সুলতান মাহমুদ গজনবী কি মাযহাব পরিবর্তন করেছিলেন —২

0

সিরিজের সবগুলো লেখা-

সুলতান মাহমূদ গযনবীর হানাফী থেকে শাফে’ঈ হওয়ার কল্পকাহিনী —২

 

[বলে রাখা ভালো, আমি কোনো জবাবমূলক লেখা লিখতে গিয়ে প্রথমে দেখে থাকি, ঐ বিষয়ে আমার পূর্বে কেউ জবাব দিয়েছে কিনা, যদি দিয়ে থাকে এবং তা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তবে আমি ঐ কাজে আর হাত দিই না। কিন্তু এই লেখাটির ক্ষেত্রে সেই ‘প্রথমে দেখা’টা হয়নি।

 

প্রথম পর্ব লেখার পর দ্বিতীয় পর্ব লিখতে গিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতেই নেটে দেখলাম আহলে হাদীসরা এই ঘটনাটি উল্লেখ করে সুলতান মাহমুদ গজনবীকে আহলে হাদিস দাবী করতে শুরু করেছে। তারা এই ঘটনাটি উল্লেখ করে লিখেছে- “এভাবে তিনি মূলতঃ হাদীছকে প্রাধান্য দিলেন, মাযহাবকে নয়। অতএব তিনি নিঃসন্দেহে একজন ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন”। পরে আমি ঐ সাইটের কমেন্ট বক্সে ইতিহাসবিদ ইমরান রায়হান এর একটি ফেসবুক পোস্টের লিংক পাই।]

 

ইমরান রায়হান এর লিখিত জবাবটা নিচে হুবুহু উল্লেখ করছি। তবে ব্র্যাকেটের লেখাগুলো আমার।

 

তিনি লিখেন “পুরো প্রবন্ধ পড়ে একটি বিষয়ই পরিষ্কার হলো, নিজস্ব ঘরাণা ও মতবাদকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের জন্য মানুষ কতভাবে ইলমি খেয়ানতের আশ্রয় নেয়। কীভাবে ক থেকে কলকাতা আবিষ্কার করা হয়।

 

সুলতান মাহমুদ গজনবী আহলে হাদিস ছিলেন এই বক্তব্যের সূত্র হিসেবে তারা এনেছেন ইতিহাসবিদ কাসিম ফিরিশতার নাম। কাসিম ফিরিশতা তার লিখিত তারিখে ফিরিশতায় লিখেছনে, সুলতান মাহমুদ আহলুল হাদিস ছিলেন। এটি একটি পুরনো হাত সাফাই। তারিখ ও রিজালের কিতাবে আহলুল হাদিস বলা হয় মুহাদ্দিস তথা হাদিসবেত্তাদের। এর সাথে উপমহাদেশের আহলে হাদিস ঘরানার কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু তারা সবসময় রিজালের কিতাবে মুহাদ্দিসদের জন্য ব্যবহৃত আহলুল হাদিস শব্দ এনে নিজেদের ঘরাণার প্রাচীনতা প্রমানের চেষ্টা করে থাকেন। তারিখে ফিরিশতায় সুলতান মাহমুদকে আহলুল হাদিস বলা হয়েছে হাদিস শাস্ত্রে তার দক্ষতা বোঝানোর জন্য। এর সাথে আহলে হাদিস ফিরকার কোনো সম্পর্ক নেই। তখন তো এই ফিরকা ছিলই না।

 

সুলতানকে আহলে হাদিস প্রমাণের জন্য আত তাহরিকের লেখক (কথিত সহকারী গবেষক) একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আত তাহরিকের সাইট থেকে ঘটনাটি হুবহু উল্লেখ করে দিচ্ছি”। (সংক্ষিপ্ততার জন্য এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমার পূর্বের পোস্টে ঘটনাটি উল্লেখ করেছি- উল্লেখ শেষে ইমরান রায়হান বলেন-)

 

“এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয়।

 

১। ইতিহাসের (এই) বর্ননা থেকে জানা যায়, সুলতান মাহমুদ হানাফি থেকে শাফেয়ি হয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি এক মাজহাব ছেড়ে অন্য মাজহাব গ্রহণ করেছিলেন।

 

২। সুলতান হানাফি ছেড়ে শাফেয়ি হলেও তো তিনি মাজহাবের গণ্ডিতেই রইলেন, তাহলে তাকে আহলে হাদীস বলার যৌক্তিকতা কোথায়?

 

৩। ‘এভাবে তিনি মূলতঃ হাদীছকে প্রাধান্য দিলেন, মাযহাবকে নয়’। এই বাক্যে লেখক তার অজ্ঞতা, মূর্খতা ও গোয়ার্তুমিকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। হাদিসের ভান্ডার সম্পর্কে লেখকের পড়াশোনা ও জানাশোনা কত কম তার প্রমাণ হিসেবে এই বাক্যটিই তিনি পাঠককে উপহার দিয়েছেন। হানাফি মাজহাবের বিধানগুলো সম্পর্কে লেখক শুধু শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেন, তা এখানেও প্রমানিত হলো। হানাফিদের সালাত-পদ্ধতি কোন কোন হাদিস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে তা জানার জন্য মাওলানা আবদুল মতিন সাহেবের লিখিত দলিলসহ নামাজের মাসায়েল বইটি পাঠ করলেও লেখকের চোখের কাঠের চশমা সরানোর জন্য যথেষ্ট হত।

 

৪। সুলতান সম্পর্কে বর্নিত ঘটনাটি যদি সত্য হয় তাহলে প্রশ্ন আসে, এভাবে নামাজের পদ্ধতিটি কি হানাফিদের কাছে আবশ্যক? হানাফিরা কি এভাবেই নামাজ আদায় করে? সুলতান নিজেও কি এভাবে নামাজ আদায় করতেন? আবু বকর কাফফাল যেভাবে নামাজ আদায় করে দেখিয়েছেন তা কি হানাফিদের নামাজের পূর্নাংগ চিত্র উপস্থাপন করে নাকি বিকৃত করে?

 

পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে এ সম্পর্কে সাফাদি রহিমাহুল্লাহর একটি উক্তি উপস্থাপন করছি। সুলতান মাহমুদের এই ঘটনা উল্লেখের পর তিনি লিখেছেন, নিশ্চিতভাবেই ইমাম আবু হানিফা কখনো এভাবে নামাজ পড়েননি, কিংবা তার প্রথমদিকের শাগরিদদের কেউ এই পদ্ধতীর নামাজকে জায়েজ বলেননি। হ্যা এটা বলা হয়েছে সামগ্রিকভাবে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নভাবে যদি কারো নামাজে এখানকার এক দুটি বিষয় পাওয়া যায় তাহলে মাজহাবের উসুল অনুযায়ী তা বিশুদ্ধ হবে। [আল ওয়াফি বিল ওফায়াত, ১৭/২৮]

 

ইতিহাসের বইপত্রে ঘটনার তো সন্ধান মিললো, এবার তাহলে একটু গভীরে যাওয়া যাক। ইতিহাসবিদদের যারাই এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন তাদের সবার সূত্র একজন। ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনি। তিনি শাফেয়ি মাজহাবের প্রখ্যাত আলেম। ইলমি গভীরতা ও আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও হানাফিদের ক্ষেত্রে তার ছিল বেশ প্রান্তিক অবস্থান। এই প্রান্তিকতার কারণে অনেক সময়ই তিনি ইনসাফ বজায় রাখতে পারেননি।

 

সুলতান মাহমুদের এই ঘটনা সর্বপ্রথম বর্ননা করেছেন ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনি। তার লিখিত ‘মুগিসুল খলক ফি তারজিহিল কওলিল হক’ গ্রন্থে তিনি ঘটনাটি এনেছেন। তার আগে এই ঘটনা কেউই উল্লেখ করেননি। পরে যারা উল্লেখ করেছেন সবাই তার সূত্রেই এনেছেন।

 

মুগিসুল খলক গ্রন্থে ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনি নানাভাবে শাফেয়ি মাজহাবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের চেষ্টা চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের উপর নান অন্যায় কঠোরতাও করেছেন। এনেছেন নানা অনির্ভরযোগ্য ঘটনাও। যেমন এই বইয়ের ৪৬ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ি রহিমাহুল্লাহ বাগদাদ এলে খলিফা হারুনুর রশিদ তাকে অনেক সম্মান করেন যা দেখে কাজি আবু ইউসুফ হিংসা করেন। অথচ ইবনু হাজার আসকালানি রহিমাহুল্লাহ স্পষ্টই লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ি বাগদাদ প্রথম এসেছিলেন ১৮৪ হিজরিতে, এর আগেই কাজি আবু ইউসুফ ইন্তেকাল করেছিলেন। আবু ইউসুফের সাথে ইমাম শাফেয়ির কখনো দেখাই হয়নি। (বিস্তারিত জানতে দেখুন, তাওয়ালিত তাসিস)

 

মুগিসুল খলক গ্রন্থের নানা ভুল বক্তব্য ও অন্যায় কঠোরতার উপর পর্যালোচনা করে শাইখুল ইসলাম আল্লাম যাহেদ কাউসারি লিখেছেন ‘ইহকাকুল হক বি-ইবতালিল বাতিল ফি মুগিসিল খলক’ নামক গ্রন্থ।

 

এই মুগিসুল হক গ্রন্থে জুওয়াইনি রহিমাহুল্লাহ সুলতান মাহমুদের এই ঘটনা এনেছেন। এবার ঘটনাটির উপর কিছু পর্যালোচনা দেখা যাক।

 

১। এই ঘটনা তার আগে কেউ বর্ননা করেনি। তার পরেও যারা বর্ননা করেছে সবাই তার সূত্রে করেছে। সুলতানের মাজহাব ত্যাগের মত এত বড় একটি ঘটনা আর কেউই উল্লেখ না করা রহস্যজনক।

 

২। ঘটনাটি তিনি উল্লেখ করেছেন, বর্নিত আছে বলে। যখন কোনো ঘটনা বর্নিত আছে বা শোনা যায় বলে উদ্ধৃত করা হয় তখন শাস্ত্রীয় বিবেচনায় তা দূর্বল হয়ে যায়।

 

৩। এই ঘটনার উপর পর্যালোচনা করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আল্লামা যাহেদ কাউসারি লিখেছেন, এটা আবু হানিফার সালাত নয়, এটা ছিল কাফফালের সালাত।

শায়খের কথাটি সত্য। কারণ হানাফি মাজহাবের সালাত এমন নয়। কাফফাল এখানে কিছু কৌশলের আশ্র্যয় নিয়েছেন। তিনি যেভাবে সালাত আদায় করে দেখিয়েছেন হানাফিদের মত এমন, সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করছি না। এগুলো ফিকহি বিষয়। সম্ভব হলে কোনো আলেমের কাছে বসে সামনাসামনি জেনে নিবেন।

 

৪। কাফফালের মত একজন সর্বজনস্বীকৃত আলেম একটি ইলমি বিতর্কে এ ধরণের হঠকারিতা কেন করবেন তাও স্পষ্ট নয়।

 

৫। ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে সুলতান মাহমুদ জানতেনই না হানাফি মাজহাবের নামাজের পদ্ধতী কী। অথচ তিনি নিজেই হানাফি মাজহাবের একজন বড় মাপের ফকিহ ছিলেন। হানাফি ফিকহের উপর তিনি কিতাবুত তাফরিদ নামে একটি গ্রন্থই রচনা করেছিলেন যা গজনীতে বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। হাফেজ আবদুল কাদির করাশির মতে এই কিতাবে অনেক (৬০ হাজারের মতো) মাসআলা ছিল। ভাবুন একবার, যিনি নিজেই হানাফি ফিকহের উপর গভীর দক্ষতা রাখতেন, তিনি কাফফালের সালাত দেখেই নিজের মাজহাব পরিবর্তন করবেন কেন? তিনি কি জানতেন না হানাফি মাজহাবের সালাতের নিয়ম কী? এখানে আরেকটি প্রশ্ন জাগে। যিনি নিজেই হানাফি ফিকহের উপর আরবিতে কিতাব লিখেছিলেন, তিনি হানাফি ফিকহের কিতাব পড়ার জন্য একজন খ্রিস্টানকে ডেকে আনবেন কেন?

 

📗 সারকথা

 

১। সুলতান মাহমুদের শাফেয়ি হওয়ার ঘটনাটি শক্তিশালী নয়। (বরং সম্পূর্ণ কল্পকাহিনী)

২। (তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য মানলাম) যদি ঘটনাটি সত্য হয়েও থাকে, তাহলেও বড়জোর এতদূর বলা যায়, তিনি হানাফি থেকে শাফেয়ি হয়েছিলেন। আহলে হাদিস হওয়ার কথা কোথাও নেই।

 

সুলতান মাহমুদ যদি শাফেয়ি হয়েও থাকেন, তাহলেও তিনি মাজহাবিই ছিলেন। আহলে হাদিস শায়খ আকরামুজ্জামান তো মাজহাবিদের হত্যার বৈধতার দলিলও এনেছেন তার বইতে, তো সুলতান মাহমুদকে তাহলে ছাড় দিয়ে আহলে হাদিস বানানোর অপচেষ্টা কেন”?

 

(ইমরান রায়হানের জবাব শেষ হলো)

 

📗 সংশয় নিরসন

 

যাইহোক, ইমরান রায়হান যেহেতু সুলতানের আহলে হাদিস হওয়াকে রদ করেছেন সেহেতু তিনি এই ঘটনাকে প্রথমে গোড়া থেকেই রদ করে শেষে কিছুক্ষণের জন্য তাঁর শাফে’ঈ হওয়ার ক্ষেত্রে কণামাত্র (১%) হলেও নমনীয় ছিলেন। এর মানে এই নয় যে তিনি সুলতানের শাফে’ঈর হওয়াটাকে কোনমতে মেনে নিয়েছেন। বরং তর্কের খাতিরে এই নমনীয়তাটাই তাঁর জন্য উপযুক্ত ছিলো, যদি আমিও তার আহলে হাদীস হওয়াকে রদ করতাম তখন আমিও এই নমনীয়তা দেখাতাম। কারণ এই নমনীয়তা দেখানো ছাড়া আহলে হাদীসদের মিথ্যা দাবী ও সত্যকে বিকৃত করার মতো ধূর্তামি প্রকটভাবে প্রকাশ পেতো না। আর এতে করে পাঠকও দেখতে পেয়েছে যে, আহলে হাদিসরা কিভাবে সাধারণ মানুষকে নয় ছয় বুঝিয়ে সিংহকে ছাগল আর ছাগলকে সিংহ বলে প্রমাণিত করে।

 

নামধারী আহলে হাদীসরা এমনি। সর্বক্ষেত্রেই এদের এরকম জালিয়াতি চলমান। এরা যেন জালিয়াতি ছাড়া চলতেই পারে না- যেমন মাছ পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। যেদিন এদের জালিয়াতি বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন তারা নির্বংশ হয়ে যাবে, পৃথিবী থেকে ডায়নোসরের মতো এরা হারিয়ে যাবে।

 

এই ঘটনা না হয় বাদই দিলাম, (কারণ এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ কল্পকাহিনী। আমি আমার পূর্বের পোস্টে আয়নার মতো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছি যে এই ঘটনা সম্পূর্ণ রূপকথা ও কল্পকাহিনী। সুলতান কস্মিনকালেও শাফে’ঈ হননি।) এমনিতেই কোনো ব্যক্তির হানাফী থেকে শাফে’ঈ হয়ে যাওয়াটা কি আহলে হাদিস হয়ে যাওয়া? পৃথিবীর ইতিহাসে যদি এমন ঘটনা বাস্তবেই ঘটতো তাহলেও আমার প্রশ্ন, কেউ হাদীসকে ভালোবেসে শাফে’ঈ হওয়ার কারণে যদি তাঁকে আহলে হাদীস বলা হয় তাহলে কেউ যদি হাদিসকে ভালোবেসে হানাফী হয়ে যায় (যেমন ইমাম তাহাবী) তবে কি তারা তাঁকেও আহলে হাদীস বলবে?

 

📗 আমাদের কিছু প্রশ্ন

 

অবশেষে তাদেরই একটা কথার মাধ্যমে আজকের পোস্ট আমি শেষ করছি। তারা নিজেরাই লিখেছে যে- “প্রাথমিক জীবনে সুলতান একজন উঁচুদরের হানাফী আলেম ছিলেন। তাঁর রচিত ‘আত-তাফরীদ ফিল ফুরূ’ হানাফী ফিকহের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।” তো আমাদের কিছু প্রশ্ন-

 

১. যিনি একজন উঁচুদরের হানাফী আলেম এবং হানাফী ফিকহের উপর স্বতন্ত্র কিতাবও রচনা করেছেন। যেই সেই কিতাব নয় বরং ফুরূ’ঈ মাসআলার কিতাব। জানা যায়, ঐ কিতাবে ৬০ হাজারের মতো মাসআলা ছিলো। তো এমন একজন বড় আলেম কিভাবে হানাফিদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি জানতেন না, যার কারণে একজন শাফে’ঈ ফকীহ তাঁকে হানাফীদের সালাত পড়ে দেখাতে হবে? আর তা দেখতেই তিনি নিজের মাযহাব পরিবর্তন করে ফেলবেন, যেন মহা রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেছে, যে রহস্য তিনি ইতিপূর্বে জানতেন না! ব্যাপারটা কি হাস্যকর নয়?

 

২. তিনি ৬০ হাজার মাসআলা সংবলিত কিতাবের রচিয়তা হিসেবে অবশ্যই হানাফীদের সালাতের অলিগলি সব আগে থেকেই জেনে থাকবেন, তাঁকে আবার হানাফিদের সালাত পড়ে দেখাতে হবে কেন? অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে- তিনি একজন মুখ্য-সুখ্য নব মুসলিম বাদশা- যিনি ইতিপূর্বে কখনো হানাফিদের সালাত দেখেনি।

 

৩. শাফে’ঈ ফকীহ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে সে বিষয়গুলো না জেনেই কি তিনি কিতার রচনা করেছেন?

 

৪. এটাতো ইতিহাসের সবচেয়ে অবাক-করা একটা কাণ্ড যে তিনি নিজেই হানাফী মাযহাবের ‘ফুরু’ঈ’ (শাখাগত) মাসআলার উপর কিতাব লিখেছেন- কিন্তু তিনিই হানাফীদের ঐ সমস্ত মাসআলা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন না যা শাফে’ঈ ফকীহ করে দেখিয়েছে!

 

৫. তিনি নিজেই একজন আরবী কিতাব রচিয়তা। সে হিসেবে তো তিনি আরবি খুব ভালোভাবেই জানতেন। তো তিনি আরবী জানা সত্বেও নিজে তাহকীক (যাচাই) না করে কেনো হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলো একজন খ্রিস্টানকে পড়তে দিলেন? তিনি পড়ালেখা না-জানা জাহেল নাকি!

 

[প্রাসঙ্গিক হওয়ায় প্রথম পর্ব থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম]

 

এটার মতো হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বিষয় এই কল্পকাহিনীতে দ্বিতীয়টি নেই, কারণ মুসলমানদের একজন নামকরা রাজ্য-জয়ী বাদশা তার দরবারে শত শত ফক্বীহ থাকতে ও নিজেও একজন সুশিক্ষিত আলেম হওয়া সত্ত্বেও একজন খ্রিস্টানের মাধ্যমে হানাফী মাযহাবের কিতাব পড়িয়ে সত্যাসত্য জানতে হবে এর চেয়ে প্রহসন আর কী হতে পারে?

 

এতোজন ফকীহের উপর তাঁর কি আস্থা নেই? তাছাড়া বিশ্বজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবী কি আরবি পড়তে জানেন না যে অবশেষে একজন অমুসলিম খ্রিস্টানকে শিক্ষক/বিচারক মানতে হল?

 

ইসলামের ইতিহাসে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে যে, মুসলমানদের ফক্বীহদের মধ্যে এতটুকু আমানতদারিতা নেই যে, তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়! তাই অনন্যোপায় হয়ে খ্রিস্টানদেরকে দিয়ে কিতাব পড়ে সত্য জানতে হয়।

 

মনে হচ্ছে, সে যুগের ফক্বীহগণ আত্মমর্যাদাবোধহীন ছিলেন! যার কারণে, তাদের মাঝে মীমাংসা করতে আসে একজন অমুসলিম খ্রিস্টান। কোথায় গায়রাত? কোথায় আত্মমর্যাদাবোধ? কোথায় আত্মসম্মান? সেকালের ফক্বীহ ও সুলতানের কী ভয়ানক অবস্থা! আফসোস।

 

লুবাব হাসান সাফওয়ান

ছাত্র: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস

 


আরো পড়ুন-


 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply