন। আমার তো মনে হয়, এমন অবাস্তব ঘটনা কেবল ‘মটু পাতলু’ ও ‘সিবা’ ইত্যাদির মতো কল্পকাহিনীগুলোতেই ঘটা সম্ভব। একজন ফক্বীহের দ্বারা এমন কাজ কখনোই সম্ভব নয়। যদি তাকে ফক্বীহ মানতে হয় তবে তিনি “মটু-পাতলু-মার্কা’ ফক্বীহ।

 

৫. আপনাকে যদি একজন বিশ্বজয়ী প্রভাবশালী বাদশা সুলতান মাহমুদ গজনবী এর মতো কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি দুই মাযহাবের সালাত আদায় করিয়ে দেখাতে বলে আপনি এভাবে করবেন কিনা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো দেখি!

 

অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে সুলতান তার সাথে ঠাট্টা মশকরা করলেন আর তিনিও প্রতিউত্তরে সুলতান এর সাথে ঠাট্টা মশকরা করলেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সুলতান কি মূলতঃ ঠাট্টা মশকারি করতে চেয়েছিলো?

 

৬. অতঃপর সুলতান এমন নোংরা পদ্ধতি দেখে তাঁকে বললেন, এটা যদি আবু হানীফার সালাত আদায়ের পদ্ধতি না হয়, তবে আপনাকে আমি কতল করে দিবো!

 

এ যেন একদম প্রাচীন কালের রাজা-বাদশাহের রূপকথা- যেখানে কথায় কথায় রাজা কর্তৃক প্রজাকে কতল করে দেওয়া হয়! আবার রাজার প্রশংসায় একটা কবিতা/সুন্দর কথা বলে দিলেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মুক্তি পেয়ে যায়

 

৭. সুলতান নিজেও তো একজন হানাফী। তো তিনি কি হানাফী মাযহাবের নিয়মের সালাত এতদিন পড়েননি? অবশ্যই পড়েছেন, তো তিনি নিজেও তো জানেন হানাফী মাযহাবের সালাতের পদ্ধতি কী? তাহলে আবার হানাফী পদ্ধতিতে সালাত পড়ে দেখাতে হবে কেনো? তাছাড়া উক্ত ফকীহের দেখানো পদ্ধতি যদি হানাফী মাযহাবের সালাত হতো তবে সুলতান নিজেও তো এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন, তাই না? কিন্তু ঘটনা থেকে বোঝা যায় তিনি এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন না।

 

যেহেতু সুলতান এ পদ্ধতিতে এতদিন সালাত আদায় করতেন না ও তার কাছে এ পদ্ধতিটি অদ্ভুত মনে হয়েছে- এর মানেই উক্ত ফকীহের দেখানো পদ্ধতির সাথে হানাফীগণ পরিচিত নয়। আর হানাফীগণ এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করেও না।

 

তাহলে সুলতানকে এই পদ্ধতি দেখানোর মানে কী? নোংরা উদ্দেশ্য নয় কি?

 

৭. অতঃপর সঠিক ঘটনা জানার জন্য সুলতান একজন খ্রিস্টানকে দিয়ে হানাফী মাযহাবের কিতাব পড়িয়েছে।

 

এটার মতো হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বিষয় এই কল্পকাহিনীতে দ্বিতীয়টি নেই, কারণ মুসলমানদের একজন নামকরা রাজ্য-জয়ী বাদশা তার দরবারে শত শত ফক্বীহ থাকতে ও নিজেও একজন সুশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও একজন খ্রিস্টানের মাধ্যমে হানাফী মাযহাবের কিতাব পড়িয়ে সত্যাসত্য জানতে হবে এর চেয়ে প্রহসন আর কী হতে পারে?

 

এতোজন ফকীহের উপর তাঁর কি আস্থা নেই? তাছাড়া বিশ্বজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবী কি আরবি পড়তে জানেন না যে অবশেষে একজন অমুসলিম খ্রিস্টানকে শিক্ষক/বিচারক মানতে হল?

 

ইসলামের ইতিহাসে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে যে মুসলমানদের ফক্বীহদের মধ্যে এতটুকু আমানতদারিতা নেই যে তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়!! তাই খ্রিস্টানদেরকে দিয়ে কিতাব পড়ে সত্য জানতে হয়।

 

৮. মনে হচ্ছে সে যুগের ফক্বীহগণ একেকজন ‘মটু, পাতলু, জন, আর ডক্টর জাটকা’ ছিলো! তাদের মাঝে মীমাংসা করতে আসে একজন অমুসলিম খ্রিস্টান!

 

কোথায় গায়রাত? কোথায় আত্মমর্যাদাবোধ? কোথায় আত্মসম্মানবোধ? সেকালের ফক্বীহ ও সুলতানের কী ভয়ানক অবস্থা! হাহাহা।

 

৯. নিয়ম তো ছিলো, শাফে’ঈদের সালাত শাফে’ঈ ফকীহ পড়ে দেখাবে, আর হানাফীদের সালাত হানাফী ফকীহ পড়ে দেখাবে! মজলিসেও তো উভয় মাযহাবের ফকীদেরকেই ডাকা হয়েছে। অথচ উভয় মাযহাবের সালাত শাফে’ঈ মাযহাবের ফকীহই আদায় করে দেখিয়েছে।

 

এটাও কি ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হওয়ার একটি উপযুক্ত দলিল নয়?

 

১০. আচ্ছা ঠাণ্ডা মাথায় একটু কল্পনা করুন তো! শাফে’ঈদের এমন জঘন্য নোংরামো ও মিথ্যাচার দেখেও কি হানাফীগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল চুষছিল? আর ভারতজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবীর রাজ দরবারে হানাফী ফকীহদের উপস্থিতিতে একজন শাফে’ঈর এমন জঘন্যসুলতান মাহমুদ গজনবীর হানাফী থেকে শাফে’ঈ হওয়ার কল্পিত গল্প ও শাফে’ঈদের জঘন্য নোংরামো —১

 

📗

রূপকথার গল্প • রাজ-রাজড়ার কল্পকথা • প্রাচীন কল্পকাহিনী

 

أن السلطان محمودًا المذكور كان على مذهب أبي حنيفة، ﵁، وكان مولعًا بعلم الحديث، وكانوا يسمعون الحيث من الشيوخ بين يديه، وهو يسمع، وكان يستفسر الحاديث، فوجد أكثرها موافقًا لمذهب الشافعي ﵁، فوقع في جلده حكة، فجمع الفقهاء من الفريقين في مرو، والتمس منهم الكلام في ترجيح أحد المذهبين على الآخر، فوقع الاتفاق على أن يصلوا بين يديه ركعتين على مذهب الإمام الشافعي، وعلى مذهب أبي حنيفة، ﵁، لينظر فيه السلطان، ويتفكر ويختار ما هو أحسنهما، فصلى القفال المروزي – وقد تقدم ذكره – بطهارة مسبغة وشرائط معتبرة من الطهارة والسترة واستقبال القبلة، وأتى بالأركان والهيئات والسنن والآداب والفرائض على وجه الكمال والتمام، وقال: هذه صلاة لا يجوز الإمام الشافعي دونها ﵁، ثم صلى ركعتين على ما يجوز أبو حنيفة ﵁، فلبس جلد كلب مدبوغًا ولطخ ربعه بالنجاسة، وتوضأ بنبيذ التمر، وكان في صميم الصيف في المفازة، واجتمع عليه الذباب والبعوض، وكان وضوءه منكسًا منعكسًا، ثم استقبل القبلة، وأحرم بالصلاة من غير نية في الوضوء، وكبر بالفارسية دو بركك سبز، ثم نقر نقرتين كنقرات الديك من غير فصل ومن غير ركوع، وتشهد، وضرط في آخره، من غير نية السلام، وقال: أيها السلطان، هذه صلاة أبي حنيفة، فقال السلطان، لو لم تكن هذه الصلاة صلاة أبي حنيفة لقتلك، لأن مثل هذه الصلاة لا يجوزها ذو دين، فأنكرت الحنفية أن تكون هذه صلة أبي حنيفة، فأمر القفال بإحضار كتب أبي حنيفة، وأمر السلطان نصرانيًا كاتبًا يقرأ المذهبين جميعًا، فوجدت الصلاة على مذهب أبي حنيفة على ما حكاه القفال، فأعرض السلطان عن مذهب أبي حنيفة، وتمسك بمذهب الشافعي

 

সুলতান মাহমূদ গজনভী (মৃ: ৪২১ হি:) হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ইলমে হাদীসের প্রতি তিনি খুবই আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁর হাতের নাগালে থাকা শায়খদের থেকে তিনি হাদীস শ্রবণ করতেন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন। এতে তিনি অধিকাংশ হাদীস শাফে’ঈ মাযহাবের অনুকূলে পেতেন। ফলে তার হৃদয়ে শাফে’ঈ মাযহাবের প্রতি একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একদিন তিনি বিচার-বিবেচনার জন্য হানাফী ও শাফে’ঈ মাযহাবের ফক্বীহদের একত্রিত করে যেকোনো একটি মাযহাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানালেন। তারা সকলে এ মর্মে একমত হলেন যে, সুলতানের সামনে দুই মাযহাবের পদ্ধতিতে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা হবে। তিনি তা পর্যবেক্ষণ করে যেটি সুন্দর ও উত্তম মনে করবেন সেটি গ্রহণ করবেন। অতঃপর শাফে’ঈদের সাথী আবূ বকর আল-ক্বাফফাল মারওয়াযী প্রথমে শাফে’ঈ মাযহাবের পদ্ধতিতে সালাত আদায় করলেন।

 

প্রথমে তিনি শাফে’ঈ মাযহাবের শর্তাদি ও রুকন-অনুযায়ী সুন্দরভাবেই ওযূ করলেন এবং পবিত্র পোশাক পরিধান করে কিবলামুখী হয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করলেন। অতঃপর সালাতের রুকন, সুন্নাত, আদব ও ফরযসহ যাবতীয় কার্যাবলী যথাসাধ্য পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করলেন- যেগুলো ব্যতীত (ইমাম) শাফে’ঈ সালাত আদায় জায়েয মনে করতেন না।

 

এরপর তিনি হানাফীদের পদ্ধতিতে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন। প্রথমে তিনি কুকুরের পরিশোধিত (দাবাগাতকৃত) চামড়া পরিধান করে তার এক চতুর্থাংশে নাপাকি লাগিয়ে নিলেন। অতঃপর খেজুরের পঁচা রস (নাবীয) দিয়ে ওযূ করলেন। তখন মরুভূমিতে গ্রীষ্মকাল হওয়ায় নাবীযের দুর্গন্ধে মাছি ও মশা তাকে ঘিরে ফেললো। এভাবেই তিনি সম্পূর্ণ উল্টো পদ্ধতিতে নিয়ত ছাড়াই ওযূ সম্পন্ন করলেন। অতঃপর ক্বিবলা সামনে করে তিনি ফারসী ভাষায় তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করলেন। অতঃপর ফারসীতে ক্বিরা’আত دو برگ سبز (সূরা রাহমানের مُدْهَامَّتَانِ -এর ফারসী) পাঠ করলেন। এরপর রুকূ থেকে মাথা ভালোভাবে না উঠিয়েই সাজদা’য় চলে গেলেন। অতঃপর মোরগের ঠোকর দেওয়ার মতো করে দুই সাজদা’ করলেন। এরপর তাশাহহুদের পর বায়ু নিঃসরণ করলেন (পাদ মারলেন- খবীশ)। অতঃপর সালাম না ফিরিয়ে সালাত সম্পাদন করে সুলতান মাহমূদকে বললেন, এটিই আবূ হানীফাহ’র সালাত।

 

তখন সুলতান মাহমূদ বললেন, এটি যদি আবূ হানীফার সালাতের পদ্ধতি না হয়, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব। কারণ কোন দ্বীনদার ব্যক্তি এরূপ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করাকে জায়েয বলতে পারে না। এদিকে হানাফীগণ এটাকে ইমাম আবূ হানীফার সালাত মানতে অস্বীকার করলো। তখন ক্বাফফাল আবূ হানীফার কিতাবগুলো নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। কিতাবগুলো নিয়ে আসা হলে সুলতান একজন খৃষ্টান লেখককে তা পাঠ করতে বললেন। যখন উক্ত ব্যক্তি তা পাঠ করলো তখন সুলতান মাহমূদ বুঝতে পারলেন যে, ক্বাফফাল ঠিকই বলেছে। অতঃপর তিনি হানাফী মাযহাব ত্যাগ করে শাফে’ঈ মাযহাব গ্রহণ করলেন। [সূত্র: মুগীসুল খালক্ব: পৃষ্ঠা-৫৮]

 

✍️✍️✍️

দুই নিঃশ্বাসে পড়ে নিলেন একদম টাটকা একটি মিথ্যা গল্প। গল্পটি একাধিক কারণে বাতিল ও জাল। বরং জালেরও অধম।

 

১. এ ঘটনার কোনো সনদই নেই বরং সম্পূর্ণ সনদবিহীন একটি বানোয়াট কল্পকাহিনী বা রাজ-রাজড়ার রূপকথা। ঘটনাটি শুরু হয়েছে “কথিত আছে” শব্দ দিয়ে। আর “কথিত আছে” এমন শব্দে বর্ণিত কোনো ঘটনারই বাস্তবতা নেই। বিশেষ করে দ্বীনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।

 

ঘটনাটি যাহাবী ও ইবনু খাল্লিকান প্রমূখের গ্রন্থাদিতে থাকলেও তারা এই ঘটনাটি নিয়েছেন বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বেষী শাফে’ঈ আলিম জুয়াইনা’ঈর “মুগীসুল খালক্ব” নামক গ্ৰন্থ থেকে। আর ঐ মূল কিতাবেই ঘটনাটি “কথিত আছে” শব্দে সনদবিহীন বর্ণিত হয়েছে।

 

২. আপনি সামান্য কমনসেন্স খাটালেই বুঝবেন ঘটনাটির অসারতা ও জাল হওয়ার বিষয়টি। ক্বাফফাল- যিনি উভয় মাযহাবের সালাত আদায় করিয়ে দেখিয়েছেন তিনি একজন শাফে’ঈ মাযহাবের ফক্বীহ, আর একজন ফক্বীহ কখনোই এমন খবীশ ও নিচু মানসিকতার হতে পারে না যে, নিজের মাযহাবের আমলটা খুব সুন্দরভাবে করে দেখাবে আর অন্য মাযহাবের আমলটা সবচেয়ে নোংরা পদ্ধতিতে করে দেখাবে।

 

মনে রাখবেন, প্রত্যেক বিষয়/আমলের তিনটা পদ্ধতি থাকে। একটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি, অতঃপর স্বাভাবিক পদ্ধতি, অতঃপর কোনোরকমে জায়েয- যে পদ্ধতিতে অপারগতা ও ওজরের ক্ষেত্রে আমল করা হয়। তো এই ফক্বীহ নিজের মাযহাবের আমলটা উত্তম পদ্ধতিতে করলেন আর হানাফী মাযহাবের আমলটা জায়েয পদ্ধতিতে করলেন (কিছু কিছু ক্ষেত্রে জায়েযও না)। যা সম্পূর্ণ প্রতারণার শামিল, আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়”। [সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৭] এবার একটু ভেবে দেখুন, এই ফক্বীহ (?) কি মুসলমানের দলভুক্ত আছেন?

 

এবার আমাদেরকে বলতেই হবে, হয়তো তিনি এমনটা করে মুসলমানদের কাতারের বাইরে চলে গেছেন নয়তো তিনি এমনটা কখনোই করেননি, বরং এটি কল্পকাহিনী। যেমন বিভিন্ন রাজা-রানী নিয়ে বিভিন্ন কল্পকথা সমাজে প্রচলিত থাকে- এটিও সেগুলোর মধ্যে একটি কল্পকাহিনী বা রূপকথা।

 

৩. রুকূ থেকে ভালোভাবে না দাঁড়ানো ও কাকের মতো দুই ঠোকর মারা যে, হানাফী মাযহাবের আমল নয় বরং নিষিদ্ধ- এটাতো হানাফী মাযহাবের একদম জানী দুশমনও অস্বীকার করতে পারবে না। আর হানাফী মাযহাবের কোন গ্রন্থে এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা যাবে- বলা হয়েছে? এটাতো সম্পূর্ণ হানাফী মাযহাবের সাথে প্রতারণা।

 

অতএব একজন ফক্বীহ- যিনি চার মাযহাব সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত- তিনি কিভাবে এমন প্রতারণা ও মূর্খতাপূর্ণ কাজ করতে পারেন? বর্তমানের কোনো হানাফী বিদ্বেষী সাধারণ/কঠোর লা-মাযহাবীকেও যদি বলা হয় হানাফী পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে দেখাতে সেও তো উপরিউক্ত নোংরা পদ্ধতিতে সালাত আদায় করবে না, বরং সে হানাফীদের মতো (নাভির নিচে হাত বেঁধে ও রাফ’উল ইয়াদাইন না) করেই দেখাবে।

 

সে জায়গায় একজন সম্মানিত ফকীহ এমন হীন কাজ করেছেন- এটা কল্পকাহিনী ছাড়া কোথাও ঘটতে পারে না।

 

৪. খেজুর পঁচা রস দ্বারা ওযু করা, চারপাশে মশা মাছি ভনভন করা, কুকুরের চামড়ায় তৈরি পোশাক পরা, অতঃপর এক চতুর্থাংশ কাপড়ে ইচ্ছাকৃত নাপাকি লাগিয়ে দেওয়া এবং তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে পাদ মারা (বায়ু নিঃসরণ করা) এসব কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তির কাজ হতে পারে কিনা আপনারাই বিবেচনা করুন। আমার তো মনে হয়, এমন অবাস্তব ঘটনা কেবল ‘মটু পাতলু’ ও ‘সিবা’ ইত্যাদির মতো কল্পকাহিনীগুলোতেই ঘটা সম্ভব। একজন ফক্বীহের দ্বারা এমন কাজ কখনোই সম্ভব নয়। যদি তাকে ফক্বীহ মানতে হয় তবে তিনি “মটু-পাতলু-মার্কা’ ফক্বীহ।

 

৫. আপনাকে যদি একজন বিশ্বজয়ী প্রভাবশালী বাদশা সুলতান মাহমুদ গজনবী এর মতো কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি দুই মাযহাবের সালাত আদায় করিয়ে দেখাতে বলে আপনি এভাবে করবেন কিনা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো দেখি!

 

অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে সুলতান তার সাথে ঠাট্টা মশকরা করলেন আর তিনিও প্রতিউত্তরে সুলতান এর সাথে ঠাট্টা মশকরা করলেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সুলতান কি মূলতঃ ঠাট্টা মশকারি করতে চেয়েছিলো?

 

৬. অতঃপর সুলতান এমন নোংরা পদ্ধতি দেখে তাঁকে বললেন, এটা যদি আবু হানীফার সালাত আদায়ের পদ্ধতি না হয়, তবে আপনাকে আমি কতল করে দিবো!

 

এ যেন একদম প্রাচীন কালের রাজা-বাদশাহের রূপকথা- যেখানে কথায় কথায় রাজা কর্তৃক প্রজাকে কতল করে দেওয়া হয়! আবার রাজার প্রশংসায় একটা কবিতা/সুন্দর কথা বলে দিলেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মুক্তি পেয়ে যায়

 

৭. সুলতান নিজেও তো একজন হানাফী। তো তিনি কি হানাফী মাযহাবের নিয়মের সালাত এতদিন পড়েননি? অবশ্যই পড়েছেন, তো তিনি নিজেও তো জানেন হানাফী মাযহাবের সালাতের পদ্ধতি কী? তাহলে আবার হানাফী পদ্ধতিতে সালাত পড়ে দেখাতে হবে কেনো? তাছাড়া উক্ত ফকীহের দেখানো পদ্ধতি যদি হানাফী মাযহাবের সালাত হতো তবে সুলতান নিজেও তো এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন, তাই না? কিন্তু ঘটনা থেকে বোঝা যায় তিনি এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন না।

 

যেহেতু সুলতান এ পদ্ধতিতে এতদিন সালাত আদায় করতেন না ও তার কাছে এ পদ্ধতিটি অদ্ভুত মনে হয়েছে- এর মানেই উক্ত ফকীহের দেখানো পদ্ধতির সাথে হানাফীগণ পরিচিত নয়। আর হানাফীগণ এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করেও না।

 

তাহলে সুলতানকে এই পদ্ধতি দেখানোর মানে কী? নোংরা উদ্দেশ্য নয় কি?

 

৭. অতঃপর সঠিক ঘটনা জানার জন্য সুলতান একজন খ্রিস্টানকে দিয়ে হানাফী মাযহাবের কিতাব পড়িয়েছে।

 

এটার মতো হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বিষয় এই কল্পকাহিনীতে দ্বিতীয়টি নেই, কারণ মুসলমানদের একজন নামকরা রাজ্য-জয়ী বাদশা তার দরবারে শত শত ফক্বীহ থাকতে ও নিজেও একজন সুশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও একজন খ্রিস্টানের মাধ্যমে হানাফী মাযহাবের কিতাব পড়িয়ে সত্যাসত্য জানতে হবে এর চেয়ে প্রহসন আর কী হতে পারে?

 

এতোজন ফকীহের উপর তাঁর কি আস্থা নেই? তাছাড়া বিশ্বজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবী কি আরবি পড়তে জানেন না যে অবশেষে একজন অমুসলিম খ্রিস্টানকে শিক্ষক/বিচারক মানতে হল?

 

ইসলামের ইতিহাসে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে যে মুসলমানদের ফক্বীহদের মধ্যে এতটুকু আমানতদারিতা নেই যে তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়!! তাই খ্রিস্টানদেরকে দিয়ে কিতাব পড়ে সত্য জানতে হয়।

 

৮. মনে হচ্ছে সে যুগের ফক্বীহগণ একেকজন ‘মটু, পাতলু, জন, আর ডক্টর জাটকা’ ছিলো! তাদের মাঝে মীমাংসা করতে আসে একজন অমুসলিম খ্রিস্টান!

 

কোথায় গায়রাত? কোথায় আত্মমর্যাদাবোধ? কোথায় আত্মসম্মানবোধ? সেকালের ফক্বীহ ও সুলতানের কী ভয়ানক অবস্থা! হাহাহা।

 

৯. নিয়ম তো ছিলো, শাফে’ঈদের সালাত শাফে’ঈ ফকীহ পড়ে দেখাবে, আর হানাফীদের সালাত হানাফী ফকীহ পড়ে দেখাবে! মজলিসেও তো উভয় মাযহাবের ফকীদেরকেই ডাকা হয়েছে। অথচ উভয় মাযহাবের সালাত শাফে’ঈ মাযহাবের ফকীহই আদায় করে দেখিয়েছে।

 

এটাও কি ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হওয়ার একটি উপযুক্ত দলিল নয়?

 

১০. আচ্ছা ঠাণ্ডা মাথায় একটু কল্পনা করুন তো! শাফে’ঈদের এমন জঘন্য নোংরামো ও মিথ্যাচার দেখেও কি হানাফীগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল চুষছিল? আর ভারতজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবীর রাজ দরবারে হানাফী ফকীহদের উপস্থিতিতে একজন শাফে’ঈর এমন জঘন্য চতুরতা করার হিম্মত কি আদৌ ছিলো?

 

চলবে…

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান চতুরতা করার হিম্মত কি আদৌ ছিলো?

 

চলবে…

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান

 

আরো যা পড়তে পারেন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “সুলতান মাহমুদ গজনবী কি মাযহাব পরিবর্তন করেছেন”

Leave a Reply